সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

কুরআন লজ্জাস্থানের হিফাজত বলতে কুরআনুল কারিমে কি বুঝানো হয়েছে?

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
690
Comments
1,222
Solutions
17
Reactions
7,057
Credits
5,690
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصٰرِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ

"মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে [১]; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।[সুরা আন নুর: ৩০]

[১] যৌনাঙ্গ সংযত রাখার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। নিম্নে তার কিছু উদাহরণ পেশ করা হলোঃ কুপ্রবৃত্তি চরিতাৰ্থ করার যত পন্থা আছে, সবগুলো থেকে যৌনাঙ্গকে সংযত রাখা। এতে ব্যভিচার, পুংমৈথুন, দুই নারীর পারস্পরিক ঘর্ষণ- যাতে কামভাব পূর্ণ হয় এবং হস্তমৈথুন ইত্যাদি সব অবৈধ কৰ্ম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [দেখুন-সা‘দী, ফাতহুল কাদীর] আয়াতের উদ্দেশ্য অবৈধ ও হারাম পন্থায় কাম প্রবৃত্তি চরিতাৰ্থ করা এবং তার সমস্ত ভূমিকাকে নিষিদ্ধ করা। তন্মধ্যে কাম-প্রবৃত্তির প্রথম ও প্রারম্ভিক কারণ হচ্ছে- দৃষ্টিপাত করা ও দেখা এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে ব্যভিচার।

এ দু’টিকে স্পষ্টতঃ উল্লেখ করে হারাম করে দেয়া হয়েছে। এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী হারাম ভূমিকাসমূহ- যেমন কথাবার্তা শোনা, স্পর্শ করা ইত্যাদি প্রসঙ্গক্রমে এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। ইবনে সীরীন রাহিমাহুল্লাহ আবিদা আস-সালমানী রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, যা দ্বারা আল্লাহ্‌র বিধানের বিরুদ্ধাচরণ হয়, তাই কবীরা গোনাহ। কিন্তু আয়াতে তার দুই প্রান্ত- সূচনা ও পরিণতি উল্লেখ করা হয়েছে। সূচনা হচ্ছে চোখ তুলে দেখা এবং পরিণতি হচ্ছে ব্যভিচার। জারীর ইবন আব্দুল্লাহ বাজালী থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোন বেগানা নারীর উপর দৃষ্টি পতিত হলে সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। [মুসলিমঃ ২১৫৯]

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে আছে, ‘প্রথম দৃষ্টি মাফ এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ।’ [আবু দাউদঃ ২১৪৯, তিরমিযীঃ ২৭৭৭, মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৫১, ৩৫৭] এর উদ্দেশ্য এই যে, প্রথম দৃষ্টিপাত অকস্মাৎ ও অনিচ্ছাকৃত হওয়ার কারণে ক্ষমার্হ। নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম দৃষ্টিপাতও ক্ষমার্হ নয়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আল্লাহ্‌ তা‘আলা বনী আদমের উপর কিছু কিছু ব্যভিচার (যিনা) হবে জানিয়ে দিয়েছেন, তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। চক্ষুর যিনা হল তাকানো, ....। [বুখারীঃ ৬২৪৩, ৬৬১২, মুসলিমঃ ২৬৫৭]

তদ্রুপ নিজের সতরকে অন্যের সামনে উন্মুক্ত করা থেকে দূরে থাকাও যৌনাঙ্গ সংযত করার পর্যায়ভুক্ত। [ফাতহুল কাদীর] পুরুষের জন্য সতর তথা লজ্জাস্থানের সীমানা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর।” [দারুকুতনীঃ ৯০২] শরীরের এ অংশ স্ত্রী ছাড়া আর কারোর সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে খোলা হারাম। জারহাদে আল- আসলামী বৰ্ণনা করেছেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে আমার রান খোলা অবস্থায় ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তুমি কি জানো না, রান ঢেকে রাখার জিনিস?” [তিরমিযীঃ ২৭৯৬, আবু দাউদঃ ৪০১৪]

অন্য একটি হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “নিজের স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া বাকি সবার থেকে নিজের সতরের হেফাজত করো।” এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করে, আর যখন আমরা একাকী থাকি? জবাব দেনঃ “এ অবস্থায় আল্লাহ্‌ থেকে লজ্জা করা উচিত, তিনিই এর হকদার।” [আবু দাউদঃ ৪০১৭, তিরমিযীঃ ২৭৬৯, ইবনে মাজাহঃ ১৯২০]।

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘কোন লোক যেন অপর লোকের লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায়, অনুরূপভাবে কোন মহিলা যেন অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায় এবং কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষের সাথে একই কাপড়ে অবস্থান না করে, তদ্রুপ কোন মহিলাও যেন অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ে অবস্থান না করে। [মুসলিমঃ ৩৩৮]

অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বেঁচে থাক। লোকেরা বললঃ আমরা এ ধরণের বসা থেকে বাঁচতে পারি না; কেননা, সেখানে বসে আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি বসা ব্যতীত তোমার গত্যন্তর না থাকে তবে পথের হক আদায় করবে। তারা বললঃ পথের দাবী কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চক্ষু নত করা, কষ্টদায়ক বিষয় দূর করা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ করা, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা। [বুখারীঃ ২৪৬৫, মুসলিমঃ ২১২১]

অনুরূপভাবে দাড়ি-গোঁফ বিহীন বালকদের প্রতি ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত করাও অনুচিত। ইবনে কাসীর লিখেছেন- পূর্ববর্তী অনেক মনীষী শ্মশ্রুবিহীন বালকদের প্রতি অপলক নেত্ৰে তাকিয়ে থাকাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন এবং অনেক আলেমের মতে এটা হারাম।


- তাফসীর আবু বকর যাকারিয়্যা​
 
Top