সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

ভ্রান্তি নিরসন হাদীস অস্বীকারকারী কাফের - ষষ্ঠ পর্ব

rasikulindia

Salafi

Salafi User
Threads
37
Comments
46
Reactions
570
Credits
150
পথভ্রষ্ট আহলে কুরআন বা হাদীহ অস্বীকারকারীদের কিছু বিভ্রান্তিমূলক সংশয় ও তার নিরসন:

আহলে কুরআন বা হাদীস বিরোধীদের বিভ্রান্তিকর হাতিয়ারের নাম হল, অনৈতিক যুক্তি। তারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সাধারণ মানুষকে আদর্শচ্যুত করার জন্য তাদের সামনে কিছু উদ্ভট প্রশ্ন ও নীতিহীন যুক্তি পেশ করে থাকে। নিম্নে তাদের কিছু বিভ্রান্তিমূলক তিনটি সংশয় ও তার মোক্ষম জবাব উপস্থাপন করা হলো:

প্রথম সংশয়: তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কিতাব-ই যথেষ্ট। কেননা কুরআনের মধ্যেই সবকিছু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআনকে বুঝার জন্য অথবা শরী‘আতের কোন বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সুন্নাত বা হাদীসের প্রয়োজন নেই। (মাজাল্লাহ্, ইশা‘আতুল কুরআন, পৃ. ৪৯, ৩য় সংখ্যা, ১৯০২ খ্রি. ইশা‘আতুস সুন্নাহ, ১৯তম খ-, পৃ. ২৮৬, ১৯০২)।

তাদের সংশয় নিরসন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল-কুরআনে মূলত শরী‘আতের মূল নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে এবং কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাও বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা বা বিধি-বিধানের নিয়মনীতি, পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য, আকার-আকৃতি, ধরণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে কোন আলোচনা করা হয়নি।

যদি তাই হয় তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের রাক‘আত সংখ্যা, উট, গরু, ছাগল, স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাতের নিসাব বা পরিমাণ, সিয়ামের বিধি-বিধান, হজ্জের নিয়ম-কানুন ইত্যাদি কোথায় বলা হয়েছে?যদি রাসূল(ﷺ)-এর সুন্নাত না থাকত, তাহলে আমরা এগুলো কোথায় থেকে জানতে পারতাম।

সেই জন্যই ইমাম শাফিঈ(রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, রাসূল(ﷺ)-এর সুন্নাত-ই হলো, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের ব্যাখ্যাকারী।' (রিসালাতুশ শাফিঈ, ১ম খ-, পৃ. ৭৯; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৯৩১১১)।

আল্লামা বাদরুদ্দীন আল-যারকাশী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম শাফিঈ(রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় রিসালাতের ‘রাসূল(ﷺ)-এর আনুগত্য করা অপরিহার্য’ নামক অনুচ্ছেদে বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰہَ​

‘যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য করল।’ (সূরা আন-নিসা: ৮০)।

এমন প্রত্যেকটি বিষয় যা আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে ফরয করেছেন যেমন: সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি।

যদি রাসূল(ﷺ) এগুলোর নিয়মনীতি, পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য, আকার-আকৃতি, ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত না করতেন, তাহলে আমরা সেগুলো কিভাবে আদায় বা পালন করতাম? তাঁর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ব্যতীত আমাদের পক্ষে কোন ইবাদতই করা সম্ভবপর হত না।’ (আল-বাহরুল মুহীত্ব, ৬ষ্ঠ খ-, পৃ. ৭-৮)।

‘ইসলাম ওয়েব’-এর আলিমগণ বলেন, ‘অসংখ্য আয়াত প্রমাণ করে যে-রাসূল(ﷺ) ছিলেন কুরআনুল কারীমের উত্তম ব্যাখ্যাকারী। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন- আর আপনার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে।’(সূরা আন-নাহল: ৪৪)।

অন্যত্র তিনি বলেন, আমি তো আপনার প্রতি কিতাব এ জন্যই অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা যে বিষয়ে মতভেদ করে, তাদেরকে আপনি তা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন এবং বিশ্বাসীদের জন্য পথ নির্দেশ ও দয়া স্বরূপ।’(সূরা আন-নাহল: ৬৪)।

তিনি আরো বলেন, ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।’(সূরা আল-হাশর: ৭)।

অতঃপর রাসূল(ﷺ)-এর কর্মসূচক হাদীস এবং সাহাবীদের আমল ও স্বীকারোক্তি থেকে তা আরো পরিস্ফুটিত হয়। কুরআনে এমন শতশত আয়াত আছে, যার বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রাসূল(ﷺ)-এর সুন্নাত ছাড়া সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরূপ পাঠকদের জন্য এখানে কিছু আয়াত উপস্থাপন করা হলো:

(১) আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا​

"পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও।" (সূরা আল-মায়িদাহ: ৩৮)।

এখানে সাধারণভাবে চুরি করলেই চোরের হাত কাটার কথা বলা হয়েছে। জাহিরিয়্যাহ্ মাযহাবের ফকীহবিদদের মতানুযায়ী চুরির এই বিধান সকল প্রকার চুরির জন্য ব্যাপক, চুরির পরিমাণ অল্প হোক অথবা বেশি, সুরক্ষিত জায়গা থেকে চুরি করা হোক অথবা অরক্ষিত জায়গা থেকে, সর্বাবস্থাতেই চোরের হাত কাটা যাবে।

কিন্তু কুরআনের এই আয়াতে কী পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে হাত কাটা যাবে এটা বলা হয়নি। কী পরিমাণ হাত কাটতে হবে, কব্জি থেকে না কনুই থেকে? এটাও বলা হয়নি।

তাই এক্ষেত্রে হাদীসের সাহায্য নেওয়া বাধ্যতামূলক। তার আগে হাদীস অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা এই আয়াতের ব্যাখ্যা কিভাবে করবে? কি পরিমান চুরি করলে এবং চোরের হাত কতটুকু কাটবে প্রশ্ন রইল তাদের কাছে। এবার আসুন উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল(ﷺ) কি বলেছেন।

হাদীসে এসেছে, কেবল ঐ চোরের হাত কাটা যাবে, যে এক দ্বীনারের চার ভাগের এক ভাগ বা এর বেশি চুরি করবে। প্রিয় নবী রাসূল(ﷺ) বলেছেন, ‘এক চতুর্থাংশ স্বর্ণমুদ্রা(দীনার) বা ততোধিক চুরি করলে তবেই হাত কাটা যাবে।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৭৮৯, ৬৭৯০, ৬৭৯১; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৮৪, নাসাঈ, হা/৪৯৪৩)।

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীগণের আমল ও অনুমোদন দ্বারা প্রমাণিত যে, তাঁরা চোরের কব্জি পর্যন্ত হাত কাটতেন, যেমনটি হাদীস গ্রন্থে সুপরিচিত বিষয়।

(২) আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুল্ম দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সূরা আল-আন‘আম: ৮২)।

সাহাবীগণ এই আয়াতের ‘যুলম’ শব্দ দ্বারা সাধারণ ছোট-বড় অত্যাচার করা বুঝেছিলেন। এ আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবীগণ চমকে উঠেন এবং ভীতিকর অবস্থায় জিজ্ঞাসা করেন,

‘হে আল্লাহর রাসূল(ﷺ)! আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে পাপের মাধ্যমে নিজের উপর যুল্ম করেনি? এ আয়াতে শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ হওয়ার জন্য ঈমানের সাথে যুল্মকে মিশ্রিত না করার শর্ত বর্ণিত হয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের মুক্তির উপায় কী?

রাসূল(ﷺ) উত্তরে বললেন, তোমরা আয়াতের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সক্ষম হওনি। আয়াতে যুল্ম বলতে শিরকক বুঝানো হয়েছে। দেখ, অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ​

‘নিশ্চিত শিরক বিরাট যুলম।’ (সূরা লুক্বমান: ১৩; সহীহ বুখারী, হা/৩২, ৩৩৬০, ৩৪২৮, ৩৪২৯, ৪৬২৯, ৪৭৭৬, ৬৯১৮, ৬৯৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/১২৪; তিরমিযী, হা/৩০৬৭)

কাজেই আয়াতের অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি ঈমান আনে, অতঃপর আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী এবং তাঁর ইবাদাতে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে না, সে শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ ও সুপথপ্রাপ্ত।

(৩) তায়াম্মুমের আয়াতে হাত মাসাহ করার কথা বলা হয়েছে,

فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ​

‘তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত মাসাহ করো।’(আন-নিসা, ৪/৪৩)।

কুরআনের এই আয়াতে হাত ও চেহারা মাসাহ করতে বলা হয়েছে কিন্তু এখানে হাতের কতটুকু অংশ মাসাহ করতে হবে , কব্জি পর্যন্ত না কনুই পর্যন্ত নাকি পুরো হাত? সেটা বলা হয়নি। হাদীস অস্বীকারকারী ভ্রান্ত লোকেরা হাতের কতটুকু অংশ মাসাহ করবে বা এই আয়াতের ব্যাখ্যা কিভাবে করবে? চলুন জেনে নিই, এই আয়াতের ব্যাখ্যা রাসূল(ﷺ) কিভাবে করেছেন, তিনি কতটুকু অংশ মাসাহ করতেন। সুন্নাহতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, এখানে ‘হাত মাসাহ করা’ বলতে হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করা বোঝানো হয়েছে, কনুই পর্যন্ত নয়।

আম্মার (ইবনু ইয়াসির) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব- এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি নাপাক হয়েছি, পানি পেলাম না। আম্মার(রাঃ) উমারকে বললেন, আপনার কি মনে নেই যে, এক সময় আমি ও আপনি উভয়ে (নাপাক) ছিলাম? আপনি (পানি না পাওয়ায়) সালাত আদায় করলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সালাত আদায় করলাম।

এরপর ব্যাপারটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ কথা বলার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দুই হাত তালু মাটিতে মারলেন এবং দু'হাত (উঠিয়ে) ফুঁ দিলেন। তারপর উভয় হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন।

এভাবে ইমাম মুসলিমও বর্ণনা করেছেন, যার শেষে শব্দ গুলি হলো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের জন্য এটাই যথেস্ট, যে তোমরা হাত মাটিতে মারবে,তারপর হাতে ফুঁ দিবে, অতঃপর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। (সহীহ বুখারী ৩৩৮, মুসলিম ৩৬৮, আবু দাঊদ ৩২২, নাসায়ী ৩১২, ইবনু মাজাহ্ ৫৬৯, আহমাদ ১৮৩৩২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৩০৬, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২৬৮, মিশকাতুল মাসাবিহ, হা/ ৫২৮)।

সংকলিত আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী



উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি​
 
Top