• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

আকিদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ ঘুমন্ত অবস্থায় রূহের হয়েছিল না স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায়

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
379
Comments
450
Solutions
1
Reactions
8,759
Credits
22,167
স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মিরাজ হয়

স্বশরীরে মিরাজ হওয়ার অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ​

পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তার বান্দাকে রজনীর কিয়দাংশে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে আমি করেছিলাম বরকতময়। তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্যে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বাণী ইসরাঈল: ১)
দেহ ও রূহএর সমন্বয়ে গঠিত সত্তাকে عبد বা বান্দা বলা হয়। ঠিক এমনি দেহ ও রূহের সমষ্টিগত রূপকে إنسان মানুষ বলা হয়। এটিই সর্বজন বিদিত এবং এটিই সঠিক। সুতরাং দেহ ও রূহসহ মিরাজ হয়েছিল। বিবেক-বুদ্ধির দলীল এটিকে অসম্ভব মনে করে না। যমীন থেকে মানুষ আসমানে উঠা অসম্ভব হলে আসমান থেকে ফেরেশতা নামাও অসম্ভব হবে। আর তা হলে নবুওয়াতে মুহাম্মাদী অস্বীকার করা হয়। এ রকম অস্বীকার করা সুস্পষ্ট কুফুরী।

এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, মিরাজের রাতে উর্ধ্বাকাশে যাওয়ার পূর্বে বাইতুল মাকদিসে ভ্রমণ করানোর হিকমত কী? এর জবাব হলো, আল্লাহই অধিক জানেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজের সত্যতা প্রকাশ করা। কুরাইশরা যখন বাইতুল মাকদিসের কিছু লক্ষণাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করলো, তখন তিনি তাদেরকে তা বলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়; বাইতুল মাকদিস থেকে ফিরে আসার পথে কুরাইশদের বাণিজ্যিক কাফেলা যে স্থানে দেখে এসেছিলেন, তাও তিনি বলে দিয়েছিলেন। মক্কা থেকে সরাসরি যদি আসমানের দিকে উঠে যেতেন, তাহলে এ ফায়দাটি হাসিল হতো না। কেননা আসমানে যা দেখে এসেছেন, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকে খবর দিলেও তারা তার সত্যতা যাচাই করতে পারতো না। আর বাইতুল মাকদিস এবং উহার মধ্যকার নিদর্শনাবলী তাদের জানা ছিল। তাই তিনি তার বর্ণনা প্রদান করেছেন। যে ব্যক্তি মিরাজের ঘটনা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে, সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে যে, আল্লাহ তাআলার জন্য রয়েছে সকল সৃষ্টির উপর সমুন্নত হওয়ার বিশেষণ।[1] আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তা বুঝার তাওফীক দিন।

নোটঃ [1]. মিরাজের রাত্রিতে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত নিদর্শন দেখেছেন: তিনি যমীনে যেসব নিদর্শন দেখেছেন, তার মধ্যে রয়েছে,

১) তিনি যখন বাইতুল মাকদিসে পৌঁছলেন, তখন তার জন্য দুধ ও মদ পরিবেশন করা হলে তিনি দুধ গ্রহণ করলেন এবং মদ পরিহার করলেন। তাকে বলা হলো আপনি যদি মদ পান করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হতো। ছহীহ মুসলিম হা/১৬২

২) তিনি দেখলেন, একদল লোক চাষাবাদ করছে। তারা বীজ বপন করছে। একদিনেই সে ফসল পেকে যাচ্ছে এবং তারা তা কাটছে। যখন কাটা শেষ হয়, সাথে সাথে ফসল পূর্বের মত হয়ে যায়। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে জিবরীল! এটি কী? জিবরীল বললেন, এরা হচ্ছেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। তারা আল্লাহর রাস্তায় যে মাল খরচ করে, তা এভাবেই বৃদ্ধি পায়।

৩) রাস্তার পাশে একজন বৃদ্ধ মহিলা দেখলেন। তার শরীরে রয়েছে সকল প্রকার অলংকার। মহিলাটি বয়সের ভারে একেবারে নুইয়ে পড়েছে। জিবরীল আলাইহিস সালামকে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এ মহিলাটির বয়স যে পরিমাণ বাকী রয়েছে, দুনিয়ার বয়স কেবল সেই পরিমাণ বাকী আছে। অর্থাৎ দুনিয়ার বয়স একেবারে শেষ প্রামেত্ম এসে গেছে। বৃদ্ধ মহিলার শরীরে যেসব অলঙ্কার রয়েছে, তা হলো দুনিয়ার চাকচিক্যময় সম্পদ ও অলঙ্কার।

৪) তিনি দেখলেন কিছু লোকের ঠোঁট ও জিহবা লোহার কেঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। একবার কাটা শেষ হলে পুনরায় আগের মত জোড়া লেগে যাচ্ছে। পুনরায় কাটা হচ্ছে। কোনো বিরতি দেয়া হচ্ছে না। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জিবরীল! এ লোকগুলো কারা? জিবরীল বললেন, এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের বক্তা। বক্তৃতার মাধ্যমে এরা মানুষের মধ্যে ফিতনা ছড়াতো এবং তারা এমন কথা বলতো যে অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করতো না।

৫) তিনি সে রাতে সুদখোরের শাস্তি দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি রক্তের নদীর কাছে আসলাম। দেখলাম নদীতে একটি লোক সাঁতার কাটছে। নদীর তীরে অন্য একটি লোক কতগুলো পাথর একত্রিত করে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাঁতার কাটতে কাটতে লোকটি যখন নদীর কিনারায় পাথরের কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তির নিকটে আসে তখন দাঁড়ানো ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পাথর মুখে নিয়ে লোকটি আবার সাঁতরাতে শুরু করে। যখনই লোকটি নদীর তীরে আসতে চায় তখনই তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেন, এরা হলো আপনার উম্মতের সুদখোর’’।

৬) তিনি ব্যভিচারীর শাস্তি দেখেছেন। মিরাজের রাত্রিতে তিনি একদল লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তাদের সামনে একটি পাত্রে গোশত রান্না করে রাখা হয়েছে। অদূরেই অন্য একটি পাত্রে রয়েছে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত কাঁচা গোশত। লোকদেরকে রান্না করে রাখা গোশত থেকে বিরত রেখে পঁচা এবং দুর্গন্ধযুক্ত, কাঁচা গোশত খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা চিৎকার করছে এবং একান্ত অনিচ্ছা সত্তেও তা থেকে ভক্ষণ করছে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীল ফেরেশতাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ এরা কোন্ শ্রেণীর লোক? জিবরীল বললেন: এরা আপনার উম্মতের ঐ সমস্ত পুরুষ যারা নিজেদের ঘরে পবিত্র এবং হালাল স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অপবিত্র এবং খারাপ মহিলাদের সাথে রাত্রি যাপন করত।

৭) অতঃপর তিনি একটি ছোট পাথরের কাছে আসলেন। দেখলেন তা থেকে একটি বিরাট ষাঁড় বের হচ্ছে। বের হওয়ার পর সেই ছিদ্র দিয়ে পুনরায় প্রবেশ করতে চাচ্ছে। কিন্তু চেষ্টা করা সত্ত্বেও তাতে প্রবেশ করতে পারছেনা। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলেন: এ কি দেখছি হে জিবরীল! তিনি বললেন, এ হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে, বড় বড় কথা বলে। অতঃপর সেই কথার জন্য সে অনুতপ্ত হয়। কিন্তু তা ফেরত নিতে পারে না।

৮) তিনি দেখলেন একলোক বিরাট এক লাকড়ির বোঝা বেধে মাথায় উঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্ত পারছেনা। তারপর আরো লাকড়ি সংগ্রহ করে বোঝাটা আরো বড় করছে। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: হে জিবরীল! এ কী কান্ড দেখছি? জিবরীল বললেন: এ হলো তোমার উম্মতের ঐ ব্যক্তি যার নিকট মানুষের অনেক আমানত রয়েছে। সে তা আদায় না করেই আরো নতুন নতুন আমানত সংগ্রহ করছে।

৯) সে রাতে তিনি ছ্বলাত আদায় না করার শাস্তি দেখেছেন। তিনি বলেন, আমরা এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আসলাম। তার মাথার কাছে পাথর হাতে নিয়ে অন্য একজন লোক দাঁড়িয়ে ছিল। দাঁড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মাথায় সেই পাথর নিক্ষেপ করছে। পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি বলের মত গড়িয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে্। লোকটি পাথর কুড়িয়ে আনতে আনতে আবার মাথা ভাল হয়ে যাচ্ছে। দাড়ানো ব্যক্তি প্রথম বারের মত আবার আঘাত করছে এবং তার মাথাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ফেরেশতাদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, কী অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? উত্তরে তারা বললেন: এব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করেছিল। কিন্তু কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি এবং সে ফরয ছবলাতের সময় ঘুমিয়ে থাকত। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।

১০) যারা যাকাত আদায় করে না, সে রাতে তিনি তাদের শাস্তি দেখেছেন। অতঃপর তিনি এমন একদল লোকের কাছে আসলেন, যাদের লজ্জাস্থানের উপর এক টুকরা এবং পিছনের রাস্তার উপর এক টুকরা কাপড় ঝুলছে। চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় তারা চলাফেরা করছে। তারা কাটাযুক্ত, যাক্কুম গাছ, জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর খাচ্ছে। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে জিবরীল! এরা কারা? জিবরীল বললেন, এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক, যারা তাদের মালের যাকাত দেয় না। আল্লাহ কাউকে যুলুম করেন না। আর আল্লাহ যালেম নন।

১১) ফেরাউনের মেয়েদের সেবিকা মাশেতার কবর দেখেছেন। আকাশে যেসব নিদর্শন দেখেছেন:

১) তিনি সাত আসমানের উপর বায়তুল মামূর দেখেছেন। বায়তুল মামূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জিবরীল বললেন, এটি হলো বায়তুল মা’মূর। এতে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা ছ্বলাত আদায় করে। এক বার যে এখান থেকে বের হয়ে আসে কিয়ামতের পূর্বে সে আর তাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। আসমানে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালী নেই, যাতে কোন না কোন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে, কিংবা রুকু অবস্থায় অথবা সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর ইবাদতে মশগুল নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ​

‘‘তারা অহংকার বশত তাঁর বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্ত হয় না। দিন রাত তার প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, বিশ্রাম নেয় না’’। (সূরা আম্বীয়া: ১৯-২০)

২) অতঃপর আমার জন্যে সিদরাতুল মুনতাহা তথা সিমামেত্মর কূল বৃক্ষ উম্মুক্ত করা হল। এ বৃক্ষের ফলগুলো ছিল কলসীর ন্যায় বড়। গাছের পাতাগুলো ছিল হাতীর কানের মত বড়।

৩) মিরাজের রাত্রিতে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় জিবরীল ফেরেশতাকে আসল আকৃতিতে দেখলেন। অথচ ইতোপূর্বে তিনি আরেকবার দুনিয়াতে তাকে দেখেছেন।

৪) তিনি জান্নাত দেখেছেন। সাত আসমানের উপরে তিনি জান্নাত দেখেছেন। তাতে রয়েছে, এমন নেয়ামত, যা কোন চোখ কোনো দিন দেখেনি, কোনো কান যার বর্ণনা শুনেনি এবং মানুষ যার কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা মুমিন মুত্তাকীদের জন্য এটি তৈরী করে রেখেছেন। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাকে জান্নাত দেখানো হলো। আমি সেখানে আবু তালহার স্ত্রীকে দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি আমার সামনে বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর আওয়াজ শুনলাম। (সহীহ মুসলিম)

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে বেলাল! কোন্ আমলের মাধ্যমে তুমি আমার আগেই জান্নাতে প্রবেশ করলে? কেননা আমি যখনই জান্নাতে প্রবেশ করেছি, তখনই আমার সামনে তোমার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। গতরাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তোমার আওয়াজ শুনেছি। বেলাল তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যখনই আযান দিয়েছি, তখনই দু’রাকআত ছ্বলাত পড়েছি। আর যখনই আমার অযু ছুটে যায়, তখনই আমি অযু করি এবং আমি মনে করি আমার উপর দুই রাকআত ছ্বলাত পড়া জরুরী। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, এ কারনেই তুমি এত ফযীলতের অধিকারী হয়েছো।

রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করে একটি স্বর্ণের প্রাসাদ দেখলাম। বললাম, এটি কার প্রাসাদ? ফেরেশতাগণ বললেন, কুরাইশদের একজন যুবক লোকের। আমি মনে করলাম, আমি তো একজন যুবক ব্যক্তি। তারপরও আমি বললাম, সেই যুবকটি কে? ফেরেশতাগণ বললেন, তিনি হলেন উমার ইবনুল খাত্তাব। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে উমার ইবনুল খাত্তাব! আমি যদি তোমার গাইরাতের (ঈর্ষার) কথা না জানতাম, তাহলে আমি সেখানে প্রবেশ করতাম। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি আপনার উপর গাইরাত বা ঈর্ষা করবো? (বুখারী, হা/৭০২৪)

৫) তিনি সেই রাতে জাহান্নাম দেখেছেন। তিনি সেই রাত্রে জাহান্নামের প্রহরী মালেক ফেরেশতাকেও দেখেছেন। তাকে সালাম দিলেন। তার দিকে ফিরে তাকাতেই তিনি আমাকে প্রথমেই সালাম দিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিষন্ন-চিন্তিত। তার মুখে হাসি ছিল না। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, যেদিন থেকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করে তাকে এর প্রহরী নিযুক্ত করেছেন, সেদিন থেকে তিনি কখনো হাসেননি। তিনি যদি ইতিপূর্বে কারো সাথে হাসতেন, তাহলে আপনার জন্য অবশ্যই হাসতেন। তাহলে চিন্তা করুন! যারা এতে প্রবেশ করবে, তাদের অবস্থা কী হবে?
মিরাজের কতিপয় শিক্ষা:

১) ঈমানী পরীক্ষা: রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সংবাদ দিলেন যে, তিনি আজ রাতে বাইতুল মাকদিস দেখে এসেছেন, তখন মুশরিকদের কিছু লোক দৌড়িয়ে আবূ বকরের নিকট গিয়ে বলল, তোমর বন্ধুর খবর শুনবে কি? সে বলছে, আজকের রাত্রির ভিতরেই সে নাকি বাইতুল মাকদিস ভ্রমণ করে চলে এসেছে। তিনি বললেন, আসলেই কি মুহাম্মাদ তা বলেছেন? তারা একবাক্যে বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: যদি বলেই থাকে, তাহলে সত্য বলেছেন। তারা আবার বলল: তুমি কি বিশ্বাস কর যে, সে এক রাত্রির ভিতরে বাইতুল মাকদিস ভ্রমণ করে সকাল হওয়ার পূর্বেই আবার মক্কায় চলে এসেছে? উত্তরে তিনি বললেন: আমি এর চেয়েও দূরের সংবাদ বিশ্বাস করি। সকাল-বিকাল আকাশ থেকে সংবাদ আসে। আমি তা বিশ্বাস করি। সে দিনই আবূ বকরকে সত্যবাদী তথা সিদ্দীক উপাধীতে ভূষিত করা হয়।

২) দাঈদের জন্য শিক্ষা: এ বরকতময় সফরে দ্বীনের দাঈদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মানুষের কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করার জন্য বের হতে চাইলেন তখন উম্মে হানী তাকে বাধা দিয়ে বলল: ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার ভয় হচ্ছে মানুষ আপনাকে মিথ্যুক বলবে। তিনি তখন বললেন: আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তা বলবো। তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বললেও আমি তা সকলের সামনে প্রকাশ করবো। এখান থেকে দাঈদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে তারা আল্লাহর দ্বীন মানুষের কাছে নির্ভয়ে পৌঁছে দিবে। মানুষ এতে খুশী হোক বা নাখোশ হোক। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

(ومن التمس رضا الناس بسخط الله سخط الله عليه واسخط عليه الناس)​

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে নাখোশ করে মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করবে, আল্লাহ তার উপর নাখোশ হবেন এবং মানুষকেও তার উপর নাখোশ করে দিবেন’’। সুতরাং নাবী-রসূলদেরকে যেখানে যাদুকর, মিথ্যুক ও পাগল বলা হয়েছে, দাঈদেরকে তা বলা হলে সেটি কোন নতুন বিষয় নয়।

৩) পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বলাত: নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: অতঃপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরয করা হল। ফেরত আসার সময় মূসা (আ.)এর সাথে সাক্ষাৎ হল। মূসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন: কি নিয়ে আসলেন? নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরয করা হয়েছে। মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, আমি মানুষের অবস্থা আপনার চেয়ে অনেক বেশী অবগত। বানী ইসরাঈলকে আমি ভালভাবেই পরীক্ষা করে দেখেছি। আপনার উম্মাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত পড়তে পারবে না। আপনি ফেরত যান এবং কমাতে বলুন। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি মূসা (আ.)এর পরামর্শ মোতাবেক ফেরত গিয়ে কমাতে বললাম। চল্লিশ করা হলো। আবার গিয়ে আবদারের প্রেক্ষিতে ত্রিশ করা হলো। পুনরায় যাওয়ার প্রেক্ষিতে বিশ ওয়াক্ত করে দেয়া হলো। অতঃপর দশে পরিণত হলো। মূসা (আ.)এর কাছে দশ ওয়াক্ত নিয়ে ফেরত আসলে তিনি আবার যেতে বললেন। এবার পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বলাত নিয়ে মূসা (আ.)এর কাছে আগমন করলাম। তিনি আমাকে আবার যেতে বললেন। আমি তাকে বললাম: আমি গ্রহণ করে নিয়েছি। তখন আল্লাহর পক্ষ হতে ঘোষণা করা হলো: আমার ফরজ ঠিক রাখলাম। কিন্তু বান্দাদের উপর থেকে সংখ্যা কমিয়ে দিলাম। আর আমি প্রতিটি সৎআমলের বিনিময় দশ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিব। ছহীহ মুসলিম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ ‘‘আমার কথার নিকট কথার কোনো পরিবর্তন হয় না। আর আমি বান্দাদের প্রতি যালেমও নই’’। (সূরা কাফ: ২৯)

মিরাজ সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত বিশ্বাস ও তার প্রতিবাদ: দীর্ঘ ২৭ বছর পর্যন্ত মিরাজে থাকার কাল্পনিক গল্প।
আব্দুল কাদের জিলানীর ঘাড়ে আরোহন সিদরাতুল মুন্তাহা পার হয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছার কিচ্ছা।
শবে মিরাজ উপলক্ষে আমাদের সমাজে যেসব অনুষ্ঠান পালন করা হয়, তা সঠিক নয়।

গ্রন্থঃ শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া
লেখকঃ ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (রহিমাহুল্লাহ)
অধ্যায়ঃ ৪৩. মিরাজ সত্য​

ওয়েব লিঙ্কঃ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মিরাজ হয়
অ্যান্ড্রয়েড এপ ডাউনলোড লিঙ্কঃ Bangla Hadith V8 (Beta) - Apps on Google Play
 
COMMENTS ARE BELOW
Top