প্রবন্ধ সালাফদের দ্রুত বই পড়ার কিছু ঘটনা

  • Thread Author

উলামায়ে কেরামের জীবনীতে দ্রুত গতিতে পড়ার যেসব ঘটনা পাওয়া যায় সেগুলো অত্যন্ত আশ্চর্য ধরনের। নিম্নে এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হল-

প্রথম ঘটনা:

খতীবে বাগদাদী রাহ. মক্কা মুকাররমাতে মাত্র তিন মজলিসে ইসমাঈল ইবনে আহমাদ হিয়ারী রহ. এর নিকট সহীহ বুখারী শ্রবণ করেন, যার দুইটি ছিল দুই রাতে।

মাগরিবের সময় শুরু হয়ে সেগুলো ফজরের সময় এসে শেষ হয়েছিল। আর তৃতীয় মজলিসটি ছিল দুপুর থেকে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত। আল্লামা শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. বলেন, আমাদের যুগে কেউ এমনটা পারবে বলে আমার জানা নেই। এটা সহজ হওয়ার পেছনে মনে হয় সেই যুগে সময়ের মধ্যে বরকত থাকার বিষয়টি কার্যকর ছিল।

[কাওয়ায়েদুত তাহদীদ:২৬২]

দ্বিতীয় ঘটনা:

খতীবে বাগদাদী রাহ.-এরই আরেকটি ঘটনা পাওয়া যায়। তা হল মীনার দিনগুলিতে তিনি কারীমা মারওয়াযিয়া রাহ. এর নিকট সহীহ বুখারী পড়েছিলেন।

[আল জাওয়াহিরু ওয়াদ দুরার ফি তারজামাতি শাইখিল ইসলাম ইবনে হাজার: ১০৪]

তৃতীয় ঘটনা:

ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. সুনানে ইবনে মাজাহ মাত্র চার মজলিসে পড়েছিলেন। সহীহ মুসলিমও তিনি চার মজলিসেই পড়েছিলেন। তবে শেষ মজলিসটি দুই দিনেরও কিছুটা বেশি সময়ে হয়েছিল।

ইমাম নাসাঈ রাহ. এর সুনানে কুবরা তিনি দশ মজলিসে পড়েছিলেন। প্রত্যেক মজলিসের সময়সীমা ছিল চার ঘণ্টা করে। এর চেয়েও দ্রুত গতিতে পড়ার যে ঘটনা তার জীবনে ঘটেছিল তা হল, ইমাম তাবারানী রাহ. এর মুজামে সগীর গ্রন্থটি যোহর থেকে নিয়ে আসর পর্যন্ত সময়ে মাত্র এক মজলিসে পড়ে শেষ করেছিলেন। গ্রন্থটি এক খণ্ডে এবং তাতে প্রায় দেড় হাজার হাদীস রয়েছে, তিনি সহীহ বুখারী দশ মজলিসে বর্ণনা করেছিলেন, প্রত্যেক মজলিসের সময় সীমা ছিল চার ঘণ্টা করে।

[প্রাগুক্ত: ১০৩]

চতুর্থ ঘটনা:

ইবনে হাজার রাহ. দিমাশক অবস্থান কালে প্রায় একশত খণ্ড অধ্যয়ন করেছিলেন। সেখানে তার অবস্থান ছিল দুই মাসেরও কিছুটা বেশি সময়কাল।

[হাফেজ ইবনে হাজার: ২৮৯]

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আমাদের পক্ষে এমন অল্প সময়ে অধিক পড়া সম্ভব নয়। বরকতের দিক দিয়ে আমাদের যুগ তাদের যুগের মতো নয়। উচ্চমনোবল আর হিম্মতের দিক দিয়েও আমরা তাদের সমতুল্য নই। তবুও এই ঘটনাগুলো উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো, ধৈর্যসহকারে লাগাতার বহু সময় পড়তে পারার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা এবং সাহস যোগানো।

কবি বলেন-
فَتَشَبَّهُوْا إِنْ لَمْ تَكُوْنُوْا مِثْلَهُمْ إِنَّ التَّشَبُّهَ بِالْكِرَامِ فَلَاحُ
ভালো মানুষ না হলেও; তাদের আকার ধরো। তাদের আকার ধরার মাঝে; সফল হতে পারো।

আমাদের মনে রাখতে হবে, মূল বিষয় হল পঠিত বিষয়টি বুঝতে পারা ও অনুধাবন করা। পড়তে পড়তে পৃষ্ঠা সংখ্যা বৃদ্ধি করা বা খণ্ডের পর খণ্ড শেষ করা উদ্দেশ্য নয়। কারণ অনেক সময় পড়তে গিয়ে বেশি তাড়াহুড়োর কারণে পঠিত বিষয়গুলো ভালো ভাবে বোঝা পাঠকের জন্য সম্ভব হয় না।

যদি আপনি নিজের পড়ার গতি যথোপযুক্ত কিনা সে সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আস্তেআস্তে পাঁচ মিনিট পড়ুন। এরপর দেখুন মোট শব্দসংখ্যা কত হল। তারপর ওই সংখ্যাটিকে পাঁচ দিয়ে ভাগ দিন। যদি দেখেন ভাগফল ১৫০ হয়েছে তাহলে এটি পরিমাণে কম বলে গণ্য হবে, যার মানে হচ্ছে আপনার পড়ার গতি ধীর। আরো দ্রুত গতিতে পড়ার চেষ্টা চালাতে হবে আপনাকে।

এই বিষয়ে বিজ্ঞজনদের কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হল:

* অর্থের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে দ্রুত পড়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন, এক মাসের মধ্যে আপনি আগের চেয়ে আরো দ্রুত গতিতে পড়তে পারছেন।

* পড়ার সময় দৃষ্টির পরিধিকে প্রশস্ত করুন। প্রতিটি যতিচিহ্নে ক্ষান্ত হবার সময়-কালকে কমিয়ে আনুন।

* ঠোঁট নাড়ানো বা আওয়াজ করা ছাড়াই নিঃশব্দে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অপরিচিত শব্দের প্রতি তেমন ভ্রুক্ষেপ করবেন না। কারণ অধিকাংশ সময় আগ-পিছ থেকে এর অর্থ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

* উপরোক্ত পরামর্শগুলো যত্নের সাথে পালন করলে একটা সময় আপনি নিজেই পড়ার গতি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি অনুভব করবেন।

শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

 
Similar threads Most view View more
Back
Top