পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর। অতঃপর:
ঘটনা অনেক আগের। জনৈক সৌদি শাইখ একটি ফিক্বহী ইস্যুতে সিরিয়ার এক শাইখের বই পড়েন। তাঁর মনে হয়, বইটিতে লেখক ভুল করেছেন। বিধায় তিনি কঠিনভাবে সেই লেখার রদ করে হোমড়াচোমড়া বই লিখে বসেন। এর কয়েকবছর পর সিরিয়ান শাইখ জানতে পারেন, তাঁর বইয়ের রদ করে বই লেখা হয়েছে। এবার তিনি সৌদি শাইখের বইয়ের রদ করে আরেকটি বিরাট বই লিখে বসেন। দুই শাইখের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু কোনো এক উপলক্ষে সিরিয়ার শাইখ গ্র্যান্ড মুফতি ইবনু বাযের কাছে আসেন। খবর পেয়ে ওই সৌদি শাইখও সেখানে তশরিফ আনেন।
সেই মজলিসে উপস্থিত ছিলেন কুয়েতের একজন স্বনামধন্য শাইখ ‘আল্লামাহ ফালাহ বিন ইসমা‘ঈল (হাফিযাহুল্লাহ)। তাঁর অভিব্যক্তি অনেকটা এরকম, আমরা তো মহা ফাঁপড়ে পড়লাম। দুই শাইখের মধ্যে যে রদ-পাল্টা-রদ হয়েছে, তা তো ছাত্ররা সবাই জানে। মানে ছাত্রদের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু একি! সৌদি শাইখ দেখি সিরিয়ান শাইখকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলেন। যেন কতকাল তিনি অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন তাঁরই জন্য!
সুপ্রিয় পাঠক, ঘটনা অনেক দীর্ঘ। অন্য একসময় পুরো ঘটনা বর্ণনা করব, ইনশাআল্লাহ। এখন বলি, সিরিয়ান সেই শাইখ হলেন ইমাম আলবানী। আর সৌদি শাইখ ছিলেন ইমাম হামূদ। রাহিমাহুমাল্লাহ।
সম্প্রতি আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেবকে নিয়ে কথা হচ্ছে। তাঁর গুরুতর কিছু ভুল তুলে ধরা হচ্ছে। এতে কিছু ভাইয়ের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়! কী সব্বোনাশ! এরা দেখছি আহলেহাদীস দা‘ঈদের পেছনে লেগেছে! আর যায় কোথায়? এতদিন জামাতী-ইখওয়ানীরা যেসব সংশয় পেশ করত, তাদের বিরুদ্ধে রদ করার কারণে, এখন আমাদের কতিপয় আহলেহাদীস ভাই সেসব সংশয় পেশ করতে শুরু করেছেন।
আপনারা সালাফীদেরকে কেন রদ করছেন? খেয়েদেয়ে কি কাজ নেই? মাঠেঘাটে তো কোনোদিন দা‘ওয়াত দিতে দেখলাম না। সব ঝাল ফেসবুকে মেটাচ্ছেন, তাইতো?! আহ! কী অমৃতবচন! তা ভাইয়াজি, যখন এই ফেসবুকেই জামাতী, খারিজী-সহ আরও নানা বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে লেখালেখি হলো, তখন এসব সংশয় কোথায় গিয়েছিল? কোন আক্কেলে তখন আপনি এসব লেখা প্রচার করেছিলেন, মাঠেঘাটে দাওয়াত বাদ দিয়ে?!
এরকম নানাপদের সংশয় দিয়ে খিচুড়ি তৈরি হচ্ছে ফেসবুকের ভিতর ও বাহির মহলে। সেসব সংশয়ের মধ্যে অন্যতম একটি সংশয় হলো, ভাই, রদ করছেন, ভালো কথা। তা আপনারা রদ করার আগে কেন উস্তায আব্দুর রাযযাকের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে আলোচনায় বসলেন না? কেন সমালোচনার আগে তাঁকে জানালেন না?
প্রিয় ভাইয়েরা, আপনাদের মনে পড়ে কিনা জানি না, জামাতীরা ঠিক একই কাজটা করত, যখন আপনারা তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন। ‘সাঈদী সাহেবকে কেন আগে জানানো হলো না?’ ‘আযহারী সাহেবের সাথে কেন আগে আলোচনায় বসা হলো না?’
‘আফসারী সাহেবকে কেন আগে পার্সোনালি নসিহত করা হলো না?’ এই টাইপের কথাবার্তা কিন্তু তখন শোনা যেত। আসলে এ ব্যাপারে সালাফদের মানহাজ কী? ‘উলামায়ে সুন্নাহর মানহাজ কী? তাঁরা কি সমালোচনার আগে ব্যক্তিগত নসিহত করাকে জরুরি মনে করেছেন? এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্যই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের অবতারণা।
প্রথমত, স্বয়ং রাসূল ﷺ তাদের দাবিকৃত মানহাজ অনুসরণ করেননি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “সা‘দ মিথ্যা বলেছে। বরং আজ এমন একটি দিন, যেদিন আল্লাহ কা‘বাকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কা‘বাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৪২৮০]
মক্কা বিজয়ের দিন আবূ সুফইয়ানের সামনে দিয়ে বিজেতা দলের বাহিনীগুলো যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে আনসারদের বাহিনী আসল। যাদের ঝাণ্ডাবাহী নেতা হলেন সা‘দ বিন ‘উবাদাহ। সা‘দ বিন ‘উবাদাহ আবূ সুফইয়ানকে অতিক্রম করার সময় বললেন, “হে আবূ সুফইয়ান! আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কা‘বার অভ্যন্তরে রক্তপাত হালাল হওয়ার দিন।” পরে রাসূল ﷺ একটি বাহিনী নিয়ে আসলে আবূ সুফইয়ান ঘটনাটি রাসূল ﷺ কে অবহিত করেন। তখন রাসূল ﷺ উপরিউক্ত কথা বলেন।
উপরিউক্ত হাদীস দিয়ে সৌদি আরবের প্রখ্যাত দা‘ঈ শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর ‘লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর’ গ্রন্থে এ মর্মে দলিল গ্রহণ করেছেন যে, শরিয়তবিরোধী ও বিদ‘আতীদের কোনো গিবত নেই। যে বইটি রিভিউ করেছেন এবং তাতে ভূমিকা লিখে দিয়েছেন ‘আল্লামাহ সালিহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)। তদনুরূপ বইটি পড়ে তা প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)।
অর্থাৎ, রাসূল ﷺ সেখানে সমালোচনা করেছেন। হাদীসের সাথে আমাদের বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা এখানে যে, নাবীজী ﷺ সাইয়্যিদুনা সা‘দের সাথে ব্যক্তিগত আলোচনা না করেই তাঁর সমালোচনা করেছেন। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, শরিয়তবিরোধীর সমালোচনা করার পূর্বে তাকে ব্যাক্তিগতভাবে জানানো শর্ত ও আবশ্যক নয়।
দ্বিতীয়ত, সালাফগণও শরিয়তবিরোধীর সমালোচনা করার জন্য আগে জানানো জরুরি মনে করেননি। ইমাম আবূ বকর আত্ব-ত্বারতূশী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “একদা (প্রখ্যাত তাবি‘ঈ) সুলাইমান বিন মিহরান আল-আ‘মাশ বুশরা নগরীতে আগমন করলেন। তিনি এক মসজিদে যেয়ে দেখেন, জনৈক গল্পবাজ সেখানে গল্প করছে (লোকদেরকে মিথ্যা গল্প শোনাচ্ছে)। সে বলে চলেছে, আমাদের কাছে আ‘মাশ হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ ইসহাক্ব থেকে, আমাদের কাছে আ‘মাশ হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ ওয়াইল থেকে। এ দেখে আ‘মাশ মজলিসের মাঝখানে বসে পড়লেন। এবার তিনি নিজের দুই বাহু উত্তোলন করে বগলের চুল উপড়াতে শুরু করলেন (তিনি হয়তো গল্পবাজের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কাজটি করেছিলেন, আল্লাহু আ‘লাম – সংকলক)।
তাঁর এই কাজ দেখে গল্পবাজ বলে উঠল, ইয়া শাইখ, আপনার কি লজ্জা বলে কিছু নেই?! আমরা এখানে ‘ইলমচর্চা করছি, আর আপনি এই কাজ করছেন! আ‘মাশ প্রত্যুত্তরে বললেন, তুমি যা করছ, আমি তার চেয়ে ভালো কাজে ব্যস্ত আছি। গল্পবাজ বলল, তা কীভাবে?! তিনি বললেন, কারণ আমি মশগুল সুন্নতি কাজে, আর তুমি মশগুল মিথ্যাচারে। আমি আ‘মাশ। তুমি যা বলছ, তার কিছুই আমি তোমার কাছে বর্ণনা করিনি। মজলিসের লোকেরা আ‘মাশের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ তাকে ছেড়ে আ‘মাশের পাশে সমবেত হলো। আর বলল, হে মুহাম্মাদের পিতা, আপনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করুন।” [আল-হাওয়াদিসু ওয়াল বিদা‘, পৃষ্ঠা: ১১১-১১২; আল-মাদখাল, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৪৬; তাহযীরুল খাওয়াস, পৃষ্ঠা: ১৯৭ ও ২৬৪; গৃহীত: লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর, পৃষ্ঠা: ২২৫]
উক্ত ঘটনা থেকে আমাদের বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা এখানে যে, ইমাম আ‘মাশ মজলিস শেষ হওয়ারও অপেক্ষা করেননি, মজলিসের মধ্যেই ওই মিথ্যুকের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। আমাদের ভাইদের কথা অনুযায়ী তিনি মজলিস শেষে চুপিসারে তাকে বলেননি, কী ব্যাপার, ভাইসাব? মিথ্যা হাদীস ছড়াচ্ছেন যে খুব?!
আইয়্যুহাল ইখওয়ান, এটা দ্বীন! যার ভয়াবহ বিভ্রান্তি বিশাল জনপদের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করেছে, যার ভুলকে মানুষ শরিয়ত মনে করছে, তার ভুলের খণ্ডন জরুরি ভিত্তিতে হওয়া উচিত। আর তাই সালাফগণ মোসাহেবির ধার ধারেননি। সমালোচনা করেছেন, শরিয়তবিরোধীর সমালোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। আপনারা কি ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র এই ঘটনাটি শোনেননি? সাহীহ মুসলিমের ‘ইমান’ অধ্যায়ের প্রথম হাদীস। তাক্বদীর অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে যখন তাঁকে জানানো হলো, তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, “যখন তুমি এদের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তাদেরকে জানিয়ে দাও, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আর আমার সাথেও তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।”
তিনি সমালোচনার করার আগে, তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার আগে তাদের সাথে আলোচনায় বসেননি। সুতরাং সমালোচনার জন্য আগে জানানো বা নির্জনে নসিহত করাকে শর্ত করা কখনোই উচিত নয়। এই কর্মপদ্ধতির স্বপক্ষে তাদের কোনো দলিল নেই।
সুপ্রিয় ভ্রাতৃমণ্ডলী, এবারে আমরা এ ব্যাপারে ‘উলামায়ে সুন্নাহর কিছু বক্তব্য পেশ করছি।
১. বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আল-মুজাদ্দিদ, আল-ফাক্বীহ, আন-নাক্বিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
·
২. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
উক্ত ফতোয়া বর্ণনা করেছেন শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ)। তিনি বলেছেন,
“যার ভুল দিগন্তবিস্তৃত হয়েছে, সীমা ছাড়িয়ে গেছে, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তার ভুলের খণ্ড করা ওয়াজিব, তাকে নসিহত করার পূর্বেই। পরবর্তীতে সম্ভব হলে নসিহত করা যাবে। একইভাবে তাকে নসিহত করার জন্য সফর করা আর দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া আবশ্যক নয়।
মক্কা মুকাররমার আযীযিয়্যাহ এলাকায় ইমাম আব্দুল ‘আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র বাড়িতে তাঁর মজলিসে আমরা তাঁকে একটি প্রশ্ন করেছিলাম। ঘটনা ১৪১৪ হিজরির রজব মাসের শেষের দিকের। সেসময় শাইখকে মক্কাতেই পাওয়া যেত। কারণ তখন মক্কায় ফিক্বহ একাডেমির বার্ষিক সম্মেলন চলছিল। আমরা দশজনেরও বেশি তালিবুল ইলম সেখানে ছিলাম। আমাদের মাঝেই ছিলেন আমাদের আকাঙ্ক্ষিত মানুষটি। আমরা তায়েফ ও জেদ্দা থেকে এসেছিলাম। সেই মুহূর্তে শাইখ ইবনু বাযের মজলিসে একজন মেহমান ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই সম্ভ্রান্ত লোক। আমরা তাঁকে পরিচয় দিলাম। তিনি বললেন, আপনারা কথা শুরু করেন। মাননীয় গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বাযের সাথে আমাদের বৈঠকের কারণ ছিল সাফার আল-হাওয়ালী ও সালমান আল-‘আওদাহর (সাম্প্রতিক সময়ের) বাড়াবাড়ি।
আমি আগত প্রশ্নের প্রারম্ভে এই কথাগুলো বললাম, যাতে সবাই বুঝতে পারেন, এটা প্রমাণিত বিষয়। ওই বৈঠকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের নাম আমার এখনও মনে আছে। তখন এই প্রশ্ন করা হলো, ‘সম্মাননীয় শাইখ, যে ব্যক্তি তার বিদ‘আত প্রকাশ করেছে, আর তার লেকচার ক্লিপের ভুল বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে, তার জন্য কি সফর করা আবশ্যক? আর তাকে কি গোপনে নসিহত করতে হবে, নাকি তার নিন্দা করতে হবে এবং তার থেকে সতর্ক করতে হবে?
মাননীয় গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, এক্ষেত্রে বিস্তারিত বিবরণের প্রয়োজন আছে। যখন কোনো ব্যক্তি তার ভুল বা ফাসেকি কাজকে প্রকাশ করে, তখন ‘উলামাদের নিকট মূলনীতি হচ্ছে—যে ব্যক্তি তা প্রকাশ করেছে, তার সম্ভ্রম হালাল। যে ব্যক্তি বিদ‘আত প্রকাশ করেছে এবং তার ভুল জনসাধারণের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে, তার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ হচ্ছে, অনুরূপভাবেই রদ করতে হবে। তার নিন্দা করতে হবে এবং তা ছড়িয়ে দিতে হবে। যেমনভাবে লোকদের কাছে তার ভুল ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা এমন ফাসেক লোকের সম্ভ্রম (তার ভুল সংক্রান্ত ব্যাপারে) হালাল। এবং তাকে নসিহত করতে হবে।” [শাইখ হারিসী প্রণীত ‘আর-রাদ্দুর রাইয়্যান ‘আলাল ক্বারনী ওয়া হাসসান ফী সাব্বিহিমাস সাহবাল কিরাম’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে সংগৃহীত; গৃহীত: তাসফিয়াতারবিয়া ব্লগ]
৩. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ‘আল্লামাতুল ফাক্বীহ, ইমাম রাবী‘ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “শাইখানা, কিছু কথা ছড়ানো হচ্ছে, আর তা সালাফীদের জন্য বিপথগামিতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদল লোক দাবি করছে, কারও থেকে সতর্ক করার আগে তাকে ব্যক্তিগত নসিহত করা ওয়াজিব। শাইখানা, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?”
উত্তর: “আমি আগেও এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। আমরা এ ধরনের লোকদের নিয়ে বিপদগ্রস্ত হয়েছি। তুমি দেখবে, সে ব্যাপকভাবে অন্যদের ব্যাপারে নাম ধরে নানারকম বাতিল কথা, মিথ্যাচার ও রটনা প্রচার করছে। যখন তাকে নসিহত করা হবে, সমালোচনা করা হবে, তখনই সে বলে, তারা আগে আমাকে সতর্ক করল না কেন? তারা আগে আমাকে নসিহত করল না কেন? তারা আগে আমাকে জানাল না কেন? এগুলো হলো বিভ্রান্তিকর আপত্তি। আমরা তাদের কাছ থেকে আশা করব, তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করুক, হকের দিকে ফিরে আসুক, আদব ও বিনয়ের সাথে। আর তারা এসব আপত্তি বর্জন করুক।
আচ্ছা, এ ভুল করেছে, তোমার সাথে কথা বলেনি, তোমাকে নসিহত করেনি। কিন্তু তুমি আগে হকের দিকে ফিরে আস, তারপর তাকে দোষারোপ করো। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে তোমার অনুসরণ করা হচ্ছে, আর তুমি তোমার বাতিল মতবাদ ও ত্রুটিবিচ্যুতির মধ্যেই অবস্থান করছ, আর বলছ, তারা এটা করল না, তারা এটা করল! এগুলো অর্থহীন প্রলাপ। মুমিনদের কর্তব্য হলো, তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব নসিহতই গ্রহণ করবে।
তুমি বইয়ের মধ্যে, আর লেকচারের মধ্যে তোমার ভুল প্রচার করছ! তুমি যদি তোমার ভুল গোপনে রাখ, আর ভুলগুলো অন্ধকারের মধ্যে চর্চা করো, তাহলে সেটা তোমার আর আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। আর এই লোক যদি তোমার ভুল আবিষ্কার করে ফলে, সে তোমাকে নসিহত করবে। এটা তোমার আর তার ব্যাপার। কিন্তু তুমি জগৎ জুড়ে তোমার (ভুল) কথা ও কাজ প্রচার করছ। এখন কোনো মুসলিম এসে তোমাকে খণ্ডন করল। এতে কোনো শর্তের ব্যাপার নেই। এসব আপত্তি বর্জন করো। যেসব আপত্তি মূলত বাতিলপন্থিদের, যারা বাতিল ও হঠকারিতায় অটল থেকে লাঞ্ছিত হয়েছে।” [“১৪০০ হিজরিতে শাইখ রাবী‘র সাক্ষাৎকার”– শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপ থেকে গৃহীত; দ্র.: www.rabee.net/ar/questions.php?cat=29&id=605
পরিশেষে বলি, আসুন, আমরা সালাফী মানহাজের দীপ্ত আলোয় আলোকিত হই এবং বাতিলপন্থিদের সংশয় থেকে বিরত থাকি। আর সর্বোপরি যাবতীয় ব্যক্তি, দল ও স্থানের প্রতি বিশেষ প্রীতি ও গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হই। এটা খুব খারাপ রোগ। আল্লাহর কাছে এ থেকে আমরা পানাহ চাই। অথচ তা‘আসসুব বা গোঁড়ামি এমন একটি রোগ, যা ব্যক্তিকে ধ্বংসে নিপাতিত করে। ভারতবর্ষের মুহাদ্দিস ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ)’র নসিহতটি মনে রাখি, “মধ্যপন্থি হওয়া এবং শরিয়তের কোনো বিষয়েই অন্ধ পক্ষপাতিত্ব না করাই হবে—তোমার সবচেয়ে বড়ো অর্জন। তুমি ইসলামের কোনো ‘আলিমের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে শরিয়তের বরকতকে বিনাশ কোরো না।” [আবজাদুল ‘উলূম, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৬২; গৃহীত: আত-তা‘আসসুব লিশ শুয়ূখ, পৃষ্ঠা: ৯২]
আল্লাহ আমাদেরকে অন্ধ পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার এবং যথাযথভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
ঘটনা অনেক আগের। জনৈক সৌদি শাইখ একটি ফিক্বহী ইস্যুতে সিরিয়ার এক শাইখের বই পড়েন। তাঁর মনে হয়, বইটিতে লেখক ভুল করেছেন। বিধায় তিনি কঠিনভাবে সেই লেখার রদ করে হোমড়াচোমড়া বই লিখে বসেন। এর কয়েকবছর পর সিরিয়ান শাইখ জানতে পারেন, তাঁর বইয়ের রদ করে বই লেখা হয়েছে। এবার তিনি সৌদি শাইখের বইয়ের রদ করে আরেকটি বিরাট বই লিখে বসেন। দুই শাইখের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু কোনো এক উপলক্ষে সিরিয়ার শাইখ গ্র্যান্ড মুফতি ইবনু বাযের কাছে আসেন। খবর পেয়ে ওই সৌদি শাইখও সেখানে তশরিফ আনেন।
সেই মজলিসে উপস্থিত ছিলেন কুয়েতের একজন স্বনামধন্য শাইখ ‘আল্লামাহ ফালাহ বিন ইসমা‘ঈল (হাফিযাহুল্লাহ)। তাঁর অভিব্যক্তি অনেকটা এরকম, আমরা তো মহা ফাঁপড়ে পড়লাম। দুই শাইখের মধ্যে যে রদ-পাল্টা-রদ হয়েছে, তা তো ছাত্ররা সবাই জানে। মানে ছাত্রদের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু একি! সৌদি শাইখ দেখি সিরিয়ান শাইখকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলেন। যেন কতকাল তিনি অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন তাঁরই জন্য!
সুপ্রিয় পাঠক, ঘটনা অনেক দীর্ঘ। অন্য একসময় পুরো ঘটনা বর্ণনা করব, ইনশাআল্লাহ। এখন বলি, সিরিয়ান সেই শাইখ হলেন ইমাম আলবানী। আর সৌদি শাইখ ছিলেন ইমাম হামূদ। রাহিমাহুমাল্লাহ।
সম্প্রতি আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেবকে নিয়ে কথা হচ্ছে। তাঁর গুরুতর কিছু ভুল তুলে ধরা হচ্ছে। এতে কিছু ভাইয়ের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়! কী সব্বোনাশ! এরা দেখছি আহলেহাদীস দা‘ঈদের পেছনে লেগেছে! আর যায় কোথায়? এতদিন জামাতী-ইখওয়ানীরা যেসব সংশয় পেশ করত, তাদের বিরুদ্ধে রদ করার কারণে, এখন আমাদের কতিপয় আহলেহাদীস ভাই সেসব সংশয় পেশ করতে শুরু করেছেন।
আপনারা সালাফীদেরকে কেন রদ করছেন? খেয়েদেয়ে কি কাজ নেই? মাঠেঘাটে তো কোনোদিন দা‘ওয়াত দিতে দেখলাম না। সব ঝাল ফেসবুকে মেটাচ্ছেন, তাইতো?! আহ! কী অমৃতবচন! তা ভাইয়াজি, যখন এই ফেসবুকেই জামাতী, খারিজী-সহ আরও নানা বিদ‘আতীর বিরুদ্ধে লেখালেখি হলো, তখন এসব সংশয় কোথায় গিয়েছিল? কোন আক্কেলে তখন আপনি এসব লেখা প্রচার করেছিলেন, মাঠেঘাটে দাওয়াত বাদ দিয়ে?!
এরকম নানাপদের সংশয় দিয়ে খিচুড়ি তৈরি হচ্ছে ফেসবুকের ভিতর ও বাহির মহলে। সেসব সংশয়ের মধ্যে অন্যতম একটি সংশয় হলো, ভাই, রদ করছেন, ভালো কথা। তা আপনারা রদ করার আগে কেন উস্তায আব্দুর রাযযাকের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে আলোচনায় বসলেন না? কেন সমালোচনার আগে তাঁকে জানালেন না?
প্রিয় ভাইয়েরা, আপনাদের মনে পড়ে কিনা জানি না, জামাতীরা ঠিক একই কাজটা করত, যখন আপনারা তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন। ‘সাঈদী সাহেবকে কেন আগে জানানো হলো না?’ ‘আযহারী সাহেবের সাথে কেন আগে আলোচনায় বসা হলো না?’
‘আফসারী সাহেবকে কেন আগে পার্সোনালি নসিহত করা হলো না?’ এই টাইপের কথাবার্তা কিন্তু তখন শোনা যেত। আসলে এ ব্যাপারে সালাফদের মানহাজ কী? ‘উলামায়ে সুন্নাহর মানহাজ কী? তাঁরা কি সমালোচনার আগে ব্যক্তিগত নসিহত করাকে জরুরি মনে করেছেন? এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্যই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের অবতারণা।
প্রথমত, স্বয়ং রাসূল ﷺ তাদের দাবিকৃত মানহাজ অনুসরণ করেননি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “সা‘দ মিথ্যা বলেছে। বরং আজ এমন একটি দিন, যেদিন আল্লাহ কা‘বাকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কা‘বাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৪২৮০]
মক্কা বিজয়ের দিন আবূ সুফইয়ানের সামনে দিয়ে বিজেতা দলের বাহিনীগুলো যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে আনসারদের বাহিনী আসল। যাদের ঝাণ্ডাবাহী নেতা হলেন সা‘দ বিন ‘উবাদাহ। সা‘দ বিন ‘উবাদাহ আবূ সুফইয়ানকে অতিক্রম করার সময় বললেন, “হে আবূ সুফইয়ান! আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কা‘বার অভ্যন্তরে রক্তপাত হালাল হওয়ার দিন।” পরে রাসূল ﷺ একটি বাহিনী নিয়ে আসলে আবূ সুফইয়ান ঘটনাটি রাসূল ﷺ কে অবহিত করেন। তখন রাসূল ﷺ উপরিউক্ত কথা বলেন।
উপরিউক্ত হাদীস দিয়ে সৌদি আরবের প্রখ্যাত দা‘ঈ শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর ‘লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর’ গ্রন্থে এ মর্মে দলিল গ্রহণ করেছেন যে, শরিয়তবিরোধী ও বিদ‘আতীদের কোনো গিবত নেই। যে বইটি রিভিউ করেছেন এবং তাতে ভূমিকা লিখে দিয়েছেন ‘আল্লামাহ সালিহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)। তদনুরূপ বইটি পড়ে তা প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)।
অর্থাৎ, রাসূল ﷺ সেখানে সমালোচনা করেছেন। হাদীসের সাথে আমাদের বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা এখানে যে, নাবীজী ﷺ সাইয়্যিদুনা সা‘দের সাথে ব্যক্তিগত আলোচনা না করেই তাঁর সমালোচনা করেছেন। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, শরিয়তবিরোধীর সমালোচনা করার পূর্বে তাকে ব্যাক্তিগতভাবে জানানো শর্ত ও আবশ্যক নয়।
দ্বিতীয়ত, সালাফগণও শরিয়তবিরোধীর সমালোচনা করার জন্য আগে জানানো জরুরি মনে করেননি। ইমাম আবূ বকর আত্ব-ত্বারতূশী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “একদা (প্রখ্যাত তাবি‘ঈ) সুলাইমান বিন মিহরান আল-আ‘মাশ বুশরা নগরীতে আগমন করলেন। তিনি এক মসজিদে যেয়ে দেখেন, জনৈক গল্পবাজ সেখানে গল্প করছে (লোকদেরকে মিথ্যা গল্প শোনাচ্ছে)। সে বলে চলেছে, আমাদের কাছে আ‘মাশ হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ ইসহাক্ব থেকে, আমাদের কাছে আ‘মাশ হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ ওয়াইল থেকে। এ দেখে আ‘মাশ মজলিসের মাঝখানে বসে পড়লেন। এবার তিনি নিজের দুই বাহু উত্তোলন করে বগলের চুল উপড়াতে শুরু করলেন (তিনি হয়তো গল্পবাজের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কাজটি করেছিলেন, আল্লাহু আ‘লাম – সংকলক)।
তাঁর এই কাজ দেখে গল্পবাজ বলে উঠল, ইয়া শাইখ, আপনার কি লজ্জা বলে কিছু নেই?! আমরা এখানে ‘ইলমচর্চা করছি, আর আপনি এই কাজ করছেন! আ‘মাশ প্রত্যুত্তরে বললেন, তুমি যা করছ, আমি তার চেয়ে ভালো কাজে ব্যস্ত আছি। গল্পবাজ বলল, তা কীভাবে?! তিনি বললেন, কারণ আমি মশগুল সুন্নতি কাজে, আর তুমি মশগুল মিথ্যাচারে। আমি আ‘মাশ। তুমি যা বলছ, তার কিছুই আমি তোমার কাছে বর্ণনা করিনি। মজলিসের লোকেরা আ‘মাশের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ তাকে ছেড়ে আ‘মাশের পাশে সমবেত হলো। আর বলল, হে মুহাম্মাদের পিতা, আপনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করুন।” [আল-হাওয়াদিসু ওয়াল বিদা‘, পৃষ্ঠা: ১১১-১১২; আল-মাদখাল, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৪৬; তাহযীরুল খাওয়াস, পৃষ্ঠা: ১৯৭ ও ২৬৪; গৃহীত: লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর, পৃষ্ঠা: ২২৫]
উক্ত ঘটনা থেকে আমাদের বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা এখানে যে, ইমাম আ‘মাশ মজলিস শেষ হওয়ারও অপেক্ষা করেননি, মজলিসের মধ্যেই ওই মিথ্যুকের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। আমাদের ভাইদের কথা অনুযায়ী তিনি মজলিস শেষে চুপিসারে তাকে বলেননি, কী ব্যাপার, ভাইসাব? মিথ্যা হাদীস ছড়াচ্ছেন যে খুব?!
আইয়্যুহাল ইখওয়ান, এটা দ্বীন! যার ভয়াবহ বিভ্রান্তি বিশাল জনপদের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করেছে, যার ভুলকে মানুষ শরিয়ত মনে করছে, তার ভুলের খণ্ডন জরুরি ভিত্তিতে হওয়া উচিত। আর তাই সালাফগণ মোসাহেবির ধার ধারেননি। সমালোচনা করেছেন, শরিয়তবিরোধীর সমালোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। আপনারা কি ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র এই ঘটনাটি শোনেননি? সাহীহ মুসলিমের ‘ইমান’ অধ্যায়ের প্রথম হাদীস। তাক্বদীর অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে যখন তাঁকে জানানো হলো, তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, “যখন তুমি এদের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তাদেরকে জানিয়ে দাও, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আর আমার সাথেও তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।”
তিনি সমালোচনার করার আগে, তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার আগে তাদের সাথে আলোচনায় বসেননি। সুতরাং সমালোচনার জন্য আগে জানানো বা নির্জনে নসিহত করাকে শর্ত করা কখনোই উচিত নয়। এই কর্মপদ্ধতির স্বপক্ষে তাদের কোনো দলিল নেই।
সুপ্রিয় ভ্রাতৃমণ্ডলী, এবারে আমরা এ ব্যাপারে ‘উলামায়ে সুন্নাহর কিছু বক্তব্য পেশ করছি।
১. বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আল-মুজাদ্দিদ, আল-ফাক্বীহ, আন-নাক্বিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
سؤال : يتفرَّع عن هذا قول بعضهم أو اشتراط بعضهم بمعنى أصّح أنه في حالة الردود لابد قبل أن يُطبع الرّد إيصال نسخة إلى المردود عليه حتى ينظر فيها ، ويقول إن هذا من منهج السلف ؟
الجواب : هذا ليس شرطـاً ، لكن إن تيسّر وكان يُرجى من هذا الأسلوب التقارب بدون تشهير القضية بين الناس فهذا لا شك أنه أمر جيّد ، أما أولاً أن نجعله شرطاً ، وثانياً أن نجعله شرطاً عاماً فهذا ليس من الحكمة في شيء إطلاقاً ، والناس كما تعلمون جميعاً معادن كمعادن الذهب والفضَّة ، فمن عرفت منه أنه معنا على الخط وعلى المنهج وأنه يتقبّل النصيحة فكتبت إليه دون أن تُشهّر بخطئه على الأقل في وجهة نظرك أنت فهذا جيّد ، لكن هذا ليس شرطاً ، وحتى ولو كان شرطاً ليس أمراً مستطاعاً ، من أين تحصل على عنوانه ؟! ، وعلى مراسلته ؟! ، ثم هل يأتيك الجواب منه أو لا يأتيك ؟! ، هذه أمور ظنية تماماً ... هذا الشرط تحقيقه صعب جداً ولذلك المسألة لا تُأخذ شرطاً .اهـ
প্রশ্ন: “এ থেকে কতিপয় লোকের এরকম বক্তব্য বা শর্তারোপ উদ্ভূত হয়েছে যে, কারও রদ (রিফিউটেশন) প্রকাশ করার আগে অবশ্যই রদের একটি কপি যাকে রদ করা হচ্ছে তার কাছে পাঠাতে হবে, তিনি না দেখা পর্যন্ত রদ প্রকাশ করা যাবে না। তারা বলছে, এটাই সালাফদের মানহাজ।”
উত্তর: “এটা শর্ত নয়। কিন্তু যদি সম্ভব হয়, আর এই কর্মপন্থার মাধ্যমে এটাই আশা করা হয় যে, জনসাধারণের মাঝে বিষয়টি না ছড়িয়ে সমঝোতায় হোক, তাহলে নিঃসন্দেহে এটা ভালো কাজ। পক্ষান্তরে এটাকে আগে শর্ত বানানো, তারপর এটাকে সার্বজনিক শর্ত বানানো, এগুলো কোনোভাবেই প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজ নয়। তোমরা সকলেই জান, মানুষ স্বর্ণ-রৌপ্যের খনিস্বরূপ (যারা ভালো, তারা সবক্ষেত্রেই ভালো)। তুমি যার ব্যাপারে জেনেছ, সে আমাদের সাথে আমাদের মানহাজ ও আদর্শের ওপরেই আছে, আর সে নসিহত গ্রহণও করে, তাহলে তুমি তার ভুল না ছড়িয়ে তাকে চিঠি লিখ। কমপক্ষে তুমি তোমার দৃষ্টিকোণ থেকে এক্ষেত্রে ঠিক আছ। কিন্তু এটা শর্ত নয়। এমনকি এটা যদি শর্তও হতো, তথাপি তা পূরণ করা সম্ভবপর হতো না। তুমি কোথা থেকে তার ঠিকানা জোগাড় করবে? তারপর কীভাবেই বা চিঠি আদানপ্রদান করবে? এরপর তার তরফ থেকে চিঠির জবাব আসবে, নাকি আসবে না? এগুলো পুরোপুরি ধারণানির্ভর ব্যাপার। এই শর্ত বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। এজন্য এই বিষয়কে শর্ত ধরে নেওয়া যাবে না।” [সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, ৬৩৮ নং অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: আজুর্রি ajurry.com ]الجواب : هذا ليس شرطـاً ، لكن إن تيسّر وكان يُرجى من هذا الأسلوب التقارب بدون تشهير القضية بين الناس فهذا لا شك أنه أمر جيّد ، أما أولاً أن نجعله شرطاً ، وثانياً أن نجعله شرطاً عاماً فهذا ليس من الحكمة في شيء إطلاقاً ، والناس كما تعلمون جميعاً معادن كمعادن الذهب والفضَّة ، فمن عرفت منه أنه معنا على الخط وعلى المنهج وأنه يتقبّل النصيحة فكتبت إليه دون أن تُشهّر بخطئه على الأقل في وجهة نظرك أنت فهذا جيّد ، لكن هذا ليس شرطاً ، وحتى ولو كان شرطاً ليس أمراً مستطاعاً ، من أين تحصل على عنوانه ؟! ، وعلى مراسلته ؟! ، ثم هل يأتيك الجواب منه أو لا يأتيك ؟! ، هذه أمور ظنية تماماً ... هذا الشرط تحقيقه صعب جداً ولذلك المسألة لا تُأخذ شرطاً .اهـ
প্রশ্ন: “এ থেকে কতিপয় লোকের এরকম বক্তব্য বা শর্তারোপ উদ্ভূত হয়েছে যে, কারও রদ (রিফিউটেশন) প্রকাশ করার আগে অবশ্যই রদের একটি কপি যাকে রদ করা হচ্ছে তার কাছে পাঠাতে হবে, তিনি না দেখা পর্যন্ত রদ প্রকাশ করা যাবে না। তারা বলছে, এটাই সালাফদের মানহাজ।”
·
২. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
উক্ত ফতোয়া বর্ণনা করেছেন শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ)। তিনি বলেছেন,
ﻣَﻦْ ﺍﻧﺘﺸﺮ ﺧﻄﺆﻩ ﻓﻲ ﺍﻵﻓﺎﻕ ﻭﺗﻌﺪَّﻯ ﻭﺫﺍﻉ؛ ﻓﺎﻟﺮﺩ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﺟﺐ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻘﺪﻡ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ، ﺛﻢ ﻳﻨﺎﺻﺢ ﺇﻥْ ﺃﻣﻜﻦ، ﻛﻤﺎ ﺃﻧﻪ ﻻ ﻳﻠﺰﻡ ﺷﺪُّ ﺍﻟﺮﺣﺎﻝ ﻭﻗﻄﻊ ﺍﻟﻤﻔﺎﻭﺯ ﺇﻟﻴﻪ ﻟﻨُﺼﺤﻪ .
ﻭﻟﻘﺪ ﻭﺟَّﻬﻨﺎ ﺳﺆﺍﻻً ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺴﻪ ﺑﻤﻨـﺰﻟﻪ ﺑﺤﻲ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰﻳﺔ ﺑﻤﻜﺔ ﺍﻟﻤﻜﺮﻣﺔ ﻓﻲ ﻧﻬﺎﻳﺔ ﺷﻬﺮ ﺭﺟﺐ ﺗﻘﺮﻳﺒﺎً ﻋﺎﻡ 1414 ﻫـ، ﻭﻛﺎﻥ ﺗﻮﺍﺟﺪ ﺳﻤﺎﺣﺘﻪ ﻓﻲ ﻣﻜﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﺑﺴﺒﺐ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﺴﻨﻮﻱ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻨﻌﻘﺪ ﻓﻲ ﻣﻜﺔ " ﻟﻠﻤﺠﻤﻊ ﺍﻟﻔﻘﻬﻲ " ، ﻭﻛﻨﺎ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺷﺨﺎﺹ ﻣﻦ ﻃﻠﺒﺔ ﺍﻟﻌﻠﻢ، ﻭﻣﻦ ﺑﻴﻨﻨﺎ ﺷﺨﺼﻴﺔ ﻣﺮﻣﻮﻗﺔ، ﺟﺌﻨﺎ ﻣﻦ ﻣﺪﻳﻨﺘﻲ ﺍﻟﻄﺎﺋﻒ ﻭﺟﺪﻫـ، ﻭﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﺁﻧﺬﺍﻙ ﺿﻴﻔﺎً ﻋﻨﺪﻩ؛ ﺭﺟﻼً ﻣﻦ ﻋﻠﻴﺔ ﺍﻟﻘﻮﻡ، ﻓﻌﺮّﻓَﻨﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻗﺎﻝ : ﺗﻔﻀﻠﻮﺍ ﺑﺎﻟﻜﻼﻡ، ﻭﻛﺎﻥ ﺳﺒﺐ ﺣﻀﻮﺭﻧﺎ ﻭﺟﻠﻮﺳﻨﺎ ﻣﻊ ﺳﻤﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﻔﺘﻰ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﻫﻮ : ﺗﺠﺎﻭﺯﺍﺕ ﺳﻔﺮ ﺍﻟﺤﻮﺍﻟﻲ ﻭﺳﻠﻤﺎﻥ ﺍﻟﻌﻮﺩﺓ، ﺫﻛﺮﺕُ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﻘﺪﻣﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ ﻟﻠﺴﺆﺍﻝ ﺍﻵﺗﻲ ﻣﻦ ﺃﺟﻞ ﺃﻥ ﻳﻌﺮﻑ ﺍﻟﺠﻤﻴﻊ ﺃﻥَّ ﺍﻷﻣﺮ ﻣﻮﺛَّﻖ، ﻭﻓﻲ ﻧﻔﺲ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﺃﺗﺤﻔَّﻆ ﻋﻠﻰ ﺃﺳﻤﺎﺀ ﻣَﻦْ ﺣﻀﺮ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺠﻠﺴﺔ، ﻓﺠﺎﺀ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ : ﺳﻤﺎﺣﺔ ﺍﻟﺸﻴﺦ؛ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻣﻨﻬﺞ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻓﻴﻤﻦ ﺃﻇﻬﺮ ﺑﺪﻋﺘﻪ ﻭﺍﻧﺘﺸﺮ ﺧﻄﺄﻩ ﺑﺎﻷﺷﺮﻃﺔ ﻓﻲ ﺍﻵﻓﺎﻕ، ﻫﻞ ﻳﻠﺰﻡ ﺃﻥ ﻧﻀﺮﺏ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﻔﺎﻭﺯ؟ ﻭﻫﻞ ﺗﻜﻮﻥ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺮ ﺃﻡ ﻳُﺸﻬَّﺮ ﺑﻪ ﻭﻳﺤﺬﺭ ﻣﻨﻪ؟
ﻗﺎﻝ ﺳﻤﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﻔﺘﻲ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : " ﻓﻴﻪ ﺗﻔﺼﻴﻞ : ﺇﺫﺍ ﺃﻇﻬﺮ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺧﻄﺄﻩ ﺃﻭ ﻓﺴﻘﻪ؛ ﻓﺈﻥَّ ﺍﻟﻘﺎﻋﺪﺓ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ : ﺃﻧﻪ ﻣَﻦْ ﺃﻇﻬﺮ ﺫﻟﻚ ﻻ ﺣﺮﻣﺔ ﻟﻪ، ﻭﻣﻨﻬﺞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻓﻴﻤﻦ ﺃﻇﻬﺮ ﺑﺪﻋﺘﻪ ﻭﺍﻧﺘﺸﺮ ﺧﻄﺄﻩ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﺃﻥ ﻳُﺮﺩَّ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻤﺜﻞ، ﻭﻳُﺸﻬَّﺮ ﺑﻪ، ﻭﻳﻨﺘﺸﺮ، ﻛﻤﺎ ﺍﻧﺘﺸﺮ ﺧﻄﺄﻩ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﺣﺮﻣﺔ ﻟﻔﺎﺳﻖ، ﻭﻳﻨﺎﺻﺢ .
ﻭﻟﻘﺪ ﻭﺟَّﻬﻨﺎ ﺳﺆﺍﻻً ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺴﻪ ﺑﻤﻨـﺰﻟﻪ ﺑﺤﻲ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰﻳﺔ ﺑﻤﻜﺔ ﺍﻟﻤﻜﺮﻣﺔ ﻓﻲ ﻧﻬﺎﻳﺔ ﺷﻬﺮ ﺭﺟﺐ ﺗﻘﺮﻳﺒﺎً ﻋﺎﻡ 1414 ﻫـ، ﻭﻛﺎﻥ ﺗﻮﺍﺟﺪ ﺳﻤﺎﺣﺘﻪ ﻓﻲ ﻣﻜﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﺑﺴﺒﺐ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﺴﻨﻮﻱ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻨﻌﻘﺪ ﻓﻲ ﻣﻜﺔ " ﻟﻠﻤﺠﻤﻊ ﺍﻟﻔﻘﻬﻲ " ، ﻭﻛﻨﺎ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻋﺸﺮﺓ ﺃﺷﺨﺎﺹ ﻣﻦ ﻃﻠﺒﺔ ﺍﻟﻌﻠﻢ، ﻭﻣﻦ ﺑﻴﻨﻨﺎ ﺷﺨﺼﻴﺔ ﻣﺮﻣﻮﻗﺔ، ﺟﺌﻨﺎ ﻣﻦ ﻣﺪﻳﻨﺘﻲ ﺍﻟﻄﺎﺋﻒ ﻭﺟﺪﻫـ، ﻭﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﺁﻧﺬﺍﻙ ﺿﻴﻔﺎً ﻋﻨﺪﻩ؛ ﺭﺟﻼً ﻣﻦ ﻋﻠﻴﺔ ﺍﻟﻘﻮﻡ، ﻓﻌﺮّﻓَﻨﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻗﺎﻝ : ﺗﻔﻀﻠﻮﺍ ﺑﺎﻟﻜﻼﻡ، ﻭﻛﺎﻥ ﺳﺒﺐ ﺣﻀﻮﺭﻧﺎ ﻭﺟﻠﻮﺳﻨﺎ ﻣﻊ ﺳﻤﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﻔﺘﻰ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﻫﻮ : ﺗﺠﺎﻭﺯﺍﺕ ﺳﻔﺮ ﺍﻟﺤﻮﺍﻟﻲ ﻭﺳﻠﻤﺎﻥ ﺍﻟﻌﻮﺩﺓ، ﺫﻛﺮﺕُ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﻘﺪﻣﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ ﻟﻠﺴﺆﺍﻝ ﺍﻵﺗﻲ ﻣﻦ ﺃﺟﻞ ﺃﻥ ﻳﻌﺮﻑ ﺍﻟﺠﻤﻴﻊ ﺃﻥَّ ﺍﻷﻣﺮ ﻣﻮﺛَّﻖ، ﻭﻓﻲ ﻧﻔﺲ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﺃﺗﺤﻔَّﻆ ﻋﻠﻰ ﺃﺳﻤﺎﺀ ﻣَﻦْ ﺣﻀﺮ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﺠﻠﺴﺔ، ﻓﺠﺎﺀ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ : ﺳﻤﺎﺣﺔ ﺍﻟﺸﻴﺦ؛ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻣﻨﻬﺞ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻓﻴﻤﻦ ﺃﻇﻬﺮ ﺑﺪﻋﺘﻪ ﻭﺍﻧﺘﺸﺮ ﺧﻄﺄﻩ ﺑﺎﻷﺷﺮﻃﺔ ﻓﻲ ﺍﻵﻓﺎﻕ، ﻫﻞ ﻳﻠﺰﻡ ﺃﻥ ﻧﻀﺮﺏ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﻔﺎﻭﺯ؟ ﻭﻫﻞ ﺗﻜﻮﻥ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺮ ﺃﻡ ﻳُﺸﻬَّﺮ ﺑﻪ ﻭﻳﺤﺬﺭ ﻣﻨﻪ؟
ﻗﺎﻝ ﺳﻤﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﻔﺘﻲ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﺑﺎﺯ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : " ﻓﻴﻪ ﺗﻔﺼﻴﻞ : ﺇﺫﺍ ﺃﻇﻬﺮ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺧﻄﺄﻩ ﺃﻭ ﻓﺴﻘﻪ؛ ﻓﺈﻥَّ ﺍﻟﻘﺎﻋﺪﺓ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ : ﺃﻧﻪ ﻣَﻦْ ﺃﻇﻬﺮ ﺫﻟﻚ ﻻ ﺣﺮﻣﺔ ﻟﻪ، ﻭﻣﻨﻬﺞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻓﻴﻤﻦ ﺃﻇﻬﺮ ﺑﺪﻋﺘﻪ ﻭﺍﻧﺘﺸﺮ ﺧﻄﺄﻩ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﺃﻥ ﻳُﺮﺩَّ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻤﺜﻞ، ﻭﻳُﺸﻬَّﺮ ﺑﻪ، ﻭﻳﻨﺘﺸﺮ، ﻛﻤﺎ ﺍﻧﺘﺸﺮ ﺧﻄﺄﻩ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﺣﺮﻣﺔ ﻟﻔﺎﺳﻖ، ﻭﻳﻨﺎﺻﺢ .
“যার ভুল দিগন্তবিস্তৃত হয়েছে, সীমা ছাড়িয়ে গেছে, ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তার ভুলের খণ্ড করা ওয়াজিব, তাকে নসিহত করার পূর্বেই। পরবর্তীতে সম্ভব হলে নসিহত করা যাবে। একইভাবে তাকে নসিহত করার জন্য সফর করা আর দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া আবশ্যক নয়।
মক্কা মুকাররমার আযীযিয়্যাহ এলাকায় ইমাম আব্দুল ‘আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র বাড়িতে তাঁর মজলিসে আমরা তাঁকে একটি প্রশ্ন করেছিলাম। ঘটনা ১৪১৪ হিজরির রজব মাসের শেষের দিকের। সেসময় শাইখকে মক্কাতেই পাওয়া যেত। কারণ তখন মক্কায় ফিক্বহ একাডেমির বার্ষিক সম্মেলন চলছিল। আমরা দশজনেরও বেশি তালিবুল ইলম সেখানে ছিলাম। আমাদের মাঝেই ছিলেন আমাদের আকাঙ্ক্ষিত মানুষটি। আমরা তায়েফ ও জেদ্দা থেকে এসেছিলাম। সেই মুহূর্তে শাইখ ইবনু বাযের মজলিসে একজন মেহমান ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই সম্ভ্রান্ত লোক। আমরা তাঁকে পরিচয় দিলাম। তিনি বললেন, আপনারা কথা শুরু করেন। মাননীয় গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বাযের সাথে আমাদের বৈঠকের কারণ ছিল সাফার আল-হাওয়ালী ও সালমান আল-‘আওদাহর (সাম্প্রতিক সময়ের) বাড়াবাড়ি।
আমি আগত প্রশ্নের প্রারম্ভে এই কথাগুলো বললাম, যাতে সবাই বুঝতে পারেন, এটা প্রমাণিত বিষয়। ওই বৈঠকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের নাম আমার এখনও মনে আছে। তখন এই প্রশ্ন করা হলো, ‘সম্মাননীয় শাইখ, যে ব্যক্তি তার বিদ‘আত প্রকাশ করেছে, আর তার লেকচার ক্লিপের ভুল বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে, তার জন্য কি সফর করা আবশ্যক? আর তাকে কি গোপনে নসিহত করতে হবে, নাকি তার নিন্দা করতে হবে এবং তার থেকে সতর্ক করতে হবে?
মাননীয় গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, এক্ষেত্রে বিস্তারিত বিবরণের প্রয়োজন আছে। যখন কোনো ব্যক্তি তার ভুল বা ফাসেকি কাজকে প্রকাশ করে, তখন ‘উলামাদের নিকট মূলনীতি হচ্ছে—যে ব্যক্তি তা প্রকাশ করেছে, তার সম্ভ্রম হালাল। যে ব্যক্তি বিদ‘আত প্রকাশ করেছে এবং তার ভুল জনসাধারণের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে, তার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ হচ্ছে, অনুরূপভাবেই রদ করতে হবে। তার নিন্দা করতে হবে এবং তা ছড়িয়ে দিতে হবে। যেমনভাবে লোকদের কাছে তার ভুল ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা এমন ফাসেক লোকের সম্ভ্রম (তার ভুল সংক্রান্ত ব্যাপারে) হালাল। এবং তাকে নসিহত করতে হবে।” [শাইখ হারিসী প্রণীত ‘আর-রাদ্দুর রাইয়্যান ‘আলাল ক্বারনী ওয়া হাসসান ফী সাব্বিহিমাস সাহবাল কিরাম’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে সংগৃহীত; গৃহীত: তাসফিয়াতারবিয়া ব্লগ]
৩. বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ‘আল্লামাতুল ফাক্বীহ, ইমাম রাবী‘ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ : ﺷﻴﺨﻨﺎ ﻣﻦ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﺍﻟﺘﻲ ﺻﺎﺭﺕ ﺗﺮﻭﺝ ﻭﺻﺎﺭﺕ ﻋﻄﻔﺎً ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻠﻔﻴﻴﻦ؛ ﻫﻲ ﺃﻗﻮﺍﻡ ﻳﺪﻋﻮﻥ ﻭﺟﻮﺏ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺘﺤﺬﻳﺮ، ﻓﻬﻞ ﻣﻦ ﻗﻮﻝ ﻣﻨﻜﻢ ﺷﻴﺨﻨﺎ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ؟
ﻓﻜﺎﻥ ﺟﻮﺍﺑﻪ : ﺃﺟﺒﺖُ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ﺳﻠﻔﺎً ﺑﺎﺭﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻚ، ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻷﺻﻨﺎﻑ ﺍﺑﺘﻠﻴﻨﺎ ﺑﻬﺎ، ﻓﺘﺠﺪ ﻳﺸﻴﻊ ﺍﻷﺑﺎﻃﻴﻞ ﻭﺍﻷﻛﺎﺫﻳﺐ ﻭﺍﻻﻓﺘﺮﺍﺀﺍﺕ ﻋﻠﻰ ﺍﻵﺧﺮﻳﻦ ﺑﺎﻷﻋﻴﺎﻥ ﻭﺑﺎﻟﻌﻤﻮﻡ، ﻭﺇﺫﺍ ﻭﺟِّﻬﺖ ﻟﻪ ﻧﺼﻴﺤﺔ ﺃﻭ ﻧﻘﺪ ﺃﻭ ﺷﻲﺀ ﻗﺎﻝ : ﻟﻤﺎﺫﺍ ﻣﺎ ﺣﺬﺭﻭﻧﻲ؟ ﻭﻟﻤﺎﺫﺍ ﻣﺎ ﻧﺼﺤﻮﻧﻲ؟ ﻭﻟﻤﺎﺫﺍ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻮﺍ ﻟﻲ؟ ﻋﻠﻞ ﻓﺎﺳﺪﺓ .
ﻧﺤﻦ ﻧﻄﻠﺐ ﻣﻦ ﻫﺆﻻﺀ ﺃﻥ ﻳﺘﻮﺑﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺃﻥ ﻳﺮﺟﻌﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﺑﻜﻞ ﺃﺩﺏ ﻭﺗﻮﺍﺿﻊ، ﻭﺃﻥ ﻳﺘﺮﻛﻮﺍ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺘﻌﺎﻟﻴﻞ .
ﻫﺐ ﺃﻥَّ ﻫﺬﺍ ﺃﺧﻄﺄ ﻭﻣﺎ ﺗﻜﻠَّﻢ، ﻭﻣﺎ ﻧﺼﺤﻚ، ﺍﺭﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﺑﻌﺪﻫﺎ ﻋﺎﺗﺒﻪ، ﺃﻣﺎ ﺗﺸﻴﻊ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﺗﺘﻤﺎﺩﻯ ﻓﻲ ﺑﺎﻃﻠﻚ ﻭﻓﻲ ﺃﺧﻄﺎﺋﻚ ﻭﺗﻘﻮﻝ : ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻠﻮﺍ، ﻭﻓﻌﻠﻮﺍ، ﻫﺬﺍ ﻛﻼﻡ ﻓﺎﺭﻍ، ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ، ﻭﻳﻘﺒﻞ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ ﺍﻟﺨﻔﻴﺔ ﻭﺍﻟﻮﺍﺿﺤﺔ . ﺃﻧﺖ ﺗﻨﺸﺮ ﺃﺧﻄﺎﺀﻙ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻓﻲ ﺍﻷﺷﺮﻃﺔ ﻭ ... ﻭ ... ﺇﻟﻰ ﺁﺧﺮﻩ، ﻟﻮ ﻛﻨﺖَ ﺗﺨﻔﻲ ﺃﺧﻄﺎﺀﻙ ﻭﺗﻌﻤﻠﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻈﻼﻡ ﺑﻴﻨﻚ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻛﺘﺸﻒ ﻫﺬﺍ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻳﻨﺼﺤﻚ ﺑﻴﻨﻚ ﻭﺑﻴﻨﻪ، ﻭﺃﻣﺎ ﻭﺃﻧﺖ ﺗﻨﺸﺮ ﺃﻗﻮﺍﻟﻚ ﻭﺃﻓﻌﺎﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ، ﺛﻢ ﻳﺄﺗﻲ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﻳﻨﺸﺮ ﻳﻌﻨﻲ ﻳﺮﺩ ﻋﻠﻴﻚ، ﻫﺬﺍ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀ، ﺍﺗﺮﻛﻮﺍ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺘﻌﻠﻴﻼﺕ ﻣﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻣﺮﺩﻭﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﻭ ﺍﻟﻌﻨﺎﺩ .
ﻓﻜﺎﻥ ﺟﻮﺍﺑﻪ : ﺃﺟﺒﺖُ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ﺳﻠﻔﺎً ﺑﺎﺭﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻚ، ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻷﺻﻨﺎﻑ ﺍﺑﺘﻠﻴﻨﺎ ﺑﻬﺎ، ﻓﺘﺠﺪ ﻳﺸﻴﻊ ﺍﻷﺑﺎﻃﻴﻞ ﻭﺍﻷﻛﺎﺫﻳﺐ ﻭﺍﻻﻓﺘﺮﺍﺀﺍﺕ ﻋﻠﻰ ﺍﻵﺧﺮﻳﻦ ﺑﺎﻷﻋﻴﺎﻥ ﻭﺑﺎﻟﻌﻤﻮﻡ، ﻭﺇﺫﺍ ﻭﺟِّﻬﺖ ﻟﻪ ﻧﺼﻴﺤﺔ ﺃﻭ ﻧﻘﺪ ﺃﻭ ﺷﻲﺀ ﻗﺎﻝ : ﻟﻤﺎﺫﺍ ﻣﺎ ﺣﺬﺭﻭﻧﻲ؟ ﻭﻟﻤﺎﺫﺍ ﻣﺎ ﻧﺼﺤﻮﻧﻲ؟ ﻭﻟﻤﺎﺫﺍ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻮﺍ ﻟﻲ؟ ﻋﻠﻞ ﻓﺎﺳﺪﺓ .
ﻧﺤﻦ ﻧﻄﻠﺐ ﻣﻦ ﻫﺆﻻﺀ ﺃﻥ ﻳﺘﻮﺑﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺃﻥ ﻳﺮﺟﻌﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﺑﻜﻞ ﺃﺩﺏ ﻭﺗﻮﺍﺿﻊ، ﻭﺃﻥ ﻳﺘﺮﻛﻮﺍ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺘﻌﺎﻟﻴﻞ .
ﻫﺐ ﺃﻥَّ ﻫﺬﺍ ﺃﺧﻄﺄ ﻭﻣﺎ ﺗﻜﻠَّﻢ، ﻭﻣﺎ ﻧﺼﺤﻚ، ﺍﺭﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﺑﻌﺪﻫﺎ ﻋﺎﺗﺒﻪ، ﺃﻣﺎ ﺗﺸﻴﻊ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﺗﺘﻤﺎﺩﻯ ﻓﻲ ﺑﺎﻃﻠﻚ ﻭﻓﻲ ﺃﺧﻄﺎﺋﻚ ﻭﺗﻘﻮﻝ : ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻠﻮﺍ، ﻭﻓﻌﻠﻮﺍ، ﻫﺬﺍ ﻛﻼﻡ ﻓﺎﺭﻍ، ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ، ﻭﻳﻘﺒﻞ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ ﺍﻟﺨﻔﻴﺔ ﻭﺍﻟﻮﺍﺿﺤﺔ . ﺃﻧﺖ ﺗﻨﺸﺮ ﺃﺧﻄﺎﺀﻙ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻭﻓﻲ ﺍﻷﺷﺮﻃﺔ ﻭ ... ﻭ ... ﺇﻟﻰ ﺁﺧﺮﻩ، ﻟﻮ ﻛﻨﺖَ ﺗﺨﻔﻲ ﺃﺧﻄﺎﺀﻙ ﻭﺗﻌﻤﻠﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻈﻼﻡ ﺑﻴﻨﻚ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻛﺘﺸﻒ ﻫﺬﺍ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻳﻨﺼﺤﻚ ﺑﻴﻨﻚ ﻭﺑﻴﻨﻪ، ﻭﺃﻣﺎ ﻭﺃﻧﺖ ﺗﻨﺸﺮ ﺃﻗﻮﺍﻟﻚ ﻭﺃﻓﻌﺎﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ، ﺛﻢ ﻳﺄﺗﻲ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﻳﻨﺸﺮ ﻳﻌﻨﻲ ﻳﺮﺩ ﻋﻠﻴﻚ، ﻫﺬﺍ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﺷﻲﺀ، ﺍﺗﺮﻛﻮﺍ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺘﻌﻠﻴﻼﺕ ﻣﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻣﺮﺩﻭﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ ﻭ ﺍﻟﻌﻨﺎﺩ .
প্রশ্ন: “শাইখানা, কিছু কথা ছড়ানো হচ্ছে, আর তা সালাফীদের জন্য বিপথগামিতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদল লোক দাবি করছে, কারও থেকে সতর্ক করার আগে তাকে ব্যক্তিগত নসিহত করা ওয়াজিব। শাইখানা, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?”
উত্তর: “আমি আগেও এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। আমরা এ ধরনের লোকদের নিয়ে বিপদগ্রস্ত হয়েছি। তুমি দেখবে, সে ব্যাপকভাবে অন্যদের ব্যাপারে নাম ধরে নানারকম বাতিল কথা, মিথ্যাচার ও রটনা প্রচার করছে। যখন তাকে নসিহত করা হবে, সমালোচনা করা হবে, তখনই সে বলে, তারা আগে আমাকে সতর্ক করল না কেন? তারা আগে আমাকে নসিহত করল না কেন? তারা আগে আমাকে জানাল না কেন? এগুলো হলো বিভ্রান্তিকর আপত্তি। আমরা তাদের কাছ থেকে আশা করব, তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করুক, হকের দিকে ফিরে আসুক, আদব ও বিনয়ের সাথে। আর তারা এসব আপত্তি বর্জন করুক।
আচ্ছা, এ ভুল করেছে, তোমার সাথে কথা বলেনি, তোমাকে নসিহত করেনি। কিন্তু তুমি আগে হকের দিকে ফিরে আস, তারপর তাকে দোষারোপ করো। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে তোমার অনুসরণ করা হচ্ছে, আর তুমি তোমার বাতিল মতবাদ ও ত্রুটিবিচ্যুতির মধ্যেই অবস্থান করছ, আর বলছ, তারা এটা করল না, তারা এটা করল! এগুলো অর্থহীন প্রলাপ। মুমিনদের কর্তব্য হলো, তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব নসিহতই গ্রহণ করবে।
তুমি বইয়ের মধ্যে, আর লেকচারের মধ্যে তোমার ভুল প্রচার করছ! তুমি যদি তোমার ভুল গোপনে রাখ, আর ভুলগুলো অন্ধকারের মধ্যে চর্চা করো, তাহলে সেটা তোমার আর আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। আর এই লোক যদি তোমার ভুল আবিষ্কার করে ফলে, সে তোমাকে নসিহত করবে। এটা তোমার আর তার ব্যাপার। কিন্তু তুমি জগৎ জুড়ে তোমার (ভুল) কথা ও কাজ প্রচার করছ। এখন কোনো মুসলিম এসে তোমাকে খণ্ডন করল। এতে কোনো শর্তের ব্যাপার নেই। এসব আপত্তি বর্জন করো। যেসব আপত্তি মূলত বাতিলপন্থিদের, যারা বাতিল ও হঠকারিতায় অটল থেকে লাঞ্ছিত হয়েছে।” [“১৪০০ হিজরিতে শাইখ রাবী‘র সাক্ষাৎকার”– শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপ থেকে গৃহীত; দ্র.: www.rabee.net/ar/questions.php?cat=29&id=605
পরিশেষে বলি, আসুন, আমরা সালাফী মানহাজের দীপ্ত আলোয় আলোকিত হই এবং বাতিলপন্থিদের সংশয় থেকে বিরত থাকি। আর সর্বোপরি যাবতীয় ব্যক্তি, দল ও স্থানের প্রতি বিশেষ প্রীতি ও গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হই। এটা খুব খারাপ রোগ। আল্লাহর কাছে এ থেকে আমরা পানাহ চাই। অথচ তা‘আসসুব বা গোঁড়ামি এমন একটি রোগ, যা ব্যক্তিকে ধ্বংসে নিপাতিত করে। ভারতবর্ষের মুহাদ্দিস ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ)’র নসিহতটি মনে রাখি, “মধ্যপন্থি হওয়া এবং শরিয়তের কোনো বিষয়েই অন্ধ পক্ষপাতিত্ব না করাই হবে—তোমার সবচেয়ে বড়ো অর্জন। তুমি ইসলামের কোনো ‘আলিমের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে শরিয়তের বরকতকে বিনাশ কোরো না।” [আবজাদুল ‘উলূম, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৬২; গৃহীত: আত-তা‘আসসুব লিশ শুয়ূখ, পৃষ্ঠা: ৯২]
আল্লাহ আমাদেরকে অন্ধ পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার এবং যথাযথভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha