If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
হে মুসলিম বোন, আল্লাহ আপনাকে দ্বীনের জ্ঞান ও কল্যাণের পথ প্রদর্শন করুন! জেনে রাখুন, সালাত শুদ্ধ হওয়ার মূল ভিত্তি হচ্ছে অজু। অজু ছাড়া সালাত হবে না।
মহাসত্যবাদী আল্লাহ তাআলা বলেন,
আবদুল্লাহ ইবন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না।’[2]
আলী ইবন আবূ তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সালাতের চাবিকাঠি হলো পবিত্রতা।’[3]
অপবিত্র ব্যক্তিকে সালাতের জন্য আবশ্যকতার ভিত্তিতে অজু করতে হবে―এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ একমত।
অজুর ফরজসমূহ
অজুর ফরজ পাঁচটি। এখন আমরা তা দলীলসহ উল্লেখ করব।
১. নিয়াত করা
ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়াত একটি আবশ্যকীয় বিষয়। নিয়াত করতে হয় অন্তরে। মুখে উচ্চারণ করে নিয়াত করা বৈধ নয়; বরং বিদআত। মুখে উচ্চারণ করে নিয়াত করার ব্যাপারে কোনো বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। অতএব, কোনো মহিলা মুখে উচ্চারণ করে বলবে না, ‘আমি অজু করার নিয়াত করলাম’ ‘আমি অমুক সালাতের জন্য অজু করার নিয়াত করলাম’ ইত্যাদি। তা ছাড়া এসব মুখস্থ করে উচ্চারণ করা মানুষের জন্য কষ্টকর। বরং এভাবে উচ্চারণ করে নিয়াত করা শয়তানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা। আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। নিয়াত মানে মুখে উচ্চারণ করা নয় বরং কোনো কিছুর ইচ্ছা করা বা কোনো কাজের সংকল্প করা।
নিয়াত ওয়াজিব হওয়ার দলীল:
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়াতের উপর। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়াত করে।’[4]
২. একবার মুখমণ্ডল ধৌত করা।
৩. দুই হাত কনুইসহ একবার ধৌত করা।
৪. একবার মাথা মাসাহ করা।
৫. একবার দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা।
অজুর এ সব ফরযের দলীল হচ্ছে আল্লাহর এ বাণী:
অজুর সুন্নাত
অজুর সুন্নাত মোট ১২টি। তা হলো:
১. বিসমিল্লাহ বলা
আল্লাহর নাম নিয়ে অজু আরম্ভ করতে হবে। অতএব, অজু করার শুরুতে বলতে হবে, বিসমিল্লাহ। বিসমিল্লাহ বলার ব্যাপারে বেশকিছু দুর্বল হাদীস আছে। কিছু আলিমের মতে সনদ বা সূত্রগুলোর সমষ্টিতে হাদীসগুলো হাসান বা গ্রহণযোগ্য। হাদীসগুলো থেকে অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব প্রমাণ হয়। এ ব্যাপারে আলিমদের মাঝে কোনো মতানৈক্য নেই।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলন করার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিস শায়তানা মা রযাকাতানা’, আর ঐ মিলনে তাদের কোনো সন্তান নির্ধারিত হয়, তাহলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না।’[6]
সহবাস করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলার গুরুত্ব এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয়। সুতরাং অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা আরো বেশি যুক্তিযুক্ত। ইমাম বুখারী এমনটি বুঝেছেন। তাই তিনি সহীহুল বুখারীতে এভাবে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন ‘মিলন ও সর্ববস্থায় বিসমিল্লাহ বলা’।
ইমাম ইবন হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘অনুচ্ছেদে উল্লিখিত হাদীসটি থেকে সর্ববস্থায় বিসমিল্লাহ বলা প্রমাণ হয়। তবে মিলনের সময় বিসমিল্লাহ বলা শরীআতসম্মত হলে সবসময় বিসমিল্লাহ বলা আরো বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ, মিলনের সময় চুপ থাকতে বলা হয়েছে। অতএব, অন্য সময় বলা আরো বেশি যুক্তিযুক্ত।’[7]
কেউ যদি অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে কি তার অজু বাতিল হয়ে যাবে? জবাব, না বাতিল হবে না। কারণ, এটি মুস্তাহাব। আর মুস্তাহাব বিষয়ের কারণে অজু বাতিল হয় না। একবার ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কেউ যদি অজুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে তার বিধান কী?’ তিনি বলেন, ‘যদি ভুলে যায় তাহলে তার অজু হয়ে যাবে।’[8]
২. মিসওয়াক করা:
স্বাভাবিকভাবে যে-কোনো সময়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব; বিশেষকরে অজুর সময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি যদি আমার উম্মাতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক অজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’[9]
আরেক হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি যদি আমার উম্মাতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক অজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’[10]
৩. অজুর শুরুতে দুহাতের তালু ধোয়া।
৪. কুলি করা, নাকে পানি নেওয়া এবং নাক ঝাড়া।[11]
৫. আঙুল খিলাল করা।
৬. অজুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধৌত করা।
এই চারটি সুন্নাতের দলীলসমূহ ‘অজুর পদ্ধতি’ আলোচনায় উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
৭. অজুর অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় ডান থেকে ধোয়া। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধ্যানুযায়ী প্রত্যেকটি কাজ ডান দিক থেকে করা পছন্দ করতেন। যেমন: পবিত্রতা অর্জন, চুল আচড়ানো, জুতা পরিধান করা।’[12]
উম্মু আতিয়্যা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত মেয়েকে গোসল দেওয়ার সময় আমাদের বলছিলেন, ‘তোমরা ডান দিক থেকে শুরু করো আর অজুর স্থান থেকে শুরু করো।’[13]
৮. ধারাবাহিক ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে অজু করা
অজু করার সময় ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ধৌত করা। একটি অঙ্গ ধৌত করার আরেকটা অঙ্গ ধৌত করা; দীর্ঘবিরতি না নেওয়া।
৯. অজুতে পরিমিত পরিমাণ পানি ব্যবহার করা, অপচয় না করা
আল্লাহ তাআলা বলেন:
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা খাও, পান করো, সাদকা করো এবং পরিধান করো, যতক্ষণ না সেগুলোতে অপচয় ও অহংকার যুক্ত হয়।’[15]
এই নিষেধাজ্ঞাটি ব্যাপক। সবধরনের অপচয়ই এ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। অজুর পানিতে অপচয়ও এর অন্তর্ভুক্ত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মুদ পরিমাণ পানিতে অজু করতেন, যেমনটি সাফীনা রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে।[16]
অন্য সহীহ হাদীস পাওয়া যায় যে, তিনি এক মুদের দুই তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে অজু করতেন।[17]
মুদ-এর পরিচয়: একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দুহাতের তালু একত্রিত করলে তাতে যে পরিমাণ পানি ধরে সেটাই এক মুদ।
১০. অজুর অঙ্গের শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা
অজুর অঙ্গের শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অজুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে আরো অতিরিক্ত ধোয়া। যেমন, দুই হাত ধৌত করার সময় কনুই পর্যন্ত ধৌত না করে আরো বেশি ধৌত করা, এমনকী বগল পর্যন্ত ধৌত করা। এটা সীমালঙ্ঘন ও খারাপ নয়। কারণ, হাদীসে এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল চমকাতে থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে তার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চায় সে যেন তা বৃদ্ধি করে নেয়।’[18]
আল্লামা ইবনুল আসীর এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে, অজুর অঙ্গগুলো যেমন হাত, পা ও চেহারা চমকাতে থাকবে। অজুর অঙ্গ চেহারা, দুই হাত ও দুই পা’কে ঘোড়ার চেহারা, দুই হাত ও দুই পায়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে।’[19]
এখন প্রশ্ন হলো, শুভ্রতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সীমা থেকে কতটুকু বৃদ্ধি করা যাবে?
হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আলিমগণ কতটুকু বৃদ্ধি করা যাবে তা নিয়ে মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন, হাত কাঁধ পর্যন্ত আর পা হাঁটু পর্যন্ত বৃদ্ধি করে ধৌত করা যাবে। এ ব্যাপারে আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই তার মত। ইবন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা নিজে এমনটা করেছেন।’[20]
আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু যে হাদীসটির দিকে হাফিয ইবন হাজার আসকালানী ইঙ্গিত দিয়েছেন সে হাদীসটি ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেছেন। আবূ হাযম বলেন, ‘একদিন আমি আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পিছনে ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি সালাতের জন্য অজু করছিলেন। অজুতে তিনি তার হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে ধুচ্ছিলেন এমনকী বগল পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। আমি তাকে বলে বসলাম, ‘এটা আবার কেমন অজু?’ তিনি বললেন, ‘ওহে ফাররুখের বংশধর! তোমরা এখানে রয়েছ? আমি যদি জানতাম যে, তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এভাবে অজু করতাম না। জেনে রাখো, আমি আমার বন্ধু মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে স্থান পর্যন্ত অজুর পানি পৌঁছাবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির সৌন্দর্য পৌঁছবে।’[21]
এখানে সৌন্দর্য দ্বারা উদ্দেশ্য অজুর অঙ্গের উজ্জ্বলতা ও ঝলকানি বোঝানো হয়েছে।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘এরপর আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু পায়ের নালা পর্যন্ত ডান পা ধৌত করেন।’[22]
১১. অজুর পর হাদীসে বর্ণিত দুআ পাঠ করা
এ ব্যাপারে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে-ব্যক্তি সুন্দর ও পরিপূর্ণরূপে অজু করবে এরপর নিম্নের দুআ পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। সে তার ইচ্ছামতো যে-কোনো দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুআটি হলো:
১২. অজুর পর দুই রাকাআত সালাত আদায় করা
উকবা ইবন আমির হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলিম ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি স্থির রেখে দুই রাকাআত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।’[24]
উসমান ইবন আফফান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে-ব্যক্তি আমার মতো অজু করবে, অতঃপর দুনিয়াবী সকল প্রকার চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিয়ে দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করা হবে।’[25]
সর্বক্ষণ অজু অবস্থায় থাকার ফযীলত
প্রত্যেক মুসলিম মহিলার জেনে থাকা দরকার যে, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষণ অজু অবস্থায় থাকার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।’[26]
অজুর ফযীলত ও সাওয়াব কত তাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো মুমিন বা মুসলিম ব্যক্তি অজু করার সময় যখন তার মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সাথে বের হয়ে যায়। আর যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে তখন দুহাতের অর্জিত গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সাথে ঝড়ে পড়ে। এভাবেই সে যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।’[27]
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ও স্থানে অজু করা মুস্তাহাব। সেসব সময় ও স্থানে দ্বিতীয় পাঠে জানবো ইনশাআল্লাহ।
[1] সূরা মায়েদা, ৫:৬
[2] সহীহ মুসলিম, ৪২৬; সুনানুত তিরমিযী,১; সুনানু ইবন মাজাহ, ২৭২
[3] সুনানু আবী দাউদ, ৬১, ৬১৮; সুনানুত তিরমিযী, ৩
[4] সহীহুল বুখারী, ১; সহীহ মুসলিম, ৪৮২১
[5] সূরা মায়েদা, আয়াত : ৬
[6] সহীহুল বুখারী, ১৪১; সহীহ মুসলিম, ৩৪২৫
[7] ফাতহুল বারী, ১/১৯৫
[8] আবদুল্লাহ-এর বর্ণনায় মাসাইলুল ইমাম আহমাদ, ৮৫
[9] মুয়াত্তা মালিক, ১/৬৬; আস-সুনালুল কুবরা, ৩০২৭, হাদীসটি সহীহ
[10] সহীহ মুসলিম, ৪৭৭
[11] গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ওয়াজিব। কারণ, কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া চেহারার অন্তর্ভুক্ত। আর চেহারা ধৌত করা ওয়াজিব।-সম্পাদক
[12] সহীহুল বুখারী, ১৬৮; সহীহুল মুসলিম, ৫০৫
[13] সহীহুল বুখারী, ১৬৭; সহীহ মুসলিম, ২০৬৪
[14] সূরা আরাফ, ৭:৩১
[15] সুনানু ইবন মাজাহ, ৩৬০৫, হাদীসটি হাসান বা গ্রহণযোগ্য
[16] সহীহ মুসলিম, ১/২৫৮; সুনানুত তিরমিযী, ৫৬; সুনানু ইবন মাজাহ, ২৬৭
[17] সুনানু আবী দাউদ, ৯৪; সুনানুন নাসায়ী, ৫৮, হাদীসটি সহীহ
[18] সহীহুল বুখারী, ১৩৬; সহীহ মুসলিম, ৪৬৮
[19] আন-নিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ওয়াল আসার, ১/৩৪৬
[20] ফাতহুল বারী, ১/২৮৫
[21] সহীহ মুসলিম, ৪৭৪
[22] সহীহ মুসলিম, ৪৭৫; অজুতে এভাবে বৃদ্ধি করা যাবে কি না, তা জানতে দেখুন ‘ফাতাওয়ায়ে আলবানী’ ১০২ নম্বর প্রশ্ন।
[23] সহীহ মুসলিম, ৪৪১
[24] সহীহ মুসলিম, ৪৪১
[25] সহীহুল বুখারী, ১৫৯; সহীহ মুসলিম, ৪২৬
[26] সহীহ মুসলিম, ৪২২
[27] সহীহ মুসলিম, ৪৬৫; সুনানুত তিরমিযী, ৩৫১৭
মহাসত্যবাদী আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করো আর পাদ্বয় টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।[1]আবদুল্লাহ ইবন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না।’[2]
আলী ইবন আবূ তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সালাতের চাবিকাঠি হলো পবিত্রতা।’[3]
অপবিত্র ব্যক্তিকে সালাতের জন্য আবশ্যকতার ভিত্তিতে অজু করতে হবে―এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ একমত।
অজুর ফরজসমূহ
অজুর ফরজ পাঁচটি। এখন আমরা তা দলীলসহ উল্লেখ করব।
১. নিয়াত করা
ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়াত একটি আবশ্যকীয় বিষয়। নিয়াত করতে হয় অন্তরে। মুখে উচ্চারণ করে নিয়াত করা বৈধ নয়; বরং বিদআত। মুখে উচ্চারণ করে নিয়াত করার ব্যাপারে কোনো বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। অতএব, কোনো মহিলা মুখে উচ্চারণ করে বলবে না, ‘আমি অজু করার নিয়াত করলাম’ ‘আমি অমুক সালাতের জন্য অজু করার নিয়াত করলাম’ ইত্যাদি। তা ছাড়া এসব মুখস্থ করে উচ্চারণ করা মানুষের জন্য কষ্টকর। বরং এভাবে উচ্চারণ করে নিয়াত করা শয়তানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা। আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। নিয়াত মানে মুখে উচ্চারণ করা নয় বরং কোনো কিছুর ইচ্ছা করা বা কোনো কাজের সংকল্প করা।
নিয়াত ওয়াজিব হওয়ার দলীল:
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়াতের উপর। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়াত করে।’[4]
২. একবার মুখমণ্ডল ধৌত করা।
৩. দুই হাত কনুইসহ একবার ধৌত করা।
৪. একবার মাথা মাসাহ করা।
৫. একবার দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা।
অজুর এ সব ফরযের দলীল হচ্ছে আল্লাহর এ বাণী:
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত করে নাও এবং হাতদ্বয় কুনুই-সহ ধুয়ে নাও। আর মাথা মাসাহ করো। আর পাদ্বয় টাখনু পর্যন্ত ধৌত করো।[5]অজুর সুন্নাত
অজুর সুন্নাত মোট ১২টি। তা হলো:
১. বিসমিল্লাহ বলা
আল্লাহর নাম নিয়ে অজু আরম্ভ করতে হবে। অতএব, অজু করার শুরুতে বলতে হবে, বিসমিল্লাহ। বিসমিল্লাহ বলার ব্যাপারে বেশকিছু দুর্বল হাদীস আছে। কিছু আলিমের মতে সনদ বা সূত্রগুলোর সমষ্টিতে হাদীসগুলো হাসান বা গ্রহণযোগ্য। হাদীসগুলো থেকে অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব প্রমাণ হয়। এ ব্যাপারে আলিমদের মাঝে কোনো মতানৈক্য নেই।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলন করার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিস শায়তানা মা রযাকাতানা’, আর ঐ মিলনে তাদের কোনো সন্তান নির্ধারিত হয়, তাহলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না।’[6]
সহবাস করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলার গুরুত্ব এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয়। সুতরাং অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা আরো বেশি যুক্তিযুক্ত। ইমাম বুখারী এমনটি বুঝেছেন। তাই তিনি সহীহুল বুখারীতে এভাবে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন ‘মিলন ও সর্ববস্থায় বিসমিল্লাহ বলা’।
ইমাম ইবন হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘অনুচ্ছেদে উল্লিখিত হাদীসটি থেকে সর্ববস্থায় বিসমিল্লাহ বলা প্রমাণ হয়। তবে মিলনের সময় বিসমিল্লাহ বলা শরীআতসম্মত হলে সবসময় বিসমিল্লাহ বলা আরো বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ, মিলনের সময় চুপ থাকতে বলা হয়েছে। অতএব, অন্য সময় বলা আরো বেশি যুক্তিযুক্ত।’[7]
কেউ যদি অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে কি তার অজু বাতিল হয়ে যাবে? জবাব, না বাতিল হবে না। কারণ, এটি মুস্তাহাব। আর মুস্তাহাব বিষয়ের কারণে অজু বাতিল হয় না। একবার ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কেউ যদি অজুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে তার বিধান কী?’ তিনি বলেন, ‘যদি ভুলে যায় তাহলে তার অজু হয়ে যাবে।’[8]
২. মিসওয়াক করা:
স্বাভাবিকভাবে যে-কোনো সময়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব; বিশেষকরে অজুর সময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি যদি আমার উম্মাতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক অজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’[9]
আরেক হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি যদি আমার উম্মাতের ওপর কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক অজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’[10]
৩. অজুর শুরুতে দুহাতের তালু ধোয়া।
৪. কুলি করা, নাকে পানি নেওয়া এবং নাক ঝাড়া।[11]
৫. আঙুল খিলাল করা।
৬. অজুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধৌত করা।
এই চারটি সুন্নাতের দলীলসমূহ ‘অজুর পদ্ধতি’ আলোচনায় উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
৭. অজুর অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় ডান থেকে ধোয়া। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধ্যানুযায়ী প্রত্যেকটি কাজ ডান দিক থেকে করা পছন্দ করতেন। যেমন: পবিত্রতা অর্জন, চুল আচড়ানো, জুতা পরিধান করা।’[12]
উম্মু আতিয়্যা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত মেয়েকে গোসল দেওয়ার সময় আমাদের বলছিলেন, ‘তোমরা ডান দিক থেকে শুরু করো আর অজুর স্থান থেকে শুরু করো।’[13]
৮. ধারাবাহিক ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে অজু করা
অজু করার সময় ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ধৌত করা। একটি অঙ্গ ধৌত করার আরেকটা অঙ্গ ধৌত করা; দীর্ঘবিরতি না নেওয়া।
৯. অজুতে পরিমিত পরিমাণ পানি ব্যবহার করা, অপচয় না করা
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَابَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সৌন্দর্য অবলম্বন করো। আর তোমরা খাও এবং পান করো তবে অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।[14]নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা খাও, পান করো, সাদকা করো এবং পরিধান করো, যতক্ষণ না সেগুলোতে অপচয় ও অহংকার যুক্ত হয়।’[15]
এই নিষেধাজ্ঞাটি ব্যাপক। সবধরনের অপচয়ই এ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। অজুর পানিতে অপচয়ও এর অন্তর্ভুক্ত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মুদ পরিমাণ পানিতে অজু করতেন, যেমনটি সাফীনা রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে।[16]
অন্য সহীহ হাদীস পাওয়া যায় যে, তিনি এক মুদের দুই তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে অজু করতেন।[17]
মুদ-এর পরিচয়: একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দুহাতের তালু একত্রিত করলে তাতে যে পরিমাণ পানি ধরে সেটাই এক মুদ।
১০. অজুর অঙ্গের শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা
অজুর অঙ্গের শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অজুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে আরো অতিরিক্ত ধোয়া। যেমন, দুই হাত ধৌত করার সময় কনুই পর্যন্ত ধৌত না করে আরো বেশি ধৌত করা, এমনকী বগল পর্যন্ত ধৌত করা। এটা সীমালঙ্ঘন ও খারাপ নয়। কারণ, হাদীসে এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল চমকাতে থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে তার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চায় সে যেন তা বৃদ্ধি করে নেয়।’[18]
আল্লামা ইবনুল আসীর এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে, অজুর অঙ্গগুলো যেমন হাত, পা ও চেহারা চমকাতে থাকবে। অজুর অঙ্গ চেহারা, দুই হাত ও দুই পা’কে ঘোড়ার চেহারা, দুই হাত ও দুই পায়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে।’[19]
এখন প্রশ্ন হলো, শুভ্রতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সীমা থেকে কতটুকু বৃদ্ধি করা যাবে?
হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আলিমগণ কতটুকু বৃদ্ধি করা যাবে তা নিয়ে মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন, হাত কাঁধ পর্যন্ত আর পা হাঁটু পর্যন্ত বৃদ্ধি করে ধৌত করা যাবে। এ ব্যাপারে আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই তার মত। ইবন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা নিজে এমনটা করেছেন।’[20]
আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু যে হাদীসটির দিকে হাফিয ইবন হাজার আসকালানী ইঙ্গিত দিয়েছেন সে হাদীসটি ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেছেন। আবূ হাযম বলেন, ‘একদিন আমি আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পিছনে ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি সালাতের জন্য অজু করছিলেন। অজুতে তিনি তার হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে ধুচ্ছিলেন এমনকী বগল পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। আমি তাকে বলে বসলাম, ‘এটা আবার কেমন অজু?’ তিনি বললেন, ‘ওহে ফাররুখের বংশধর! তোমরা এখানে রয়েছ? আমি যদি জানতাম যে, তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এভাবে অজু করতাম না। জেনে রাখো, আমি আমার বন্ধু মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে স্থান পর্যন্ত অজুর পানি পৌঁছাবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির সৌন্দর্য পৌঁছবে।’[21]
এখানে সৌন্দর্য দ্বারা উদ্দেশ্য অজুর অঙ্গের উজ্জ্বলতা ও ঝলকানি বোঝানো হয়েছে।
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘এরপর আবূ হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু পায়ের নালা পর্যন্ত ডান পা ধৌত করেন।’[22]
১১. অজুর পর হাদীসে বর্ণিত দুআ পাঠ করা
এ ব্যাপারে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে-ব্যক্তি সুন্দর ও পরিপূর্ণরূপে অজু করবে এরপর নিম্নের দুআ পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। সে তার ইচ্ছামতো যে-কোনো দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুআটি হলো:
أشهَدُ أنْ لا إلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأشْهَدُ أنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
আশহাদু আল্লা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা-শারীকা লা ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।[23]১২. অজুর পর দুই রাকাআত সালাত আদায় করা
উকবা ইবন আমির হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলিম ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি স্থির রেখে দুই রাকাআত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।’[24]
উসমান ইবন আফফান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে-ব্যক্তি আমার মতো অজু করবে, অতঃপর দুনিয়াবী সকল প্রকার চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিয়ে দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করা হবে।’[25]
সর্বক্ষণ অজু অবস্থায় থাকার ফযীলত
প্রত্যেক মুসলিম মহিলার জেনে থাকা দরকার যে, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষণ অজু অবস্থায় থাকার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।’[26]
অজুর ফযীলত ও সাওয়াব কত তাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো মুমিন বা মুসলিম ব্যক্তি অজু করার সময় যখন তার মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সাথে বের হয়ে যায়। আর যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে তখন দুহাতের অর্জিত গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সাথে ঝড়ে পড়ে। এভাবেই সে যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।’[27]
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ও স্থানে অজু করা মুস্তাহাব। সেসব সময় ও স্থানে দ্বিতীয় পাঠে জানবো ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম নারীর পূর্ণাঙ্গ মাসাইল
• মূল: আল্লামা মুহাদ্দিস আমর আবদুল মুনঈম সালিম
• অনুবাদ ও সম্পাদনা : উস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ
• মূল: আল্লামা মুহাদ্দিস আমর আবদুল মুনঈম সালিম
• অনুবাদ ও সম্পাদনা : উস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ
[1] সূরা মায়েদা, ৫:৬
[2] সহীহ মুসলিম, ৪২৬; সুনানুত তিরমিযী,১; সুনানু ইবন মাজাহ, ২৭২
[3] সুনানু আবী দাউদ, ৬১, ৬১৮; সুনানুত তিরমিযী, ৩
[4] সহীহুল বুখারী, ১; সহীহ মুসলিম, ৪৮২১
[5] সূরা মায়েদা, আয়াত : ৬
[6] সহীহুল বুখারী, ১৪১; সহীহ মুসলিম, ৩৪২৫
[7] ফাতহুল বারী, ১/১৯৫
[8] আবদুল্লাহ-এর বর্ণনায় মাসাইলুল ইমাম আহমাদ, ৮৫
[9] মুয়াত্তা মালিক, ১/৬৬; আস-সুনালুল কুবরা, ৩০২৭, হাদীসটি সহীহ
[10] সহীহ মুসলিম, ৪৭৭
[11] গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ওয়াজিব। কারণ, কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া চেহারার অন্তর্ভুক্ত। আর চেহারা ধৌত করা ওয়াজিব।-সম্পাদক
[12] সহীহুল বুখারী, ১৬৮; সহীহুল মুসলিম, ৫০৫
[13] সহীহুল বুখারী, ১৬৭; সহীহ মুসলিম, ২০৬৪
[14] সূরা আরাফ, ৭:৩১
[15] সুনানু ইবন মাজাহ, ৩৬০৫, হাদীসটি হাসান বা গ্রহণযোগ্য
[16] সহীহ মুসলিম, ১/২৫৮; সুনানুত তিরমিযী, ৫৬; সুনানু ইবন মাজাহ, ২৬৭
[17] সুনানু আবী দাউদ, ৯৪; সুনানুন নাসায়ী, ৫৮, হাদীসটি সহীহ
[18] সহীহুল বুখারী, ১৩৬; সহীহ মুসলিম, ৪৬৮
[19] আন-নিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ওয়াল আসার, ১/৩৪৬
[20] ফাতহুল বারী, ১/২৮৫
[21] সহীহ মুসলিম, ৪৭৪
[22] সহীহ মুসলিম, ৪৭৫; অজুতে এভাবে বৃদ্ধি করা যাবে কি না, তা জানতে দেখুন ‘ফাতাওয়ায়ে আলবানী’ ১০২ নম্বর প্রশ্ন।
[23] সহীহ মুসলিম, ৪৪১
[24] সহীহ মুসলিম, ৪৪১
[25] সহীহুল বুখারী, ১৫৯; সহীহ মুসলিম, ৪২৬
[26] সহীহ মুসলিম, ৪২২
[27] সহীহ মুসলিম, ৪৬৫; সুনানুত তিরমিযী, ৩৫১৭