ভূমিকা :
ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হ’ল সালাত। সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণকে হৃদয়ে জাগ্রত রাখার প্রক্রিয়া হিসাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সালাত এমন একটি ইবাদত, কালেমায়ে শাহাদতের পরেই যার স্থান। কেউ মুসলমান হ’লে তাকে প্রথমেই সালাতে অভ্যস্ত হওয়া আবশ্যক। সাহাবীগণের মধ্যে কেউ সালাতে না আসলে তাকে কাফের মনে করা হ’ত। সালাত ত্যাগ করা কাফের ও মুনাফিকদের কাজ। সালাত ত্যাগকারীরা পরকালে ফেরাউন, হামান, কারূনের মত কাফেরদের সাথে জাহান্নামে অবস্থান করবে।
ফরয এই ইবাদতটি নিয়ে বর্তমানে বহু মানুষের মধ্যে অবহেলা দেখা যায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় অনেকের হয়, কিন্তু সালাত আদায়ের সময় তাদের হয় না। খোশগল্প করার সময় জোটে, কিন্তু মসজিদে গিয়ে আল্লাহর সাথে মুনাজাত করার সময় হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর সুযোগ হয় কিন্তু মুছাল্লায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে নিজের আবেদন-নিবেদন পেশ করার সময় হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যস্ততায় সালাত ক্বাযা করা তো অনেকের কাছে স্বাভাবিক বিষয় মনে হয়। অথচ সালাতে অবহেলা, অলসতা ও তা পরিত্যাগের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। নিম্নে সালাত পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-
সালাত পরিত্যাগ করা কুফরী :
সালাত পরিত্যাগ করা কুফরী কাজ। সালাত ত্যাগ করাকে রাসূল (ﷺ) কুফরী বলেছেন। যেমন হাদীসে এসেছে,
জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য সালাত ছেড়ে দেওয়া’।[1] অন্য বর্ণনায় আছে, মানুষ ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত। কোন বর্ণনায় আছে, ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত।[2] অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘বান্দা, কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত। যখন সে সালাত পরিত্যাগ করল, তখন সে শিরক করে ফেলল’।[3]
বুরায়দাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে পার্থক্য তা হ’ল সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল’।[4]
তাবেঈ আব্দুল্লাহ ইবনু শাকীক আল-উকায়লী বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম সালাত ব্যতীত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফরী মনে করতেন না’।[5]
শাদ্দাদ ইবনু মা‘কেল হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম তোমরা তোমাদের দ্বীনের যা হারাবে তাহ’লে আমানত এবং সর্বশেষ দ্বীনের যা হারাবে তা হ’ল সালাত’।[6] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, ‘ইসলাম থেকে চলে যাওয়া সর্বশেষ বস্ত্ত যেহেতু সালাত সেহেতু যে বস্ত্তর শেষ চলে যায় সে বস্ত্ত সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। এজন্য আপনাদের উচিৎ দ্বীনের সর্বশেষ অংশ সালাতকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরা, আল্লাহ আপনাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন (ইমাম আহমাদ, কিতাবুছ সালাত)।
জাবের বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হ’ল-
‘রাসূল (ﷺ)-এর যুগে আমলসমূহের মধ্যে কোন আমলটি আপনাদের নিকট ঈমান এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে বিবেচিত হ’ত? তিনি বললেন, সালাত’।[7]
উল্লেখ্য যে, কুফরী করা ও কাফের হয়ে যাওয়া এক বিষয় নয়। এক্ষণে কেউ যদি সালাতকে অস্বীকার করে বা একেবারে ছেড়ে দেয় তাহ’লে সে কাফের হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যদি অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে এবং মাঝে-মধ্যে আদায় করে তাহ’লে সে কাফের হবে না বরং কবীরা গুনাহগার হবে। তওবা না করলে তাকে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।[8]
সালাত ত্যাগ করা হত্যাযোগ্য অপরাধ :
সালাতকে অবজ্ঞা করে তা ত্যাগ করা হত্যাযোগ্য অপরাধ। কেউ ইচ্ছা করে সালাত পরিত্যাগ করলে তাকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিতে হবে। সে এই বিধান অস্বীকার করলে সরকার তাকে শাস্তি দিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তোমরা মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা কর, পাকড়াও কর, অবরোধ কর এবং ওদের সন্ধানে প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তাহ’লে ওদের রাস্তা ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবা ৯/৫)। এর তাফসীরে বলা হয়েছে, তারা সালাত আদায় করলে জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে। আর তা পরিহার বা অস্বীকার করলে তা হত্যাযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে,
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যে পর্যন্ত না তারা এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক উপাস্য নেই, আর মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আর যখন তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আমাদের কিবলার দিকে মুখ করবে, আমাদের যবেহকৃত পশু আহার করবে এবং আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করবে, তখন আমাদের জন্য তাদের রক্ত ও সম্পদ হারাম হবে। তবে এই কালেমার কোন হক (শরী‘আতসম্মত কারণ) পাওয়া গেলে ভিন্ন কথা। মুসলমানদের যে অধিকার রয়েছে তাদের জন্যও তা থাকবে। আর মুসলমানদের উপর যে দায়িত্ব বর্তায়, তা তাদের উপরও বর্তাবে’।[9] অত্র হাদীসে সালাত আদায়কে নিরাপত্তার মাপকাঠি বলা হয়েছে।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা কিছু মালামাল বণ্টন সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে জনৈক উঁচু গাল, ফোলা কপাল এবং গর্তে ঢোকা চোখ বিশিষ্ট ঘন শ্মশ্রুমন্ডিত মাথা নেড়া উরুর উপর কাপড় পরা ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-কে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করুন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি ধ্বংস হয়ে যাও! আমি কি দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা আল্লাহ ভীরু ব্যক্তি নই? বর্ণনাকারী বলেন, যখন লোকটি রওয়ানা হ’ল তখন খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তার গর্দান কেটে ফেলব না? রাসূল (ﷺ) বললেন, না, হয়তো বা সে সালাত আদায় করে’।[10]
আল্লাহ ও রাসূলের যিম্মা থেকে মুক্তি :
কেউ ইচ্ছা করে সালাত ত্যাগ করলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর যিম্মা থেকে সে বের হয়ে যায়। যেমন মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল শিখিয়ে দেন, যা করলে আমি জান্নাত প্রবেশ করতে পারব। তিনি বললেন,
‘তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না; যদিও তোমাকে সে ব্যাপারে শাস্তি দেওয়া হয় এবং পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। তোমার মাতা-পিতার আনুগত্য কর; যদিও তারা তোমাকে তোমার ধন-সম্পদ এবং সমস্ত কিছু থেকে দূর করতে চায়। আর স্বেচ্ছায় সালাত ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে তার উপর থেকে আল্লাহর দায়িত্ব উঠে যায়’।[11]
অন্যত্র তিনি বলেন,
‘ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো সালাত ছেড়ে দিবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ছেড়ে দেয়, তার থেকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারী মুক্ত হয়ে যায়’।[12]
সালাত ত্যাগকারীর ইসলামে কোন অংশ নেই :
সালাত ত্যাগ করা এমন ভয়াবহ পাপ যে, কেউ তা করলে সে ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে যায়। যেমন আছারে এসেছে,
মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, যে রাত্রে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে ছুরিকাঘাত করা হয়, সেই রাত্রে তিনি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলেন। ওমর (রাঃ)-কে ফজরের সালাতের জন্য জাগানো হ’ল। ওমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, আমি এই অবস্থায়ও সালাত আদায় করব। কারণ যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দেয়, ইসলামে তার কোন অংশ নেই। অতঃপর ওমর (রাঃ) সালাত পড়লেন অথচ তার জখম হ’তে তখনও রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[13] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন,
‘যে ব্যক্তি সালাত বিনষ্ট করে ইসলামে তার কোন অংশ নেই’।[14]
সালাত ত্যাগ করা মুশরিকদের কাজ :
সালাত পরিত্যাগ করা মূলতঃ মুশরিকদের কাজ। এজন্য মুসলমান ব্যক্তি কখনো সালাত পরিত্যাগ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর তোমরা তাঁকে ভয় কর ও সালাত কায়েম কর এবং তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (রূম ৩০/৩১)।
ইবনু বাত্তা (রহঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেন,
‘আল্লাহ সালাত পরিত্যাগ- কারীকে মুশরিক এবং ঈমান থেকে খারিজ হিসাবে গণ্য করেছেন। কারণ এই সম্বোধনের মাধ্যমে মুমিনদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, যাতে তারা সালাত পরিত্যাগ না করে। আর তারা এটা করলে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে এবং মুশরিকদের মত হয়ে যাবে’।[15]
ইবনু বাত্তা (রহঃ) আরো বলেন,
‘ঈমান, সালাত ও যাকাতের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। যার ঈমান নেই তার সালাত কোন কাজে আসবে না। যে সালাত আদায় করে না তার ঈমান কোন উপকারে আসবে না’।[16]
সালাত ত্যাগ করা অজ্ঞদের বৈশিষ্ট্য:
যারা সালাত আদায় করে না তাদেরকে অজ্ঞদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর যখন তোমরা সালাতের জন্য (আযানের মাধ্যমে) আহবান করে থাকো, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ ওরা একেবারেই নির্বোধ সম্প্রদায়’ (মায়েদাহ ৫/৫৮)। সুদ্দী (রহঃ) বলেন,
‘মদীনায় এক নাছারা ছিল যে মুওয়াযযিনের আযানের সময় আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল! বলতে শুনত, তখন সে বলত, মিথ্যাবাদী আগুনে পুড়ুক! এক রাতে সে পরিবারসহ ঘুমিয়ে ছিল। এমন সময় তার দাসী সে ঘরে আগুন নিয়ে প্রবেশ করে। আগুনের একটি টুকরো ঘরে পড়ে যায় এবং আগুন ধরে যায়। এতে তার বাড়ি পুড়ে যায় এবং সে পরিবারসহ পুড়ে মারা যায়’।[17] সালাত ও আযানকে নিয়ে কটূক্তি করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা সপরিবারে তাকে ধ্বংস করে দেন। যখন আযান শেষে মুসলমানেরা সালাতে দাঁড়াত তখন ইহূদীরা হাঁসি-তামাশা করত। যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করে বলেন, এরাই নির্বোধ সম্প্রদায়।[18]
সালাত ত্যাগ করা যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার সমতুল্য অপরাধ :
কোন এলাকায় যদি আযানের ধ্বনি শোনা যেত তাহ’লে সে এলাকায় রাসূল (ﷺ) বা সাহাবায়ে কেরাম অভিযান পরিচালনা করতেন না। বরং মনে করা হ’ত এরা সালাত আদায়কারী। আর আযান শোনা না গেলে সে এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হ’ত। যেমন আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) যখন আমাদেরকে নিয়ে কোন গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদে যেতেন, তখন ভোর পর্যন্ত আক্রমণ করতেন না। আর ভোর হ’লে আযানের আওয়াযের অপেক্ষায় থাকতেন। যদি আযান শুনতে পেতেন, তখন আক্রমণ করা হ’তে বিরত থাকতেন। আর আযান না শুনলে আক্রমণ করতেন।[19]
সালাত পরিত্যাগে আমীর বা নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অনুমতি :
সালাত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে, রাষ্ট্র বা নেতারা যতদিন সালাত কায়েম রাখবে ততদিন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা জনগণের জন্য হারাম। যদিও তারা অন্যান্য ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হয়।
আওফ ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে। তারা তোমাদের জন্য দো‘আ করে, তোমরাও তাদের জন্য দো‘আ কর। পক্ষান্তরে তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদেরকে তরবারি দ্বারা প্রতিহত করব না? তখন তিনি বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে। আর যখন তোমাদের শাসকদের মধ্যে কোনরূপ অপসন্দনীয় কাজ দেখবে, তখন তোমরা তাদের সে কাজকে ঘৃণা করবে, কিন্তু (তাদের) আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেবে না’।[20]
রাসূল (ﷺ) আরো বলেন,
‘অচিরেই এমন কতক আমীরের উদ্ভব ঘটবে তোমরা তাদের চিনতে পারবে এবং অপসন্দ করবে। যে ব্যক্তি তাদের স্বরূপ চিনল সে মুক্তি পেল এবং যে ব্যক্তি তাদের অপসন্দ করল নিরাপদ হ’ল। কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের পসন্দ করল এবং অনুসরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হ’ল)। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? রাসূল (ﷺ) বললেন, না, যতক্ষণ তারা সালাত আদায় করবে’[21]।
সালাত ত্যাগ করা অন্যান্য আমল বিনষ্টের কারণ :
সালাত পরিত্যাগ করা এমন অপরাধ যে, এ কারণে তার অন্যান্য সৎ আমল বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন বুরায়দা আল-আসলামী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে এক যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। তিনি বলেন,
‘তোমরা মেঘাচ্ছন্ন দিনে তাড়াতাড়ি (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করবে। কারণ যার আছরের সালাত ছুটে যায় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়’।[22] অন্য হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তির আছরের সালাত কাযা হ’ল তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল’।[23] কোন কোন বর্ণনায় আছর সালাতের কথা উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সালাত পরিত্যাগ করে অবশ্যই তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়’।[24]
সালাত ত্যাগে রিযিক থেকে বঞ্চিত :
সালাত এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা যে সকল স্থানে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন তার পরপরই প্রায় সব জায়গাতে রিযিকের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যেমন কুরআনে এসেছে,
‘আর তুমি তোমার পরিবারকে সালাতের আদেশ দাও এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক। আমরা তোমার নিকট রূযী চাই না। আমরাই তোমাকে রূযী দিয়ে থাকি। আর (জান্নাতের) শুভ পরিণাম তো কেবল মুত্তাক্বীদের জন্যই’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩২)।
আল্লাহর বাণী, ‘আমরা তোমার নিকট রূযী চাই না। আমরাই তোমাকে রূযী দিয়ে থাকি’-এর ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,
‘তুমি যখন সালাত আদায় করবে তোমার নিকট এমন জায়গা থেকে রিযিক আসবে যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রদান করে থাকেন’ (তালাক ৬৫/২-৩)। তিনি আরো বলেন,
‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট থেকে কোন রিযিক চাই না এবং চাই না যে তারা আমাকে আহার যোগাবে। নিশ্চয় আল্লাহ হ’লেন সবচেয়ে বড় রিযিকদাতা ও প্রবল শক্তির অধিকারী’ (যারিয়াত ৫১/৫৬-৫৭)।
ফেরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালফের সাথে হাশর :
যারা সালাত ত্যাগ করবে তাদের হাশর হবে বড় বড় কাফেরদের সাথে। আর পরকালে বড় কাফেরদের অবস্থা হবে ভয়াবহ। যাদের মধ্যে রয়েছে ফেরাউন, হামান, ক্বারূন, উবাই ইবনু খালফ ও তাদের দোসরেরা। এ মর্মে হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন সালাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি তা (সালাত) হেফাযত করবে, ক্বিয়ামত দিবসে তা তার জন্য নূর, দলীল-প্রমাণ ও জাহান্নাম হ’তে মুক্তি (এর উপায়) হবে। আর যে ব্যক্তি তা (সালাত) হেফাযত করবে না, ক্বিয়ামত দিবসে তা তার জন্য নূর, দলীল-প্রমাণ ও জাহান্নাম হ’তে মুক্তি (এর উপায়) হবে না। আর ঐ ব্যক্তি ক্বিয়ামত দিবসে ক্বারূন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনু খালফ-এর সাথে থাকবে’।[25]
বারযাখে ভয়াবহ শাস্তি :
যে ব্যক্তি সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে বরং উদাসীন থাকে তার জন্য কবরে এবং জাহান্নামে ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে জাগালো আর বলল, চলুন। আমি তাদের সাথে চললাম। আমরা এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে শুয়ে আছে এবং তার কাছে এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে। ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একটু পর তার মাথা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আবার সে পাথরটি নিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে। তার মাথা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে আবার আঘাত করছে। এভাবেই চলছে। আমি তাদের বললাম, সুবহানাল্লাহ! এ দু’ব্যক্তি কে?... তারা আমাকে বলল, যার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে সে হ’ল এমন ব্যক্তি যে কুরআন শিখেছে কিন্তু তা প্রত্যাখান করেছে এবং ফরয সালাত থেকে নিদ্রায় রাত কাটিয়েছে’।[26]
সালাত বিনষ্ট করা পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য :
সালাত ইসলামের প্রধান রুকন। এজন্য সালাত ত্যাগকারী কবীরা গুনাহগার এবং অস্বীকারকারী কাফের। আল্লাহ তা‘আলা সালাত বিনষ্টককারী পূর্ববর্তী এক সম্প্রদায়ের কথা আলোচনা করে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তাদের পরে এলো তাদের (অপদার্থ) উত্তরসূরীরা। তারা সালাত বিনষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। ফলে তারা অচিরেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (মারিয়াম ১৯/৫৯)। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে (সূরা মারিয়ামের ৫৯ আয়াত পাঠ করার পর) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
‘ষাট বছর পর কিছু (অপদার্থ) পরবর্তীগণ আসবে, তারা সালাত নষ্ট করবে ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হবে। সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। অতঃপর এক জাতি আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী পার হবে না। (হৃদয়ে জায়গা পাবে না।) কুরআন তিন ব্যক্তি পাঠ করে- মুমিন, মুনাফিক ও ফাজের (পাপী)।[27]
সালাত ত্যাগ করা জাহান্নামে যাওয়ার বড় কারণ :
যে সকল পাপের কারণে মানুষ জাহান্নামে যাবে তন্মধ্যে সালাত ত্যাগ করা অন্যতম। যার স্বীকিৃতি স্বয়ং জাহান্নামীরাই দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতী ও জাহান্নামীদের কথোপকথন তুলে ধরে বলেন,
‘কোন্ বস্ত্ত তোমাদেরকে ‘সাক্বারে’ (জাহান্নামে) প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’ (মুদ্দাছি্ছর ৭৪-৪২-৪৩)।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
‘আল্লাহ তা‘আলা কোন কোন ঈমানের অধিকারীদের শাস্তি দিবেন। অতঃপর মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শাফা‘আতে তাদের বের করে আনবেন। জাহান্নামে কেবল তারাই থেকে যাবে যাদের কথা আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে আলোচনা করেছেন- ‘কোন্ বস্ত্ত তোমাদেরকে ‘সাক্বারে’ প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’।[28]
[1]. আবুদাঊদ হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫৬৯, সনদ সহীহ।
[2]. সহীহুত তারগীব হা/৫৬৩।
[3]. সহীহুত তারগীব হা/৫৬৬।
[4]. তিরমিযী হা/২৬২১; মিশকাত হা/৫৭৪; সহীহুত তারগীব হা/৫৬৪।
[5]. তিরমিযী হা/২৬২২; মিশকাত হা/৫৭৯; সহীহুত তারগীব হা/৫৬৫।
[6]. তাবারানী কাবীর হা/৯৭৫৪; সহীহাহ হা/১৭৩৯।
[7]. ইবনু বাত্ত্বা, আল-ইবানাতুল কুবরা হা/৮৭৬; মারওয়াযী, তা‘যীমু কাদরিছ সালাত হা/৮৯৩।
[8]. আলবানী, হুকমু তারিকিছ সালাত ১/১০, ৫১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৫৫-৫৬; সহীহাহ হা/৩০৫৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[9]. বুখারী হা/৩৯২; নাসাঈ হা/৩৯৬৭; আহমাদ হা/১৩৭৮।
[10]. বুখারী হা/৪৩৫১; মুসলিম হা/১০৬৪।
[11]. তাবারানী আওসাত্ব হা/৭৯৫৬; সহীহুত তারগীব হা/৫৬৯।
[12]. আহমাদ হা/২৭৪০৪; সহীহুত তারগীব হা/৫৭৩।
[13]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৬৭৩; ইবনুল খাল্লাল, আস-সুনাহ হা/১৩৮৮,; মারওয়াযী, তা‘যীমু কাদরিস সালাত হা/৯২৯, সনদ সহীহ, জামে‘উল ঊছূল হা/৫২২৫।
[14]. দারাকুৎনী হা/১৭৫০; মুয়াত্ত্বা হা/১০১; ইরওয়া হা/২০৯।
[15]. আল-ইবানাতুল কুবরা ২/৭৯২।
[16]. আল-ইবানাতুল কুবরা ২/৭৯২।
[17]. তাফসীর ইবনে কাছীর ৩/১২৮।
[18]. তাফসীরুল খাযেন ২/৫৭।
[19]. বুখারী হা/৬১০; মুসলিম হা/১৩৬৫।
[20]. মুসলিম হা/১৮৫৫; মিশকাত হা/৩৬৭০।
[21]. মুসলিম হা/১৮৫৪; মিশকাত হা/৩৬৭১।
[22]. বুখারী হা/৫৯৪; মিশকাত হা/৫৯৫।
[23]. মুসলিম হা/৬২৬; মিশকাত হা/৫৯৪।
[24]. হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৬৩৯।
[25]. দারেমী হা/২৭২১; আহমাদ হা/৬৫৭৬; ইবনু হিববান হা/১৪৬৭, সনদ সহীহ।
[26]. বুখারী হা/৭০৪৭; মিশকাত হা/৪৬২১।
[27]. হাকেম হা/৩৪১৬; আহমাদ হা/১১৩৫৮; সহীহাহ হা/৩০৩৪।
[28]. মুদ্দাসসির ৭৪-৪২-৪৩; শরহ মুশকিলুল আছার হা/৫৫৫৬, মুসনাদে আবী হানীফা হা/১২।
ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হ’ল সালাত। সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণকে হৃদয়ে জাগ্রত রাখার প্রক্রিয়া হিসাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সালাত এমন একটি ইবাদত, কালেমায়ে শাহাদতের পরেই যার স্থান। কেউ মুসলমান হ’লে তাকে প্রথমেই সালাতে অভ্যস্ত হওয়া আবশ্যক। সাহাবীগণের মধ্যে কেউ সালাতে না আসলে তাকে কাফের মনে করা হ’ত। সালাত ত্যাগ করা কাফের ও মুনাফিকদের কাজ। সালাত ত্যাগকারীরা পরকালে ফেরাউন, হামান, কারূনের মত কাফেরদের সাথে জাহান্নামে অবস্থান করবে।
ফরয এই ইবাদতটি নিয়ে বর্তমানে বহু মানুষের মধ্যে অবহেলা দেখা যায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় অনেকের হয়, কিন্তু সালাত আদায়ের সময় তাদের হয় না। খোশগল্প করার সময় জোটে, কিন্তু মসজিদে গিয়ে আল্লাহর সাথে মুনাজাত করার সময় হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর সুযোগ হয় কিন্তু মুছাল্লায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে নিজের আবেদন-নিবেদন পেশ করার সময় হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যস্ততায় সালাত ক্বাযা করা তো অনেকের কাছে স্বাভাবিক বিষয় মনে হয়। অথচ সালাতে অবহেলা, অলসতা ও তা পরিত্যাগের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। নিম্নে সালাত পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-
সালাত পরিত্যাগ করা কুফরী :
সালাত পরিত্যাগ করা কুফরী কাজ। সালাত ত্যাগ করাকে রাসূল (ﷺ) কুফরী বলেছেন। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بَيْنَ الْعَبْدِ، وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلَاةِ-
জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য সালাত ছেড়ে দেওয়া’।[1] অন্য বর্ণনায় আছে, মানুষ ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত। কোন বর্ণনায় আছে, ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত।[2] অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
بَيْنَ الْعَبْدِ، وَبَيْنَ الْكُفْرِ وَالْإِيمَانِ الصَّلَاةُ فَإِذَا تَرَكَهَا فَقَدْ أَشْرَكَ،
‘বান্দা, কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত। যখন সে সালাত পরিত্যাগ করল, তখন সে শিরক করে ফেলল’।[3]
عَنْ بُرَيْدَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْعَهْدَ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمِ الصَّلَاةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ-
বুরায়দাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে পার্থক্য তা হ’ল সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল’।[4]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ العُقَيْلِيِّ، قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ-
তাবেঈ আব্দুল্লাহ ইবনু শাকীক আল-উকায়লী বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম সালাত ব্যতীত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফরী মনে করতেন না’।[5]
عَنْ شَدَّادِ بْنِ مَعْقِلٍ قَالَ: أَوَّلُ مَا تَفْقِدُوْنَ مِنْ دِيْنِكُمُ الْأَمَانَةَ، وَآخِرُ مَا تَفْقِدُوْنَ مِنْهُ الصَّلَاةَ-
শাদ্দাদ ইবনু মা‘কেল হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম তোমরা তোমাদের দ্বীনের যা হারাবে তাহ’লে আমানত এবং সর্বশেষ দ্বীনের যা হারাবে তা হ’ল সালাত’।[6] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, ‘ইসলাম থেকে চলে যাওয়া সর্বশেষ বস্ত্ত যেহেতু সালাত সেহেতু যে বস্ত্তর শেষ চলে যায় সে বস্ত্ত সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। এজন্য আপনাদের উচিৎ দ্বীনের সর্বশেষ অংশ সালাতকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরা, আল্লাহ আপনাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন (ইমাম আহমাদ, কিতাবুছ সালাত)।
জাবের বিন আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হ’ল-
مَا كَانَ يُفَرِّقُ بَيْنَ الْكُفْرِ وَالْإِيمَانِ عِنْدَكُمْ مِنَ الْأَعْمَالِ فِيْ عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: الصَّلَاةُ،
‘রাসূল (ﷺ)-এর যুগে আমলসমূহের মধ্যে কোন আমলটি আপনাদের নিকট ঈমান এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে বিবেচিত হ’ত? তিনি বললেন, সালাত’।[7]
উল্লেখ্য যে, কুফরী করা ও কাফের হয়ে যাওয়া এক বিষয় নয়। এক্ষণে কেউ যদি সালাতকে অস্বীকার করে বা একেবারে ছেড়ে দেয় তাহ’লে সে কাফের হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যদি অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে এবং মাঝে-মধ্যে আদায় করে তাহ’লে সে কাফের হবে না বরং কবীরা গুনাহগার হবে। তওবা না করলে তাকে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।[8]
সালাত ত্যাগ করা হত্যাযোগ্য অপরাধ :
সালাতকে অবজ্ঞা করে তা ত্যাগ করা হত্যাযোগ্য অপরাধ। কেউ ইচ্ছা করে সালাত পরিত্যাগ করলে তাকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিতে হবে। সে এই বিধান অস্বীকার করলে সরকার তাকে শাস্তি দিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ-
‘তোমরা মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা কর, পাকড়াও কর, অবরোধ কর এবং ওদের সন্ধানে প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়, তাহ’লে ওদের রাস্তা ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবা ৯/৫)। এর তাফসীরে বলা হয়েছে, তারা সালাত আদায় করলে জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে। আর তা পরিহার বা অস্বীকার করলে তা হত্যাযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، فَإِذَا شَهِدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَاسْتَقْبَلُوا قِبْلَتَنَا، وَأَكَلُوا ذَبِيحَتَنَا، وَصَلَّوْا صَلَاتَنَا، فَقَدْ حَرُمَتْ عَلَيْنَا دِمَاؤُهُمْ، وَأَمْوَالُهُمْ، إِلَّا بِحَقِّهَا لَهُمْ مَا لِلْمُسْلِمِينَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَيْهِمْ-
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যে পর্যন্ত না তারা এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক উপাস্য নেই, আর মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আর যখন তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আমাদের কিবলার দিকে মুখ করবে, আমাদের যবেহকৃত পশু আহার করবে এবং আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করবে, তখন আমাদের জন্য তাদের রক্ত ও সম্পদ হারাম হবে। তবে এই কালেমার কোন হক (শরী‘আতসম্মত কারণ) পাওয়া গেলে ভিন্ন কথা। মুসলমানদের যে অধিকার রয়েছে তাদের জন্যও তা থাকবে। আর মুসলমানদের উপর যে দায়িত্ব বর্তায়, তা তাদের উপরও বর্তাবে’।[9] অত্র হাদীসে সালাত আদায়কে নিরাপত্তার মাপকাঠি বলা হয়েছে।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা কিছু মালামাল বণ্টন সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে জনৈক উঁচু গাল, ফোলা কপাল এবং গর্তে ঢোকা চোখ বিশিষ্ট ঘন শ্মশ্রুমন্ডিত মাথা নেড়া উরুর উপর কাপড় পরা ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-কে উদ্দেশ্য করে বলল,
يَا رَسُوْلَ الله! اتَّقِ اللهَ، قَالَ: وَيْلَكَ، أَوَ لَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الْأَرْضِ أَنْ يَّتَّقِيَ اللهَ؟ قَالَ: ثُمَّ وَلَّى الرَّجُلُ، قَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَلَا أَضْرِبُ عُنُقَهُ؟ قَالَ: لَا، لَعَلَّهُ أَنْ يَّكُوْنَ يُصَلِّيْ،
‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করুন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি ধ্বংস হয়ে যাও! আমি কি দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা আল্লাহ ভীরু ব্যক্তি নই? বর্ণনাকারী বলেন, যখন লোকটি রওয়ানা হ’ল তখন খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তার গর্দান কেটে ফেলব না? রাসূল (ﷺ) বললেন, না, হয়তো বা সে সালাত আদায় করে’।[10]
আল্লাহ ও রাসূলের যিম্মা থেকে মুক্তি :
কেউ ইচ্ছা করে সালাত ত্যাগ করলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর যিম্মা থেকে সে বের হয়ে যায়। যেমন মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল শিখিয়ে দেন, যা করলে আমি জান্নাত প্রবেশ করতে পারব। তিনি বললেন,
لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ شيئاً وَإِنْ عُذِّبْتَ وَحُرِّقْتَ وَأَطِعْ وَالِدَيْكَ وَإِنَّ أخرجاك مِنْ مَالِكٍ وَمِنْ كُلِّ شَيٍّء هُوَ لَكَ وَلاَ تَتْرُكِ الصَّلاَةَ مُتَعَمِّدًا فَإِنَّهُ مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ،
‘তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না; যদিও তোমাকে সে ব্যাপারে শাস্তি দেওয়া হয় এবং পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। তোমার মাতা-পিতার আনুগত্য কর; যদিও তারা তোমাকে তোমার ধন-সম্পদ এবং সমস্ত কিছু থেকে দূর করতে চায়। আর স্বেচ্ছায় সালাত ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে তার উপর থেকে আল্লাহর দায়িত্ব উঠে যায়’।[11]
অন্যত্র তিনি বলেন,
لاَ تَتْرُكِ الصَّلاَةَ مُتَعَمِّداً فَإِنَّهُ مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ مُتَعَمِّداً فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ وَرَسُولِهِ-
‘ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো সালাত ছেড়ে দিবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ছেড়ে দেয়, তার থেকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারী মুক্ত হয়ে যায়’।[12]
সালাত ত্যাগকারীর ইসলামে কোন অংশ নেই :
সালাত ত্যাগ করা এমন ভয়াবহ পাপ যে, কেউ তা করলে সে ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে যায়। যেমন আছারে এসেছে,
عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ مِنْ اللَّيْلَةِ الَّتِي طُعِنَ فِيهَا فَأَيْقَظَ عُمَرَ لِصَلَاةِ الصُّبْحِ فَقَالَ عُمَرُ نَعَمْ وَلَا حَظَّ فِي الْإِسْلَامِ لِمَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ فَصَلَّى عُمَرُ وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا-
মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, যে রাত্রে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে ছুরিকাঘাত করা হয়, সেই রাত্রে তিনি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলেন। ওমর (রাঃ)-কে ফজরের সালাতের জন্য জাগানো হ’ল। ওমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, আমি এই অবস্থায়ও সালাত আদায় করব। কারণ যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দেয়, ইসলামে তার কোন অংশ নেই। অতঃপর ওমর (রাঃ) সালাত পড়লেন অথচ তার জখম হ’তে তখনও রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[13] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন,
إِنَّهُ لَا حَظَّ فِي الْإِسْلَامِ لِمَنْ أَضَاعَ الصَّلَاةَ،
‘যে ব্যক্তি সালাত বিনষ্ট করে ইসলামে তার কোন অংশ নেই’।[14]
সালাত ত্যাগ করা মুশরিকদের কাজ :
সালাত পরিত্যাগ করা মূলতঃ মুশরিকদের কাজ। এজন্য মুসলমান ব্যক্তি কখনো সালাত পরিত্যাগ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ،
‘আর তোমরা তাঁকে ভয় কর ও সালাত কায়েম কর এবং তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (রূম ৩০/৩১)।
ইবনু বাত্তা (রহঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেন,
فَجَعَلَ اللهُ مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ مُشْرِكًا خَارِجًا مِنَ الْإِيمَانِ، لِأَنَّ هَذَا الْخَطَّابَ لِلْمُؤْمِنِينَ تَحْذِيرٌ لَهُمْ أَنْ يَتْرُكُوا الصَّلَاةَ، فَيَخْرُجُوا مِنَ الْإِيمَانِ، وَيَكُونُوا كَالْمُشْرِكِينَ.
‘আল্লাহ সালাত পরিত্যাগ- কারীকে মুশরিক এবং ঈমান থেকে খারিজ হিসাবে গণ্য করেছেন। কারণ এই সম্বোধনের মাধ্যমে মুমিনদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, যাতে তারা সালাত পরিত্যাগ না করে। আর তারা এটা করলে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে এবং মুশরিকদের মত হয়ে যাবে’।[15]
ইবনু বাত্তা (রহঃ) আরো বলেন,
فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ الْإِيمَانِ وَبَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ، فَمَنْ لَمْ يُؤْمِنْ لَمْ تَنْفَعْهُ الصَّلَاةُ، وَمَنْ لَمْ يُصَلِّ لَمْ يَنْفَعْهُ الْإِيمَانُ،
‘ঈমান, সালাত ও যাকাতের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। যার ঈমান নেই তার সালাত কোন কাজে আসবে না। যে সালাত আদায় করে না তার ঈমান কোন উপকারে আসবে না’।[16]
সালাত ত্যাগ করা অজ্ঞদের বৈশিষ্ট্য:
যারা সালাত আদায় করে না তাদেরকে অজ্ঞদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْقِلُونَ،
‘আর যখন তোমরা সালাতের জন্য (আযানের মাধ্যমে) আহবান করে থাকো, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ ওরা একেবারেই নির্বোধ সম্প্রদায়’ (মায়েদাহ ৫/৫৮)। সুদ্দী (রহঃ) বলেন,
كَانَ رَجُلٌ مِنَ النَّصَارَى بِالْمَدِينَةِ إِذَا سَمِعَ الْمُنَادِيْ يُنَادِي: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ قَالَ: حُرِّقَ الْكَاذِبُ، فَدَخَلَتْ خَادِمَةٌ لَيْلَةً مِنَ اللَّيَالِي بِنَارٍ وَهُوَ نَائِمٌ، وَأَهْلُهُ نِيَامٌ، فَسَقَطَتْ شَرَارَةٌ فَأَحْرَقَتِ الْبَيْتَ، فَاحْتَرَقَ هُوَ وَأَهْلُهُ،
‘মদীনায় এক নাছারা ছিল যে মুওয়াযযিনের আযানের সময় আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল! বলতে শুনত, তখন সে বলত, মিথ্যাবাদী আগুনে পুড়ুক! এক রাতে সে পরিবারসহ ঘুমিয়ে ছিল। এমন সময় তার দাসী সে ঘরে আগুন নিয়ে প্রবেশ করে। আগুনের একটি টুকরো ঘরে পড়ে যায় এবং আগুন ধরে যায়। এতে তার বাড়ি পুড়ে যায় এবং সে পরিবারসহ পুড়ে মারা যায়’।[17] সালাত ও আযানকে নিয়ে কটূক্তি করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা সপরিবারে তাকে ধ্বংস করে দেন। যখন আযান শেষে মুসলমানেরা সালাতে দাঁড়াত তখন ইহূদীরা হাঁসি-তামাশা করত। যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করে বলেন, এরাই নির্বোধ সম্প্রদায়।[18]
সালাত ত্যাগ করা যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার সমতুল্য অপরাধ :
কোন এলাকায় যদি আযানের ধ্বনি শোনা যেত তাহ’লে সে এলাকায় রাসূল (ﷺ) বা সাহাবায়ে কেরাম অভিযান পরিচালনা করতেন না। বরং মনে করা হ’ত এরা সালাত আদায়কারী। আর আযান শোনা না গেলে সে এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হ’ত। যেমন আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) যখন আমাদেরকে নিয়ে কোন গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদে যেতেন, তখন ভোর পর্যন্ত আক্রমণ করতেন না। আর ভোর হ’লে আযানের আওয়াযের অপেক্ষায় থাকতেন। যদি আযান শুনতে পেতেন, তখন আক্রমণ করা হ’তে বিরত থাকতেন। আর আযান না শুনলে আক্রমণ করতেন।[19]
সালাত পরিত্যাগে আমীর বা নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অনুমতি :
সালাত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে, রাষ্ট্র বা নেতারা যতদিন সালাত কায়েম রাখবে ততদিন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা জনগণের জন্য হারাম। যদিও তারা অন্যান্য ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হয়।
আওফ ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ، وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ، وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ، وَتَلْعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلَا نُنَابِذُهُمْ بِالسَّيْفِ؟ فَقَالَ: لَا، مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلَاةَ، وَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْ وُلَاتِكُمْ شَيْئًا تَكْرَهُونَهُ، فَاكْرَهُوا عَمَلَهُ، وَلَا تَنْزِعُوْا يَدًا مِنْ طَاعَةٍ-
‘তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে। তারা তোমাদের জন্য দো‘আ করে, তোমরাও তাদের জন্য দো‘আ কর। পক্ষান্তরে তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদেরকে তরবারি দ্বারা প্রতিহত করব না? তখন তিনি বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে। আর যখন তোমাদের শাসকদের মধ্যে কোনরূপ অপসন্দনীয় কাজ দেখবে, তখন তোমরা তাদের সে কাজকে ঘৃণা করবে, কিন্তু (তাদের) আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেবে না’।[20]
রাসূল (ﷺ) আরো বলেন,
سَتَكُونُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ، فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ، وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ قَالُوا: أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ؟ قَالَ: لَا، مَا صَلَّوْا
‘অচিরেই এমন কতক আমীরের উদ্ভব ঘটবে তোমরা তাদের চিনতে পারবে এবং অপসন্দ করবে। যে ব্যক্তি তাদের স্বরূপ চিনল সে মুক্তি পেল এবং যে ব্যক্তি তাদের অপসন্দ করল নিরাপদ হ’ল। কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের পসন্দ করল এবং অনুসরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হ’ল)। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? রাসূল (ﷺ) বললেন, না, যতক্ষণ তারা সালাত আদায় করবে’[21]।
সালাত ত্যাগ করা অন্যান্য আমল বিনষ্টের কারণ :
সালাত পরিত্যাগ করা এমন অপরাধ যে, এ কারণে তার অন্যান্য সৎ আমল বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন বুরায়দা আল-আসলামী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে এক যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। তিনি বলেন,
بَكِّرُوا بِالصَّلاَةِ فِي الْيَوْمِ الْغَيْمِ فَإِنَّهُ مَنْ فَاتَتْهُ صَلاَةُ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُه،
‘তোমরা মেঘাচ্ছন্ন দিনে তাড়াতাড়ি (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করবে। কারণ যার আছরের সালাত ছুটে যায় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়’।[22] অন্য হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ فَاتَتْهُ صَلاَةُ الْعَصْرِ فَكَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ-
‘যে ব্যক্তির আছরের সালাত কাযা হ’ল তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল’।[23] কোন কোন বর্ণনায় আছর সালাতের কথা উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সালাত পরিত্যাগ করে অবশ্যই তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়’।[24]
সালাত ত্যাগে রিযিক থেকে বঞ্চিত :
সালাত এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তা‘আলা যে সকল স্থানে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন তার পরপরই প্রায় সব জায়গাতে রিযিকের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যেমন কুরআনে এসেছে,
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى-
‘আর তুমি তোমার পরিবারকে সালাতের আদেশ দাও এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক। আমরা তোমার নিকট রূযী চাই না। আমরাই তোমাকে রূযী দিয়ে থাকি। আর (জান্নাতের) শুভ পরিণাম তো কেবল মুত্তাক্বীদের জন্যই’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩২)।
আল্লাহর বাণী, ‘আমরা তোমার নিকট রূযী চাই না। আমরাই তোমাকে রূযী দিয়ে থাকি’-এর ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,
إِذَا أَقَمْتَ الصَّلَاةَ أَتَاكَ الرِّزْقُ مِنْ حَيْثُ لَا تَحْتَسِبُ،
‘তুমি যখন সালাত আদায় করবে তোমার নিকট এমন জায়গা থেকে রিযিক আসবে যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لا يَحْتَسِب،
‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রদান করে থাকেন’ (তালাক ৬৫/২-৩)। তিনি আরো বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإنْسَ إِلا لِيَعْبُدُونِ، مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ، إِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ،
‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট থেকে কোন রিযিক চাই না এবং চাই না যে তারা আমাকে আহার যোগাবে। নিশ্চয় আল্লাহ হ’লেন সবচেয়ে বড় রিযিকদাতা ও প্রবল শক্তির অধিকারী’ (যারিয়াত ৫১/৫৬-৫৭)।
ফেরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালফের সাথে হাশর :
যারা সালাত ত্যাগ করবে তাদের হাশর হবে বড় বড় কাফেরদের সাথে। আর পরকালে বড় কাফেরদের অবস্থা হবে ভয়াবহ। যাদের মধ্যে রয়েছে ফেরাউন, হামান, ক্বারূন, উবাই ইবনু খালফ ও তাদের দোসরেরা। এ মর্মে হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ: مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا، كَانَتْ لَهُ نُورًا، وَبُرْهَانًا، وَنَجَاةً مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا، لَمْ تَكُنْ لَهُ نُورًا، وَلَا نَجَاةً، وَلَا بُرْهَانًا، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ، وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ-
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন সালাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি তা (সালাত) হেফাযত করবে, ক্বিয়ামত দিবসে তা তার জন্য নূর, দলীল-প্রমাণ ও জাহান্নাম হ’তে মুক্তি (এর উপায়) হবে। আর যে ব্যক্তি তা (সালাত) হেফাযত করবে না, ক্বিয়ামত দিবসে তা তার জন্য নূর, দলীল-প্রমাণ ও জাহান্নাম হ’তে মুক্তি (এর উপায়) হবে না। আর ঐ ব্যক্তি ক্বিয়ামত দিবসে ক্বারূন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনু খালফ-এর সাথে থাকবে’।[25]
বারযাখে ভয়াবহ শাস্তি :
যে ব্যক্তি সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে বরং উদাসীন থাকে তার জন্য কবরে এবং জাহান্নামে ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। রাসূল (ﷺ) বলেন,
إِنَّهُ أَتَانِى اللَّيْلَةَ آتِيَانِ، وَإِنَّهُمَا ابْتَعَثَانِى، وَإِنَّهُمَا قَالاَ لِى انْطَلِقْ. وَإِنِّى انْطَلَقْتُ مَعَهُمَا، وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ، وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ، وَإِذَا هُوَ يَهْوِى بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ، فَيَثْلَغُ رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا، فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ، فَلاَ يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ، ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ، فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الأُولَى. قَالَ قُلْتُ لَهُمَا سُبْحَانَ اللهِ مَا هَذَانِ،... فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَأْخُذُ الْقُرْآنَ فَيَرْفُضُهُ وَيَنَامُ عَنِ الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ،
‘গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে জাগালো আর বলল, চলুন। আমি তাদের সাথে চললাম। আমরা এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে শুয়ে আছে এবং তার কাছে এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে। ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একটু পর তার মাথা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আবার সে পাথরটি নিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে। তার মাথা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে আবার আঘাত করছে। এভাবেই চলছে। আমি তাদের বললাম, সুবহানাল্লাহ! এ দু’ব্যক্তি কে?... তারা আমাকে বলল, যার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে সে হ’ল এমন ব্যক্তি যে কুরআন শিখেছে কিন্তু তা প্রত্যাখান করেছে এবং ফরয সালাত থেকে নিদ্রায় রাত কাটিয়েছে’।[26]
সালাত বিনষ্ট করা পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য :
সালাত ইসলামের প্রধান রুকন। এজন্য সালাত ত্যাগকারী কবীরা গুনাহগার এবং অস্বীকারকারী কাফের। আল্লাহ তা‘আলা সালাত বিনষ্টককারী পূর্ববর্তী এক সম্প্রদায়ের কথা আলোচনা করে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا-
‘তাদের পরে এলো তাদের (অপদার্থ) উত্তরসূরীরা। তারা সালাত বিনষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। ফলে তারা অচিরেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (মারিয়াম ১৯/৫৯)। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে (সূরা মারিয়ামের ৫৯ আয়াত পাঠ করার পর) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
يَكُونُ خَلْفٌ مِنْ بَعْدِ سِتِّينَ سَنَةً أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ثُمَّ يَكُونُ خَلْفٌ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يَعْدُو تَرَاقِيَهُمْ وَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ ثَلاَثَةٌ مُؤْمِنٌ وَمُنَافِقٌ وَفَاجِرٌ،
‘ষাট বছর পর কিছু (অপদার্থ) পরবর্তীগণ আসবে, তারা সালাত নষ্ট করবে ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হবে। সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। অতঃপর এক জাতি আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী পার হবে না। (হৃদয়ে জায়গা পাবে না।) কুরআন তিন ব্যক্তি পাঠ করে- মুমিন, মুনাফিক ও ফাজের (পাপী)।[27]
সালাত ত্যাগ করা জাহান্নামে যাওয়ার বড় কারণ :
যে সকল পাপের কারণে মানুষ জাহান্নামে যাবে তন্মধ্যে সালাত ত্যাগ করা অন্যতম। যার স্বীকিৃতি স্বয়ং জাহান্নামীরাই দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতী ও জাহান্নামীদের কথোপকথন তুলে ধরে বলেন,
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ، قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ،
‘কোন্ বস্ত্ত তোমাদেরকে ‘সাক্বারে’ (জাহান্নামে) প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’ (মুদ্দাছি্ছর ৭৪-৪২-৪৩)।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
يُعَذِّبُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْإِيمَانِ، ثُمَّ يُخْرِجُهُمْ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَتَّى لَا يَبْقَى فِي النَّارِ إِلَّا مَنْ ذَكَرَهُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرٍ قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ
‘আল্লাহ তা‘আলা কোন কোন ঈমানের অধিকারীদের শাস্তি দিবেন। অতঃপর মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শাফা‘আতে তাদের বের করে আনবেন। জাহান্নামে কেবল তারাই থেকে যাবে যাদের কথা আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে আলোচনা করেছেন- ‘কোন্ বস্ত্ত তোমাদেরকে ‘সাক্বারে’ প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’।[28]
[1]. আবুদাঊদ হা/৪৬৭৮; মিশকাত হা/৫৬৯, সনদ সহীহ।
[2]. সহীহুত তারগীব হা/৫৬৩।
[3]. সহীহুত তারগীব হা/৫৬৬।
[4]. তিরমিযী হা/২৬২১; মিশকাত হা/৫৭৪; সহীহুত তারগীব হা/৫৬৪।
[5]. তিরমিযী হা/২৬২২; মিশকাত হা/৫৭৯; সহীহুত তারগীব হা/৫৬৫।
[6]. তাবারানী কাবীর হা/৯৭৫৪; সহীহাহ হা/১৭৩৯।
[7]. ইবনু বাত্ত্বা, আল-ইবানাতুল কুবরা হা/৮৭৬; মারওয়াযী, তা‘যীমু কাদরিছ সালাত হা/৮৯৩।
[8]. আলবানী, হুকমু তারিকিছ সালাত ১/১০, ৫১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৫৫-৫৬; সহীহাহ হা/৩০৫৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[9]. বুখারী হা/৩৯২; নাসাঈ হা/৩৯৬৭; আহমাদ হা/১৩৭৮।
[10]. বুখারী হা/৪৩৫১; মুসলিম হা/১০৬৪।
[11]. তাবারানী আওসাত্ব হা/৭৯৫৬; সহীহুত তারগীব হা/৫৬৯।
[12]. আহমাদ হা/২৭৪০৪; সহীহুত তারগীব হা/৫৭৩।
[13]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৬৭৩; ইবনুল খাল্লাল, আস-সুনাহ হা/১৩৮৮,; মারওয়াযী, তা‘যীমু কাদরিস সালাত হা/৯২৯, সনদ সহীহ, জামে‘উল ঊছূল হা/৫২২৫।
[14]. দারাকুৎনী হা/১৭৫০; মুয়াত্ত্বা হা/১০১; ইরওয়া হা/২০৯।
[15]. আল-ইবানাতুল কুবরা ২/৭৯২।
[16]. আল-ইবানাতুল কুবরা ২/৭৯২।
[17]. তাফসীর ইবনে কাছীর ৩/১২৮।
[18]. তাফসীরুল খাযেন ২/৫৭।
[19]. বুখারী হা/৬১০; মুসলিম হা/১৩৬৫।
[20]. মুসলিম হা/১৮৫৫; মিশকাত হা/৩৬৭০।
[21]. মুসলিম হা/১৮৫৪; মিশকাত হা/৩৬৭১।
[22]. বুখারী হা/৫৯৪; মিশকাত হা/৫৯৫।
[23]. মুসলিম হা/৬২৬; মিশকাত হা/৫৯৪।
[24]. হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৬৩৯।
[25]. দারেমী হা/২৭২১; আহমাদ হা/৬৫৭৬; ইবনু হিববান হা/১৪৬৭, সনদ সহীহ।
[26]. বুখারী হা/৭০৪৭; মিশকাত হা/৪৬২১।
[27]. হাকেম হা/৩৪১৬; আহমাদ হা/১১৩৫৮; সহীহাহ হা/৩০৩৪।
[28]. মুদ্দাসসির ৭৪-৪২-৪৩; শরহ মুশকিলুল আছার হা/৫৫৫৬, মুসনাদে আবী হানীফা হা/১২।
সূত্র: আত-তাহরীক।
Last edited: