সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ রক্তস্রাবের বয়স ও তার সময়-সীমা

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,263
Credits
6,307
১. নারীদের রক্তস্রাব কত বছর বয়স থেকে শুরু হয় এবং কত বছর বয়স পর্যন্ত চালু থাকে।

২. রক্তস্রাবের সময়-সীমা।

প্রথম বিষয়: সাধারণত ১২ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের রক্তস্রাব হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো অবস্থা, আবহাওয়া এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত বয়সের পূর্বে এবং পরেও রক্তস্রাব হতে পারে।

ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন যে, রক্তস্রাব হওয়ার জন্য নারীদের বয়সের এমন কোনো নির্দিষ্ট সীমা-রেখা আছে কি না, যার আগে বা পরে রক্তস্রাব হয় না। আর যদিও বা হয় তাহলে সেটা অসুস্থতা হিসেবে পরিগণিত হবে, না রক্তস্রাব হিসেবে?

এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মাদ ইবন আবুল ফারাজ আদ-দারেমী রহ. (মৃ.৪৪৮ হি.) সকল মতামতগুলো উল্লেখ করে বলেছেন যে, ‘আমার নিকট এর কোনোটিই ঠিক নয়। কেননা রক্তস্রাবের জন্য বয়স নির্দিষ্ট করা বা বয়সের সীমা-রেখা নির্ণয় করা নির্ভর করে রক্তস্রাব দেখা দেওয়ার ওপর। সুতরাং যে কোনো বয়স এবং যে কোনো সময়ে নারীদের যৌনাঙ্গে কোনো প্রকার রক্ত দেখা দিলে সেটাকে রক্তস্রাব বা হায়েয হিসেবে গণ্য করা ওয়াজিব।’ আল্লাহ তা‘আলাই সর্বজ্ঞ।[1]

আমার দৃষ্টিতে ইমাম দারেমীর এই অভিমতটি সঠিক বলে মনে হচ্ছে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-ও এই অভিমত গ্রহণ করেছেন। অতএব, নারী যখনই তার যৌনাঙ্গে রক্ত দেখতে পাবে তখনই সে ঋতুবতী হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। যদিও সে রক্ত নয় বছর বয়সের পূর্বে কিংবা পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে দেখা দেয়। কেননা হায়েযের সমুদয় হুকুম-আহকামকে মহান আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্ত দেখা দেওয়ার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন এবং এর জন্য বয়সের কোনো নির্দিষ্ট সময়-সীমা নির্ধারণ করেন নি। সুতরাং যে রক্তস্রাবকে হুকুম-আহকামের সাথে সম্পৃক্ত করে রাখা হয়েছে সেটা দেখা দিলেই তার নির্ধারিত বিধান পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ঋতুস্রাবকে কোনো নির্দিষ্ট বয়সের সাথে সম্পৃক্ত করতে হলে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক কোনো একটি নিশ্চিত দলীলের প্রয়োজন রয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে কোনোই প্রমাণ নেই।

দ্বিতীয় বিষয়: ঋতুস্রাবের সময়-সীমা অর্থাৎ ঋতুস্রাব কতদিন থাকতে পারে। এ ব্যাপারেও ওলামায়ে কেরামের মধ্যে অনেক মতভেদ রয়েছে, এমনকি এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের ছয় অথবা সাতটি অভিমত পাওয়া যায়। ইবনুল মুনযির এবং ফিকহবিদগণের একটি দল বলেছেন যে, হায়েয কমপক্ষে এবং বেশির পক্ষে কতদিন থাকতে পারে এর কোনো নির্দিষ্ট সীমা-রেখা নেই। আমার অভিমত ইমাম দারেমীর উল্লিখিত অভিমতের মতই যা শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-ও গ্রহণ করেছেন এবং এটিই সঠিক, কেননা কুরআন, সুন্নাহ ও কিয়াস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়।

১ম দলীল: আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,

﴿وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَ﴾ [البقرة: ٢٢٢]​

‘‘তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলে দাও, এটা কদর্য বস্তু, কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাক এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিকট যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পবিত্র না হয়।’’ [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]

উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জন করাকে স্ত্রী সঙ্গমের নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা নির্ধারণ করেছেন। এক দিন এক রাত, তিন দিন তিন রাত অথবা পনের দিন পনের রাতকে নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা হিসেবে নির্ধারণ করেন নি। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঋতুস্রাব দেখা দেওয়া না দেওয়ার ওপরই তার হুকুম-আহকামের মূল ভিত্তি। অর্থাৎ যখনই ঋতুস্রাব দেখা দিবে তখনই তার বিধি-বিধান কার্যকরী হবে এবং যখনই বন্ধ হবে বা পবিত্রতা অর্জন করবে তখনই বিধি-বিধানের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যাবে। বুঝা গেল, ঋতুস্রাব কতদিন থাকতে পারে এর সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন কোনো সীমা নির্দিষ্ট নেই।

দ্বিতীয় দলীল: সহীহ মুসলিমে এসেছে:

«أنَّ النَّبِيَّ (ﷺ) قَالََ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا وَقَدْ حَاضَتْ وَهِيَ مُحْرِمَةٌ بِالْعُمْرَةِ: افْعَلِيْ مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أنْ لاَ تَطُوْفِيْ بَالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي قَالَتْ: فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ النَّحْرِ طَهُرْتُ».​

“উমরার ইহরাম অবস্থায় আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার যখন রক্তস্রাব দেখা দিয়েছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন: তুমি ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কা‘বা শরীফের তওয়াফ ছাড়া উমরার অন্যান্য কাজগুলো করে যাও, যেভাবে হাজীরা করে যাচ্ছে। অর্থাৎ ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হলে তখন তাওয়াফ করবে” আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যখন কুরবানীর দিন আসলো তখন আমি পবিত্র হলাম।”[2] সহীহ বুখারীর তৃতীয় খণ্ডের ৬১০ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীস এভাবে বর্ণিত হয়েছে:

«أنَّ النَّبِيَّ (ﷺ) قَالَ: انْتَظِرِيْ فَإذَا طَهُرْتِ فَاخْرُجِيْ إلَى التَّنْعِيْمِ»​

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছিলেন: তুমি পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর, পবিত্রতা অর্জন করার পর উমরাহ আদায়ের উদ্দেশ্যে এহরাম বাঁধার জন্য তান‘ঈমের দিকে বের হও।”

তান‘ঈম হারামের বাইরে মক্কা মুকাররামার উত্তর পাশে নিকটবর্তী একটি স্থান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানেও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন নি। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রক্তস্রাব দেখা দেওয়া না দেওয়ার সাথেই তার হুকুম-আহকামের সম্পর্ক। নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সাথে নয়।

তৃতীয় দলীল: ফিকহবিদগণের হায়েয সংক্রান্ত এসব বিস্তারিত আলোচনা ও অনুমান-ধারণা কুরআন ও সুন্নাহতে বিদ্যমান না থাকা সত্বেও প্রয়োজনের খাতিরে বর্ণনা করা জরুরী। যদি এ সমস্ত আলোচনাকে হৃদয়ঙ্গম করা এবং এগুলোর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার উপাসনা করা বান্দার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে থাকতো তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ এবং সাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামপ্রত্যেকের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতেন। কেননা এগুলোর সাথে নারীর সালাত, সাওম, বিবাহ, তালাক এবং মীরাসের মাসআলা-মাসায়েল সম্পৃক্ত। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সংখ্যা, সালাত পড়ার নির্দিষ্ট সময়, সালাতের রুকু, সেজদাহ, যাকাতের মাল, মালের নিসাব ও পরিমাণ, যাকাত বিতরণ করার নির্দিষ্ট স্থান, সাওমের সময়-সীমা এবং হজসহ অন্যান্য বিষয়াবলী স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম-নীতি, ঘুমের আদব, স্ত্রী সহবাস, উঠা-বসা, গৃহে প্রবেশ, গৃহ থেকে বের হওয়া, পায়খানা ও প্রস্রাবের নিয়ম-নীতিও বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই নয় বরং পায়খানা ও প্রস্রাব করার ব্যবহৃত ঢিলার সংখ্যা নির্ধারণ করাসহ জটিল ও সূক্ষ্ম বিষয়াদির বিবরণও বিশ্ব মানবের সামনে তুলে ধরেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মনোনীত ধর্মকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং মুমিন বান্দাদের ওপর নিজের নি‘আমতকে সম্পূর্ণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা নাহলের ৮৯ নম্বর আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মোধন করে বলেন,

﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ﴾ [النحل: ٨٩]​

‘‘আমরা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়ে তোমার ওপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি।’’ [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮৯]

এমনিভাবে কুরআন শরীফে সূরা ইউসুফের ১১১ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন,

﴿مَا كَانَ حَدِيثٗا يُفۡتَرَىٰ وَلَٰكِن تَصۡدِيقَ ٱلَّذِي بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيلَ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ﴾ [يوسف: ١١١]​

‘‘এটি কোনো মনগড়া কথা নয়, বরং বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য পূর্ববর্তী গ্রন্থের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বিবরণ, হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ।’’ [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১১১]

এখন বুঝতে হবে যেহেতু এসবের বিস্তারিত আলোচনা কুরআন ও হাদীসে নেই সেহেতু এসবের ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়ারও প্রয়োজন নেই। নির্ভরতার প্রয়োজন শুধু হায়েয দেখা দেওয়া না দেওয়ার ওপর। কুরআন ও সুন্নাহ’তে এ সমস্ত বিষয়াদি না থাকাটাই প্রমাণ করে যে, এগুলোর কোনো গ্রহনযোগ্যতা নেই। হায়েয (ঋতুস্রাব) সম্পর্কীয় মাসআলাসহ অন্যান্য সকল মাসআলাসমূহে কুরআন ও সুন্নাহই আপনাকে সাহায্য করবে। কেননা শরী‘আতের সকল বিধি-বিধান কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা অথবা বিশুদ্ধ কিয়াস দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে, অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে নয়। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ একটি নীতিমালা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: ‘কুরআন ও সুন্নাহ’তে আল্লাহ তা‘আলা রক্তস্রাবের সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু হুকুম-আহকাম বর্ণনা করেছেন, কিন্তু রক্তস্রাব কতদিন থাকতে পারে, এর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়-সীমা কী, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেন নি। এমনকি বান্দার জন্য অত্যাধিক প্রয়োজনীয় এবং জটিল বিষয় হওয়া সত্বেও আল্লাহ তা‘আলা দুই পবিত্রতার মধ্যবর্তী সময়ের সীমা-রেখা নির্দিষ্ট করেন নি। আরবী অভিধানও এর কোনো সময়-সূচী নির্ধারণ করে নি। সুতরাং হায়েয বা রক্তস্রাবের জন্য যে ব্যক্তি কোনো সময়-সীমা নির্দিষ্ট করবে সে সরাসরি কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করবে।’

চতুর্থ দলীল: যা বিশুদ্ধ কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তা‘আলা রক্তস্রাবকে ময়লা বস্তু হিসেবে ঘোষণা করেছেন, কাজেই যখনই রক্তস্রাব দেখা দিবে তখনই সেটাকে ময়লা হিসেবেই গণ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে রক্তস্রাবের প্রথম এবং দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ, ১৫তম এবং ১৬তম ও ১৭তম এবং ১৮তম দিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ময়লা ময়লাই। সুতরাং ময়লা যেহেতু উভয় দিনেই বিদ্যমান সেহেতু উক্ত দুই দিনের মধ্যে হুকুমের দিক থেকে পার্থক্য করা কিভাবে সঠিক হতে পারে? এটা কি বিশুদ্ধ কিয়াসের পরিপন্থী নয়? বিশুদ্ধ কিয়াস কি উভয় দিনকে হুকুমের দিক থেকে সমান গণ্য করে না?

পঞ্চম দলীল: রক্তস্রাবের জন্য সময়-সীমা নির্ধারণকারীদের পারস্পরিক মতভেদ ও সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে এবং এ ধরনের পারস্পরিক মতভেদই প্রমাণ করে যে, এ বিষয়ে এমন কোনো সমাধান নেই, যেটাকে গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। তা ছাড়া এ সকল মতামত হচ্ছে ইজতেহাদী যা ভুল-শুদ্ধ দু’টিই সম্ভাবনা রাখে। এমতাবস্থায় সমাধান ও সঠিক নির্দেশনা পাওয়ার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে।

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ঋতুস্রাবের সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ কোনো সময়-সীমা নির্দিষ্ট নেই এবং এটিই গ্রহণযোগ্য। সুতরাং নারীর লজ্জাস্থানে রক্ত দেখা দিলে (যা আঘাত বা অন্য কোনো কারণে প্রবাহিত হয় নি) ধরে নিতে হবে যে এটি হায়েযের রক্ত হিসেবেই প্রবাহিত হচ্ছে এবং এর জন্য কোনো বয়স ও সময় নির্দিষ্ট নেই। তবে হ্যাঁ, এ রক্ত যদি বিরতিহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকে যে, আর বন্ধই হচ্ছে না অথবা অত্যন্ত স্বল্প সময় যেমন মাসে মাত্র এক-দুই দিন প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করতে হবে যার বিস্তারিত বিবরণ শীঘ্রই সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সামনে আসছে।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. হায়েয সম্পর্কে বলেন, ‘নারীদের রেহেম গর্ভাশয়) থেকে যা কিছু বের হবে তাই হায়েয বলেই গণ্য হবে যতক্ষণ না ইস্তেহাযার রক্ত হিসেবে অকাট্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘নারীর লজ্জাস্থান থেকে যখন কোনো প্রকার রক্ত বের হবে তখন যদি জানা না থাকে যে, এটা কি রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত না কোনো আঘাত জনিত কারণে প্রবাহিত রক্ত, তাহলে সে রক্তকে হায়েয হিসেবেই গণ্য করতে হবে।’ শাইখুল ইসলাম রহ.-এর এই অভিমত সময়-সীমা নির্ধারণকারীদের অভিমতের চেয়ে দলীল-প্রমাণের দিক থেকে যেমন শক্তিশালী, ঠিক তেমনই অনুধাবন ও হৃদয়ঙ্গম করার পক্ষে এবং আমল ও বাস্তবায়নের দিক দিয়েও অতি সহজ। এমনকি উক্ত গুণাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে কোনো মতকে দীন ও ইসলামের সার্বজনীন নীতির প্রতি লক্ষ্য রেখে গ্রহণ করাই উত্তম। কেননা এটা সহজসাধ্য ও সরল। যেন তা পালন করা কারো পক্ষে কষ্টকর না হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖ﴾ [الحج: ٧٨]​

‘‘তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেন নি।’’ [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৮]

এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»إنَّ الدِّيْنَ يُسْرٌ, وَلَنْ يُشَادَّ الدِّيْنَ أحَدٌ إلاَّ غَلَبَهُ, فَسَدِّدُوْا وَقَارِبُوْا وَأبْشِرُوْا»​

“নিশ্চয় দীন সহজ। কেউ দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করে জিততে পারে না। কাজেই তোমরা মধ্য পথ অবলম্বন কর, দীনের, নিকটবর্তী থাক এবং অল্প কিন্তু স্থিতিশীল আমলের প্রতিদানের সুসংবাদ দাও।”[3]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে, যতক্ষণ পর্যন্ত গুনাহ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিষয়ের দু’টি দিকের মধ্যে সহজ দিকটাই তিনি গ্রহণ করতেন।



[1] আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহায্যাব: ১/৩৮৬।
[2] সহীহ মুসলিম: ৪/৩০।
[3] সহীহ বুখারী।
 
COMMENTS ARE BELOW
Top