- Views: 385
- Replies: 1
১। সিয়াম ফরয করা হয়েছে:
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক উম্মতের ওপর তা লিখে দিয়েছেন এবং তাদের উপর তা ফরয করেছেন।
আর যদি এ সিয়াম সাধনা এমন একটি মহান ইবাদত না হতো যার দ্বারা আল্লাহর ইবাদত করা ব্যতীত সৃষ্টিকুল অমুখাপেক্ষী হতে পারে না, আর তার উপর ব্যাপক সওয়াবের বিষয়টি নির্ভর না করত তবে আল্লাহ সকল উম্মতের ওপর তা ফরয করতেন না।
২। সিয়াম সাধনা মানুষের পাপ মোচনের একটি উন্নত মাধ্যম:
* বুখারী ও মুসলিম এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
অর্থাৎ আল্লাহর ওপর ঈমান ও সিয়াম ফরয হওয়াকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে সিয়ামের প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় এ বিধান পালন করলেই কেবল উপরোক্ত ফযীলত পাওয়া যাবে। সিয়াম ফরয হওয়াতে বিরক্ত হওয়া এবং সিয়ামের পুরস্কারের ব্যাপারে কোনোরূপ সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। এভাবে সিয়াম পালন করলেই আল্লাহ তা‘আলা অতীতের পাপসমূহ মার্জনা করে দেবেন।
* অনুরূপ সহীহ মুসলিমে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
৩। সিয়াম পালনকারীর প্রতিদান কোনো সংখ্যা দ্বারা সীমিত করা হয় নি, বরং সিয়াম পালনকারীকে তার সীমাহীন প্রতিদান দেয়া হবে:
* বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
* মুসলিম শরীফের অন্য বর্ণনায় রয়েছে:
এ তাৎপর্যপূর্ণ হাদীসটি বিভিন্ন দিক থেকে সাওমের ফযীলতের ওপর প্রমাণ বহন করছে:
প্রথম দিক: আল্লাহ তা‘আলা সকল ইবাদতের মধ্য থেকে সাওমকে নিজের জন্য খাস করেছেন। কারণ সাওম আল্লাহর কাছে একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। সাওমকে আল্লাহ ভালবাসেন। সাওমের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি ইখলাস প্রকাশ পায়। কারণ এটা বান্দা ও তার রবের মাঝে এমন এক গোপন ভেদ যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানতে পারে না। কেননা সিয়াম পালনকারী ইচ্ছা করলে মানবশূন্য জায়গা বা এলাকায় আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তু আহার করতে পারেন কিন্তু তিনি তা করেন না। কারণ তিনি জানেন তার একজন রব রয়েছেন, যিনি নির্জনেও তার অবস্থা জানেন। আর তিনিই তার উপর এটা হারাম করেছেন। তাই তিনি সাওমের সাওয়াব লাভের আশায় এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার ভয়ে আহার বিহার পরিত্যাগ করেন।
এজন্যই আল্লাহ সিয়াম পালনকারী বান্দার এই ইখলাসের যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে সাওমকে সকল ইবাদত থেকে নিজের জন্য বিশিষ্ট করে নিয়েছেন। তাই তো তিনি বলেছেন,
আর এ বিশিষ্টকরণের উপকারিতা দৃশ্যমান হবে কিয়ামত দিবসে। যেমনটি সুফিয়ান ইবন ‘উয়াইনাহ রহ. বলেন:
দ্বিতীয় দিক: সাওম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: «وأنا أجزي به» ‘সাওমের প্রতিদান আমি নিজে দেব।’ সাওমের প্রতিদানকে আল্লাহ তাঁর স্বীয় সত্তার প্রতি সম্পর্কযুক্ত করলেন। কারণ অন্যান্য নেক আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ করে দেয়া হবে। প্রতিটি নেক ‘আমল তার দশগুণ থেকে সাতশ গুণ ও তার চেয়েও অধিকহারে দেয়া হবে। আর সাওমের ছাওয়াবের কোনো সংখ্যা গণনা না করে আল্লাহ তা‘আলা আপন সত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর আল্লাহই হলেন সবচেয়ে বড় ও মহান ইজ্জতের অধিকারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। দান দানশীল অনুপাতেই হয়ে থাকে। তাই সাওমের সাওয়াব এমন বিরাট যার কোনো হিসেব নেই।
আর সাওম হলো: আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য অবলম্বন, আল্লাহ কর্তৃক হারাম বস্তুসমূহ হতে বাঁচার ক্ষেত্রে ধৈর্য অবলম্বন এবং দেহ ও মনের দুর্বলতা এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মতো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান পালনে ধৈর্য ধারণ করার নামান্তর।
* সুতরাং সাওমের মধ্যে ধৈর্য্যের প্রকারত্রয়ের সবই একত্র হয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা সবর সম্পর্কে বলেছেন:
তৃতীয় দিক: সাওম ঢাল স্বরূপ। অর্থাৎ তা সিয়াম পালনকারীকে অনর্থক কথাবার্তা ও অশ্লীল সংলাপ হতে রক্ষা করে। এ জন্যই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
* আর সিয়াম তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকেও রক্ষা করবে। যেমন ইমাম আহমদ রহ. জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাসান সনদে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
চতুর্থ দিক: সিয়াম পালনকারীর মুখের না খাওয়া জনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মেসকের সুগন্ধি হতেও প্রিয়। কারণ এ গন্ধ রোযার কারণে হয় তাই তা আল্লাহর কাছে সুগন্ধি ও প্রিয় বলে বিবেচিত হয়। এটা আল্লাহর কাছে সিয়ামের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রমাণ। আল্লাহর আনুগত্যের মধ্য দিয়ে সিয়াম পালিত হয় বলেই রোযাদারের মুখের গন্ধ মানুষের কাছে অপছন্দনীয় হলেও আল্লাহর কাছে তা সুপ্রিয় ও পছন্দনীয় হয়।
পঞ্চম দিক: সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে। একটি আনন্দ ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহর দীদার লাভের সময়।
ইফতারের সময় আনন্দ: ‘সিয়াম পালনকারী সর্বোত্তম নেক আমলের অন্যতম ইবাদত সাওম সম্পন্ন করার কারণে আল্লাহ তার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন এ জন্য আনন্দ প্রকাশ করে।
কারণ বহু মানুষ এমন রয়েছে যারা এ অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে; কেননা তারা সাওম পালন করে নি। বরং পানাহার ও স্ত্রী সহবাস যা আল্লাহ তার জন্য অন্য অবস্থায় হালাল করেছেন কিন্তু সাওম অবস্থায় হারাম করেছেন, তা দিয়ে (অবৈধ) আনন্দ-উদযাপনে লিপ্ত।
আল্লাহর দিদার লাভের সময় আনন্দ: ‘যখন একজন সাওম পালনকারী তার অতি দরকারী মুহূর্তে আল্লাহর কাছ থেকে পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে তখন সাওমের কারণে আনন্দ প্রকাশ করবে। যখন বলা হবে:
উপরোক্ত হাদীসে সাওম পালনকারীর জন্য একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে কিংবা তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চায় সে তার অনুরূপ ভূমিকা নেবে না। যাতে না গাল-মন্দ ও সংঘর্ষ বেড়ে যায়, আবার নীরবতা অবলম্বন করে নিজেকে দুর্বল হিসেবেও প্রকাশ করবে না। বরং বলবে ‘আমি তো রোযাদার।’ যাতে ইঙ্গিত করা হয় যে, প্রতিশোধ গ্রহণে অক্ষমতার জন্য নয়, বরং সাওমের সম্মানার্থে ঐ ব্যক্তির অনুরূপ আচরণে সে লিপ্ত হবে না। আর এভাবে ঝগড়া-বিবাদ ও সংঘাত বন্ধ হয়ে যাবে।
৪. সিয়াম পালনকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সিয়াম সুপারিশ করবে:
আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
প্রিয় ভাইয়েরা! সিয়ামের উল্লেখিত ফযীলত ওই সকল ব্যক্তির জন্য, যারা গুরুত্বসহ এবং আদবের সঙ্গে সিয়াম পালন করে। নিজেদের সিয়ামকে নিখুঁত রাখতে এবং তার বিধিবিধান পালনে চেষ্টা করুন আর আপনারা নিজেদের সাওমে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সিয়াম সংরক্ষণ করুন, সিয়ামকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করুন এবং আমাদের, আমাদের পিতা-মাতা ও মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন।আর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রদান করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।
[1] বুখারী: ৩৮; মুসলিম: ৭৬০।
[2] মুসলিম: ২৩৩।
[3] বুখারী: ১৯০৪; মুসলিম: ১১৫১।
[4] মুসলিম: ১১৫১।
[5] মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/৭। অর্থাৎ সিয়াম দ্বারা জুলুমের প্রতিকার করবেন না। সেটাকে ব্যক্তির অক্ষয় আমল হিসেবে হেফাযত করবেন। [সম্পাদক]
[6] মুসনাদ আহমাদ: ১৫২৬৫। হাসান সূত্রে বর্ণিত।
[7] আহমাদ: ৬৬২৬।
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক উম্মতের ওপর তা লিখে দিয়েছেন এবং তাদের উপর তা ফরয করেছেন।
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩)আর যদি এ সিয়াম সাধনা এমন একটি মহান ইবাদত না হতো যার দ্বারা আল্লাহর ইবাদত করা ব্যতীত সৃষ্টিকুল অমুখাপেক্ষী হতে পারে না, আর তার উপর ব্যাপক সওয়াবের বিষয়টি নির্ভর না করত তবে আল্লাহ সকল উম্মতের ওপর তা ফরয করতেন না।
২। সিয়াম সাধনা মানুষের পাপ মোচনের একটি উন্নত মাধ্যম:
* বুখারী ও মুসলিম এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী পাপরাশী ক্ষমা করে দেয়া হবে”।[1]অর্থাৎ আল্লাহর ওপর ঈমান ও সিয়াম ফরয হওয়াকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে সিয়ামের প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় এ বিধান পালন করলেই কেবল উপরোক্ত ফযীলত পাওয়া যাবে। সিয়াম ফরয হওয়াতে বিরক্ত হওয়া এবং সিয়ামের পুরস্কারের ব্যাপারে কোনোরূপ সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। এভাবে সিয়াম পালন করলেই আল্লাহ তা‘আলা অতীতের পাপসমূহ মার্জনা করে দেবেন।
* অনুরূপ সহীহ মুসলিমে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ»
“পাঁচ ওয়াক্তের সালাত, এক জুমআ হতে অন্য জুমআর সালাত এবং এক রমযান হতে অন্য রমযানের সিয়াম মধ্যবর্তী সময়ের সকল অপরাধের কাফফারাস্বরূপ, যদি কবীরা গুনাহ হতে বিরত থাকে”।[2]৩। সিয়াম পালনকারীর প্রতিদান কোনো সংখ্যা দ্বারা সীমিত করা হয় নি, বরং সিয়াম পালনকারীকে তার সীমাহীন প্রতিদান দেয়া হবে:
* বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلَّا الصِّوْمَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ، فَلَا يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ: إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ، يَوْمَ الْقِيَامَةِ، مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا: إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ بِفِطْرِهِ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ»
“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সিয়াম ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য, কারণ তা কেবল আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। যদি তোমাদের কেউ সিয়াম পালন করে, তাহলে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, তবে সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন, নিশ্চয়ই সিয়াম পালনকারীর মুখের না-খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশক আম্বরের চেয়েও অধিক প্রিয়। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে-একটি যখন সে ইফতার করে, অন্যটি যখন সে তাঁর রব আল্লাহর দিদার লাভ করবে তখন আনন্দ প্রকাশ করবে।”[3]* মুসলিম শরীফের অন্য বর্ণনায় রয়েছে:
«كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجلِي»
“প্রত্যেক আদম সন্তানকে তার নেক আমল দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তা অবশ্য সিয়ামের প্রতিদান ছাড়া; কারণ সিয়াম আমার জন্য আর আমিই তার প্রতিদান দেব। কেননা আমার কারণে সিয়াম পালনকারী তার যৌনকার্য ও আহার বর্জন করে থাকে।”[4]এ তাৎপর্যপূর্ণ হাদীসটি বিভিন্ন দিক থেকে সাওমের ফযীলতের ওপর প্রমাণ বহন করছে:
প্রথম দিক: আল্লাহ তা‘আলা সকল ইবাদতের মধ্য থেকে সাওমকে নিজের জন্য খাস করেছেন। কারণ সাওম আল্লাহর কাছে একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। সাওমকে আল্লাহ ভালবাসেন। সাওমের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি ইখলাস প্রকাশ পায়। কারণ এটা বান্দা ও তার রবের মাঝে এমন এক গোপন ভেদ যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানতে পারে না। কেননা সিয়াম পালনকারী ইচ্ছা করলে মানবশূন্য জায়গা বা এলাকায় আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তু আহার করতে পারেন কিন্তু তিনি তা করেন না। কারণ তিনি জানেন তার একজন রব রয়েছেন, যিনি নির্জনেও তার অবস্থা জানেন। আর তিনিই তার উপর এটা হারাম করেছেন। তাই তিনি সাওমের সাওয়াব লাভের আশায় এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার ভয়ে আহার বিহার পরিত্যাগ করেন।
এজন্যই আল্লাহ সিয়াম পালনকারী বান্দার এই ইখলাসের যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে সাওমকে সকল ইবাদত থেকে নিজের জন্য বিশিষ্ট করে নিয়েছেন। তাই তো তিনি বলেছেন,
«يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي».
“আমার বান্দা আমার কারণে যৌনকাজ ও আহার পরিত্যাগ করে থাকে।”আর এ বিশিষ্টকরণের উপকারিতা দৃশ্যমান হবে কিয়ামত দিবসে। যেমনটি সুফিয়ান ইবন ‘উয়াইনাহ রহ. বলেন:
إذا كان يوم القيامة يحاسب الله عبده ويؤدي ما عليه من المظالم من سائر عمله حتى إذا لم يبق إلا الصومُ يتحمل الله عنه ما بقي من المظالم ويدخله الجنة بالصوم.
‘যখন কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার বান্দার হিসাব নেবেন এবং বান্দার সব আমল থেকে তার পক্ষ থেকে অন্যের উপর করা জুলুমের বিনিময় মিটিয়ে দিবেন। অবশেষে যখন সিয়াম ছাড়া তার অন্য কোনো আমল থাকবে না তখন আল্লাহ তাঁর পক্ষ হতে সব জুলুমের বিষয়টি নিজের দায়িত্বে নিয়ে বান্দাকে শুধু সিয়ামের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’[5]দ্বিতীয় দিক: সাওম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: «وأنا أجزي به» ‘সাওমের প্রতিদান আমি নিজে দেব।’ সাওমের প্রতিদানকে আল্লাহ তাঁর স্বীয় সত্তার প্রতি সম্পর্কযুক্ত করলেন। কারণ অন্যান্য নেক আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ করে দেয়া হবে। প্রতিটি নেক ‘আমল তার দশগুণ থেকে সাতশ গুণ ও তার চেয়েও অধিকহারে দেয়া হবে। আর সাওমের ছাওয়াবের কোনো সংখ্যা গণনা না করে আল্লাহ তা‘আলা আপন সত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর আল্লাহই হলেন সবচেয়ে বড় ও মহান ইজ্জতের অধিকারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। দান দানশীল অনুপাতেই হয়ে থাকে। তাই সাওমের সাওয়াব এমন বিরাট যার কোনো হিসেব নেই।
আর সাওম হলো: আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য অবলম্বন, আল্লাহ কর্তৃক হারাম বস্তুসমূহ হতে বাঁচার ক্ষেত্রে ধৈর্য অবলম্বন এবং দেহ ও মনের দুর্বলতা এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মতো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান পালনে ধৈর্য ধারণ করার নামান্তর।
* সুতরাং সাওমের মধ্যে ধৈর্য্যের প্রকারত্রয়ের সবই একত্র হয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা সবর সম্পর্কে বলেছেন:
﴿ إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ﴾ [الزمر: ١٠]
‘নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান হিসেব ছাড়া পূর্ণ করে দেয়া হয়।’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১০)তৃতীয় দিক: সাওম ঢাল স্বরূপ। অর্থাৎ তা সিয়াম পালনকারীকে অনর্থক কথাবার্তা ও অশ্লীল সংলাপ হতে রক্ষা করে। এ জন্যই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ»
‘তোমাদের কেউ সাওম দিবসে থাকলে সে যেন অশ্লীল ভাষায় কথা না বলে এবং চিৎকার করে বাক্য বিনিময় না করে।’* আর সিয়াম তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকেও রক্ষা করবে। যেমন ইমাম আহমদ রহ. জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাসান সনদে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّمَا الصِّيَامُ جُنَّةٌ، يَسْتَجِنُّ بِهَا الْعَبْدُ مِنَ النَّارِ»
‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ যার দ্বারা সিয়াম পালনকারী নিজেকে জাহান্নাম হতে বাঁচাতে পারে।’[6]চতুর্থ দিক: সিয়াম পালনকারীর মুখের না খাওয়া জনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মেসকের সুগন্ধি হতেও প্রিয়। কারণ এ গন্ধ রোযার কারণে হয় তাই তা আল্লাহর কাছে সুগন্ধি ও প্রিয় বলে বিবেচিত হয়। এটা আল্লাহর কাছে সিয়ামের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রমাণ। আল্লাহর আনুগত্যের মধ্য দিয়ে সিয়াম পালিত হয় বলেই রোযাদারের মুখের গন্ধ মানুষের কাছে অপছন্দনীয় হলেও আল্লাহর কাছে তা সুপ্রিয় ও পছন্দনীয় হয়।
পঞ্চম দিক: সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে। একটি আনন্দ ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহর দীদার লাভের সময়।
ইফতারের সময় আনন্দ: ‘সিয়াম পালনকারী সর্বোত্তম নেক আমলের অন্যতম ইবাদত সাওম সম্পন্ন করার কারণে আল্লাহ তার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন এ জন্য আনন্দ প্রকাশ করে।
কারণ বহু মানুষ এমন রয়েছে যারা এ অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে; কেননা তারা সাওম পালন করে নি। বরং পানাহার ও স্ত্রী সহবাস যা আল্লাহ তার জন্য অন্য অবস্থায় হালাল করেছেন কিন্তু সাওম অবস্থায় হারাম করেছেন, তা দিয়ে (অবৈধ) আনন্দ-উদযাপনে লিপ্ত।
আল্লাহর দিদার লাভের সময় আনন্দ: ‘যখন একজন সাওম পালনকারী তার অতি দরকারী মুহূর্তে আল্লাহর কাছ থেকে পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে তখন সাওমের কারণে আনন্দ প্রকাশ করবে। যখন বলা হবে:
«أَيْنَ الصَّائِمُونَ لَيَدْخُلُوا الجنة مِنْ بَاب الريان الذي لاَ يَدْخُلُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ».
‘সাওম পালনকারীরা কোথায়? তারা রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে যেন জান্নাতে প্রবেশ করে, ওই দরজা দিয়ে সাওম পালনকারীরা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।উপরোক্ত হাদীসে সাওম পালনকারীর জন্য একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে কিংবা তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চায় সে তার অনুরূপ ভূমিকা নেবে না। যাতে না গাল-মন্দ ও সংঘর্ষ বেড়ে যায়, আবার নীরবতা অবলম্বন করে নিজেকে দুর্বল হিসেবেও প্রকাশ করবে না। বরং বলবে ‘আমি তো রোযাদার।’ যাতে ইঙ্গিত করা হয় যে, প্রতিশোধ গ্রহণে অক্ষমতার জন্য নয়, বরং সাওমের সম্মানার্থে ঐ ব্যক্তির অনুরূপ আচরণে সে লিপ্ত হবে না। আর এভাবে ঝগড়া-বিবাদ ও সংঘাত বন্ধ হয়ে যাবে।
﴿ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِي بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُۥ عَدَٰوَةٞ كَأَنَّهُۥ وَلِيٌّ حَمِيمٞ ٣٤ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٣٥ ﴾ [فصلت: ٣٤، ٣٥]
‘তুমি উত্তম পন্থায় প্রত্যুত্তর করো। ফলে তোমার সাথে এবং যার সাথে তোমার শত্রুতা রয়েছে সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যায়। ধৈর্যশীল ব্যতিরেকে কেউ তা করতে সক্ষম হয় না এবং ভাগ্যবান ব্যক্তি ছাড়া কেউ তা লাভ করতে পারবে না।’ (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৪-৩৫)৪. সিয়াম পালনকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সিয়াম সুপারিশ করবে:
আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يَقُولُ الصِّيَامُ: أَيْ رَبِّ، مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ، فَشَفِّعْنِي فِيهِ، وَيَقُولُ الْقُرْآنُ: مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ، فَشَفِّعْنِي فِيهِ ، قَالَ:
«فَيُشَفَّعَانِ»
‘সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার ও যৌনাচার হতে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি রাতের ঘুম থেকে তাকে বিরত রেখেছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’[7]«فَيُشَفَّعَانِ»
প্রিয় ভাইয়েরা! সিয়ামের উল্লেখিত ফযীলত ওই সকল ব্যক্তির জন্য, যারা গুরুত্বসহ এবং আদবের সঙ্গে সিয়াম পালন করে। নিজেদের সিয়ামকে নিখুঁত রাখতে এবং তার বিধিবিধান পালনে চেষ্টা করুন আর আপনারা নিজেদের সাওমে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সিয়াম সংরক্ষণ করুন, সিয়ামকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করুন এবং আমাদের, আমাদের পিতা-মাতা ও মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন।আর আল্লাহ সালাত ও সালাম প্রদান করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।
[1] বুখারী: ৩৮; মুসলিম: ৭৬০।
[2] মুসলিম: ২৩৩।
[3] বুখারী: ১৯০৪; মুসলিম: ১১৫১।
[4] মুসলিম: ১১৫১।
[5] মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/৭। অর্থাৎ সিয়াম দ্বারা জুলুমের প্রতিকার করবেন না। সেটাকে ব্যক্তির অক্ষয় আমল হিসেবে হেফাযত করবেন। [সম্পাদক]
[6] মুসনাদ আহমাদ: ১৫২৬৫। হাসান সূত্রে বর্ণিত।
[7] আহমাদ: ৬৬২৬।
পড়ুন: রমযান মাসের ৩০ আসর
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)