সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

ফাযায়েলে আমল রাতের সলাতের ফযীলত

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
820
Comments
967
Reactions
9,085
Credits
4,146
রাতের সলাতের ফযীলত -

এক) রাতের সলাত ইবাদুর রহমানের বৈশিষ্ট্য:

“আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে।” [সূরা আল ফুরক্বান- ২৫:৬৪]

ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,

“যে ব্যক্তি রাতের সলাতের পর দুই বা ততোধিক রাকা‘আত সলাত আদায় করলো সে আল্লাহর সামনে সিজদাহ করে বা দাঁড়িয়ে রাত কাটালো।” [তাফসীরুল কুরতুবী- ৭২/১৩]

দুই) রাতের সলাত মু’মিনের মর্যাদার শিরোনাম:
নবী ﷺ বলেছেন, “মু’মিনের মর্যাদা ক্বিয়ামুল লাইলে এবং সম্মান মানুষের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকাতে।’’ [হাসান; সহীহুল জামে‘- ৩৭১০]

তিন) রাতের সলাত ফরয সলাতের পর সর্বশ্রেষ্ঠ সলাত:

আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “রমাদ্বানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররামের সাওম এবং ফরয সলাতের পর সর্বোত্তম সলাত হচ্ছে রাতের সলাত।” [সহীহ মুসলিম- ১১৬৩]

চার) রাতের সলাত সালেহীনদের অভ্যাস ও পরিচায়ক:
বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই রাতের সলাত আদায় করবে, কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের নিত্য আচরণ ও প্রথা। রাতের ইবাদাত আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, পাপকর্মের প্রতিবন্ধক, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং দেহের রোগ দূরকারী।” [সহীহুল জামে‘- ৪০৭৯]

পাঁচ) রাতের সলাত নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করাবে:

আবূ ইউসূফ আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, “হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার করো, (ক্ষুধার্তকে) অন্ন দান করো, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখো এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন সলাত আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ [সহীহুল জামে‘- ৭৮৮৫]

ছয়) রাতের সলাত আদায়কারীকে আল্লাহর যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়:

আবূ সাঈদ আল-খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে নিজে সজাগ হলো এবং তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দিলো, অতঃপর উভয়েই একত্রে দুই রাকা‘আত সলাত আদায় করলো, তাদের দু’জনকেই (আল্লাহর) অধিক যিকিরকারী ও যিকিরকারিণীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়।” [সহীহ আবূ দাঊদ- ১৪৫১]

সাত) যিনি রাতের সলাত আদায় করেন না তার মতো হতে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিষেধ করেছেন:

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, “হে আবদুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, যে রাত জেগে ইবাদাত করতো, পরে তা ছেড়ে দিয়েছে।” [সহীহ বুখারী- ১১৫২]

আট) রাসূলুল্লাহ ﷺ রাতের সলাত আদায়ের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন:

সালিম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমার ইবনে খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ (একবার) বললেন, “আবদুল্লাহ ইবনে উমার কতই না ভালো মানুষ হতো, যদি সে রাতে (তাহাজ্জুদের) সলাত আদায় করতো।” সালিম বলেন, ‘তারপর থেকে (আমার আব্বা) আবদুল্লাহ রাতে অল্পই ঘুমাতেন।” [সহীহ বুখারী- ৩৭৩৯]

নয়) আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হতে রাতের সলাত গুরুত্বপূর্ণ:

আমর ইবনে আবাসাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, “শেষ রাতের গভীরে প্রতিপালক নিজ বান্দার সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হন, সুতরাং তুমি যদি ঐ সময় আল্লাহর যিকিরকারীদের দলভুক্ত হতে সক্ষম হও, তাহলে তা হয়ে যাও।” [সহীহ তিরমিযী- ৩৫৭৯]

দশ) রাতের সলাতে তিলাওয়াতকারীদের জন্য রয়েছে বিশাল বিশাল পুরস্কার ও মর্যাদা:

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতের সলাতে দশটি আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার নাম গাফিলদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে না। আর যে ব্যক্তি (রাতের) সলাতে একশত আয়াত পাঠ করবে, তার নাম অনুুগত বান্দাদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতে দাঁড়িয়ে এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করবে, তাকে অফুরন্ত পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে।” [সহীহ আবূ দাঊদ- ১৩৯৮]

এগারো) রাতের সলাত আদায়ের সর্বোত্তম সময় হচ্ছে রাতের শেষ প্রহর:

নবী ﷺ বলেছেন, “রাতের সলাত আদায়ের সর্বোত্তম সময় হচ্ছে রাতের শেষ প্রহর।” [সহীহুল জামে‘- ১১০৬]

বারো) রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো রাতের সলাত বাদ দিতেন না:

আবদুল্লাহ ইবনে আবূ ক্বাইস রাহিমাহুল্লাহ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, “তুমি রাতের ক্বিয়াম ছেড়ে দিবে না, কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো এটি পরিত্যাগ করতেন না; তিনি ﷺ অসুস্থ হলে কিংবা অলসতা বোধ করলে বসে সলাত আদায় করতেন।” [সহীহ আবূ দাঊদ- ১৩০৭]

তেরো) রাসূলুল্লাহ ﷺ ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং ইশার পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন:

আবূ বারযাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং ইশার পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন।” [সহীহ বুখারী- ৫৬৮]

চৌদ্দ) রাতের সলাতের ব্যাপারে মণীষীদের মূল্যবান উক্তি:

এক. আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা:

“ইবনে মাস‘উদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার কাছে রাতের সলাত আদায়ের অপারগতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, তোমাদের পাপ তোমাদের বসিয়ে রেখেছে।” [লাতায়েফুল মা‘আরেফ- ৪৬]

দুই. আবূ বকর ইবনে ‘আইয়াশ ও আবূ ইসহাক্ব আস সাবি‘ঈ রাহিমাহুমাল্লাহ

আবূ বকর ইবনে ‘আইয়াশ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমি আবূ ইসহাক্ব আস সাবি‘ঈকে কাঁদতে দেখলাম, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘হে আবূ ইসহাক্ব তুমি কাঁদছো কেন?’ আবূ ইসহাক্ব বললো, ‘আমার শক্তি চলে গেছে, সলাত আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছে, আমি সলাতে দাঁড়াতে পারিনা কেবল সূরা বাক্বারাহ এবং সূরা আলে ইমরান পড়া ছাড়া!’” [আছ-ছিক্বাত লিবনে হিব্বান- ৭৬/৮]

তিন. আল আখনাসী রাহিমাহুল্লাহ ও তাবি‘ঈ আবূ ইসহাক্ব আস সাবি‘ঈ রাহিমাহুল্লাহ

আল আখনাসী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “প্রসিদ্ধ তাবি‘ঈ আবূ ইসহাক্ব আস সাবি‘ঈ রাহিমাহুল্লাহ মৃত্যুর দুই বছর পূর্বে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, তাকে দাঁড় করিয়ে না দিলে তিনি নিজে দাঁড়াতে পারতেন না; যখন তিনি পরিপূর্ণ দাঁড়িয়ে যেতেন তখন তিনি এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করতেন।” [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা- ৩৯৭/৫]

চার. ইমাম আওযা‘ঈ রাহিমাহুল্লাহ

ইমাম আওযা‘ঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি রাতের সলাত দীর্ঘায়িত করবে, আল্লাহ তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন দাঁড়ানো সহজ করে দিবেন।” [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা- ১১৯/৭]

পাঁচ. ফুদ্বাইল ইবনে ‘আইয়াদ্ব রাহিমাহুল্লাহ

ফুদ্বাইল ইবনে ‘আইয়াদ্ব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যদি তোমার ভাগ্যে রাতের সলাত ও দিনের সাওম না জুটে তাহলে জেনে রেখো তোমার পাপ তোমাকে বেঁধে রেখেছে।” [লাতায়েফুল মা‘আরিফ- ৪৬]

ছয়. আবূ সুলাইমান আদ-দারানী রাহিমাহুল্লাহ

আবূ সুলাইমান আদ-দারানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যদি রাত না থাকতো তাহলে আমি দুনিয়ায় থাকতে চাইতাম না।” [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা- ১৮৪/১০]

আবূ সুলাইমান আদ দারানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “কত খাবারই না রাতের সলাতে বাধা দিয়েছে! কত হারাম দৃষ্টি কুরআনের সূরা তিলাওয়াতে বাধা দিয়েছে!” [হিলইয়াতুল আউলিয়া- ৩০৭/২]

সাত. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ

ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “রাতের সলাত স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম উপকারী উপায়, দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলোর একটি এবং শরীর, আত্মা ও ক্বলবের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়।” [যাদুল মা‘আদ- ২২৭/৪]
 
Top