সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

অন্যান্য হিংসুকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় সমূহ

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
689
Comments
1,221
Solutions
17
Reactions
6,868
Credits
5,558
হিংসায় ছবর করা ও পাল্টা হিংসা না করা : আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا لاَ يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا
‘যদি তোমরা ছবর কর ও আল্লাহভীরুতা অবলম্বন কর, তাহ’লে ওদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’ (আলে ইমরান ৩/১২০)। শিশু ইউসুফকে বাঘে খেয়েছে বলে তার মিথ্যা রক্ত মাখানো জামা দেখানোর পর পিতা ইয়াকূব (আঃ) ছেলেদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা (মিথ্যা) কাহিনী বানিয়ে দিয়েছে। অতএব এখন ছবর করাই উত্তম। আর তোমরা যেসব কাহিনী শুনাচ্ছ, সে বিষয়ে আল্লাহই আমার একমাত্র সাহায্যস্থল’ (ইউসুফ ১২/১৮)। আল্লাহ ইয়াকূরেব দো‘আ কবুল করেছিলেন এবং কূয়ায় সাক্ষাৎ মৃত্যু থেকে উঠিয়ে আল্লাহ ইউসুফকে মিসরের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।

আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করা : আল্লাহ বলেন,
وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْراً
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হন। আল্লাহ তার আদেশ পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বস্ত্তর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন’ (তালাক ৬৫/৩)। বস্ত্ততঃ এটাই হল সবচেয়ে বড় উপায়।

হিংসুক ব্যক্তির প্রতি সদাচরণ করা : আল্লাহ বলেন,
وَلاَ تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلاَ السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ
‘ভাল ও মন্দ সমান নয়। তুমি ভাল দিয়ে মন্দকে প্রতিরোধ কর। তাহ’লে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত হয়ে যাবে’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩৪)। আবুদ্দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَفْضَلَ مِنْ دَرَجَةِ الصِّيَامِ وَالصَّلاَةِ وَالصَّدَقَةِ؟ صَلاَحُ ذَاتِ الْبَيْنِ فَإِنَّ فَسَادَ ذَاتِ الْبَيْنِ هِىَ الْحَالِقَةُ
‘আমি কি তোমাদেরকে ছিয়াম-ছাদাক্বা ও ছালাতের চেয়েও উত্তম কোন বিষয়ের খবর দিব? আর তা হ’ল পারস্পরিক বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া। কেননা পরস্পরের বিবাদ দ্বীনকে মুন্ডনকারী’।[1]

গোনাহ থেকে তওবা করা : বিপদাপদ বান্দার নিজের কারণেই এসে থাকে (আলে ইমরান ৩/১৬৫)। সে নিজের অজান্তেই অনেক গোনাহ করে থাকে। অথবা জেনেশুনে কিংবা বাধ্য হয়ে করে। আর বান্দা যা জানে, তার চাইতে বহুগুণ বেশী গোনাহ তার রয়েছে, যা সে জানে না। অমনিভাবে যেসব গোনাহের কথা তার স্মরণে আছে, তার চাইতে বহুগুণ বেশী গোনাহ তার স্মরণে থাকে না। তাই সর্বদা বান্দাকে জানা-অজানা সকল পাপের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় এবং খালেছ অন্তরে তওবা করতে হয়। তাতে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে হিংসুক ব্যক্তির অনিষ্ট হতে তাকে রক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ বলেন,
ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُواْ كَذَلِكَ حَقّاً عَلَيْنَا نُنجِ الْمُؤْمِنِينَ
‘অতঃপর আমরা নাজাত দিয়ে থাকি আমাদের রাসূলদের এবং একইভাবে মুমিনদের। কেননা আমাদের উপর হক হ’ল মুমিনদের নাজাত দেওয়া’ (ইউনুস ১০/১০৩)। তিনি বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا تُوْبُوْا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحاً عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لاَ يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا مَعَهُ نُوْرُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধভাবে তওবা কর। যাতে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পাপ সমূহ মোচন করে দেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। যেদিন আল্লাহ স্বীয় নবী ও তার সাথী মুমিনদের লজ্জিত করবেন না। তাদের নূর তাদের সম্মুখে ও ডাইনে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আমাদের নূরকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান’ (তাহরীম ৬৬/৮)।

কিয়ামতের দিন পুলছেরাত পার হবার সময় স্ব স্ব নেক আমল অনুযায়ী মুমিনদের সম্মুখে জ্যোতি থাকবে এবং তাদের ডান হাতে আমলনামা থাকবে। যেখানে জান্নাতের সুসংবাদ থাকবে। এ সময় মুনাফিকদের সম্মুখে জ্যোতি নিভে যাবে। তখন মুমিনগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে, যেন পুলছেরাত পার হওয়া পর্যন্ত তাদের জ্যোতি অব্যাহত থাকে। আর এটা তারা ঐসময় বলবে, যখন মুনাফিকরা মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলবে, ‘তোমরা একটু থামো। আমরা তোমাদের থেকে কিছু জ্যোতি নিয়ে নিই। বলা হবে, তোমরা পিছনে ফিরে গিয়ে জ্যোতি তালাশ কর’... (হাদীদ ৫৭/১৩)। বস্ত্ততঃ আল্লাহ মুমিনদের জন্য জ্যোতিকে অব্যাহত রাখবেন।[2] আর এসবই হবে তাদের খালেছ তওবার ফল হিসাবে। আনাস (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ
‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী এবং ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হ’ল তওবাকারীগণ’।[3]

সকল চিন্তাকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া : হিংসা কারু কোন ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। যেমন তিনি বলেন,
وَإِن يَمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَآدَّ لِفَضْلِهِ يُصَيبُ بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيْمُ
‘যদি আল্লাহ তোমার কোন অকল্যাণ করেন, তবে তা দূর করার কেউ নেই তিনি ব্যতীত। আর যদি তিনি তোমার প্রতি কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তবে তার অনুগ্রহকে ফিরিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে যা চান তাকে তা দান করে থাকেন। বস্ত্ততঃ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইউনুস ১০/১০৭)।

ওহোদ যুদ্ধে দান্দান মুবারক শহীদ হলে মুখের রক্ত মুছতে মুছতে রাসূল (ছাঃ) দুঃখ করে বলেছিলেন,
يْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ شَجُّوا وَجْهَ نَبِيِّهِمْ
‘ঐ জাতি কিভাবে সফলকাম হবে যারা তাদের নবীর চেহারাকে রক্তাক্ত করেছে’? এছাড়াও তিনি সেদিন চারজন কাফের নেতার নাম ধরে তাদের বিরুদ্ধে লা‘নত করেছিলেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ আয়াত নাযিল করে বলেন,
لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ
‘তিনি তাদের ক্ষমা করবেন না শাস্তি দিবেন, সে ব্যাপারে তোমার কিছুই করার নেই। কারণ ওরা সীমালংঘনকারী’ (আলে ইমরান ৩/১২৮)। পরে দেখা গেল ঐ চারজন নেতাকে আল্লাহ ইসলাম কবুলের তাওফীক দান করেন এবং মৃত্যু অবধি তাদের ইসলাম সুন্দর ছিল’।[4]

উপরোক্ত আয়াত নাযিলের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ যে যালেমদের শাস্তি দিবেনই, সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা কুনূতে নাযেলাহ পাঠ নিষেধ করা হয়নি। কেননা ওহোদের ঘটনার পরের বছর ৪র্থ হিজরীর ছফর মাসে সংঘটিত রাজী‘ ও বি’রে মা‘ঊনার মর্মন্তুদ ঘটনায় বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে যথাক্রমে ১০ জন ও ৭০ জন শ্রেষ্ঠ ছাহাবীর অসহায়ভাবে শাহাদাত বরণের পর তিনি হত্যাকারী সম্প্রদায়গুলির বিরুদ্ধে একমাস ব্যাপী প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করেন।[5] আল্লাহ অবশ্যই হিংসুক যালেমকে শাস্তি দিবেন দুনিয়াতে ও আখেরাতে। দুনিয়াতে মযলূমের জীবদ্দশায় বা তার মৃত্যুর পরে এ শাস্তি হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় হিংসুক আবু জাহলরা শাস্তি পেয়েছে এবং তাঁর মৃত্যুর পরে ভন্ডনবী মুসায়লামা কাযযাব আবুবকর (রাঃ)-এর সময় ইয়ামামার যুদ্ধে নিহত হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
‘(আখেরাতে) কঠিন শাস্তি দেওয়ার আগে আমরা অবশ্যই (দুনিয়াতে) তাদেরকে লঘু শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাব। যাতে তারা ফিরে আসে’ (সাজদাহ ৩২/২১)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কোন প্রিয় বান্দার (مَنْ عَادَى لِىْ وَلِيًّا) সাথে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের (فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ) ঘোষণা দিলাম’।[6] অতএব মুমিনের প্রতি হিংসাকারীর শাস্তির বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়াই উত্তম। তিনি হেদায়াত করবেন, যেমন ওহোদ যুদ্ধের কাফের নেতাদের করেছিলেন। অথবা ইহকালে ও পরকালে চরম শাস্তি দিবেন, ‘যেরূপ শাস্তি কেউ দিতে পারে না’ (ফজর ৮৯/২৫-২৬)।



[1]. তিরমিযী হা/২৫০৯; আবুদাঊদ হা/৪৯১৯; মিশকাত হা/৫০৩৮।
[2]. ইবনু জারীর, ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা হাদীদ ১২-১৩ এবং তাহরীম ৮ আয়াত।
[3]. তিরমিযী হা/২৪৯৯, ইবনু মাজাহ হা/৪২৫১; মিশকাত হা/২৩৪১।
[4]. আহমাদ হা/১৪১০৪, তিরমিযী হা/৩০০২-০৫; ঐ চারজন ছিলেন আবু সুফিয়ান, হারেছ বিন হিশাম, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া (তিরমিযী হা/৩০০৪) এবং সুহায়েল বিন আমর (বুখারী হা/৪০৭০)।
[5]. বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৮৯-৯১ ‘কুনূত’ অনুচ্ছেদ।
[6]. বুখারী হা/৬৫০২; মিশকাত হা/২২৬৬।
 
Top