প্রশ্নোত্তর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধন করা কী ইসলামে জায়েয?

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
1,141
Comments
1,333
Solutions
1
Reactions
12,660
উত্তর : ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আন্দোলন, বিক্ষোভ মিছিল কোন উপকারে আসে না। বরং এর মাধ্যমে অন্যায়, অপরাধ ও অবিচারের রাস্তাগুলো প্রশস্ত হয়। এই জনসমুদ্র যখন কোন বাজার ও দোকানের সামনে দিয়ে অতিবাহিত হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রে দোকানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি হয়। সরকার ও সাধারণ মানুষের সম্পত্তি বিনষ্ট করা হয়। কখনো কখনো মিছিলে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ দেখা যায়। এগুলো খুবই ঘৃণিত কাজ, এর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। তবে আমি অবগত হয়েছি যে, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের কিছু খ্রীষ্টান দেশে আন্দোলন ও বিক্ষোভ ছাড়া অধিকার আদায় করা সম্ভব হয় না। তাই খ্রীষ্টান ও পাশ্চাত্যের মানুষেরা নিজেদের অধিকার আদায় ও সরকারকে যথাযোগ্য জবাব দেয়ার জন্য আন্দোলন করে। এগুলো তো অমুসলিম দেশ, তারা এগুলোকে দোষনীয় মনে করে না। অনুরূপভাবে মুসলিমরাও যদি আন্দোলন ছাড়া নিজেদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে আমি আশা করছি যে, এক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করা দোষনীয় নয়। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রে এরূপ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আমি আশ্চর্য হই ঐ সমস্ত মুসলিম দেশের কথা শুনে, যেখানে কোন অপরাধ দেখলেই ইসলামী দলের নেতার নেতৃত্বে কর্মীরা রাস্তায় নেমে মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এবং পুরো দেশে তাণ্ডব চালায়। এতে কী লাভ আছে?!’। (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-২০৩)

আজকের দিনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বাস্তবায়ন করা খুবই দুঃসাধ্য বিষয়। দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো দেশ। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহন প্রধান সড়কগুলোয় আটকা পড়ে। নগরজুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে সবচেয়ে বিপদে পড়েন বয়স্ক মানুষ, শিশু ও নারীরা। তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয় তাদের। প্রচণ্ড গরমে গাড়িতে বসে বাচ্চারাও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বহু রোগী রাস্তাতেই মারা যায়, অসহায় মা রাস্তাতেই বাচ্চা প্রসব করে। অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ। কোন মানুষকে যেন কখনো সামান্যতম কষ্ট ও দুর্ভোগের মুখে না পড়তে হয়, ইসলাম সেদিকে খেয়াল রেখেছে। রাজনীতি বা আন্দোলনের নামে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা ইসলামের শিক্ষা নয়। পৃথিবীতে মানুষের একটি মৌলিক অধিকার জীবনের নিরাপত্তা। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ইসলামের অন্যতম নির্দেশনা। ‘ইসলাম’ অর্থ আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণ করে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলিম তো সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘তাঁরা (ছাহাবীগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১০, ১১, ৬৪৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৪০, ৪১, ৪২)। তাই পৃথিবীতে সত্য ও ন্যায়নীতির বাস্তব প্রতিফলনের মাধ্যমে সমাজজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরিহার্য কর্তব্য এবং ঈমানী দায়িত্ব। সুতরাং মানবসমাজে কোনরকম নাশকতা, অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর এতে বিপর্যয় ঘটাবে না’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৫৬)

আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা বিভিন্ন স্থানে নানা পর্যায়ে ধর্মবিরোধী, মানবতাবিবর্জিত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, বাস্তবিকই ইসলামের মর্মবাণীর সাথে এগুলো কোন সম্পর্ক নেই। নিরপরাধ জনগণকে গুলি করে, বোমা মেরে বা যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগে হত্যা করা, পুড়িয়ে মারা ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দেয়া, দুর্ভোগে ফেলা গুনাহের কাজ। নবী (ﷺ) এ ব্যাপারে তার উম্মতকে সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে, বাজারে কিংবা যেসব জায়গায় জনসমাগম ঘটে, এসব জায়গায় এমন কোন কাজ না করা উচিত, যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে বহু মানুষকে কষ্টে ফেলবে। আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি তীর সাথে নিয়ে আমাদের মসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে কিংবা তিনি বলেছিলেন, তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোন মুসলিমের গায়ে না লাগে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৭৫, ৪৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬১৫)

সুতরাং যারা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে দেশ ও জাতির ক্ষতি করতে চায়, শেষ পর্যন্ত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৭)। এসব মানুষ ব্যক্তিজীবনেও মানুষের অভিশাপ বয়ে বেড়ায়। পরকালেও কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। পবিত্র কুরআনে এসব কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে মুনাফিক বা কপট হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না, তারা বলে আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১১-১২)

– মাসিক আল ইখলাছ, ডিসেম্বর ২০২৪
 
Last edited:
Back
Top