হে আদর্শ সচেতন যুবক!
হে যুবক! নিজেকে বদলে দাও, সমাজটাকে বদলে দাও, পৃথিবীকে বদলে দাও। অহি ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ কর। তুমিই পারবে সমাজকে বদলাতে। তুমি তোমার তারুণ্যকে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ব্যয় কর। মনে রাখবে সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ছাড়া দ্বীন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা হয় না। আজ পৃথিবীতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিজাতীয় যে মতবাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার পিছনে যুব সমাজের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাই অহীভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় যুব সমাজের অবদান সবচেয়ে বেশি দরকার। যুবকরা যদি বাতিল মতবাদ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে, তবে কেন ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারবে না? অবশ্যই তারা পারবে। হে যুবক! ত্যাগের জীবন গঠন কর। বিলাসিতাকে ডাষ্টবিনে নিক্ষেপ কর। পৃথিবীতে অহি ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ত্যাগের কোন বিকল্প নেই। আজ বিশ্বে মুসলিমদের যে সংগ্রাম চলছে তা আদর্শিক ও আক্বীদার সংগ্রাম। কখনো রাজনৈতিক নয়। হয় ইসলাম থাকবে আর না হয় কুফর থাকবে। দু’টি কখনও এক সঙ্গে চলতে পারে না।
আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখব যে, আজ সারা বিশ্বের মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। (ক) শোষক (খ) শোষিত। আমাদের যুবকদের শোষিতদের পক্ষ নিতে হবে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল এখানে যেন মুখ্য বিষয় না হয়। সুতরাং আমরা যখন শোষিতদের পক্ষ নিব এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ইসলামী আইনের কল্যাণকর দিকগুলো জনগণকে বুঝাতে পারব, তখনই কেবল অহীভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। মনে রাখতে হবে আল্লাহর দেয়া আলো, বাতাস, পানি যেমন পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য মঙ্গলময় ঠিক অনুরূপ আল্লাহর আইন পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য মঙ্গলময়। আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা আর আমরা হলাম তাঁর গোলাম। সৃষ্টি যেন ¯্রষ্টার বিধান অনুযায়ী সার্বিক জীবন গঠন করে, সেদিকেই মানুষদের আহ্বান করা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
অতএব হে যুবক! তুমি তোমার যাবতীয় অলসতা ঝেড়ে ফেলে আবারও গর্জে ওঠ। শির উঁচু করে বলিষ্ঠ পদে দ-ায়মান হও। শক্ত হাতে সমাজের হাল ধর, যাতে করে সমাজ অন্ধকার ও রসাতলে চলে না যায়। পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণ মানুষদের একটাই দাওয়াত দিয়েছেন মানুষ যেন মানুষের দাসত্ব না করে বরং একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমরা আপনার পূর্বেকার সকল রাসূলের নিকটে একই বিষয়ে প্রত্যাদেশ করেছি যে, আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কেবল আমারই ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা আমার দাসত্ব করবে’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)। অর্থাৎ সার্বিক জীবনে ‘তাওহীদে ইবাদত’ প্রতিষ্ঠা করবে।
সুধী পাঠক! এই ইবাদত বা দাসত্ব যারা মেনে নিয়েছে এবং আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য যারা মানুষদের আহ্বান করেছে যুগ যুগ ধরে তাদের উপর পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রীয় বাধা এসেছে। সুতরাং আজও তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকামী ও হক্বপিয়াসী মুসলিমদের উপর যদি বাধা আসে, তাহলে হ্কের উপর দৃঢ় থাকতে হবে ও ধৈর্যধারণ করতে হবে। কখনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গীবাদী হওয়া যাবে না। কারণ ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ হারাম, জিহাদ ফরয। সত্যের বিজয় একদিন হবেই। তোমাদের দায়িত্ব হ্কের দাওয়াত নিরবচ্ছিন্নভাবে দেয়া। মনে রাখবে বিশ্বাসগত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোন বিধান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে অহির বিধানের পক্ষে জনমত গঠন করতে হবে।
হে আহলেহাদীছ যুবকাফেলা!
আমরা মুসলিম এবং আহলেহাদীছ যুবক। আমরা মানুষদের একটাই দাওয়াত দিয়ে থাকি। মানুষের সামগ্রিক জীবনে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়া এবং সকল বিধান বাতিল করা ও অহির বিধান কায়েম করা। উক্ত দাওয়াত যদি সমাজ নেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অপরাধ মনে হয় এবং তার বিনিময়স্বরূপ যদি জেল-জুলুম ও ফাঁসির ভয় দেখানো হয়, তাহলে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আমরা এই অপরাধ মৃত্যু পর্যন্ত করে যাব। মনে রাখবে জেল-জুলুম ও ফাঁসি দিয়ে কখনো কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দাওয়াতকে বন্ধ করা যাবে না। যে জাতি জীবন দিতে জানে তাকে কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না। বদর, উহুদ, খন্দক যুদ্ধের কথা স্মরণে রাখতে হবে। অতএব হে যুুবক! তোমার সাড়ে তিন হাত দেহের মধ্যে আগে ইসলাম কায়েম কর। তারপর অহীভিত্তিক সমাজ সংস্কারে মনোনিবেশ কর। সুতরাং সার্বিক জীবনে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য কর। কখনো ইহুদী, নাছারা, মুশরিকদের অনুসরণ করবে না। তাদের ষড়যন্ত্রে পা দিবে না। তারা মুসলিমদের শত্রু। ইতিমধ্যে তারা হামলা করে বিশ্বের অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংস করেছে। যেমন- ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান ইত্যাদি। তারা সেখানকার মুসলিমদের ভাগ করে তাদের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মুসলিম ও তাদের রাষ্ট্র। আর লাভবান হচ্ছে- ইহুদী, নাছারা, মুশরিক ও পশ্চিমারা।
অতএব হে যুুবক! সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ থেকে সাবধান। বিজাতীয় মতবাদ থেকে সাবধান। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কখনও জিহাদ হবে না। জিহাদ হবে কাফেরদের বিরুদ্ধে। যদি তারা আমাদের রাষ্ট্র ও ধর্মকে ধ্বংস করতে চায়। তখন মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকের নির্দেশক্রমে জিহাদ চলবে। মনে রাখবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ একটি বিষয় আর জিহাদ একটি বিষয়। জিহাদের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই। আর এ বিষয়টি জনগণকে বুঝাবার দায়িত্ব আলেম ওলামা, পরিবার-শিক্ষক এবং সরকারের।
হে তাওহীদী যুবশক্তি!
আমরা তাওহীদী চেতনার অধিকারী আহলেহাদীছ যুবক। আমরা যেমন বিজাতীয় মতবাদের বিরোধী তদ্রƒপ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদেরও বিরোধী। আমরা খেলাফতে ও জিহাদে বিশ্বাসী। আমরা আক্বীদার ক্ষেত্রে শিরকের বিরুদ্ধে আপোসহীনভাবে তাওহীদপন্থী। আবার আমলের ক্ষেত্রে বিদ‘আতের বিরুদ্ধে আপোসহীনভাবে সুন্নাতপন্থী। আমরা যেমন রাসূল (ﷺ)-কে ধর্মীয় জীবনের নেতা ও নবী মানি, তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও নেতা ও নবী মানি। আর রাসূল (ﷺ)-এর মধ্যেই তো পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। তার আদর্শ মোতাবেক ব্যক্তি, পরিবার সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনা করলেই পৃথিবীতে শান্তি আসা সম্ভব। অন্যথা নয়।
মানুষ যেহেতু ভুলের ঊর্ধ্বে নয় এবং কেউ ভবিষ্যতের মঙ্গল-অমঙ্গলের খবর রাখে না। তাই মানব রচিত কোন মতবাদ-ই প্রকৃত সত্যের সন্ধান দিতে পারে না। সেই মতবাদে পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তিও আসতে পারে না। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো অহীভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত গঠন করা। কারণ জনমতই একসময় জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে। যা দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি বদলে দিতে পারে। কারণ রাজনীতি আদর্শ পরিবর্তন করতে পারে না। তবে আদর্শ রাজনীতি পরিবর্তন করতে সক্ষম। উল্লেখ্য, অহী ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছ হবে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত সংবিধান। অতঃপর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিভিন্ন মহা সমাবেশে সরকারের নিকট অহী ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য দাবি পেশ করা ও দাওয়াত দেয়া। এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। অতএব মুসলিমদের সংবিধান হিসাবে আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছ রাষ্ট্রের সংবিধান হবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যায় যে, এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পিছনে মুসলিমদেরই অবদান সবচেয়ে বেশি।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন যখন বৃটিশরা এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল তখন হারানো স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য ঝাঁপিয়ে পরেছিল মুসলিম মুজাহিদরা। রচিত হয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, বালাকোট, বাঁশের কেল্লা, আম্বেলা ইত্যাদি এক রক্তাক্ত ইতিহাস। আর এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আল্লামা শাহ ইসমাইল শহীদ, সৈয়দ আহমদ বেরীলভী, মাওলানা নিসার আলী তিতুমীর, মাওলানা বেলায়েত আলী, এনায়েত আলী, আমীর আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরাম। তাদের সেই রক্তের পথ ধরেই পরবর্তীতে এসেছে ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা। আর সেই মানচিত্রের একাংশের উপরে বর্তমান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। সেদিন মুসলিম মুজাহিদরা যদি বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করতেন তাহলে স্বাধীন পাকিস্তান, স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেতাম কি? কখনো না। অতএব আমরা নির্দিধায় বলতে পারি যে, এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি ইসলাম। যতদিন বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ইসলামী চেতনা থাকবে ততদিন এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে এদেশের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানীদের যুলুমের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল না। বাঙ্গালী মুসলিমরা কখনই করাচির গোলামি ছিন্ন করে দিল্লীর দাসত্বের শৃংখলে বন্দী হতে চায়নি এবং এজন্য যুদ্ধও করেনি। যুদ্ধ করেছে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই যারা ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি এবং ১৯৭১ এর স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশটা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এবং শান্তিতে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করুক, যারা চায় না তাদেরই কিছু লোক সবসময় বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে থেকে ইসলামী চেতনা এবং এদেশে থেকে ইসলামী সংস্কৃতি মুছে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যাতে করে এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের ভারত নামক রাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হওয়া যায়। অতএব মুসলিম শাসকবর্গ সাবধান। ইসলামী চেতনাই পূর্ববঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পৃথক রাজনৈতিক মর্যাদা দিয়েছে। এটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না। আজ আমরা ভারতের ১টি প্রদেশে থাকলে যে সকল ব্যক্তি এখন জাতীয় নেতা বনেছেন, তারা তখন ছোট নেতা হবারও সুযোগ পেতেন না। যারা এখন একটি জাতীয় সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী, র্যাববাহিনী, আনসারবাহিনী, বিজিবিবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে এসেছেন বা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও বড় আমলা হয়েছেন, তারা তখন কত দরজা নিচে থাকতেন তার হিসাব একবার করেছেন কি? একটু ভেবে দেখুন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাষ্মীর আজো স্বাধীনতা পায়নি। অতএব, চিরন্তন সত্য যে, ইসলামী চেতনাই স্বাধীনতার সম্মান দিয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান হল- কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করুন। ধর্মীয় ও বৈষয়িক শিক্ষার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্নিত করে একক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করুন। দ্বিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিল বৃটিশ সরকার। যে বৃটিশ ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন ভারত বর্ষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। আর বৃটিশ লর্ড মেকল যিনি ১৯৩৬ সালে বলেছিলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সর্বাধিক চেষ্টা করতে হবে যাতে এমন একটি গোষ্ঠি সৃষ্টি করা যায়, যারা আমাদের ও আমাদের লক্ষ লক্ষ প্রজার মধ্যে দূত হিসাবে কাজ করতে পারে। এরা রক্তে ও বর্ণে হবে ভারতীয়। কিন্তু মেজাজে, মতামতে, নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিতে হবে ইংরেজ’। বর্তমানে বুদ্ধিজীবী এবং যুবকরা বৃটিশ লর্ড মেকলের ফাঁন্দে পড়েছেন কিনা ভেবে দেখবেন কি?
সুধী পাঠক! মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের আহ্বান করে বলতে চাই যে, ধর্মীয় ও বৈষয়িক শিক্ষার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্নিত করে এমন একটি মুসলিম জনসমষ্টি গড়ে তুলুন, যা সারা বিশ্বকে চমকে দিবে। যেরূপ চমকে দিয়েছিলেন ছাহাবায়ে কেরাম। তাঁরা মেজাজে, মতামতে, নৈতিকতায়, বুদ্ধিতে, অর্থনীতিতে ও রাজনীতিতে হয়েছিলেন বিশ্ব মডেল। বৃটিশ গ্লাডস্টোন স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমরা কুরআনকে আঁকড়ে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে দমানো বা পরাভূত করা সম্ভব হবে না। তাই হয় তাদের থেকে কুরআনকে কেড়ে নিতে হবে, না হয় তাদের হৃদয় থেকে কুরআনের প্রতি ভালোাবাসাকে মুছে দিতে হবে’ (দিগদর্শন-১, পৃ. ১৭০)। তাই আমাদেরকে বিজাতীয় বিভিন্ন মতবাদকে ছেড়ে দিয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সার্বিক জীবন গঠন করতে হবে।
ভারতের হিন্দু নেতারা স্বপ্ন দেখে অখ- ভারত গড়ে তোলার জন্য। এজন্য তারা সবসময় ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। (তারা ষড়যন্ত্র করে ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের স্বাধীন রাষ্ট্র হায়দারাবাদকে সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে রাতারাতি দখল করে নেয়। ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) নিরহ মানুষকে হত্যা করে। লুটতরাজ, নারী ধর্ষণ এগুলো তো ছিলই (আত-তাহরীক, আগষ্ট ২০১৬, পৃ. ১৭)। এখন তাদের দৃষ্টি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দিকে। যেমন ভারতের বিজেপির প্রভাবশালী হিন্দু নেতা রাম মাধব বলেন, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারত মিলে একদিন আবার মানুষের ইচ্ছাতেই এক অখ- ভারত গড়ে তোলা সম্ভব (দৈনিক যায়যায়দিন, ২৯-১২-২০১৫)। রাম মাধবের এই কথার মধ্যে রয়েছে এক ভয়ষ্কর ষড়যন্ত্রের ঘ্রাণ। আমি মনে করি ভারতের হিন্দু নেতারা প্রথমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্য থেকে ইসলামী সংস্কৃতি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র গ্রহণ করেছে। অতঃপর সাময়িক আগ্রাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্র দখলের চেষ্টা তারা করবে। অতএব সাবধান।
অতএব হে যুবক! যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। কারণ আমরা মুসলিম জাতি। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংগ্রাম ও সাহসিকতার। আমাদের শরীরে সেই বীরদের রক্ত প্রবাহিত যারা নিজের রক্তকে ইসলামের জন্য ঢেলে দিয়েছিলেন। মুসলিম জাতি চির অজেয়। আমরা অখ- পৃথিবী গড়ে তোলার ও বিশ্ব মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। একদিন গোটা পৃথিবীতে মুসলিমদের রাজত্ব চলবে। এটাই মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী। সুতরাং আমরা চাই সকল ব্যবস্থার উৎসাদনপূর্বক আল-কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করা। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যেহেতু মুসলিমরা কাফেরদের হাতে মার খাচ্ছে এমন অবস্থায় মুসলিম ঈমানদার জনগণের জন্য ৩টি পথ খোলা রয়েছে। যথা:
(ক) মুসলিমদের ‘হক’ ছেড়ে বাতিল আঁকড়ে ধরতে হবে।
(খ) হক্বের উপরে দৃঢ় থাকার কারণে বাতিলপন্থীদের হামলায় ধৈর্যধাণ করতে হবে।
(গ) অথবা বাতিলকে সাহসের সঙ্গে মুকাবেলা করতে হবে। শেষেরটি সবচেয়ে ভালো। কারণে আগের দু’টি তিলে তিলে মরণের রাস্তা। এছাড়া মুসলিমদের অবশ্যই বিশ্ব মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং প্রচলিত শিরক বিদ‘আত, রেশম-রেওয়াজ উৎখাত করতে হবে। সাথে সাথে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত করণীয়গুলো বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। যথা:
(১) ঙওঈ অন্তর্ভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে মুসলিম জাতিসংঘ তৈরি করতে হবে।
(২) এই সংস্থার অধীনে মুসলিমদের একটি মুসলিম সামরিক বাহিনী থাকবে।
(৩) প্রতি বছর সেখানে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের বৈঠক হবে।
(৪) ঙওঈ অন্তর্ভুক্ত কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করা যাবে না।
(৫) ঙওঈ অন্তর্ভুক্ত কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যকোন রাষ্ট্রের যুদ্ধ হলে মুসলিম সামরিক বাহিনী রুখে দাঁড়াবে।
(৬) গঠনকৃত ‘মুসলিম জাতিসংঘ’ পৃথিবীর মুসলিমদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে।
(৭) সঊদী আরব শাসকদের প্রতি আহ্বান মক্কার কা‘বার পার্শ¦বর্তী এলাকায় ‘মুসলিম জাতিসংঘ’-এর অবকাঠামো তৈরি করুন।
পরিশেষে বলতে চাই পৃথিবীতে সর্বযুগে ২টি দর্শনের সংঘাত চলে এসেছে। (ক) মানুষ সর্বদা নিজেদের মনগড়া বিধান মতে, খেয়াল-খুশিমত কাজ করবে। (খ) নাকি তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বিধানমতে চলবে ও সে অনুযায়ী কাজ করবে।
হে যুবক! আমরা সৃষ্টিকর্তার বিধানকে সার্বিক জীবনে মেনে নিয়েছি। আমাদের রাসূল (ﷺ) ছিলেন সার্বিক জীবনে আল্লাহর দাসত্বের বাস্তব রূপকার। আর ঐ সকল যুবক ও ব্যক্তিদের বলছি যারা ছালাত ও ছিয়ামের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইন মানে কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইন মানে না। তোমরা উভয় জীবনে ধর্মীয় আইন মেনে চল। তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি পাবে। মনে রাখবে ধর্মীয় জীবনে রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণ করে আর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ)-এর বিরোধিতা করে পরকালে নাযাত পাওয়া যাবে কি? উল্লেখ্য যে, সমাজ সংস্কার করতে হলে আল্লাহ প্রদত্ত অহীর কোন বিকল্প নেই। আর অহী ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে যুব শক্তি অপরিহার্য
হে যুবক! নিজেকে বদলে দাও, সমাজটাকে বদলে দাও, পৃথিবীকে বদলে দাও। অহি ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ কর। তুমিই পারবে সমাজকে বদলাতে। তুমি তোমার তারুণ্যকে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ব্যয় কর। মনে রাখবে সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ছাড়া দ্বীন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা হয় না। আজ পৃথিবীতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিজাতীয় যে মতবাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার পিছনে যুব সমাজের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাই অহীভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় যুব সমাজের অবদান সবচেয়ে বেশি দরকার। যুবকরা যদি বাতিল মতবাদ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে, তবে কেন ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারবে না? অবশ্যই তারা পারবে। হে যুবক! ত্যাগের জীবন গঠন কর। বিলাসিতাকে ডাষ্টবিনে নিক্ষেপ কর। পৃথিবীতে অহি ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ত্যাগের কোন বিকল্প নেই। আজ বিশ্বে মুসলিমদের যে সংগ্রাম চলছে তা আদর্শিক ও আক্বীদার সংগ্রাম। কখনো রাজনৈতিক নয়। হয় ইসলাম থাকবে আর না হয় কুফর থাকবে। দু’টি কখনও এক সঙ্গে চলতে পারে না।
আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখব যে, আজ সারা বিশ্বের মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। (ক) শোষক (খ) শোষিত। আমাদের যুবকদের শোষিতদের পক্ষ নিতে হবে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল এখানে যেন মুখ্য বিষয় না হয়। সুতরাং আমরা যখন শোষিতদের পক্ষ নিব এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ইসলামী আইনের কল্যাণকর দিকগুলো জনগণকে বুঝাতে পারব, তখনই কেবল অহীভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। মনে রাখতে হবে আল্লাহর দেয়া আলো, বাতাস, পানি যেমন পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য মঙ্গলময় ঠিক অনুরূপ আল্লাহর আইন পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য মঙ্গলময়। আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা আর আমরা হলাম তাঁর গোলাম। সৃষ্টি যেন ¯্রষ্টার বিধান অনুযায়ী সার্বিক জীবন গঠন করে, সেদিকেই মানুষদের আহ্বান করা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
অতএব হে যুবক! তুমি তোমার যাবতীয় অলসতা ঝেড়ে ফেলে আবারও গর্জে ওঠ। শির উঁচু করে বলিষ্ঠ পদে দ-ায়মান হও। শক্ত হাতে সমাজের হাল ধর, যাতে করে সমাজ অন্ধকার ও রসাতলে চলে না যায়। পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণ মানুষদের একটাই দাওয়াত দিয়েছেন মানুষ যেন মানুষের দাসত্ব না করে বরং একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমরা আপনার পূর্বেকার সকল রাসূলের নিকটে একই বিষয়ে প্রত্যাদেশ করেছি যে, আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কেবল আমারই ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা আমার দাসত্ব করবে’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)। অর্থাৎ সার্বিক জীবনে ‘তাওহীদে ইবাদত’ প্রতিষ্ঠা করবে।
সুধী পাঠক! এই ইবাদত বা দাসত্ব যারা মেনে নিয়েছে এবং আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য যারা মানুষদের আহ্বান করেছে যুগ যুগ ধরে তাদের উপর পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রীয় বাধা এসেছে। সুতরাং আজও তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকামী ও হক্বপিয়াসী মুসলিমদের উপর যদি বাধা আসে, তাহলে হ্কের উপর দৃঢ় থাকতে হবে ও ধৈর্যধারণ করতে হবে। কখনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গীবাদী হওয়া যাবে না। কারণ ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ হারাম, জিহাদ ফরয। সত্যের বিজয় একদিন হবেই। তোমাদের দায়িত্ব হ্কের দাওয়াত নিরবচ্ছিন্নভাবে দেয়া। মনে রাখবে বিশ্বাসগত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোন বিধান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে অহির বিধানের পক্ষে জনমত গঠন করতে হবে।
হে আহলেহাদীছ যুবকাফেলা!
আমরা মুসলিম এবং আহলেহাদীছ যুবক। আমরা মানুষদের একটাই দাওয়াত দিয়ে থাকি। মানুষের সামগ্রিক জীবনে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়া এবং সকল বিধান বাতিল করা ও অহির বিধান কায়েম করা। উক্ত দাওয়াত যদি সমাজ নেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অপরাধ মনে হয় এবং তার বিনিময়স্বরূপ যদি জেল-জুলুম ও ফাঁসির ভয় দেখানো হয়, তাহলে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আমরা এই অপরাধ মৃত্যু পর্যন্ত করে যাব। মনে রাখবে জেল-জুলুম ও ফাঁসি দিয়ে কখনো কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দাওয়াতকে বন্ধ করা যাবে না। যে জাতি জীবন দিতে জানে তাকে কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না। বদর, উহুদ, খন্দক যুদ্ধের কথা স্মরণে রাখতে হবে। অতএব হে যুুবক! তোমার সাড়ে তিন হাত দেহের মধ্যে আগে ইসলাম কায়েম কর। তারপর অহীভিত্তিক সমাজ সংস্কারে মনোনিবেশ কর। সুতরাং সার্বিক জীবনে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য কর। কখনো ইহুদী, নাছারা, মুশরিকদের অনুসরণ করবে না। তাদের ষড়যন্ত্রে পা দিবে না। তারা মুসলিমদের শত্রু। ইতিমধ্যে তারা হামলা করে বিশ্বের অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংস করেছে। যেমন- ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান ইত্যাদি। তারা সেখানকার মুসলিমদের ভাগ করে তাদের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মুসলিম ও তাদের রাষ্ট্র। আর লাভবান হচ্ছে- ইহুদী, নাছারা, মুশরিক ও পশ্চিমারা।
অতএব হে যুুবক! সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ থেকে সাবধান। বিজাতীয় মতবাদ থেকে সাবধান। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কখনও জিহাদ হবে না। জিহাদ হবে কাফেরদের বিরুদ্ধে। যদি তারা আমাদের রাষ্ট্র ও ধর্মকে ধ্বংস করতে চায়। তখন মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকের নির্দেশক্রমে জিহাদ চলবে। মনে রাখবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ একটি বিষয় আর জিহাদ একটি বিষয়। জিহাদের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই। আর এ বিষয়টি জনগণকে বুঝাবার দায়িত্ব আলেম ওলামা, পরিবার-শিক্ষক এবং সরকারের।
হে তাওহীদী যুবশক্তি!
আমরা তাওহীদী চেতনার অধিকারী আহলেহাদীছ যুবক। আমরা যেমন বিজাতীয় মতবাদের বিরোধী তদ্রƒপ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদেরও বিরোধী। আমরা খেলাফতে ও জিহাদে বিশ্বাসী। আমরা আক্বীদার ক্ষেত্রে শিরকের বিরুদ্ধে আপোসহীনভাবে তাওহীদপন্থী। আবার আমলের ক্ষেত্রে বিদ‘আতের বিরুদ্ধে আপোসহীনভাবে সুন্নাতপন্থী। আমরা যেমন রাসূল (ﷺ)-কে ধর্মীয় জীবনের নেতা ও নবী মানি, তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও নেতা ও নবী মানি। আর রাসূল (ﷺ)-এর মধ্যেই তো পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। তার আদর্শ মোতাবেক ব্যক্তি, পরিবার সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনা করলেই পৃথিবীতে শান্তি আসা সম্ভব। অন্যথা নয়।
মানুষ যেহেতু ভুলের ঊর্ধ্বে নয় এবং কেউ ভবিষ্যতের মঙ্গল-অমঙ্গলের খবর রাখে না। তাই মানব রচিত কোন মতবাদ-ই প্রকৃত সত্যের সন্ধান দিতে পারে না। সেই মতবাদে পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তিও আসতে পারে না। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো অহীভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত গঠন করা। কারণ জনমতই একসময় জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে। যা দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি বদলে দিতে পারে। কারণ রাজনীতি আদর্শ পরিবর্তন করতে পারে না। তবে আদর্শ রাজনীতি পরিবর্তন করতে সক্ষম। উল্লেখ্য, অহী ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছ হবে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত সংবিধান। অতঃপর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিভিন্ন মহা সমাবেশে সরকারের নিকট অহী ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য দাবি পেশ করা ও দাওয়াত দেয়া। এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। অতএব মুসলিমদের সংবিধান হিসাবে আল-কুরআন ও ছহীহ হাদীছ রাষ্ট্রের সংবিধান হবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যায় যে, এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পিছনে মুসলিমদেরই অবদান সবচেয়ে বেশি।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন যখন বৃটিশরা এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল তখন হারানো স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য ঝাঁপিয়ে পরেছিল মুসলিম মুজাহিদরা। রচিত হয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, বালাকোট, বাঁশের কেল্লা, আম্বেলা ইত্যাদি এক রক্তাক্ত ইতিহাস। আর এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আল্লামা শাহ ইসমাইল শহীদ, সৈয়দ আহমদ বেরীলভী, মাওলানা নিসার আলী তিতুমীর, মাওলানা বেলায়েত আলী, এনায়েত আলী, আমীর আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরাম। তাদের সেই রক্তের পথ ধরেই পরবর্তীতে এসেছে ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা। আর সেই মানচিত্রের একাংশের উপরে বর্তমান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। সেদিন মুসলিম মুজাহিদরা যদি বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করতেন তাহলে স্বাধীন পাকিস্তান, স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেতাম কি? কখনো না। অতএব আমরা নির্দিধায় বলতে পারি যে, এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি ইসলাম। যতদিন বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ইসলামী চেতনা থাকবে ততদিন এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে এদেশের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানীদের যুলুমের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল না। বাঙ্গালী মুসলিমরা কখনই করাচির গোলামি ছিন্ন করে দিল্লীর দাসত্বের শৃংখলে বন্দী হতে চায়নি এবং এজন্য যুদ্ধও করেনি। যুদ্ধ করেছে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই যারা ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি এবং ১৯৭১ এর স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশটা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এবং শান্তিতে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করুক, যারা চায় না তাদেরই কিছু লোক সবসময় বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে থেকে ইসলামী চেতনা এবং এদেশে থেকে ইসলামী সংস্কৃতি মুছে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যাতে করে এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের ভারত নামক রাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হওয়া যায়। অতএব মুসলিম শাসকবর্গ সাবধান। ইসলামী চেতনাই পূর্ববঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পৃথক রাজনৈতিক মর্যাদা দিয়েছে। এটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না। আজ আমরা ভারতের ১টি প্রদেশে থাকলে যে সকল ব্যক্তি এখন জাতীয় নেতা বনেছেন, তারা তখন ছোট নেতা হবারও সুযোগ পেতেন না। যারা এখন একটি জাতীয় সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী, র্যাববাহিনী, আনসারবাহিনী, বিজিবিবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে এসেছেন বা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও বড় আমলা হয়েছেন, তারা তখন কত দরজা নিচে থাকতেন তার হিসাব একবার করেছেন কি? একটু ভেবে দেখুন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাষ্মীর আজো স্বাধীনতা পায়নি। অতএব, চিরন্তন সত্য যে, ইসলামী চেতনাই স্বাধীনতার সম্মান দিয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান হল- কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা করুন। ধর্মীয় ও বৈষয়িক শিক্ষার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্নিত করে একক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করুন। দ্বিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিল বৃটিশ সরকার। যে বৃটিশ ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন ভারত বর্ষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। আর বৃটিশ লর্ড মেকল যিনি ১৯৩৬ সালে বলেছিলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সর্বাধিক চেষ্টা করতে হবে যাতে এমন একটি গোষ্ঠি সৃষ্টি করা যায়, যারা আমাদের ও আমাদের লক্ষ লক্ষ প্রজার মধ্যে দূত হিসাবে কাজ করতে পারে। এরা রক্তে ও বর্ণে হবে ভারতীয়। কিন্তু মেজাজে, মতামতে, নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিতে হবে ইংরেজ’। বর্তমানে বুদ্ধিজীবী এবং যুবকরা বৃটিশ লর্ড মেকলের ফাঁন্দে পড়েছেন কিনা ভেবে দেখবেন কি?
সুধী পাঠক! মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের আহ্বান করে বলতে চাই যে, ধর্মীয় ও বৈষয়িক শিক্ষার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্নিত করে এমন একটি মুসলিম জনসমষ্টি গড়ে তুলুন, যা সারা বিশ্বকে চমকে দিবে। যেরূপ চমকে দিয়েছিলেন ছাহাবায়ে কেরাম। তাঁরা মেজাজে, মতামতে, নৈতিকতায়, বুদ্ধিতে, অর্থনীতিতে ও রাজনীতিতে হয়েছিলেন বিশ্ব মডেল। বৃটিশ গ্লাডস্টোন স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমরা কুরআনকে আঁকড়ে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে দমানো বা পরাভূত করা সম্ভব হবে না। তাই হয় তাদের থেকে কুরআনকে কেড়ে নিতে হবে, না হয় তাদের হৃদয় থেকে কুরআনের প্রতি ভালোাবাসাকে মুছে দিতে হবে’ (দিগদর্শন-১, পৃ. ১৭০)। তাই আমাদেরকে বিজাতীয় বিভিন্ন মতবাদকে ছেড়ে দিয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সার্বিক জীবন গঠন করতে হবে।
ভারতের হিন্দু নেতারা স্বপ্ন দেখে অখ- ভারত গড়ে তোলার জন্য। এজন্য তারা সবসময় ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। (তারা ষড়যন্ত্র করে ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের স্বাধীন রাষ্ট্র হায়দারাবাদকে সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে রাতারাতি দখল করে নেয়। ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) নিরহ মানুষকে হত্যা করে। লুটতরাজ, নারী ধর্ষণ এগুলো তো ছিলই (আত-তাহরীক, আগষ্ট ২০১৬, পৃ. ১৭)। এখন তাদের দৃষ্টি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দিকে। যেমন ভারতের বিজেপির প্রভাবশালী হিন্দু নেতা রাম মাধব বলেন, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারত মিলে একদিন আবার মানুষের ইচ্ছাতেই এক অখ- ভারত গড়ে তোলা সম্ভব (দৈনিক যায়যায়দিন, ২৯-১২-২০১৫)। রাম মাধবের এই কথার মধ্যে রয়েছে এক ভয়ষ্কর ষড়যন্ত্রের ঘ্রাণ। আমি মনে করি ভারতের হিন্দু নেতারা প্রথমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্য থেকে ইসলামী সংস্কৃতি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র গ্রহণ করেছে। অতঃপর সাময়িক আগ্রাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্র দখলের চেষ্টা তারা করবে। অতএব সাবধান।
অতএব হে যুবক! যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। কারণ আমরা মুসলিম জাতি। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংগ্রাম ও সাহসিকতার। আমাদের শরীরে সেই বীরদের রক্ত প্রবাহিত যারা নিজের রক্তকে ইসলামের জন্য ঢেলে দিয়েছিলেন। মুসলিম জাতি চির অজেয়। আমরা অখ- পৃথিবী গড়ে তোলার ও বিশ্ব মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। একদিন গোটা পৃথিবীতে মুসলিমদের রাজত্ব চলবে। এটাই মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী। সুতরাং আমরা চাই সকল ব্যবস্থার উৎসাদনপূর্বক আল-কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করা। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যেহেতু মুসলিমরা কাফেরদের হাতে মার খাচ্ছে এমন অবস্থায় মুসলিম ঈমানদার জনগণের জন্য ৩টি পথ খোলা রয়েছে। যথা:
(ক) মুসলিমদের ‘হক’ ছেড়ে বাতিল আঁকড়ে ধরতে হবে।
(খ) হক্বের উপরে দৃঢ় থাকার কারণে বাতিলপন্থীদের হামলায় ধৈর্যধাণ করতে হবে।
(গ) অথবা বাতিলকে সাহসের সঙ্গে মুকাবেলা করতে হবে। শেষেরটি সবচেয়ে ভালো। কারণে আগের দু’টি তিলে তিলে মরণের রাস্তা। এছাড়া মুসলিমদের অবশ্যই বিশ্ব মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং প্রচলিত শিরক বিদ‘আত, রেশম-রেওয়াজ উৎখাত করতে হবে। সাথে সাথে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত করণীয়গুলো বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। যথা:
(১) ঙওঈ অন্তর্ভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে মুসলিম জাতিসংঘ তৈরি করতে হবে।
(২) এই সংস্থার অধীনে মুসলিমদের একটি মুসলিম সামরিক বাহিনী থাকবে।
(৩) প্রতি বছর সেখানে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের বৈঠক হবে।
(৪) ঙওঈ অন্তর্ভুক্ত কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করা যাবে না।
(৫) ঙওঈ অন্তর্ভুক্ত কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যকোন রাষ্ট্রের যুদ্ধ হলে মুসলিম সামরিক বাহিনী রুখে দাঁড়াবে।
(৬) গঠনকৃত ‘মুসলিম জাতিসংঘ’ পৃথিবীর মুসলিমদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে।
(৭) সঊদী আরব শাসকদের প্রতি আহ্বান মক্কার কা‘বার পার্শ¦বর্তী এলাকায় ‘মুসলিম জাতিসংঘ’-এর অবকাঠামো তৈরি করুন।
পরিশেষে বলতে চাই পৃথিবীতে সর্বযুগে ২টি দর্শনের সংঘাত চলে এসেছে। (ক) মানুষ সর্বদা নিজেদের মনগড়া বিধান মতে, খেয়াল-খুশিমত কাজ করবে। (খ) নাকি তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বিধানমতে চলবে ও সে অনুযায়ী কাজ করবে।
হে যুবক! আমরা সৃষ্টিকর্তার বিধানকে সার্বিক জীবনে মেনে নিয়েছি। আমাদের রাসূল (ﷺ) ছিলেন সার্বিক জীবনে আল্লাহর দাসত্বের বাস্তব রূপকার। আর ঐ সকল যুবক ও ব্যক্তিদের বলছি যারা ছালাত ও ছিয়ামের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইন মানে কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইন মানে না। তোমরা উভয় জীবনে ধর্মীয় আইন মেনে চল। তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি পাবে। মনে রাখবে ধর্মীয় জীবনে রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণ করে আর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ)-এর বিরোধিতা করে পরকালে নাযাত পাওয়া যাবে কি? উল্লেখ্য যে, সমাজ সংস্কার করতে হলে আল্লাহ প্রদত্ত অহীর কোন বিকল্প নেই। আর অহী ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে যুব শক্তি অপরিহার্য
~মুহাম্মাদ নাজমুল হক}{আল ইখলাছ}