জারহ্ ও তা'দীলের ঝান্ডাবাহী মু'জাহিদ, যুগশ্রেষ্ঠ নাক্বীদ, আল মুহাদ্দিসুল ফাক্বীহ ইমাম ‘রাবী বিন হাদী উমাইর আল-মাদখালী [হাফিয্বাহুল্লাহ্] বলেন—
প্রশ্ন: তার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি যে বলে, ‘খাওয়ারিজ হল তারা যারা বৈধ এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করে৷ এবং কেউ যদি সত্যিকারের অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তবে সে খাওয়ারিজদের অন্তর্ভুক্ত নয়’?
উত্তর: ‘আব্দুল-মালিক ইবনু মারওয়ান একজন অত্যাচারী শাসক ছিলেন৷ তিনি হত্যা করেছিলেন [সাহাবী] ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে আয-যুবা’ঈরকে [رضي الله عنه] এবং এমনকি তার প্রতিনিধিদের একজন ধ্বংস করেছিল কাবাহ্কে। তবুও [সাহাবী] ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার [رضي الله عنه] এত কিছুর পরেও তার [ইবনু মারওয়ানের] প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন এবং বাকী সাহাবীরাও তা-ই করেছিলেন। আল্লাহ্’র কসম, তিনি অত্যাচারী ছিলেন [রাহিমাহুল্লাহ্]। উনার ভাল গুণ ছিল, তিনি ভাল কাজ করেছিলেন, তিনি বিজয়ী ছিলেন, এবং তিনি [বৈধ] জি’হাদ করেছিলেন৷ তবুও, আল্লাহ্'র কসম, তিনি অত্যাচারী ছিলেন, ন্যায়বিরুদ্ধ ছিলেন৷ আল্লাহ্’র রাসূল ﷺ এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বারবার শিখিয়েছেন, এবং এই নসগুলো সহীহানে [সহীহ্ মুসলিম এবং সহীহ্ আল-বুখারী] এবং অন্যান্য হাদীস গ্রন্হে রয়েছে। উদাহরণ-স্বরুপ, তিনি [শাসকদের সম্পর্কে] বলেছেন:
’أطيعوهم لا ما أَقاموا فيكم الصلاة‘
‘যতক্ষণ তারা সালাত চালু রাখবে ততক্ষণ তাদের আনুগত্য করো।’
এবং তিনি ﷺ বলেন,
’تَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ‘
‘[তুমি তাদের থেকে এমন সব বিষয় দেখবে] যার কতক তুমি পছন্দ করবে এবং কতক অপছন্দ করবে।’
এবং যখন জিজ্ঞেস করা হল, ‘আমাদের কি তাদের তলোয়ার দিয়ে বিরোধীতা করা উচিত না?’
তিনি ﷺ বললেন,
’لاَ مَا صَلَّوْا‘
‘না, যতক্ষণ তারা সালাত আদায় করে ততক্ষণ পর্যন্ত না।’
এই নছগুলো ন্যায়বিরুদ্ধ শাসকদের বিষয়ে ছিল এবং রাসূল ﷺ [লোকদের] তাদের সাথে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ তিনি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে এবং প্রতিবাদী হতে অনুমতি দেন নি৷ যে বিদ্রোহ্ করে এবং তাদের [শাসকদের] প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে, তখন সে সমস্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে তা [বিদ্রোহ্] করে৷ এই ক্ষেত্রে, এই জাতীয় ব্যক্তিকে হত্যা করা উচিত [বৈধভাবে— মৃত্যুদন্ডের দ্বারা], যদিও সে যে শাসকের বিরোধীতা করেছিল— সে প্রকৃতপক্ষেই অত্যাচারী ছিল৷
এই বুঝ খাওয়ারিজদের বুঝ— তারা বলে, ‘কেউ যদি অত্যাচারী/ ন্যায়বিরুদ্ধ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করে তবে তাকে খাওয়ারিজদের মধ্য থেকে বিবেচনা করা হবে না।’ এটা দ্বারা, তারা বুঝায় যে আলী [رضي الله عنه] ন্যায়বিরুদ্ধ ছিলেন এবং উছমানও [رضي الله عنه] ন্যায়বিরুদ্ধ ছিলেন৷
এছাড়া, যারা সা’য়্যিদ ক্বুতুবের দৃষ্টিভঙ্গির গুণগান করে— ‘উছমান [رضي الله عنه] ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন না’— যদিও তারা এটি গোপন করে— তারা কেন সা’য়্যিদ ক্বুতুবের মতো লোকের গুণগান গায় যে কিনা উছমান [رضي الله عنه]-এর নীতির সমালোচনা করে এবং তার নেতৃত্বকে বাতিল বলে এবং নিন্দা করে? এবং [কোন শাসকের] সুস্পষ্ট কুফর ছাড়া তার [শাসকের] নেতৃত্বের নিন্দা করা যাবে না, তবুও সে [সা’য়্যিদ ক্বুতুব] এটি করেছে, কারণ সে একটা তাক্বফিরী৷ সে তাক্বফিরীদের সর্দার! সে উসমান [رضي الله عنه]-কে প্রকাশ্যে তাক্বফীর করতে এবং একই সাথে তার [ক্বুতুব] রাফিদ্বী [উগ্র শিয়া যারা সাহাবাদের লাণত দেয়] চরিত্র প্রকাশ করতে অক্ষম ছিল। সে আসলে খাওয়ারিজ এবং রাওয়াফীদ্ব মতাদর্শের মিশ্রণ৷ সে অন্যান্য ব্যানার বহন করার সাথে সাথে খাওয়ারিজদের ব্যানার এবং রাওয়াফীদ্বদের ব্যানারও বহন করতো৷ সে উছমান [رضي الله عنه]-কে ন্যায়বিরুদ্ধ/ অত্যাচারী হিসেবে উপস্থাপন করেছিল যাতে আমরা তার [উছমানের] বিরুদ্ধে বৈধভাবে বিদ্রোহ করতে পারি, এবং সে আলী [رضي الله عنه]-কেও অত্যাচারী হিসেবে উপস্থাপন করেছিল যাতে আমরা তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ্ করতে পারি এবং অনুরুপভাবে [এটিই হল প্যাটার্ন]।
এবং জুল-খুওয়াইছারাহ— তুমি দেখেছ যে সে [জুল-খুওয়াইছারাহ] রাসূলের ﷺ ন্যায়বিচারকেও অসম্মান করেছিল। সুতরাং বিষয়টি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যার কোনও সীমা নেই বা তুমি যাকে ন্যায়পরায়ণ বলে মনে করো, সে অন্যের কাছে—যে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করতে চায় বা করে, তার কাছে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে বিবেচিত হয় না৷
.
সুতরাং, সমাধান হ'ল যতক্ষণ শাসক ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকে— এবং রাসূল ﷺ এটি পরিস্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন— এমনকি যদি শাসক একজন খারাপ এবং অত্যাচারী হয়; যতক্ষণ সে ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকে, যতক্ষণ সে সালাত কায়েম করে, ততক্ষণ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করা এবং তার বিরোধীতা করা জায়েয নয়৷ তোমরা সবাই কি বুঝতে পেরেছ? এটি আল্লাহ্'র আদেশ, রাসূলের ﷺ আদেশ, জাহিল লোকদের আদেশ নয়।
বঙ্গানুবাদ: আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ রাকিব খান
সোর্স
প্রশ্ন: তার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি যে বলে, ‘খাওয়ারিজ হল তারা যারা বৈধ এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করে৷ এবং কেউ যদি সত্যিকারের অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তবে সে খাওয়ারিজদের অন্তর্ভুক্ত নয়’?
উত্তর: ‘আব্দুল-মালিক ইবনু মারওয়ান একজন অত্যাচারী শাসক ছিলেন৷ তিনি হত্যা করেছিলেন [সাহাবী] ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে আয-যুবা’ঈরকে [رضي الله عنه] এবং এমনকি তার প্রতিনিধিদের একজন ধ্বংস করেছিল কাবাহ্কে। তবুও [সাহাবী] ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার [رضي الله عنه] এত কিছুর পরেও তার [ইবনু মারওয়ানের] প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন এবং বাকী সাহাবীরাও তা-ই করেছিলেন। আল্লাহ্’র কসম, তিনি অত্যাচারী ছিলেন [রাহিমাহুল্লাহ্]। উনার ভাল গুণ ছিল, তিনি ভাল কাজ করেছিলেন, তিনি বিজয়ী ছিলেন, এবং তিনি [বৈধ] জি’হাদ করেছিলেন৷ তবুও, আল্লাহ্'র কসম, তিনি অত্যাচারী ছিলেন, ন্যায়বিরুদ্ধ ছিলেন৷ আল্লাহ্’র রাসূল ﷺ এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বারবার শিখিয়েছেন, এবং এই নসগুলো সহীহানে [সহীহ্ মুসলিম এবং সহীহ্ আল-বুখারী] এবং অন্যান্য হাদীস গ্রন্হে রয়েছে। উদাহরণ-স্বরুপ, তিনি [শাসকদের সম্পর্কে] বলেছেন:
’أطيعوهم لا ما أَقاموا فيكم الصلاة‘
‘যতক্ষণ তারা সালাত চালু রাখবে ততক্ষণ তাদের আনুগত্য করো।’
এবং তিনি ﷺ বলেন,
’تَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ‘
‘[তুমি তাদের থেকে এমন সব বিষয় দেখবে] যার কতক তুমি পছন্দ করবে এবং কতক অপছন্দ করবে।’
এবং যখন জিজ্ঞেস করা হল, ‘আমাদের কি তাদের তলোয়ার দিয়ে বিরোধীতা করা উচিত না?’
তিনি ﷺ বললেন,
’لاَ مَا صَلَّوْا‘
‘না, যতক্ষণ তারা সালাত আদায় করে ততক্ষণ পর্যন্ত না।’
এই নছগুলো ন্যায়বিরুদ্ধ শাসকদের বিষয়ে ছিল এবং রাসূল ﷺ [লোকদের] তাদের সাথে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ তিনি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে এবং প্রতিবাদী হতে অনুমতি দেন নি৷ যে বিদ্রোহ্ করে এবং তাদের [শাসকদের] প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে, তখন সে সমস্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে তা [বিদ্রোহ্] করে৷ এই ক্ষেত্রে, এই জাতীয় ব্যক্তিকে হত্যা করা উচিত [বৈধভাবে— মৃত্যুদন্ডের দ্বারা], যদিও সে যে শাসকের বিরোধীতা করেছিল— সে প্রকৃতপক্ষেই অত্যাচারী ছিল৷
এই বুঝ খাওয়ারিজদের বুঝ— তারা বলে, ‘কেউ যদি অত্যাচারী/ ন্যায়বিরুদ্ধ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করে তবে তাকে খাওয়ারিজদের মধ্য থেকে বিবেচনা করা হবে না।’ এটা দ্বারা, তারা বুঝায় যে আলী [رضي الله عنه] ন্যায়বিরুদ্ধ ছিলেন এবং উছমানও [رضي الله عنه] ন্যায়বিরুদ্ধ ছিলেন৷
এছাড়া, যারা সা’য়্যিদ ক্বুতুবের দৃষ্টিভঙ্গির গুণগান করে— ‘উছমান [رضي الله عنه] ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন না’— যদিও তারা এটি গোপন করে— তারা কেন সা’য়্যিদ ক্বুতুবের মতো লোকের গুণগান গায় যে কিনা উছমান [رضي الله عنه]-এর নীতির সমালোচনা করে এবং তার নেতৃত্বকে বাতিল বলে এবং নিন্দা করে? এবং [কোন শাসকের] সুস্পষ্ট কুফর ছাড়া তার [শাসকের] নেতৃত্বের নিন্দা করা যাবে না, তবুও সে [সা’য়্যিদ ক্বুতুব] এটি করেছে, কারণ সে একটা তাক্বফিরী৷ সে তাক্বফিরীদের সর্দার! সে উসমান [رضي الله عنه]-কে প্রকাশ্যে তাক্বফীর করতে এবং একই সাথে তার [ক্বুতুব] রাফিদ্বী [উগ্র শিয়া যারা সাহাবাদের লাণত দেয়] চরিত্র প্রকাশ করতে অক্ষম ছিল। সে আসলে খাওয়ারিজ এবং রাওয়াফীদ্ব মতাদর্শের মিশ্রণ৷ সে অন্যান্য ব্যানার বহন করার সাথে সাথে খাওয়ারিজদের ব্যানার এবং রাওয়াফীদ্বদের ব্যানারও বহন করতো৷ সে উছমান [رضي الله عنه]-কে ন্যায়বিরুদ্ধ/ অত্যাচারী হিসেবে উপস্থাপন করেছিল যাতে আমরা তার [উছমানের] বিরুদ্ধে বৈধভাবে বিদ্রোহ করতে পারি, এবং সে আলী [رضي الله عنه]-কেও অত্যাচারী হিসেবে উপস্থাপন করেছিল যাতে আমরা তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ্ করতে পারি এবং অনুরুপভাবে [এটিই হল প্যাটার্ন]।
এবং জুল-খুওয়াইছারাহ— তুমি দেখেছ যে সে [জুল-খুওয়াইছারাহ] রাসূলের ﷺ ন্যায়বিচারকেও অসম্মান করেছিল। সুতরাং বিষয়টি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যার কোনও সীমা নেই বা তুমি যাকে ন্যায়পরায়ণ বলে মনে করো, সে অন্যের কাছে—যে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করতে চায় বা করে, তার কাছে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে বিবেচিত হয় না৷
.
সুতরাং, সমাধান হ'ল যতক্ষণ শাসক ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকে— এবং রাসূল ﷺ এটি পরিস্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন— এমনকি যদি শাসক একজন খারাপ এবং অত্যাচারী হয়; যতক্ষণ সে ইসলামের গন্ডির মধ্যে থাকে, যতক্ষণ সে সালাত কায়েম করে, ততক্ষণ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ্ করা এবং তার বিরোধীতা করা জায়েয নয়৷ তোমরা সবাই কি বুঝতে পেরেছ? এটি আল্লাহ্'র আদেশ, রাসূলের ﷺ আদেশ, জাহিল লোকদের আদেশ নয়।
বঙ্গানুবাদ: আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ রাকিব খান
সোর্স