সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ হায়েয অবস্থায় আপতিত কিছু বিষয়

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,263
Credits
6,307
হায়েয অবস্থায় আপতিত বিষয়াদি কয়েক প্রকার:

১ম বিষয়: রক্তস্রাব নির্দিষ্ট নিয়ম ও পরিমাণের চেয়ে কম অথবা বেশি হওয়া। যেমন কোনো নারীর প্রতি মাসে ছয় দিন করে ঋতুস্রাবের অভ্যাস ছিল কিন্তু এক মাসে ৭ দিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব অব্যাহত থাকে অথবা কোনো মেয়ে লোকের ৭ দিন করে ঋতুস্রাব হয়ে থাকে সেখানে ৬ দিন থাকার পর বন্ধ হয়ে গেল।

২য় বিষয়: নিয়মিত অভ্যাসের আগে-পরে হায়েয আরম্ভ হওয়া। যেমন, যেখানে মাসের শেষের দিকে হায়েয আসে সেখানে প্রথম দিকে আসলো অথবা মাসের প্রথম দিকে আসার পরিবর্তে শেষের দিকে আসলো।

উপরোক্ত বিষয় দু‘টির হুকুম কী? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক সমাধান হচ্ছে, নারী যখনই ঋতুস্রাব দেখতে পাবে তখনই ঋতুবতী হিসেবে গণ্য হবে এবং যখনই তা বন্ধ হবে তখনই পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব অভ্যাসের চেয়ে কম-বেশি হওয়া কিংবা আগে-পরে হওয়া সমান কথা। এ মাসআলার প্রমাণাদি পূর্বের অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।

সারসংক্ষেপ হলো, রক্তস্রাব দেখা দেওয়া না দেওয়ার ওপরই তার হুকুম-আহকাম নির্ভর করে। এটিই ইমাম শাফেঈ রহ.-এর অভিমত। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-ও এ সমাধানকে গ্রহণ করেছেন। মুগনী গ্রন্থের লেখক উক্ত অভিমতের সমর্থন করে বলেছেন , ‘উল্লিখিত অবস্থায় যদি নারীদের নিয়মিত বা পূর্ব অভ্যাস ধর্তব্য হতো তাহলে নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতের কাছে তা বর্ণনা করতেন, বিলম্ব করার কোনো প্রশ্নই উঠে না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র স্ত্রীগণসহ সকল নারী জাতির জন্য মাসআলাটির বিবরণ সার্বক্ষনিক প্রয়োজনীয় ছিল, তাই তাতে বিলম্ব করা জায়েয ছিল না। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে অসতর্ক ছিলেন না, বরং সতর্কই ছিলেন। সুতরাং মুস্তাহাযাহ নারী ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে পূর্ব অভ্যাস ধর্তব্য বলে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো আলোচনার সূত্রপাত হয় নি।’[1]

তৃতীয় বিষয়: হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত প্রসঙ্গ:

কোনো মহিলা যদি তার লজ্জাস্থানে জখমের পানির মতো হলুদ বর্ণের অথবা হলুদ এবং কাল রং এর মধ্যবর্তী বর্ণের রক্ত দেখে তাহলে সে রক্ত ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে অথবা ঋতুস্রাবের পর পরই পবিত্র হওয়ার পূর্বে প্রবাহিত হলে ঋতুস্রাব বলে গণ্য হবে এবং এর ওপর ঋতুস্রাবের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। পক্ষান্তরে যদি সে রক্ত পবিত্রতা অর্জনের পরে প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে সেটা ঋতুস্রাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

«كُنَّا لاَ نَعُدُّ الصُّفْرَةَ وَالْكُدْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا»​

“আমরা পবিত্রতা অর্জন করার পর হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্তকে কিছুই মনে করতাম না।”[2]

সহীহ বুখারীর শরাহ (ব্যাখ্যা) ফতহুল বারীতে বলা হয়েছে যে, এই শিরোনাম দ্বারা ইমাম বুখারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস لاَ تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيْنَ الْقَصَّةَ الْبَيْضَاء “সাদা পানি না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়া করো না।” এবং উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহার উল্লিখিত হাদীসে এভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে চেয়েছেন যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে যদি হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত দেখে তাহলে সেটা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং উম্মে আতিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসের অর্থ হচ্ছে যে, ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে পবিত্রতা অর্জন করার পর হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত দেখা দিলে তা ধর্তব্য নয়।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার যে হাদীসটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তার প্রকৃত বিষয়বস্তু এই যে, তখনকার নারীরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার খিদমতে দারাজাহ (এমন জিনিস যা দ্বারা নারী তার লজ্জাস্থান আবৃত করে রাখে) পাঠাতেন, যেন তারা বুঝতে পারে যে, সেখানে ঋতুস্রাবের কোনো চিহ্ন বাকী আছে কি না? সে দারাজাহ’তে হায়েযের নেকড়া বা তুলা ছিল এবং উক্ত নেকড়ায় হলুদ রং দেখে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন: ‘তোমরা সাদা পানি না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা কর।’ প্রকাশ থাকে যে, হাদীসে বর্ণিত ‘আল-কাস্সাতুল বাইযা’ বলা হয় সেই সাদা পানিকে যা হায়েয বন্ধ হওয়ার সময় মহিলার গর্ভাশয় থেকে বের হয়।

৪র্থ বিষয়: ঋতুস্রাব থেমে থেমে প্রবাহিত হওয়া, যেমন একদিন প্রবাহিত হয় আর একদিন বন্ধ থাকে। এমতাবস্থায় দেখতে হবে এ ধরনের ব্যতিক্রম সব সময়ই হয় না মাঝে মধ্যে।

প্রথম অবস্থা: যদি সব সময়ই হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করে তার বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।

দ্বিতীয় অবস্থা: আর যদি সব সময় এমন না হয়, বরং মাঝে মধ্যে এ ধরনের ব্যতিক্রম হয়ে থাকে তাহলে যে সময়টুকুতে বা যে দিনটিতে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে সেটাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হবে? না ঋতুস্রাবের অন্তর্ভুক্ত করা হবে? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিয়ী রহ.র দুই অভিমতের বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে , এ ক্ষেত্রে স্রাব বিহীন মধ্যবর্তী ঐ সময়টুকুও হায়েযের মধ্যেই গণ্য করা হবে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ এবং ‘আল-ফায়েক’ নামক গ্রন্থের লেখক উক্ত অভিমত গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর অভিমতও তাই। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাদা পানি বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অথচ মধ্যবর্তী সেই সময়ে সাদা পানি দেখা যায় নি। তাছাড়া যদি স্রাববিহীন মধ্যবর্তী সেই সময়টাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হয় তাহলে নিশ্চয় তার আগের এবং পরের সময়টাকে হায়েযের মধ্যে গণ্য করতে হবে অথচ এমন কথা কেউই বলে নি। আর যদি মধ্যবর্তী ঐ সময়টুকুকে পবিত্রতার হিসেবে মেনে নেওয়া হয় তাহলে তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা স্ত্রীদের ইদ্দতকাল ৫ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। এমনিভাবে প্রতি দুই দিনে গোসল করা ইত্যাদি বিবিধ কারণে নারী জাতির জন্য বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে অথচ ইসলামী শরী‘আতে (আলহামদুলিল্লাহ) কষ্টকর বলতে কোনো কিছুই নেই।

হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, বর্ণিত অবস্থায় রক্ত দেখা দিলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং পরিচ্ছন্নতা দেখা দিলে তা পবিত্রতা হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু রক্ত এবং পরিচ্ছন্নতার সমষ্টি যদি নিয়মিত হায়েযের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে তাহলে অতিক্রমকারী রক্ত ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে।

মুগনী গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৩৫৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে , ‘লক্ষ্য রাখতে হবে রক্ত যদি এক দিনের চেয়ে কম সময় বন্ধ থাকে তাহলে ঐ সময়টাকে পবিত্রতার মধ্যে গণ্য করা হবে না, ঐ হাদীসের ওপর ভিত্তি করে যা নিফাসের অধ্যায়ে উল্লেখ হয়েছে। যার সারসংক্ষেপ হচ্ছে, এক দিনের চেয়ে কম সময়ের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করবে না এবং এটাই সঠিক সমাধান। কেননা রক্ত একবার প্রবাহিত হবে, একবার বন্ধ হবে, তাহলে এক ঘন্টা পর পর পবিত্রতা অর্জনকারীনী মহিলার পক্ষে গোসল করা চরম কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। অথচ শরী‘আতের বিধি-বিধানে কষ্টের কোনো স্থান নেই। যেমন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা আল-হাজের ৭৮ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন ,

﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖ﴾ [الحج: ٧٨]​

‘‘তিনি দীনের মধ্যে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেন নি।’’ [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৮]

আল-মুগনী গ্রন্থের লেখক বলেন, সুতরাং এক দিনের কম সময় যদি রক্ত বন্ধ থাকে তাহলে তা পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে পবিত্রতার ওপর কোনো প্রমাণ থাকলে সেটা পৃথক কথা। যেমন একজন নারীর নিয়মিত অভ্যাসের শেষ প্রান্তে এসে হায়েয বন্ধ হলো অথবা হায়েয বন্ধ হওয়ার পর মহিলা লজ্জাস্থানে ‘কাস্সায়ে বায়যা’ অর্থাৎ সাদা পানির রেখা দেখল তাহলে এমতাবস্থায় তা পবিত্রতার অন্তর্ভুক্ত হবে।’ আল-মুগনী গ্রন্থের এই অভিমত উপরোক্ত দুই সমাধানের মধ্যবর্তী এক উত্তম অভিমত। আল্লাহই সর্বজ্ঞানী।

৫ম বিষয়: রক্ত শুকিয়ে যাওয়া, যেমন মহিলা শুধু ভেজা ভেজা অবস্থা দেখতে পেল। এমতাবস্থাটি যদি হায়েযের মাঝামাঝিতে বা হায়েযের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পবিত্র হওয়ার পূর্বে সংঘটিত হয়, তবে সেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করতে হবে। আর যদি পবিত্র অবস্থা বিরাজ করার পর সেটা দেখা দেয় তবে সেটা আর হায়েয হিসেবে বিবেচিত হবে না; বরং তখন সেটার সর্বোচ্চ অবস্থা হচ্ছে তা হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্তের সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং সেগুলোর বিধান গ্রহণ করবে।

নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​

[1] মুগনী: ১/৩৫৩।
[2] হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ রহ. বিশুদ্ধ সনদ দ্বারা উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম বুখারীও বর্ণনা করেছেন তবে ‘পবিত্রতা অর্জন করার পর’ কথাটি তিনি উল্লেখ না করলেও শিরোনাম দাঁড় করিয়েছেন এভাবে ‘রক্তস্রাব বিহীন দিনগুলোতে হলুদ অথবা মাটিবর্ণের রক্ত প্রবাহিত হওয়া অধ্যায়’।
 
COMMENTS ARE BELOW
Top