আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৩)।
হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন বিষয় চিন্তিত করলে তিনি তৎক্ষণাত সালাতের দিকে ধাবিত হতেন।[১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘নিশ্চয় কিছু ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসলকে বিনষ্ট করার মধ্য দিয়ে আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করব। আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দান করুন। যারা বিপদে পতিত হয়ে বলে যে, আমরা সকলে আল্লাহর অধীন এবং আমরা সকলে তার নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই সে সমস্ত লোক যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৫-১৫৭)। আল্লাহ তা‘আলা লোক্বমান (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কথা উদ্ধৃত করে বলেন,
‘হে বৎস! তুমি সালাত প্রতিষ্ঠা কর, সৎ কাজের আদেশ দাও এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (সূরা লোক্বমান : ১৭)। তিনি আরো বলেন,
‘তোমাদেরকে তোমাদের সম্পদ ও জীবন সম্পর্কে পরীক্ষা করা হবে। আর অবশ্যই তোমরা পূর্ববর্তী গ্রন্থধারী জনতা এবং মুশরিকদের পক্ষ থেকে পীড়াদায়ক কটুক্তি শ্রবণ করবে। সুতরাং তোমরা যদি ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্বয়াশীল হও, তবে নিশ্চয় তা দৃঢ় সংকল্পের কাজ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৮৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,
‘আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করব, শেষ পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে কে জিহাদকারী এবং কে ধৈর্যশীল তাও আমরা জেনে নিব এবং আমরা তোমাদের সকলের তথ্য উদঘাটন করব’ (সূরা মুহাম্মাদ : ৩১)। তিনি আরো বলেন,
‘(বিপদাপদে) ধৈর্যধারণকারীদেরকে বেশুমার প্রতিদান দেয়া হবে’ (সূরা আয-যুমার : ১০)।
অনেকে সামান্য মুছীবতে পতিত হলে মৃত্যু কামনা করে বসে, যা আদৌ উচিত নয়। অবশ্য অবস্থা একেবারে বেগতিক হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই চাইতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘তোমাদের কেউ যেন বিপদে পতিত হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। যদি তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হবে এবং আমাকে মৃত্যু দান করুন যখন মৃত্যুই আমার জন্য উত্তম হবে’।[২]
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, সহজে মৃত্যু কামনা করা ঠিক নয়; বরং ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর ফায়ছালায় রাযী থাকা উচিত। নিম্নে ধৈর্যধারণ করার ফযীলত সংক্রান্ত কতিপয় হাদীস পেশ করা হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘(মুছীবতে পতিত হওয়ার কারণে) তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ যদি সে নেককার হয় তবে হয়তো সে আরো বেশী নেক আমল করবে। আর যদি খারাপ প্রকৃতির হয় তবে হয়তো সে তওবা করার সুযোগ পাবে’।[৩]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এমন মর্যাদা নির্ধারণ করা থাকে, যা সে আমল দ্বারা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তখন আল্লাহ তাকে তার শরীর, সন্তান-সন্ততি প্রভৃতিতে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন এবং তাকে ঐ বিপদের উপর ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দেন। ফলে সে আল্লাহর নির্ধারণকৃত ঐ স্থান ও মর্যাদায় পৌঁছে যায়’।[৪] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘সুস্থ ব্যক্তিরা ক্বিয়ামত দিবসে যখন বিপদে পতিত ব্যক্তিদের বিনিময় দেখতে পাবে, তখন তারা আফসোস করে বলবে, হায়! যদি আমাদের চামড়াগুলো কেঁচি দিয়ে কাটা হত’।[৫]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন প্রকার মুছীবত দ্বারা আক্রান্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তার গুনাহ বিদূরিত করেন। এমনকি যদি তার দেহে সামান্য কাঁটাও বিধে তবুও’।[৬] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি বালা-মুছীবত দ্বারা পরীক্ষা করেন’।[৭]
উবাই বিন কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন শুনতে পেলেন শরীর বালা-মুছীবতে আক্রান্ত হওয়া পাপের কাফফারা স্বরূপ, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি ঐ মুছীবত কম হয় তবুও কি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তা কাঁটা কিংবা তদপেক্ষা বড় কোন বস্তু হয় তবুও। এতদশ্রবণে উবাহ বিন কা‘ব দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এটাই কামনা করি যে, জ্বর যেন সর্বদা উবাইকে কাবু করে রাখে। অবশ্য তা যেন হজ্জ, ওমরাহ, সালাত, জানাযা ও জিহাদে উপস্থিত হতে বাধা না দেয়। রাবী বলেন, (এরপর থেকে) উবাই (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে কেউ স্পর্শ করলে আগুনের মত তাপ তার শরীরে অনুভব করত।[৮]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘কোন মুসলিম ব্যক্তি কাঁটা বা তদপেক্ষা বড় কিছু দ্বারা আক্রান্ত হলে আল্লাহ তদ্বারা তার গুনাহ দূর করেন। যেমন বৃক্ষ হতে পাতাগুলো ঝরে পড়ে যায়’।[৯] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘কোন মুমিন বান্দা শারীরিক মুছীবতে আক্রান্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা হেফাযতকারী ফেরেশতারদেকে বলেন, তোমরা আমার বান্দা যেসব কল্যাণের কাজ করত তা তার জন্য (তার আমলনামায়) লিখতে থাক, যতক্ষণ সে উক্ত মুছীবতে আক্রান্ত থাকে’।[১০]
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! বিপদ দ্বারা সর্বাপেক্ষা অধিক পরীক্ষা করা হয় কাদের কে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
‘নবীদের, অতঃপর তাঁদের তুলনায় যারা উত্তম তাদের। মানুষ তার দ্বীনদারীর অনুপাতে বিপদগ্রস্ত হয়। যদি সে তার দ্বীনের ব্যাপারে শক্ত হয়, তার বিপদও কঠিন হয়। যদি তার দ্বীনের ব্যাপারে শিথিলতা থাকে, তার বিপদও সহজ হয়। তার এরূপ বিপদ হতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সে পৃথিবীতে চলাফেরা করে, অথচ তার কোন গুনাহ থাকে না।[১১]
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘আল্লাহ কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদে পতিত করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করবে তার জন্য তাই হবে। আর যে অধৈর্য হবে তার জন্য ঐ অধৈর্য থাকবে’।[১২] অন্য হাদীসে এসেছে,
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মে সায়েবের নিকট গেলেন এবং বললেন, তোমার কী হয়েছে, কাঁদছ কেন? সে বলল, জ্বর, আল্লাহ জ্বরের মঙ্গল না করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর আদম সন্তানের গুনাহসমূহ দূর করে, যেভাবে কর্মকারের হাপর লোহার মরিচা দূর করে।[১৩]
আত্বা বিন আবি রিবাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে বললেন, তোমাকে কি আমি একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বললেন, সে হল এই কালো মহিলা। যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আগমনপূর্বক বলল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত বিধায় ভূলুণ্ঠিত হওয়ার সময় উলঙ্গ হয়ে যাই। সুতরাং আমার এই রোগ মুক্তির জন্য দু‘আ করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তুমি চাও ধৈর্যধারণ কর বিনিময়ে জান্নাত পাবে। আর যদি চাও, আমি তোমার জন্য এ থেকে মুক্তির জন্য দু‘আ করি। মহিলাটি বলল, তাহলে আমি ধৈর্যধারণ করব। মহিলাটি পুনরায় বলল, আপনি আমার জন্য এ মর্মে দু‘আ করুন যেন আমি উলঙ্গ না হই। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু‘আ করলেন’।[১৪]
আনাস বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, কোন মুসলিম ব্যক্তিকে আল্লাহ তার জন্য (তার আমলনামায়) ঐসব আমল লিপিবদ্ধ করেন, যা সে তার সুস্থতায় করত। আল্লাহ তাকে রোগ মুক্তি দিলে তাকে গুনাহ থেকে ধৌত করে ছাড়েন। অপর বর্ণনায় রয়েছে, যদি তাকে মৃত্যু দেন তাহলে তাকে (গুনাহ থেকে) ধৌত করে ফেলেন’।[১৫]
‘মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির শরীরে কোন কষ্টদায়ক বস্তু স্পর্শ করলে আল্লাহ তদ্বারা তার গুনাহ মাফ করে থাকেন’।[১৬]
সন্তানের মৃত্যুতে যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের মর্যাদা
নিজ সন্তানের ইন্তেকালে যে ব্যক্তি প্রথমেই ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তার জন্য একটি বিশেষ ঘর নির্মাণ করেন, যার নাম ‘বায়তুল হাম্দ’ বা ‘প্রশংসার ঘর’। হাদীসে এসেছে, আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ নিয়েছ? তারা বলে, হ্যাঁ। তিনি আবার বলেন, তোমরা কি তার অন্তরের ধনকে কেড়ে নিয়েছ? তারা বলে, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বলেন, আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর এবং তার নাম দাও ‘বায়তুল হামদ’।[১৭] নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, وَالَّذِى نَفْسِىْ بِيَدِهِ إِنَّ السِّقْطَ لَيَجُرُّ أُمَّهُ بِسَرَرِهِ إِلَى الْجَنَّةِ إِذَا احْتَسَبَتْهُ ‘ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! নিশ্চয়ই অকাল গর্ভপাত হওয়া সন্তান তার মাকে নাড়ী দ্বারা পেঁচিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবে, যদি তার মা ধৈর্যসহ ছওয়াবের আশা করে থাকে’।[১৮]
চক্ষু হারিয়ে যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের মর্যাদা
যারা চক্ষু হারিয়ে ধৈর্যধারণ করে তারা জান্নাতে যাবে। হাদীসে এসেছে, ‘ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আমি আমার বান্দা থেকে তার সম্মানিত বস্তু তথা চক্ষু কেড়ে নিলে যদি সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, তাহলে আমি তাকে জান্নাত দেয়া ছাড়া অন্য কিছু প্রদানে সন্তুষ্ট নই’।[১৯]
অসুস্থ অবস্থায় যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের মর্যাদা
শাদ্দাদ ইবনু আওস ও ছুুনাবিহী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ সকাল কেমন হয়েছে? সে বলল, আল্লাহর দয়ায় ভাল হয়েছে। এটা শুনে শাদ্দাদ বললেন, তোমার গুনাহ মাফ এবং অপরাধ মার্জনার সুসংবাদ গ্রহণ কর। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আমি যখন আমার বান্দাদের মধ্যে কোন মুমিন বান্দাকে রোগগ্রস্ত করি আর আমার এ রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও সে আমার শুকরিয়া আদায় করে, তখন সে তার রোগ শয্যা হতে এমন নিষ্পাপ ও পবিত্র হয়ে উঠে যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ ও পবিত্রাবস্থায় জন্ম দিয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলতে থাকেন, আমার বান্দাকে বন্ধ করে রেখেছি এবং রোগগ্রস্ত করে রেখেছি। অতএব (হে ফেরেশতাগণ!) তোমরা তার সুস্থাবস্থায় যে নেকী লিখেছিলে এই অবস্থায় তাই লিখতে থাক’।[২০]
কোনদিন যার অসুখ হয় না সে জাহান্নামী
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন গ্রাম্য ব্যক্তি আগমন করলে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
‘তোমার কি ‘উম্মু মিলদাম’ (জ্বরের নাম) হয়? সে বলল, ‘উম্মু মিলদাম’ আবার কি? তিনি বললেন, ইহা চর্ম ও মাংসের মধ্যকার তাপমাত্রা। সে বলল, না। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন, তোমার কি মাথা ব্যথা হয়? লোকটি বলল, মাথা ব্যথা আবার কি? তিনি বলেন, উহা এক প্রকার বাতাস, যা মাথায় প্রবেশ করে এবং শিরা-উপশিরায় আঘাত হানে। সে বলল, এটা আমার হয় না। এরপর লোকটি উঠে দাঁড়াল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি জাহান্নামীকে দেখে আনন্দ পেতে চায় সে যেন এই লোকটিকে দেখে নেয়’।[২১]
বিপদগ্রস্ত হয়ে ধৈর্যধারণ করাই প্রকৃত ধৈর্য
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের পার্শ্বে কাঁদছিল এমন মহিলার নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধর! তখন মহিলা বলল, আমার নিকট হতে চলে যান, কেননা আমার এ বিপদ আপনার উপর আপতিত হয়নি। সে তাঁকে চিনতে পারেনি। অতঃপর তাকে বলা হল, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরজায় আসল এবং তিনি তার নিকট কোন পাহারাদার পেলেন না। অতঃপর সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, প্রকৃত ধৈর্য হল বিপদের প্রথম সময়।[২২]
আবূ উমামা বাহেলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যদি তুমি বিপদের প্রথম সময় ধৈর্যধারণ কর এবং ছওয়াবের প্রত্যাশা কর, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন ছওয়াবে সন্তুষ্ট হব না’।[২৩]
উল্লেখ্য যে, বিপদাপদে ধৈর্যধারণের অর্থ এই নয় যে, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে না; বরং আল্লাহর কাছে মুিক্ত কামনা করা সুন্নাত। যেমন আইয়ূব (আলাইহিস সালাম) অসুখে পড়ে এই দু‘আ করেছিলেন,
‘(হে আমার প্রতিপালক!) আমাকে ক্ষতি স্পর্শ করেছে, আর আপনি হলেন সবচেয়ে মহান দয়ালু’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৩)। আইয়ূব (আলাইহিস সালাম) তবুও ধৈর্যের গ-ি থেকে বের হননি। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
‘আমরা তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছিলাম। কত উত্তম বান্দাই না তিনি। নিশ্চয়ই তিনি (আমার দিকে) অধিক প্রত্যাবর্তনকারী’ (সূরা ছোয়াদ : ৪৪)।
অনুরূপভাবে ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-কে মাছে গিলে ফেললে আল্লাহর সমীপে এই বলে নিবেদন করেন,
‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই। নিশ্চয় আমি যেন যালিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৭)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যদি কেউ এই দু‘আটি দ্বারা আল্লাহর নিকট নিবেদন করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিবেন’।[২৪] নিমোক্ত দু‘আটিও বলা যেতে পারে,
‘নিশ্চয়ই আমরা সকলে আল্লাহর জন্য এবং সকলে তার নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমার মুছীবতের বদলা দান করুন এবং এর চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন’।[২৫]
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন। আনাস বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন বিষয় চিন্তিত করলে তিনি এই দু‘আটি বলতেন,
‘হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি’।[২৬]
এছাড়া তিনি নিমোক্ত দু‘আটিও পড়তেন,
‘মহা ধৈর্যশীল আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, যিনি মহান আরশের রব্ব, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, যিনি আসমান সমূহ ও যমীনের রব্ব এবং মহান আরশের রব্ব।[২৭]
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপদে আক্রান্ত হওয়া থেকেও আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাইতেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বালা-মুছীবত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য নিম্নোক্ত দু‘আটি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করতেন,
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে নিরাপত্তা কামনা করছি আমার দ্বীনে, দুনিয়ায়, আমার পরিবারে এবং সম্পদে। হে আল্লাহ! আপনি আমার সম্ভ্রমের হেফাযত করুন, আমার ভয়-ভীতি দূর করুন। আমাকে হেফাযত করুন আমার সম্মুখ, পশ্চাদ, ডানদিক, বামদিক, উপর দিক, নীচ দিক থেকে। আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিম্নদিক ধ্বংস নামা হতে’।[২৮]
আবূ হুরায়রাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বিপদে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে, তাকে উক্ত বালা মুছীবত স্পর্শ করবে না,
‘সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি তোমাকে যাতে পতিত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং আমাকে তাঁর সৃষ্টির অনেক জিনিস অপেক্ষা অধিক মর্যাদা দান করেছেন’।[২৯]
এছাড়া অসুখে-বিসুখে আক্রান্ত হলে বৈধ ঝাড়-ফুঁক করতে পারে। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে তার উপর ফুঁক দিতেন’।[৩০]
অসুখ-বিসুখে ঔষধ ব্যবহার করা
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রোগ নাযিল করেননি, যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি।[৩১]
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ রয়েছে। সুতরাং রোগের জন্য যখন সঠিক ঔষধ ব্যবহৃত হয়, তখন আল্লাহর হুকুমে রোগী রোগমুক্ত হয়ে যায়।[৩২]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা রোগ এবং রোগের ঔষধ উভয়টিই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তোমরা ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা কর’।[৩৩] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন কোন অসুখ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। যে জেনেছে সে জেনেছে, যে জানেনি সে জানেনি’।[৩৪]
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিপদে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
তথ্যসূত্র :
[১]. আবূ দাঊদ, হা/১৩১৯; সনদ হাসান; সহীহুল জামে‘, হা/৪৭০৩।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭১; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৮০; তিরমিযী, হা/৯৭১; নাসাঈ, হা/১৮২০।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৩; নাসাঈ, হা/১৮১৮; দারেমী, হা/২৭৫৮।
[৪]. আবূ দাঊদ, হা/৩০৯০; সহীহ তারগীব ওয়া তারহীব, হা/৩৪০৯।
[৫]. তিরমিযী, হা/২৪০২; সনদ হাসান, সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২০৬; সহীহুল জামে‘, হা/৫৪৮৪।
[৬]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪০, ৫৬৪১; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭২।
[৭]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৩৪; মিশকাত, হা/১৫৩৬।
[৮]. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৮; আবূ আব্দুল্লাহ মাক্বদেসী, ত্বিব; সনদ হাসান, দ্রঃ ফাতওয়া ছিদ্দীক্ব হাসান খান, (রিয়াদ : দারুদ্দাঈ) পৃ. ২৭৩।
[৯]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৪, ৫৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭১; মিশকাত, হা/১৫৩৮।
[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৮২৫; মুসতাদরাক হাকিম, হা/১২৮৭; দারেমী, হা/২৭৭০; সনদ সহীহ, সহীহুল জামে‘, হা/৫৭৬১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২৩২।
[১১]. তিরমিযী, হা/২৩৯৮; ইবনু মাজাহ, হা/৪০২৩; সনদ সহীহ।
[১২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৭২; তিরমিযী, হা/২৩৯৬; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৩১; সনদ সহীহ; মিশকাত, হা/১৫৬৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৬; সহীহুল জামে‘, হা/১৭০৬।
[১৩]. সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৫; মিশকাত, হা/১৫৪৩।
[১৪]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৫২; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/৫০৫; মিশকাত, হা/১৫৭৭।
[১৫]. আদাবুল মুফরাদ, হা/৫০১।
[১৬]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/১২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৭৪।
[১৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৪০; তিরমিযী, হা/১০২১; সনদ হাসান; মিশকাত, হা/১৭৩৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪০৮।
[১৮]. ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৯; সনদ সহীহ।
[১৯]. ত্বাবারানী; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৫০৩৭; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৩১; সনদ হাসান; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০১০।
[২০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪২৩।
[২১]. আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৭৬; মুসতাদরাক হাকিম, হা/১২৮৩।
[২২]. সহীহ বুখারী, হা/১২৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৬; মিশকাত, হা/১৭২৮।
[২৩]. ইবনু মাজাহ, হা/১৫৯৭, ‘জানাযা’ অধ্যায়; মিশকাত, হা/১৭৫৮।
[২৪]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/১৮৬২; তিরমিযী, হা/৩৫০৫।
[২৫]. সহীহ মুসলিম, হা/৯১৮, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২।
[২৬]. তিরমিযী, হা/৩৫২৪; সনদ হাসান, সহীহুল জামে‘, হা/৪৭৭৭।
[২৭]. সহীহ বুখারী, হা/৬৩৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৩০।
[২৮]. আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০০; আবূ দাউদ, হা/৫০৭৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৭১।
[২৯]. তিরমিযী, হা/৩৪৩১,৩৪৩২; সনদ হাসান।
[৩০]. সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৬; সহীহুল জামে‘, হা/৪৭৮৩।
[৩১]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৮।
[৩২]. সহীহ মুসলিম, হা/২২০৪; মিশকাত, হা/৪৫১৫।
[৩৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬১৮; সনদ হাসান; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৩৩।
[৩৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৪২৩৬; সনদ সহীহ; সহীহুল জামে‘, হা/১৮১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫১৮।
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৩)।
হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন বিষয় চিন্তিত করলে তিনি তৎক্ষণাত সালাতের দিকে ধাবিত হতেন।[১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ - الَّذِيْنَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيْبَةٌ قَالُوْا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ - أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْنَ
‘নিশ্চয় কিছু ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসলকে বিনষ্ট করার মধ্য দিয়ে আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করব। আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দান করুন। যারা বিপদে পতিত হয়ে বলে যে, আমরা সকলে আল্লাহর অধীন এবং আমরা সকলে তার নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই সে সমস্ত লোক যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৫-১৫৭)। আল্লাহ তা‘আলা লোক্বমান (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কথা উদ্ধৃত করে বলেন,
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
‘হে বৎস! তুমি সালাত প্রতিষ্ঠা কর, সৎ কাজের আদেশ দাও এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ’ (সূরা লোক্বমান : ১৭)। তিনি আরো বলেন,
لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِيْنَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِيْنَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيْرًا وَإِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا فَإِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
‘তোমাদেরকে তোমাদের সম্পদ ও জীবন সম্পর্কে পরীক্ষা করা হবে। আর অবশ্যই তোমরা পূর্ববর্তী গ্রন্থধারী জনতা এবং মুশরিকদের পক্ষ থেকে পীড়াদায়ক কটুক্তি শ্রবণ করবে। সুতরাং তোমরা যদি ধৈর্যধারণ কর এবং তাক্বয়াশীল হও, তবে নিশ্চয় তা দৃঢ় সংকল্পের কাজ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৮৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِيْنَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِيْنَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ
‘আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করব, শেষ পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে কে জিহাদকারী এবং কে ধৈর্যশীল তাও আমরা জেনে নিব এবং আমরা তোমাদের সকলের তথ্য উদঘাটন করব’ (সূরা মুহাম্মাদ : ৩১)। তিনি আরো বলেন,
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
‘(বিপদাপদে) ধৈর্যধারণকারীদেরকে বেশুমার প্রতিদান দেয়া হবে’ (সূরা আয-যুমার : ১০)।
অনেকে সামান্য মুছীবতে পতিত হলে মৃত্যু কামনা করে বসে, যা আদৌ উচিত নয়। অবশ্য অবস্থা একেবারে বেগতিক হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই চাইতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ مُتَمَنِّيًا فَلْيَقُلِ اَللّٰهُمَّ أَحْيِنِىْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِىْ وَتَوَفَّنِىْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِىْ
‘তোমাদের কেউ যেন বিপদে পতিত হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। যদি তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হবে এবং আমাকে মৃত্যু দান করুন যখন মৃত্যুই আমার জন্য উত্তম হবে’।[২]
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, সহজে মৃত্যু কামনা করা ঠিক নয়; বরং ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর ফায়ছালায় রাযী থাকা উচিত। নিম্নে ধৈর্যধারণ করার ফযীলত সংক্রান্ত কতিপয় হাদীস পেশ করা হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ فَإِنْ كَانِ مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَزِيْدَ فيْ حَسَنَاتِهِ وَإِنْ كَانَ مُسِيْئًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَّسْتَعْتِبَ
‘(মুছীবতে পতিত হওয়ার কারণে) তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ যদি সে নেককার হয় তবে হয়তো সে আরো বেশী নেক আমল করবে। আর যদি খারাপ প্রকৃতির হয় তবে হয়তো সে তওবা করার সুযোগ পাবে’।[৩]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللهِ مَنْزِلَةٌ لَا يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابْتَلَاهُ اللهُ فِىْ جَسَدِهِ أَوْ فِىْ وَلَدِهِ ثُمَّ صَبَرَهُ عَلَى ذَلِكَ حَتَّى يَبْلُغَهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِى سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللهِ تَعَالَى
‘যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এমন মর্যাদা নির্ধারণ করা থাকে, যা সে আমল দ্বারা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তখন আল্লাহ তাকে তার শরীর, সন্তান-সন্ততি প্রভৃতিতে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন এবং তাকে ঐ বিপদের উপর ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দেন। ফলে সে আল্লাহর নির্ধারণকৃত ঐ স্থান ও মর্যাদায় পৌঁছে যায়’।[৪] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَيُوِدَّنَّ أَهْلُ الْعَافِيَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَّ جُلُوْدَهُمْ قُرِضَتْ بِالْمَقَارِيْضِ مِمَّا يَرَوْنَ مِنْ ثَوَابِ أَهْلِ الْبَلَاءِ
‘সুস্থ ব্যক্তিরা ক্বিয়ামত দিবসে যখন বিপদে পতিত ব্যক্তিদের বিনিময় দেখতে পাবে, তখন তারা আফসোস করে বলবে, হায়! যদি আমাদের চামড়াগুলো কেঁচি দিয়ে কাটা হত’।[৫]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَا مِنْ مُصِيْبَةٍ تُصِيْبُ الْمُسْلِمَ إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا عَنْهُ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا
‘কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন প্রকার মুছীবত দ্বারা আক্রান্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তার গুনাহ বিদূরিত করেন। এমনকি যদি তার দেহে সামান্য কাঁটাও বিধে তবুও’।[৬] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ
‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে তিনি বালা-মুছীবত দ্বারা পরীক্ষা করেন’।[৭]
উবাই বিন কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন শুনতে পেলেন শরীর বালা-মুছীবতে আক্রান্ত হওয়া পাপের কাফফারা স্বরূপ, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি ঐ মুছীবত কম হয় তবুও কি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তা কাঁটা কিংবা তদপেক্ষা বড় কোন বস্তু হয় তবুও। এতদশ্রবণে উবাহ বিন কা‘ব দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এটাই কামনা করি যে, জ্বর যেন সর্বদা উবাইকে কাবু করে রাখে। অবশ্য তা যেন হজ্জ, ওমরাহ, সালাত, জানাযা ও জিহাদে উপস্থিত হতে বাধা না দেয়। রাবী বলেন, (এরপর থেকে) উবাই (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে কেউ স্পর্শ করলে আগুনের মত তাপ তার শরীরে অনুভব করত।[৮]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيْبُهُ أَذًى شَوْكَةٌ فَمَا فَوْقَهَا إِلَّا حَطَّ اللهُ لَهُ بِهِ كَمَا تُحَطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا
‘কোন মুসলিম ব্যক্তি কাঁটা বা তদপেক্ষা বড় কিছু দ্বারা আক্রান্ত হলে আল্লাহ তদ্বারা তার গুনাহ দূর করেন। যেমন বৃক্ষ হতে পাতাগুলো ঝরে পড়ে যায়’।[৯] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصَابُ في جَسَدَهِ إِلَّا أَمَرَ اللهُ تَعَالَى الحَفَظَةَ اكْتُبُوْا لِعَبْدِيْ فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ مَا كانَ يَعْمَلُ مَادَامَ مَحْبُوْسًا
‘কোন মুমিন বান্দা শারীরিক মুছীবতে আক্রান্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা হেফাযতকারী ফেরেশতারদেকে বলেন, তোমরা আমার বান্দা যেসব কল্যাণের কাজ করত তা তার জন্য (তার আমলনামায়) লিখতে থাক, যতক্ষণ সে উক্ত মুছীবতে আক্রান্ত থাকে’।[১০]
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! বিপদ দ্বারা সর্বাপেক্ষা অধিক পরীক্ষা করা হয় কাদের কে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
اَلْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الْاَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ يُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِيْنِهِ فَإِنْ كَانَ صُلْبًا فِىْ دِيْنِهِ اِشْتَدَّ بَلَاؤُهُ وَإِنْ كَانَ فِىْ دِيْنِهِ رِقَّةٌ هُوِّنَ عَلَيْهِ فَمَا زَالَ كَذَلِكَ حَتَّى يَمْشِيَ عَلَى الْأَرْضِ مَا لَهُ ذَنْبٌ
‘নবীদের, অতঃপর তাঁদের তুলনায় যারা উত্তম তাদের। মানুষ তার দ্বীনদারীর অনুপাতে বিপদগ্রস্ত হয়। যদি সে তার দ্বীনের ব্যাপারে শক্ত হয়, তার বিপদও কঠিন হয়। যদি তার দ্বীনের ব্যাপারে শিথিলতা থাকে, তার বিপদও সহজ হয়। তার এরূপ বিপদ হতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সে পৃথিবীতে চলাফেরা করে, অথচ তার কোন গুনাহ থাকে না।[১১]
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا اِبْتَلَاهُمْ فَمَنْ صَبَرَ فَلَهُ الصَّبْرُ وَمَنْ جَزَعَ فَلَهُ الْجَزْعُ
‘আল্লাহ কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদে পতিত করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করবে তার জন্য তাই হবে। আর যে অধৈর্য হবে তার জন্য ঐ অধৈর্য থাকবে’।[১২] অন্য হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أُمِّ السَّائِبِ فَقَالَ مَا لَكِ تُزَفْزِفِيْنَ؟ قَالَتِ الْحُمَّى لَا بَارَكَ اللهُ فِيْهَا فَقَالَ لَا تَسُبِّي الْحُمَّى فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِيْ آدَمَ كَمَا يُذْهِبُ الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মে সায়েবের নিকট গেলেন এবং বললেন, তোমার কী হয়েছে, কাঁদছ কেন? সে বলল, জ্বর, আল্লাহ জ্বরের মঙ্গল না করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর আদম সন্তানের গুনাহসমূহ দূর করে, যেভাবে কর্মকারের হাপর লোহার মরিচা দূর করে।[১৩]
আত্বা বিন আবি রিবাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে বললেন, তোমাকে কি আমি একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বললেন, সে হল এই কালো মহিলা। যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আগমনপূর্বক বলল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত বিধায় ভূলুণ্ঠিত হওয়ার সময় উলঙ্গ হয়ে যাই। সুতরাং আমার এই রোগ মুক্তির জন্য দু‘আ করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তুমি চাও ধৈর্যধারণ কর বিনিময়ে জান্নাত পাবে। আর যদি চাও, আমি তোমার জন্য এ থেকে মুক্তির জন্য দু‘আ করি। মহিলাটি বলল, তাহলে আমি ধৈর্যধারণ করব। মহিলাটি পুনরায় বলল, আপনি আমার জন্য এ মর্মে দু‘আ করুন যেন আমি উলঙ্গ না হই। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু‘আ করলেন’।[১৪]
আনাস বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, কোন মুসলিম ব্যক্তিকে আল্লাহ তার জন্য (তার আমলনামায়) ঐসব আমল লিপিবদ্ধ করেন, যা সে তার সুস্থতায় করত। আল্লাহ তাকে রোগ মুক্তি দিলে তাকে গুনাহ থেকে ধৌত করে ছাড়েন। অপর বর্ণনায় রয়েছে, যদি তাকে মৃত্যু দেন তাহলে তাকে (গুনাহ থেকে) ধৌত করে ফেলেন’।[১৫]
عَنْ مُعَاوِيَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَا مِنْ شَيْءٍ يُصِيْبُ الْمُؤْمِنَ فِيْ جَسَدِهِ يُؤْذِيْهِ إِلَّا كَفَّرَ بِهِ عَنْهُ مِنْ سَيِّئَاتِهِ
‘মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির শরীরে কোন কষ্টদায়ক বস্তু স্পর্শ করলে আল্লাহ তদ্বারা তার গুনাহ মাফ করে থাকেন’।[১৬]
সন্তানের মৃত্যুতে যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের মর্যাদা
নিজ সন্তানের ইন্তেকালে যে ব্যক্তি প্রথমেই ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তার জন্য একটি বিশেষ ঘর নির্মাণ করেন, যার নাম ‘বায়তুল হাম্দ’ বা ‘প্রশংসার ঘর’। হাদীসে এসেছে, আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ تَعَالَى لِمَلَائِكَتِهِ قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِيْ؟ فَيَقُوْلُونَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ؟ فَيَقُوْلُونَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ مَاذَا قَالَ عَبْدِيْ؟ فَيَقُوْلُوْنَ حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ فَيَقُوْلُ اللهُ ابْنُوْا لِعَبْدِيْ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ وَسَمُّوْهُ بَيْتَ الْحَمْدِ
‘যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ নিয়েছ? তারা বলে, হ্যাঁ। তিনি আবার বলেন, তোমরা কি তার অন্তরের ধনকে কেড়ে নিয়েছ? তারা বলে, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বলেন, আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলেছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর এবং তার নাম দাও ‘বায়তুল হামদ’।[১৭] নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, وَالَّذِى نَفْسِىْ بِيَدِهِ إِنَّ السِّقْطَ لَيَجُرُّ أُمَّهُ بِسَرَرِهِ إِلَى الْجَنَّةِ إِذَا احْتَسَبَتْهُ ‘ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! নিশ্চয়ই অকাল গর্ভপাত হওয়া সন্তান তার মাকে নাড়ী দ্বারা পেঁচিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবে, যদি তার মা ধৈর্যসহ ছওয়াবের আশা করে থাকে’।[১৮]
চক্ষু হারিয়ে যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের মর্যাদা
যারা চক্ষু হারিয়ে ধৈর্যধারণ করে তারা জান্নাতে যাবে। হাদীসে এসেছে, ‘ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِذَا قَبَضْتُ مِنْ عَبْدِيْ كَرِيْمَتَيْهِ وَهُوَ بِهِمَا ضَنِيْنٌ لَمْ أَرْضَ لَهُ ثَوَابًا دُوْنَ الْجَنَّةِ
‘আমি আমার বান্দা থেকে তার সম্মানিত বস্তু তথা চক্ষু কেড়ে নিলে যদি সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, তাহলে আমি তাকে জান্নাত দেয়া ছাড়া অন্য কিছু প্রদানে সন্তুষ্ট নই’।[১৯]
অসুস্থ অবস্থায় যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের মর্যাদা
শাদ্দাদ ইবনু আওস ও ছুুনাবিহী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ সকাল কেমন হয়েছে? সে বলল, আল্লাহর দয়ায় ভাল হয়েছে। এটা শুনে শাদ্দাদ বললেন, তোমার গুনাহ মাফ এবং অপরাধ মার্জনার সুসংবাদ গ্রহণ কর। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِذَا أَنَا ابْتَلَيْتُ عَبْدًا مِّنْ عِبَادِيْ مُؤْمِنًا فَحَمِدَنِيْ عَلَى مَا ابْتَلَيْتُهُ فَإِنَّهُ يَقُوْمُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ مِنَ الْخَطَايَا وَيَقُوْلُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَا قَيَّدْتُّ عَبْدِيْ وَابْتَلَيْتُهُ فَأَجْرُوْا لَهُ مَا كُنْتُمْ تُجْرُوْنَ لَهُ وَهُوَ صَحِيْحٌ.
‘আমি যখন আমার বান্দাদের মধ্যে কোন মুমিন বান্দাকে রোগগ্রস্ত করি আর আমার এ রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও সে আমার শুকরিয়া আদায় করে, তখন সে তার রোগ শয্যা হতে এমন নিষ্পাপ ও পবিত্র হয়ে উঠে যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ ও পবিত্রাবস্থায় জন্ম দিয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলতে থাকেন, আমার বান্দাকে বন্ধ করে রেখেছি এবং রোগগ্রস্ত করে রেখেছি। অতএব (হে ফেরেশতাগণ!) তোমরা তার সুস্থাবস্থায় যে নেকী লিখেছিলে এই অবস্থায় তাই লিখতে থাক’।[২০]
কোনদিন যার অসুখ হয় না সে জাহান্নামী
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন গ্রাম্য ব্যক্তি আগমন করলে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
هَلْ أَخَذَتْكَ أُمُّ مِلْدَمٍ ؟ قَالَ وَمَا أُمُّ مِلْدَمٍ ؟ قَالَ حَرٌّ بَيْنَ الْجِلْدِ وَاللَّحْمِ قَالَ لاَ قَالَ فَهَلْ صُدِعْتَ ؟ قَالَ وَمَا الصُّدَاعُ ؟ قَالَ رِيحٌ تَعْتَرِضُ فِي الرَّأْسِ تَضْرِبُ الْعُرُوقَ قَالَ لاَ قَالَ فَلَمَّا قَامَ قَالَ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ أَيْ فَلْيَنْظُرْهُ
‘তোমার কি ‘উম্মু মিলদাম’ (জ্বরের নাম) হয়? সে বলল, ‘উম্মু মিলদাম’ আবার কি? তিনি বললেন, ইহা চর্ম ও মাংসের মধ্যকার তাপমাত্রা। সে বলল, না। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন, তোমার কি মাথা ব্যথা হয়? লোকটি বলল, মাথা ব্যথা আবার কি? তিনি বলেন, উহা এক প্রকার বাতাস, যা মাথায় প্রবেশ করে এবং শিরা-উপশিরায় আঘাত হানে। সে বলল, এটা আমার হয় না। এরপর লোকটি উঠে দাঁড়াল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি জাহান্নামীকে দেখে আনন্দ পেতে চায় সে যেন এই লোকটিকে দেখে নেয়’।[২১]
বিপদগ্রস্ত হয়ে ধৈর্যধারণ করাই প্রকৃত ধৈর্য
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ تَبْكِيْ عِنْدَ قَبْرٍ فَقَالَ اتَّقِي اللهَ وَاصْبِرِيْ قَالَتْ إِلَيْكَ عَنِّي فَإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيْبَتِيْ وَلَمْ تَعْرِفْهُ فَقِيْلَ لَهَا إِنَّهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَتْ بَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابِيْنَ فَقَالَتْ لَمْ أَعْرِفْكَ فَقَالَ إِنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُوْلٰى
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের পার্শ্বে কাঁদছিল এমন মহিলার নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধর! তখন মহিলা বলল, আমার নিকট হতে চলে যান, কেননা আমার এ বিপদ আপনার উপর আপতিত হয়নি। সে তাঁকে চিনতে পারেনি। অতঃপর তাকে বলা হল, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরজায় আসল এবং তিনি তার নিকট কোন পাহারাদার পেলেন না। অতঃপর সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, প্রকৃত ধৈর্য হল বিপদের প্রথম সময়।[২২]
عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَقُوْلُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ابْنَ آدَمَ! اِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسِبْتَ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُوْلَى لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُوْنَ الْجَنَّةِ
আবূ উমামা বাহেলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যদি তুমি বিপদের প্রথম সময় ধৈর্যধারণ কর এবং ছওয়াবের প্রত্যাশা কর, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন ছওয়াবে সন্তুষ্ট হব না’।[২৩]
উল্লেখ্য যে, বিপদাপদে ধৈর্যধারণের অর্থ এই নয় যে, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে না; বরং আল্লাহর কাছে মুিক্ত কামনা করা সুন্নাত। যেমন আইয়ূব (আলাইহিস সালাম) অসুখে পড়ে এই দু‘আ করেছিলেন,
اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ
‘(হে আমার প্রতিপালক!) আমাকে ক্ষতি স্পর্শ করেছে, আর আপনি হলেন সবচেয়ে মহান দয়ালু’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৩)। আইয়ূব (আলাইহিস সালাম) তবুও ধৈর্যের গ-ি থেকে বের হননি। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
اِنَّا وَجَدۡنٰہُ صَابِرًا نِعۡمَ الۡعَبۡدُ اِنَّہٗۤ اَوَّابٌ
‘আমরা তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছিলাম। কত উত্তম বান্দাই না তিনি। নিশ্চয়ই তিনি (আমার দিকে) অধিক প্রত্যাবর্তনকারী’ (সূরা ছোয়াদ : ৪৪)।
অনুরূপভাবে ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-কে মাছে গিলে ফেললে আল্লাহর সমীপে এই বলে নিবেদন করেন,
لاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই। নিশ্চয় আমি যেন যালিমদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৭)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যদি কেউ এই দু‘আটি দ্বারা আল্লাহর নিকট নিবেদন করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিবেন’।[২৪] নিমোক্ত দু‘আটিও বলা যেতে পারে,
إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ اَللَّهُمَّ أَجِرْنِيْ فِىْ مُصِيْبَتِيْ وَاخْلُفْ لِيْ خَيْرًا مِّنْهَا
‘নিশ্চয়ই আমরা সকলে আল্লাহর জন্য এবং সকলে তার নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমার মুছীবতের বদলা দান করুন এবং এর চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন’।[২৫]
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন। আনাস বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন বিষয় চিন্তিত করলে তিনি এই দু‘আটি বলতেন,
يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ
‘হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি’।[২৬]
এছাড়া তিনি নিমোক্ত দু‘আটিও পড়তেন,
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ الْعَظِيْمُ الْحَلِيْمُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ
‘মহা ধৈর্যশীল আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, যিনি মহান আরশের রব্ব, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, যিনি আসমান সমূহ ও যমীনের রব্ব এবং মহান আরশের রব্ব।[২৭]
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপদে আক্রান্ত হওয়া থেকেও আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাইতেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বালা-মুছীবত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য নিম্নোক্ত দু‘আটি সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করতেন,
اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِىْ وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِىْ وَمَالِىْ اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِىْ وَآمِنْ رَوْعَاتِىْ اللَّهُمَّ احْفَظْنِىْ مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِىْ وَعَنْ يَمِيْنِىْ وَعَنْ شِمَالِىْ وَمِنْ فَوْقِىْ وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِى
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে নিরাপত্তা কামনা করছি আমার দ্বীনে, দুনিয়ায়, আমার পরিবারে এবং সম্পদে। হে আল্লাহ! আপনি আমার সম্ভ্রমের হেফাযত করুন, আমার ভয়-ভীতি দূর করুন। আমাকে হেফাযত করুন আমার সম্মুখ, পশ্চাদ, ডানদিক, বামদিক, উপর দিক, নীচ দিক থেকে। আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিম্নদিক ধ্বংস নামা হতে’।[২৮]
আবূ হুরায়রাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বিপদে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে, তাকে উক্ত বালা মুছীবত স্পর্শ করবে না,
الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ وَفَضَّلَنِيْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا
‘সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি তোমাকে যাতে পতিত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং আমাকে তাঁর সৃষ্টির অনেক জিনিস অপেক্ষা অধিক মর্যাদা দান করেছেন’।[২৯]
এছাড়া অসুখে-বিসুখে আক্রান্ত হলে বৈধ ঝাড়-ফুঁক করতে পারে। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে তার উপর ফুঁক দিতেন’।[৩০]
অসুখ-বিসুখে ঔষধ ব্যবহার করা
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَنْزَلَ اللهُ دَاءً إِلَّا أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রোগ নাযিল করেননি, যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি।[৩১]
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيْبَ دَوَاءٌ الدَّاءَ بَرَأَ بِإِذْنِ اللهِ
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ রয়েছে। সুতরাং রোগের জন্য যখন সঠিক ঔষধ ব্যবহৃত হয়, তখন আল্লাহর হুকুমে রোগী রোগমুক্ত হয়ে যায়।[৩২]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَيْثُ خَلَقَ الدَّاءَ خَلَقَ الدَّوَاءَ فَتَدَاوَوْا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা রোগ এবং রোগের ঔষধ উভয়টিই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তোমরা ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা কর’।[৩৩] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يُنْزِلْ دَاءً إِلَّا أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً عَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ وَجَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন কোন অসুখ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। যে জেনেছে সে জেনেছে, যে জানেনি সে জানেনি’।[৩৪]
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিপদে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
তথ্যসূত্র :
[১]. আবূ দাঊদ, হা/১৩১৯; সনদ হাসান; সহীহুল জামে‘, হা/৪৭০৩।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭১; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৮০; তিরমিযী, হা/৯৭১; নাসাঈ, হা/১৮২০।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৩; নাসাঈ, হা/১৮১৮; দারেমী, হা/২৭৫৮।
[৪]. আবূ দাঊদ, হা/৩০৯০; সহীহ তারগীব ওয়া তারহীব, হা/৩৪০৯।
[৫]. তিরমিযী, হা/২৪০২; সনদ হাসান, সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২০৬; সহীহুল জামে‘, হা/৫৪৮৪।
[৬]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪০, ৫৬৪১; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭২।
[৭]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭২৩৪; মিশকাত, হা/১৫৩৬।
[৮]. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৮; আবূ আব্দুল্লাহ মাক্বদেসী, ত্বিব; সনদ হাসান, দ্রঃ ফাতওয়া ছিদ্দীক্ব হাসান খান, (রিয়াদ : দারুদ্দাঈ) পৃ. ২৭৩।
[৯]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৪, ৫৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭১; মিশকাত, হা/১৫৩৮।
[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৮২৫; মুসতাদরাক হাকিম, হা/১২৮৭; দারেমী, হা/২৭৭০; সনদ সহীহ, সহীহুল জামে‘, হা/৫৭৬১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২৩২।
[১১]. তিরমিযী, হা/২৩৯৮; ইবনু মাজাহ, হা/৪০২৩; সনদ সহীহ।
[১২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৭২; তিরমিযী, হা/২৩৯৬; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৩১; সনদ সহীহ; মিশকাত, হা/১৫৬৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৬; সহীহুল জামে‘, হা/১৭০৬।
[১৩]. সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৫; মিশকাত, হা/১৫৪৩।
[১৪]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৫২; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/৫০৫; মিশকাত, হা/১৫৭৭।
[১৫]. আদাবুল মুফরাদ, হা/৫০১।
[১৬]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/১২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৭৪।
[১৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৪০; তিরমিযী, হা/১০২১; সনদ হাসান; মিশকাত, হা/১৭৩৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪০৮।
[১৮]. ইবনু মাজাহ, হা/১৬০৯; সনদ সহীহ।
[১৯]. ত্বাবারানী; মু‘জামুল কাবীর, হা/১৫০৩৭; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৩১; সনদ হাসান; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২০১০।
[২০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৫৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪২৩।
[২১]. আদাবুল মুফরাদ, হা/৪৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৩৭৬; মুসতাদরাক হাকিম, হা/১২৮৩।
[২২]. সহীহ বুখারী, হা/১২৮৩; সহীহ মুসলিম, হা/৯২৬; মিশকাত, হা/১৭২৮।
[২৩]. ইবনু মাজাহ, হা/১৫৯৭, ‘জানাযা’ অধ্যায়; মিশকাত, হা/১৭৫৮।
[২৪]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/১৮৬২; তিরমিযী, হা/৩৫০৫।
[২৫]. সহীহ মুসলিম, হা/৯১৮, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২।
[২৬]. তিরমিযী, হা/৩৫২৪; সনদ হাসান, সহীহুল জামে‘, হা/৪৭৭৭।
[২৭]. সহীহ বুখারী, হা/৬৩৪৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৩০।
[২৮]. আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০০; আবূ দাউদ, হা/৫০৭৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৭১।
[২৯]. তিরমিযী, হা/৩৪৩১,৩৪৩২; সনদ হাসান।
[৩০]. সহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৬; সহীহুল জামে‘, হা/৪৭৮৩।
[৩১]. সহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৮।
[৩২]. সহীহ মুসলিম, হা/২২০৪; মিশকাত, হা/৪৫১৫।
[৩৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬১৮; সনদ হাসান; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬৩৩।
[৩৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৪২৩৬; সনদ সহীহ; সহীহুল জামে‘, হা/১৮১০; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫১৮।
শায়খ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব; দাঈ, তাওজীহ্ মা‘নুবী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, কুয়েত।
Last edited: