স্বামীর সামনে সাজসজ্জার জন্য একজন নারী কি আধুনিক মেকআপ-সামগ্রী ব্যবহার করতে পারে?

Joined
Jan 12, 2023
Threads
864
Comments
1,113
Solutions
20
Reactions
13,053
প্রশ্ন: স্বামীর সামনে সাজসজ্জার জন্য একজন নারী কি আধুনিক মেকআপ-সামগ্রী ব্যবহার করতে পারে? আর মেকআপ করে তার পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য মুসলিম নারীর সামনে আসতে পারবে কি?

উত্তর: সাধ্যানুযায়ী একজন নারী তার স্বামীর জন্য শারঈ পরিসীমার মধ্যে সাজসজ্জা করবে। কারণ, নারী যতই রূপসজ্জা করবে, তার প্রতি স্বামীর ভালোবাসা ততই বৃদ্ধি পাবে এবং উভয়ের বন্ধন অটুট হবে। এটি শরীআতের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। মেকআপ করে যদি তাকে সুন্দর লাগে এবং তার কোনো ক্ষতি না হয়, তাহলে প্রসাধনী ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। কিন্তু আমি শুনেছি, মেকআপ করলে নাকি মুখের ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। যার ফলে বার্ধক্যের আগেই ত্বকের বিশ্রী পরিবর্তন ঘটে। আমি নারীদেরকে অনুরোধ করব, তারা যেন ডাক্তারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। যদি ক্ষতি প্রমাণিত হয়, তাহলে মেকআপ-সামগ্রী ব্যবহার করা হারাম, নয়তো ন্যূনতম হলেও মাকরূহ। কারণ, যে বস্তু মানুষের চেহারাকে বিকৃত ও বীভৎস করে, তা হারাম অথবা মাকরূহ।

আমি এ সুযোগে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তা হচ্ছে, নারীরা হাত-পায়ের নখে যে নেইল পলিশ ব্যবহার করে, ছালাত পড়ার সময় এটির ব্যবহার জায়েয নয়। এর রয়েছে এক ধরনের প্রলেপ বা স্তর, যেটি পবিত্র হতে গেলে ত্বকে পানি পৌঁছাতে অন্তরায় সৃষ্টি করে। আর যেসব জিনিস ত্বকে পানি পৌঁছাতে অন্তরায় সৃষ্টি করে, ওযু ও ফরয গোসলকারীর জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ​

'তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও'(আল-মায়েদা, ৫/৬)।

অতএব, যে নারীর নখে নেইল পলিশ লাগানো, তার ত্বকে পানি পৌঁছবে না। ফলে সে তার হাত ধুয়েছে বলে গণ্য হবে না। এতে করে তার ওযু বা গোসলের একটি ফরয ছুটে গেল। কিন্তু যে নারীর ছালাত নেই, তার নেইল পলিশ ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। তবে এটি যদি অমুসলিম নারীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে মুসলিম নারীদের জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। কারণ, তাতে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন হবে।

আমি শুনেছি, কেউ কেউ এটিকে পায়ের মোজার সাথে তুলনা করেছেন এবং মুক্বীম অবস্থায় একদিন একরাত ও মুসাফির অবস্থায় তিনদিন ব্যবহার করা যাবে বলে ফতওয়া দিয়েছেন। কিন্তু এই ফতওয়া সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, মানুষের শরীর আচ্ছাদিত করে এমন সবকিছুকে পায়ের মোজার সাথে তুলনা করা যাবে না। মানুষের তীব্র প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে ইসলামী শরীআতে মোজার উপর মাসাহ করার বিধান এসেছে। যেহেতু মানুষের পায়ে মাটি, পাথর, শীতলতা ইত্যাদি স্পর্শ করে, তাই পা গরম রাখা ও ঢাকা প্রয়োজন হয়। সেকারণে শরীআতে শুধু দুপায়ে মোজার উপর মাসাহ করার বিধান আছে। আবার পাগড়ির সাথে এর তুলনা করাও সঠিক নয়। কারণ, পাগড়ি থাকে মাথায়। আর মাথার বিধান প্রথম থেকেই মূলত হালকা। যার ফলে মাথা মাসাহ করতে হয় এবং মুখ ধুতে হয়। এ কারণে রাসূল (ﷺ) নারীদেরকে হাতমোজার উপর মাসাহ করতে অনুমতি দেননি। অথচ হাতমোজা দুহাতকে আবৃত রাখে।

ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে মুগীরা ইবনে শু'বাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (ﷺ) কোনো এক সফরে ওযু করছিলেন। তখন তার শরীরে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন হতে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হওয়ার ফলে তিনি নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। উক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ত্বকে পানি পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে এমন সবকিছুকে পাগড়ি ও পায়ের মোজার সাথে তুলনা করা যাবে না। প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিত, হক্ক জানার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং যে-কোনো বিষয়ে ফতওয়া দেওয়ার আগে একবার এই চিন্তা করা যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন। কারণ, তার প্রণীত শরীআতের বিষয়ে সে কথা বলছে।

মুসলিম পরিবার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছলেহ আল-উছায়মীন
-অনুবাদ : ড. আব্দুল্লাহিল কাফী মাদানী​


 
Last edited:
Similar threads Most view View more
Back
Top