সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
MD Nasim Ahmed

লেনদেন ও ব্যবসা আমানতের অর্থ-সম্পদ মালিকের অনুমতি ছাড়া খরচ করার বিধান

MD Nasim Ahmed

Member

LV
3
 
Awards
11
Credit
873
প্রশ্ন: যদি আমার কাছে কারও টাকা আমানত হিসেবে জমা থাকে। আর আমি যদি বিশেষ দরকারে সেখান থেকে ঋণ হিসেবে টাকা নিয়ে প্রয়োজনে খরচ করি তাহলে কি তা হারাম হবে? দলিলের ভিত্তিতে জানতে চাই।

উত্তর: কেউ যদি কারও কাছে টাকা-পয়সা বা অন্য কোনও অর্থ-সম্পদ আমানত হিসেবে জমা রাখে তাহলে তার অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। কারণ হতে পারে, সে মৃত্যু বরণ করবে অথবা সে দেউলিয়া হয়ে যাবে। তখন উক্ত আমানত বিনষ্ট হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ইমাম মালিক রাহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

“من استُودِع مالاً، أو بُعث به معه، فلا أرى أن يَتَّجر به، ولا أن يسلفه أحدًا، ولا يحرِّكه عن حاله؛ لأني أخاف أن يُفلس، أو يموت؛ فيتلف المال، وتضيع أمانته”. اهـ.​

“কারও কাছে যদি অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রাখা হয় বা তার মাধ্যমে কোথাও কোথাও পাঠানো হয় তাহলে তা দ্বারা তার ব্যবসা করা বা অন্য কাউকে তা ধার দেওয়া বা তা তার নিজ অবস্থা থেকে সরানোকে আমি বৈধ মনে করি না। কারণ আশঙ্কা আছে যে, সে দেউলিয়া হয়ে যাবে বা মৃত্যু বরণ করবে। ফলে সম্পদ নষ্ট হবে এবং আমানত ভঙ্গ হবে।” [আল মুদাওয়ানা]।

হ্যাঁ তার উক্ত আমানত গ্রহণকারীর যদি টাকার বিশেষ প্রয়োজন হয় তাহলে মূল মালিকের কাছে তার গচ্ছিত অর্থ ব্যবহারের অনুমতি নিবে। যদি অনুমতি দেয় তাহলে ভালো। অন্যথায় তার সম্পদ যেমন ছিল তেমন থাকবে। তাতে কোনও ধরণের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। সে যদি অনুমতি ছাড়া উক্ত গচ্ছিত সম্পদ নিজের দরকারে ব্যবহার করে ফেলে তাহলে সে আমানতকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলো না। আর ব্যবহার করতে গিয়ে যদি উক্ত আমানত হারিয়ে ফেলে বা তাতে কোনও ক্ষয়-ক্ষতি করে ফেলে তাহলে সে তার ক্ষতিপূরণ দিবে। ইমাম ইবনে আবু যায়েদ আল মালিকি রহ. বলেন,

“ومن تَعدَّى على وَديعة، ضَمِنها”​

“যে ব্যক্তি আমানত লঙ্ঘন করবে সে তার জিম্মাদার হবে।” [আর রিসালাহ]

অবশ্য কতিপয় আলেম বলেন, যদি গচ্ছিত সম্পদ হয় টাকা-পয়সা আর তার অন্যান্য সম্পদ থেকে পরিশোধের ব্যবস্থা থাকে তাহলে বিশেষ দরকারে মালিকের অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার করতে পারে। তবে শর্ত হল, সে বিষয়ে সাক্ষ্য রাখতে হবে। ইমাম মালিক রাহ-কে এ ব্যাপারে পুনরায় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

“إن كان له مالٌ فيه وفاءٌ، وأَشهَدَ، فأرجو أن لا بأس به”​

“যদি তার কাছে এমন অর্থ থাকে যা দ্বারা গৃহীত ঋণ পরিশোধ করা যাবে তাহলে আশা করি তাতে কোনও সমস্যা নেই।”

الباجيّ: “وهذا في الدنانير والدراهم. ووَجهُ الجواز، إذا قلنا: إن الدنانير والدراهم لا تَتعيَّن، كأنه لا مَضرَّة على المُودِع في انتفاع المُودَع بها إذا ردَّ مِثلها،​

তবে এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, সতর্কতার স্বার্থে আমানত দাতা যেভাবে আমানত জমা রেখেছিলো তা হুবহু সেভাবেই রেখে দেওয়া এবং তাতে কোনও ধরণের হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকাই অধিক উত্তম। কারণ আমানত দাতা আমানত জমা রেখেছিলো নিরাপত্তার স্বার্থে; আমানত গ্রহীতা ইচ্ছামত তা ব্যবহার করবে বা তার দ্বারা ফায়দা উঠাবে এ জন্য নয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে আমানত রক্ষা করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

কুরআন-হাদিসে আমানত রক্ষার ব্যাপারে অনেক বক্তব্য এসেছে। যেমন:

কুরআনে এটিকে ইমানদারের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ​

“এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকারের প্রতি যত্নবান হয়।” [সূরা মুমিনূন: ৮]।

আল্লাহ তাআলা আমানতকে তার প্রাপকদের বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

إِنَّ اللَّـهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا​

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও।” [সূরা নিসা: ৫৮]।

হাদিসে আমানতের খেয়ানত করাকে মুনাফিকের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ [متفقٌ [عَلَيْهِ زَادَ في رِوَايةٍ لمسلم: وإنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أنَّهُ مُسْلِمٌ​

‘‘মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি। যথা: কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম] সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘…যদিও সে রোজা রাখে এবং সালাত পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম।’’ মহান আল্লাহ আমাদেরকে আমানত রক্ষার ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন ও সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।



উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।​
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,411Threads
Total Messages
17,342Comments
Total Members
3,720Members
Latest Messages
Rahat KibriaLatest member
Top