সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Farhad Molla

ফাযায়েলে আমল সলাতুদ দ্বুহার ফযীলত

Farhad Molla

Susceptible

Exposer
Q&A Master
Reporter
Salafi User
Threads
130
Comments
205
Solutions
1
Reactions
1,323
Credits
1,198
সলাতুদ দ্বুহার ফযীলত

এক.

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَقَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاَثٍ لاَ أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ صَوْمِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَصَلاَةِ الضُّحَى وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ

আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমার খলীল ও বন্ধু (নবী ﷺ) আমাকে তিনটি কাজের ওয়াসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করবো না। তা হলো: প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা, সলাতুদ্ব দ্বুহা আদায় করা এবং উইতর সলাত আদায় করে শয়ন করা।” [সহীহ বুখারী- ১১৭৮]

দুই.

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ "‏يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى"‏

আবূ যার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, “প্রতিটি দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি অস্থি-বন্ধনী ও গিটের ওপর সদাক্বাহ ওয়াজিব হয়। সুতরাং প্রতিটি তাসবীহ অর্থাৎ সুবহান আল্লাহ বলা সদাক্বাহ হিসেবে গণ্য হয়, প্রতিটি তাহমীদ অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ বলা সদাক্বাহ হিসেবে গণ্য হয়, প্রতিটি আল্লাহু আকবার এবং নাহী আনিল মুনকার অর্থাৎ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রতিটি প্রয়াসও অনুরূপ সদাক্বাহ বলে গণ্য হয়; তবে দ্বুহা বা ইশরাক্বের মাত্র দুই রাকা‘আত সলাত যদি কেউ আদায় করে তাহলে তা এ সবগুলোর সমকক্ষ হতে পারে।” [সহীহ মুসলিম- ৭২০]

তিন.

عن أبي موسى الأشعري : "من صلى الضحى أربعا و قبل الأولى أربعا بني له بيت في الجنة"

আবূ মূসা আল আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি সলাতুদ্ব দ্বুহা উলার পূর্বে (যোহরের পূর্বে) আদায় করলো তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মিত হয়।” [হাসান; সহীহুল জামে‘- ৬৩৪০]

চার.

عَن عَمْرو بن عبسة قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ فَقَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ فَقُلْتُ: أَخْبِرْنِي عَنِ الصَّلَاةِ فَقَالَ: «صَلِّ صَلَاةَ الصُّبْحِ ثُمَّ أقصر عَن الصَّلَاة حَتَّى تَطْلُعُ الشَّمْسُ حَتَّى تَرْتَفِعَ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلَعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ .....

আমর ইবনু আবাসাহ রাহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী ﷺ মদীনায় তাশরীফ আনলে আমিও মদীনায় চলে আসলাম। তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমাকে সলাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ফজরের সলাত আদায় করো। এরপর সলাত হতে বিরত থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উঠে উপরে না আসে। কেননা, সূর্য উদয় হয় শয়তানের দুই শিং এর মাঝখান দিয়ে। আর এ সময় কাফিরগণ (সূর্য পূজারীরা) একে সিজদা করে। তারপর সলাত পড়ো। কেননা এ সময়ে (আল্লাহর কাছে বান্দার) সলাতের উপস্থিতির সাক্ষ্য দেওয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া বর্শার উপর উঠে না আসে ও জমিনের উপর না পড়ে (অর্থাৎ ঠিক দুপুরের সময়), এ সময়ও সলাত হতে বিরত থাকো ......।” [সহীহুল জামে‘- ৩৭৭৫]

পাঁচ.

إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏صَلاَةُ الأَوَّابِينَ حِينَ تَرْمَضُ الْفِصَالُ"‏

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “সলাতুল আওয়াবীন বা আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী বান্দাদের সলাতের সময় হলো যখন সূর্যতাপে উটের বাচ্চাদের পা গরম হয়ে যায়।” [সহীহ মুসলিম- ৭৪৮]

ছয়.

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ و أَبِي ذَرٍّ رضي الله عنهما عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنَّهُ قَالَ: ابْنَ آدَمَ ارْكَعْ لِي مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، أَكْفِكَ آخِرَهُ

আবূ দারদা ও আবূ যার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে আদম সন্তান! দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাকা‘আত সলাত আদায় করো, আমি তোমার জন্য দিনের শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন পূরণ করে দিব।” [সহীহ; ইরওয়াউল গালীল- ৪৬৫; সুনান তিরমিযী- ৪৭৫]

সাত.

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا يحافظ على صلاة الضحى إلا أواب، وهي صلاة الأوابين

আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আউয়াব বা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী বান্দা ছাড়া কেউ সলাতুদ্ব দ্বুহার হিফাযত করে না, আর এটিই সলাতুল আউয়াবীন বা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তনকারীদের সলাত।” [হাসান; সহীহুল জামে‘- ৭৬২৮]

আট.

عن بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فِي الْإِنْسَانِ سِتُّونَ وَثَلَاثُ مِائَةِ مَفْصِلٍ فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهَا صَدَقَةً قَالُوا فَمَنْ الَّذِي يُطِيقُ ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ النُّخَاعَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا أَوْ الشَّيْءُ تُنَحِّيهِ عَنْ الطَّرِيقِ فَإِنْ لَمْ تَقْدِرْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُ عَنْكَ

বুরাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “মানবদেহে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ঐ প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে সদাক্বাহ রয়েছে। সকলে বললো, ‘এত সদাক্বাহ দিতে কে সক্ষম হবে, হে আল্লাহর রাসূল?’ তিনি বললেন, “মসজিদ হতে কফ (ইত্যাদি নোংরা) দূর করা, পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু (কাঁটা, পাথর প্রভৃতি) দূর করা এক একটা সদাক্বাহ; যদি তাতে সক্ষম না হও, তবে দুই রাকা‘আত সলাতুদ্ব দ্বুহার সলাত তোমার সে প্রয়োজন পূর্ণ করবে।” [সহীহুল জামে‘- ৪২৩৯]

নয়.

عَنْ أَبِيْ أُماَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ وَمَنْ خَرَجَ إِلَى تَسْبِيحِ الضُّحَى لَا يَنْصِبُهُ إِلَّا إِيَّاهُ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْمُعْتَمِرِ وَصَلَاةٌ عَلَى أَثَرِ صَلَاةٍ لَا لَغْوَ بَيْنَهُمَا كِتَابٌ فِي عِلِّيِّينَ.

আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যাক্তি পাক পবিত্র হয়ে ফরয সলাতের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হবে, তার জন্য রয়েছে মুহরিম হজ্জ পালনকারীর ন্যায় সাওয়াব। আর যে ব্যক্তি দ্বুহার সলাতের জন্য বের হবে, এ সলাত ছাড়া অন্য কিছু তাকে ক্লান্ত করে না, তবে তার জন্যে রয়েছে উমরা পালনকারীর ন্যায় প্রতিদান। এক সলাতের পর আর এক সলাত আদায় করলে- যে সলাতদ্বয়ের মাঝে কোন দুনিয়াবী কথাবার্তা নেই, তবে তার এই আমল ঈল্লীইনে লিখে রাখা হবে।’’ [সহীহুত তারগীব- ৩২০]

দশ.

عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِي قَالَ بَعَثَ رَسُولُ اللهِ ﷺ سَرِيَّةً فَغَنِمُوا وَأَسْرَعُوا الرَّجْعَةَ فَتَحَدَّثَ النَّاسُ بِقُرْبِ مَغْزَاهُمْ وَكَثْرَةِ غَنِيمَتِهِمْ وَسُرْعَةِ رَجْعَتِهِمْ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى أَقْرَبَ مِنْهُ مَغْزًى وَأَكْثَرَ غَنِيمَةً وَأَوْشَكَ رَجْعَةً مَنْ تَوَضَّأَ ثُمَّ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ لِسُبْحَةِ الضُّحَى فَهُوَ أَقْرَبُ مَغْزًى وَأَكْثَرُ غَنِيمَةً وَأَوْشَكُ رَجْعَةً

আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনে আস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক যোদ্ধাবাহিনী প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধ সফরে তারা বহু যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করে খুব শীঘ্রই ফিরে আসেন। লোকেরা তাদের যুদ্ধস্থানের নিকটবর্তিতা, লব্ধ সম্পদের আধিক্য এবং ফিরে আসার শীঘ্রতা নিয়ে সবিস্ময় বিভিন্ন আলোচনা করতে লাগলো। তা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্র, ওদের চেয়ে অধিকতর লব্ধ সম্পদ এবং ওদের চেয়ে শীঘ্রতর ফিরে আসার কথার সন্ধান বলে দিব না?’ যে ব্যক্তি সকালে অযু করে দ্বুহার সলাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়, সে ব্যক্তি ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করে, ওদের চেয়ে অধিকতর সম্পদ লাভ করে এবং ওদের চেয়ে অধিকতর শীঘ্র ঘরে ফিরে আসে।” [তামামুল মিন্নাত- ২৫৭; সহীহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ]

এগারো.

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتّٰـى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَـهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ، تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ

আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের সলাত জামা‘আতে আদায় করে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিকির করে, তারপর দুই রাকা‘আত সলাত আদায় করে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সাওয়াব লাভ হয়; পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ পরিপূর্ণ।” [সিলসিলাহ সহীহাহ- ৩৪০৩; সনদ হাসান]

সম্পাদনা:
শাইখ ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ
১২ যুলহিজ্জাহ ১৪৪৫ হিজরি, ১৯ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
 
Top