যে রোযাদার স্বামী-স্ত্রী মিলনে ধৈর্য রাখতে পারে; অর্থাৎ সঙ্গম বা বীর্যপাত ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা না করে, তাদের জন্য আপোসে চুম্বন ও প্রেমকেলি বা কোলাকুলি করা বৈধ এবং তা তাদের জন্য মকরূহ নয়। কারণ, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রোযা রাখা অবস্থায় স্ত্রী-চুম্বন করতেন এবং রোযা অবস্থায় প্রেমকেলিও করতেন। আর তিনি ছিলেন যৌন ব্যাপারে বড় সংযমী।[1] অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) স্ত্রী-চুম্বন করতেন রমাযানে রোযা রাখা অবস্থায়;[2] রোযার মাসে।[3]
আর এক বর্ণনায় আছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আমাকে চুম্বন দিতেন। আর সে সময় আমরা উভয়ে রোযা অবস্থায় থাকতাম।’[4]
উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁর সাথেও অনুরূপ করতেন।[5] আর তদ্রূপ বলেন হাফসা (রাঃ)ও।[6]
উমার (রাঃ) বলেন, একদা স্ত্রীকে খুশী করতে গিয়ে রোযা অবস্থায় আমি তাকে চুম্বন দিয়ে ফেললাম। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ‘আজ আমি একটি বিরাট ভুল করে ফেলেছি; রোযা অবস্থায় স্ত্রী-চুম্বন করে ফেলেছি।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘যদি রোযা রেখে পানি দ্বারা কুল্লি করতে, তাহলে তাতে তোমার অভিমত কি?’’ আমি বললাম, ‘তাতে কোন ক্ষতি নেই।’ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তাহলে ভুল কিসের?’’[7]
পক্ষান্তরে রোযাদার যদি আশঙ্কা করে যে, প্রেমকেলি বা চুম্বনের ফলে তার বীর্যপাত ঘটে যেতে পারে অথবা (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ের উত্তেজনার ফলে সহসায় মিলন ঘটে যেতে পারে, কারণ সে সময় সে হয়তো তাদের উদগ্র কাম-লালসাকে সংযত করতে পারবে না, তাহলে সে কাজ তাদের জন্য হারাম। আর তা হারাম এই জন্য যে, যাতে পাপের ছিদ্রপথ বন্ধ থাকে এবং তাদের রোযা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ ও যুবকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই; যদি উভয়ের কামশক্তি এক পর্যায়ের হয়। সুতরাং দেখার বিষয় হল, কাম উত্তেজনা সৃষ্টি এবং বীর্যস্খলনের আশঙ্কা। অতএব সে কাজ যদি যুবক বা কামশক্তিসম্পন্ন বৃদ্ধের উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাহলে তা উভয়ের জন্য মকরূহ। আর যদি তা না করে তাহলে তা বৃদ্ধ, যৌন-দুর্বল এবং সংযমী যুবকের জন্য মকরূহ নয়। পক্ষান্তরে উভয়ের মাঝে পার্থক্য করার ব্যাপারে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে[8] তা আসলে কামশক্তি বেশী থাকা ও না থাকার কারণে। যেহেতু সাধারণতঃ বৃদ্ধ যৌন ব্যাপারে শান্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যুবক তার বিপরীত।
ফলকথা, সকল শ্রেণীর দম্পতির জন্য উত্তম হল রোযা রেখে প্রেমকেলি, কোলাকুলি ও চুম্বন বিনিময় প্রভৃতি যৌনাচারের ভূমিকা পরিহার করা। কারণ, যে গরু সবুজ ফসল-জমির আশেপাশে চরে, আশঙ্কা থাকে যে, সে কিছু পরে ফসল খেতে শুরু করে দেবে। সুতরাং স্বামী যদি ইফতার করা অবধি ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে সেটাই হল সর্বোত্তম। আর রাত্রি তো অতি নিকটে এবং তাতো যথেষ্ট লম্বা। অল্-হামদু লিল্লাহ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে।’’ (কুরআনুল কারীম ২/১৮৭)
চুম্বনের ক্ষেত্রে চুম্বন গালে হোক অথবা ঠোঁটে উভয় অবস্থাই সমান। তদনুরূপ সঙ্গমের সকল প্রকার ভূমিকা ও শৃঙ্গারাচার; সকাম স্পর্শ, ঘর্ষণ, দংশন, মর্দন, প্রচাপন, আলিঙ্গন প্রভৃতির মানও চুম্বনের মতই। এ সবের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আর এ সব করতে গিয়ে যদি কারো মযী (বা উত্তেজনার সময় আঠালো তরল পানি) নিঃসৃত হয়, তাহলে তাতে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।[9]
জ্ঞাতব্য যে, জিভ চোষার ফলে একে অন্যের জিহবারস গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। যেমন স্তনবৃন্ত চোষণের ফলে মুখে দুগ্ধ এসে গলায় নেমে গেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।
স্ত্রীর দেহাঙ্গের যে কোন অংশ দেখা রোযাদার স্বামীর জন্যও বৈধ। অবশ্য একবার দেখার ফলেই চরম উত্তেজিত হয়ে কারো মযী বা বীর্যপাত ঘটলে কোন ক্ষতি হবে না।[10] কারণ, অবৈধ নজরবাজীর ব্যাপারে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ। কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি বৈধ নয়।’’[11] তাছাড়া দ্রুতপতনগ্রস্ত এমন দুর্বল স্বামীর এমন ওযর গ্রহণযোগ্য।
পক্ষান্তরে কেউ বারবার দেখার ফলে মযী নির্গত করলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু বারবার দেখার ফলে বীর্যপাত করে ফেললে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
অবশ্য স্ত্রী-দেহ নিয়ে কল্পনা করার ফলে কারো মযী বা বীর্যপাত হলে রোযা নষ্ট হয় না। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর ব্যাপক নির্দেশ এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের মনের কল্পনা উপেক্ষা করেন, যতক্ষণ কেউ তা কাজে পরিণত অথবা কথায় প্রকাশ না করে।’’[12]
আর এক বর্ণনায় আছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আমাকে চুম্বন দিতেন। আর সে সময় আমরা উভয়ে রোযা অবস্থায় থাকতাম।’[4]
উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁর সাথেও অনুরূপ করতেন।[5] আর তদ্রূপ বলেন হাফসা (রাঃ)ও।[6]
উমার (রাঃ) বলেন, একদা স্ত্রীকে খুশী করতে গিয়ে রোযা অবস্থায় আমি তাকে চুম্বন দিয়ে ফেললাম। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ‘আজ আমি একটি বিরাট ভুল করে ফেলেছি; রোযা অবস্থায় স্ত্রী-চুম্বন করে ফেলেছি।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘যদি রোযা রেখে পানি দ্বারা কুল্লি করতে, তাহলে তাতে তোমার অভিমত কি?’’ আমি বললাম, ‘তাতে কোন ক্ষতি নেই।’ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তাহলে ভুল কিসের?’’[7]
পক্ষান্তরে রোযাদার যদি আশঙ্কা করে যে, প্রেমকেলি বা চুম্বনের ফলে তার বীর্যপাত ঘটে যেতে পারে অথবা (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ের উত্তেজনার ফলে সহসায় মিলন ঘটে যেতে পারে, কারণ সে সময় সে হয়তো তাদের উদগ্র কাম-লালসাকে সংযত করতে পারবে না, তাহলে সে কাজ তাদের জন্য হারাম। আর তা হারাম এই জন্য যে, যাতে পাপের ছিদ্রপথ বন্ধ থাকে এবং তাদের রোযা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ ও যুবকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই; যদি উভয়ের কামশক্তি এক পর্যায়ের হয়। সুতরাং দেখার বিষয় হল, কাম উত্তেজনা সৃষ্টি এবং বীর্যস্খলনের আশঙ্কা। অতএব সে কাজ যদি যুবক বা কামশক্তিসম্পন্ন বৃদ্ধের উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাহলে তা উভয়ের জন্য মকরূহ। আর যদি তা না করে তাহলে তা বৃদ্ধ, যৌন-দুর্বল এবং সংযমী যুবকের জন্য মকরূহ নয়। পক্ষান্তরে উভয়ের মাঝে পার্থক্য করার ব্যাপারে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে[8] তা আসলে কামশক্তি বেশী থাকা ও না থাকার কারণে। যেহেতু সাধারণতঃ বৃদ্ধ যৌন ব্যাপারে শান্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে যুবক তার বিপরীত।
ফলকথা, সকল শ্রেণীর দম্পতির জন্য উত্তম হল রোযা রেখে প্রেমকেলি, কোলাকুলি ও চুম্বন বিনিময় প্রভৃতি যৌনাচারের ভূমিকা পরিহার করা। কারণ, যে গরু সবুজ ফসল-জমির আশেপাশে চরে, আশঙ্কা থাকে যে, সে কিছু পরে ফসল খেতে শুরু করে দেবে। সুতরাং স্বামী যদি ইফতার করা অবধি ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে সেটাই হল সর্বোত্তম। আর রাত্রি তো অতি নিকটে এবং তাতো যথেষ্ট লম্বা। অল্-হামদু লিল্লাহ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে।’’ (কুরআনুল কারীম ২/১৮৭)
চুম্বনের ক্ষেত্রে চুম্বন গালে হোক অথবা ঠোঁটে উভয় অবস্থাই সমান। তদনুরূপ সঙ্গমের সকল প্রকার ভূমিকা ও শৃঙ্গারাচার; সকাম স্পর্শ, ঘর্ষণ, দংশন, মর্দন, প্রচাপন, আলিঙ্গন প্রভৃতির মানও চুম্বনের মতই। এ সবের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আর এ সব করতে গিয়ে যদি কারো মযী (বা উত্তেজনার সময় আঠালো তরল পানি) নিঃসৃত হয়, তাহলে তাতে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।[9]
জ্ঞাতব্য যে, জিভ চোষার ফলে একে অন্যের জিহবারস গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। যেমন স্তনবৃন্ত চোষণের ফলে মুখে দুগ্ধ এসে গলায় নেমে গেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।
স্ত্রীর দেহাঙ্গের যে কোন অংশ দেখা রোযাদার স্বামীর জন্যও বৈধ। অবশ্য একবার দেখার ফলেই চরম উত্তেজিত হয়ে কারো মযী বা বীর্যপাত ঘটলে কোন ক্ষতি হবে না।[10] কারণ, অবৈধ নজরবাজীর ব্যাপারে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ। কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি বৈধ নয়।’’[11] তাছাড়া দ্রুতপতনগ্রস্ত এমন দুর্বল স্বামীর এমন ওযর গ্রহণযোগ্য।
পক্ষান্তরে কেউ বারবার দেখার ফলে মযী নির্গত করলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু বারবার দেখার ফলে বীর্যপাত করে ফেললে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
অবশ্য স্ত্রী-দেহ নিয়ে কল্পনা করার ফলে কারো মযী বা বীর্যপাত হলে রোযা নষ্ট হয় না। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর ব্যাপক নির্দেশ এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে। তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের মনের কল্পনা উপেক্ষা করেন, যতক্ষণ কেউ তা কাজে পরিণত অথবা কথায় প্রকাশ না করে।’’[12]
[1] (বুখারী ১৯২৭, মুসলিম ১১০৬, আবূ দাঊদ ২৩৮২, তিরমিযী ৭২৯, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯৩৯২নং)
[2] (মুসলিম ১১০৬নং)
[3] (আবূ দাঊদ ২৩৮৩, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯৩৯০নং)
[4] (আবূ দাঊদ ২৩৮৪, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯৩৯৭নং)
[5] (মুসলিম ১১০৮নং)
[6] (মুসলিম ১১০৭নং)
[7] (আহমাদ, মুসনাদ ১/২১, ৫২, সহীহ আবূ দাঊদ ২০৮৯, দারেমী, সুনান ১৬৭৫, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯৪০৬নং)
[8] (সহীহ আবূ দাঊদ ২০৯০নং)
[9] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৯০, ৪৩২-৪৩৩, ফাসিঃ ৪৮পৃঃ, তাসিঃ ৪৩-৪৪পৃঃ)
[10] (বুখারী ১৯২৭নং দ্রঃ)
[11] (আবূ দাঊদ ২১৪৯, তিরমিযী ২৭৭৮, সহীহ আবূ দাঊদ ১৮৮১নং)
[12] (বুখারী ২৫২৮, মুসলিম ১২৭, দ্রঃ আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩৯০-৩৯১)
রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী