প্রবন্ধ মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব

Abu AbdullahVerified member

Knowledge Sharer
ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Joined
Jan 12, 2023
Threads
792
Comments
1,044
Solutions
19
Reactions
10,792
মদিনায় হিজরতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে মসজিদ নির্মাণ ও ইয়াহূদীদের ইসলামের দিকে ডাকতে আরম্ভ করেন, অনুরূপভাবে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছিল সঠিক সমাধান, নবুওয়াতের পরিপূর্ণতা, সুক্ষ্ম কৌশল এবং মুহাম্মাদী হিকমত।[1]

মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস ইবন মালিকের গৃহে আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব কায়েম করেন। নব্বই জন সাহাবী তার ঘরে একত্রিত হয়; অর্ধেক আনসার আর বাকী অর্ধেক মুহাজির। তাদের সম্পর্ক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এতই নিবিড় ছিল, একজন মারা গেল তার সম্পত্তিতে অপরজন অংশ পেত। অথচ তার সাথে রক্তের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তারপর যখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, তখন উত্তরাধিকার শুধুমাত্র রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنۢ بَعۡدُ وَهَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ مَعَكُمۡ فَأُوْلَٰٓئِكَ مِنكُمۡۚ وَأُوْلُواْ ٱلۡأَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلَىٰ بِبَعۡضٖ فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمُۢ﴾ [الأنفال:75]​

“আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবঙ তোমাদের সাথে জিহাদ করেছে, তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত, আর আত্মীয়-স্বজনরা একে অপরের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর কিতাবে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী”। [সুরা আল-আনফাল, আয়াত: ৭৫]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন, তা শুধু কাগজের লেখা বা মুখের কথা ছিল না, বরং তাদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিল তা ছিল তাদের অন্তরের গাঁথা একটি চিরন্তণ বন্ধন, তা ছিল তাদের জান মালের সাথে একাকার ও অভিন্ন। তাদের কথা ও কাজে ছিল একটি চিরন্তন ও স্থায়ী সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। বিপদে-আপদে তারা ছিলেন একে অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী ও সহযোগী। সহীহ বুখারীতে এ বিষয়ে একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়:

«آخى رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم بين عبد الرحمن بن عوف، وسعد بن الربيع، فقال سعد: قد علمت الأنصار أني من أكثرها مالاً، فأقسم مالي بيني وبينك نصفين، ولي امرأتان، فانظر أعجبهما إليك فسمها لي أطلقها، فإذا انقضت عدتها فتزوجها، فقال عبد الرحمن: بارك الله لك في أهلك ومالك، أين سوقكم؟ فدلوه على سوق بني قينقاع فما انقلب إلا ومعه فضل من أقط وسمن، ثم تابع الغدوة ثم جاء يوماً وبه أثر صُفرة، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: [مَهْيَم؟، قال: تزوجت امرأة من الأنصار، فقال: ما سقت فيها؟ قال: وزن نواة من ذهب، أو نواة من ذهب، فقال: أولِم ولو بشاة»​

“আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও সা‘দ ইবন রবি রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয়ের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসম্পর্ক কায়েম ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন। তখন সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সাথীকে বলল, আনসারীরা জানে আমি সম্পদের দিক দিয়ে তাদের চেয়ে অধিক সম্পদের অধিকারি। সুতরাং তুমি আমার যাবতীয় সম্পদকে তোমার মধ্যে ও আমার মধ্যে দুই ভাগ করে নাও; অর্ধেক তোমার আর বাকী অর্ধেক আমার। আর আমার দু’টি স্ত্রী আছে তাদের মধ্যে তোমার নিকট যাকে পছন্দ হয়, তার নাম নিয়ে বল, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব তারপর যখন তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে, তখন তুমি তাকে বিবাহ করবে। এসব কথা শোনে আব্দুর রহমান তার সাথীকে বলল, আল্লাহ তা‘আলা তোমার পরিবার ও জান-মালের মধ্যে বরকত দান করুন। তোমাদের বাজার কোথায়? তারা বনী কায়নুকা নামক বাজারের সন্ধান দিলে, সেখান থেকে সে সামান্য পনীর ও ঘি নিয়ে ফিরে আসে। তারপর তারা দুপুরের খাওয়া খায়। এরপর সে একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসে তার দেহে লাল রং এর আলামত পরিলক্ষিত দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলল, তোমার কী অবস্থা? উত্তরে সে বলল, আমি একজন আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। তখন রাসূল তাকে বলল, এ বিষয়ে তুমি কী খরচ করেছ? সে বলল, একটি খেজুরের আটি পরিমাণ স্বর্ণ। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ওলিমা খাওয়াও! যদি না পার তাহলে কমপক্ষে একটি ছাগল হলেও খাওয়াও”।[2]



[SUP][1][/SUP] দেখুন: আবূ বকর আল-জাযায়েরির হাযাল হাবীব ইয়া মুহিব্ব, পৃ. ১৭৮।
[SUP][2][/SUP] সহীহ বুখারী, কিতাবু মানাকিবিল আনসার পরিচ্ছেদ: মুহাজির ও আনসারীদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন বিষয়, হাদীস নং ৩৭৮০, ৩৭৮১।
 
Back
Top