সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত সালাত পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ পরিণতি (শেষ কিস্তি)

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,544
Credits
2,602
ওলামায়ে কেরামের অভিমত :

ওলামায়ে কেরাম সালাত পরিত্যাগকারীর বিধানের ব্যাপারে দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছেন। অধিকাংশ বিদ্বান সালাত পরিত্যাগকারীকে ফাসিক, কবীরা গুনাহগার বা জাহান্নামী বলেছেন। তবে তারা এটাও মনে করেন যে, সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে না। আর যে ইসলাম থেকে খারিজ হবে না সে কোন এক সময় কারো শাফা‘আতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। তবে কতিপয় বিদ্বান মনে করেন যে, তারা ইসলামের গন্ডী থেকে বেরিয়ে যাবে এবং স্থায়ী জাহান্নামী হবে। উভয়পক্ষের মতামত উপস্থাপন পূর্বক বিষয়টি পর্যালোচনা করা হ’ল-

১. ইমাম নববী (রহঃ) বলেন

,وَأَمَّا تَارِكُ الصَّلَاةِ فَإِنْ كَانَ مُنْكِرًا لِوُجُوبِهَا فَهُوَ كَافِرٌ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ خَارِجٌ مِنْ مِلَّةِ الْإِسْلَامِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ قَرِيبَ عَهْدٍ بِالْإِسْلَامِ وَلَمْ يُخَالِطِ الْمُسْلِمِينَ مُدَّةً يَبْلُغُهُ فِيهَا وُجُوبُ الصَّلَاةِ عَلَيْهِ وَإِنْ كَانَ تَرَكَهُ تَكَاسُلًا مَعَ اعْتِقَادِهِ وُجُوبَهَا كَمَا هُوَ حَالُ كَثِيرٍ مِنَ النَّاسِ فَقَدِ اخْتَلَفَ الْعُلَمَاءُ فِيهِ فَذَهَبَ مَالِكٌ وَالشَّافِعِيُّ رَحِمَهُمَا اللهُ وَالْجَمَاهِيرُ مِنَ السَّلَفِ وَالْخَلَفُ إِلَى أَنَّهُ لَا يَكْفُرُ بَلْ يَفْسُقُ وَيُسْتَتَابُ فَإِنْ تَابَ وَإِلَّا قَتَلْنَاهُ حَدًّا كَالزَّانِي الْمُحْصَنِ وَلَكِنَّهُ يُقْتَلُ بِالسَّيْفِ،​

‘সালাত পরিত্যাগকারী যদি এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে তাহ’লে সে মুসলিমদের ঐক্যমতে কাফের এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কৃত। তবে সে যদি নতুন মুসলিম হয় এবং মুসলমানদের সাথে না মেশার কারণে সালাতের ফরযিয়াতের বিষয়টি তার নিকটে না পৌঁছে তাহ’লে ভিন্ন কথা। আর যদি সালাতের ফরযিয়াতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে কিন্তু অলসতাবশতঃ সালাত ত্যাগ করে, যেমনটা বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমানের অবস্থা তাহ’লে এব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক, শাফেঈ সহ পূর্ববর্তী-পরবর্তী জমহূর সালাফ মনে করেন, সালাত পরিত্যাগকারীকে কাফের বলা যাবে না বরং সে ফাসেক। এরূপ ব্যক্তিকে তওবা করতে বলতে হবে। যদি সে তওবা করে তো ভালো। অন্যথা আমরা তাকে হদ্দ বা দন্ড হিসাবে হত্যা করব যেমন বিবাহিত ব্যভিচারীকে হত্যা করা হয়। আর তাকে তরবারী দ্বারা হত্যা করা হবে’।[1] তবে এদন্ড বাস্তবায়নের দায়িত্ব কোন ব্যক্তির নয়; বরং সরকার বা শাসক কর্তৃপক্ষের।

হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তার ফাৎহুল বারীতে সালাত পরিত্যাগকারীকে কাফের সাব্যস্তকারীদের দলীলগুলোর জওয়াব প্রদান করেছেন এবং সালাতের ফরযিয়াতকে স্বীকার করতঃ সালাত পরিত্যাগকারী ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।[2]

২. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,

فَأَمَّا مَنْ كَانَ مُصِرًّا عَلَى تَرْكِهَا لَا يُصَلِّي قَطُّ، وَيَمُوتُ عَلَى هَذَا الْإِصْرَارِ وَالتَّرْكِ، فَهَذَا لَا يَكُونُ مُسْلِمًا، لَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ يُصَلُّونَ تَارَةً، وَيَتْرُكُونَهَا تَارَةً، فَهَؤُلَاءِ لَيْسُوا يُحَافِظُونَ عَلَيْهَا، وَهَؤُلَاءِ تَحْتَ الْوَعِيدِ،​

‘যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে যিদ করে, কখনই সালাত পড়ে না এবং এই যিদ ও পরিত্যাগের উপর তার মৃত্যু হয়, তাহলে এরূপ ব্যক্তি মুসলমান নয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ মাঝে-মধ্যে সালাত আদায় করে এবং মাঝে-মধ্যে পরিত্যাগ করে। এরা সালাত হেফাযতকারী নয়। আর এরাই হুমকির আওতাভুক্ত। আল্লাহ চাইলে এদেরকে ক্ষমা করবেন আবার চাইলে শাস্তি প্রদান করবেন’।[3]

তিনি আরো বলেন,

أَمَّا تَارِكُ الصَّلَاةِ. فَهَذَا إنْ لَمْ يَكُنْ مُعْتَقِدًا لِوُجُوبِهَا فَهُوَ كَافِرٌ بِالنَّصِّ وَالْإِجْمَاعِ،​

‘সালাত পরিত্যাগকারী যদি এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে তাহ’লে সে কুরআন-সুন্নাহর দলীল ও ইজমা‘ দ্বারা কাফের সাব্যস্ত হবে’।[4]

তিনি এও বলেন,

فَمَنْ فَوَّتَ صَلَاةً وَاحِدَةً عَمْدًا فَقَدْ أَتَى كَبِيرَةً عَظِيمَةً، فَلْيَسْتَدْرِكْ بِمَا أَمْكَنَ مِنْ تَوْبَةٍ وَأَعْمَالٍ صَالِحَةٍ. وَلَوْ قَضَاهَا لَمْ يَكُنْ مُجَرَّدُ الْقَضَاءِ رَافِعًا إِثْمَ مَا فَعَلَ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ.​

‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত সালাত পরিত্যাগ করল সে মহাপাপে লিপ্ত হ’ল। সে যেন যত দ্রুত সম্ভব তওবা করে এবং সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে। কারণ কেবল কাযা আদায় করার মাধ্যমে সে গুনাহ থেকে মুক্ত হ’তে পারবে না। এ ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা‘ বা ঐক্যমত রয়েছে।[5] তিনি আরো বলেন, ‘বিনা কারণে ওয়াক্তের বাইরে সালাত বিলম্ব করা কবীরা গুনাহ। আর ওমর (রাঃ) বলতেন, বিনা কারণে দুই ওয়াক্তের সালাত একত্রে আদায় করা কবীরা গুনাহ’।[6]

৩. হাফেয ইরাকী (রহঃ) বলেন,

هَلْ يُقْتَلُ بِتَرْكِ صَلَاةٍ وَاحِدَةٍ أَوْ أَكْثَرَ فَذَهَبَ الْجُمْهُورُ إلَى أَنَّهُ يُقْتَلُ بِتَرْكِ صَلَاةٍ وَاحِدَةٍ إذَا أَخْرَجَهَا عَنْ آخِرِ وَقْتِهَا،​

‘এক ওয়াক্ত সালাত পরিত্যাগ করলেই কী তাকে হত্যা করা হবে, নাকি একাধিক ওয়াক্ত? জমহূর বিদ্বান মনে করেন, এক ওয়াক্ত সালাত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় না করলেই তাকে হত্যা করা হবে।[7]
ইবনুল আরাবীও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।[8]

৪. ইবনু হাযম আন্দালুসী (রহঃ) বলেন,

وَقَدْ جَاءَ عَنْ عُمَرَ وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَغَيْرِهِمْ مِنْ الصَّحَابَةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ أَنَّ مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ فَرْضٍ وَاحِدَةٍ مُتَعَمِّدًا حَتَّى يَخْرُجَ وَقْتُهَا فَهُوَ كَافِرٌ مُرْتَدٌّ.​

‘ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব, আব্দুর রহমান বিন আওফ, মু‘আয বিন জাবাল, আবু হুরায়রা প্রমুখ সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত ফরয সালাত সময়ের মধ্যে পরিত্যাগ করবে এমনকি তার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে। সে কাফের ও মুরতাদ’।[9]

৫. হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,

أما تركها بالكلية فإنه لا يقبل معه عمل كما لا يقبل مع الشرك عمل فإن الصلاة عمود الإسلام كما صح عن النبي صلى الله عليه وسلم وسائر الشرائع، وإذا لم يكن للفسطاط عمود لم ينتفع بشيء من أجزائه فقبول سائر الاعمال موقوف على قبول الصلاة، فإذا ردت ردت عليه سائر الأعمال،​

‘পুরোপুরি সালাত পরিত্যাগ করা এমন বিষয় যে, এ অবস্থায় তার কোন আমল কবুল হবে না। যেমন শিরক মিশ্রিত কোন আমল কবুল করা হয় না। কেননা সালাত ইসলাম এবং শরী‘আতের সকল বিধানের খুঁটি, যেমনটি নবী করীম (ﷺ) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাঁবুর মূল খুঁটি না থাকলে যেমন অন্যান্য অংশ দ্বারা কোন উপকার পাওয়া যায় না, তদ্রূপই সকল আমল কবুলের বিষয়টি নির্ভর করে সালাত কবুলের উপর। সালাত প্রত্যাখ্যাত হ’লে সকল আমল প্রত্যাখ্যাত হবে’।[10]

তিনি আরো বলেন,

لا يختلف المسلمون أن ترك الصلاة المفروضة عمدا من أعظم الذنوب وأكبر الكبائر وأن اثمه أعظم من إثم قتل النفس وأخذ الأموال ومن إثم الزنا والسرقة وشرب الخمر وأنه متعرض لعقوبة الله وسخطه وخزيه في الدنيا والآخرة،​

‘এ ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই যে, ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয সালাত পরিত্যাগ করা মহাপাপ এবং সর্ববৃহৎ গুনাহ। সালাত পরিত্যাগের গুনাহ মানব হত্যা, সম্পদ আত্মসাৎ, যেনা, চুরি এবং মদ্যপানের গুনাহ অপেক্ষা মারাত্মক। আর সে আল্লাহর শাস্তি এবং ক্রোধের সম্মুখীন হবে। অনুরূপভাবে সে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছিত হবে’।[11]

৬. ইমাম ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন,

وَإِنْ تَرَكَ شَيْئًا مِنَ الْعِبَادَاتِ الْخَمْسِ تَهَاوُنًا لَمْ يَكْفُرْ،​

‘কেউ অলসতাবশত পঞ্চ ইবাদতের কোন একটি ছেড়ে দিলে তাকে কাফের বলা যাবে না’।[12]

অন্যত্র তিনি বলেন,

وَإِنْ تَرَكَهَا تَهَاوُنًا أَوْ كَسَلًا، دُعِيَ إلَى فِعْلِهَا، وَقِيلَ لَهُ: إنْ صَلَّيْت، وَإِلَّا قَتَلْنَاكَ. فَإِنْ صَلَّى، وَإِلَّا وَجَبَ قَتْلُهُ. وَلَا يُقْتَلُ حَتَّى يُحْبَسَ ثَلَاثًا، وَيُضَيَّقَ عَلَيْهِ فِيهَا، وَيُدْعَى فِي وَقْتِ كُلِّ صَلَاةٍ إلَى فِعْلِهَا، وَيُخَوَّفَ بِالْقَتْلِ، فَإِنْ صَلَّى، وَإِلَّا قُتِلَ بِالسَّيْفِ.​

‘যদি কেউ অলসতা বা উদাসীনতা বশত ফরয সালাত ছেড়ে দেয় তবে তাকে তা আদায় করার জন্য আহবান জানাতে হবে। তাকে বলতে হবে, তুমি সালাত আদায় কর, অন্যথা আমরা তোমাকে হত্যা করব। সে সালাত আদায় করলে ভালো অন্যথা তাকে হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তবে তার পূর্বে তাকে তিনদিন বন্দি করে রাখতে হবে এবং বন্দিশালায় তার জীবনকে সংকটময় করে তুলতে হবে। প্রতি ওয়াক্ত সালাত আদায়ের জন্য তাকে আহবান জানাতে হবে এবং হত্যার ভয় দেখাতে হবে। যদি সে সালাত আদায় করে তাহ’লে রক্ষা পাবে। অন্যথা তাকে তরবারী দ্বারা হত্যা করতে হবে’।[13]

৮. সঊদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন,

والخلاصة: أن القول الصواب الذي تقتضيه الأدلة: هو أن ترك الصلاة كفر أكبر ولولم يجحد وجوبها، ولو قال الجمهور بخلافه،​

‘মোট কথা: সঠিক কথা হ’ল সালাত পরিত্যাগ করা বড় কুফর, যদিও সে এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার না করে। এটিই দলীল সমূহের দাবী। যদিও জমহূর বিদ্বান এর বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন’।[14]
শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ ও ছালেহ আল-ফাওযানও শায়খ বিন বাযের মতই সালাত পরিত্যাগকারীকে কাফের ও হত্যাযোগ্য অপরাধী হিসাবে বিবেচনা করেছেন’।[15]

৯. ‘ফৎওয়া লাজনা দায়েমা’য় বলা হয়েছে,

تارك الصلاة جحدا لوجوبها كافر بإجماع أهل العلم، وتاركها تساهلا وكسلا كافر على الصحيح من قولي أهل العلم، وعليه فلا تجوز الصلاة عليه، ولا تشييع جنازته من العلماء ولا غيرهم، ولا دفنه في مقابر المسلمين.​

‘ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে সালাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তি বিদ্বানগণের ঐক্যমতে কাফের। আর অলসতা বা উদাসীনতা বশত সালাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তি বিদ্বানদের বিশুদ্ধ মতে কাফের। এই ফৎওয়া মতে তার জানাযার সালাত আদায় করা যাবে না, কোন আলেম বা অন্য কেউ তার জানাযার অনুগমন করবে না এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না’।[16]

১০. শায়খ আলবানী (রহঃ) জমহূর বিদ্বানের অভিমতকে সমর্থন জানিয়ে বলেন,

وأنا أرى أن الصواب رأي الجمهور، وأن ما ورد عن الصحابة ليس نصا على أنهم كانوا يريدون بـ (الكفر) هنا الكفر الذي يخلد صاحبه في النار ولا يحتمل أن يغفره الله له،​

‘আমি মনে করি জমহূর বিদ্বানের অভিমতই সঠিক। (অর্থাৎ সালাত ত্যাগ করলে এমন কাফের হয়ে যাবে না যা তাকে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়)। সাহাবীগণ থেকে যে সকল বর্ণনা এসেছে, সেগুলোতে একটাও এ মর্মে নেই যে, তারা এক্ষেত্রে কুফর দ্বারা সেই কুফর উদ্দেশ্য নিয়েছেন যা স্থায়ী জাহান্নামী করে দেয় এবং এটাও সম্ভাবনা নেই যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না’।[17]

তিনি আরো বলেন,

ولهذا لم يزل المسلمون يرثون تارك الصلاة ويورثونه ولوكان كافرا لم يغفر له، ولم يرث ولم يورث،​

‘এজন্য আবহমানকাল থেকে মুসলমানেরা সালাত ত্যাগকারীর ওয়ারিছ হয়ে আসছে এবং তারাও মুসলমানদের মীরাছ পেয়ে আসছে। যদি সালাত পরিত্যাগকারী নিরেট কাফের হয়ে যেত তাহ’লে তাদের ক্ষমা করা হ’ত না, তারা মীরাছ পেত না এবং তাদের সম্পত্তিতে অন্য মুসলমানেরা ওয়ারিছ হ’ত না’।[18]

শায়খ আলবানী (রহঃ) আরো বলেন,

والخلاصة؛ أن مجرد الترك لا يمكن أن يكون حجة لتكفير المسلم، وإنما هو فاسق، أمره إلى الله، إن شاء عذبه؛ وإن شاء غفر له، وحديث الترجمة نص صريح في ذلك لا يسع مسلماً أن يرفضه.​

‘সারকথা হ’ল, কেবল সালাত ত্যাগ করা একজন মুসলিমকে কাফের সাব্যস্ত করার দলীল হ’তে পারে না। বরং সে ফাসেক। আর তার বিষয়টি আল্লাহর নিকট ন্যস্ত। তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন এবং চাইলে ক্ষমা করে দিবেন। আর হাদীসের অধ্যায় নির্বাচন এই ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল। একে প্রত্যাখ্যান করা কোন মুসলমানের জন্য ঠিক হবে না’।[19]

১১. দীর্ঘ গবেষণার পর শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন,

الذي يظهر لي أنه لا يكفر إلا بالترك المطلق بحيث لا يصلى أبداً وأما من يصلى أحياناً فإنه لا يكفر لقول الرسول عليه الصلاة والسلام (بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة) ولم يقل ترك صلاةٍ قال ترك الصلاة وهذا يقتضي أن يكون الترك المطلق وكذلك قال (العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها أي الصلاة فقد كفر) وبناءً على هذا نقول إن الذي يصلى أحياناً ويدع أحياناً ليس بكافر وحينئذٍ يرث من قريبه المسلم.​

‘আমার নিকট যেটা প্রতিভাত হয়েছে তা হ’ল পুরোপুরি সালাত পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তাকে কাফের বলা যাবে না। এর অর্থ হ’ল যে, সে কখনও সালাত আদায় করে না। পক্ষান্তরে যে মাঝে-মধ্যে সালাত আদায় করে তাকে কাফের বলা যাবে না। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘মানুষ ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত’।[20]
তিনি বলেননি, এক ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে দিলে বরং তিনি বলেছেন, একেবারে সালাত পরিত্যাগ করলে, যা প্রমাণ করে যে এর অর্থ পুরোপুরি সালাত পরিত্যাগ করলে। অনুরূপভাবে রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে পার্থক্য হ’ল সালাত। অতএব যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফুরী করল’।[21]
এর উপর ভিত্তি করে আমরা বলব, যে ব্যক্তি মাঝে-মধ্যে সালাত পড়ে এবং মাঝে-মধ্যে ছেড়ে দেয় সে কাফের নয়। এক্ষেত্রে সে নিকটতম মুসলিম আত্মীয়-স্বজনের মীরাছ পাবে’।[22]

১২. মিশকাতের ভাষ্যকার আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন,

والحق عندي: أن تارك الصلاة عمداً كافر ولو لم يجحد وجوبها، لصحة الأحاديث في إطلاق الكفر عليه، لكنه كفر دون كفر أي: كفر غير الكفر المخرج من الملة​

‘আমার নিকট সঠিক হ’ল এই যে, ইচ্ছাকৃত সালাত পরিত্যাগকারী কাফের। যদিও সে এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার না করে। কারণ সালাত পরিত্যাগকারীর ক্ষেত্রে কুফর শব্দ প্রয়োগের ব্যাপারে বহু সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এটি বড় কুফরের নিম্ন স্তরের কুফর। অর্থাৎ এটি ঐ কুফরী নয়, যা কোন মুসলমানকে ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দেয়’।[23]

১৩. তিরমিযীর ভাষ্যকার আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) দীর্ঘ আলোচনার পরে বলেন,

لَوْ تَأَمَّلْتَ فِي مَا حَقَّقَهُ الشَّوْكَانِيُّ فِي تَارِكِ الصَّلَاةِ مِنْ أَنَّهُ كَافِرٌ وَفِي مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ الْجُمْهُورُ مِنْ أَنَّهُ لَا يَكْفُرُ لَعَرَفْتَ أَنَّهُ نِزَاعٌ لَفْظِيٌّ لِأَنَّهُ كَمَا لَا يُخَلَّدُ هُوَ فِي النَّارِ وَلَا يُحْرَمُ مِنَ الشَّفَاعَةِ عِنْدَ الْجُمْهُورِ كَذَلِكَ لَا يُخَلَّدُ هُوَ فِيهَا وَلَا يحرم منها عند الشوكاني أيضا،​

‘তুমি সালাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার ব্যাপারে শাওকানীর গবেষণা এবং কাফের না হওয়ার ব্যাপারে জমহূর বিদ্বানের অভিমত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে তুমি জানতে পারবে যে, এই মতপার্থক্য শব্দগত। কারণ যেমন জমহূর বিদ্বানের মতে সালাত পরিত্যাগকারী স্থায়ী জাহান্নামী নয় এবং শাফা‘আত থেকেও বঞ্চিত হবে না, তেমনি শাওকানীর নিকটেও সে স্থায়ী জাহান্নামী হবে না এবং শাফা‘আত থেকে বঞ্চিত হবে না’।[24]

বিদ্বানগণের অভিমত থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হ’ল। আর তা এই যে, সালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকারকারী সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। একদল মনে করেন, যেকোনভাবেই সালাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে, সে এর ফরযিয়াতকে স্বীকার করুক বা না করুক। উক্ত অভিমত দলীল দ্বারা পরিত্যাজ্য।

কতিপয় বিদ্বান মনে করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগকারী কাফের। তবে অলসতার কারণে সালাত ত্যাগকারী কাফের হবে না।

আরেকদল মনে করেন, সালাত ত্যাগ করা কুফরী, তা অলসতার কারণে হৌক বা ইচ্ছা করে হৌক। তবে এই কুফর ইসলামের গন্ডী থেকে বের করে দিবে না। হাদীসের প্রকাশ্য ভাব এই অভিমতকে সমর্থন করে।

আরেকদল বিদ্বান মনে করেন, সালাতের ফরযিয়াতকে হৃদয়ে লালনকারী ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সালাত পরিত্যাগকারী কবীরা গুনাহগার হবে এবং সালাত ত্যাগের জন্য জাহান্নামী হবে। কিন্তু তাওহীদে বিশ্বাস থাকার কারণে এক সময় জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। সর্বশেষ অভিমতটিই জমহূর বিদ্বানের অভিমত।

সালাত ত্যাগকারীর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান :

জমহূর বিদ্বানের অভিমতটি হাদীসসম্মত হওয়ায় উক্ত অভিমতই অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ কুফরী করা ও কাফের হয়ে যাওয়া এক বিষয় নয়। এক্ষণে কেউ যদি ইসলামের প্রধান ইবাদত সালাতকে অস্বীকার করে বা একেবারে ছেড়ে দেয় তাহ’লে সে কাফের হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যদি অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে এবং মাঝে-মধ্যে আদায় করে তাহ’লে সে কাফের হবে না বরং সে কবীরা গুনাহগার হবে। তওবা না করলে তাকে জাহান্নামে শাস্তি পেতে হবে। কারণ সালাত ত্যাগের ব্যাপারে যেমন কুফর শব্দের ব্যবহার হাদীসে রয়েছে, তেমনি বেশ কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর ক্ষেত্রে কাফের বলা হয় না। যেমন মুসলিম ভাইয়ের সাথে মারামারি করা কুফুরী’।[25]
যে মুসলিম ভাইকে কাফের বলল, সে কুফরী তার দিকেই ফিরে আসল।[26]
যে হায়েযা স্ত্রীর সাথে মিলন করল সে কুরআনের প্রতি কুফরী করল।[27]
যে তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করল সে কাফের হয়ে গেল।[28]
যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করল সে শিরক করল[29] ইত্যাদি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

এগুলো দ্বারা বিষয়টির ভয়াবহতা তথা কবীরা গুনাহের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। নিম্নের হাদীসগুলো তারই প্রমাণ বহন করে।

যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন,

إنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إلَهَ إلَّا اللهُ، يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ-​

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে’।[30] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেন,

مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ. ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ، إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ.​

‘যে ব্যক্তি (অন্তরে বিশ্বাস নিয়ে) লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ বলবে অতঃপর এ বিশ্বাসের উপর তার মৃত্যু হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[31]

তিনি আরো বলেন,

مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إلَى مَرْيَمَ، وَرُوْحٌ مِنْهُ، وَأَنَّ الْجَنَّةَ حَقٌّ، وَالنَّارَ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنْ عَمَلٍ.​

‘যে ব্যক্তি (আন্তরিকভাবে) এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, আল্লাহর কালিমা- যা তিনি মারিয়াম (আঃ)-এর প্রতি প্রেরণ করেছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রূহ। জান্নাত-জাহান্নাম সত্য। তার আমল যা-ই হোক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’।[32]

তিনি আরো বলেন,

يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ: لا إِلَهَ إِلا اللهُ وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ: لا إِلَهَ إِلا اللهُ وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ: لا إِلَهَ إِلا اللهُ وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ،​

‘যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ পাঠ করবে অথচ তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ ঈমান রয়েছে সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ পাঠ করবে এবং তার অন্তরে একটি গম পরিমাণ ঈমান রয়েছে সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। অনুরূপ ঐ ব্যক্তিও জাহান্নাম থেকে বের হবে, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ পাঠ করবে এবং তার অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে’।[33]

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَجُلاً كَانَ قَبْلَكُمْ رَغَسَهُ اللهُ مَالاً فَقَالَ لِبَنِيهِ لَمَّا حُضِرَ أَىَّ أَبٍ كُنْتُ لَكُمْ قَالُوا خَيْرَ أَبٍ. قَالَ فَإِنِّى لَمْ أَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ، فَإِذَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِى ثُمَّ اسْحَقُونِى ثُمَّ ذَرُّونِى فِى يَوْمٍ عَاصِفٍ. فَفَعَلُوا، فَجَمَعَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، فَقَالَ مَا حَمَلَكَ قَالَ مَخَافَتُكَ. فَتَلَقَّاهُ بِرَحْمَتِهِ-​

আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী করীম (ﷺ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের পূর্বের এক লোক, আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল তখন সে তার ছেলেদেরকে জড়ো করে জিজ্ঞেস করল, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলল, আপনি আমাদের উত্তম পিতা ছিলেন। সে বলল, আমি জীবনে কখনো কোন নেক আমল করিনি। সুতরাং আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমার লাশকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিও এবং প্রচন্ড ঝড়ের দিন ঐ ছাই বাতাসে উড়িয়ে দিও। লোকটি মারা গেলে ছেলেরা অছিয়ত অনুযায়ী কাজ করল। আল্লাহ তা‘আলা তার ছাই জড়ো করে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এমন অছিয়ত করতে কিসে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল? সে বলল, হে আল্লাহ! তোমার শাস্তির ভয়। ফলে আল্লাহর রহমত তাকে ঢেকে নিল’।[34]
লোকটির কোন ভালো কাজ ছিল না তাওহীদে বিশ্বাস ছাড়া। আর কেবল তাওহীদে বিশ্বার থাকার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

নিম্নে বর্ণিত হাদীসগুলোও প্রমাণ করে যে, কেবল সালাত পরিত্যাগ করলেই কাফের হয়ে যাবে না এবং ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে যাবে না। বরং কবীরা গুনাহগার হবে। জাহান্নামে শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু তাওহীদে বিশ্বাস থাকার কারণে এক সময় সে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

1- عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَدْرُسُ الْإِسْلَامُ كَمَا يَدْرُسُ وَشْيُ الثَّوْبِ، حَتَّى لَا يُدْرَى مَا صِيَامٌ، وَلَا صَلَاةٌ، وَلَا نُسُكٌ، وَلَا صَدَقَةٌ، وَلَيُسْرَى عَلَى كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي لَيْلَةٍ، فَلَا يَبْقَى فِي الْأَرْضِ مِنْهُ آيَةٌ، وَتَبْقَى طَوَائِفُ مِنَ النَّاسِ الشَّيْخُ الْكَبِيرُ وَالْعَجُوزُ، يَقُولُونَ: أَدْرَكْنَا آبَاءَنَا عَلَى هَذِهِ الْكَلِمَةِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَنَحْنُ نَقُولُهَا فَقَالَ لَهُ صِلَةُ: مَا تُغْنِي عَنْهُمْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَهُمْ لَا يَدْرُونَ مَا صَلَاةٌ، وَلَا صِيَامٌ، وَلَا نُسُكٌ، وَلَا صَدَقَةٌ؟ فَأَعْرَضَ عَنْهُ حُذَيْفَةُ، ثُمَّ رَدَّهَا عَلَيْهِ ثَلَاثًا، كُلَّ ذَلِكَ يُعْرِضُ عَنْهُ حُذَيْفَةُ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْهِ فِي الثَّالِثَةِ، فَقَالَ: يَا صِلَةُ، تُنْجِيهِمْ مِنَ النَّارِ ثَلَاثًا-​

১. হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইসলাম পুরাতন হয়ে যাবে, যেমন কাপড়ের উপরের কারুকার্য পুরাতন হয়ে যায়। শেষে এমন অবস্থা হবে যে, কেউ জানবে না, ছাওম কি, সালাত কি, কুরবানী কি, যাকাত কি? এক রাতে পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহর কিতাব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষের (মুসলিমদের) কতক দল অবশিষ্ট থাকবে। তাদের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা বলবে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই)-এর অনুসারী দেখতে পেয়েছি। সুতরাং আমরাও সেই বাক্য বলতে থাকব। (তাবেঈ) ছিলা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’ বলায় কি তাদের কোন উপকার হবে না? কারণ তারা জানে না সালাত কি, ছিয়াম কি, হজ্জ কি, কুরবানী কি এবং যাকাত কি? ছিলা ইবনে যুফার (রহঃ) তিনবার কথাটির পুনরাবৃত্তি করলে হুযায়ফা (রাঃ) প্রতিবার তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। তৃতীয় বারের পর তিনি তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, হে ছিলা! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে। কথাটি তিনি তিনবার বলেন’।[35]

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,

وفي الحديث فائدة فقهية هامة وهي أن شهادة أن لا إله إلا الله تنجي قائلها من الخلود في النار يوم القيامة ولو كان لا يقوم بشيء من أركان الإسلام الخمسة الأخرى كالصلاة وغيرها​

‘এই হাদীসে গুরুত্বপূর্ণ ফিক্বহী উপকারিতা রয়েছে। আর সেটি হ’ল-কালেমায়ে শাহাদাতের সাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামে স্থায়ী অবস্থান থেকে মুক্ত করবে। যদিও সে সালাত বা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের কোন একটি রুকন প্রতিষ্ঠা না করে’।[36]

তিনি আরো বলেন,

فهذا نص من حذيفة رضي الله عنه على أن تارك الصلاة، ومثلها بقية الأركان ليس بكافر، بل هو مسلم ناج من الخلود في النار يوم القيامة.​

‘হুযায়ফার হাদীস থেকে এই দলীল গ্রহণ করা যায় যে, সালাত পরিত্যাগকারী এবং অনুরূপ রুকনগুলো ত্যাগকারী কাফের নয়। বরং সে মুসলিম এবং ক্বিয়ামতের দিন স্থায়ী জাহান্নামী হওয়া থেকে মুক্তি লাভকারী’।[37]

2- عن عُبَادَة قال سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنَّ اللهُ عَلَى الْعِبَادِ مَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنَّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنَّ كَانَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، وَمَنْ لَمْ يَأْتِ بِهِنَّ فَلَيْسَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ، وَإِنْ شَاءَ أَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ-​

২. ওবাদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি তা আদায় করবে এবং তুচ্ছ মনে করে এর কোন প্রকার হক নষ্ট করবে না, তার জন্য আল্লাহর নিকট এই প্রতিজ্ঞা রইল যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে তা আদায় করবে না, তার প্রতি আল্লাহর কোন অঙ্গীকার থাকবে না। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তাকে জান্নাতেও দাখিল করাতে পারেন’।[38]
যদি সালাত পরিত্যাগকারী মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যেত তাহ’লে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে আসত না। বরং তারা বিনা হিসাবে জাহান্নামে চলে যেত, যেমন কাফেররা চলে যাবে।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেন,

خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ، إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ-​

‘আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযূ করবে এবং পরিপূর্ণরূপে রুকূ-সিজদা ও একাগ্রতাসহ সময়মত সালাত আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার রয়েছে যে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি এ কাজ করবে না তার জন্যে আল্লাহর কোন অঙ্গীকার নেই, তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন এবং ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন’।[39]

হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَنْ صَلَّى الصَّلاةَ لِوَقْتِهَا، وَحَافَظَ عَلَيْهَا، وَلَمْ يُضَيِّعْهَا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهَا، فَلَهُ عَلَيَّ عَهْدٌ، أَنْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، وَمَنْ لَمْ يُصَلِّهَا لِوَقْتِهَا، وَلَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهَا فَلا عَهْدَ لَهُ عَلَيَّ إِنْ شِئْتُ عَذَّبْتُهُ، وَإِنْ شِئْتُ غَفَرْتُ لَهُ،​

‘যে ব্যক্তি সময়মত সালাত আদায় করবে এবং তার প্রতি যত্নবান হবে। আর কোন একটি সালাতের অধিকারকে হালকা মনে করে তা বিনষ্ট করবে না। তাহ’লে তার জন্যে আমার উপর অঙ্গীকার হ’ল আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি সময়মত সালাত আদায় করবে না, তার প্রতি যত্নবান হবে না এবং এর অধিকারকে হালকা মনে করে বিনষ্ট করবে, তাহ’লে তার জন্যে আমার উপর কোন অঙ্গীকার নেই। ইচ্ছা করলে আমি তাকে শাস্তি দিব এবং ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিব’।[40]

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এই হাদীসের আলোকে আবু আব্দুল্লাহ ইবনে বাত্ত্বা (তার ‘আশ-শারহু ওয়াল ইবানা আন উছূলে আহলিস সুন্নাহ ওয়াদ দিয়ানাহ’ গ্রন্থে) বলেন,

وَلَا يُخْرِجُهُ مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا اَلشِّرْكُ بِاللهِ أَوْ بِرَدِّ فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اَللهِ عَزَّ وَجَلَّ جَاحِدًا بِهَا فَإِنْ تَرَكَهَا تَهَاوُنًا وَكَسَلاً كَانَ فِي مَشِيئَةِ اَللهِ عَزَّ وَجَلَّ إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ،​

‘শিরক ব্যতীত কোন কিছুই মানুষকে ইসলাম থেকে বের করতে পারে না। অথবা আল্লাহ যা ফরয করেছেন তা অস্বীকার করে প্রত্যাখ্যান করলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। আর যদি কোন ফরয শিথিলতা ও অলসতাবশত: পরিত্যাগ করে, তবে সে আল্লাহর ইচ্ছাধীনে থাকবে। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে শাস্তি দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করবেন’।[41]

ইচ্ছাকৃত সালাত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে যে সকল হাদীস এসেছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অস্বীকার, সীমালঙ্ঘন ও অহংকার করে সালাত পরিত্যাগ করা’। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) একই কথা বলে অছিয়ত করেছিলেন তার ছাত্র মুসাদ্দাদ বিন মুসারহাদকে।[42]

সালাত পরিত্যাগকারীর শাস্তি :

সালাত পরিত্যাগকারীর দুনিয়াবী শাস্তির ব্যাপারে ইমাম শাফেঈ, মালেক ও আহমাদ (রহঃ)-এর অভিমত হ’ল, ইচ্ছাকৃত বা অলসতাহেতু সালাত পরিত্যাগকারীকে তিনদিন বন্দী রাখতে হবে এবং প্রতি ওয়াক্ত সালাতের সময় সালাত আদায়ের জন্য আহবান জানাতে হবে। সালাত আদায়ে সম্মতি দিলে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথা তাকে হত্যা করতে হবে। তারা দলীল হিসাবে নিম্নের হাদীসটি পেশ করেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: لَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ بَعْدَهُ، وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ الْعَرَبِ، قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لِأَبِي بَكْرٍ: كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ، وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَمَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ، وَنَفْسَهُ، إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَاللهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ، وَالزَّكَاةِ، فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ، وَاللهِ لَوْ مَنَعُونِي عِقَالًا كَانُوا يُؤَدُّونَهُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهِ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: فَوَاللهِ، مَا هُوَ إِلَّا أَنْ رَأَيْتُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ شَرَحَ صَدْرَ أَبِي بَكْرٍ لِلْقِتَالِ، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ-​

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুবরণ করলেন আর তাঁর পরে আবুবকর (রাঃ)-কে খলীফা নিযুক্ত করা হ’ল এবং আরবের যারা কাফের হওয়ার তারা কাফের হয়ে গেল। তখন ওমর (রাঃ) আবুবকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কিভাবে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি মানুষের সঙ্গে লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট। অতএব যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’ বলল, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে ভিন্ন কথা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হবে। আবুবকর (রাঃ) বললেন, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কেননা যাকাত হ’ল সম্পদের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট প্রদত্ত যাকাতের একটি রশিও দিতে অস্বীকার করে, তাহ’লে আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা আবুবকরের বক্ষ খুলে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম যে, এ সিদ্ধান্ত সঠিক’।[43]
অত্র হাদীস থেকে তারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, মুসলিমদের নিরাপত্তার মাপকাঠি হচ্ছে সালাত বা ফরয ইবাদতগুলো পালন করা। তাছাড়া আবুবকর (রাঃ) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তবে অত্র হাদীস দ্বারা সালাত পরিত্যাগকারীকে হত্যার দলীল গ্রহণ করা কয়েকটি কারণে সঠিক নয়।

১. যুদ্ধ ঘোষণা কোন হদ্দ বা দন্ডবিধি নয়। যুদ্ধে যে কেউ মারা যেতে পারে। এমনকি যুদ্ধ ঘোষণাকারীও সেই যুদ্ধে শাহাদত বরণ করতে পারেন। সেজন্য হত্যার পক্ষে উপস্থাপিত দলীলের জওয়াবে হাফেয ইবনু হাজার ও বদরুদ্দীন আইনী বলেন,

وَعَلَى هَذَا فَفِي الِاسْتِدْلَالِ بِهَذَا الْحَدِيثِ عَلَى قَتْلِ تَارِكِ الصَّلَاةِ نَظَرٌ لِلْفَرْقِ بَيْنَ صِيغَةِ أُقَاتِلُ وَأَقْتُلُ وَاللهُ أَعْلَمُ،​

‘এই কথার ভিত্তিতে এই হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করে সালাত পরিত্যাগকারীকে হত্যার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে। কারণ أُقَاتِلُ (বাবে মুফা‘আলা) এবং أَقْتُلُ (বাবে নাছারা) ক্রিয়ার অর্থের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহ ভালো জানেন’।[44]

২. ইতিহাসে এমন কোন ঘটনা পাওয়া যায় না যে, যাকাত না দেওয়ার কারণে কোন ব্যক্তির উপর হদ্দ বা দন্ডবিধি কায়েম করা হয়েছে কিংবা ছওম পালন না করার কারণে তাদের কারো উপরে হদ্দ বা দন্ডবিধি কায়েম করা হয়েছে।

৩. রাসূল (ﷺ) তিনটি কারণ ছাড়া হদ্দ বা দন্ডবিধি কায়েম করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ،إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: الثَّيِّبُ الزَّانِي، وَالنَّفْسُ بِالنَّفْسِ، وَالتَّارِكُ لِدِينِهِ الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ​

‘তিনটি কারণের যেকোন একটি সংঘটিত হওয়া ছাড়া কোন মুসলিমের রক্ত (কারো জন্য) বৈধ নয়; বিবাহিত ব্যভিচারী, খুনের বদলে হত্যাযোগ্য খুনী এবং দ্বীন ও জামা‘আত ত্যাগী’।[45] এর মধ্যে সালাত পরিত্যাগকারী নেই। অতএব কোন দলীলের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বা আমীর সালাত পরিত্যাগকারীকে হত্যা করবেন?

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু দাকীকুল ঈদ বলেন,

وقد استدل بهذا الحديث على أن تارك الصلاة لا يقتل بتركها فإن ترك الصلاة ليس من هذه الأسباب أعني زنا المحصن وقتل النفس والردة وقد حصر النبي صلى الله عليه وسلم إباحة الدم في هذه​

‘এই হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়ে থাকে যে, সালাত পরিত্যাগকারীকে কেবল সালাত ত্যাগ করার কারণে হত্যা করা যাবে না। কেননা সালাত ত্যাগ এই তিনটি কারণের একটিও নয়। অর্থাৎ বিবাহিত ব্যভিচারী, মানুষ হত্যা এবং মুরতাদ হয়ে যাওয়া। আর নবী করীম (ﷺ) কারো রক্ত হালাল হওয়াকে এই তিনটি কারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন’।[46]

অতএব সালাত পরিত্যাগ করা বড় ধরনের অপরাধ। দুনিয়াতে যার শাস্তি বিচারক অবস্থা অনুপাতে প্রদান করবেন। আর পরকালে আল্লাহ যেভাবে চাইবেন তাকে শাস্তি প্রদান করবেন বা ক্ষমা করে দিবেন। তবে কেউ সালাতের ফরযিয়াতকে সরাসরি অস্বীকার করলে সে কাফের ও মুরতাদ হয়ে যাবে। আর দ্বীন ত্যাগকারী হিসাবে তাকে হত্যা করতে হবে। তবে এই হত্যা করার দায়িত্ব কোন সাধারণ মানুষের নয়; বরং ইসলামী রাষ্ট্রের।

উপসংহার :

সালাত ইসলামের প্রথম শে‘আর বা নিদর্শন, যার মাধ্যমে ব্যক্তির মুসলিম বা অমুসলিম হওয়া নির্ভর করে। মতপার্থক্য যাই থাক না কেন সালাত পরিত্যাগ করা মারাত্মক কবীরা গুনাহ-এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য হ’ল দিনে-রাতে যথাসময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন- আমীন।


[1]. শরহুন নববী আলা মুসলিম ২/৭০
[2]. ফাৎহুল বারী ১/৭৬, ২/৭, ২/৩২, ২/২৭৫, ৭/৪১০, ৮/৬৯, ১২/২০৩
[3]. মাজমূউল ফাতাওয়া ২২/৪৯
[4]. আল-ফাতাওয়াল কুবরা ২/১৮
[5]. মিনহাজুস সুন্নাহ ৫/২৩১
[6]. মাজমূউল ফাতাওয়া ২২/৫৩
[7]. তারহুছ তাছরীব ২/১৪৮
[8]. ফাৎহুল বারী ২/১৩০
[9]. আল-মুহাল্লা ২/১৫
[10]. তারিকুছ সালাত ওয়া আহকামুহা ৬৪ পৃ.
[11]. তারিকুছ সালাত ওয়া আহকামুহা ৩১ পৃ.; আলবানী, হুকমু তারিকিছ সালাত ৫ পৃ.
[12]. আশ-শারহুল কাবীর ১০/৭৮
[13]. মুগনী ২/৩২৯
[14]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/২৪১
[15]. শরহে আবীদাউদ ৩/৩১৫; ছালেহ ফাওযান, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৩৩০
[16]. ফৎওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৪১৩
[17]. সহীহাহ হা/৮৭-এর আলোচনা, ১/১৭৫।
[18]. যঈফাহ হা/৮৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য
[19]. আলবানী, সহীহাহ হা/৩০৫৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; হুকমু তারিকিছ সালাত ১/৫১
[20]. সহীহুত তারগীব হা/৫৬৩
[21]. তিরমিযী হা/২৬২১; মিশকাত হা/৫৭৪; সহীহুত তারগীব হা/৫৬৪
[22]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৫৫-৫৬; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/১৭
[23]. মির‘আতুল মাফাতীহ ২/২৭৫
[24]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/৩১১
[25]. বুখারী হা/৪৮
[26]. বুখারী হা/৬১০৩
[27]. মিশকাত হা/৫৫১
[28]. সহীহুল জামে‘ হা/৭০২৮
[29]. মিশকাত হা/৩৪১৯
[30]. বুখারী হা/৪২৫; মুসলিম হা/৩৩
[31]. বুখারী হা/৫৮২৭; মুসলিম হা/৯৪; মিশকাত হা/২৬
[32]. বুখারী হা/৩৪৩৫; মিশকাত হা/২৭
[33]. বুখারী হা/৪৪
[34]. বুখারী হা/৩৪৭৮; মুসলিম হা/২৭৫৬
[35]. ইবনু মাজাহ হা/৪০৪৯; সহীহাহ হা/৮৭; সহীহুল জামে‘ হা/৮০৭৭
[36]. সহীহাহ হা/৮৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য
[37]. সহীহাহ হা/৮৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য
[38]. নাসাঈ হা/৪৬১; ইবনু মাজাহ হা/১৪০১; সহীহুত তারগীব হা/৩৭০
[39]. তাবারানী আওসাত্ব হা/৪৬৫৮; সহীহুল জামে‘ হা/৩২৪২,৩২৪৩
[40]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৬৭৮; সহীহুত তারগীব হা/৪০১
[41]. ইবনু বাত্ত্বাহ, মুতূনু কিতাবিশ শরহে ওয়াল ইবানা আলা উছূলিস সুন্নাহ ওয়াদ দিয়ানাহ, ১৮৩ পৃ.
[42].আলবানী, হুকমু তারিকিছ সালাত ১/১০
[43]. বুখারী হা/৭২৮৪ ; মুসলিম হা/২০; মিশকাত হা/১৭৯০
[44]. ফাৎহুল বারী ১/৭৬; উমদাতুল কারী ২৪/৪১
[45]. বুখারী হা/৬৮৭৮; মুসলিম হা/১৬৭৬; মিশকাত হা/৩৪৪৬
[46]. ইহকামুল আহকাম ৪২৭ পৃ.



সূত্র: আত-তাহরীক।​
 
Last edited:
Top