‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

হালাল - হারাম সহশিক্ষাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পড়া ও পড়ানো

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
379
Comments
450
Solutions
1
Reactions
8,756
Credits
22,155
প্রশ্ন: আমি একটা সমস্যায় আছি; যেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছি ও পেরেশানিতে আছি। প্রায় দুই মাস আগে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বর্তমানে আমি ইংলিশ টিচার্স ট্রেনিং স্কুলে আছি। আমি যে শাখায় পড়ছি সেখানে নরনারীর মিশ্রন বিদ্যমান; ১৫ জন ছাত্র ও ১৫ জন ছাত্রী। তারপর আমাকে আমাদের দেশের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কোনো এক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। এই উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহশিক্ষা ভিত্তিক। আসলে যে বিষয়টি আমাকে পেরেশান করে তুলছে তা হলো আমি জানি যে, সহশিক্ষা হারাম এবং পুরুষ ব্যক্তি দৃষ্টি অবনত রাখতে আদিষ্ট। কিন্তু আমি মনে মনে বলি, আমাদের দেশটা অন্যান্য ইসলামী দেশের মত নয়। আমাদের দেশে দ্বীনদার ও দ্বীনের উপর অবিচল ব্যক্তিদের উচিত এই সকল পদে প্রতিযোগিতা করা; যাতে করে বিদাতী ও পাপপ্রবণ লোকদের সামনে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া যায়। আমি এখনও জানি না আমি যে কাজটা করছি সেটার জন্য নেকী পাচ্ছি; নাকি শয়তান আমার কাছে এ কাজটাকে আকর্ষণীয় করে তুলছে আর আমাকে বুঝ দিচ্ছে যে আমি দাওয়াতের প্রচার, মুসলিমদের কল্যাণ সাধন এবং বিশুদ্ধ আকীদা ও নিষ্কলুষ পদ্ধতির দিকে আহ্বানে আগ্রহী। আমি পূর্ণ আস্থাশীল যে বেগানা পুরুষের জন্য একজন নারীকে পর্দা ছাড়া পড়ানো জায়েয নেই। কিন্তু এখানে আমার চাকুরী করাটা কি জরুরী নয়? যেহেতু সেক্যুলারেরা ও তাসাউফপন্থীরা এবং অন্যেরা আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রগুলো দখল করে আছে?


উত্তরঃ আলহামদু লিল্লাহ।.

বর্তমান যুগে মুসলিমরা যে সকল বিষয়ের পরীক্ষায় পড়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, অধিকাংশ পাবলিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারী চাকুরিগুলোতে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ছড়িয়ে পড়া।

ইতঃপূর্বে 1200 নং প্রশ্নোত্তরে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা হারাম হওয়া এবং এর ফলে সৃষ্ট অনিষ্টগুলোর বিবরণ দেয়া হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো নরনারীর মিশ্রনযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা ও চাকুরী করা এড়িয়ে চলা।

কিন্তু যে সকল দেশের অধিবাসীরা জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে নরনারীর মিশ্রনের পরীক্ষার শিকার; বিশেষতঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও চাকুরীস্থলে; যার ফলে একজন মুসলিমের জন্য এর থেকে দূরে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে; তাদের জন্য এমন ছাড় দেওয়া যাবে যেটা অন্যদেরকে দেওয়া যাবে না। যাদেরকে আল্লাহ এ সব বিষয় থেকে হেফাজত করেছেন।

উক্ত ছাড়ের ভিত্তি একটি ফিকহী কায়েদা। তা হলো: “হারামের পথ রোধকরণ হিসেবে যা হারাম প্রয়োজন ও বৃহত্তর স্বার্থে সেটি বৈধতা পায়”।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা বলেন: “গোটা শরীয়ত এই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যে, হারামের দাবি রাখে এমন অনিষ্টের সাথে যদি বৃহত্তর প্রয়োজন সাংঘর্ষিক হয়; সেটা উক্ত হারামকে বৈধতা প্রদান করে।”[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৯/৪৯)]

তিনি আরো বলেন: “যা কিছু হারামের পথ রোধকরণ শ্রেণীয় তা থেকে বারণ করা হবে যখন এর প্রয়োজন না থাকে। আর যদি এটি ছাড়া কল্যাণের স্বার্থ অর্জন করা না যায় তাহলে এর থেকে বারণ করা হবে না”।[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৩/২১৪)]

ইবনুল কাইয়্যিম বলেন: ““হারামের পথ রোধকরণ হিসেবে যা হারাম করা হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থে সেটাকে বৈধতা দেওয়া হয়। যেমন: রিবাল ফাদল (বৃদ্ধিগত সুদ) থাকা সত্ত্বেও ‘আরায়া’-কে বৈধ করা হয়েছে। যেমন: ফজরের ও আসরের পরে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও হেতুযুক্ত নামাযগুলোকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। যেমন: হারাম দর্শনের মধ্য থেকে বিয়ের প্রস্তাবকারী, ডাক্তার ও লেনদেনকারীর দেখাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। যেমন: নারীদের সাথে সাদৃশ্যগ্রহণ রোধকল্পে পুরুষের ওপর স্বর্ণ ও রেশমের কাপড় পরাকে হারাম করা হয়েছে; যে সাদৃশ্যগ্রহণকারীকে লানত করা হয়েছে। তদুপরি প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো বৈধ করা হয়।”[ইলামুল মুওয়াক্কি‘ঈন (২/১৬১)]

শাইখ ইবন উছাইমীন বলেন: “(হারামের) মাধ্যম হিসেবে যা হারাম প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে সেটি জায়েয।”[মানযূমাতি উসূলিল ফিকহ (পৃ-৬৭)]

আমাদের কাছে অগ্রগণ্য মনে হচ্ছে; আর আল্লাহই সর্বজ্ঞ: এ ধরণের দেশগুলোতে যেখানে এই সমস্যাটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে সে সব দেশের অধিবাসীর জন্য নরনারীর মিশ্রন থাকা সত্ত্বেও পড়ালেখা ও চাকুরী করার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে; যে ছাড়টা অন্যদেরকে দেয়া হবে না যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই ছাড় কয়েকটি শর্তসাপেক্ষ; সেগুলো হলো:

প্রথমত: ব্যক্তি শুরুতে সাধ্যমত এমন স্থান অনুসন্ধান করা যেখানে নরনারীর মিশ্রন নেই।

দ্বিতীয়ত: শরয়ী হুকুমগুলো মেনে চলা তথা দৃষ্টি অবনত রাখা এবং কাজ বা পড়ালেখার প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথাবার্তা না বলা।

শাইখ ইবনে উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এমন এক যুবক সম্পর্কে যে নরনারীর মিশ্রন বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পায়নি?

তিনি বলেন: “আপনাকে অবশ্যই এমন প্রতিষ্ঠান খুঁজতে হবে যেখানে এই অবস্থা নেই। যদি এই অবস্থার বাহিরে কোনো প্রতিষ্ঠান না পান; অথচ আপনার পড়াশোনা করা প্রয়োজন; তাহলে আপনি পড়বেন; কিন্তু সাধ্যমত অশ্লীলতা ও ফিতনা থেকে দূরে থাকবেন। সেটা এভাবে যে, আপনার চোখকে অবনত রাখবেন এবং জিহ্বাকে সংরক্ষণ করবেন। নারীদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের কাছ দিয়ে যাবেন না।”[ফাতাওয়া নূরুন আলাদ্দারব (১/১০৩), (১৩/১২৭)]

তৃতীয়ত: যদি কোন মানুষ অনুভব করে সে হারামের দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং তার সাথে থাকা নারীদের ফিতনায় পড়ছে সেক্ষেত্রে ব্যক্তির দ্বীনদারির নিরাপত্তা অন্য সব স্বার্থের উপর প্রাধান্য পাবে। তখন অবশ্যই তাকে এই স্থান ছাড়তে হবে। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তার প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন।

আরও বিস্তারিত জানতে 69859 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব সহশিক্ষাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পড়া ও পড়ানো - ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
 
Last edited by a moderator:

Share this page