‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

হাদিস ও হাদিসের ব্যাখ্যা যে ব্যক্তি তাওহীদের ওপর মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে

Abdul fattah

Active member

Threads
27
Comments
29
Reactions
187
Credits
366
উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক ও তাঁর কোনো শরীক নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তাঁর কথা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন, যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে ঢেলেছিলেন (অর্থাৎ কালিমায়ে ‘কুন’ দ্বারা মারিয়ামের গর্ভে তাকে সৃষ্টি করেছেন) আর তিনি তাঁর পক্ষ থেকে পাঠানো এক (সৃষ্ট সম্মানিত) আত্মা, আরও সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তাতে তার আমল যা-ই হোক”।

عَنْ عُبَادَةَ بن الصامت رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ».

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮।

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: بَيْنَا أَنَا رَدِيفُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ إِلَّا أَخِرَةُ الرَّحْلِ، فَقَالَ: «يَا مُعَاذُ بْنَ جَبَلٍ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: «هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ» قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «حَقُّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ أَنْ يَعْبُدُوهُ، وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا» ثُمَّ سَارَ سَاعَةً، ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ بْنَ جَبَلٍ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، فَقَالَ: «هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ إِذَا فَعَلُوهُ» قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «حَقُّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَهُمْ».

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বসা ছিলাম। আমার ও তাঁর মাঝে লাগামের রশির প্রান্তদেশ ভিন্ন অন্য কিছুই ছিল না। তিনি বললেন, মু‘আয! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত তারপর কিছুক্ষণ চললেন। পুনরায় বললেন, হে মু‘আয! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তারপর আরো কিছুক্ষণ চললেন। আবার বললেন, হে মু‘আয! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি বললেন, তুমি জানো বান্দার ওপর আল্লাহর কী হক? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে, তারা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং অন্য কিছুকে তারা শরীক করবে না। এরপর কিছু সময় চললেন। তারপর বললেন, হে মু‘আযা ইবন জাবাল! আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি বললেন, বান্দারা যখন দায়িত্ব পালন করে, তখন আল্লাহর প্রতি বান্দার অধিকার কী তা জান কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহর ওপর বান্দার অধিকার এই যে, তিনি তাদের আযাব দিবেন না”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৬৭, ৬৫০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০।

عَنْ مُعَاذ بن جبلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حِمَارٍ يُقَالُ لَهُ عُفَيْرٌ، فَقَالَ: «يَا مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِي حَقَّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ، وَمَا حَقُّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ؟»، قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى العِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَحَقَّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا»، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ أُبَشِّرُ بِهِ النَّاسَ؟ قَالَ: «لاَ تُبَشِّرْهُمْ، فَيَتَّكِلُوا».

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উফাইর’ নামক একটি গাধার পিঠে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মু‘আয, তুমি কি জান বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর বান্দার হক হলো, বান্দা তাঁর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো, তাঁর ইবাদাতে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি লোকদের এ সুসংবাদ দিবো না? তিনি বললেন, তুমি তাদের সুসংবাদটি দিও না, তাহলে লোকেরা (এর ওপরই) নির্ভর করে বসবে”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩০/৪৯।

عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمُعاذٌ رَدِيفُهُ عَلَى الرَّحْلِ، قَالَ: «يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ»، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: «يَا مُعَاذُ»، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ ثَلاَثًا، قَالَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ»، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَفَلاَ أُخْبِرُ بِهِ النَّاسَ فَيَسْتَبْشِرُوا؟ قَالَ: «إِذًا يَتَّكِلُوا» وَأَخْبَرَ بِهَا مُعَاذٌ عِنْدَ مَوْتِهِ تَأَثُّمًا.

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একবার মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি (আনুগত্যের জন্য) সদা উপস্থিত আর আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি সৌভাগ্যের পর সৌভাগ্যে উপনীত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেন, যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি মানুষকে এ খবর দেবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে তারা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকবে। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (জীবনভর এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদিসটি বর্ণনা করে গেছেন যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২।

عَنْ هِصَّان بْن الْكَاهِنِ الْعَدَوِيُّ، قَالَ: جَلَسْتُ مَجْلِسًا فِيهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَمُرَةَ، وَلَا أَعْرِفُهُ قَالَ: حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَا عَلَى الْأَرْضِ نَفْسٌ تَمُوتُ لَا تُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا تَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَرْجِعُ ذَاكُمْ إِلَى قَلْبٍ مُوقِنٍ، إِلَّا غُفِرَ لَهَا "، قَالَ: قُلْتُ: أَنْتَ سَمِعْتَ هَذَا مِنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ؟ قَالَ: فَعَنَّفَنِي الْقَوْمُ، فَقَالَ: دَعُوهُ فَإِنَّهُ لَمْ يُسِئِ الْقَوْلَ، نَعَمْ أَنَا سَمِعْتُهُ مِنْ مُعَاذٍ، زَعَمَ أَنَّهُ سَمِعَهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

হিসসান ইবন কাহিন আল-‘আদাভী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক মসলিসে বসেছিলাম, সেখানে আব্দুর রহমান ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বসা ছিলেন; আমি তাকে চিনতাম না। তিনি বলেন, আমাদেরকে মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এ জমিনের বুকে যদি কেউ আল্লাহর সাথে কাউকে শির্ক না করে ও আমাকে আল্লাহর রাসূল হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে মারা যায়, আর তার সে সাক্ষ্য প্রদান দৃঢ় বিশ্বাসী অন্তর থেকে হয়, তবে তাকে ক্ষমা করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এ কথা মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শুনেছেন? একথা শুনে উপস্থিত সবাই আমাকে ভর্ৎসনা করলো। তিনি (আব্দুর রহমান ইবন সামুরা) বললেন, তাকে কেউ কিছু বলো না; কেননা সে খারাপ উদ্দেশ্যে (কষ্ট দেওয়ার) একথা বলে নি। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে একথা শুনেছি। আর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একথা শুনেছেন”।

হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২২০০০; বাযযার, হাদীস নং ২৬২৪; নাসায়ী ফি আলামিল ইয়াওমি ওয়াললাইলাহ, হাদীস নং ১১৩৮; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২০৩।

عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ قَوْمٌ مِنَ النَّارِ بَعْدَ مَا مَسَّهُمْ مِنْهَا سَفْعٌ، فَيَدْخُلُونَ الجَنَّةَ، فَيُسَمِّيهِمْ أَهْلُ الجَنَّةِ: الجَهَنَّمِيِّينَ».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলেছেন, “আযাবে চর্ম বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার পর একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতীগণ তাদেরকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করবে”।

সহীহ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৫৯।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ أَرْبَعَةٌ فَيُعْرَضُونَ عَلَى اللهِ، فَيَلْتَفِتُ أَحَدُهُمْ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، إِذْ أَخْرَجْتَنِي مِنْهَا فَلَا تُعِدْنِي فِيهَا، فَيُنْجِيهِ اللهُ مِنْهَا».

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চার ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তাদের এক ব্যক্তি ফিরে তাকাবে এবং বলবে, হে আমার রব, আপনি যখন একবার আমাকে তা থেকে বের করেছেন, পুনরায় আমাকে সেখানে নিক্ষেপ করবেন না। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২।

এ চার ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত পাবেন, যেমন শাফা‘আতের হাদীসে এ সম্পর্কে এসেছে।

عَنْ عِتْبَانَ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: بَعَثْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي أُحِبُّ أَنْ تَأْتِيَنِي فَتُصَلِّيَ فِي مَنْزِلِي، فَأَتَّخِذَهُ مُصَلًّى، قَالَ: فَأَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَنْ شَاءَ اللهُ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَدَخَلَ وَهُوَ يُصَلِّي فِي مَنْزِلِي وَأَصْحَابُهُ يَتَحَدَّثُونَ بَيْنَهُمْ، ثُمَّ أَسْنَدُوا عُظْمَ ذَلِكَ وَكُبْرَهُ إِلَى مَالِكِ بْنِ دُخْشُمٍ، قَالُوا: وَدُّوا أَنَّهُ دَعَا عَلَيْهِ فَهَلَكَ، وَدُّوا أَنَّهُ أَصَابَهُ شَرٌّ، فَقَضَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ، وَقَالَ: «أَلَيْسَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ؟»، قَالُوا: إِنَّهُ يَقُولُ ذَلِكَ، وَمَا هُوَ فِي قَلْبِهِ، قَالَ: «لَا يَشْهَدُ أَحَدٌ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، فَيَدْخُلَ النَّارَ، أَوْ تَطْعَمَهُ»، قَالَ أَنَسِ: فَأَعْجَبَنِي هَذَا الْحَدِيثَ، فَقُلْتُ لِابْنِي: اكْتُبْهُ فَكَتَبَهُ.

ইতবান ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, “(আমার চোখে কোনো এক রোগ দেখা দিলে) আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে খবর পাঠালাম যে, আমার একান্ত আকাঙ্ক্ষা, আপনি আমার কাছে আগমন করবেন এবং আমার গৃহে দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করবেন আপনার সালাত আদায়ের স্থানটিকে আমি নিজের জন্য সালাত আদায়ের স্থান বানিয়ে নেবো। তারপর আল্লাহ যাদের মঞ্জুর করলেন, তাদের সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তিনি ঘরে ঢুকে সালাত আদায় করতে থাকলেন আর তার সাহাবীরা পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন। তারপর মালিক ইবন দুখশুম এর প্রতি তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। তারা ইচ্ছা পোষণ করছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মলিক ইবন দুখশুম-এর জন্য বদ দো‘আ করুন যেন সে ধ্বংস হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন এবং বললেন, সে কি সাক্ষ্য দেয় না যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? তারা বললেন, সে এ কথা বলে বটে; কিন্তু তার অন্তরে ঈমান নেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তিই আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দেবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, অথবা আগুন তাকে গ্রাস করবে না।”

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «حَتَّى إِذَا فَرَغَ اللَّهُ مِنَ القَضَاءِ بَيْنَ العِبَادِ، وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ بِرَحْمَتِهِ مَنْ أَرَادَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، أَمَرَ المَلاَئِكَةَ أَنْ يُخْرِجُوا مِنَ النَّارِ، مَنْ كَانَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا، مِمَّنْ أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَرْحَمَهُ، مِمَّنْ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَيَعْرِفُونَهُمْ فِي النَّارِ بِأَثَرِ السُّجُودِ، تَأْكُلُ النَّارُ ابْنَ آدَمَ إِلَّا أَثَرَ السُّجُودِ، حَرَّمَ اللَّهُ عَلَى النَّارِ أَنْ تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُودِ، فَيَخْرُجُونَ مِنَ النَّارِ، قَدْ امْتُحِشُوا، فَيُصَبُّ عَلَيْهِمْ مَاءُ الحَيَاةِ، فَيَنْبُتُونَ تَحْتَهُ كَمَا تَنْبُتُ الحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যখন বান্দাদের বিচারকার্য সমাপন করে আপন রহমতে কিছু সংখ্যক জাহান্নামীকে বের করতে চাইবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার র্শিক মুক্তদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ফিরিশতাদের নির্দেশ দেবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই। সাজদার চিহ্ন দ্বারা তাদেরকে ফিরিশতারা চিনতে পারবে সাজদার চিহ্নগুলো ছাড়া সেসব আদম সন্তানের সারা দেহ জাহান্নামের আগুন ভস্মীভূত করে দেবে। আদম সন্তানের সাজদার চিহ্নসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে বিদগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নদেশ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনে ভাসমান বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنَّا قُعُودًا حَوْلَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَعَنَا أَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ فِي نَفَرٍ، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ أَظْهُرِنَا، فَأَبْطَأَ عَلَيْنَا، وَخَشِينَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا، وَفَزِعْنَا، فَقُمْنَا، فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ، فَخَرَجْتُ أَبْتَغِي رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَيْتُ حَائِطًا لِلْأَنْصَارِ لِبَنِي النَّجَّارِ، فَدُرْتُ بِهِ هَلْ أَجِدُ لَهُ بَابًا؟ فَلَمْ أَجِدْ، فَإِذَا رَبِيعٌ يَدْخُلُ فِي جَوْفِ حَائِطٍ مِنْ بِئْرٍ خَارِجَةٍ - وَالرَّبِيعُ الْجَدْوَلُ - فَاحْتَفَزْتُ، فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَبُو هُرَيْرَةَ» فَقُلْتُ: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «مَا شَأْنُكَ؟» قُلْتُ: كُنْتَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا، فَقُمْتَ فَأَبْطَأْتَ عَلَيْنَا، فَخَشِينَا أَنْ تُقْتَطَعَ دُونَنَا، فَفَزِعْنَا، فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ، فَأَتَيْتُ هَذَا الْحَائِطَ، فَاحْتَفَزْتُ كَمَا يَحْتَفِزُ الثَّعْلَبُ، وَهَؤُلَاءِ النَّاسُ وَرَائِي، فَقَالَ: «يَا أَبَا هُرَيْرَةَ» وَأَعْطَانِي نَعْلَيْهِ، قَالَ: «اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ، فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ، فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ»، فَكَانَ أَوَّلَ مَنْ لَقِيتُ عُمَرُ، فَقَالَ: مَا هَاتَانِ النَّعْلَانِ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ فَقُلْتُ: هَاتَانِ نَعْلَا رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بَعَثَنِي بِهِمَا مَنْ لَقِيتُ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ، بَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، فَضَرَبَ عُمَرُ بِيَدِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَخَرَرْتُ لِاسْتِي، فَقَالَ: ارْجِعْ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَجْهَشْتُ بُكَاءً، وَرَكِبَنِي عُمَرُ، فَإِذَا هُوَ عَلَى أَثَرِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا لَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟» قُلْتُ: لَقِيتُ عُمَرَ، فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِي بَعَثْتَنِي بِهِ، فَضَرَبَ بَيْنَ ثَدْيَيَّ ضَرْبَةً خَرَرْتُ لِاسْتِي، قَالَ: ارْجِعْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عُمَرُ، مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا فَعَلْتَ؟» قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، بِأَبِي أَنْتَ، وَأُمِّي، أَبَعَثْتَ أَبَا هُرَيْرَةَ بِنَعْلَيْكَ، مَنْ لَقِيَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ بَشَّرَهُ بِالْجَنَّةِ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: فَلَا تَفْعَلْ، فَإِنِّي أَخْشَى أَنْ يَتَّكِلَ النَّاسُ عَلَيْهَا، فَخَلِّهِمْ يَعْمَلُونَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَخَلِّهِمْ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। আমাদের মধ্যে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্য থেকে উঠে চলে গেলেন। তিনি আমাদের মাঝে আসতে বিলম্ব করলেন। এতে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি কোনো বিপদে পড়লেন কিনা। আমরা শঙ্কিত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ভীত-সন্ত্রস্তদের মধ্যে আমি ছিলাম প্রথম। তাই আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। তালাশ করতে করতে বনী নাজ্জার গোত্রের আনসারদের বাগানের কাছে পৌঁছলাম। আমি বাগানের চারদিকে ঘুরে কোনো দরজা পেলাম না। হঠাৎ দেখতে পেলাম বাইরের কুয়া থেকে একটি ঝর্ণা প্রণালী (নালা) বাগানের ভিতর প্রবেশ করেছে। আমি নিজেকে শিয়ালের মত সংকুচিত করে প্রণালীর পথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন, আবু হুরায়রা! আমি বললাম, জি হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ্‌! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার অবস্থা কী? আমি বললাম, আপনি আমাদের মধ্যে ছিলেন। তারপর আমাদের মধ্য থেকে উঠে চলে এলেন। আপনার ফিরতে দেরি দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, আমাদের অবর্তমানে আপনি বেশি বিপদে পড়লেন কী না? এ আশঙ্কায় আমরা সকলেই ভীত হয়ে পড়লাম। আমি সর্বপ্রথম বেরিয়ে গিয়ে এ বাগানে উপস্থিত হই। আমি শিয়ালের মতো সংকুচিত হয়ে এ বাগানে প্রবেশ করি। আর সেসব লোক আমার পেছনে রয়েছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হে আবু হুরায়রা বলে তার পাদুকা জোড়া প্রদান করলেন, আর বললেন, আমার এ পাদুকা জোড়া নিয়ে যাও এবং বাগানের বাইরে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দাও, যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে নাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, সে-ই জান্নাতী হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, বাইরে এসে প্রথমেই উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! এ জুতা জোড়া কী? আমি বললাম, এ তো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাদুকা। তিনি আমাকে এ দুটি দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, যার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়, সে যদি আন্তরিক বিশ্বাসে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাকে যেন জান্নাতের সুসংবাদ দেই। একথা শুনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার বুকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, আমি পেছনে পড়ে গেলাম। তখন তিনি বললেন, ফিরে যাও, হে আবু হুরায়রা! আমি কাঁদো কাঁদো অবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে ফিরে এলাম। আর সাথে সাথে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও আমার পিছনে পিছনে এলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার কী হয়েছে? বললাম, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে আমার দেখা হয়। আপনি যা বলে আমাকে পাঠিয়েছিলেন আমি তা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জানাই। এতে তিনি আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি পিছনের দিকে পড়ে যাই। তিনি আমাকে ফিরে আসতে বললেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমার! কিসে তোমাকে এ কাজে উত্তেজিত করেছে? তিনি উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আপনি কি আপনার পাদুকাসহ আবু হুরায়রাকে পাঠিয়েছেন যে, তার সাথে যদি এমন লোকের সাক্ষাৎ হয়, যে আন্তরিকতার সাথে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এরূপ করতে যাবেন না। আমি আশঙ্কা করি যে, লোকেরা এর ওপরই ভরসা করে বসে থাকবে। আপনি তাদের ছেড়ে দিন। তারা আমল করুক। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তাদের ছেড়ে দাও”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَسِيرٍ، قَالَ: فَنَفِدَتْ أَزْوَادُ الْقَوْمِ، قَالَ: حَتَّى هَمَّ بِنَحْرِ بَعْضِ حَمَائِلِهِمْ، قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ جَمَعْتَ مَا بَقِيَ مِنْ أَزْوَادِ الْقَوْمِ، فَدَعَوْتَ اللهَ عَلَيْهَا، قَالَ: فَفَعَلَ، قَالَ: فَجَاءَ ذُو الْبُرِّ بِبُرِّهِ، وَذُو التَّمْرِ بِتَمْرِهِ، قَالَ: وَقَالَ مُجَاهِدٌ: وَذُو النَّوَاةِ بِنَوَاهُ، قُلْتُ: وَمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ بِالنَّوَى؟ قَالَ: كَانُوا يَمُصُّونَهُ وَيَشْرَبُونَ عَلَيْهِ الْمَاءَ، قَالَ: فَدَعَا عَلَيْهَا قَالَ حَتَّى مَلَأَ الْقَوْمُ أَزْوِدَتَهُمْ، قَالَ: فَقَالَ عِنْدَ ذَلِكَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি সফরে ছিলাম। এক পর্যায়ে দলের রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেলো। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কিছু সংখ্যক উট যবেহ করার মনস্থ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, এতে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! যদি আপনি সকলের রসদ সামগ্রী একত্র করে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতেন, তবে ভালো হতো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন। যার কাছে গম ছিল সে গম এবং যার কাছে খেজুর ছিল সে খেজুর নিয়ে হাযির হলো, (তালহা ইবন মুসাররিফ বলেন) মুজাহিদ আরো বর্ণনা করেন যে, যার কাছে খেজুরের আঁটি ছিল, সে তাই নিয়ে হাযির হলো। আমি (তালহা) বললাম, আটি দিয়ে কী করতেন? তিনি বললেন, তা চুষে পানি পান করতেন বর্ণনাকারী বললেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংগৃহীত খাদ্য সামগ্রীর ওপর দো‘আ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অবশেষে লোকেরা রসদে নিজেদের পাত্র পূর্ণ করে নিলো। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, যে এ দুটি বিষয়ের প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

لَمَّا كَانَ غَزْوَةُ تَبُوكَ أَصَابَ النَّاسَ مَجَاعَةٌ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ أَذِنْتَ لَنَا فَنَحَرْنَا نَوَاضِحَنَا، فَأَكَلْنَا وَادَّهَنَّا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْعَلُوا»، قَالَ: فَجَاءَ عُمَرُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنْ فَعَلْتَ قَلَّ الظَّهْرُ، وَلَكِنْ ادْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، ثُمَّ ادْعُ اللهَ لَهُمْ عَلَيْهَا بِالْبَرَكَةِ، لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَجْعَلَ فِي ذَلِكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ»، قَالَ: فَدَعَا بِنِطَعٍ، فَبَسَطَهُ، ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ، قَالَ: فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بِكَفِّ ذُرَةٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَفِّ تَمْرٍ، قَالَ: وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَسْرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النِّطَعِ مِنْ ذَلِكَ شَيْءٌ يَسِيرٌ، قَالَ: فَدَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ بِالْبَرَكَةِ، ثُمَّ قَالَ: «خُذُوا فِي أَوْعِيَتِكُمْ»، قَالَ: فَأَخَذُوا فِي أَوْعِيَتِهِمْ، حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَرِ وِعَاءً إِلَّا مَلَئُوهُ، قَالَ: فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا، وَفَضَلَتْ فَضْلَةٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ، فَيُحْجَبَ عَنِ الْجَنَّةِ».

তাবুকের যুদ্ধের সময়ে লোকেরা দারুণ খাদ্যাভাবে পতিত হলো। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের উটগুলো যবেহ করে তার গোশত খাই এবং আর চর্বি ব্যবহার করি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যবেহ করতে পারো। বর্ণনাকারী বললেন, ইত্যবসরে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসলেন এবং আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! যদি এরূপ করা হয়, তাহলে বাহন কমে যাবে; বরং আপনি লোকদেরকে তাদের উদ্বৃত্ত রসদ নিয়ে উপস্থিত হতে বলুন, তাতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে বরকতের দো‘আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ তাতে বরকত দিবেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ঠিক আছে। তিনি একটি দস্তরখান আনতে বললেন এবং তা বিছালেন। এরপর সকলের উদ্বৃত্ত রসদ চেয়ে পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন কেউ একমুঠো গম নিয়ে হাযির হলো, কেউ একমুঠো খেজুর নিয়ে হাযির হলো আবার কেউ এক টুকরা রুটি নিয়ে আসল। এভাবে কিছু পরিমাণ রসদ-সামগ্রী দস্তরখানায় জমা হলো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্রে রসদপত্র ভর্তি করে নাও। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরে নিলো; এমনকি এ বাহিনীর কোনো পাত্রই আর অপূর্ণ রইল না। এরপর সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। কিছু উদ্বৃত্তও রয়ে গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, যে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ কথা দু’টির ওপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنِّي لَأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا، وَآخِرَ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ كَبْوًا، فَيَقُولُ اللَّهُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشَرَةَ أَمْثَالِهَا - أَوْ: إِنَّ لَكَ مِثْلَ عَشَرَةِ أَمْثَالِ الدُّنْيَا - فَيَقُولُ: تَسْخَرُ مِنِّي - أَوْ: تَضْحَكُ مِنِّي - وَأَنْتَ المَلِكُ " فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، وَكَانَ يَقُولُ: «ذَاكَ أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً».

আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হবে এবং সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক ব্যক্তি অধোবদন অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং সে ফিরে আসবে ও বলবে, হে রব! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। পুনরায় আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে রব! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ করো। কেননা জান্নাত তোমার জন্য পৃথিবীর সমতুল্য এবং তার দশ গুণ অথবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীর দশ গুণ। তখন লোকটি বলবে, হে রব! আপনি কি আমার সাথে বিদ্রূপ বা হাসি ঠাট্টা করছেন? (বর্ণনাকারী বলেন) আমি তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে হাসতে দেখলাম যে, তাঁর দন্তরাজি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল এবং বলা হচ্ছিল এটি জান্নাতীদের নিম্নতম মর্যাদা”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعود رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ» وَقُلْتُ أَنَا: «مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ».

আব্দুল্লাহ (ইবন মাসঊদ) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুর শির্ক না করা অবস্থায় মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২।

عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: خَرَجْتُ لَيْلَةً مِنَ اللَّيَالِي، فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي وَحْدَهُ، وَلَيْسَ مَعَهُ إِنْسَانٌ، قَالَ: فَظَنَنْتُ أَنَّهُ يَكْرَهُ أَنْ يَمْشِيَ مَعَهُ أَحَدٌ، قَالَ: فَجَعَلْتُ أَمْشِي فِي ظِلِّ القَمَرِ، فَالْتَفَتَ فَرَآنِي، فَقَالَ: «مَنْ هَذَا» قُلْتُ: أَبُو ذَرٍّ، جَعَلَنِي اللَّهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ تَعَالَهْ» قَالَ: فَمَشَيْتُ مَعَهُ سَاعَةً، فَقَالَ: «إِنَّ المُكْثِرِينَ هُمُ المُقِلُّونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، إِلَّا مَنْ أَعْطَاهُ اللَّهُ خَيْرًا، فَنَفَحَ فِيهِ يَمِينَهُ وَشِمَالَهُ وَبَيْنَ يَدَيْهِ وَوَرَاءَهُ، وَعَمِلَ فِيهِ خَيْرًا».

قَالَ: فَمَشَيْتُ مَعَهُ سَاعَةً، فَقَالَ لِي: «اجْلِسْ هَا هُنَا» قَالَ: فَأَجْلَسَنِي فِي قَاعٍ حَوْلَهُ حِجَارَةٌ، فَقَالَ لِي: «اجْلِسْ هَا هُنَا حَتَّى أَرْجِعَ إِلَيْكَ» قَالَ: فَانْطَلَقَ فِي الحَرَّةِ حَتَّى لاَ أَرَاهُ، فَلَبِثَ عَنِّي فَأَطَالَ اللُّبْثَ، ثُمَّ إِنِّي سَمِعْتُهُ وَهُوَ مُقْبِلٌ، وَهُوَ يَقُولُ: «وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى» قَالَ: فَلَمَّا جَاءَ لَمْ أَصْبِرْ حَتَّى قُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ جَعَلَنِي اللَّهُ فِدَاءَكَ، مَنْ تُكَلِّمُ فِي جَانِبِ الحَرَّةِ، مَا سَمِعْتُ أَحَدًا يَرْجِعُ إِلَيْكَ شَيْئًا؟ قَالَ: " ذَلِكَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، عَرَضَ لِي فِي جَانِبِ الحَرَّةِ، قَالَ: بَشِّرْ أُمَّتَكَ أَنَّهُ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ، قُلْتُ: يَا جِبْرِيلُ، وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى؟ قَالَ: نَعَمْ " قَالَ: قُلْتُ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى؟ قَالَ: «نَعَمْ، وَإِنْ شَرِبَ الخَمْرَ».

আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাতে আমি বের হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একাকী চলতে দেখলাম, তার সঙ্গে কোনো লোক ছিলো না। আমি মনে করলাম, তার সঙ্গে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চাঁদের ছায়াতে তার পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি বললাম আমি আবু যার। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্যে উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেন, ওহে আবু যার! এসো। আমি তার সঙ্গে কিছুক্ষণ চললাম। তারপর তিনি বললেন, প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন সল্পাধিকারী হবে। অবশ্য যাদের আল্লাহ সম্পদ দান করেন এবং তারা সম্পদকে তা ডানে, বামে, আগে ও পিছনে ব্যায় করে। আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, (তারা ব্যাতীত)। তারপর আমি আরো কিছুক্ষণ তার সঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেন, তুমি এখানে বসে থাকো। (এ কথা বলে) তিনি আমাকে চতুর্দিকে প্রস্তরঘেরা একটা খোলা জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেন, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকো। তিনি বলেন, এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমনকি তিনি আমার দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলেন এবং বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেলো। অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাকে বলতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। তারপর তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আমি আর ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে তাকে জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য হলাম যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। আপনি এই প্রস্তর প্রান্তরে কার সাথে কথা বললেন? কাউকে তো আপনার কথার উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেন, তিনি ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি এই কংকরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার উম্মতদের সুসংবাদ দেবেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিবরীল! যদিও সে চুরি করে, আর যদিও সে যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার আমি বললাম, যদিও সে চুরি করে, আর যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ; যদিও সে মদ পান করে”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।

عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ أَمْشِي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَرَّةِ المَدِينَةِ عِشَاءً، اسْتَقْبَلَنَا أُحُدٌ، فَقَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ، مَا أُحِبُّ أَنَّ أُحُدًا لِي ذَهَبًا، يَأْتِي عَلَيَّ لَيْلَةٌ أَوْ ثَلاَثٌ، عِنْدِي مِنْهُ دِينَارٌ إِلَّا أَرْصُدُهُ لِدَيْنٍ، إِلَّا أَنْ أَقُولَ بِهِ فِي عِبَادِ اللَّهِ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا» وَأَرَانَا بِيَدِهِ، ثُمَّ قَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ» قُلْتُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الأَكْثَرُونَ هُمُ الأَقَلُّونَ، إِلَّا مَنْ قَالَ هَكَذَا وَهَكَذَا» ثُمَّ قَالَ لِي: «مَكَانَكَ لاَ تَبْرَحْ يَا أَبَا ذَرٍّ حَتَّى أَرْجِعَ» فَانْطَلَقَ حَتَّى غَابَ عَنِّي، فَسَمِعْتُ صَوْتًا، فَخَشِيتُ أَنْ يَكُونَ عُرِضَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَذْهَبَ، ثُمَّ ذَكَرْتُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَبْرَحْ» فَمَكُثْتُ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، سَمِعْتُ صَوْتًا، خَشِيتُ أَنْ يَكُونَ عُرِضَ لَكَ، ثُمَّ ذَكَرْتُ قَوْلَكَ فَقُمْتُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكَ جِبْرِيلُ، أَتَانِي فَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ، قَالَ: «وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ».

আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এশার সময় মদীনায় ‘হাররা’ নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা ওহুদ পাহাড়ের সম্মুখীন হলে তিনি আমাকে বললেন, হে আবু যার! আমি এটি পছন্দ করি না যে, আমার নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ব্যতীত এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত পর্যন্ত আমার হাতে তা থেকে যাক; বরং আমি পছন্দ করি যে, আমি এগুলো আল্লাহর বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। (কীভাবে দেবেন) তা তাঁর হাত দিয়ে তিনি দেখালেন। তারপর বললেন, হে আবু যার! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমি সদা (আনুগত্যে) উপস্থিত, আর (আপনার আনুগত্যের মাধ্যমেই আমি) সব সৌভাগ্যে উপনীত হই তখন তিনি বললেন, দুনিয়াতে যারা অধিক সম্পদশালী, আখিরাতে তারা হবেন অনেক স্বল্পাধিকারী তবে যারা তাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দিবে, তারা হবেন এর ব্যতিক্রম। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে আবু যার! আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোথাও যেয়ো না। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন। এমন সময় একটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সেদিকে অগ্রসর হতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধাজ্ঞা যে কোথাও যেয়ো না মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি একটা আওয়াজ শুনে শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোনো বিপদে পড়লেন কিনা। কিন্তু আপনার কথা স্মরণ করে থেমে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদিও সে ব্যক্তি ব্যভিচার করে? যদি সে ব্যক্তি চুরি করে? তিনি বললেন, সে হ্যাঁ, যদিও সে ব্যভিচার করে, যদিও সে চুরি করে থাকে তবুও”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।

عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَتَانِي جِبْرِيلُ فَبَشَّرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ، قُلْتُ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى، قَالَ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى».

আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে এ সুসংবাদ দিলেন যে, আল্লাহর সাথে শরীক না করে যদি কেউ মারা যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, চুরি ও যিনা করলেও কি? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চুরি ও যিনা করলেও”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪।

হাদীসের অর্থ: যে ব্যক্তি তাওহীদের ওপর মারা যাবে এবং গুনাহ থেকে তাওবা করবে সে শুরু থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাফেয ইবন হাজার রহ. বলেন, অন্যদিকে যে ব্যক্তি গুনাহ করে তাওবা ছাড়া মারা যাবে হাদীসের বাহ্যিক ভাষ্য অনুযায়ী সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকীদাহ হলো, এটি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এর প্রমাণ উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস,

«وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ بِهِ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ لَهُ كَفَّارَةٌ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَسَتَرَهُ اللَّهُ فَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ، إِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ، وَإِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ».

“আর যে এসবের কোনো কিছুতে (গুনাহে) লিপ্ত হয় এবং তাকে এ কারণে দুনিয়াতে আইনানুগ শাস্তি দেয়া হবে; তবে এ শাস্তি তার কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ সবের কোনটিতে লিপ্ত হলো আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন, তবে তার ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর ন্যস্ত। তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছে করলে মাফ করবেন”।

সহীহ, সহীহ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৯২। হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর চয়নকৃত।

এটি উপরোক্ত মুবহামের (অস্পষ্ট কথার) তাফসীর এবং খারেজী ও ‘মুতাযিলাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব; যারা মনে করেন, কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি তাওবা ছাড়া মারা গেলে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে।

অতঃপর, ইবন তীন রহ. দাউদী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম বুখারী রহ. এর বক্তব্য হাদীসের বাহ্যিক অর্থের বিপরীত; কেননা তাওবা যদি শর্ত হতো তবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলতেন না যে, যদিও সে যিনা করে ও চুরি করে। হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, শুরু থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদিও যিনা ও চুরি করে অথবা পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

এ ব্যাখার দিকে ইবন হিব্বান রহ. তার সহীহ ইবন হিব্বানে (১/৪৪৬) এ ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে; যদিও জান্নাতে যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট সময় শাস্তি ভোগ করবে।

عَنْ عُثْمَانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ».

উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬।

عَنْ عُثْمَان بْن عَفَّان قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَا يَقُولُهَا عَبْدٌ حَقًّا مِنْ قَلْبِهِ إِلَّا حُرِّمَ عَلَى النَّارِ " فَقَالَ لَهُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: أَنَا أُحَدِّثُكَ مَا هِيَ؟ هِيَ كَلِمَةُ الْإِخْلاصِ الَّتِي أَلْزَمَهَا اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ، وَهِيَ كَلِمَةُ التَّقْوَى الَّتِي أَلَاصَ عَلَيْهَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَمَّهُ أَبَا طَالِبٍ عِنْدَ الْمَوْتِ: شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ».

উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “আমি অবশ্যই জানি এমন একটি কালেমা যা বান্দা অন্তর থেকে সত্যিকারে বললে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম হয়ে যায়। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি আপনাকে বলব এটি কী? এটা হলো ইখলাসের কালেমা যা আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদেরকে অত্যাবশ্যকীয় করেছেন; এটি তাকওয়ার কালেমা যা আল্লাহর নবী তাঁর চাচার মৃত্যুকালে তাকে পড়ানোর জন্য বারবার চেষ্টা করেছিলেন (তালকীন দিয়েছেন), তাহলো “আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এ সাক্ষ্য দেওয়া”।

হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৪৪৭; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২০৪, তিনি সহীহ বলেছেন; হাকিম, ১/৩৫১।

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ بِالشَّفَاعَةِ كَأَنَّهُمُ الثَّعَارِيرُ»، قُلْتُ: مَا الثَّعَارِيرُ؟ قَالَ: «الضَّغَابِيسُ، وَكَانَ قَدْ سَقَطَ فَمُهُ» فَقُلْتُ لِعَمْرِو بْنِ دِينَارٍ: أَبَا مُحَمَّدٍ سَمِعْتَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يَخْرُجُ بِالشَّفَاعَةِ مِنَ النَّارِ» قَالَ: نَعَمْ.

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শাফা‘আতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যেন তারা সা‘আরীর। (বর্ণনাকারী জাবীর বলেন) আমি বললাম সা‘আরীর কী? তিনি বললেন, সা‘আরীর মানে দ্বাগাবীস (দগ্ধ-বিকৃত) তাদের মুখ বের হয়ে পড়েছে (সনদের বর্ণনাকারী হাম্মাদ বলেন) আমি আবু মুহাম্মাদ আমর ইবন দীনারকে জিজ্ঞাসা করি যে, আপনি কি জাবির ইবন আব্দুল্লাহকে বর্ণনা করতে শুনেছেন, যে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, শাফা‘আতের দ্বারা জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তিনি বললেন, হ্যাঁ।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৫৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৮।

عَنْ جَابِر، يَقُولُ: سَمِعَت مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأُذُني، يَقُولُ: «إِنَّ اللهَ يُخْرِجُ نَاسًا مِنَ النَّارِ فَيُدْخِلَهُمُ الْجَنَّةَ»

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি দুই কানে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং কিছু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১/৩১৭।

عَنْ جَابِر بْن عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ قَوْمًا يُخْرَجُونَ مِنَ النَّارِ يَحْتَرِقُونَ فِيهَا، إِلَّا دَارَاتِ وُجُوهِهِمْ حَتَّى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ».

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। এদের মুখমণ্ডল ব্যতীত সারা দেহ জ্বলে পুড়ে গেছে। অবশেষে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১/৩১৯।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «دَارَاتِ» এটি دارة এর বহুবচন। যা চতুর্দিক দিয়ে বেষ্টিত। অর্থাৎ জাহান্নাম চেহারার চারপাশ খাবে না; কেননা এটি সাজদাহর স্থান, যেমন অন্য হাদীসে এসেছে, «إلا مواضع السجود» তবে সাজদাহর স্থানসমূহ ব্যতীত।

عَنْ يَزِيد الْفَقِير، قَالَ: كُنْتُ قَدْ شَغَفَنِي رَأْيٌ مِنْ رَأْيِ الْخَوَارِجِ، فَخَرَجْنَا فِي عِصَابَةٍ ذَوِي عَدَدٍ نُرِيدُ أَنْ نَحُجَّ، ثُمَّ نَخْرُجَ عَلَى النَّاسِ، قَالَ: فَمَرَرْنَا عَلَى الْمَدِينَةِ، فَإِذَا جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ يُحَدِّثُ الْقَوْمَ، جَالِسٌ إِلَى سَارِيَةٍ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَإِذَا هُوَ قَدْ ذَكَرَ الْجَهَنَّمِيِّينَ، قَالَ: فَقُلْتُ لَهُ: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ، مَا هَذَا الَّذِي تُحَدِّثُونَ؟ وَاللهُ يَقُولُ: ﴿رَبَّنَآ إِنَّكَ مَن تُدۡخِلِ ٱلنَّارَ فَقَدۡ أَخۡزَيۡتَهُۥۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [ال عمران: ١٩٢]، وَ ﴿وَأَمَّا ٱلَّذِينَ فَسَقُواْ فَمَأۡوَىٰهُمُ ٱلنَّارُۖ كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَآ أُعِيدُواْ فِيهَا وَقِيلَ لَهُمۡ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلنَّارِ ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ﴾ [السجدة : ٢٠] ، فَمَا هَذَا الَّذِي تَقُولُونَ؟ قَالَ: فَقَالَ: «أَتَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «فَهَلْ سَمِعْتَ بِمَقَامِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَعْنِي الَّذِي يَبْعَثُهُ اللهُ فِيهِ -؟» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «فَإِنَّهُ مَقَامُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَحْمُودُ الَّذِي يُخْرِجُ اللهُ بِهِ مَنْ يُخْرِجُ»، قَالَ: ثُمَّ نَعَتَ وَضْعَ الصِّرَاطِ، وَمَرَّ النَّاسِ عَلَيْهِ، - قَالَ: وَأَخَافُ أَنْ لَا أَكُونَ أَحْفَظُ ذَاكَ - قَالَ: غَيْرَ أَنَّهُ قَدْ زَعَمَ أَنَّ قَوْمًا يَخْرُجُونَ مِنَ النَّارِ بَعْدَ أَنْ يَكُونُوا فِيهَا، قَالَ: - يَعْنِي - فَيَخْرُجُونَ كَأَنَّهُمْ عِيدَانُ السَّمَاسِمِ، قَالَ: «فَيَدْخُلُونَ نَهَرًا مِنْ أَنْهَارِ الْجَنَّةِ، فَيَغْتَسِلُونَ فِيهِ، فَيَخْرُجُونَ كَأَنَّهُمُ الْقَرَاطِيسُ»، فَرَجَعْنَا قُلْنَا: وَيْحَكُمْ أَتُرَوْنَ الشَّيْخَ يَكْذِبُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَرَجَعْنَا فَلَا وَاللهِ مَا خَرَجَ مِنَّا غَيْرُ رَجُلٍ وَاحِدٍ، أَوْ كَمَا قَالَ: أَبُو نُعَيْمٍ.

ইয়াযীদুল ফকীর বলেন, খারেজীদের একটি কথা আমার অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। (কবীরা গুণাহকারীরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। আর যে একবার জাহান্নামে যাবে সে আর কখনো তা থেকে বের হতে পারবে না। এ হলো খারেজীদের আকীদা)। আমরা একদল লোক হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। ইচ্ছা ছিলো, হজ শেষে উল্লিখিত আকীদা প্রচার করে বেড়াবো। আমরা মদীনায় পৌঁছেই দেখলাম জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটি খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে বসে লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস শুনাচ্ছেন। তিনি (বর্ণনাকারী ইয়াযীদ) বলেন, জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার বর্ণনায় জাহান্নামবাসীদের প্রসঙ্গও আলোচনা করলেন। তাকে বললাম, হে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী! আপনারা কী ধরনের হাদীস বর্ণনা করছেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “হে আমাদের রব, নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে। আর যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯২] এবং আল্লাহর আরেকটি বাণী, “আর যারা পাপকাজ করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।”। [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ২০] আর আপনি এটা কী কথা বলছেন? জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি কি কুরআন তিলাওয়াত করো? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিলাওয়াত করি। তিনি বললেন, তিমি কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাকামে মাহমুদের কথা শুনেছ যেখানে আল্লাহ তাকে (কিয়ামাতের দিন) পৌঁছাবেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। তিনি বললেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাকামে মাহমূদ হচ্ছে সে স্থান ও মর্যাদা, যার মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। ইয়াযীদ বলেন, অতঃপর তিনি (জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) পুলসিরাত সংস্থাপনের বিবরণ ও তার উপর দিয়ে মানুষের গমনাগমনের বর্ণনা দেন। তিনি (ইয়াযীদ) বলেন, আমার ভয় হচ্ছে যে, হয়ত আমি সেটা যথাযথ সংরক্ষণ করতে পারি নি। তবে তিনি বলেছেন, কিছু সংখ্যক লোক, যাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল পরে তাদেরকে ওখান থেকে এমন অবস্থায় বের করে আনা হবে যেনো তারা আম্বুস কাঠ। অর্থাৎ তারা জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে বের হবে। তিনি বলেন, অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের কোনো নহরে প্রবেশ করা হবে, তারপর তারা তাতে গোসল করবে, ফলে তারা সেখান থেকে ধবধবে সাদা কাগজের ন্যায় হয়ে বের হবে। ইয়াযীদুল ফকীর রহ. বলেন, আমরা সেখান থেকে ফিরে আসলাম এবং বললাম, তোমরা (খারেজীরা) ধ্বংস হও। তোমরা কী মনে করো এ বৃদ্ধ (বুযর্গ) লোকটি (অর্থাৎ জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যা আরোপ করতে পারেন? অতঃপর আমরা হজ সমাপন করে বাড়ি ফিরে আসলাম; কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র এক ব্যক্তি ছাড়া সবাই আমাদের পূর্ব আকীদা (খারেজী মতবাদ) পরিত্যাগ করলাম। অথবা আবু নু‘আইম যেরূপ বর্ণনা করেছেন”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১/৩২০।

হাদীসে উল্লিখিত শব্দ «شَغَفَنِي» খারেজীদের একটি কথা আমার অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। (কবীরা গুণাহকারীরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। আর যে একবার জাহান্নামে যাবে সে আর কখনো তা থেকে বের হতে পারবে না।

হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি শব্দ, ««ثُمَّ نَخْرُجَ عَلَى النَّاس ইচ্ছা ছিলো, হজ শেষে খারেজী মাযহাব প্রচার করে বেড়াবো।

হাদীসে উল্লিখিত শব্দ «كَأَنَّهُمْ عِيدَانُ السَّمَاسِمِ» এটি سمسم শব্দের বহুবচন। যেনো তারা তিলের তেলের গাছ যখন তা শুকানো হয় কেউ কেউ বলেছেন, এটির অর্থ জ্বলে-পুড়ে যাওয়া কালো কাঠ।

হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি শব্দ «َأَنَّهُمُ الْقَرَاطِيسُ» এটি قرطاس এর বহুবচন। এর অর্থ সাদা খাতা যাতে লেখা হয়। তাদেরকে সাদা কাগজের সাথে তুলনা করা হয়েছে, কেননা তাদের কালো চেহারা ধুয়ে মুছে এমনভাবে পরিস্কার করা হবে যেনো ধবধবে সাদা কাগজ। ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. এ মত ব্যক্ত করেছেন।

« فَرَجَعْنَا فَلَا وَاللهِ مَا خَرَجَ مِنَّا غَيْرُ رَجُلٍ وَاحِدٍ» অতঃপর আমরা হজ সমাপন করে বাড়ি ফিরে আসলাম; কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র এক ব্যক্তি ছাড়া সবাই আমাদের পূর্ব আকীদা (খারেজী মতবাদ) পরিত্যাগ করলাম।

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْمُوجِبَتَانِ؟ فَقَالَ: «مَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ».

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! ওয়াজিবকারী (অবশ্যম্ভাবী) দুটি বিষয় কী? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে যাবে।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৩।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «نَادِ فِي النَّاسِ: مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ». فَخَرَجَ فَلَقِيَهُ عُمَرُ فِي الطَّرِيقِ، فَقَالَ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قُلْتُ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذَا وَكَذَا، قَالَ: ارْجِعْ، فَأَبَيْتُ، فَلَهَزَنِي لَهْزَةً فِي صَدْرِي أَلَمُهَا، فَرَجَعْتُ وَلَمْ أَجِدْ بُدًّا، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، بَعَثْتَ هَذَا بِكَذَا وَكَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ النَّاسَ قَدْ طَمِعُوا وَخَشُوا، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْعُدْ».

জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মানুষের মধ্যে এ ঘোষণা দিয়ে পাঠালেন যে, “যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই) বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ফলে তিনি এ ঘোষণা দিতে বের হলেন। পথিমধ্যে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি (উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরূপ এরূপ ঘোষণা দিতে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও। আমি অস্বীকার করলাম। ফলে তিনি আমাকে বুকে থাপ্পড় দিলেন। যার ব্যথা আমার বুকে রয়েছে। অতঃপর আমি ফিরে আসি; আমার কোনো উপায় ছিল না উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি তাকে এরূপ ঘোষণা দিতে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! (আপনি এরূপ করবেন না) মানুষ আশাবাদী এবং ভীত অবস্থায় থাকুক। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, তাহলে তুমি বসে পড় (একথার ঘোষণা দিও না)”।

হাসান, ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ৬৯৩; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৫১।

عَنْ عَبْد اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ العَاصِ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللَّهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلًا مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الخَلَائِقِ يَوْمَ القِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ البَصَرِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الحَافِظُونَ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: أَفَلَكَ عُذْرٌ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً، فَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ اليَوْمَ، فَتَخْرُجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، فَيَقُولُ: احْضُرْ وَزْنَكَ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ مَا هَذِهِ البِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ، فَقَالَ: إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ "، قَالَ: «فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ وَالبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ، فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ البِطَاقَةُ، فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ».

‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখে আলাদা করে এনে হাযির করবেন। তার সামনে নিরানব্বইটি (আমলের) নিবন্ধন খাতা খুলে দিবেন। এক একটি নিবন্ধন খাতা হবে যতোদূর দৃষ্টি যায় ততোদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। এরপর তিনি তাকে বললেন, এর একটি কিছুও কি অস্বীকার করতে পারো? আমার সংরক্ষণকারী লিপিকারগণ (কিরামান কাতিবীন) কি তোমার ওপর কোনো যুলুম করেছে? লোকটি বলবে, না, হে আমার রব। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার কিছু বলার মত ওযর আছে কি? লোকটি বলবে, না, হে আমার রব। তিনি বলবেন, হ্যাঁ, আমার কাছে তোমার একটি সাওয়াব আছে। আজ তো তোমার ওপর কোনো যুলুম হবে না। তখন একটি ছোট কাগজের টুকরা বের করা হবে। এতে আছে ‘আশহাদু আন-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়ারাসূলুহু’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহ ছাড়া আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল)। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, চলো, তোমার এ বস্তুর ওযনের সম্মুখে হাযির হও। লোকটি বলবে, ওহে আমার রব! এই একটি ছোট টুকরা আর এতোগুলো নিবন্ধন খাতা। কোথায় কী? তিনি বলবেন, তোমার ওপর অবশ্যই কোনো যুলুম করা হবে না। অনন্তর সবগুলো নিবন্ধন খাতা এক পাল্লায় রাখা হবে আর ছোট সেই টুকরাটিকে আরেক পাল্লায় রাখা হবে। (আল্লাহর কী মহিমা) সবগুলো দপ্তর (ওজনে) হালকা হয়ে যাবে আর ছোট টুকরাটিই হয়ে পড়বে ভারি। আল্লাহর নামের মুকাবেলায় কোনো জিনিসই ভারি হবে না”।

সহীহ, তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৩৯, হাদীসের শব্দ তিরমিযীর চয়নকৃত। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩০০; আমহমদ, হাদীস নং ৬৯৯৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২২৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ» অর্থ হালকা হলো, البِطَاقَةُ মানে ছোট কাগজের টুকরা। السِّجِلَّاتُ শব্দটি سجل এর বহুবচন। অর্থ বড় দফতর, বড় খাতা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» এর অর্থ হলো, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়াতের উপর ঈমান এনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে; যদিও সে শেষ মুহূর্তে মুখে উচ্চারণ করতে পারে নি। কিন্তু কাফির মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললেও জান্নাতে যাবে না। কেননা সে জীবদ্দশায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতকে অস্বীকার করছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি বাণী এ কথার প্রমাণ, তিনি বলেছেন, لَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا أَنْ يَتَّبِعَنِي ‘যদি মূসা আলাইহিস সালাম জীবিত থাকতেন তাহলে আমাকে অনুসরণ করা ছাড়া তাঁর কোনো গতি থাকতো না’, অর্থাৎ তিনি শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললেই তাঁর ঈমান গ্রহণ করা হতো না, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনা তাঁর জন্য অত্যাবশ্যকীয় ছিলো।
 

Share this page