• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণসমূহ এবং তিনি বান্দাদেরকে সৃষ্টি করার গূঢ়রহস্য

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
379
Comments
450
Solutions
1
Reactions
8,759
Credits
22,162
প্রশ্ন: আমার এক অমুসলিম বন্ধু আমার কাছে জানতে চেয়েছে, আমি যেন তার কাছে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করি। আর কেন তিনি আমাদেরকে জীবন দিলেন? এই জীবনের উদ্দেশ্যই বা কী? আমার উত্তর তাকে সন্তুষ্ট করেনি। আমি আশা করছি আপনি আমাকে সে বিষয়গুলো জানাবেন যেগুলো তাকে জানানো কর্তব্য।

উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ। প্রিয় মুসলিম ভাই! আপনি আল্লাহর পথে দাওয়াত দান এবং আল্লাহর অস্তিত্বের সত্যতা স্পষ্ট করার যে প্রচেষ্টা করেছেন, সেটা খুবই আনন্দদায়ক ব্যাপার। আল্লাহকে জানা সুস্থ ফিতরাত ও সঠিক আকলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন কত মানুষ আছে যাদের কাছে সত্য স্পষ্ট হওয়ামাত্র তারা ইসলাম গ্রহণ করে। আমাদের প্রত্যেকে যদি দ্বীনের প্রতি নিজ দায়িত্ব পালন করত তাহলে প্রভূত কল্যাণ অর্জিত হত। সুতরাং হে মুসলিম ভাই! আপনাকে অভিনন্দন। আপনি নবী-রাসূলদের দায়িত্ব পালন করছেন। আপনার জন্য সুসংবাদ হিসেবে রয়েছে বিপুল পরিমাণ নেকীর ওয়াদা, যা আপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানে এসেছে। তিনি বলেছেন: “আল্লাহ তোমার মাধ্যমে একজন লোককে হেদায়াত দেয়াটা তোমার জন্য লাল উট থেকেও উত্তম।”[হাদীসটি বুখারী (৩/১৩৪) ও মুসলিম (৪/১৮৭২) বর্ণনা করেন]

আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষের প্রমাণগুলো কেউ গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করলেই তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। এর জন্য দীর্ঘ অনুসন্ধান ও গবেষণার প্রয়োজন নেই। গভীর চিন্তার ভাবনার মাধ্যমে আমরা পাই যে এ প্রমাণগুলো তিন ধরনের: ফিতরাতের প্রমাণসমূহ, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রমাণসমূহ ও শরয়ী প্রমাণসমূহ। ইন শা আল্লাহ এগুলো আপনার কাছে স্পষ্ট হবে।

ফিতরাতের প্রমাণসমূহ:

শাইখ ইবনে উছাইমীন বলেন: “আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে ফিতরাতের প্রমাণ অন্য যে কোনো দলীল থেকে শক্তিশালী। আর এটা এমন প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজন্য যাকে শয়তান পথভ্রষ্ট করেনি। তাই আল্লাহ তায়ালা যখন বললেন: “কাজেই আপনি একনিষ্ঠ হয়ে নিজ চেহারাকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন।” তারপরই বললেন: “আল্লাহর ফিতরাত (স্বাভাবিক রীতি বা দ্বীন ইসলাম), যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রূম: ৩০)। সুস্থ ফিতরাত আল্লাহর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়। যে ব্যক্তিকে শয়তানেরা পথভ্রষ্ট করেছে, শুধু সে ব্যক্তিই এই ফিতরাত থেকে বিচ্যুত হয়। আর যাকে শয়তান পথভ্রষ্ট করেছে, সে এই দলীল নাকচ করবে।”[শারহুস সাফারীনিয়্যাহ থেকে সমাপ্ত]

প্রত্যেকটা মানুষই সহজাতভাবে অনুভব করে যে তার একজন রব (প্রভু) ও স্রষ্টা আছেন। সেই রবের প্রতি প্রয়োজন অনুভব করে। যখন কোনো বড় ধরনের সংকটে পড়ে তখন তার হাত, চোখ ও অন্তর আসমান-মুখী হয়ে রবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রমাণসমূহ:

জাগতিক নানান ঘটনার অস্তিত্ব। আমাদের চারপাশের বিশ্বে নানান ঘটনা অবশ্যই ঘটে। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম ঘটনা হল— সৃষ্টি। সকল কিছুর সৃষ্টি। গাছ, পাথর, মানুষ, পৃথিবী, আসমান, নদী ও সাগরসহ সকল কিছুর সৃষ্টি।

যদি জিজ্ঞাসা করা হয় এই ঘটনাগুলো ও আরো অন্যান্য অনেক ঘটনার অস্তিত্ব কে দিয়েছে?

এ প্রশ্নের উত্তর হতে পারে: এগুলো কোনো কারণ ছাড়া কাকতালীয়ভাবে অস্তিত্ব লাভ করেছে। এমন অবস্থায় কেউ জানে না কীভাবে এগুলো অস্তিত্ব পেল। এটি একটা সম্ভাবনা। আরেকটা সম্ভাবনা হলো— এগুলো নিজেরাই নিজেদেরকে অস্তিত্ব দিয়েছে এবং নিজেরাই নিজেদের বিষয়াবলী পরিচালনা করেছে। তৃতীয় একটা সম্ভাবনা আছে সেটা হলো— একজন অস্তিত্বদানকারী এগুলোকে অস্তিত্ব দিয়েছেন, একজন স্রষ্টা এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। এ তিনটি সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার পর আমরা দেখতে পাই প্রথম ও দ্বিতীয়টা ঘটা অসম্ভব। যদি প্রথম ও দ্বিতীয়টা ঘটা অসম্ভব হয় তাহলে তৃতীয় সম্ভাবনাটা সঠিক হওয়া অনিবার্য। আর তা হলো এগুলোর একজন স্রষ্টা আছেন, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি হলেন— আল্লাহ। কুরআন কারীমে এ প্রমাণটি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তারা কি কোন কিছু ছাড়া (স্রষ্টা ছাড়া) সৃষ্টি হয়েছে; নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা? নাকি তারা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা (সত্যকে) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না।”[সূরা তূর: ৩৫-৩৬]

পরের প্রশ্ন: এই বিশাল সৃষ্টিগুলো কবে থেকে অস্তিত্বশীল? এত এত বছর ধরে দুনিয়ার বুকে কে এগুলোকে স্থায়িত্ব দিল? অস্তিত্বশীল থাকার উপকরণ দিয়ে সাহায্য করল?

উত্তর হলো: আল্লাহ। তিনি প্রত্যেককে এমন কিছু দিয়েছেন যা তার উপযুক্ত এবং যা তার স্থায়িত্বের নিরাপত্তা দেয়। আপনি কি সুন্দর সবুজ উদ্ভিদ দেখেন না? আল্লাহ যদি এটাকে পানি দেওয়া বন্ধ করে দেন এটার জন্য কি জীবিত থাকা সম্ভব হবে? কখনো না; মুহূর্তে এটা রূপ নিবে মলিন শুষ্ক খড়-কুটোয়। আপনি যদি সব কিছু মনোযোগ দিয়ে প্রত্যক্ষ করেন দেখবেন প্রতিটি বস্তুই আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ না থাকলে কোনো কিছু স্থায়ী থাকত না।

আল্লাহ সকল কিছুকে তার উপযুক্ত বিষয়ের সাথে যুক্ত করেছেন। যেমন: উটকে চড়ার জন্য উপযুক্ত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তারা কি দেখে না যে, আমাদের হাত যা তৈরি করেছে তা থেকে তাদের জন্য আমরা সৃষ্টি করেছি গবাদিপশুসমূহ; অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক? আর আমরা এগুলোকে তাদের বশীভূত করে দিয়েছি। ফলে এগুলোর কিছু সংখ্যক হয়েছে তাদের বাহন। আর কিছু সংখ্যক থেকে তারা খেয়ে থাকে।”[সূরা ইয়াসীন: ৭১-৭২] দেখুন আল্লাহ উটকে কীভাবে সৃষ্টি করেছেন? কীভাবে এর পিঠকে শক্তিশালী ও সমতল করেছেন যাতে চড়ার উপযুক্ত হয় এবং কঠিন বোঝা বহন করতে পারে; যেটা অন্যান্য পশু বহন করতে পারে না।

এভাবে আপনি যদি অন্য সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন তাহলে দেখতে পাবেন সৃষ্টিগুলোকে যে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে সে সে উদ্দেশ্যের সাথে সেগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুবহানাল্লাহু তায়ালা।

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রমাণের আরেকটি উদাহরণ হলো:

বিভিন্ন কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিগুলোও স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ। উদাহরণস্বরূপঃ আল্লাহর কাছে দোয়া করা, তারপর আল্লাহ কর্তৃক সেই দোয়া কবুল করাটা আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ। শাইখ ইবনে উছাইমীন বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সৃষ্টিকুলের জন্য বৃষ্টি চেয়ে বললেন: “হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে বৃষ্টি বর্ষন করুন!” তার পরই আকাশে মেঘ তৈরি হল। তিনি মিম্বর থেকে নামার আগে বৃষ্টি হল।” এটা স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ বহন করে।[শারহুস সাফ্‌ফারীনিয়্যাহ থেকে সমাপ্ত]

শরয়ী প্রমাণসমূহ:

শরীয়তসমূহের অস্তিত্ব। শাইখ ইবনে উছাইমীন বলেন: সকল শরীয়ত স্রষ্টার অস্তিত্ব, তাঁর পূর্ণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অনুগ্রহকে প্রমাণ করে। কারণ এই শরীয়তগুলোর অবশ্যই একজন প্রণেতা লাগবে। আর এই শরীয়তপ্রণেতা হলেন— মহান আল্লাহ।[শারহুস সাফারীনিয়্যাহ থেকে সমাপ্ত]

আপনার অন্য প্রশ্ন: আল্লাহ কেন আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন?

এর জবাব হলো: তাঁর ইবাদত, কৃতজ্ঞতা, স্মরণ ও তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য। আপনি জানেন সৃষ্টিকুলের মাঝে কাফের আছে, মুসলিমও আছে। এর কারণ হলো আল্লাহ বান্দাদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছেন তারা কি তাঁর ইবাদত করে; নাকি অন্য কারো ইবাদত করে? এ পরীক্ষা আল্লাহ্‌ প্রত্যেকের কাছে সঠিক পথ সুস্পষ্ট করার পর। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য— কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম?”[সূরা মুলক: ২] তিনি আরো বলেন: “আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদত করবে।”[সূরা যারিয়াত: ৫৬]

আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদেরকে ও আপনাকে এমন কাজের তৌফিক দান করেন যা তিনি পছন্দ করেন এবং তাকে সন্তুষ্ট করে। আর যেন বেশি বেশি দ্বীনের দাওয়াত ও দ্বীনের জন্য কাজ করার তৌফিক দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ বর্ষিত হোক।



 
Top