সন্তান-সন্ততি হচ্ছে দুনিয়াবী জীবনের সৌন্দর্য। তাদেরকে ঘিরেই বাবা-মার নানা স্বপ্ন দেখে থাকে। আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকার সার্বিক চেষ্টা অব্যাহত রাখে। বিধায় নাবালক বয়সে তাদের মৃত্যুবরণ করা প্রত্যেক বাবা-মার জন্য হয় বেদন-বিধুর এক কঠিন পরিস্থিতি। যা সহজে হজম করা যায় না। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে উত্তম সবর করতে পারলে প্রতিদানও অনেক বেশি পাওয়া যায়। এমর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
শুরাহবীল ইবনু শুফ‘আহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা ঊতবা ইবনু আব্দুস সুলামী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলমানের অপ্রাপ্ত বয়স্কের তিনটি সন্তান মারা যায় (আর তাতে সে ধৈর্যধারণ করে, তাহলে) সে জান্নাতের আটটি দরজার সবকটি দরজার সাক্ষাত লাভ করবে এবং যে কোন দরজা দিয় প্রবেশ করতে পারবে।[১] উল্লেখ্য যে, উক্ত সন্তান তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কমবেশী হতে পারে।[২]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কতক আনছারী মহিলাকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান মারা যাবে আর সে ধৈর্যধারণ করবে এবং নেকীর আশা রাখবে নিশ্চয় সে জান্নাতে যাবে। এসময় একজন মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যদি দুইজন মারা যায়? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, দু’জন মারা গেলেও সে জান্নাতে যাবে’।[৩]
আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, (মুসলিম নারীদের লক্ষ্য করে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যকার যে নারী তার সন্তানদের মধ্য হতে তিনটি সন্তান আল্লাহর নিকট পাঠিয়েছে, তারা তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশের প্রতিবন্ধক হবে’ (অর্থাৎ তারা তাকে জাহান্নামে যেতে দিবে না)। এ সময় একজন নারী বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! কেউ যদি দু’জন সন্তান পাঠায়? সে বাক্য দু’বার বলল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, দু’জন পাঠালেও, দু’জন পাঠালেও, দু’জন পাঠালেও’।[৪]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান মারা গেলে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না’।[৫]
কুররা মুযানী হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আসত এবং তার সাথে তার একটি ছেলেও থাকত। একদিন নবী করীম (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তাকে (ছেলেকে) ভালোবাস? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহর পর আপনাকে ভালোবাসার মতই আমি তাকে ভালোবাসি। অতঃপর একদিন নবী করীম (ﷺ) ছেলেটিকে দেখতে পেলেন না। জিজ্ঞেস করলেন, অমুকের ছেলেটি কোথায় গেল? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সে মারা গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘ওহে তুমি কি এটা ভালোবাসনা যে, তুমি জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে যাওনা কেন, সেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখবে। এসময় এক ব্যক্তি বলল, এই সুযোগ শুধু তার জন্য না আমাদের সকলের জন্য? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের সকলের জন্য’।[৬]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি তাকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে। তার জন্য আমি অত্যন্ত শোকার্ত হয়ে পড়েছি। আপনি কি আপনার দোস্ত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট এমন কিছু শুনেছেন, যা আমাদের মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আমাদের সান্ত¦না দিতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, মুসলিমদের ছোট সন্তানরা জান্নাতের কার্যকারক হবে। তাদের কেউ যখন তার পিতাকে পাবে, তখন তার কাপড়ের পাশ ধরে টানতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সে পৃথক হবে না’।[৭]
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানকে উঠিয়ে নিলে? তারা বলে হ্যাঁ। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন তোমরা কি তার অন্তরের ধনকে কেড়ে নিলে? তারা বলে হ্যাঁ। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তখন তারা কি বলল? ফিরিশতারা বলে, তখন তারা বলল, اَلْحَمْدُ لِلهِ এবং إِنَّا لِلهِ وَإِنَّ إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং তার নাম রাখ বায়তুল হামদ’।[৮]
আনাস ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন মুসলিমের ছেলে-মেয়ে যুবক হওয়ার পূর্বে মারা গেলে আল্লাহ তার বিশেষ রহমতের মাধ্যমে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’।[৯]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার মু‘মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নিই এবং সে ছওয়াবের নিয়তে সবর করে’।[১০]
আবূ উমামা বাহেলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যদি তুমি বিপদের প্রথম সময় ধৈর্যধারণ কর এবং নেকীর আশা রাখ, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন নেকীতে সন্তুষ্ট হব না’।[১১]
শিশুকালে সন্তান-সন্ততি মারা গেলে সর্বোত্তম ছবর করা প্রয়োজন। ইনশাআল্লাহ তাহলে তার প্রতিদান স্বরূপ নিশ্চিত জান্নাত লাভ করা যাবে।
তথ্যসূত্র :
[১]. ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬৭৬; ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর, হা/২৯৪; সহীহুল জামে‘, হা/৫৭৭২; সহীহ আত-তারগীব, হা/১৯৯৩, সনদ হাসান।
[২]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১৪৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৬৯; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হা/১৫৮১, সনদ সহীহ।
[৩]. সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৫; নাসাঈ, হা/১৮৭৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯০৩; মিশকাত, হা/১৭৩০।
[৪]. সহীহ বুখারী, হা/৭৩১০; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩১৪; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪৪; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৭৪৩; মিশকাত, হা/১৭৫৩।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/১২৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৫; তিরমিযী, হা/১০৬০; ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৩; নাসাঈ, হা/১৮৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৬৪; মিশকাত, হা/১৭২৯।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৫৬৩৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪৭; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/১৪১৭; সহীহ আত-তারগীব, হা/২০০৭; মিশকাত, হা/১৭৫৬, সনদ সহীহ।
[৭]. সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩৩৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৭৫২; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/১৪২৬৫; মিশকাত, হা/১৭৫২।
[৮]. তিরমিযী, হা/১০২১; রিয়াযুছ ছলেহীন, হা/৯২৭; সহীহ আত-তারগীব, হা/২০১২; সহীহুল জামে‘, হা/৭৯৫; মিশকাত, হা/১৭৩৬, সনদ হাসান।
[৯]. সহীহ বুখারী, হা/১৩৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৯; নাসাঈ, হা/১৮৭৩; ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৫৭; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪০; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৭৪৩; মিশকাত, হা/১৭৩০।
[১০]. সহীহ বুখারী, হা/৬৪২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩৮২; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৮৬২; কানযুল উম্মাল, হা/৬৫৬৩; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/১৪৯৭৪; মিশকাত, হা/১৭৩১।
[১১]. ইবনু মাজাহ, হা/১৫৯৭; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৩৫; ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৭৭৮৮; সহীহুল জামে‘, হা/৮১৪৩; মিশকাত, হা/১৭৫৮, সনদ হাসান।
عَنْ شُرَحْبِيْلَ بْنِ شُفْعَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَقِيَنِىْ عُتْبَةُ بْنُ عَبْدٍ السُّلَمِىُّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوْتُ لَهُ ثَلَاثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ إِلَّا تَلَقَّوْهُ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ دَخَلَ
শুরাহবীল ইবনু শুফ‘আহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা ঊতবা ইবনু আব্দুস সুলামী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলমানের অপ্রাপ্ত বয়স্কের তিনটি সন্তান মারা যায় (আর তাতে সে ধৈর্যধারণ করে, তাহলে) সে জান্নাতের আটটি দরজার সবকটি দরজার সাক্ষাত লাভ করবে এবং যে কোন দরজা দিয় প্রবেশ করতে পারবে।[১] উল্লেখ্য যে, উক্ত সন্তান তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কমবেশী হতে পারে।[২]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ لِنِسْوَةٍ مِنَ الْأَنْصَارِ لَا يَمُوْتُ لإِحْدَاكُنَّ ثَلَاثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ فَتَحْتَسِبَهُ إِلَّا دَخَلَتِ الْجَنَّةَ فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ أَوِ اثْنَيْنِ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ أَوِ اثْنَيْنِ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কতক আনছারী মহিলাকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান মারা যাবে আর সে ধৈর্যধারণ করবে এবং নেকীর আশা রাখবে নিশ্চয় সে জান্নাতে যাবে। এসময় একজন মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! যদি দুইজন মারা যায়? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, দু’জন মারা গেলেও সে জান্নাতে যাবে’।[৩]
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَا مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ تُقَدِّمُ بَيْنَ يَدَيْهَا مِنْ وَلَدِهَا ثَلَاثَةً إِلَّا كَانَ لَهَا حِجَابًا مِنَ النَّارِ فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ اثْنَيْنِ قَالَ فَأَعَادَتْهَا مَرَّتَيْنِ ثُمَّ قَالَ وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, (মুসলিম নারীদের লক্ষ্য করে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যকার যে নারী তার সন্তানদের মধ্য হতে তিনটি সন্তান আল্লাহর নিকট পাঠিয়েছে, তারা তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশের প্রতিবন্ধক হবে’ (অর্থাৎ তারা তাকে জাহান্নামে যেতে দিবে না)। এ সময় একজন নারী বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! কেউ যদি দু’জন সন্তান পাঠায়? সে বাক্য দু’বার বলল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, দু’জন পাঠালেও, দু’জন পাঠালেও, দু’জন পাঠালেও’।[৪]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلِ الله ﷺ لَا يَمُوْتُ لِمُسْلِمٍ ثَلَاثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ فَيَلِجَ النَّارَ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান মারা গেলে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না’।[৫]
عَنْ قُرَّةَ أَنَّ رَجُلًا كَانَ يَأْتِى النَّبِىَّ ﷺ وَمَعَهُ ابْنٌ لَهُ فَقَالَ لَهُ النَّبِىُّ ﷺ أَتُحِبُّهُ فَقَالَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَحَبَّك اللهُ كَمَا أُحِبُّهُ فَفَقَدَهُ النَّبِىُّ ﷺ فَقَالَ لِىْ مَا فَعَلَ ابْنُ فُلاَنٍ قَالُوا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَاتَ فَقَالَ النَّبِىُّ ﷺ لأَبِيْهِ أَمَا تُحِبُّ أَنْ لَا تَأْتِىَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ إِلَّا وَجَدْتَهُ يَنْتَظِرُكَ فَقَالَ الرَّجُلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَلَهُ خَاصَّةً أَمْ لِكُلِّنَا قَالَ بَلْ لِكُلِّكُمْ
কুররা মুযানী হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আসত এবং তার সাথে তার একটি ছেলেও থাকত। একদিন নবী করীম (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তাকে (ছেলেকে) ভালোবাস? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহর পর আপনাকে ভালোবাসার মতই আমি তাকে ভালোবাসি। অতঃপর একদিন নবী করীম (ﷺ) ছেলেটিকে দেখতে পেলেন না। জিজ্ঞেস করলেন, অমুকের ছেলেটি কোথায় গেল? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সে মারা গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘ওহে তুমি কি এটা ভালোবাসনা যে, তুমি জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে যাওনা কেন, সেখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখবে। এসময় এক ব্যক্তি বলল, এই সুযোগ শুধু তার জন্য না আমাদের সকলের জন্য? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদের সকলের জন্য’।[৬]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ إِنَّهُ قَدْ مَاتَ لِىَ ابْنَانِ فَمَا أَنْتَ مُحَدِّثِىْ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ بِحَدِيْثٍ تُطَيِّبُ بِهِ أَنْفُسَنَا عَنْ مَوْتَانَا قَالَ قَالَ نَعَمْ صِغَارُهُمْ دَعَامِيْصُ الْجَنَّةِ يَتَلَقَّى أَحَدُهُمْ أَبَاهُ أَوْ قَالَ أَبَوَيْهِ فَيَأْخُذُ بِثَوْبِهِ أَوْ قَالَ بِيَدِهِ فَلَا يَنْتَهِى حَتَّى يُدْخِلَهُ اللهُ وَأَبَاهُ الْجَنَّةَ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি তাকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে। তার জন্য আমি অত্যন্ত শোকার্ত হয়ে পড়েছি। আপনি কি আপনার দোস্ত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট এমন কিছু শুনেছেন, যা আমাদের মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আমাদের সান্ত¦না দিতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, মুসলিমদের ছোট সন্তানরা জান্নাতের কার্যকারক হবে। তাদের কেউ যখন তার পিতাকে পাবে, তখন তার কাপড়ের পাশ ধরে টানতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সে পৃথক হবে না’।[৭]
عَنْ أَبِىْ مُوسَى الْأَشْعَرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ ﷺ إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ لِمَلَائِكَتِهِ قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِىْ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ مَاذَا قَالَ عَبْدِىْ فَيَقُوْلُوْنَ حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ فَيَقُوْلُ اللهُ ابْنُوا لِعَبْدِىْ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَسَمُّوْهُ بَيْتَ الْحَمْدِ
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানকে উঠিয়ে নিলে? তারা বলে হ্যাঁ। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন তোমরা কি তার অন্তরের ধনকে কেড়ে নিলে? তারা বলে হ্যাঁ। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তখন তারা কি বলল? ফিরিশতারা বলে, তখন তারা বলল, اَلْحَمْدُ لِلهِ এবং إِنَّا لِلهِ وَإِنَّ إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং তার নাম রাখ বায়তুল হামদ’।[৮]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنَ النَّاسِ مُسْلِمٌ يَمُوْتُ لَهُ ثَلَاثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ
আনাস ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন মুসলিমের ছেলে-মেয়ে যুবক হওয়ার পূর্বে মারা গেলে আল্লাহ তার বিশেষ রহমতের মাধ্যমে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’।[৯]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى مَا لِعَبْدِى الْمُؤْمِنِ عِنْدِىْ جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلَّا الْجَنَّةُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার মু‘মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নিই এবং সে ছওয়াবের নিয়তে সবর করে’।[১০]
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ يَقُوْلُ اللهُ سُبْحَانَهُ ابْنَ آدَمَ إِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسَبْتَ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأُوْلَى لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُونَ الْجَنَّةِ
আবূ উমামা বাহেলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যদি তুমি বিপদের প্রথম সময় ধৈর্যধারণ কর এবং নেকীর আশা রাখ, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন নেকীতে সন্তুষ্ট হব না’।[১১]
শিশুকালে সন্তান-সন্ততি মারা গেলে সর্বোত্তম ছবর করা প্রয়োজন। ইনশাআল্লাহ তাহলে তার প্রতিদান স্বরূপ নিশ্চিত জান্নাত লাভ করা যাবে।
তথ্যসূত্র :
[১]. ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬৭৬; ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর, হা/২৯৪; সহীহুল জামে‘, হা/৫৭৭২; সহীহ আত-তারগীব, হা/১৯৯৩, সনদ হাসান।
[২]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১৪৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৫২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৬৯; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হা/১৫৮১, সনদ সহীহ।
[৩]. সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৫; নাসাঈ, হা/১৮৭৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯০৩; মিশকাত, হা/১৭৩০।
[৪]. সহীহ বুখারী, হা/৭৩১০; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৩১৪; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪৪; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৭৪৩; মিশকাত, হা/১৭৫৩।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/১২৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৫; তিরমিযী, হা/১০৬০; ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৩; নাসাঈ, হা/১৮৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৬৪; মিশকাত, হা/১৭২৯।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৫৬৩৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪৭; মুসতাদরাকে হাকেম, হা/১৪১৭; সহীহ আত-তারগীব, হা/২০০৭; মিশকাত, হা/১৭৫৬, সনদ সহীহ।
[৭]. সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৩৩৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৭৫২; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/১৪২৬৫; মিশকাত, হা/১৭৫২।
[৮]. তিরমিযী, হা/১০২১; রিয়াযুছ ছলেহীন, হা/৯২৭; সহীহ আত-তারগীব, হা/২০১২; সহীহুল জামে‘, হা/৭৯৫; মিশকাত, হা/১৭৩৬, সনদ হাসান।
[৯]. সহীহ বুখারী, হা/১৩৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬৯; নাসাঈ, হা/১৮৭৩; ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৫৫৭; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৪০; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৭৪৩; মিশকাত, হা/১৭৩০।
[১০]. সহীহ বুখারী, হা/৬৪২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩৮২; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৮৬২; কানযুল উম্মাল, হা/৬৫৬৩; আল-মুসনাদুল জামে‘, হা/১৪৯৭৪; মিশকাত, হা/১৭৩১।
[১১]. ইবনু মাজাহ, হা/১৫৯৭; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৩৫; ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৭৭৮৮; সহীহুল জামে‘, হা/৮১৪৩; মিশকাত, হা/১৭৫৮, সনদ হাসান।
ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
* পরিচালক, ইয়াসিন আলী সালাফী মাদরাসা, রাজশাহী।
Last edited: