‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর সন্তানের প্রতি লোকমান হাকীমের উপদেশ।

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,140
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
34,881
Credits
24,212
আপনার জিজ্ঞাসা ইসলামিক জিজ্ঞাসা ও জবাব ইসলামিক প্রশ্নোত্তর ▌ সন্তানের প্রতি লোকমান হাকীমের উপদেশ। __________________________________________ লোকমান হাকীম তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা এতই সুন্দর ও গ্রহণ যোগ্য যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনুল করীমে উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মতের জন্য তিলাওয়াতে উপযোগী করে দিয়েছেন এবং সকল মানুষের জন্য তা আদর্শ করে রেখেছেন। লোকমান হাকীম তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন তা আল্লাহ তা’আলা সূরা লোকমানের ১৩-১৯ আয়াতে উল্লেখ করেন। উপদেশগুলো নিম্নরূপ: মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ ﴾ অর্থ, “আর স্মরণ কর, যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল...।” এ উপদেশগুলো ছিল অত্যন্ত উপকারী, যে কারণে মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে লোকমান হাকিমের পক্ষ থেকে উল্লেখ করেন। ❏ প্রথম উপদেশ: শিরক না করা ____________________________ তিনি তার ছেলেকে বলেন, يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ “হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।” এখানে লক্ষণীয় যে, প্রথমে তিনি তার ছেলেকে শিরক হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। একজন সন্তান তাকে অবশ্যই জীবনের শুরু থেকেই আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাসী হতে হবে। কারণ, তাওহীদই হল, যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতার একমাত্র মাপকাঠি। তাই তিনি তার ছেলেকে প্রথমেই বলেন, আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে শরিক করা হতে বেচে থাক। যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা অথবা অনুপস্থিত ও অক্ষম লোকের নিকট সাহায্য চাওয়া বা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। এছাড়াও এ ধরনের আরও অনেক কাজ আছে, যেগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, الدعاء هو العبادة “দোআ হল ইবাদত”[1]। সুতরাং আল্লাহর মাখলুকের নিকট দোআ করার অর্থ হল, মাখলুকের ইবাদত করা, যা শিরক। মহান আল্লাহ তা‘আলা যখন তার বাণী, وَلَمْ يَلْبِسُواْ إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ “তারা তাদের ঈমানের সাথে যুলুমকে একত্র করে নি।” এ আয়াত নাযিল করেন, তখন বিষয়টি মুসলিমদের জন্য কষ্টকর হল, এবং তারা বলাবলি করল যে, আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে তার উপর অবিচার করে না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আলোচনা শোনে বললেন, ليس ذلك ، إنما هو الشرك ، ألم تسمعوا قول لقمان لابنه :يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ “তোমরা যে রকম চিন্তা করছ, তা নয়, এখানে আয়াতে যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, শিরক। তোমরা কি লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছে, তা শোন নি? তিনি তার ছেলেকে বলেছিলেন, يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ “হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।”[2] ❏ দ্বিতীয় উপদেশ: পিতামাতার প্রতি সদাচারণ ______________________________________ মহান আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ “আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে [সদাচরণের] নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে, তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন-তো আমার কাছেই।” [সূরা লোকমান: ১৪] তিনি তার ছেলেকে কেবলই আল্লাহর ইবাদত করা ও তার সাথে ইবাদতে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করার সাথে সাথে মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দেন। কারণ, মাতা-পিতার অধিকার সন্তানের উপর অনেক বেশি। মা তাকে গর্ভধারণ, দুধ-পান ও ছোট বেলা লালন-পালন করতে গিয়ে অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা ও কষ্ট সইতে হয়েছে। তারপর তার পিতাও লালন-পালনের খরচাদি, পড়া-লেখা ও ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে তাকে বড় করছে এবং মানুষ হিসেবে ঘড়ে তুলছে। তাই তারা উভয় সন্তানের পক্ষ হতে অভিসম্পাত ও খেদমত পাওয়ার অধিকার রাখে। ❏ তৃতীয় উপদেশ: আল্লাহর আনুগত্যের বিরুদ্ধে অন্য কারও আনুগত্য না করা ______________________________________ মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে মাতা-পিতা যখন তোমাকে শিরক বা কুফরের নির্দেশ দেয়, তখন তোমার করণীয় কি হবে তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ﴿وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ অর্থ, “আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না। এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে করবে সদ্ভাবে। আর আমার অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে।” [সূরা লোকমান: ১৫] আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘যদি তারা উভয়ে তোমাকে পরি-পূর্ণরূপে তাদের দ্বীনের আনুগত্য করতে বাধ্য করে, তাহলে তুমি তাদের কথা শুনবে না এবং তাদের নির্দেশ মানবে না। তবে তারা যদি দ্বীন কবুল না করে, তারপরও তুমি তাদের সাথে কোন প্রকার অশালীন আচরণ করবে না। তাদের দ্বীন কবুল না করা তাদের সাথে দুনিয়ার জীবনে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তুমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহারই করবে। আর মুমিনদের পথের অনুসারী হবে, তাতে কোন অসুবিধা নাই।’ এ কথার সমর্থনে আমি বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীও বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট ও শক্তিশালী করেন, তিনি বলেন, لا طاعة لأحد في معصية الله ، إنما الطاعة في المعروف “আল্লাহর নাফরমানিতে কোন মাখলুকের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য-তো হবে একমাত্র ভালো কাজে।”[3] ❏ চতুর্থ উপদেশ: পাপকে তুচ্ছ না ভাবা __________________________________ লোকমান হাকিম তার ছেলেকে কোন প্রকার অন্যায় অপরাধ করতে নিষেধ করেন। তিনি এ বিষয়ে তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন, মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তার বর্ণনা দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا بُنَيَّ إِنَّهَا إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُن فِي صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمَاوَاتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ “হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা [পাপ-পুণ্য] যদি সরিষা দানার পরিমাণও হয়, অত:পর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমান সমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ।” [সূরা লোকমান: ১৬] আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, অন্যায় বা অপরাধ যতই ছোট হোক না কেন, এমনকি যদি তা শস্য-দানার সমপরিমাণও হয়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা‘আলা তা উপস্থিত করবে এবং মীযানে ওজন দেয়া হবে। যদি তা ভালো হয়, তাহলে তাকে ভালো প্রতিদান দেয়া হবে। আর যদি খারাপ কাজ হয়, তাহলে তাকে খারাপ প্রতিদান দেয়া হবে। ❏ পঞ্চম উপদেশ: সালাত কায়েম করা _________________________________ লোকমান হাকিম তার ছেলেকে সালাত কায়েমের উপদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ “হে আমার প্রিয় বৎস সালাত কায়েম কর”। অর্থাৎ তুমি সালাতকে তার ওয়াজিবসমূহ ও রোকনসমূহ সহ আদায় কর। ❏ ষষ্ঠ উপদেশ: সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ______________________________________ আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ “তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ কর।” বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও, যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সাথে কোন প্রকার কঠোরতা করো না। ❏ সপ্তম উপদেশ: ধৈর্য ধারণ করা _____________________________ মহান আল্লাহ বলেন, وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ “যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার উপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর।” আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, যারা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ ও মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে এবং অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। যখন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে তখন তোমার করণীয় হল, ধৈর্যধারণ করা ও ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। রাসূল সা. বলেন, المؤمن الذي يخالط الناس ويصبر على أذاهم ، أفضل من المؤمن الذي لا يخالط الناس ولا يصبر على أذاهم “যে ঈমানদার মানুষের সাথে উঠা-বসা ও লেনদেন করে এবং তারা যে সব কষ্ট দেয়. তার উপর ধৈর্য ধারণ করে, সে— যে মুমিন মানুষের সাথে উঠা-বসা বা লেনদেন করে না এবং কোন কষ্ট বা পরীক্ষার সম্মুখীন হয় না—তার থেকে উত্তম।” [4] এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ “নিশ্চয় এগুলো অন্যতম সংকল্পের কাজ।” অর্থাৎ, মানুষ তোমাকে যে কষ্ট দেয়, তার উপর ধৈর্য ধারণ করা অন্যতম দৃঢ় প্রত্যয়ের কাজ। ❏ অষ্টম উপদেশ: মানুষ হতে মুখ ফিরিয়ে না নেওয়া ______________________________________ মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ “আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।” আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, ‘যখন তুমি কথা বল অথবা তোমার সাথে মানুষ কথা বলে, তখন তুমি মানুষকে ঘৃণা করে অথবা তাদের উপর অহংকার করে, তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে না। তাদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে কথা বলবে। তাদের জন্য উদার হবে এবং তাদের প্রতি বিনয়ী হবে।’ কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, تبسمك في وجه أخيك لك صدقة “তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তাও সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।” [5] ❏ নবম উপদেশ: অহংকার না করা ______________________________ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَلا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحاً “অহংকার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাটা চলা করবে না।” কারণ, এ ধরনের কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে অপছন্দ করবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ “নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” অর্থাৎ যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যদের উপর বড়াই করে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের পছন্দ করে না। ❏ দশম উপদেশ: নম্রভাবে হাটা-চলা করা ____________________________________ মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে বলেন: وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ “আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর।” তুমি তোমার চলাচলে স্বাভাবিক চলাচল কর। খুব দ্রুত হাঁটবে না আবার একেবারে মন্থর গতিতেও না। মধ্যম পন্থায় চলাচল করবে। তোমার চলাচলে যেন কোন প্রকার সীমালঙ্ঘন না হয়। ❏ একাদশ উপদেশ: নরম সূরে কথা বলা ___________________________________ লোকমান হাকীম তার ছেলেকে নরম সূরে কথা বলতে আদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ “তোমার আওয়াজ নিচু কর।” আর কথায় কোন তুমি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। বিনা প্রয়োজনে তুমি তোমার আওয়াজকে উঁচু করো না। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ “নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ।” আল্লামা মুজাহিদ বলেন, ‘সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ। অর্থাৎ, মানুষ যখন বিকট আওয়াজে কথা বলে, তখন তার আওয়াজ গাধার আওয়াজের সাদৃশ্য হয়। আর এ ধরনের বিকট আওয়াজ মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট একেবারেই অপছন্দনীয়। বিকট আওয়াজকে গাধার আওয়াজের সাথে তুলনা করা প্রমাণ করে যে, বিকট শব্দে আওয়াজ করে কথা বলা হারাম। কারণ, মহান আল্লাহ তা‘আলা এর জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। যেমনিভাবে— ক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ليس لنا مثل السوء ، العائد في هبته كالكلب يعود في قيئه “আমাদের জন্য কোন খারাপ ও নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হতে পারে না। কোন কিছু দান করে ফিরিয়ে নেয়া কুকুরের মত, যে কুকুর বমি করে তা আবার মুখে নিয়ে খায়।” [6] খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, إذا سمعتم أصوات الديكة ، فسلوا الله من فضله ، فإنها رأت ملكاً ، وإذا سمعتم نهيق الحمار فتعوذوا بالله من الشيطان ، فإنها رأت شيطاناً “মোরগের আওয়াজ শোনে তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ কামনা কর, কারণ, সে নিশ্চয় কোন ফেরেশতা দেখেছে। আর গাধার আওয়াজ শোনে তোমরা শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কারণ, সে অবশ্যই একজন শয়তান দেখেছে।”[7] ❏ আয়াতের দিক-নির্দেশনা:- ________________________ 1. আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যে সব কাজ করলে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত হয়, পিতা তার ছেলেকে সে বিষয়ে উপদেশ দিবে। 2. উপদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে তাওহীদের উপর অটল ও অবিচল থাকতে এবং শিরক থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেবে। কারণ, শিরক হল, এমন এক যুলুম বা অন্যায়, যা মানুষের যাবতীয় সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দেয়। 3. প্রত্যেক ঈমানদারের উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হল, মাতা-পিতার কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া আদায় করা। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, কোন প্রকার খারব ব্যবহার না করা এবং তাদের উভয়ের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা। 4. আল্লাহর নাফরমানি হয় না, এমন কোন নির্দেশ যদি মাতা-পিতা দিয়ে থাকে, তখন সন্তানের উপর তাদের নির্দেশের আনুগত্য করা ওয়াজিব। আর যদি আল্লাহর নাফরমানি হয়, তবে তা পালন করা ওয়াজিব নয়। 5. প্রত্যেক ঈমানদারের উপর কর্তব্য হল, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী মুমিন-মুসলিমদের পথের অনুকরণ করা, আর অমুসলিম ও বিদআতিদের পথ পরিহার করা। 6. প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আর মনে রাখবে কোন নেক-কাজ তা যতই ছোট হোক না কেন, তাকে তুচ্ছ মনে করা যাবে না এবং কোন খারাপ-কাজ তা যতই ছোট হোক না কেন, তাকে ছোট মনে করা যাবে না এবং তা পরিহার করতে কোন প্রকার অবহেলা করা চলবে না। 7. সালাতের যাবতীয় আরকান ও ওয়াজিবগুলি সহ সালাত কায়েম করা প্রত্যেক মুমিনের উপর ওয়াজিব; সালাতে কোন প্রকার অবহেলা না করে, সালাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া এবং খুশুর সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। 8. জেনেশুনে, সামর্থানুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। না জেনে এ কাজ করলে অনেক সময় হিতে-বিপরীত হয়। আর মনে রাখতে হবে, এ দায়িত্ব পালনে যথা সম্ভব নমনীয়তা প্রদর্শন করবে; কঠোরতা পরিহার করবে। 9. মনে রাখতে হবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বারণকারীকে অবশ্যই-অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। ধৈর্যের কোন বিকল্প নাই। ধৈর্য ধারণ করা হল, একটি মহৎ কাজ। আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন। 10. হাটা চলায় গর্ব ও অহংকার পরিহার করা। কারণ, অহংকার করা সম্পূর্ণ হারাম। যারা অহংকার ও বড়াই করে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না। 11. হাটার সময় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে হাটতে হবে। খুব দ্রুত হাঁটবে না এবং একেবারে ধীর গতিতেও হাঁটবে না। 12. প্রয়োজনের চেয়ে অধিক উচ্চ আওয়াজে কথা বলা হতে বিরত থাকবে। কারণ, অধিক উচ্চ আওয়াজ বা চিৎকার করা হল গাধার স্বভাব। আর দুনিয়াতে গাধার আওয়াজ হল, সর্ব নিকৃষ্ট আওয়াজ। [1]. তিরমিযী ৩৩৭২, ২৯৬৯, ৩২৪৭, ইবনু মাজাহ ৩৮২৮ [2]. বুখারী ৩২, ৩৩৬০ ৩৪২৮, ৩৪২৯, ৪৬২৯, ৪৭৭৬, ৬৯১৮, ৬৯৩৭; মুসলিম ১২৬; আহমাদ ৪০৩১ [3]. মুসলিম ৪৬৫৯ [4]. ইবনু মাজাহ ৪০৩২; তিরমিযী ২৫০৭ [5]. তিরমিযী ১৯৫৬; সহীহাহ ৫৭২ [6]. বুখারী ২৫৮৯, ২৬২১, ২৬২২, ৬৯৭৫; মুসলিম ১৬২২; আহমাদ ২৬৪৭ [7]. বুখারী ৩৩০৩; মুসলিম ২৭২৯; আহমাদ ৯৪১৪ [বি:দ্র: প্রবন্ধটি শাইখ মুহাম্মাদ ইবন জামীল যাইনূর লিখিত "শিশুদের লালন-পালন [মাতা-পিতার দায়িত্ব ও সন্তানের করণীয়]" বই হতে গৃহীত] ___________________________________________________________________________________________ সংকলন: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন জামীল যাইনূ অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের সম্পাদনায়: মো: আবদুল কাদের সূত্র: ইসলাম হাউস [বাংলা]
 

Share this page