সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা এবং প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কথা বলা নাজায়েয

ইমাম আবু বকর আল-আজুর্রী [মৃত্যু: ৩৬০ হিজরী] রাহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন: “শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী খা’রেজীর উত্থান যে ব্যক্তি দেখবে, সে ন্যায়পরায়ণ হোক বা অত্যাচারী হোক, এই ব্যক্তি বিদ্রোহ করেছে এবং তার পিছে একদল জড়ো করেছে, তরবারি কোষমুক্ত করেছে এবং মুছলিমদেরকে হত্যা করা হালাল করেছে, যে ব্যক্তি এটা দেখেছে তার জন্য সঙ্গত নয় যে, সে এই ব্যক্তির কু’রআন তেলাওয়াত, ছালাতের দৈর্ঘ্য, ক্রমাগত ছওম পালন, না ইলমে তার উত্তম ও চমত্কার কথা দ্বারা প্রতারিত হবে, যখন তার কাছে এটা স্পষ্ট যে এই ব্যক্তির পথ ও পদ্ধতি খা’ওয়ারিজদের মতো।” [আশ-শারীয়া: ২৮ নং পৃষ্ঠা]

রাছূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-‘ছাল্লাম বলেছেন: তিনটি বিষয় আছে যেগুলোর প্রতি একজন মুছলিমের অন্তর কখনো ঘৃণা প্রকাশ করে না: আল্লাহ্’র জন্য আন্তরিকভাবে আমল করদ, শাসকদের আনুগত্য করা, এবং জাম’আতকে আঁকড়ে ধরা..।” [আহমাদ: ৪/৮০; এবং আত-তিরমিযী: ২৫৬৭ নং; এবং মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১/১৩৭]

শায়খুল ইছলাম আব্দুল আযীয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু বায [মৃত্যু: ১৪২০ হিজরী] রাহিমাহুল্লাহ্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “মিম্বারের উপর থেকে শাসকদের সমালোচনা করা কি ছালাফগণের মানহাজ? এবং শাসকদের নছীহত করার ক্ষেত্রে ছালাফগণের মানহাজ কি?
অতঃপর তিনি উত্তর দিয়েছেন: “শাসকদের ত্রুটিবিচ্যুতি প্রকাশ করা এবং মিম্বারের উপর তাদের ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করা ছালাফগণের মানহাজ নয়, কারণ এটা বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা এবং ভালো কাজে শাসকের আনুগত্যহীনতার দিকে নিয়ে যায়। এবং এটা নিয়ে যায় অহেতুক সমালোচনার দিকে, যা শুধু অনিষ্ট করে, কোন কল্যাণে আসে না। কিন্তু ছালাফগণের নিকটে অনুসৃত পন্থা হল— শাসক এবং প্রজার মধ্যকার বিষয়গুলো সম্পর্কে তাঁকে নছীহত করা, তাঁর নিকটে পত্র লেখা বা তার সাথে যোগাযোগকারী আলেমদের মাধ্যমে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা [নসীহত করতে], যাতে করে তিনি কল্যাণমুখী হন। [অপরদিকে] অন্যায় ও অসৎকাজ প্রত্যাখ্যান করা, তার কর্তার কথা উল্লেখ না করেই। যেমন: ব্যভিচারের বিরুদ্ধে বলবে, মদের বিরুদ্ধে বলবে, সুদের বিরুদ্ধে বলবে, তার কর্তার কথা উল্লেখ না করেই। বরং দলিলসমূহের ব্যাপকতার কারণে এই কাজ ওয়াজিব। আর কর্তার কথা উল্লেখ না করে অন্যায়কাজের বিরুদ্ধে বলা এবং তা থেকে সতর্ক করাই যথেষ্ট; সেই কাজের কাজী শাসক হোক কিংবা না হোক।”

আর যখন উছমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর যুগে ফিতনা সংঘটিত হয়েছিল, তখন কিছু লোক উছামা ইবনু যায়েদকে বলল, ‘আপনি কি উছমানের সাথে কথা বলবেন না?’ তখন তিনি বললেন, 'তুমি কি মনে কর যে, আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি, কারণ তুমি আমার থেকে সেটা শুনোনি? নিশ্চয়ই আমি তাঁর সাথে আমার এবং তার মধ্যেকার বিষয়ে কথা বলব, এমন কোন বিষয় খোলা না করে যা আমি প্রথম খুলতে চাই না। [আহমাদ: ৩/৪০৩; ইবনু আবী আছিম: ২/৫২১] নিশ্চয়ই আমি তাঁর সাথে আমার এবং তার মধ্যে যা আছে সে বিষয়ে কথা বলব, এমন এক বিষয় যা আমি প্রথমে প্রকাশ করতে চাই না। অতএব যখন তারা [খাও'য়ারিজ] প্রকাশ করলো, তখন উছমানের সময়ে খারাপ ঘটনা ঘটেছিল— রাযিয়াল্লাহু আনহু। তারা প্রকাশ্যে উছমানের বিরোধিতা করেছিল, এভাবে ফিতনা, মারামারি ও অবক্ষয়ের পূর্ণতা ঘটেছিল..। আর এর ফলে আলী ও মুয়াউয়ীআর মধ্যে ফিতনা সংঘটিত হয় এবং এই কারণে উছমানকে হত্যা করা হয়...

তদ্ব্যতীত, এই প্রকাশ্য বিদ্রোহ এবং শাসকের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ্য বলার কারণে বিপুল সংখ্যক ছাহাবী ও অন্যদের হত্যা করা হয়েছিল, যতক্ষণ না লোকেরা তাদের উপর কর্তৃত্বকারীকে ঘৃণা করতে শুরু করে এবং তাকে হত্যা করে। আমরা আল্লাহর কাছে সাফল্য কামনা করি।” ইবনু বাযের কথার সমাপ্তি [আল-মা’লুম মিন ওয়াজীব ইল-ইলাক্বাহ্ বাইন আল-হাকিম ওয়াল-মাহক্বুম; ২২-২৩ পৃষ্ঠা]

আনাছ বিন মালিক বলেছেন: “রাছূলের ﷺ ছাহাবাদের থেকে সবচেয়ে কিবার ছাহাবগণ আমাদেরকে শাসকদের গালাগালি করা ও গালমন্দ করা থেকে বিরত থাকতে বলতেন [ঊমারা]।” [আত্ব-তামহীদ, ২১/২৮৭]

তিনি আরো বলেছেন: “আল্লাহ্’র রাছূলের ﷺ ছাহাবাদের মধ্যে কিবার ছাহাবীগণ আমাদের নিষেধ করেছেন [এই বলে যে], ‘[তোমরা] তোমাদের শাসকদের কে গালাগালি করিও না, তাদের সাথে বেইমানের মতো আচরণ করিও না, তাদের ঘৃণা করিও না এবং আল্লাহ্’কে ভয় করো ও ধৈর্য্য ধারণ করো— নিশ্চয়ই বিষয় হাতের নিকট রয়েছে।”
[ইবনু আবী ‘আছিমের আছ-ছুন্নাহ্, ২/৪৮৮; আত্ব-তামহীদ, ২১/২৮৭]

ইমাম আল-বারবাহারী [মৃত্যু: ৩২৯ হিজরী] রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যদি তুমি একজন ব্যক্তিকে শাসকের বিরুদ্ধে দো‘আ করতে দেখো, তাহলে জেনে রাখো যে সে একটা বিদ’আতী। যদি তুমি একজন ব্যক্তিকে শাসকের জন্য দো'আ করতে দেখো, তাহলে জেনে রাখো যে সে ছুন্নাহ্’র একজন, যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন। ফুদ্বাইল ইবনু ইয়াদ্ব বলেন: “যদি আমার জন্য এমন কোন দোয়া থাকতো যা করা মাত্রই কবুল করা হবে তাহলে আমি এটি শাসকের জন্য ছাড়া আর কারোর জন্য করতাম না। আমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যে— আমরা তাদের সংশোধনের জন্য দোয়া করবো, এবং আমাদেরকে এই আদেশ দেওয়া হয়নি যে— আমরা তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করবো, তারা অত্যাচার এবং অন্যায় করলেও৷ কেননা তাদের অত্যাচার ও অন্যায় তাদের নিজেদের উপর বর্তাবে কিন্তু তাদের ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ যার সুফলতা লাভ করবে নিজেরা ও মুছলিমরা৷” [তাবাক্বাত আল-হানবালিয়্যাহ্: ২/৩৬]

আবু জামরা আদ্ব-দ্বুবাঈ বলেন: “আমি ইবনু আব্বাছের উপস্থিতিতে হাজ্জাজকে গালি দিলে তিনি আমাকে বলেন: “শয়ত্বানের সাহায্যকারী হয়ো না।” [তারিখুল কাবীর: ৮/১০৪]

ইমাম আশ-শাওক্বানী রাহিমাহুল্লাহ্ [মৃত্যু: ১২৫০ হিজরী] বলেছেন: “যার কাছে শাসকের ভুল কিছু বিষয় দৃষ্টিগোচর হয় তার জন্য এটি বাঞ্ছনীয় যে, সে তাকে উপদেশ দিবে কিন্তু দেখার জন্য সকলের সামনে তাকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করবে না। বরং, করা উচিত যে, যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে— হাত ধরে নির্জনে তাকে উপদেশ দেওয়া... এবং সে যেন আল্লাহ্’র ছুলতানকে হেয় না করে। এবং আমরা আগেই ছিয়ারের [জীবনী] অধ্যায় শুরুর দিকে বলেছি যে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয নয় যদিও তারা অত্যাচারের অত্যধিক স্তরে পৌঁছে যায়, যতক্ষণ না তারা ছালাত কায়েম করে এবং তাদের থেকে কোন সুস্পষ্ট কুফরী প্রকাশ না পায়। যাহোক, অনুসারীর জন্য আবশ্যক যে সে আল্লাহ্’র আনুগত্যে শাসকের অনুসরণ করবে এবং যা আল্লাহ্’র অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যায় তাতে অনুসরণ করবে না, কারণ খালেকের অবাধ্যতায় মাখলূকের আনুগত্য নয়।“ [ছায়লুল জার্রার: ৪/৫৫৬]

বঙ্গানুবাদ: আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ রাকিব খান
 
Top