সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

হায়েয থেকে পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে সালাত আদায় ও সাওম পালন

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
690
Comments
1,222
Solutions
17
Reactions
7,096
Credits
5,764
প্রশ্ন: আমি রাতের সাহূর (সেহরী)-এর সময় গোসল করেছি। কারণ, আমি জানি যে আমার মাসিক এই দিনে শেষ হবে, এরপর আমি সেহরী খেয়েছি, সাওম পালন করেছি ও সালাত ও আদায় করেছি; কিন্তু আমার এরপর ফজর থেকে মাগরিবের আযান পর্যন্ত সময়ে কোনো কিছু বের হয়নি। এরপর আমি যখন সালাত আদায়ের জন্য গেলাম, দেখতে পেলাম যে, আমার মাসিক আসলেই শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার সিয়াম ও সালাত কি সঠিক হয়েছে?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

একজন হায়েয ওয়ালী বা ঋতুবতী নারীর মাসিক শেষ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার আগে হায়েয থেকে গোসল করা, সালাত আদায় করা ও সিয়াম পালন করায় তাড়াহুড়ো করা জায়েয (বৈধ) নয়।

আর একজন নারী তার হায়েয শেষ হওয়ার ব্যাপারটি জানতে পারে সাদা স্রাব বের হওয়ার মাধ্যমে যা তাদের (নারী সমাজে) পরিচিত, আর তা হলো, শ্বেতস্রাব। আর নারীদের কেউ কেউ তার পবিত্রতা রক্তের পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জানতে পারে।

সুতরাং একজন নারীর উচিৎ পবিত্রতার ব্যাপারে (পুরোপুরি) নিশ্চিত না হয়ে গোসল করবে না করা।

ইমাম বুখারী ‘ইক্ববাল আল-মাহীদ্ব ওয়া ইদবারিহ’ অধ্যায়ে বলেছেন: ‘আর মহিলা সাহাবীগণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে পাত্রে করে তুলো পাঠাতেন যাতে হলদে রঙ থাকতো। তিনি বলতেন: ‘আপনারা শ্বেতস্রাব না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করবেন না।’ তিনি এর দ্বারা হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া বোঝাতেন। যায়িদ ইবন সাবিতের কন্যার কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে, নারীরা গভীর রাতে আলোকবাতির সাহায্যে পবিত্রতা এসেছে কিনা তা দেখতেন। তিনি ‘নারীরা এরূপ করত না’ বলে তাদের সমালোচনা করেন।” সমাপ্ত

হাফিয ইবন হাজার রহ. বলেছেন: আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, হায়েযের শুরু বোঝা যায় তা হওয়ার সময় রক্ত পড়ার মাধ্যমে এবং তারা তা শেষ হওয়ার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন’।

কেউ বলেছেন, তা জানা যায় শুষ্কতার মাধ্যমে, আর তা হলো সেখানে কোনো কিছু প্রবেশ করালে তা যদি শুষ্ক অবস্থায় বের হয়।

আবার কেউ বলেন তা জানা যাবে শ্বেতস্রাব এর মাধ্যমে। আর এই মতটি লেখক অর্থাৎ ইমাম বুখারী প্রাধান্য দিয়েছেন।”

আর এতে আছে, শ্বেতস্রাব হায়েয শেষ হওয়ার চিহ্ন। আর এ দ্বারা পবিত্রতা শুরু হয়েছে তা বোঝা যায়। আর তিনি তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন যাদের মতে এটি (পবিত্রতা) শুষ্কতার মাধ্যমে বোঝা যায়। কারণ, হায়েযের মাঝেও (ভেতরে প্রবেশ করানো) তুলো শুষ্ক অবস্থায় বের হতে পারে, সে ক্ষেত্রে এর মাধ্যমে হায়েয শেষ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় না, যা শ্বেতস্রাব এর বিপরীত। আর তা এক ধরণের সাদা তরল যা জরায়ু হায়েযের শেষে বের করে দেয়।

ইমাম মালিক বলেছেন: “আমি নারীদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি, এটি তাদের মধ্যে পরিচিত একটি ব্যাপার যা তারা পবিত্রতার সময় দেখা যায়।”[1] সমাপ্ত।

শাইখ ইবন উসাইমীন রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল ঋতুবতী নারী যদি ফজরের আগে পবিত্র হয় ও পরে গোসল করে তবে তার হুকুম কী?

তিনি এর উত্তরে বলেন: “তার সাওম সঠিক হয়েছে যদি সে ফজর উদিত হওয়ার (অর্থাৎ ফজরের সময় শুরু হওয়ার) আগে পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। মূলনীতিটি হলো, একজন নারীকে সে যে পবিত্র হয়েছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে কারণ, নারীদের কেউ কেউ মনে করে যে সে পবিত্র হয়েছে, কিন্তু আসলে সে পবিত্র হয় নি। এ কারণে মহিলা সাহাবীগণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে তুলো নিয়ে আসতেন এবং পবিত্রতার চিহ্ন এসেছে কিনা তা জানতে তাকে তা দেখাতেন, তিনি (‘আয়েশা) তাদেরকে বলতেন: “আপনারা শ্বেতস্রাব না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করবেন না।”

তাই একজন নারীর উচিৎ ধীরস্থিরভাবে নিশ্চিত হওয়া যে সে পবিত্র হয়েছে কি না। সে পবিত্র হলে সাওম পালনের নিয়্যাত করবে যদিও বা সে ফজর উদিত হওয়ার (অর্থাৎ ফজরের সময় শুরু হওয়া) পরে গোসল করে, তবে তার উচিৎ সালাতের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া এবং সময় মত ফজরের সালাত পড়ার জন্য তাড়াতাড়ি গোসল করে নেওয়া…”[2]

আর প্রশ্নকারিণী এমন সময়ে গোসল করেছেন যখন তিনি হায়েয শেষ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন নি, আর তিনি হায়েয থেকে তাঁর পবিত্রতার ব্যাপারে দেরীতে জানতে পেরেছেন, আর তা ছিল যা তার বক্তব্য অনুসারে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে।

সে কারণে প্রশ্নকারিণী যা করেছেন তা সঠিক হয় নি এবং তার সে দিনের সাওম শুদ্ধ হয় নি। তাই তাকে সেই দিনের কাযা করতে হবে।

আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর (প্রশ্নকারিনীর জন্য) উপকারী জ্ঞান ও ভালো কাজের তাওফীক চাই।

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।


[1] ফাতহুল বারী, (১/৪২০)
[2] মাজমূ‘ ফাতওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৭/প্রশ্ন নং ৫৩)
 
Top