শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী সা: এর ভূমিকা।

  • Thread Author
শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা: এর ভূমিকা।
আব্দুর রাকিব নাদভী
বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা: ছিলেন রহমতের দূত ও শান্তির প্রতীক। তিনি সা: ছিলেন পৃথিবীবাসীর জন্য বিশ্ব সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে একটি বড় অনুগ্রহ ও নেয়ামত। এই নেয়ামত প্রসঙ্গে স্বয়ং বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সুরা আল ইমরান আয়াত নং ১৬৪)
পৃথিবীতে বিশ্বনবী সা: এর আগমন তখন হয় যখন সারা বিশ্ব ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত, সর্বত্র ছিল অশান্তি ও রক্তপাত, মানবতার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এই সংকটময় ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিশ্বনবী সা: এর আগমন ঘটে। তিনি সা: শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থিত হন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া আয়াত নং ১০৭)
আর বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সা: স্বয়ং এই মর্মে ঘোষণা দেন: আমি হলাম রহমতের নবী। (সহীহ আল জামে লিল আলবানি হাদীস নং ১৪৭৩)
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ কে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল সাঃ! আপনি মুশরিকদের উপর বদ্‌দু’আ করুন। তিনি বললেন, আমি তো অভিসম্পাতকারীরূপে প্রেরিত হইনি; বরং প্রেরিত হয়েছি রহ্‌মাত স্বরূপ। (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫০৭)
বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা: এর রহমত কেমন ছিল তা একটি হাদিস দ্বারা স্পষ্ট আকারে বুঝা যায়। আম্মা আয়েশা রা: বলেন: আল্লাহ্‌র কসম! তিনি কখনও তাঁর ব্যক্তিগত কারণে কোন কিছুর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, যতক্ষণ না আল্লাহ্‌র হারামসমূহকে ছিন্ন করা হত। সেক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র জন্য তিনি প্রতিশোধ নিতেন। (সহীহ আল বুখারী হাদীস নং ৬৭৮৬)
বিশ্ব নবী সা: কখনো জুলুমকে সমর্থন করেননি। সর্বদা অসহায় নির্যাতিত ও অত্যাচারিত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। নবী সা: বলেন: মযলুমের বদদু’আকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদু’আ) এবং আল্লাহ্‌র মাঝে কোন পর্দা থাকে না। (সহীহ আল বুখারী হাদীস নং ১৪৯৬)
শান্তি হচ্ছে মানবজাতির মৌলিক অধিকার। শান্তি ছাড়া সমাজের অস্তিত্ব নেই। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সা: বিদায়ী হজ্জে বলেছিলেন: “আমি কি তোমাদেরকে ‘মুমিন’ কে---তা বলে দেব না? (প্রকৃত মুমিন হল সেই), যার (অত্যাচার) থেকে লোকেরা নিজেদের জান-মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। (প্রকৃত) মুসলিম হল সেই ব্যক্তি, যার জিব ও হাত হতে লোকেরা শান্তি লাভ করতে পারে। (প্রকৃত) মুজাহিদ হল সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর আনুগত্য করতে নিজের মনের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। আর (প্রকৃত) মুহাজির (হিজরতকারী) হল সেই ব্যক্তি, যে সমস্ত পাপাচরণকে হিজরত (বর্জন) করে।” (মুসনাদে আহমাদ ৬/২১, মুস্তাদরক লিল হাকিম হাদীস নং ২৪, মুজাম আত্ ত্বাবারানী হাদীস নং ১৫১৯১, হাদীসের মান: সহীহ, দেখুন: আস্ সিলসিলা আস্ সহীহা হাদীস নং ৫৪৯)
মানব জীবনের কত মূল্য, মর্যাদা ও সম্মান এই মর্মে বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং বলেন: যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। (সুরা মায়েদা আয়াত নং ৩২)
বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সা: এর জীবনের প্রতিটি দিকই হচ্ছে বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ ও উত্তম উদাহরণ। তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত হয়েছে ইসলামের শত্রুদের সাথে সংঘর্ষে। তিনি সা: স্বয়ং নিজে ২৮টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রায় ৫৮টি সামরিক অভিযানে সেনাবাহিনী অর্থাৎ সাহাবাবর্গ দের কে পাঠিয়েছিলেন। মোট যুদ্ধের সংখ্যা ৮৬। ৮৬টি যুদ্ধ আর ২৩ রছর সময়কাল বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামিক ইতিহাসবিদ মাওলানা কাজী মুহম্মদ সুলাইমান মানসুরপুরীর বর্ণনা অনুযায়ী ৮৬টি যুদ্ধে হত্যা হয়েছে মাত্র ১০৮১ জন। বিশ্ববাসীর কাছে এ ধরনের কোনো দ্বিতীয় উদাহরণ নেই? শান্তির উদাহরণ এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে?
আজকে বর্তমান বিশ্বে একটি ছোটখাটো অভিযানে শত শত মানুষ মারা যায়। আপনি কল্পনা করুন ৮৬ টি যুদ্ধ আর ২৩ বছর সময়কাল রক্তপাত হচ্ছে মাত্র ১০ ৮১ জন।
বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সা: ছিলেন আরব- আজম উভয়ের শীর্ষ নেতা এবং সামরিক সেনাপতি, তিনি স্বয়ং ২৮টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিন্তু তিনার হাতে ওবাই বিন খালফ ব্যতীত কেউ নিহত হয়নি। এটি ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল হাকিম হযরত সাঈদ ইবনে মুসায়েব এবং ইমাম যুহরী রহ. এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আর বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফিজ ইবনে কাসীর তার তাফসীর ইবনে কাসীর গ্রন্থে এর সনদ কে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ( তাফসীর ইবনে কাসীর পৃঃ ২/২৯৬)
অনুরূপভাবে হাফিজ ইবনে কাইয়্যিম রহ. উহুদ যুদ্ধ প্রসঙ্গে লিখেন: উহুদ যুদ্ধে নবী সা: যখন তাঁর সাহাবাদের নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছান, ওবাই ইবনে খালফ ঘোড়ার উপর চড়েছিল, রাসূল সা: কে দেখে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নিকটবর্তী হতে শুরু করে, রাসূল সা: জানতে পেরে, সাহাবী হযরত হারিস ইবনে সামার কাছ থেকে একটি বর্শা নিয়ে ওবাইকে আঘাত, সে নিহত হয়ে মক্কা ফিরে যায়, পথে "সারাফ" নামক স্থানে মারা যায়। (যাদুল মাআদ পৃঃ ৩/১৯৯)
শুধু তাই নয়, বিশ্বনবী সা: যখন কোন সেনাপতিকে যুদ্ধ অভিযানে পাঠাতেন তখন তাকে বিশেষ আকারে নির্দেশনা দিতেন এবং বলতেন: তোমারা যুদ্ধ করে যাও কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করো না, ওয়াদা ভঙ্গ করো না, গনীমাতের মাল আত্মসাৎ করো না, লাশ বিকৃত করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৪৪১৪)
আর সহীহ আল বুখারীর এক বর্ণনায় এসেছে, ইব্‌নে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: -এর কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রসূল সা: মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন। (সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং ৩০১৫)
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম ধর্মে এত সুস্পষ্ট আদেশ ও নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিগুলো মিথ্যা ও অপপ্রচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চাচ্ছে যে, ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম, মুসলিমরা শান্তি বিরোধী। এটি হল মিথ্যা অপবাদ। আমি জোরালো ভাবে সারা বিশ্ববাসীকে নিকট থেকে ইসলাম ধর্ম জানার আহবান জানায়।
সত্যিকারের ইসলামই হচ্ছে শান্তির ধর্ম। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক। নচিৎ শান্তির প্রতিষ্ঠার আশা ও আকাঙ্ক্ষা বিফ
ল ও ব্যর্থ।
 
Back
Top