• আসসালামু আলাইকুম, খুব শীঘ্রই আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন না। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সিয়াম রোযা অবস্থায় স্ত্রী-সঙ্গম

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,263
Credits
6,307
যে সব কারণে রোযা নষ্ট হয় তা দুই শ্রেণীর; প্রথম শ্রেণীর কারণ রোযা নষ্ট করে এবং তাতে কাযা ওয়াজেব হয়। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর কারণ রোযা নষ্ট করে এবং কাযার সাথে কাফ্ফারাও ওয়াজেব করে।

যে কারণে রোযা নষ্ট হয় এবং কাযার সাথে কাফ্ফারাও ওয়াজেব হয়; তা হলঃ-

১। স্ত্রী-সঙ্গমঃ

সঙ্গম বলতে স্ত্রী-যোনীতে স্বামীর লিঙ্গাগ্র প্রবেশ হলেই রোযা নষ্ট হয়ে যায়; তাতে বীর্যপাত হোক, আর নাই হোক। তদনুরূপ অবৈধভাবে পায়খানা-দ্বারে লিঙ্গাগ্র প্রবেশ করালেও রোযা বাতিল গণ্য হয়।

জ্ঞাতব্য যে, স্ত্রীর পায়খানাদ্বারে সঙ্গম করা মহাপাপ এবং এক প্রকার কুফরী।

বলা বাহুল্য রোযা অবস্থায় যখনই রোযাদার স্ত্রী-মিলন করবে, তখনই তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং এ মিলন যদি রমাযানের দিনে সংঘটিত হয় এবং রোযা রোযাদারের জন্য ফরয হয়, (অর্থাৎ রোযা কাযা করা তার জন্য বৈধ না হয়) তাহলে ঐ মিলনের ফলে যথাক্রমে ৫টি জিনিস সংঘটিত হবেঃ-

(ক) কাবীরা গোনাহ; আর তার ফলে তাকে তওবা করতে হবে।

(খ) তার রোযা বাতিল হয়ে যাবে।

(গ) তাকে ঐ দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।

(ঘ) ঐ দিনের রোযা (রমাযান পর) কাযা করতে হবে।

(ঙ) বৃহৎ কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর তা হল, একটি ক্রীতদাসকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে হবে। তাতে সক্ষম না হলে, লাগাতার (একটানা) দুই মাস রোযা রাখতে হবে। আর তাতে সক্ষম না হলে, ৬০ জন মিসকীনকে খাদ্যদান করতে হবে।

এ ব্যাপারে মূল ভিত্তি হল, মহান আল্লাহর এই বাণী,

(أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ ...) الآية

অর্থাৎ, রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৭)

আর আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে বসে ছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি ধ্বংসগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।’ তিনি বললেন, ‘‘কোন জিনিস তোমাকে ধ্বংসগ্রস্ত করে ফেলল?’’ লোকটি বলল, ‘আমি রোযা অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে ফেলেছি।’ এ কথা শুনে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, ‘‘তুমি কি একটি ক্রীতদাস মুক্ত করতে পারবে?’’ লোকটি বলল, ‘জী না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে কি তুমি একটানা দুই মাস রোযা রাখতে পারবে?’’ সে বলল, ‘জী না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে কি তুমি ৬০ জন মিসকীনকে খাদ্যদান করতে পারবে?’’ লোকটি বলল, ‘জী না।’ ---[1]

যে মহিলার উপর রোযা ফরয, সেই মহিলা সম্মত হয়ে রমাযানের দিনে স্বামী-সঙ্গম করলে তারও উপর কাফ্ফারা ওয়াজেব। অবশ্য তার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও স্বামী যদি তার সাথে জোরপূর্বক সহবাস করতে চায়, তাহলে তার জন্য যথাসাধ্য তা প্রতিহত করা জরুরী। রুখতে না পারলে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজেব নয়।

এই জন্যই যে মহিলা জানে যে, তার স্বামীর কামশক্তি বেশী; সে তার কাছে প্রেম-হৃদয়ে কাছাকাছি হলে নিজের যৌন-পিপাসা দমন রাখতে পারে না, সেই মহিলার জন্য উচিৎ, রমাযানের দিনে তার কাছ থেকে দূরে থাকা এবং প্রসাধন ও সাজ-সজ্জা না করা। তদনুরূপ স্বামীর জন্যও উচিৎ, পদস্খলনের জায়গা থেকে দূরে থাকা এবং রোযা থাকা অবস্থায় স্ত্রীর কাছ না ঘেঁষা; যদি আশঙ্কা হয় যে, উগ্র যৌন-কামনায় সে তার মনকে কাবু রাখতে পারবে না। কারণ, এ কথা বিদিত যে, প্রত্যেক নিষিদ্ধ জিনিসই ঈপ্সিত।[2]

পক্ষান্তরে যদি রমাযানের রোযা কাযা রাখতে গিয়ে স্ত্রী-সঙ্গম করে ফেলে, তাহলে তার ফলে কাফ্ফারা নেই। আর তার জন্য ঐ দিনের বাকী অংশ পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাও জরুরী নয়। অবশ্য তার গোনাহ হবে। কারণ, সে ইচ্ছাকৃত একটি ওয়াজেব রোযা নষ্ট করে তাই।[3]

মুসাফির যদি সফরে থাকা অবস্থায় রোযা রেখে স্ত্রী-সহবাস করে ফেলে, তাহলে তার জন্য কেবল কাযা ওয়াজেব, কাফ্ফারা ওয়াজেব নয়। যেমন, ঐ দিনের বাকী অংশ পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাও তার জন্য জরুরী নয়। কেননা, সে মুসাফির। আর মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা ভাঙ্গা (এবং পরে কাযা করা) বৈধ।

অনুরূপভাবে এমন রোগী, যার রোগের জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ ছিল; কিন্তু কষ্ট করে সে রোযা রেখেছিল। সে যদি তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে, যে সেই দিনেই মাসিক থেকে পবিত্রা হয়েছে, তাহলে তারও গোনাহ হবে না; অবশ্য কাযা ওয়াজেব।[4]

যে ব্যক্তি যে বৈধ ওযরের ফলে রোযা বন্ধ রেখেছিল, দিনের মধ্যে তার সেই ওযর দূর হয়ে যাওয়ার পর যদি স্ত্রী-সহবাস করে, তাহলে তার জন্য কাফ্ফারা ওয়াজেব নয়। যেমন, কোন মুসাফির যদি দিন থাকতে রোযা না রেখে ঘরে ফিরে দেখে যে, তার স্ত্রী সেই দিনেই (ফজরের পর) মাসিক থেকে পবিত্রা হয়েছে, তাহলে সঠিক মতে তাদের জন্য সঙ্গম বৈধ। এতে স্বামী-স্ত্রীর কোন প্রকার পাপ হবে না। যেহেতু ঐ দিন শরীয়তের অনুমতিক্রমে তাদের জন্য মান্য নয় এবং ঐ দিনে রোযা না রাখাও তাদের পক্ষে অনুমোদিত।[5]

যদি কোন ব্যক্তি সুস্থ অবস্থায় রোযা রেখে স্ত্রী-সহবাস করার পর দিন থাকতেই এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে, যাতে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ, তাহলেও তার জন্য কাফ্ফারা ওয়াজেব; যদিও তার জন্য দিনের শেষভাগে (অসুস্থ হওয়ার পর) রোযা ভাঙ্গা বৈধ। কারণ, সহবাসের সময় সে তাতে অনুমতিপ্রাপ্ত ছিল না।

তদনুরূপ যে ব্যক্তি দিনের প্রথমাংশে সহবাস করার পর সফর করে তাহলে তার জন্যও কাফ্ফারা ওয়াজেব; যদিও সফর করার পরে ঐ দিনেই তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বৈধ। কেননা, রোযা ভাঙ্গা বৈধ হওয়ার পূর্বেই সে (রমাযান) মাসের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে।[6]

যদি কোন ব্যক্তি (কাফ্ফারা থেকে রেহাই পাওয়ার বাহানায়) প্রথমে কিছু খেয়ে অথবা পান করে তারপর স্ত্রী-সঙ্গম করে, তাহলে তার পাপ অধিক। যেহেতু সে রমাযানের মর্যাদাকে পানাহার ও সঙ্গমের মাধ্যমে ডবল করে নষ্ট করেছে। বৃহৎ কাফ্ফারা তার হক্কে অধিক কার্যকর। আর তার ঐ বাহানা ও ছলনা নিজের ঘাড়ে বোঝা স্বরূপ। তার জন্য খাঁটি তওবা ওয়াজেব।[7]

জ্ঞাতব্য যে, রমাযান মাসে দিনে রোযা অবস্থায় সঙ্গম ছাড়া অন্য কোন কারণে সেই ব্যক্তির জন্য কাফ্ফারা ওয়াজেব হয় না, যার জন্য রোযা রাখা ফরয। বলা বাহুল্য, নফল রোযা রেখে, কসমের কাফ্ফারার রোযা রেখে, কোন অসুবিধার ফলে ইহরাম অবস্থায় কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললে তার জরিমানার রোযা রেখে, তামাত্তু হজ্জ করতে গিয়ে কুরবানী দিতে না পেরে তার বিনিময়ে রোযা রেখে অথবা নযরের রোযা রেখে স্ত্রী-সহবাস করে ফেললে কাফ্ফারা ওয়াজেব নয়। যেমন সঙ্গম না করে (স্ত্রী-যোনীর বাইরে) বীর্যপাত করে ফেললেও কাফ্ফারা ওয়াজেব নয়।[8] অবশ্য কাযা তো ওয়াজেবই।

জ্ঞাতব্য যে, ব্যভিচার করে ফেললেও সহবাসের মতই কাফ্ফারা ওয়াজেব।[9] তাছাড়া ব্যভিচারের সাজা ও তওবা তো আছেই।


[1] (বুখারী ১৯৩৭, মুসলিম ১১১১নং)
[2] (দ্রঃ আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪১৫, সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ৭০নং, ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ৬১পৃঃ)
[3] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪১৩, আহকামুন মিনাস সিয়াম, ক্যাসেট, ইবনে উষাইমীন)
[4] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪১৩)
[5] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪২১)
[6] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪২২)
[7] (সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ৪৭নং)
[8] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪২২-৪২৩)
[9] (আল-ফাওয়াইদুল জালিয়্যাহ, ইবনে বায ১১৯পৃঃ)


রমাযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল
শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী​
 
Top