ইসলামী চিন্তার উপর প্রভাব বিস্তারকারী জ্ঞানকে অপরিবর্তনীয় জ্ঞান (infallible knowledge) ও পরিবর্তনীয় জ্ঞান (fallible knowledge) এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।[1]
অপরিবর্তনীয় জ্ঞান হচ্ছে নিখুঁত জ্ঞান, যা কখনই ভুল প্রমাণিত হবে না। অর্থাৎ সর্বদা সঠিক থাকবে। এই জ্ঞান হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞান।[2]
কুরআন আল্লাহ তা‘আলা অহি আকারে রাসূল (ﷺ)-এর মাধ্যমে মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন। আর আল্লাহ প্রেরিত অহি দ্বারা পরিচালিত হয়ে কুরআনের সঠিক বুঝ শিখিয়েছেন এবং দুনিয়াবী জীবনে কুরআনকে পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর নবুঅতী জীবনে। যা সহীহ হাদীস সমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞান ছাড়া মানুষের কাছে যত জ্ঞান আছে সবই পরিবর্তনীয় জ্ঞান বা অনিশ্চিত জ্ঞান। অর্থাৎ এই জ্ঞান ভুল প্রমাণিত হ’তে পারে। মানুষের অর্জিত জ্ঞানের মধ্যে সবচাইতে বিশুদ্ধ জ্ঞান হচ্ছে বিজ্ঞান। যার দ্বারা মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিজ্ঞানের জ্ঞানও অপরিবর্তনীয় জ্ঞান (infallible knowledge) নয় এবং সে দাবী বিজ্ঞান কখনো করেনি। তার অর্থ বিজ্ঞানের জ্ঞানও পরিবর্তনীয় জ্ঞান (fallible knowledge)।[3]
বলা বাহুল্য, দুর্বল হাদীসও পরিবর্তনীয় জ্ঞানের (fallible knowledge) অন্তর্ভুক্ত। কেননা একটি দুর্বল হাদীস রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস হ’তেও পারে আবার নাও হ’তে পারে। মানুষ ত্রুটিপূর্ণ। তাই তার জ্ঞানও অপূর্ণ।[4]
গবেষকরা যখন কুরআন এবং সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যা করেন বুদ্ধি, যুক্তি বা উপমার ভিত্তিতে, তখন সেই ব্যাখ্যাগুলো আর অপরিবর্তনীয় জ্ঞান থাকে না; বরং পরিবর্তনীয় জ্ঞানে পরিণত হয়। তাই পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের কোন ব্যাখ্যা যা মানুষ তাঁর বুদ্ধি, যুক্তি বা উপমার মাধ্যমে করেছে, সেটাকে পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের প্রতিযোগী হিসাবে দাঁড় করানো গ্রহণীয় হ’তে পারে না। কেননা পরিবর্তনীয় জ্ঞান, যা ভুল হ’তে পারে, তা কখনো অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের, যা কখনো ভুল হ’তে পারে না, সমকক্ষ হ’তে পারে না। অর্থাৎ নিশ্চিত জ্ঞান আর অনিশ্চিত জ্ঞান কখনো সমান নয়। যখনই কোন মুসলিম দল বুদ্ধি, যুক্তি বা উপমার ভিত্তিতে করা কুরআন এবং সহীহ হাদীসের কোন ব্যাখ্যাকে বা কোন দুর্বল হাদীসকে কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের সমকক্ষ হিসাবে ব্যবহার করেছে অর্থাৎ ‘ভুল হ’তে পারে’ এমন জ্ঞানের উপর অটল থেকেছে এবং পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের দিকে ফিরে যেতে অস্বীকার করেছে, তখনই সেই দল বিপথগামী হয়েছে। পরিবর্তনীয় জ্ঞানের উপর অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘আহলেহাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ’ পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করাকে তাদের প্রধান মূলনীতি হিসাবে সাব্যস্ত করেছে। এক্ষণে আমরা ইসলামে বিপথগামী চিন্তা-ভাবনার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরব, যা স্বভাবতই পরিবর্তনীয় জ্ঞান থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
৩৭ হিজরী পর্যন্ত মুসলিম সমাজ পরিচালিত হয়েছে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের আলোকে। অতঃপর আলী (রাঃ) ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যকার রাজনৈতিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে দু’টি বিপথগামী দলের আবির্ভাব হয়, খারেজী ও শী‘আ। খারেজীরা তাঁদের বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যা করে। আর সেই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তারা আইনসঙ্গত খলীফা আলী (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং কবীরা গুনাহগারকে কাফের সাব্যস্ত করে। ফলে খোদ আলী (রাঃ)-কে তারা ‘কাফের’ বলে এবং তাঁকে হত্যা করে। অর্থাৎ তাদের ব্যাখ্যা যেটা ছিল পরিবর্তনীয় জ্ঞান, সেটাকে তারা অপরিবর্তনীয় জ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করল। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের নিখুঁত জ্ঞান থেকে তারা বিচ্যুত হ’ল। একইভাবে শী‘আরা তাঁদের বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে সাব্যস্ত করল যে, মুসলিমদের খলীফা বা ইমাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ঠিক করে দিয়েছেন এবং তা রাসূল (ﷺ)-এর পরিবারের মধ্যে সীমিত থাকবে। অর্থাৎ আলী (রাঃ)-এর বংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। তারা হাতে গণা কয়েকজন সাহাবী ব্যতীত সবাইকে ‘কাফের’ বলে। একইভাবে হযরত আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-কে তারা অবৈধ ‘খলীফা’ এবং ‘কাফের’ সাব্যস্ত করল। এছাড়া তারা আল্লাহর কিছু গুণ, যেমন অদৃশ্যের জ্ঞান, তাদের ইমামদেরকে দিল। যদিও শী‘আদের সমস্ত ব্যাখ্যা ছিল ‘ভুল হ’তে পারে’ জাতীয় পরিবর্তনীয় জ্ঞান। তবুও তারা সেই জ্ঞানের উপর দৃঢ় থাকল এবং পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের দিকে ফিরে গেল না।
পরবর্তীকালে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের সাথে বিরোধপূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি, ধর্মতত্ত্ব, পৌরাণিক কাহিনী, অধ্যাত্মবাদ, জীবনদর্শন, নানারূপ চিন্তাধারা, সত্য অনুসন্ধান পদ্ধতি ইত্যাদি মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে এবং মুসলিম চিন্তাবিদদের প্রভাবিত করেছে। ফলে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর মতবাদের উদ্ভব হয়েছে। যেসব বিভিন্ন আকারে ও বিন্যাসে অদ্যাবধি মুসলিম সমাজে বিরাজমান রয়েছে। যেমন ক্বাদারিয়া, জাবরিয়া, মু‘তাযিলা, মুরজিয়া, মা‘রেফাত বা মরমীবাদ (mysticism) ইত্যাদি। এইসব মতবাদের সাধারণ নির্ধারক হ’ল এগুলো সবই পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে অথবা দুর্বল হাদীস বা জাল হাদীসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ পরিবর্তনীয় জ্ঞান বা ‘ভুল হ’তে পারে’ এমন জ্ঞানের উপর স্থাপিত। কিন্তু এসব মতবাদের অনুগামীরা তাদের মতবাদের প্রতি অবিচল থেকেছে এবং তাদের মতবাদকে অপরিবর্তনীয় জ্ঞান মনে করেছে। ফলে তারা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের দিকে ফিরতে চায়নি।
বিশেষভাবে (১) ক্বাদারিয়াগণ যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যার দাবী করে বলেন যে, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাই কেবল কার্যকর, আল্লাহর ইচ্ছা নয়। কেননা যদি আল্লাহর ইচ্ছা কার্যকর থাকে, তবে বিচার দিবসে আল্লাহ ইনছাফের সাথে বিচার করতে পারবেন না। এই মতবাদের আধুনিক অভিব্যক্তি Napoleon Hill -এর Think and Grow Rich, best seller বইয়ের উক্তিতে ফুটে উঠেছে, 'You are the master of your destiny. You can influence, direct and control your own environment. You can make your life what you want it to be' (‘তুমি তোমার ভাগ্যের নিয়ন্তা। তুমি তোমার পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পার, পরিচালনা করতে পার এবং যেভাবে চাও তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার। তুমি তোমার জীবনকে যেভাবে চাও সেভাবে তৈরী করতে পার’)। এটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার অনুপ্রেরণামূলক সাহিত্যের (Motivational Literature) মূল কথা।
এই তত্ত্বের বিপরীতমুখী হ’ল (২) জাবরিয়া মতবাদ। যারা তাদের বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে কুরআন এবং হাদীসের ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কেবল আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর, বান্দার ইচ্ছা নয়। কেননা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা কার্যকর হ’লে আল্লাহ যে সর্বশক্তিমান, তাঁর সেই গুণকে অস্বীকার করা হবে। এই মতবাদের বিষয়বস্ত্ত বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একটি বড় ধর্মীয় দলের দাওয়াতী প্রোগ্রামে প্রায়শ শোনা যায়- ‘কিছু হইতে কিছু হয় না, যা কিছু হয় আল্লাহ হইতে হয়’। এতদ্ব্যতীত (৩) যুক্তি দিয়ে কুরআন এবং হাদীসের ব্যাখ্যার মাধ্যমে খারেজীদের এন্টিথিসিস হিসাবে মুরজিয়া মতবাদের উদ্ভব হ’ল। যার মূল ধারণা হচ্ছে কোন গুনাহ (কুফরী, শিরকী, কবীরা বা ছগীরা) দুনিয়াতে নির্ণয় করা যাবে না এবং এসব গুনাহের ফায়ছালা আখেরাতের জন্য রেখে দিতে হবে। অর্থাৎ একবার যে ‘বিশ্বাসী’ হ’ল কোন পাপই তাকে ‘অবিশ্বাসী’ করবে না। বর্তমান মুসলিম সমাজের বিরাট অংশ এই মতবাদের প্রতিধ্বনি করে বলে থাকেন যে, তাদের মধ্যে ঈমান ঠিক আছে। যদিও তাদের কোন আমল নেই। হালাল-হারামের বাছ-বিচার নেই এবং গুনাহ সম্বন্ধে কোন সংবেদনশীলতাও নেই। (৪) অপরদিকে যুক্তিকে সত্য অনুসন্ধানের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি বা মানদন্ড সাব্যস্ত করে যুক্তির আলোকে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা করাকেই সবচেয়ে ভালো উপায় মনে করল মু‘তাযিলা সম্প্রদায়। এমনকি তারা যুক্তিকে অহি-র উপর স্থান দিয়ে যুক্তির ফায়ছালাকে চূড়ান্ত মনে করল। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন বা সহীহ হাদীসকে যুক্তির অনুগামী করে দিল। এর দ্বারা তারা পরিবর্তনীয় জ্ঞানকে অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের উপর স্থান দিল। যেমন যুক্তি দিয়ে কুরআন এবং হাদীসের ব্যাখ্যা করে তারা বলল যে, আল্লাহ এক এবং তাঁর কোন শুরু ও শেষ নেই। এখন যদি বলা হয়, আল্লাহর গুণও তাঁর ন্যায় সনাতন ও অবিচ্ছিন্ন এবং তার কোন শুরু ও শেষ নেই, তবে সেটি শিরক হবে। তাই তারা আল্লাহর গুণাবলীকে অস্বীকার করল। তাদের মতবাদ অনুযায়ী কুরআন সৃষ্ট। মুমিন আখেরাতে আল্লাহকে দেখতে পাবে না। জানণাত ও জাহান্নাম বিচার দিবসে অস্তিত্ব লাভ করবে ইত্যাদি।
বস্ত্ততঃ মু‘তাযিলাদের অনুকরণে যুক্তিকে চূড়ান্ত মানদন্ড বিবেচনা করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যুক্তির ছত্রছায়ায় ধারণা, কল্পনা, আবেগ, পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ এবং নেতা বা আকাবেরদের উপর বুদ্ধিবৃত্তিক (intellectual) নির্ভরতা, এসব কিছুকে ব্যবহার করা হচ্ছে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। আক্বীদা ও আমলের প্রায় কোন অংশই যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যাসমূহের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। যেমন ‘আল্লাহর হাত’ অর্থ তাঁর কুদরত, ‘আল্লাহর কালাম’ অর্থ তাঁর মনের কথা, আল্লাহর কোন আকার নেই, সৃষ্ট সবকিছুর মধ্যে আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান, স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই, নবী ও আওলিয়াদের অসীলায় মুক্তি কামনা, নেককার ব্যক্তিদের রূহসমূহ মৃত্যুর পর দুনিয়াতে ফিরে এসে লোকদের প্রার্থনা শ্রবণ করে, তাছাউওফের ইলম হাছিল করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য ফরযে আয়েন, কবরস্থ আওলিয়াদের নূর তাদের মুরীদদের হৃদয়ে প্রবেশ করে, ইমামদের সিদ্ধান্তের বিপরীতে সহীহ হাদীস পাওয়া গেলেও ইমামদের সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকতে হবে ইত্যাদি বক্তব্যসমূহ।
সংক্ষেপে পূর্ববর্তী আলোচনায় আমরা দেখতে পেলাম কিভাবে পরিবর্তনীয় জ্ঞানকে অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের মত ব্যবহার করে বিভিন্ন মতবাদ নির্ধারিত হয়েছে। পরিবর্তনীয় জ্ঞানের ভুল হ’তে পারে। সেকারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে প্রত্যাশিত বিনয়, নম্রতা বা শালীনতা থাকার কথা সেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং এই সব অনিশ্চিত জ্ঞানকেই দৃঢ়তা, দাম্ভিকতা ও ঔদ্ধত্যের সাথে অনুসরণ করা হচ্ছে।
সবশেষে (৫) পরিবর্তনীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে যে মতবাদটি এদেশে তথা ভারত উপমহাদেশে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে, সেটি হ’ল মা‘রেফাত বা অধ্যাত্মবাদ (mysticism)। যা বাহ্যত মু‘তাযিলাবাদের এন্টিথিসিস তথা যুক্তির পরিবর্তে মরমী (mystic) ব্যক্তিত্বের আভ্যন্তরীণ জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির উপর নির্ভরশীল মতবাদ। অধ্যাত্মবাদ বা ‘রহস্যবাদ’ শব্দটি প্রাচীন গ্রীক উৎস থেকে এসেছে। যার অর্থ গোপন করা। এই মতবাদের বিভিন্ন ধরন সকল ধর্মীয় ঐতিহ্যে পাওয়া যায়। যেমন আদিবাসী ধর্মসমূহে, হিন্দুদের শমনবাদে, ইব্রাহীমী ধর্মসমূহে, ভারতীয় ধর্মগুলোতে, আধুনিক আধ্যাত্মিকতায় এবং নতুন যুগের ও নতুন ধর্মীয় আন্দোলনগুলিতে।[5] ইসলামী মা‘রেফাত (ছূফীবাদ) দাবী করে যে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছু থেকে আত্মাকে দূরে সরিয়ে নেওয়া। যদিও বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং অবাস্তব। তথাপি এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে রহস্যবাদের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে যা এই নিবন্ধটির থিমের (theme) সাথে সম্পর্কিত। যেমন বিভিন্ন আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মাধ্যমে ছূফী শেখ (mystic leader) একটি অনন্য বা বিকল্প চেতনার স্তরে পৌঁছে যান। যেখানে স্রষ্টার সাথে তাঁর একটি বিশেষ যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি স্রষ্টার প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। আধ্যাত্মিক সত্য বা চূড়ান্ত বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি দৈব সূত্রে প্রাপ্ত হন ও আদিষ্ট হন। তাঁর কাছে চূড়ান্ত সত্য প্রস্ফূটিত হয়। এমনকি তাঁরা স্রষ্টার সাথে এক হয়ে যান। ফল স্বরূপ তিনি অনেকটা নিখুঁত (infallible) অবস্থা লাভ করেন।
যেমনটি খৃষ্টানদের পোপবাদ তথা 'papal infallibility' ধারণাতে দেখা যায়। এই ধারণা মতে পোপ (Pope), যিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের প্রধান যাজক, তিনি ধর্মীয় ব্যাপারে যা বলেন তা সব ত্রুটি হ’তে মুক্ত। অর্থাৎ সেটি অপরিবর্তনীয় জ্ঞান এবং অনুসারীরা তা মানতে বাধ্য।[6] পোপ তার ক্যাথলিক অনুসারীদের এবং সৃষ্টিকর্তার মাঝে একজন মাধ্যম স্বরূপ। যার অসীলায় অনুসারীরা স্রষ্টার নিকট প্রার্থনা, সাহায্য অন্বেষণ এবং তাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্যসমূহ অর্জন করেন। অনুরূপভাবে মুসলমানদের ছূফী শেখরা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সুফারিশকারী হিসাবে অধিষ্ঠিত। তাদের মাধ্যমে অনুসারীরা স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করে, স্রষ্টার নিকট থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হয়, ধর্মীয় লক্ষ্য হাছিল করে এবং জান্নাত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা লাভ করে।
এভাবে ছূফীবাদ প্রতিষ্ঠানটি আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে সরাসরি চ্যানেলের পরিবর্তে একটি পরোক্ষ চ্যানেল প্রতিষ্ঠিত করেছে। ছূফী শেখরা তাদের পরিভাষায় ‘হাল’ অর্জনের দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মীয় বিষয়ে তথা বিশ্বাস ও কর্ম উভয় ক্ষেত্রে সৃজনশীল (innovative) হয়ে উঠেছেন এবং নতুন নতুন বিশ্বাস ও আমল চালু করেছেন ও করে যাচ্ছেন। যেমন যিকরের নিত্য-নতুন শব্দ ও পদ্ধতি, বিভিন্ন প্রকারের ধ্যান (meditation), নতুন নতুন দরূদ, সর্বেশ্বরবাদ (pantheism), বিভিন্ন ধরনের খতম, অদ্বৈতবাদ (nondualism/monism), সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার প্রবেশ করা ও সেখানে বিলীন হওয়া এবং তার বিপরীতে সকল সৃষ্টির মধ্যে সৃষ্টিকর্তার নূর বা জ্যোতির প্রকাশ, আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান ইত্যাদি আক্বীদা। উপরন্তু ছূফীবাদ প্রতিষ্ঠানটি রাজবংশের ফর্ম (dynastic form) লাভ করেছে। অর্থাৎ ছূফী শেখদের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও প্রভাব তাঁদের খলীফাদের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন একশ্রেণীর মুসলমান এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হচ্ছেন ও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। যা কিনা পুরোটাই পরিবর্তনীয় জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত, যা রহস্যময় এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তি কেন্দ্রিক। সর্বোপরি এটা কুরআন ও হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে স্থাপিত নয়। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হয়তো Hofstede -এর national culture থিওরীতে পাওয়া যেতে পারে। এই থিওরী অনুযায়ী আমাদের সাধারণ জাতীয় সংস্কৃতির দু’টি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে power distance বা ক্ষমতার দূরত্ব এবং uncertainty avoidance তথা অনিশ্চয়তা পরিহার। Power distance বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে উচ্চ মর্যাদায় স্থাপন করে এবং তাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যশীল একটি বিশেষ শ্রেণী তৈরী করে। ছূফী শেখদের সুউচ্চ মর্যাদা দানের মধ্যে power distance-এর বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত রয়েছে। অতঃপর Uncertainty avoidance হচ্ছে ঝুঁকি না নেওয়া বা অনিশ্চয়তা পরিহার করা। ছূফী শেখরা জান্নাত পাওয়ার যেরূপ নিশ্চয়তা দেন, তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এর সাথে তাদের মধ্যে রয়েছে দ্বীনের জ্ঞানের এবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের অভাব। তাই একশ্রেণীর মুসলমান ছূফী শেখদের মাঝে uncertainty avoidance তথা অনিশ্চয়তা পরিহার খুঁজে পান। ফলে তারা সেদিকে ধাবিত হন।
পরিশেষে সঠিক ও পরিপূর্ণ ইসলাম কায়েমের জন্য পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞান এবং পরিবর্তনীয় জ্ঞানের পার্থক্য সম্বন্ধে সচেতন থাকা অতীব যরূরী। সর্বদা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানমুখী হওয়ার সংকল্প লালন করা আবশ্যক। পরিবর্তনীয় জ্ঞান ভিত্তিক বিশ্বাস ও আমল সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে হবে। কখনও কখনও পরিবর্তনীয় জ্ঞান ভিত্তিক বিশ্বাস ও আমল সবার অলক্ষ্যে, চুপিসারে বা ছদ্মবেশে মুসলমানদের মনে অনুপ্রবেশ করে এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করে। সেকারণ সর্বদা পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞান অন্বেষণ ও চর্চা অব্যাহত রেখে সকল বিভ্রান্তি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!
[1]. ডেভিড লুইস (১৯৯৬), ইলুইসিব নলেজ, অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অফ ফিলোসফী, খন্ড ৭৪, নং ৪।
[2]. আল্লাহ বলেন, এই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই’ (বাক্বারাহ ২/২)। তিনি স্বীয় রাসূল সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি নিজ খেয়াল-খুশীমত কোন কথা বলেন না’। ‘(যা বলেন) সেটি অহি ব্যতীত নয়, যা তার নিকট প্রত্যাদেশ করা হয়’ (নজম ৫৩/৩-৪)।
[3]. অ্যালান এফ. চার্লস, হোয়াট ইজ দিস থিং কলড সায়েন্স? (চতুর্থ সংস্করণ, ইন্ডিয়ানাপোলিস/ল্যামব্রিজ : হ্যাকেট পাবলিশিং কোম্পানী)।
[4]. রাসূল (ﷺ) বলেন, প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর শ্রেষ্ঠ ভুলকারী হ’ল তওবাকারীগণ (তিরমিযী হা/২৪৯৯; মিশকাত হা/২৩৪১)।
[5]. দ্য স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফী (২০১৬), দ্য মেটাফিজিক্স রিসার্চ ল্যাব, সেন্টার ফর স্টাডি অফ ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড ইনফরমেশন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা।
[6]. Papal infallibility - Wikipedia.
অপরিবর্তনীয় জ্ঞান হচ্ছে নিখুঁত জ্ঞান, যা কখনই ভুল প্রমাণিত হবে না। অর্থাৎ সর্বদা সঠিক থাকবে। এই জ্ঞান হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞান।[2]
কুরআন আল্লাহ তা‘আলা অহি আকারে রাসূল (ﷺ)-এর মাধ্যমে মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন। আর আল্লাহ প্রেরিত অহি দ্বারা পরিচালিত হয়ে কুরআনের সঠিক বুঝ শিখিয়েছেন এবং দুনিয়াবী জীবনে কুরআনকে পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর নবুঅতী জীবনে। যা সহীহ হাদীস সমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞান ছাড়া মানুষের কাছে যত জ্ঞান আছে সবই পরিবর্তনীয় জ্ঞান বা অনিশ্চিত জ্ঞান। অর্থাৎ এই জ্ঞান ভুল প্রমাণিত হ’তে পারে। মানুষের অর্জিত জ্ঞানের মধ্যে সবচাইতে বিশুদ্ধ জ্ঞান হচ্ছে বিজ্ঞান। যার দ্বারা মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিজ্ঞানের জ্ঞানও অপরিবর্তনীয় জ্ঞান (infallible knowledge) নয় এবং সে দাবী বিজ্ঞান কখনো করেনি। তার অর্থ বিজ্ঞানের জ্ঞানও পরিবর্তনীয় জ্ঞান (fallible knowledge)।[3]
বলা বাহুল্য, দুর্বল হাদীসও পরিবর্তনীয় জ্ঞানের (fallible knowledge) অন্তর্ভুক্ত। কেননা একটি দুর্বল হাদীস রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস হ’তেও পারে আবার নাও হ’তে পারে। মানুষ ত্রুটিপূর্ণ। তাই তার জ্ঞানও অপূর্ণ।[4]
গবেষকরা যখন কুরআন এবং সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যা করেন বুদ্ধি, যুক্তি বা উপমার ভিত্তিতে, তখন সেই ব্যাখ্যাগুলো আর অপরিবর্তনীয় জ্ঞান থাকে না; বরং পরিবর্তনীয় জ্ঞানে পরিণত হয়। তাই পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের কোন ব্যাখ্যা যা মানুষ তাঁর বুদ্ধি, যুক্তি বা উপমার মাধ্যমে করেছে, সেটাকে পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের প্রতিযোগী হিসাবে দাঁড় করানো গ্রহণীয় হ’তে পারে না। কেননা পরিবর্তনীয় জ্ঞান, যা ভুল হ’তে পারে, তা কখনো অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের, যা কখনো ভুল হ’তে পারে না, সমকক্ষ হ’তে পারে না। অর্থাৎ নিশ্চিত জ্ঞান আর অনিশ্চিত জ্ঞান কখনো সমান নয়। যখনই কোন মুসলিম দল বুদ্ধি, যুক্তি বা উপমার ভিত্তিতে করা কুরআন এবং সহীহ হাদীসের কোন ব্যাখ্যাকে বা কোন দুর্বল হাদীসকে কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের সমকক্ষ হিসাবে ব্যবহার করেছে অর্থাৎ ‘ভুল হ’তে পারে’ এমন জ্ঞানের উপর অটল থেকেছে এবং পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের দিকে ফিরে যেতে অস্বীকার করেছে, তখনই সেই দল বিপথগামী হয়েছে। পরিবর্তনীয় জ্ঞানের উপর অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘আহলেহাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ’ পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করাকে তাদের প্রধান মূলনীতি হিসাবে সাব্যস্ত করেছে। এক্ষণে আমরা ইসলামে বিপথগামী চিন্তা-ভাবনার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরব, যা স্বভাবতই পরিবর্তনীয় জ্ঞান থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
৩৭ হিজরী পর্যন্ত মুসলিম সমাজ পরিচালিত হয়েছে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের আলোকে। অতঃপর আলী (রাঃ) ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যকার রাজনৈতিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে দু’টি বিপথগামী দলের আবির্ভাব হয়, খারেজী ও শী‘আ। খারেজীরা তাঁদের বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যা করে। আর সেই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তারা আইনসঙ্গত খলীফা আলী (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং কবীরা গুনাহগারকে কাফের সাব্যস্ত করে। ফলে খোদ আলী (রাঃ)-কে তারা ‘কাফের’ বলে এবং তাঁকে হত্যা করে। অর্থাৎ তাদের ব্যাখ্যা যেটা ছিল পরিবর্তনীয় জ্ঞান, সেটাকে তারা অপরিবর্তনীয় জ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করল। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের নিখুঁত জ্ঞান থেকে তারা বিচ্যুত হ’ল। একইভাবে শী‘আরা তাঁদের বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে সাব্যস্ত করল যে, মুসলিমদের খলীফা বা ইমাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ঠিক করে দিয়েছেন এবং তা রাসূল (ﷺ)-এর পরিবারের মধ্যে সীমিত থাকবে। অর্থাৎ আলী (রাঃ)-এর বংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। তারা হাতে গণা কয়েকজন সাহাবী ব্যতীত সবাইকে ‘কাফের’ বলে। একইভাবে হযরত আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-কে তারা অবৈধ ‘খলীফা’ এবং ‘কাফের’ সাব্যস্ত করল। এছাড়া তারা আল্লাহর কিছু গুণ, যেমন অদৃশ্যের জ্ঞান, তাদের ইমামদেরকে দিল। যদিও শী‘আদের সমস্ত ব্যাখ্যা ছিল ‘ভুল হ’তে পারে’ জাতীয় পরিবর্তনীয় জ্ঞান। তবুও তারা সেই জ্ঞানের উপর দৃঢ় থাকল এবং পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের দিকে ফিরে গেল না।
পরবর্তীকালে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের সাথে বিরোধপূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতি, ধর্মতত্ত্ব, পৌরাণিক কাহিনী, অধ্যাত্মবাদ, জীবনদর্শন, নানারূপ চিন্তাধারা, সত্য অনুসন্ধান পদ্ধতি ইত্যাদি মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে এবং মুসলিম চিন্তাবিদদের প্রভাবিত করেছে। ফলে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর মতবাদের উদ্ভব হয়েছে। যেসব বিভিন্ন আকারে ও বিন্যাসে অদ্যাবধি মুসলিম সমাজে বিরাজমান রয়েছে। যেমন ক্বাদারিয়া, জাবরিয়া, মু‘তাযিলা, মুরজিয়া, মা‘রেফাত বা মরমীবাদ (mysticism) ইত্যাদি। এইসব মতবাদের সাধারণ নির্ধারক হ’ল এগুলো সবই পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে অথবা দুর্বল হাদীস বা জাল হাদীসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ পরিবর্তনীয় জ্ঞান বা ‘ভুল হ’তে পারে’ এমন জ্ঞানের উপর স্থাপিত। কিন্তু এসব মতবাদের অনুগামীরা তাদের মতবাদের প্রতি অবিচল থেকেছে এবং তাদের মতবাদকে অপরিবর্তনীয় জ্ঞান মনে করেছে। ফলে তারা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের দিকে ফিরতে চায়নি।
বিশেষভাবে (১) ক্বাদারিয়াগণ যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যার দাবী করে বলেন যে, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাই কেবল কার্যকর, আল্লাহর ইচ্ছা নয়। কেননা যদি আল্লাহর ইচ্ছা কার্যকর থাকে, তবে বিচার দিবসে আল্লাহ ইনছাফের সাথে বিচার করতে পারবেন না। এই মতবাদের আধুনিক অভিব্যক্তি Napoleon Hill -এর Think and Grow Rich, best seller বইয়ের উক্তিতে ফুটে উঠেছে, 'You are the master of your destiny. You can influence, direct and control your own environment. You can make your life what you want it to be' (‘তুমি তোমার ভাগ্যের নিয়ন্তা। তুমি তোমার পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পার, পরিচালনা করতে পার এবং যেভাবে চাও তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার। তুমি তোমার জীবনকে যেভাবে চাও সেভাবে তৈরী করতে পার’)। এটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার অনুপ্রেরণামূলক সাহিত্যের (Motivational Literature) মূল কথা।
এই তত্ত্বের বিপরীতমুখী হ’ল (২) জাবরিয়া মতবাদ। যারা তাদের বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে কুরআন এবং হাদীসের ব্যাখ্যা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কেবল আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর, বান্দার ইচ্ছা নয়। কেননা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা কার্যকর হ’লে আল্লাহ যে সর্বশক্তিমান, তাঁর সেই গুণকে অস্বীকার করা হবে। এই মতবাদের বিষয়বস্ত্ত বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একটি বড় ধর্মীয় দলের দাওয়াতী প্রোগ্রামে প্রায়শ শোনা যায়- ‘কিছু হইতে কিছু হয় না, যা কিছু হয় আল্লাহ হইতে হয়’। এতদ্ব্যতীত (৩) যুক্তি দিয়ে কুরআন এবং হাদীসের ব্যাখ্যার মাধ্যমে খারেজীদের এন্টিথিসিস হিসাবে মুরজিয়া মতবাদের উদ্ভব হ’ল। যার মূল ধারণা হচ্ছে কোন গুনাহ (কুফরী, শিরকী, কবীরা বা ছগীরা) দুনিয়াতে নির্ণয় করা যাবে না এবং এসব গুনাহের ফায়ছালা আখেরাতের জন্য রেখে দিতে হবে। অর্থাৎ একবার যে ‘বিশ্বাসী’ হ’ল কোন পাপই তাকে ‘অবিশ্বাসী’ করবে না। বর্তমান মুসলিম সমাজের বিরাট অংশ এই মতবাদের প্রতিধ্বনি করে বলে থাকেন যে, তাদের মধ্যে ঈমান ঠিক আছে। যদিও তাদের কোন আমল নেই। হালাল-হারামের বাছ-বিচার নেই এবং গুনাহ সম্বন্ধে কোন সংবেদনশীলতাও নেই। (৪) অপরদিকে যুক্তিকে সত্য অনুসন্ধানের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি বা মানদন্ড সাব্যস্ত করে যুক্তির আলোকে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা করাকেই সবচেয়ে ভালো উপায় মনে করল মু‘তাযিলা সম্প্রদায়। এমনকি তারা যুক্তিকে অহি-র উপর স্থান দিয়ে যুক্তির ফায়ছালাকে চূড়ান্ত মনে করল। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন বা সহীহ হাদীসকে যুক্তির অনুগামী করে দিল। এর দ্বারা তারা পরিবর্তনীয় জ্ঞানকে অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের উপর স্থান দিল। যেমন যুক্তি দিয়ে কুরআন এবং হাদীসের ব্যাখ্যা করে তারা বলল যে, আল্লাহ এক এবং তাঁর কোন শুরু ও শেষ নেই। এখন যদি বলা হয়, আল্লাহর গুণও তাঁর ন্যায় সনাতন ও অবিচ্ছিন্ন এবং তার কোন শুরু ও শেষ নেই, তবে সেটি শিরক হবে। তাই তারা আল্লাহর গুণাবলীকে অস্বীকার করল। তাদের মতবাদ অনুযায়ী কুরআন সৃষ্ট। মুমিন আখেরাতে আল্লাহকে দেখতে পাবে না। জানণাত ও জাহান্নাম বিচার দিবসে অস্তিত্ব লাভ করবে ইত্যাদি।
বস্ত্ততঃ মু‘তাযিলাদের অনুকরণে যুক্তিকে চূড়ান্ত মানদন্ড বিবেচনা করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যুক্তির ছত্রছায়ায় ধারণা, কল্পনা, আবেগ, পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ এবং নেতা বা আকাবেরদের উপর বুদ্ধিবৃত্তিক (intellectual) নির্ভরতা, এসব কিছুকে ব্যবহার করা হচ্ছে কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। আক্বীদা ও আমলের প্রায় কোন অংশই যুক্তিভিত্তিক ব্যাখ্যাসমূহের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। যেমন ‘আল্লাহর হাত’ অর্থ তাঁর কুদরত, ‘আল্লাহর কালাম’ অর্থ তাঁর মনের কথা, আল্লাহর কোন আকার নেই, সৃষ্ট সবকিছুর মধ্যে আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান, স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই, নবী ও আওলিয়াদের অসীলায় মুক্তি কামনা, নেককার ব্যক্তিদের রূহসমূহ মৃত্যুর পর দুনিয়াতে ফিরে এসে লোকদের প্রার্থনা শ্রবণ করে, তাছাউওফের ইলম হাছিল করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য ফরযে আয়েন, কবরস্থ আওলিয়াদের নূর তাদের মুরীদদের হৃদয়ে প্রবেশ করে, ইমামদের সিদ্ধান্তের বিপরীতে সহীহ হাদীস পাওয়া গেলেও ইমামদের সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকতে হবে ইত্যাদি বক্তব্যসমূহ।
সংক্ষেপে পূর্ববর্তী আলোচনায় আমরা দেখতে পেলাম কিভাবে পরিবর্তনীয় জ্ঞানকে অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের মত ব্যবহার করে বিভিন্ন মতবাদ নির্ধারিত হয়েছে। পরিবর্তনীয় জ্ঞানের ভুল হ’তে পারে। সেকারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে প্রত্যাশিত বিনয়, নম্রতা বা শালীনতা থাকার কথা সেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং এই সব অনিশ্চিত জ্ঞানকেই দৃঢ়তা, দাম্ভিকতা ও ঔদ্ধত্যের সাথে অনুসরণ করা হচ্ছে।
সবশেষে (৫) পরিবর্তনীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে যে মতবাদটি এদেশে তথা ভারত উপমহাদেশে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে, সেটি হ’ল মা‘রেফাত বা অধ্যাত্মবাদ (mysticism)। যা বাহ্যত মু‘তাযিলাবাদের এন্টিথিসিস তথা যুক্তির পরিবর্তে মরমী (mystic) ব্যক্তিত্বের আভ্যন্তরীণ জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির উপর নির্ভরশীল মতবাদ। অধ্যাত্মবাদ বা ‘রহস্যবাদ’ শব্দটি প্রাচীন গ্রীক উৎস থেকে এসেছে। যার অর্থ গোপন করা। এই মতবাদের বিভিন্ন ধরন সকল ধর্মীয় ঐতিহ্যে পাওয়া যায়। যেমন আদিবাসী ধর্মসমূহে, হিন্দুদের শমনবাদে, ইব্রাহীমী ধর্মসমূহে, ভারতীয় ধর্মগুলোতে, আধুনিক আধ্যাত্মিকতায় এবং নতুন যুগের ও নতুন ধর্মীয় আন্দোলনগুলিতে।[5] ইসলামী মা‘রেফাত (ছূফীবাদ) দাবী করে যে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছু থেকে আত্মাকে দূরে সরিয়ে নেওয়া। যদিও বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং অবাস্তব। তথাপি এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে রহস্যবাদের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে যা এই নিবন্ধটির থিমের (theme) সাথে সম্পর্কিত। যেমন বিভিন্ন আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মাধ্যমে ছূফী শেখ (mystic leader) একটি অনন্য বা বিকল্প চেতনার স্তরে পৌঁছে যান। যেখানে স্রষ্টার সাথে তাঁর একটি বিশেষ যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি স্রষ্টার প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। আধ্যাত্মিক সত্য বা চূড়ান্ত বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি দৈব সূত্রে প্রাপ্ত হন ও আদিষ্ট হন। তাঁর কাছে চূড়ান্ত সত্য প্রস্ফূটিত হয়। এমনকি তাঁরা স্রষ্টার সাথে এক হয়ে যান। ফল স্বরূপ তিনি অনেকটা নিখুঁত (infallible) অবস্থা লাভ করেন।
যেমনটি খৃষ্টানদের পোপবাদ তথা 'papal infallibility' ধারণাতে দেখা যায়। এই ধারণা মতে পোপ (Pope), যিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের প্রধান যাজক, তিনি ধর্মীয় ব্যাপারে যা বলেন তা সব ত্রুটি হ’তে মুক্ত। অর্থাৎ সেটি অপরিবর্তনীয় জ্ঞান এবং অনুসারীরা তা মানতে বাধ্য।[6] পোপ তার ক্যাথলিক অনুসারীদের এবং সৃষ্টিকর্তার মাঝে একজন মাধ্যম স্বরূপ। যার অসীলায় অনুসারীরা স্রষ্টার নিকট প্রার্থনা, সাহায্য অন্বেষণ এবং তাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্যসমূহ অর্জন করেন। অনুরূপভাবে মুসলমানদের ছূফী শেখরা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সুফারিশকারী হিসাবে অধিষ্ঠিত। তাদের মাধ্যমে অনুসারীরা স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন করে, স্রষ্টার নিকট থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হয়, ধর্মীয় লক্ষ্য হাছিল করে এবং জান্নাত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা লাভ করে।
এভাবে ছূফীবাদ প্রতিষ্ঠানটি আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে সরাসরি চ্যানেলের পরিবর্তে একটি পরোক্ষ চ্যানেল প্রতিষ্ঠিত করেছে। ছূফী শেখরা তাদের পরিভাষায় ‘হাল’ অর্জনের দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মীয় বিষয়ে তথা বিশ্বাস ও কর্ম উভয় ক্ষেত্রে সৃজনশীল (innovative) হয়ে উঠেছেন এবং নতুন নতুন বিশ্বাস ও আমল চালু করেছেন ও করে যাচ্ছেন। যেমন যিকরের নিত্য-নতুন শব্দ ও পদ্ধতি, বিভিন্ন প্রকারের ধ্যান (meditation), নতুন নতুন দরূদ, সর্বেশ্বরবাদ (pantheism), বিভিন্ন ধরনের খতম, অদ্বৈতবাদ (nondualism/monism), সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার প্রবেশ করা ও সেখানে বিলীন হওয়া এবং তার বিপরীতে সকল সৃষ্টির মধ্যে সৃষ্টিকর্তার নূর বা জ্যোতির প্রকাশ, আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান ইত্যাদি আক্বীদা। উপরন্তু ছূফীবাদ প্রতিষ্ঠানটি রাজবংশের ফর্ম (dynastic form) লাভ করেছে। অর্থাৎ ছূফী শেখদের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও প্রভাব তাঁদের খলীফাদের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন একশ্রেণীর মুসলমান এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হচ্ছেন ও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। যা কিনা পুরোটাই পরিবর্তনীয় জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত, যা রহস্যময় এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তি কেন্দ্রিক। সর্বোপরি এটা কুরআন ও হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে স্থাপিত নয়। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হয়তো Hofstede -এর national culture থিওরীতে পাওয়া যেতে পারে। এই থিওরী অনুযায়ী আমাদের সাধারণ জাতীয় সংস্কৃতির দু’টি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে power distance বা ক্ষমতার দূরত্ব এবং uncertainty avoidance তথা অনিশ্চয়তা পরিহার। Power distance বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে উচ্চ মর্যাদায় স্থাপন করে এবং তাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যশীল একটি বিশেষ শ্রেণী তৈরী করে। ছূফী শেখদের সুউচ্চ মর্যাদা দানের মধ্যে power distance-এর বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত রয়েছে। অতঃপর Uncertainty avoidance হচ্ছে ঝুঁকি না নেওয়া বা অনিশ্চয়তা পরিহার করা। ছূফী শেখরা জান্নাত পাওয়ার যেরূপ নিশ্চয়তা দেন, তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এর সাথে তাদের মধ্যে রয়েছে দ্বীনের জ্ঞানের এবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানের অভাব। তাই একশ্রেণীর মুসলমান ছূফী শেখদের মাঝে uncertainty avoidance তথা অনিশ্চয়তা পরিহার খুঁজে পান। ফলে তারা সেদিকে ধাবিত হন।
পরিশেষে সঠিক ও পরিপূর্ণ ইসলাম কায়েমের জন্য পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞান এবং পরিবর্তনীয় জ্ঞানের পার্থক্য সম্বন্ধে সচেতন থাকা অতীব যরূরী। সর্বদা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞানমুখী হওয়ার সংকল্প লালন করা আবশ্যক। পরিবর্তনীয় জ্ঞান ভিত্তিক বিশ্বাস ও আমল সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে হবে। কখনও কখনও পরিবর্তনীয় জ্ঞান ভিত্তিক বিশ্বাস ও আমল সবার অলক্ষ্যে, চুপিসারে বা ছদ্মবেশে মুসলমানদের মনে অনুপ্রবেশ করে এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করে। সেকারণ সর্বদা পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীসের অপরিবর্তনীয় জ্ঞান অন্বেষণ ও চর্চা অব্যাহত রেখে সকল বিভ্রান্তি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!
[1]. ডেভিড লুইস (১৯৯৬), ইলুইসিব নলেজ, অস্ট্রেলিয়ান জার্নাল অফ ফিলোসফী, খন্ড ৭৪, নং ৪।
[2]. আল্লাহ বলেন, এই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই’ (বাক্বারাহ ২/২)। তিনি স্বীয় রাসূল সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি নিজ খেয়াল-খুশীমত কোন কথা বলেন না’। ‘(যা বলেন) সেটি অহি ব্যতীত নয়, যা তার নিকট প্রত্যাদেশ করা হয়’ (নজম ৫৩/৩-৪)।
[3]. অ্যালান এফ. চার্লস, হোয়াট ইজ দিস থিং কলড সায়েন্স? (চতুর্থ সংস্করণ, ইন্ডিয়ানাপোলিস/ল্যামব্রিজ : হ্যাকেট পাবলিশিং কোম্পানী)।
[4]. রাসূল (ﷺ) বলেন, প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর শ্রেষ্ঠ ভুলকারী হ’ল তওবাকারীগণ (তিরমিযী হা/২৪৯৯; মিশকাত হা/২৩৪১)।
[5]. দ্য স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফী (২০১৬), দ্য মেটাফিজিক্স রিসার্চ ল্যাব, সেন্টার ফর স্টাডি অফ ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড ইনফরমেশন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা।
[6]. Papal infallibility - Wikipedia.
প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
প্রফেসর (অবঃ), লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা; কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম এ্যান্ড মিনারেলস্, সঊদীআরব; সুলতান ক্বাবূস ইউনিভার্সিটি, ওমান।
প্রফেসর (অবঃ), লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা; কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম এ্যান্ড মিনারেলস্, সঊদীআরব; সুলতান ক্বাবূস ইউনিভার্সিটি, ওমান।
Last edited: