• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ সন্ত্রাসবাদ : ইসলামের দিকে শ্যেনদৃষ্টি

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,566
Credits
2,602
ভূমিকা

সন্ত্রাস হল ত্রাসের বর্ধিত রূপ। ভয় দেখিয়ে বা আতঙ্কগ্রস্ত করে মানুষের কাছ থেকে কিছু আদায় বা মানুষকে বশীভূত করার নীতি। এর সহজ ও সাধারণ প্রকাশ পেশীশক্তি প্রদর্শনের মধ্যে। সন্ত্রাস বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সমস্যা। পাশ্চাত্য বিশ্ব নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মতৎপরতাকে ঢাকার জন্য ইসলামকে দোষারোপ করে থাকে, যা সত্যকে ঢাকার অপচেষ্টা মাত্র। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা হল।

সন্ত্রাসের পরিচয় :

সন্ত্রাস এমনই একটি সামাজিক ব্যাধি, যার কোন সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নিরূপণ করা কঠিন। সন্ত্রাস হল, সঙ্ঘবদ্ধভাবে ভয় দেখিয়ে বশ মানানোর নীতি। ঞবৎৎড়ৎরংঃ বা সন্ত্রাসী, ঞবৎৎড়ৎরংব বা সন্ত্রাসিত করা বা ভয় দেখিয়ে শাসন করাকেও সন্ত্রাস বলে।[১] সন্ত্রাসের আরবী প্রতিশব্দ হল ارهاب-رهب-رعب ইত্যাদি।[২] الإرهاب (আল-ইরহাব) অর্থ কাউকে ভয় দেখানো বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করা।[৩] পবিত্র কুরআনে ভয় অর্থে এ শব্দের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।[৪]

পারিভাষিক অর্থে সন্ত্রাস হল, যে কোন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অত্যাচার, হত্যা প্রভৃতি হিংসাত্মক ও ত্রাসজনক পথ বেছে নেয়া, রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য সংঘবদ্ধভাবে ভয় দেখিয়ে বশ মানানো নীতি অবলম্বন করা।[৫]

যায়েদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু হাদী আল-মাদখালী বলেন,

الإرهاب كلمة مبني لها معنى ذو صور متعددة يجمعها الإخافة الترويع للأمنين وقد تجاوز الإخافة والترويع إلى إزهاق الأنفس البربئة وإتلاف الأموال المعصومة أو نهبها وهتك الأعراض المصونة وشق عصا الجماعة​

‘ইরহাব বা সন্ত্রাস একটি প্রতিষ্ঠিত শব্দ, যার অনেক অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে শামিল হচ্ছে নিরপরাধ নির্দোষ মানুষকে ভয় দেখানো ও শঙ্কিত করা। কখনো নিরীহ ব্যক্তিবর্গকে হত্যার সীমাহীন ভীতি প্রদর্শন, সুরক্ষিত সম্পদ বিনষ্ট বা লুট, নেক্কার নারীর সম্ভ্রমহানি করা, মুসলিম জাতির ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করা বা একতা বিনষ্ট করা’।[৬]

The New Encyclopaedia Britannica- তে বলা হয়েছে, Terrorism, the systematic use of violence to create a general climate of fear in a population and thereby to bring about a particular political objective. ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জনগণের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করার সুসংগঠিত পন্থাই হচ্ছে ‘সন্ত্রাসবাদ’।[৭]

মার্কিন সরকারের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (FBI) -এফ. বি. আই-এর মতে ‘সন্ত্রাস’ হল- Terrorism is the unlawful use of force or violence against person or property to intimidate or coerce a government. The civilian population or any segment there of in furtherance of political of social objectives. অর্থাৎ ‘সামাজিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে কোন সরকার, বেসরকারী জনগণ বা অন্য যেকোন অংশকে ভীতি প্রদর্শন বা দমনের জন্য ব্যক্তিবর্গ বা সম্পদের উপর অবৈধ শক্তি প্রয়োগ বা সহিংস ব্যবহারকে ‘সন্ত্রাস’ বলা হয়’।[৮]

১৯৮৯ সালে আরবদেশ সমূহের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ প্রদত্ত সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘সহিংসতা সৃষ্টিকারী বা হুমকি-ধমকি প্রদানকারী এমন সব কাজ যা দ্বারা মানবমনে ভীতি আতঙ্ক ভয় ও ত্রাস সৃষ্টি হয়। তা হত্যাকা-, ছিনতাই, অপহরণ, গুপ্তহত্যা, পণবন্দী, বিমান ও নৌজাহাজ ছিনতাই বা বোমা বিস্ফোরণ প্রভৃতির যে কোনটির মাধ্যমে হোক না কেন। এছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাধন ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংঘটিত যেসব কাজ ভীতিকর অবস্থা ও পরিবেশ, নৈরাজ্য, বিশৃংঙ্খলা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে (তাও সন্ত্রাস)।[৯]

সন্ত্রাসের উদ্ভব

সন্ত্রাসের ইতিহাস অতি প্রাচীন। প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে ইহুদীরা বিভিন্ন উৎসবে, জনবহুল স্থান কিংবা বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে রোমান দখলদাদের হত্যা করত। তারা রোমান দখলদার, তাদের ইহুদী দোসর ও সহায়তাকরীদের প্রতি এসব গুপ্ত হত্যাকা-ের মাধ্যমে হুমকি ও ত্রাস ছড়িয়ে দিত। ১০৯০ সাল থেকে ১২৭২ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ক্রুসেডের সময় গুপ্ত ঘাতকরা একই কৌশল অবলম্বন করেছিল। ফ্রান্সে ১৭৮৯-৯৯ সালে ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন সময়ে আধুনিক সন্ত্রাসবাদের উদ্ভব হয় বলা যায়। এর পূর্ব পর্যন্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কেবল ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার নিরীখে পরিচালিত হত। অষ্টদশ শতকের বিপ্লবী চিন্তাচেতনা জাতীয়তাবাদ, মাক্সবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রসারের পাশাপাশি সন্ত্রাসের চেহারা ও প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকে।[১০]

ফরাসি বিপ্লবের শেষ দিকে ও ১৮৭৮-৮১ সালে রাশিয়ায় গণসংগঠনের দ্বারা আধুনিক সন্ত্রাসবাদ প্রধানত রাজতন্ত্র বিরোধী রূপ পরিগ্রহ করে বিপ্লবীদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ঐ সরকার বিরোধী অবস্থা পরবর্তী সন্ত্রাসবাদীদের জন্য মডেল হিসাবে অনুসৃত হয়। রাষ্ট্রীয় শোষণের কাজে ব্যবহৃত বা প্রতিনিধিত্বকারীদেরকে বিপ্লবীরা লক্ষ্য বস্তু হিসাবে বেছে নিত এবং তারা রাষ্ট্রীয় বৈষম্যকে জনগণের নিকট উপস্থাপন করতে ব্যাপক প্রচার-প্রপাগা-া চালাত।[১১]

ঊনিশ শতকের শেষে রুশ বিপ্লবীরা যথা- জার রাজবংশের শাসনের বিরূদ্ধে সহিংসতা শুরু করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ ব্যাপক পরিচিত লাভ করে।[১২] এ সময়ে জনৈক সন্ত্রাসবাদী সদস্য ১৮৮১ সালের মার্চে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে হত্যা করে। এরপর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে থাকে।[১৩]

জার্মানীর নাৎসীবাদের মেইন হোফগ্যাং এবং ইতালীর ‘রেড ব্রিগেড লেফট উইং ভায়োলেন্স’-এর জবাবে ‘নিও সাজি’ ও ‘নিও ফ্যাসিস্টদের রাইট উইং’ সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।[১৪]

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রথম সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু হয় ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে। যেসব সংগঠন সে সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালায়, তন্মধ্যে হাগনাছ, লোছামে হেরাত ইসরাঈল বা স্টার্নগ্যাং উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ‘ইরগুণ জাই লিউমি’ও ছিল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ইসরাঈলের এক সময়কার প্রধানমন্ত্রী মেনাচিম বেগিম ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে ‘ইরগুন’। আইজ্যাক শামিরও এই গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য ছিল। চল্লিশের দশকে এসব সংগঠন আরব ও ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে চরম সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়েছিল। হাগনার দুই সদস্য মিসরের কায়রোয় আবাসিক ব্রিটিশ মন্ত্রী লর্ড ময়েনকে খুন করেছিল।[১৫]

উল্লেখ্য যে, অষ্টদশ শতাব্দী থেকে উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদ বলে আসলেও স্বতন্ত্রপন্থা ও মতাদর্শরূপে সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে তা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর মধ্যবর্তী সময়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখল করে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সেখানে ২৩৭৯ টি সন্ত্রাসী ঘটনা সংঘটিত হয়, যা ছিল সারা বিশ্বের সন্ত্রাসী ঘটনার ৩৬.৭৫ শতাংশ। বিশ্বের শক্তিধর সা¤্রাজ্যবাদী চক্রের মুসলিম দেশগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তারের কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশেও চরমপন্থীদের উদ্ভব ঘটে।[১৬]

সন্ত্রাসের দায়ভার : ইসলাম ও মুসলিমদের দিকে শ্যেনদৃষ্টি

একথা সর্বজনবিদিত যে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলিমদের বিরূদ্ধে সন্ত্রাসের হিংস্র থাবা শতাব্দির পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। নতুনভাবে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ চলছে। ইসলামকে সহিংস ও সন্ত্রাসী ধর্ম এবং মুসলিম জাতিকে সন্ত্রাসী জাতি হিসাবে চিহ্নিত করে নির্মূল করার এক গভীর ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চলছে বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশের দিকে লক্ষ্য করলে বিষয়টি আমাদের নিকট দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।

আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর মুসলিমরা এ হামলা করেছে বলে সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করা হল। কিন্তু অদ্যাবধি বিষয়টির কোন সুষ্ঠু ও যথাযথ তদন্ত হল না। হামলা কারা করেছে তাও প্রমাণিত হল না। অথচ এই হামলার মিথ্যা অজুহাতে দখল করে নেয়া হল স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম ভূ-খণ্ড আফগানিস্তানকে। ইরাকে জীবানু অস্ত্র রয়েছে এই মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে দেশটির উপর দশ বছর অর্থনৈতিক অবরোধ রাখা হয়। ফলে বিনা চিকিৎসায় ও শিশু খাদ্যের অভাবে তথাকথিত মানবাধিকারের রক্ষক বিশ্বমোড়লদের চোখের সামনে নিহত হল লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ ইরাকি শিশু। শুধু তাই নয়, ব্যাপক গণবিধংসী অস্ত্র থাকার ডাহা মিথ্যা অজুহাত তুলে দখল করে নেয়া হল মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির হাজার বছরের লীলাভূমি এই দেশটিকে। নির্বিচারে লাখ লাখ নিরীহ নিরপরাধ মানুষের রক্ত ঝরানো হল। সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের মহা উৎসব চালালো। আর বিশ্ববিবেক কেবল তা নীরবে প্রত্যক্ষ করল।

একইভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তারা নাইজেরিয়ার গ্যাস লুট করেছে, সুদানের তেল সম্পদ গ্রাস করেছে, স্বর্ণ ও হিরক লুণ্ঠনে মেতে উঠেছে। ঐ সাম্্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা ফিলিস্তীন, চেচনিয়া, বসনিয়া কসোভা, কাশ্মীর, গুজরাট, উজবেকিস্তান, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া সর্বত্র মুসলিম জাতি নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রে এবং বোমার আঘাতে মুসলিম ভূ-খণ্ড জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে, বুলডোজারের নীচে ফিলিস্তীনী, মায়ানমার শিশু, নারী-পুরুষদের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। ইরাকের আবু গারীব কারাগারে বন্দীদের গগণবিদারী আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেউ তাদেরকে বলছেনা সন্ত্রাসী, মানাবাধিকার লংঘনকারী। অথচ স্বাধীনতাকামী মুসলিমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করলে তাদেরকে বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী।

আমরা ইতিহাসের আলোকে বিষয়টি আরো একটু খতিয়ে দেখতে চাই যে, সন্ত্রাসের অভিযোগ শুধু ইসলাম ও মুসলিম জাতির উপর করা কতটা যুক্তিযুক্ত? তার কয়েকটি ঘটনা জাতির সামনে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।

১৭৯০ সালে ফরাসী বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের জেকোরিন পার্টি কর্তৃক সে দেশের শাসন ব্যবস্থাকে ‘রেন অব টেরর’ বা সন্ত্রাসের শাসন বলা হত। ১৭৯০-১৯৯৩ পর্যন্ত এটা অব্যহত ছিল। তারা হাজার বিরুদ্ধবাদীদের গিলোটিনে হত্যা করে। ৫ লাখ মানুষকে গিলোটিনে কোন না কোন শাস্তি দেয়া হয় এবং ৪০ হাজার লোককে দেয়া হয় মৃত্যুদ-। ১৯৬৮ সালে গুয়াতেমালাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিহত হন। ১৯৯৫ সালের ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র-এর ওকলাহোমার ফেডারেল ভবনে বোমা হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়। এই হামলা চালিয়ে ছিল দক্ষিণপন্থী একটিভিস্ট, টিমোসি ও টেরি। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে ইহুদীরা ২৫৯টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটায়। এসব ঘটনায় ইরগুন, স্টার্নগ্যাং ও হাগনাহ নামক ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো জড়িত ছিল। ১৯৯৮ সালে ‘আই আর এ’ ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ‘আই আর এ’ একশ’ বছর যাবৎ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সালে এরাই বিবিসি ভবনে বোমা হামলা চালায়। ক্যাথলিক ‘আই আর এ’ বিভিন্ন ঘটনায় শত শত মানুষকে হত্যা করেছে তবুও তাদেরকে ক্যাথলিক সন্ত্রাসী বলা হয় না।

যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে অমানবিক বোমা হামলা চালিয়ে যে লক্ষ লক্ষ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করল সেটা কি সন্ত্রাস নয়? যুক্তরাষ্ট্র যখন বৃটিশদের বিরূদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় তখন বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন জর্জ ওয়াশিংটনকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করেছিল।[১৭] এসব ঘটনার পরেও মুসলিম জনসাধারণকে কেবল সন্ত্রাসী জঙ্গী ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করা হয়। ভারতের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে যে ক্ষতি সাধন করল সেটা কি সন্ত্রাস নয়? এছাড়া ভারতে মাওবাদী উলফা সন্ত্রাসী রয়েছে। নেপালেও মাওবাদী সন্ত্রাসী বিদ্যমান। তাছাড়া ২০০২ সালে গুজরাটে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে গণহত্যা সংঘটিত হয়, যাতে ৫ সহ¯্রাধিক মুসলিমকে হত্যা করা হয় এবং হাজার হাজার মুসলিম মহিলাদেরকে তাদের স্বামী-সন্তানদের সামনে ধর্ষণ করা হয়। গুজরাটের এই গণহত্যায় টুইন টাওয়ারে নিহত মানুষের চেয়ে অনেক বেশী মুসলিম নিহত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এডলফ হিটলার কর্র্তৃক ৬ মিলিয়ন ইহুদী হত্যা বিংশ শতাব্দীতে মানবতার বিরূদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ এবং বর্তমানেও আমরা কসোভার বুকে আলবেনিয়ানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি। যার কিছু পূর্বে বসনিয়া-হার্জেগোভিনাতেও শত-সহ¯্র মুসলিম গণহত্যার শিকার হয়েছে। অথচ ইউরোপীয়ানদের দ্বারা সংঘটিত এ সকল কর্মকা- কখনই ইউরোপীয় বা খ্রিষ্টীয় সন্ত্রাস হিসাবে বর্ণনা করা হয় না।

মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তীনের কিশোর ও বালকরা যখন অন্যায়-অবিচার, যুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে পাথর ছুড়ে মারে, তখন তা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসাবে অভিহিত হয়। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক ফিলিস্তীনীদের পাথরের জবাবে যখন প্রশিক্ষিত ও প্রাপ্ত বয়স্ক ইসরাঈলী সৈন্যরা নৃশংসভাবে গুলি চালিয়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করে, তখন তা হয় ঝঊখঋ-উঊঋঊঘঈঊ বা আত্মরক্ষা বলে আখ্যায়িত ও সমর্মিত। যত দোষ নন্দঘোষের মত সব দোষ অভিযোগ চাপানো হয় মুসলিম উম্মাহর উপর।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কিছু চিত্র আমরা মিশরে প্রখ্যাত বৃদ্ধিজীবি মুহাম্মাদ কুতুবের ভাষায় উল্লেখ করতে চাই। তিনি লিখেছেন, ‘পোনে যে সব ইনকুইজিসন (খৃষ্ট ধর্মীয়) আদালত স্থাপিত হয়েছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদেরকে সে দেশ থেকে উৎখাত করা। ঐ সকল কোটের মাধ্যমে সেখানে মুসলিমদের উপর যে ধরনের অত্যাচার করা হয়েছিল এর আগের ইতিহাসের তার নজির মেলে না। তারা জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছিল, আঙ্গুলের নখ টেনে তুলেছিল, চোখ খুঁচিয়ে তুলে ফেলেছিল এবং হাত-পা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একে একে কেটে ফেলেছিল। এ ধরণের অত্যাচার-নির্যাতনের দ্বারা তারা লোকদেরকে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল। খ্রিষ্টানদের প্রতি কি কোন মুসলিম রাষ্ট্রে এ ধরণের অত্যাচার হয়েছে? ইউরোপের অন্যান্য এলাকাতেও মুসলিমদেরকে অনুরূপভাবে উৎখাত ও নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। যুগোস্লাভিয়া, আলবেনিয়া ও রুশ শাসনাধীন অন্যান্য মুসলিম দেশে মুসলিম নিধনযজ্ঞ ঘটেছে। উত্তর আফ্রিকা, সোমালিয়া, কেনিয়া, জর্জিয়া প্রভৃতি ইউরোপীয় শাসনাধীন দেশেও অত্যাচার কম হয়নি। ভারত, মালয় প্রভৃতি দেশও এদিক দিয়ে বাদ পড়েনি। এসকল এলাকায় নির্যাতন চালানো হয়েছে শান্তি-শৃঙ্খলা ও রাষ্ট্র্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার নামে।[১৮]

দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন


বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইহুদী-খ্রিষ্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধদের দ্বারা মুসলিমরা অবর্ণনীয় বর্বর অত্যাচার ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। পৃথিবীর কোথাও কোন অমুসলিম সমস্যায় পড়লে বা অত্যাচারিত হলে সারা বিশ্বের নেতারা তার সাহায্যর্থে এগিয়ে আসেন, তাকে উদ্ধারে তৎপর হন। কিন্তু কোন নিরপরাধ মুসলিম নির্যাতিত হলে মানবাধিকারের প্রবক্তারা মুখে কুলুপ এটে বসে থাকেন, টু শব্দটিও করেন না। ইহুদী, খ্রিষ্টান ও ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী শক্তির মত বৌদ্ধরাও মুসলিম নির্যাতনে পিছিয়ে নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অমুসলিম কর্তৃক মুসলিম নির্যাতন চলছে।

১. ভারত

ভারতে মুসলিমদের উপর এমন কোন নির্যাতন নেই যে তারা করেনি। যা শুনলেই শরীরের পশম শিহরে উঠে। লক্ষ লক্ষ নারী, পুরুষ ও শিশুদেরকে হত্যা করেছে। সম্প্রতিও মুসলিমদের উপর চলছে সীমাহীন অত্যাচার। ভারতে এমন ১০টি সংগঠন রয়েছে, যারা ইসলামের নাম উচ্চারণকারীদের হত্যা করে থাকে। মুসলিমদের শহীদ করা, তাদের পবিত্র স্থান মসজিদকে ধ্বংস করে মন্দির ও গীর্জা নির্মাণ, মুসলিমদের ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দেয়া, নেক্কার নারীদের সতীত্ব হরণ করা ও নিষ্পাপ বাচ্চাদের হত্যা করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এসব সংগঠন। সংগঠনগুলো হল- ১. রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ[১৯] ২. বজরং দল ৩. বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ৪. শিবসেনা ৫. ভারতীয় জনতা পরিষদ[২০] ৬. হিন্দু মহাসভা ৭. হিন্দু বানানী ৮. আরিয়া সমাজ ৯. সনাতন সমিতি ১০. কর্ম রক্ষা সমিতি।[২১]

২. মায়ানমার (বার্মা)

বৌদ্ধ প্রধান দেশ মায়ানমার (বার্মায়) বিগত অর্ধ শতাব্দী বা তারও বেশি কালব্যাপী চলছে সুপরিকল্পিতভাবে মুসলিম নিধনযজ্ঞ। উচ্ছেদ অভিযান সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। বিগত অর্ধশতাব্দীতে সেখান থেকে ১৯ লাখ মুসলিম নাগরিককে উৎখাত করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে আরাকানে ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। জীবন রক্ষার তাকীদে লক্ষাধিক আরাকানী মুসলিম বাংলাদেশে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। ২০০০ সালে ঈদুল ফিতরের সালাতের এক জামা‘আতের উপর বৌদ্ধদের আক্রমণে ২৫ জন নিরপরাধ মুছল্লী নিহত এবং শতাধিক আহত হন। সম্প্রতি মায়ানমারে নির্যাতনের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। সেদেশের সামরিক বাহিনীদের অত্যাচারে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত সেদেশে ২ হাজারের অধিক মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে আরাকান প্রদেশের ২৭টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। এর মধ্যে ৬০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ‘সানধিখান’ মসজিদও ছিল।

এছাড়া কম্বোডিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, বসনিয়া, কসোভা, শ্রীলংকা, তিব্বত, সিঙ্গাপুর, ইতালী, কাশ্মির, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া প্রভৃতি দেশে মুসলিম গণহত্যার হিংস্র ছোবল পরিচালিত হচ্ছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস এবং তার পরিণাম

পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে এমন কোন শব্দ নেই যা সন্ত্রাস ও আগ্রাসনকে সমর্থন বা উৎসাহিত করে। বরং ইসলাম সর্বদাই সন্ত্রাস, আগ্রাসন ও জঙ্গীবাদকে নিন্দা করে, ধিক্কার জানায়। সন্ত্রাসীদের জন্য কঠোর শাস্তির জোরালো ঘোষণা দেয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ الۡفِتۡنَۃُ اَشَدُّ مِنَ الۡقَتۡلِ​

‘ফিৎনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৯১)। সন্ত্রাসের বিপক্ষে ইসলামের অবস্থান সুস্পষ্ট। কুরআন মাজীদে ফিতনা ও ফাসাদ শব্দদ্বয় ব্যবহার করে সকল প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকা-কে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِہَا​

‘তোমরা দুনিয়ায় শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনের পর তাতে বিপর্যয় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি কর না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৫৬)। পৃথিবীতে সন্ত্রাস বিরাজ করুক তা আল্লাহ তা‘আলা আদৌ পসন্দ করেন না। তিনি বলেন,

وَ اِذَا تَوَلّٰی سَعٰی فِی الۡاَرۡضِ لِیُفۡسِدَ فِیۡہَا وَ یُہۡلِکَ الۡحَرۡثَ وَ النَّسۡلَ وَ اللّٰہُ لَا یُحِبُّ الۡفَسَادَ​

‘যখন সে (মুনাফিক) প্রস্থান করে, তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত্র ও জীব-জন্তুর বংশ নিপাতের চেষ্টা করে, কিন্তু আল্লাহ অশান্তি (সন্ত্রাস) পসন্দ করেন না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২০৫)।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ لَا تَقۡتُلُوا النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰہُ اِلَّا بِالۡحَقِّ​

‘আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে তোমরা যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা কর না’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৩৩, সূরা আল-আন‘আম : ১৫১)।

তিনি আরো বলেন,

مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَکَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا​

‘যে ব্যক্তি কাউকে কোন হত্যার পরিবর্তে কিংবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন কারণে হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৩২)।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُہٗ جَہَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡہَا وَ غَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِ وَ لَعَنَہٗ وَ اَعَدَّ لَہٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا​

‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানেই সে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তার উপর অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন’ (সূরা আন-নিসা, : ৯৩)। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإنَّ رِيْحَهَا تُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا​

‘যে ব্যক্তি কোন যিম্মীকে (বিনা কারণে) হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। যদিও তার সুগন্ধি চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব পর্যন্ত পাওয়া যাবে’।[২২]

عَنْ أَبِىْ بَكَرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ صلى الله عليه وسلم لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاءِ وَأَهْلَ الأَرْضِ اجْتَمَعُوْا عَلَى قَتْلِ مُسْلِمٍ لَكَبَّهُمُ اللهُ جَمِيْعًا عَلَى وُجُوْهِهِمْ فِى النَّارِ​

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আসমান-যমীনের সমস্ত অধিবাসী একত্রিত হয়ে যদি কোন একজন মুসলিমকে হত্যা করে, তবুও আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত অধিবাসীকেই মুখের উপর ভর করিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।[২৩]

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رضى الله عنه عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ ذَنْبٍ عَسَى اللهُ أَنْ يَغْفِرَهُ إِلَّا مَنْ مَاتَ مُشْرِكًا أَوْ مُؤْمِنٌ قَتَلَ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا​

আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা সকল গুনাহকে ক্ষমা করে দিবেন, শুধু ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না, যে ব্যক্তি মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে অথবা স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করে।[২৪] ইসলাম মানুষকে জান-মাল, ইয্যত আব্রু, দ্বীন ও বুদ্ধিমত্তা এই পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়েছে এবং এসব মৌলিক অধিকার বিনষ্ট করাকে হারাম করেছে।[২৫] বিদায় হজ্জের ভাষণে এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য তোমাদের অপর ভাইয়ের রক্ত, ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান অর্জনের এই দিনের মত, এমাসের মত এবং এ শহরের মতই হারাম।

উপসংহার

পরিশেষে বলতে চাই, হে অমুসলিম শক্তি! মুসলিমদের উপর তোমাদের সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ কর। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন তোমাদেরকে ধরাশয়ী হতেই হবে। কারণ ইসলাম চির বিজয়ী ধর্ম। অতএব সাবধান!


তথ্যসূত্র :
[১]. ড. মো : তবিবুর রহমান, উচ্চ মাধ্যমিক ইসলাম শিক্ষা, প্রথম পত্র, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী (ঢাকা : ২৬ বাংলাবাজার, ১ম প্রকাশ জুন-২০১৯), পৃ. ১৬৫।
[২]. আল-মানার বাংলা-আরবী অভিধান, সম্পাদক, আবু তাহের মেসবাহ (ঢাকা : মোহাম্মাদী লাইব্রেরী, ১৯৯০ খৃ.), পৃ. ১২৪২।
[৩]. আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (দিল্লী : দারুল ইশা‘আতিল ইসলামিয়্যা, তাবি) পৃ. ৩৭৬।
[৪]. সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪০, আল-‘আরাফ : ১৫৪, আল-আনফাল : ৬০; আন-নাহল : ৫১, আল-আম্বিয়া : ৯০।
[৫]. সংসদ বাঙ্গালা অভিধান, পৃ. ৬৬১; বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, পৃ. ৫৪১।
[৬]. যায়েদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু হাদী আল-মাদখালী, আল ইরহাব ওয়া আছারুহু আলাল আফরাদ ওয়াল উমাম (দাম্মাম : দারু সাবীলিল মুমিনীন, ১ম প্রকাশ, ১৪১৮ হি.), পৃ. ১০।
[৭]. The New Encyclopedia Britannica (USA: 2002), Vol. 11, P. 650.
[৮]. ফোরকান আলী, সন্ত্রাসবাদ : ক্ষমতার লড়াইয়ের হাতিয়ার, দৈনিক ইনকিলাব, ২৫ জুন ২০০৭, পৃ. ১৪; ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, জিহাদ ও জঙ্গীবাদ : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ পৃ. ৩৮।
[৯]. আল-ফুরকান, এপ্রিল-২০০৮, ৪৮৬তম সংখ্যা, পৃ. ৪১।
[১০]. দৈনিক ইনকিলাব, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৭, পৃ. ১৫।
[১১]. দৈনিক ইনকিলাব, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৭, পৃ. ১৫।
[১২]. দৈনিক ইনকিলাব, ২৫ জুন ২০০৭, পৃ. ১৪।
[১৩]. দৈনিক ইনকিলাব, ২১ জুলাই ২০০৭, পৃ. ১৪।
[১৪]. জামালউদ্দিন বারী, সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস : আত্মঘাতী হামলা ও একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, দৈনিক ইনকিলাব, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৭, পৃ. ১৫।
[১৫]. আফজাল আনাম, মার্কিন গণমাধ্যম : প্রচারনা স্টাইল, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০০৫, পৃ. ৮।
[১৬]. মাসিক আল-ফুরকান, ১০১তম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর-১৯৯৮, পৃ. ৬।
[১৭]. দৈনিক ইনকিলাব, ২১ জুলাই ২০০৭, পৃ. ১৪।
[১৮]. ইসলাম দি মিস আন্ডার স্টুন্ড রিলিজিয়ান, পৃ. ৩১২-৩১৩।
[১৯]. রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আর এস এস)-এর ভারতব্যাপী ৪৫ হাজার শাখা রয়েছে। এদের অগাধ সম্পদশালী দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং ৭০ লাখ স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। দ্র. দৈনিক প্রথম আলো, ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮, পৃ. ১০।
[২০]. ভারতীয় জনতা পরিষদ (বিজেপি)-এর নেতা এল. কে আদভানীর প্ররোচনায় ১৯৯২ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসে এবং ২০০২ সালে গুজরাটে ঘটে মুসলিম গণহত্যা। দ্র. দৈনিক প্রথম আলো, ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮, পৃ. ১০।
[২১]. মাসিক শাহাদত (উর্দূ) (ইসলামাবাদ, নভেম্বর ২০০৮ খ্রি.), পৃ. ২২-২৩।
[২২]. সহীহ বুখারী, হা/৩১৬৬।
[২৩]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুছ ছগীর, হা/৫৬৫; তিরমিযী, হা/১৩৯৮; মিশকাত, হা/৩৪৬৪, সনদ সহীহ।
[২৪]. আবূ দাঊদ, হা/৪২৭০।
[২৫]. ফাতাওয়াল আইম্মা দিন-নাওয়াযিনিল মুদলাহুম্মাহ, পৃ. ১২, ১৩৭।
[২৬]. সহীহ বুখারী, হা/১৭৪১; সহীহ মুসলিম, হা/১৬৭৯।


অধ্যাপক মো. আকবার হোসাইন​

 
Last edited:
COMMENTS ARE BELOW
Top