Well-known member
অহংকারের পরিণতি, পরিচয় এবং তার ২৮টি আলামত
অহংকার এক মারাত্মক মানসিক ব্যাধি ও নিকৃষ্ট স্বভাব। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে কবিরা গুনাহ এবং জাহান্নামে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“অহংকার বশতঃ তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা লোকমান: ১৮]
হারিসা ইবনে ওয়াহাব রাহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
“আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীর সম্পর্কে অবহিত করব?
সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই।
তিনি বললেন, “তারা হবে দুর্বল এবং নম্র স্বভাবের লোক। যারা আল্লাহর নামে কসম করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন।”
অতঃপর তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসী সম্পর্কে অবহিত করব?
সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই।
তিনি বললেন, “তারা হবে অত্যাচারী, দাম্ভিক ও অহংকারী লোক।”
[সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৫৪/ জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ, পরিচ্ছেদ: ১৩. দুর্দান্ত অহংকারী প্রতাপশালীরা জাহান্নামে এবং দুর্বল লোকেরা জান্নাতে যাবে]
মানুষের কেন অহংকার করা উচিৎ নয়?
অহংকার করা মানুষের জন্য সমীচীন নয়। এটা তার জন্য সাজে না। কারণ মানুষ নিতান্ত দুর্বল সৃষ্টি। অসুস্থ হলে সে অচল হয়ে পড়ে, ক্ষুধা-পিপাসায় সে অস্থির হয়ে যায়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে। হঠাৎ প্রচণ্ড আওয়াজে সে বেহুশ হয়ে পড়ে, শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। শরীরে প্রচণ্ড আঘাত লাগলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে সে দুশ্চিন্তায় পতিত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রচণ্ড রাগের সময় তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সুতরাং এমন দুর্বল মানুষের জন্য অহংকার করা সাজে না। অহংকার হল, আল্লাহর চাদর। কারও যদি অহংকার করা সাজে তিনি হলেন, একমাত্র মহান রাজাধিরাজ, মহা শক্তিধর, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।
১. সত্য প্রত্যাখ্যান করা।
২. মানুষকে খাটো নজরে দেখা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।
যেমন নিম্নোক্ত হাদিসটি:
ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, “মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, (তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?)।
তিনি বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন। অহংকার হল, সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা মানুষকে খাটো নজরে দেখা।”
[সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১/ কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৩৯. অহংকারের বিবরণ ও তা হারাম হওয়া]
১. ভুল করার পরও তা স্বীকার না করা। একজন অহংকারী ব্যক্তি কখনো ভুল স্বীকার করতে রাজি নয়। বরং যে কোনও মূল্যে সে নিজের কথা ও কাজকে সঠিক প্রমাণ করতে তৎপর থাকে। সে যে কোনও মূল্যে নিজের জিদের উপর অটল থাকে। কারও প্রতি অন্যায় আচরণ করলেও সে কখনো তার নিকট ক্ষমা চাইবে না। দুঃখিত, সরি, ক্ষমা করবেন, ভুল হয়ে গেছে এ কথাগুলো তার অভিধানে নেই।
২. নিজের মতটাকে সবসময় সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়ন না করা বা গুরুত্ব না দেওয়া।
৩. কথাবার্তা ও চলাফেরায় ঔদ্ধত্যভাব প্রকাশ করা।
৪. সামান্য কারণেই মানুষের প্রতি ক্রোধান্বিত হওয়া-এমনকি সম্পর্কচ্ছেদ করা।
৫. মানুষের অবদানকে খাটো করে দেখা।
৬. কেউ ভালো কাজ করলে তাকে ধন্যবাদ না দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা না জানানো।
৭. কেউ তার উপকার করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা। কেউ তার উপকার করলে সে মনে করে, এটা তার পাওনা ছিল!
৮. অন্যের উপদেশকে পাত্তা না দেওয়া। বরং এটাকে সে নিজের মান-সম্মানহানীকর মনে করে।
৯. সে চায়, মানুষ সবসময় তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিক। প্রত্যাশিত গুরুত্ব না পেলে প্রচণ্ড ক্ষেপে যায়।
১০. অহংকারী ব্যক্তি কখনো অন্যকে সালাম দেয় না রবং সে চায় অন্যেরা তাকে সালাম দিক। এরা অনেক সময় সালাম দিলেও উত্তর দেয় না।।
১১. অহংকারী নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য মিথ্যা কথা বলতে দ্বিধা করে না। সে অন্যদের সামনে তার নিজের এমন যোগ্যতা, অর্থ-সম্পদ, উচ্চপদস্থ লোকেদর সাথে তার সম্পর্ক ইত্যাদি তুলে ধরে যা আদতে সত্য নয়।
১২. স্ত্রী, সন্তান, কর্মচারী, বাড়ির কাজের লোক, ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ইত্যাদি অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহার করা। অনুরূপভাবে গরিব কৃষক-শ্রমিক, রিক্সা, চালক, ভ্যান চালক, অটো চালক, বাসের ড্রাইভার, কন্টাক্টর, এতিম শিশু, ভিক্ষুক ইত্যাদির সাথেও সে বাজে আচরণ করে, কথা কথায় রাগ দেখায় ও গালাগালি করে।
১৩. তার স্বভাবে ও আচরণে বিনয়-নম্রতা স্থান পায় না। বরং সে হয় উগ্র ও বদমেজাজি।
১৪. নিজের কার্যক্রমে খুব বেশি আত্মতৃপ্তিতে ভোগা।
১৫. অন্যের দোষত্রুটি বা দুর্বলতাকে নিয়ে হাসাহাসি করা বা তার সাথে কষ্টদায়ক আচরণ করা।
১৬. কেউ ভুল করার পর তার নিকট ক্ষমা চাইলেও সে তাকে ক্ষমা করে না।
১৭. সে তার পছন্দনীয় নয় এমন কোনও ব্যক্তির সাথে দেখা করতে চায় না বা সে তার সাথে কোথাও যাক, তার পাশে বসুক, তার বাড়িতে বেড়াতে আসুক-এটা সে চায় না।
১৮. মানুষ হিসেবে নয় বরং মানুষের পদমর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, গায়ের রং, পোশাক, মেধা ইত্যাদি বিবেচনা করে মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা।
১৯. সে নিজেকে অভাব মুক্ত মনে করে। তার দৃষ্টিতে সে স্বয়ং সম্পূর্ণ।
২০. অহংকারী ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চায় না।
২১. সে কখনো চায় না, কেউ তার সামনে দিয়ে হাঁটুক বা চলুক বা বসুক। সে চায় সে সবসময় সবার সামনে থাকবে। কোনও মাহফিলে স্টেজে সামনে চেয়ার না পেলে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে।
২২. পারিবারিক কাজে কাউকে সাহায্য করে না। এটা সে তার জন্য সম্মানহানি মনে করে।
২৩. সে নিজে অন্যের সেবা করতে রাজি নয় বরং সে চায়, সবসময় অন্যরা তার সেবা করুক। ফলে সে অন্যদেরকে শুধু কাজের বা সেবার আদেশ করে।
২৪. কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা এবং নিজেকে সংশোধনের পরিবর্তে উল্টা তার উপর রাগ করা।
২৫. ন্যায়-সঙ্গত, যৌক্তিক ও সত্য বিষয়কে জেনে-বুঝে প্রত্যাখ্যান করা।
২৬. মানুষের শারীরিক গঠন, দারিদ্রতা, বংশ মর্যাদা ইত্যাদি নিয়ে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।
২৭. সত্য জানার চেষ্টা না করা বা জ্ঞানার্জন করা থেকে মূখ ফিরিয়ে চলা।
২৮. তার থেকে থেকে বয়সে ছোট, কম শিক্ষিত বা কম পদমর্যাদার মানুষের পক্ষ থেকে কোন সংশোধনী গ্রহণ না করা বা কোনও জ্ঞান না নেওয়া যদিও তা উপকারী হয়।
এই লক্ষণগুলো আমাদের মধ্যে থাকলে ধ্বংস ও অধঃপতনের পূর্বে এখনই তওবা করে নিজেকে সংশোধন করা আবশ্যক। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
অহংকার এক মারাত্মক মানসিক ব্যাধি ও নিকৃষ্ট স্বভাব। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে কবিরা গুনাহ এবং জাহান্নামে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
“অহংকার বশতঃ তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা লোকমান: ১৮]
হারিসা ইবনে ওয়াহাব রাহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
" أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ " . قَالُوا بَلَى . قَالَ صلى الله عليه وسلم " كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعَّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لأَبَرَّهُ " . ثُمَّ قَالَ " أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ "
قَالُوا بَلَى . قَالَ " كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ
قَالُوا بَلَى . قَالَ " كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ
“আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীর সম্পর্কে অবহিত করব?
সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই।
তিনি বললেন, “তারা হবে দুর্বল এবং নম্র স্বভাবের লোক। যারা আল্লাহর নামে কসম করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন।”
অতঃপর তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসী সম্পর্কে অবহিত করব?
সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই।
তিনি বললেন, “তারা হবে অত্যাচারী, দাম্ভিক ও অহংকারী লোক।”
[সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৫৪/ জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ, পরিচ্ছেদ: ১৩. দুর্দান্ত অহংকারী প্রতাপশালীরা জাহান্নামে এবং দুর্বল লোকেরা জান্নাতে যাবে]
মানুষ কেন অহংকার করে?
একজন মানুষ নানা কারণে অহংকারী হয়ে উঠতে পারে। যেমন: অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যতা, ভালো চাকরি, উচ্চ বংশ বা বংশগত আভিজাত্য, পদমর্যাদা, নেতৃত্ব, দলীয় দাপট, হিংসা, শারীরিক সৌন্দর্য, নেক আমল ইত্যাদি। তবে এর পেছনে মূল কারণ হল, জ্ঞানের স্বল্পতা বা বিচার-বুদ্ধির ঘাটতি। কারণ প্রকৃত জ্ঞানী কখনো অহংকারী হয় না। বরং একজন মানুষ যত বেশি জ্ঞানী হয় সে তত বেশি বিনয়াবনত হয়। তার আচরণ ও কথাবার্তা হয় তত শালীন। সে হয় সহিষ্ণু। মানুষ সমাজেও একজন অহংকারী ব্যক্তি হয় অত্যন্ত ঘৃণিত। অহংকারী ব্যক্তি সর্বাবস্থায় প্রত্যাখ্যান যোগ্য।মানুষের কেন অহংকার করা উচিৎ নয়?
অহংকার করা মানুষের জন্য সমীচীন নয়। এটা তার জন্য সাজে না। কারণ মানুষ নিতান্ত দুর্বল সৃষ্টি। অসুস্থ হলে সে অচল হয়ে পড়ে, ক্ষুধা-পিপাসায় সে অস্থির হয়ে যায়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে। হঠাৎ প্রচণ্ড আওয়াজে সে বেহুশ হয়ে পড়ে, শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। শরীরে প্রচণ্ড আঘাত লাগলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে সে দুশ্চিন্তায় পতিত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রচণ্ড রাগের সময় তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সুতরাং এমন দুর্বল মানুষের জন্য অহংকার করা সাজে না। অহংকার হল, আল্লাহর চাদর। কারও যদি অহংকার করা সাজে তিনি হলেন, একমাত্র মহান রাজাধিরাজ, মহা শক্তিধর, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।
হাদিসের ভাষায় অহংকারের দুটি মূলনীতি:
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহংকারের করুণ পরিণতি বর্ণনা পূর্বক তা চেনার দুটি মূলনীতি দিয়েছেন। সে দুটি বিষয় যদি কারও মধ্যে থাকে তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই অহংকারী। সেগুলো হলো:১. সত্য প্রত্যাখ্যান করা।
২. মানুষকে খাটো নজরে দেখা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।
যেমন নিম্নোক্ত হাদিসটি:
ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ فَقَالَ رَجُلٌ : إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَناً وَنَعْلُهُ حَسَنةً فَقَالَ إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الجَمَالَ الكِبْرُ : بَطَرُ الحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ
“যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, “মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, (তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?)।
তিনি বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন। অহংকার হল, সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা মানুষকে খাটো নজরে দেখা।”
[সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১/ কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: ৩৯. অহংকারের বিবরণ ও তা হারাম হওয়া]
অহংকারীর ২৮টি আলামত:
একজন মানুষ অহংকারী কিনা তার আচরণ ও কথাবার্তায় ফুটে উঠে। নিম্নে মানুষের এমন কিছু আচরণ ও স্বভাব তুলে ধরা হল যা তার অহংকারের প্রমাণ বহন করে। অর্থাৎ এগুলোর মাধ্যমেও কারো মাঝে অহংকার আছে কিনা তা সহজে নির্ণয় করা যায়।১. ভুল করার পরও তা স্বীকার না করা। একজন অহংকারী ব্যক্তি কখনো ভুল স্বীকার করতে রাজি নয়। বরং যে কোনও মূল্যে সে নিজের কথা ও কাজকে সঠিক প্রমাণ করতে তৎপর থাকে। সে যে কোনও মূল্যে নিজের জিদের উপর অটল থাকে। কারও প্রতি অন্যায় আচরণ করলেও সে কখনো তার নিকট ক্ষমা চাইবে না। দুঃখিত, সরি, ক্ষমা করবেন, ভুল হয়ে গেছে এ কথাগুলো তার অভিধানে নেই।
২. নিজের মতটাকে সবসময় সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়ন না করা বা গুরুত্ব না দেওয়া।
৩. কথাবার্তা ও চলাফেরায় ঔদ্ধত্যভাব প্রকাশ করা।
৪. সামান্য কারণেই মানুষের প্রতি ক্রোধান্বিত হওয়া-এমনকি সম্পর্কচ্ছেদ করা।
৫. মানুষের অবদানকে খাটো করে দেখা।
৬. কেউ ভালো কাজ করলে তাকে ধন্যবাদ না দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা না জানানো।
৭. কেউ তার উপকার করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা। কেউ তার উপকার করলে সে মনে করে, এটা তার পাওনা ছিল!
৮. অন্যের উপদেশকে পাত্তা না দেওয়া। বরং এটাকে সে নিজের মান-সম্মানহানীকর মনে করে।
৯. সে চায়, মানুষ সবসময় তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিক। প্রত্যাশিত গুরুত্ব না পেলে প্রচণ্ড ক্ষেপে যায়।
১০. অহংকারী ব্যক্তি কখনো অন্যকে সালাম দেয় না রবং সে চায় অন্যেরা তাকে সালাম দিক। এরা অনেক সময় সালাম দিলেও উত্তর দেয় না।।
১১. অহংকারী নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য মিথ্যা কথা বলতে দ্বিধা করে না। সে অন্যদের সামনে তার নিজের এমন যোগ্যতা, অর্থ-সম্পদ, উচ্চপদস্থ লোকেদর সাথে তার সম্পর্ক ইত্যাদি তুলে ধরে যা আদতে সত্য নয়।
১২. স্ত্রী, সন্তান, কর্মচারী, বাড়ির কাজের লোক, ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ইত্যাদি অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহার করা। অনুরূপভাবে গরিব কৃষক-শ্রমিক, রিক্সা, চালক, ভ্যান চালক, অটো চালক, বাসের ড্রাইভার, কন্টাক্টর, এতিম শিশু, ভিক্ষুক ইত্যাদির সাথেও সে বাজে আচরণ করে, কথা কথায় রাগ দেখায় ও গালাগালি করে।
১৩. তার স্বভাবে ও আচরণে বিনয়-নম্রতা স্থান পায় না। বরং সে হয় উগ্র ও বদমেজাজি।
১৪. নিজের কার্যক্রমে খুব বেশি আত্মতৃপ্তিতে ভোগা।
১৫. অন্যের দোষত্রুটি বা দুর্বলতাকে নিয়ে হাসাহাসি করা বা তার সাথে কষ্টদায়ক আচরণ করা।
১৬. কেউ ভুল করার পর তার নিকট ক্ষমা চাইলেও সে তাকে ক্ষমা করে না।
১৭. সে তার পছন্দনীয় নয় এমন কোনও ব্যক্তির সাথে দেখা করতে চায় না বা সে তার সাথে কোথাও যাক, তার পাশে বসুক, তার বাড়িতে বেড়াতে আসুক-এটা সে চায় না।
১৮. মানুষ হিসেবে নয় বরং মানুষের পদমর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, গায়ের রং, পোশাক, মেধা ইত্যাদি বিবেচনা করে মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা।
১৯. সে নিজেকে অভাব মুক্ত মনে করে। তার দৃষ্টিতে সে স্বয়ং সম্পূর্ণ।
২০. অহংকারী ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চায় না।
২১. সে কখনো চায় না, কেউ তার সামনে দিয়ে হাঁটুক বা চলুক বা বসুক। সে চায় সে সবসময় সবার সামনে থাকবে। কোনও মাহফিলে স্টেজে সামনে চেয়ার না পেলে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে।
২২. পারিবারিক কাজে কাউকে সাহায্য করে না। এটা সে তার জন্য সম্মানহানি মনে করে।
২৩. সে নিজে অন্যের সেবা করতে রাজি নয় বরং সে চায়, সবসময় অন্যরা তার সেবা করুক। ফলে সে অন্যদেরকে শুধু কাজের বা সেবার আদেশ করে।
২৪. কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা এবং নিজেকে সংশোধনের পরিবর্তে উল্টা তার উপর রাগ করা।
২৫. ন্যায়-সঙ্গত, যৌক্তিক ও সত্য বিষয়কে জেনে-বুঝে প্রত্যাখ্যান করা।
২৬. মানুষের শারীরিক গঠন, দারিদ্রতা, বংশ মর্যাদা ইত্যাদি নিয়ে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।
২৭. সত্য জানার চেষ্টা না করা বা জ্ঞানার্জন করা থেকে মূখ ফিরিয়ে চলা।
২৮. তার থেকে থেকে বয়সে ছোট, কম শিক্ষিত বা কম পদমর্যাদার মানুষের পক্ষ থেকে কোন সংশোধনী গ্রহণ না করা বা কোনও জ্ঞান না নেওয়া যদিও তা উপকারী হয়।
এই লক্ষণগুলো আমাদের মধ্যে থাকলে ধ্বংস ও অধঃপতনের পূর্বে এখনই তওবা করে নিজেকে সংশোধন করা আবশ্যক। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
Last edited by a moderator: