সালাফী মানহাজের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলী:
আমি (লেখক) বলি, সুতরাং সালাফী মানহাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলীর কতিপয় নিম্নরূপঃ-
১। তার অনুসারীরা হকের উপর অবিচল থাকে। তারা পাল্টাতে থাকে না; যেমন খেয়ালখুশির পূজারীদের অভ্যাস।
একদা হুযাইফা আবু মাসউদকে বলেছিলেন, 'প্রকৃত ভ্রষ্টতা ও গুমরাহি এই যে, আজ যাকে তুমি ভালো ও হক বলে জানছ, কাল তাকেই মন্দ ও বাতিল গণ্য করতে লাগবে এবং আজ যাকে মন্দ বলছ, কাল তাকেই ভালো গণ্য করতে লাগবে।
وَإِيَّاكَ وَالتَّلَوُّنَ فَإِنَّ دِينَ اللَّهِ وَاحِدٌ.
'তুমি বহুরূপী হওয়া থেকে দূরে থাকো, কারণ আল্লাহর দ্বীন অদ্বিতীয়। '(৬১)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, 'মোটের উপর আহলুল হাদীস ওয়াস সুন্নাহর মধ্যে অটলতা ও অবিচলতা আহলুল কালাম ও ফালসাফা-ওয়ালাদের যতটুকু আছে, তার বহুগুণ বেশি। (৬২)
তিনি আরো বলেন, 'আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মুসলিম জনসাধারণ ও উলামার নিকট যে জ্ঞান, প্রত্যয়, প্রশান্তি, হকের ব্যাপারে দৃঢ়তা, সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী এবং যার উপর তাঁরা প্রতিষ্ঠিত, তার ব্যাপারে তাঁদের নিশ্চয়তা---এ সব এমন বিষয়, যা অবিসংবাদিত। অবশ্য আল্লাহ যার জ্ঞানবুদ্ধি ও দ্বীন কেড়ে নিয়েছেন, তার কথা স্বতন্ত্র। '(৬৩)
২। তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটাও যে, তার অনুসারীরা আকীদার বিষয়ে এক 48 কাল ও স্থানভেদে তাঁরা মতভেদগ্রস্ত নন। (৬৪)
৩। নবী-এর নানা অবস্থা, তাঁর কর্ম ও বাণীসমূহের ব্যাপারে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি অভিজ্ঞ। (হাদীসের) যয়ীফ থেকে সহীহকে পার্থক্য করার জ্ঞানে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি বড়। সুতরাং তাঁরাই সুন্নাহর ভালোবাসার ক্ষেত্রে সবার চাইতে বেশি সুদৃঢ়। সুন্নাহর অনুসরণে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি যত্নবান এবং সুন্নাহর অনুসারীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি আগ্রহী।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'যখন রসূলঞ্জ সৃষ্টির সেরা পূর্ণ (মানব) ছিলেন, সৃষ্টির সবার চাইতে বেশি প্রকৃতত্ব বিষয়ের জ্ঞানী ছিলেন এবং কথা ও অবস্থায় শ্রেষ্ঠতম (মানব) ছিলেন, তখন আবশ্যিকভাবে তাঁর ব্যাপারে সবার চাইতে বেশি জ্ঞানী হবেন (সে ব্যাপারে) সৃষ্টির সেরা জ্ঞানী এবং তাঁর সবার চাইতে বেশি মান্যকারী ও অনুগামী হবেন সৃষ্টির সেরা মর্যাদাবান। (৬৫)
৪। তাঁরা এ বিশ্বাস পোষণ করেন যে, সলফে সালেহর তরীকাই হল সবচেয়ে নিরাপদ, সবচেয়ে জ্ঞানগর্ভ এবং সবচেয়ে সৃদৃঢ়। তেমন নয়, যেমন আহলুল কালাম দাবী ক'রে বলে, 'সলফের তরীকা সবচেয়ে নিরাপদ এবং খলফের (পরবর্তীদের) তরীকা সবচেয়ে জ্ঞানগর্ভ ও সুদৃঢ়।'
অবশ্য উক্ত অপবাদের জবাব দিয়েছেন শায়খুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, 'নিশ্চিতরূপে তারা সলফের তরীকার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছে এবং খলফের তরীকাকে সঠিক বলতে গিয়ে ভ্রষ্ট হয়েছে। সুতরাং তারা মিথ্যা বলার মাধ্যমে সলফের তরীকা সম্বন্ধে অজ্ঞতা এবং খলফের তরীকাকে সঠিক প্রতিপন্ন ক 49
মাধ্যমে অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতাকে একত্রিত করেছে।'(৬৬) ৫। তাঁদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল, সহীহ আকীদা ও সঠিক দ্বীন প্রচারে, মানুষকে শিক্ষাদান ও তাদের প্রতি হিতাকাঙ্ক্ষিতার ব্যাপারে এবং বিরোধী ও বিদআতীদের খন্ডন করার ব্যাপারে তাঁরা আগ্রহশীল।
৬। তাঁরা সকল ফির্কার মধ্যে মধ্যপন্থী।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন, 'ইসলাম (ধর্মে) আহলুস সুন্নাহ হল, (অন্যান্য) ধর্মসমূহের মধ্যে ইসলাম অবলম্বীদের মতো। (৬৭)
তিনি আরো বলেছেন, 'সুতরাং তাঁরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নামাবলীর ক্ষেত্রে আহলুত তা' ত্বীল (নিষ্ক্রিয়কারী) জাহমিয়্যাহ এবং আহলুত তামষীল (সদৃশ স্থাপনকারী) মুশাব্বিহাহর মাঝে মধ্যপন্থী। তাঁরা আল্লাহ তাআলার কর্মাবলীর ব্যাপারে কাদারিয়্যাহ ও জাবারিয়্যাহর মাঝে মধ্যপন্থী। তাঁরা (মহান আল্লাহর) ধমকির ক্ষেত্রে মুর্জিয়াহ এবং ক্বাদারিয়্যাহ সম্প্রদায়ভুক্ত ওয়াঈদিয়্যাহ প্রভৃতির মাঝে মধ্যপন্থী। তাঁরা ঈমান ও দ্বীনের নামাবলীর ক্ষেত্রে হারুরিয়্যাহ ও মু'তাযিলাহ এবং মুর্জিয়াহ ও জাহমিয়্যাহর মাঝে মধ্যপন্থী। এবং তাঁরা নবী -এর সাহাবাদের ক্ষেত্রে রাওয়াফিয এবং খাওয়ারিজের মাঝে মধ্যপন্থী। (৬৮)
(৬১) বাইহাক্বী ২০৩৮৯, আঃ রায্যাক ২০৪৫৪নং
(৬২) মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/৫১
(৬৩) মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/১৯
(৬৪) দ্রঃ আল-হুজ্জাহ লিব্ধিওয়ামিস সুন্নাহ ২/২২৫
(৬৫) মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/১৪০-১৪১
(৬৬) মাজমুউল ফাতাওয়া ৫/৯
(৬৭) ঐ ৩/১৪১
(৬৮) মাজমুউল ফাতাওয়া ৩/১৪১, দ্রঃ ওয়াসাত্বিয়াতু আহলিস সুন্নাতি বাইনাল ফিরাক্ক ২৩৫পুঃ ও তার পরবর্তী পূঃ, শায়খ আব্দুল্লাহ উবাইলানের 'দুরূস ফিল মানহাজ' ৭০- ৭৩পৃঃ
বই: সালাফি হও সত্যিকারে
মূল আরবীঃ ফযীলাতুল উস্তায ডক্টর আব্দুস সালাম বিন সালেম আস-সুহাইমী শরীয়া বিভাগের অধ্যাপক, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
অনুবাদঃ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী
আমি (লেখক) বলি, সুতরাং সালাফী মানহাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলীর কতিপয় নিম্নরূপঃ-
১। তার অনুসারীরা হকের উপর অবিচল থাকে। তারা পাল্টাতে থাকে না; যেমন খেয়ালখুশির পূজারীদের অভ্যাস।
একদা হুযাইফা আবু মাসউদকে বলেছিলেন, 'প্রকৃত ভ্রষ্টতা ও গুমরাহি এই যে, আজ যাকে তুমি ভালো ও হক বলে জানছ, কাল তাকেই মন্দ ও বাতিল গণ্য করতে লাগবে এবং আজ যাকে মন্দ বলছ, কাল তাকেই ভালো গণ্য করতে লাগবে।
وَإِيَّاكَ وَالتَّلَوُّنَ فَإِنَّ دِينَ اللَّهِ وَاحِدٌ.
'তুমি বহুরূপী হওয়া থেকে দূরে থাকো, কারণ আল্লাহর দ্বীন অদ্বিতীয়। '(৬১)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, 'মোটের উপর আহলুল হাদীস ওয়াস সুন্নাহর মধ্যে অটলতা ও অবিচলতা আহলুল কালাম ও ফালসাফা-ওয়ালাদের যতটুকু আছে, তার বহুগুণ বেশি। (৬২)
তিনি আরো বলেন, 'আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মুসলিম জনসাধারণ ও উলামার নিকট যে জ্ঞান, প্রত্যয়, প্রশান্তি, হকের ব্যাপারে দৃঢ়তা, সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী এবং যার উপর তাঁরা প্রতিষ্ঠিত, তার ব্যাপারে তাঁদের নিশ্চয়তা---এ সব এমন বিষয়, যা অবিসংবাদিত। অবশ্য আল্লাহ যার জ্ঞানবুদ্ধি ও দ্বীন কেড়ে নিয়েছেন, তার কথা স্বতন্ত্র। '(৬৩)
২। তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটাও যে, তার অনুসারীরা আকীদার বিষয়ে এক 48 কাল ও স্থানভেদে তাঁরা মতভেদগ্রস্ত নন। (৬৪)
৩। নবী-এর নানা অবস্থা, তাঁর কর্ম ও বাণীসমূহের ব্যাপারে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি অভিজ্ঞ। (হাদীসের) যয়ীফ থেকে সহীহকে পার্থক্য করার জ্ঞানে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি বড়। সুতরাং তাঁরাই সুন্নাহর ভালোবাসার ক্ষেত্রে সবার চাইতে বেশি সুদৃঢ়। সুন্নাহর অনুসরণে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি যত্নবান এবং সুন্নাহর অনুসারীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে তাঁরাই সবার চাইতে বেশি আগ্রহী।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'যখন রসূলঞ্জ সৃষ্টির সেরা পূর্ণ (মানব) ছিলেন, সৃষ্টির সবার চাইতে বেশি প্রকৃতত্ব বিষয়ের জ্ঞানী ছিলেন এবং কথা ও অবস্থায় শ্রেষ্ঠতম (মানব) ছিলেন, তখন আবশ্যিকভাবে তাঁর ব্যাপারে সবার চাইতে বেশি জ্ঞানী হবেন (সে ব্যাপারে) সৃষ্টির সেরা জ্ঞানী এবং তাঁর সবার চাইতে বেশি মান্যকারী ও অনুগামী হবেন সৃষ্টির সেরা মর্যাদাবান। (৬৫)
৪। তাঁরা এ বিশ্বাস পোষণ করেন যে, সলফে সালেহর তরীকাই হল সবচেয়ে নিরাপদ, সবচেয়ে জ্ঞানগর্ভ এবং সবচেয়ে সৃদৃঢ়। তেমন নয়, যেমন আহলুল কালাম দাবী ক'রে বলে, 'সলফের তরীকা সবচেয়ে নিরাপদ এবং খলফের (পরবর্তীদের) তরীকা সবচেয়ে জ্ঞানগর্ভ ও সুদৃঢ়।'
অবশ্য উক্ত অপবাদের জবাব দিয়েছেন শায়খুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, 'নিশ্চিতরূপে তারা সলফের তরীকার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছে এবং খলফের তরীকাকে সঠিক বলতে গিয়ে ভ্রষ্ট হয়েছে। সুতরাং তারা মিথ্যা বলার মাধ্যমে সলফের তরীকা সম্বন্ধে অজ্ঞতা এবং খলফের তরীকাকে সঠিক প্রতিপন্ন ক 49
মাধ্যমে অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতাকে একত্রিত করেছে।'(৬৬) ৫। তাঁদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল, সহীহ আকীদা ও সঠিক দ্বীন প্রচারে, মানুষকে শিক্ষাদান ও তাদের প্রতি হিতাকাঙ্ক্ষিতার ব্যাপারে এবং বিরোধী ও বিদআতীদের খন্ডন করার ব্যাপারে তাঁরা আগ্রহশীল।
৬। তাঁরা সকল ফির্কার মধ্যে মধ্যপন্থী।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন, 'ইসলাম (ধর্মে) আহলুস সুন্নাহ হল, (অন্যান্য) ধর্মসমূহের মধ্যে ইসলাম অবলম্বীদের মতো। (৬৭)
তিনি আরো বলেছেন, 'সুতরাং তাঁরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নামাবলীর ক্ষেত্রে আহলুত তা' ত্বীল (নিষ্ক্রিয়কারী) জাহমিয়্যাহ এবং আহলুত তামষীল (সদৃশ স্থাপনকারী) মুশাব্বিহাহর মাঝে মধ্যপন্থী। তাঁরা আল্লাহ তাআলার কর্মাবলীর ব্যাপারে কাদারিয়্যাহ ও জাবারিয়্যাহর মাঝে মধ্যপন্থী। তাঁরা (মহান আল্লাহর) ধমকির ক্ষেত্রে মুর্জিয়াহ এবং ক্বাদারিয়্যাহ সম্প্রদায়ভুক্ত ওয়াঈদিয়্যাহ প্রভৃতির মাঝে মধ্যপন্থী। তাঁরা ঈমান ও দ্বীনের নামাবলীর ক্ষেত্রে হারুরিয়্যাহ ও মু'তাযিলাহ এবং মুর্জিয়াহ ও জাহমিয়্যাহর মাঝে মধ্যপন্থী। এবং তাঁরা নবী -এর সাহাবাদের ক্ষেত্রে রাওয়াফিয এবং খাওয়ারিজের মাঝে মধ্যপন্থী। (৬৮)
(৬১) বাইহাক্বী ২০৩৮৯, আঃ রায্যাক ২০৪৫৪নং
(৬২) মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/৫১
(৬৩) মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/১৯
(৬৪) দ্রঃ আল-হুজ্জাহ লিব্ধিওয়ামিস সুন্নাহ ২/২২৫
(৬৫) মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/১৪০-১৪১
(৬৬) মাজমুউল ফাতাওয়া ৫/৯
(৬৭) ঐ ৩/১৪১
(৬৮) মাজমুউল ফাতাওয়া ৩/১৪১, দ্রঃ ওয়াসাত্বিয়াতু আহলিস সুন্নাতি বাইনাল ফিরাক্ক ২৩৫পুঃ ও তার পরবর্তী পূঃ, শায়খ আব্দুল্লাহ উবাইলানের 'দুরূস ফিল মানহাজ' ৭০- ৭৩পৃঃ
বই: সালাফি হও সত্যিকারে
মূল আরবীঃ ফযীলাতুল উস্তায ডক্টর আব্দুস সালাম বিন সালেম আস-সুহাইমী শরীয়া বিভাগের অধ্যাপক, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
অনুবাদঃ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী