- Joined
- Nov 27, 2024
- Threads
- 4
- Comments
- 4
- Reactions
- 41
- Thread Author
- #1
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বছর জুড়ে ঋতুর পরিবর্তন উপভোগ করেন দেশের মানুষ। ঋতুর এই পরিবর্তন আল্লাহ তাআলার নির্দশনাবলীর অন্যতম। সব ঋতু ও প্রতিটি দিন আল্লাহ তায়ালার দান, এতে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন।’ -(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)
ঋতুর এই পরিবর্তন মানুষের জন্য আল্লাহর নেয়ামত। বিশেষত শীতকাল মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। শীতকালের এই পরিবর্তন মুমিনের জন্য রহমত হয়ে আসে।
আল্লাহর রাসূল(ছা) শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল বলেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ -(মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ : ১১৬৫৬)
নিম্নে শীতকালের কিছু আমল তুলে ধরা হলো:
১. আল্লাহর পরিচয় লাভের সুযোগ
আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শনাবলিতে চিন্তা-ফিকির করে তাঁর পরিচয় লাভ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসমান ও যমীনে ছোট-বড় অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। তারই একটি নিদর্শন হচ্ছে ঋতুর পালাবদল। যেমন শীতের পর গ্রীষ্ম আসে এবং গ্রীষ্মের পর শীত। শীত-গ্রীষ্ম আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই।
এ আবর্তন আমাদের জন্য আল্লাহর পরিচয় লাভের সুযোগ নিয়ে আসে। এই আবর্তনে চিন্তা করে আমরা আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারি, তাঁর প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করতে পারি। আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আল্লাহ কত শক্তিমান! তিনি কত নিপুণ, কত কুশল! আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলি থেকে যারা তাঁর পরিচয় লাভ করে, কুরআনের ভাষায় তারা বুদ্ধিমান—
নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের আবর্তনে বহু নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য, যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (এবং বলে,) হে আমাদের রব! আপনি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। সুতরাং আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
(সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)
২.জাহান্নাম থেকে আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ
আল্লাহ তাআলার নির্দেশমতো জীবনযাপন করলে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন আর তাঁর নির্দেশ অমান্য করলে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। জাহান্নামের শাস্তি অতি ভয়াবহ। জাহান্নামে বিভিন্নভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। উত্তপ্ত আগুনের শাস্তি যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে তীব্র শীতের শাস্তিও।
হদীছে এসেছে—
জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করল, হে রব, আমার কিছু অংশ কিছু অংশকে খেয়ে ফেলছে। অতঃপর তিনি তাকে দুটি নিঃশ্বাসের অনুমতি দিলেন, একটি নিঃশ্বাস শীতে আরেকটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মে। তোমরা গরমের যে প্রচণ্ডতা অনুভব কর তা জাহান্নামের উত্তপ্ততা থেকে আর শীতের যে তীব্রতা অনুভব কর তা জাহান্নামের যামহারীর (শীতলতা) থেকে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৭৭২২)
শীতকাল আমাদের জন্য জাহান্নাম থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে নিবেদন করতে পারি, ইয়া আল্লাহ! দুনিয়ার ‘সামান্য’ শীতেই তো আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, জাহান্নামের ‘তীব্র’ ঠাণ্ডা ও শীত কীভাবে সহ্য করব?
৩.শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও ইবাদতের সুযোগ
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে শেষ রাত অত্যন্ত বরকত ও রহমতপূর্ণ সময়। এ সময় বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত নিবিষ্ট থাকে। আল্লাহ তাআলা শেষরাতে ডাকতে থাকেন—
আছে কি কেউ, যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কেউ আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দিয়ে দেব। কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব!
রাতের দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজর পর্যন্ত আল্লাহ এভাবে বান্দাকে ডাকতে থাকেন। (সহীহ বুখারী, হাদীছ ৬৩২১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ৭৫৮)
গরমের ছোট রাতে দেরিতে ঘুমালে কখন যে এই বরকতময় মুহূর্ত চলে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না।
আচ্ছা! আমাদের কি ইচ্ছা হয় না রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দেওয়ার! আমাদের কি কোনো প্রয়োজন নেই তাঁর কাছে নিবেদন করার! আমাদের কি কোনো গুনাহ নেই তাঁর থেকে মাফ করিয়ে নেওয়ার!
যারা শেষ রাতে উঠে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে চান, কিন্তু রাত ছোট হওয়ায় উঠতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে আসে। কেননা শীতকালে রাত বেশ বড় হয়। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে সহজে শেষ রাতে উঠে যাওয়া সম্ভব। সবার চেষ্টা করা উচিত, শীতকালে যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়। আমরা অন্তত শীতকালে তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করি, যাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেছেন—
তারা রাতের অল্প সময়ই ঘুমাত এবং রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮)
তাহাজ্জুদের সালাত নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। রাসূল (ছা) বলেন,
‘হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩২৫১)
৪.বেশি বেশি নফল ছিয়াম রাখার সুযোগ
শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট। এতে ছিয়াম রাখা খুবই সহজ হয়। তাই এ ঋতুতে সম্ভব হলে বেশি বেশি ছিয়াম রাখা যায়। হযরত আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীছে আছে, রাসূল (ছা) বলেন, শীতকালের গনিমত হচ্ছে এ সময় ছিয়াম রাখা। (তিরমিযী: ৭৯৭)
কিছু কিছু নফল ছিয়াম আছে, যেগুলো বিশেষ সময়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট এবং হাদীছে এগুলোর বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের ছিয়াম।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার ইচ্ছা করতেন।
( তিরমিযী, হাদীছ ৭৪৫)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ পেশ করা হয়। আমার পছন্দ, আমার আমল যেন পেশ করা হয় আমি রোযাদার অবস্থায়। —জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৭
আবু হুরায়রা রা. থেকে আরো বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
সবরের মাস (রমযান) এবং প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম সারা বছর ছিয়াম রাখার সমতুল্য। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৫৭৭)
আবু যার গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
তুমি যদি মাসে তিন দিন ছিয়াম রাখো, তাহলে তেরো তারিখ, চৌদ্দ তারিখ ও পনেরো তারিখ ছিয়াম রেখো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৪৩৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪২৪)
কিন্তু এই ফযীলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিয়ামের ব্যাপারে অনেকের বেশ অবহেলা ও উদাসীনতা। কেউ কেউ তো ফরয ছিয়ামই রাখে না (নাউযুবিল্লাহ)। আর কেউ কেউ কষ্ট-ক্লেশ করে ফরয ছিয়াম রাখেন, কিন্তু গরমের বড় দিনে নফল ছিয়াম রাখার সাহস পান না।
যারা নফল ছিয়াম রাখতে চান, কিন্তু গরমকালে দিন বড় হওয়ায় রাখতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে আসে। কেননা শীতকালে দিন বেশ ছোট হয়। এসময় সহজে ছিয়াম রাখা সম্ভব। তাই আমরা এসময় বেশি বেশি ছিয়াম রাখতে পারি। বিশেষত সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের ছিয়ামসমূহ। শীতকালে যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়।
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রা. একদিন তাঁর শিষ্যদের বললেন,
আমি কি তোমাদেরকে সহজ গনীমত সম্পর্কে অবহিত করব না?
তারা বললেন, অবশ্যই।
তিনি বললেন,
শীতকালে ছিয়াম রাখা। (সুনানে বায়হাকী ৪/২৯৭)
৫.শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো
শীত নিবারণের মতো পোশাক-পরিচ্ছদ সব মানুষের থাকে না। সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানের দাবি।শীতে সুস্থ থাকার জন্য দরকার পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র এবং শীতজনিত রোগের নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য। কিন্তু এই সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও থাকে না। আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। রাস্তার পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষ দেখা যায়। আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম। শীতে গরীব-অসহায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে এবং নানা রকম রোগ ছড়িয়ে পড়ে।এ সময় আমাদের উচিত শীতার্ত গরীব-অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ। কনকনে শীতে থরথর করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে?
বস্ত্রদান করার ফযীলত:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (ছা)-কে বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক নারী সারা রাত সালাত পড়ে, সারা দিন ছিয়াম রাখে, ভালো কাজ করে, দান -খয়রাত করে এবং নিজ প্রতিবেশীদেরকে মুখের কথায় কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছা) বলেন, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। সে জাহান্নামী। পুনরায় সাহাবীগণ বলেন, অমুক নারী ফরয সালাত পড়ে, বস্ত্র দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সে জান্নাতী (আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, বাযযার)।
(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১১৮)
একটি যয়ীফ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছা)বলেন,
যে মু’মিন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মু’মিন ব্যক্তিকে পোশাক দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন। (তিরমিযী:২৪৪৯)
৬.অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ
শীতকালের জন্য বিশেষ কোনো বিধান নেই। গরমকালে যা করণীয় শীতকালেও তাই করণীয়। উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে তা গরমেও করণীয়। হাঁ, শীতকালে তা অধিক প্রাসঙ্গিক বা সহজ। আবার কিছু নেক কাজ এমন আছে, যা শীতকালে কষ্ট হয়। বিশেষত যখন শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়, শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে। যেমন ওযু করা, ফজরের সালাতে মসজিদে যাওয়া ইত্যাদি।
এটা আমাদের জন্য অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা যদি এজাতীয় আমলগুলো শীতকালেও সুন্দরভাবে করি, তাহলে অধিক সওয়াব মিলবে ইনশাআল্লাহ। ওই আমল করার সওয়াব মিলবে, সঙ্গে শীতের কষ্টের কারণে অতিরিক্ত সওয়াবও মিলবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করব না, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?
তাঁরা বললেন, হাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন,
(তা হল-) কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি হাঁটা এবং এক নামায আদায়ের পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। এটাই রিবাত (সীমান্ত প্রহরা)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫১)
লক্ষ করুন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযু করলে কত বড় প্রতিদান পাওয়া যাবে। এই কষ্টের মধ্যে শীতের কষ্টও অন্তর্ভুক্ত।
সারকথা হল, শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের সহজ সুযোগ নিয়ে আসে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা ঈমান ও কল্যাণের পথে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব। আমীরুল মুমিনীন উমর রা. যথার্থই বলেছেন
শীতকাল ইবাদতগুজারের জন্য গনীমত।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৮৩৫)
প্রখ্যাত তাবেয়ী উবাইদ ইবনে উমাইর রাহ. শীতকালে বলতেন,
হে কুরআনওয়ালারা, সালাতের জন্য রাত বড় হয়েছে এবং ছিয়ামের জন্য দিন ছোট হয়েছে। সুতরাং তোমরা (একে) গনীমত মনে করো।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা, ৯৮৩৬)
মহান আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন!
ঋতুর এই পরিবর্তন মানুষের জন্য আল্লাহর নেয়ামত। বিশেষত শীতকাল মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। শীতকালের এই পরিবর্তন মুমিনের জন্য রহমত হয়ে আসে।
আল্লাহর রাসূল(ছা) শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল বলেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীছে রাসূল (ছা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ -(মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ : ১১৬৫৬)
নিম্নে শীতকালের কিছু আমল তুলে ধরা হলো:
১. আল্লাহর পরিচয় লাভের সুযোগ
আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শনাবলিতে চিন্তা-ফিকির করে তাঁর পরিচয় লাভ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসমান ও যমীনে ছোট-বড় অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। তারই একটি নিদর্শন হচ্ছে ঋতুর পালাবদল। যেমন শীতের পর গ্রীষ্ম আসে এবং গ্রীষ্মের পর শীত। শীত-গ্রীষ্ম আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই।
এ আবর্তন আমাদের জন্য আল্লাহর পরিচয় লাভের সুযোগ নিয়ে আসে। এই আবর্তনে চিন্তা করে আমরা আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারি, তাঁর প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করতে পারি। আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আল্লাহ কত শক্তিমান! তিনি কত নিপুণ, কত কুশল! আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলি থেকে যারা তাঁর পরিচয় লাভ করে, কুরআনের ভাষায় তারা বুদ্ধিমান—
اِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ اخْتِلَافِ الَّيْلِ وَ النَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّاُولِي الْاَلْبَابِ، الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيٰمًا وَّ قُعُوْدًا وَّ عَلٰي جُنُوْبِهِمْ وَ يَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًا سُبْحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِِ.
নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের আবর্তনে বহু নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য, যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (এবং বলে,) হে আমাদের রব! আপনি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। সুতরাং আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
(সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)
২.জাহান্নাম থেকে আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ
আল্লাহ তাআলার নির্দেশমতো জীবনযাপন করলে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন আর তাঁর নির্দেশ অমান্য করলে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। জাহান্নামের শাস্তি অতি ভয়াবহ। জাহান্নামে বিভিন্নভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। উত্তপ্ত আগুনের শাস্তি যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে তীব্র শীতের শাস্তিও।
হদীছে এসেছে—
اشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ: رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا، فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ: نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ، فَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الحَرِّ، وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الزَّمْهَرِيرِ.
জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করল, হে রব, আমার কিছু অংশ কিছু অংশকে খেয়ে ফেলছে। অতঃপর তিনি তাকে দুটি নিঃশ্বাসের অনুমতি দিলেন, একটি নিঃশ্বাস শীতে আরেকটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মে। তোমরা গরমের যে প্রচণ্ডতা অনুভব কর তা জাহান্নামের উত্তপ্ততা থেকে আর শীতের যে তীব্রতা অনুভব কর তা জাহান্নামের যামহারীর (শীতলতা) থেকে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২৬০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৭৭২২)
শীতকাল আমাদের জন্য জাহান্নাম থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে নিবেদন করতে পারি, ইয়া আল্লাহ! দুনিয়ার ‘সামান্য’ শীতেই তো আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, জাহান্নামের ‘তীব্র’ ঠাণ্ডা ও শীত কীভাবে সহ্য করব?
৩.শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও ইবাদতের সুযোগ
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে শেষ রাত অত্যন্ত বরকত ও রহমতপূর্ণ সময়। এ সময় বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত নিবিষ্ট থাকে। আল্লাহ তাআলা শেষরাতে ডাকতে থাকেন—
مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ.
আছে কি কেউ, যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কেউ আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দিয়ে দেব। কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব!
রাতের দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজর পর্যন্ত আল্লাহ এভাবে বান্দাকে ডাকতে থাকেন। (সহীহ বুখারী, হাদীছ ৬৩২১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ৭৫৮)
গরমের ছোট রাতে দেরিতে ঘুমালে কখন যে এই বরকতময় মুহূর্ত চলে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না।
আচ্ছা! আমাদের কি ইচ্ছা হয় না রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দেওয়ার! আমাদের কি কোনো প্রয়োজন নেই তাঁর কাছে নিবেদন করার! আমাদের কি কোনো গুনাহ নেই তাঁর থেকে মাফ করিয়ে নেওয়ার!
যারা শেষ রাতে উঠে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে চান, কিন্তু রাত ছোট হওয়ায় উঠতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে আসে। কেননা শীতকালে রাত বেশ বড় হয়। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে সহজে শেষ রাতে উঠে যাওয়া সম্ভব। সবার চেষ্টা করা উচিত, শীতকালে যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়। আমরা অন্তত শীতকালে তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করি, যাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেছেন—
كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ الَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ، وَ بِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ.
তারা রাতের অল্প সময়ই ঘুমাত এবং রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮)
তাহাজ্জুদের সালাত নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। রাসূল (ছা) বলেন,
‘হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩২৫১)
৪.বেশি বেশি নফল ছিয়াম রাখার সুযোগ
শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট। এতে ছিয়াম রাখা খুবই সহজ হয়। তাই এ ঋতুতে সম্ভব হলে বেশি বেশি ছিয়াম রাখা যায়। হযরত আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীছে আছে, রাসূল (ছা) বলেন, শীতকালের গনিমত হচ্ছে এ সময় ছিয়াম রাখা। (তিরমিযী: ৭৯৭)
কিছু কিছু নফল ছিয়াম আছে, যেগুলো বিশেষ সময়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট এবং হাদীছে এগুলোর বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের ছিয়াম।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
كَانَ النبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَتَحَرّى صَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার ইচ্ছা করতেন।
( তিরমিযী, হাদীছ ৭৪৫)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ.
সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ পেশ করা হয়। আমার পছন্দ, আমার আমল যেন পেশ করা হয় আমি রোযাদার অবস্থায়। —জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৭
আবু হুরায়রা রা. থেকে আরো বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
شَهْرُ الصَبْرِ وَثَلَاثَةُ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صَوْمُ الدّهْرِ.
সবরের মাস (রমযান) এবং প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম সারা বছর ছিয়াম রাখার সমতুল্য। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৫৭৭)
আবু যার গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا صُمْتَ مِنْ شَهْرٍ ثَلَاثًا، فَصُمْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَة.
তুমি যদি মাসে তিন দিন ছিয়াম রাখো, তাহলে তেরো তারিখ, চৌদ্দ তারিখ ও পনেরো তারিখ ছিয়াম রেখো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৪৩৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪২৪)
কিন্তু এই ফযীলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিয়ামের ব্যাপারে অনেকের বেশ অবহেলা ও উদাসীনতা। কেউ কেউ তো ফরয ছিয়ামই রাখে না (নাউযুবিল্লাহ)। আর কেউ কেউ কষ্ট-ক্লেশ করে ফরয ছিয়াম রাখেন, কিন্তু গরমের বড় দিনে নফল ছিয়াম রাখার সাহস পান না।
যারা নফল ছিয়াম রাখতে চান, কিন্তু গরমকালে দিন বড় হওয়ায় রাখতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে আসে। কেননা শীতকালে দিন বেশ ছোট হয়। এসময় সহজে ছিয়াম রাখা সম্ভব। তাই আমরা এসময় বেশি বেশি ছিয়াম রাখতে পারি। বিশেষত সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের ছিয়ামসমূহ। শীতকালে যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়।
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রা. একদিন তাঁর শিষ্যদের বললেন,
أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى الْغَنِيمَةِ الْبَارِدَةِ؟
আমি কি তোমাদেরকে সহজ গনীমত সম্পর্কে অবহিত করব না?
তারা বললেন, অবশ্যই।
তিনি বললেন,
الصَّوْمُ فِي الشِّتَاءِ.
শীতকালে ছিয়াম রাখা। (সুনানে বায়হাকী ৪/২৯৭)
৫.শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো
শীত নিবারণের মতো পোশাক-পরিচ্ছদ সব মানুষের থাকে না। সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানের দাবি।শীতে সুস্থ থাকার জন্য দরকার পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র এবং শীতজনিত রোগের নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য। কিন্তু এই সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও থাকে না। আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। রাস্তার পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষ দেখা যায়। আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম। শীতে গরীব-অসহায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে এবং নানা রকম রোগ ছড়িয়ে পড়ে।এ সময় আমাদের উচিত শীতার্ত গরীব-অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ। কনকনে শীতে থরথর করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে?
বস্ত্রদান করার ফযীলত:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (ছা)-কে বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক নারী সারা রাত সালাত পড়ে, সারা দিন ছিয়াম রাখে, ভালো কাজ করে, দান -খয়রাত করে এবং নিজ প্রতিবেশীদেরকে মুখের কথায় কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছা) বলেন, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। সে জাহান্নামী। পুনরায় সাহাবীগণ বলেন, অমুক নারী ফরয সালাত পড়ে, বস্ত্র দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সে জান্নাতী (আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, বাযযার)।
(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১১৮)
একটি যয়ীফ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছা)বলেন,
যে মু’মিন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মু’মিন ব্যক্তিকে পোশাক দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন। (তিরমিযী:২৪৪৯)
৬.অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ
শীতকালের জন্য বিশেষ কোনো বিধান নেই। গরমকালে যা করণীয় শীতকালেও তাই করণীয়। উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে তা গরমেও করণীয়। হাঁ, শীতকালে তা অধিক প্রাসঙ্গিক বা সহজ। আবার কিছু নেক কাজ এমন আছে, যা শীতকালে কষ্ট হয়। বিশেষত যখন শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়, শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে। যেমন ওযু করা, ফজরের সালাতে মসজিদে যাওয়া ইত্যাদি।
এটা আমাদের জন্য অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা যদি এজাতীয় আমলগুলো শীতকালেও সুন্দরভাবে করি, তাহলে অধিক সওয়াব মিলবে ইনশাআল্লাহ। ওই আমল করার সওয়াব মিলবে, সঙ্গে শীতের কষ্টের কারণে অতিরিক্ত সওয়াবও মিলবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟
আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করব না, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?
তাঁরা বললেন, হাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন,
إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَذلِكُمُ الرِّبَاطُ.
(তা হল-) কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি হাঁটা এবং এক নামায আদায়ের পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। এটাই রিবাত (সীমান্ত প্রহরা)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫১)
লক্ষ করুন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযু করলে কত বড় প্রতিদান পাওয়া যাবে। এই কষ্টের মধ্যে শীতের কষ্টও অন্তর্ভুক্ত।
সারকথা হল, শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের সহজ সুযোগ নিয়ে আসে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা ঈমান ও কল্যাণের পথে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব। আমীরুল মুমিনীন উমর রা. যথার্থই বলেছেন
الشِّتَاءُ غَنِيمَةُ الْعَابِدِ.
শীতকাল ইবাদতগুজারের জন্য গনীমত।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৮৩৫)
প্রখ্যাত তাবেয়ী উবাইদ ইবনে উমাইর রাহ. শীতকালে বলতেন,
يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ! طَالَ اللَّيْلُ لِصَلاَتِكُمْ، وَقَصُرَ النَّهَارُ لِصِيَامِكُمْ، فَاغْتَنِمُوا.
হে কুরআনওয়ালারা, সালাতের জন্য রাত বড় হয়েছে এবং ছিয়ামের জন্য দিন ছোট হয়েছে। সুতরাং তোমরা (একে) গনীমত মনে করো।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা, ৯৮৩৬)
মহান আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন!