হায়েয অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া স্বামীর জন্য হারাম। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ১ম আয়াতে বলেন,
‘‘হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দাও।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১]
অর্থাৎ এমন সময়ে তালাক দিবে যার মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যেন তালাকের পর থেকে নির্দিষ্ট ইদ্দত গণনা করতে পারে। আর এটা গর্ভবতী অবস্থায় অথবা সঙ্গমবিহীন পবিত্রতার সময়ে তালাক দেওয়া ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ, রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেওয়া হলে স্ত্রী ইদ্দত গণনা করতে পারবে না বরং অসুবিধার সম্মুখীন হবে। কেননা যে হায়েযের মধ্যে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে সেটা তো ইদ্দতের মধ্যে গণ্য হবে না। এমনিভাবে যদি পবিত্রতার অবস্থায় সঙ্গমের পর তালাক দেওয়া হয় তখনও ইদ্দতকাল নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে না। কেননা এই সঙ্গমের দ্বারা স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ অজানা থাকবে। যদি গর্ভবতী না হয়ে থাকে তাহলে হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দত গণনা করবে। এমতাবস্থায় যেহেতু ইদ্দতের প্রকার সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত জানা নেই সেহেতু বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক দেওয়া হারাম।
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম প্রমাণিত হয়েছে এবং বুখারী ও মুসলিমসহ হাদীসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও এটিই প্রতীয়মান হয়। যেমন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি স্বীয় স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দিলে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে বিষয়ে অবহিত করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে বললেন:
“তুমি তাকে আদেশ কর সে যেন তালাক প্রত্যাহার করে স্ত্রীকে নিয়ে আসে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রাখে। অতঃপর পুনরায় যখন ঋতুস্রাব দেখা দিবে এবং সেই ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন নিজের নিকট রাখতে চাইলে রাখবে এবং তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিবে। আর এটাই হচ্ছে সেই ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তালাক দেওয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন।”
যদি কোনো স্বামী ঋতুস্রাব অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং এর জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করতঃ স্ত্রীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের হুকুম মোতাবেক তালাক দিতে পারে। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার পর যে হায়েযে তালাক দেওয়া হয়েছে সে হায়েয থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছেই রাখবে। অতঃপর পুনরায় যখন রক্তস্রাব দেখা দিবে এবং তা থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন চাইলে তাকে স্ত্রী হিসেবে নিজের কাছে রেখেও দিতে পারবে আবার তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রে তা জায়েয আছে:
প্রথম: বিবাহের পর স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই অথবা বিবাহের পর সহবাসের পূর্বেই রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয় তাহলে তা হারাম নয়। কেননা এমতাবস্থায় স্ত্রীর ওপর কোনো ইদ্দত পালন ওয়াজিব নয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে তালাক প্রদান করা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী হবে না।
দ্বিতীয়: রক্তস্রাব যদি গর্ভবতী অবস্থায় দেখা দেয় তাহলে তালাক প্রদান করা হারাম নয়।
তৃতীয়: তালাক যদি কোনো কিছুর বিনিময়ে দেওয়া হয় তাহলে হায়েয অবস্থায়ও তালাক দেওয়া জায়েয। যেমন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ এবং খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করলে স্বামী বিনিময় নিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, যদিও স্ত্রী রক্তস্রাবের অবস্থায় থাকে। প্রমাণস্বরূপ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস উপস্থাপন করা যায়:
“সাবেত ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামীর চরিত্র এবং ধর্ম সম্পর্কে আমি কোনো রকম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি না। তবে ইসলামের মধ্যে কুফুরীকে আমি অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিতে পারবে? উত্তরে মহিলা বললেন: জি হ্যাঁ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবেত ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন: তুমি বাগানটি নিয়ে তাকে তালাক দিয়ে দাও।”[1]
স্ত্রী রক্তস্রাব অবস্থায় আছে না পবিত্র অবস্থায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি। সুতরাং বুঝা গেল যে, বিনিময় নিয়ে তালাক দেওয়া জায়েয আছে যদিও স্ত্রী হায়েয অবস্থায় থাকে।
দ্বিতীয়ত: এই তালাক তো অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে স্ত্রীর বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটা পথ মাত্র। সুতরাং যে কোনো সময়ে এবং যে কোনো অবস্থাতে প্রয়োজন দেখা দিলে এ ধরনের তালাক দেওয়া জায়েয।
মুগনী গ্রন্থের ৭ম খণ্ডে ৫২ পৃষ্ঠায় ‘খোলা’ অর্থাৎ ঋতুস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীর পক্ষে অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে তালাক নেওয়া জায়েয হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমন ক্ষতি থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্যই হায়েয চলাকালে তালাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাকে ইদ্দতকাল দীর্ঘ হলে। আর অর্থ নিয়ে তালাক নেওয়ার বিধানটিও ক্ষতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সে উদ্দেশ্যেই শরী‘আত কর্তৃক বিধিত হয়েছে। ক্ষতি বলতে যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য অথবা স্ত্রীর স্বামীকে অপছন্দ করা, তাকে ঘৃণা করা এবং তার সাথে সংসার করতে অনীহা প্রকাশ করা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এ অবস্থার সৃষ্টি হলে মূলত এটা স্ত্রীর জন্য ইদ্দতকাল দীর্ঘ হওয়ার চেয়েও বড় সমস্যা। সুতরাং সামান্য ক্ষতি হলেও বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রক্তস্রাবের অবস্থায়ও বিনিময় দিয়ে তালাক নেওয়া জায়েয এবং এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থের বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারী উক্ত মহিলার অবস্থা সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি।
হায়েয অবস্থায় নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা প্রতিটি জিনিসের হালাল হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম এবং শরী‘আতের দিক দিয়ে এটা নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো প্রমাণও নেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, হায়েয অবস্থায় স্বামীকে স্ত্রীর নিকট যেতে দেওয়া যাবে কি না? উত্তরে বলতে হবে, যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে স্বামী সঙ্গম থেকে বিরত থাকবে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। অন্যথায় সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে পবিত্র হওয়ার আগে স্বামীকে স্ত্রীর নিকট পাঠানো যাবে না বা যেতে দেওয়া হবে না।
[1] সহীহ বুখারী।
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِذَا طَلَّقۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ﴾ [الطلاق: ١]
‘‘হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দাও।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১]
অর্থাৎ এমন সময়ে তালাক দিবে যার মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যেন তালাকের পর থেকে নির্দিষ্ট ইদ্দত গণনা করতে পারে। আর এটা গর্ভবতী অবস্থায় অথবা সঙ্গমবিহীন পবিত্রতার সময়ে তালাক দেওয়া ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ, রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেওয়া হলে স্ত্রী ইদ্দত গণনা করতে পারবে না বরং অসুবিধার সম্মুখীন হবে। কেননা যে হায়েযের মধ্যে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে সেটা তো ইদ্দতের মধ্যে গণ্য হবে না। এমনিভাবে যদি পবিত্রতার অবস্থায় সঙ্গমের পর তালাক দেওয়া হয় তখনও ইদ্দতকাল নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে না। কেননা এই সঙ্গমের দ্বারা স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণ অজানা থাকবে। যদি গর্ভবতী না হয়ে থাকে তাহলে হায়েযের মাধ্যমে ইদ্দত গণনা করবে। এমতাবস্থায় যেহেতু ইদ্দতের প্রকার সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত জানা নেই সেহেতু বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তালাক দেওয়া হারাম।
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম প্রমাণিত হয়েছে এবং বুখারী ও মুসলিমসহ হাদীসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও এটিই প্রতীয়মান হয়। যেমন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি স্বীয় স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের অবস্থায় তালাক দিলে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে বিষয়ে অবহিত করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে বললেন:
»مُرْهُ فَلْيُرَاجِعْهَا ثُمَّ لِيُمْسِكْهَا حَتَّى تَطْهُرَ ثُمَّ تَحِيْضَ ثُمَّ تَطْهُرَ ثُمَّ إنْ شَاءَ أمْسَكَ بَعْدُ وَإنْ شَاءَ طَلَّقَ قَبْلَ أنْ يَمُسَّ فَتِلْكَ الْعِدَّةُ الَّتِيْ أمَرَ اللهُ أنْ تُطَلَّقَ لَهَا النِّسَاءُ»
“তুমি তাকে আদেশ কর সে যেন তালাক প্রত্যাহার করে স্ত্রীকে নিয়ে আসে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রাখে। অতঃপর পুনরায় যখন ঋতুস্রাব দেখা দিবে এবং সেই ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন নিজের নিকট রাখতে চাইলে রাখবে এবং তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়ে দিবে। আর এটাই হচ্ছে সেই ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তালাক দেওয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন।”
যদি কোনো স্বামী ঋতুস্রাব অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং এর জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করতঃ স্ত্রীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের হুকুম মোতাবেক তালাক দিতে পারে। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার পর যে হায়েযে তালাক দেওয়া হয়েছে সে হায়েয থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছেই রাখবে। অতঃপর পুনরায় যখন রক্তস্রাব দেখা দিবে এবং তা থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন চাইলে তাকে স্ত্রী হিসেবে নিজের কাছে রেখেও দিতে পারবে আবার তালাক দিতে চাইলে সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, রক্তস্রাব অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রে তা জায়েয আছে:
প্রথম: বিবাহের পর স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নির্জন স্থানে একাকীভাবে একত্রিত হওয়ার পূর্বেই অথবা বিবাহের পর সহবাসের পূর্বেই রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেয় তাহলে তা হারাম নয়। কেননা এমতাবস্থায় স্ত্রীর ওপর কোনো ইদ্দত পালন ওয়াজিব নয়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে তালাক প্রদান করা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী হবে না।
দ্বিতীয়: রক্তস্রাব যদি গর্ভবতী অবস্থায় দেখা দেয় তাহলে তালাক প্রদান করা হারাম নয়।
তৃতীয়: তালাক যদি কোনো কিছুর বিনিময়ে দেওয়া হয় তাহলে হায়েয অবস্থায়ও তালাক দেওয়া জায়েয। যেমন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ এবং খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করলে স্বামী বিনিময় নিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে, যদিও স্ত্রী রক্তস্রাবের অবস্থায় থাকে। প্রমাণস্বরূপ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস উপস্থাপন করা যায়:
«أَنَّ امْرَأَةَ ثَابِتِ بْنِ قَيْسٍ t أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ مَا أَعْتِبُ عَلَيْهِ فِي خُلُقٍ وَلَا دِينٍ وَلَكِنْ أَكْرَهُ الْكُفْرَ فِي الْإِسْلَام فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَرُدِّينَ عَلَيْهِ حَدِيقَتَهُ؟,, قَالَتْ: نَعَمْ, قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اقْبَلْ الْحَدِيقَةَ وَطَلِّقْهَا تَطْلِيقَةً»
“সাবেত ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামীর চরিত্র এবং ধর্ম সম্পর্কে আমি কোনো রকম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি না। তবে ইসলামের মধ্যে কুফুরীকে আমি অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিতে পারবে? উত্তরে মহিলা বললেন: জি হ্যাঁ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবেত ইবন কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন: তুমি বাগানটি নিয়ে তাকে তালাক দিয়ে দাও।”[1]
স্ত্রী রক্তস্রাব অবস্থায় আছে না পবিত্র অবস্থায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি। সুতরাং বুঝা গেল যে, বিনিময় নিয়ে তালাক দেওয়া জায়েয আছে যদিও স্ত্রী হায়েয অবস্থায় থাকে।
দ্বিতীয়ত: এই তালাক তো অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে স্ত্রীর বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটা পথ মাত্র। সুতরাং যে কোনো সময়ে এবং যে কোনো অবস্থাতে প্রয়োজন দেখা দিলে এ ধরনের তালাক দেওয়া জায়েয।
মুগনী গ্রন্থের ৭ম খণ্ডে ৫২ পৃষ্ঠায় ‘খোলা’ অর্থাৎ ঋতুস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীর পক্ষে অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে তালাক নেওয়া জায়েয হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এমন ক্ষতি থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্যই হায়েয চলাকালে তালাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাকে ইদ্দতকাল দীর্ঘ হলে। আর অর্থ নিয়ে তালাক নেওয়ার বিধানটিও ক্ষতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সে উদ্দেশ্যেই শরী‘আত কর্তৃক বিধিত হয়েছে। ক্ষতি বলতে যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য অথবা স্ত্রীর স্বামীকে অপছন্দ করা, তাকে ঘৃণা করা এবং তার সাথে সংসার করতে অনীহা প্রকাশ করা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এ অবস্থার সৃষ্টি হলে মূলত এটা স্ত্রীর জন্য ইদ্দতকাল দীর্ঘ হওয়ার চেয়েও বড় সমস্যা। সুতরাং সামান্য ক্ষতি হলেও বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রক্তস্রাবের অবস্থায়ও বিনিময় দিয়ে তালাক নেওয়া জায়েয এবং এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থের বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারী উক্ত মহিলার অবস্থা সম্পর্কে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি।
হায়েয অবস্থায় নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা প্রতিটি জিনিসের হালাল হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম এবং শরী‘আতের দিক দিয়ে এটা নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো প্রমাণও নেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, হায়েয অবস্থায় স্বামীকে স্ত্রীর নিকট যেতে দেওয়া যাবে কি না? উত্তরে বলতে হবে, যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় যে স্বামী সঙ্গম থেকে বিরত থাকবে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। অন্যথায় সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে পবিত্র হওয়ার আগে স্বামীকে স্ত্রীর নিকট পাঠানো যাবে না বা যেতে দেওয়া হবে না।
নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] সহীহ বুখারী।