‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

আকিদা মানুষ কি বাধ্যগত জীব নাকি তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি রয়েছে?

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,218
Solutions
17
Reactions
6,636
Credits
5,456
তাক্বদীর সম্পর্কে কথা উঠলেই মানুষের মনে এমন প্রশ্নের উদ্রেক হয়। এ প্রশ্নের জবাবে আলেমগণ বলেন, মানুষ কিছু কিছু বিষয়ে বাধ্যগত এবং কিছু কিছু বিষয়ে তার নিজস্ব ইচ্ছা শক্তি রয়েছে। যেসব বিষয়ে আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দেন নি, সেসব ক্ষেত্রে মানুষ বাধ্য। যেমনঃ অসুস্থতা, জন্ম, মৃত্যু, নানা রকম দুর্ঘটনা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে মানুষের চুল, নখ ইত্যাদির প্রবৃদ্ধিও ঘটে তার ইচ্ছার বাইরে। পক্ষান্তরে যেসব কাজ সে তার নিজস্ব ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে করতে পারে, সেসব ক্ষেত্রে সে স্বাধীন। তবে তার ইচ্ছা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ব্যতীত বাস্তবায়িত হয় না। যেমনঃ উঠা, বসা, শোয়া, হাঁটা, কোথাও প্রবেশ করা, বের হওয়া, ভাল কাজ করা, পাপ কাজ করা ইত্যাদি।[1]

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,
তুমি যখন তোমার বন্ধু-বান্ধবের সাথে কোথাও আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার ইচ্ছা কর, তখন সবচেয়ে সুন্দর এবং মনোরম স্থান চয়নের জন্য তুমি তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর পরামর্শের ভিত্তিতে সবচেয়ে উত্তম জায়গাটি চয়ন কর। তুমি যদি বাধ্যগত জীব হতে, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ স্থানে চলে যেতে; বন্ধুদের সাথে তোমার পরামর্শের যেমন কোন প্রয়োজন পড়ত না, তেমনি স্থান চয়নেরও দরকার হত না।[2]

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, বান্দার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি রয়েছে, তবে তা আল্লাহ্‌র তাক্বদীরের বাইরে নয়, এটি কিভাবে সম্ভব? আমরা তাকে বলব, বান্দা কর্তৃক সংঘটিত যে কোন কর্ম বান্দা কিসের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে? এক বাক্যে সবাই বলবে, ইচ্ছাশক্তি এবং কর্মশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সে তা বাস্তবায়ন করে। আমরা তাকে আবার প্রশ্ন করি, ঐ ইচ্ছাশক্তি এবং কর্মশক্তির স্রষ্টা কে? সবাই স্বীকার করবে, আল্লাহই সেগুলির সৃষ্টিকর্তা। তাহলে দেখা গেল, বান্দার কর্ম এবং উক্ত কর্ম বাস্তবায়নের উপকরণ ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তি সবই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এতটুকু জানলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।[3]

শায়খ উছায়মীন (রহেমাহুল্লাহ)কে মানুষ বাধ্য কিনা এই প্রশ্ন করা হলে জবাব দেওয়ার আগেই তিনি বলেন, প্রশ্নকারী নিজেকে জিজ্ঞেস করুক, এই প্রশ্নটি করতে কেউ কি তাকে বাধ্য করেছে? তার যে মডেলের গাড়ী আছে, ঐ মডেলের গাড়ী কিনতে কেউ কি তাকে বাধ্য করেছে? এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে প্রশ্নকারী তার কাঙ্খিত উত্তরটি পেয়ে যাবে।

সে নিজেকে আরো জিজ্ঞস করুক, সে কি স্বেচ্ছায় দুর্ঘটনা কবলিত হয়? স্বেচ্ছায় অসুস্থ হয়? সে কি নিজ ইচ্ছায় মরবে? এসব প্রশ্নর উত্তর জানলেই সে তার কাঙ্খিত উত্তরটি পেয়ে যাবে।

এরপর আমরা বলব, কিছু কাজ মানুষ নিজ ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে করে থাকে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মহান আল্লাহ বলেন,

فَمَن شَاءَ اتَّخَذَ إِلَىٰ رَبِّهِ مَآبًا﴾ [سورة النبأ: 39]﴿​

‘অতএব, যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার নিকটে আশ্রয়স্থল তৈরী করে নিক’ (নাবা ৩৯)। তিনি আরো বলেন,

مِنكُم مَّن يُرِيدُ الدُّنْيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ الْآخِرَةَ﴾ [سورة آل عمران: 152]﴿​

‘তোমাদের মধ্যে কেউ দুনিয়া কামনা করে আর কেউ আখেরাত কামনা করে’ (আলে-ইমরান ১৫২)

পক্ষান্তরে কিছু কিছু কাজে মানুষের নিজস্ব কোন ইখতিয়ার থাকে না; সেগুলি নিছক তাক্বদীরের কারণেই ঘটে। যেমনঃ অসুস্থতা, মৃত্যু, দুর্ঘটনা।[4]

তবে অসুস্থতা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি স্রেফ আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে হলেও মূলতঃ মানুষই এর জন্য দায়ী। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ﴾ [سورة الشورى: 30]﴿​

‘তোমাদের উপর যেসব বিপদাপদ আসে, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন’ (শূরা ৩০)। অন্যত্র তিনি বলেন,

أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّىٰ هَٰذَا ۖ قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ﴾ [سورة آل عمران: 165]﴿​

‘যখন তোমাদের উপর কোন মুছীবত নেমে আসল, অথচ তোমরা তার পূর্বেই দ্বিগুণ কষ্টে উপনীত হয়েছ, তখন কি তোমরা বলবে, এটা কোথা থেকে এল? তাহলে বলে দাও, এ কষ্ট তোমাদের নিজেদের পক্ষ থেকেই নেমে এসেছে’ (আলে-ইমরান ১৬৫)। তিনি আরো বলেন,

مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ﴾ [سورة النساء: 79]﴿​

‘তোমার যে কল্যাণ হয়, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় । আর তোমার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় তোমার নিজের কারণে’ (নিসা ৭৯)। ইবনে জারীর (রহেমাহুল্লাহ) সূরা শূরার উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘তোমাদের পাপাচারের কারণেই শাস্তিস্বরূপ তোমাদের উপর এমন মুছীবত নেমে আসে’।[5]

অনুরূপভাবে মানুষের যেসব কল্যাণ সাধিত হয়, সেগুলিও তাদের কারণেই রহমত স্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে দিয়ে থাকেন। আল্লাহ নূহ (‘আলাইহিস্‌সালাম)-এর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا﴾ [سورة نوح: 10-12]﴿​

‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্য উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন’ (নূহ ১০-১২)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে অছিয়ত করতে গিয়ে বলেন, তুমি আল্লাহ্‌র দ্বীনের হেফাযত কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করবেন।[6]

অনেকেই আবার প্রশ্ন করে, মানুষের পথভ্রষ্টতা বা হেদায়াত প্রাপ্তিসহ সবকিছু যদি আল্লাহ্‌র হাতেই থাকে, তাহলে মানুষের আর আমল করার কি আছে?


জবাবে বলব, যে হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়ার যোগ্য, তাকে আল্লাহ ঠিকই হেদায়াত দান করবেন। পক্ষান্তরে যে পথভ্রষ্ট হওয়ার যোগ্য, তাকে তিনি পথভ্রষ্টই করেন। এরশাদ হচ্ছে,

فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾ [سورة الصف: 5]﴿​

‘অতঃপর তারা যখন বক্রতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরকে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ ফাসিক্ব সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না’ (ছফ ৫)। এখানে আল্লাহ স্পষ্টই বললেন, বান্দা নিজেই নিজের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ। উল্লেখ্য, বান্দা জানে না যে, তার ভাগ্যে হোদয়াত লেখা আছে নাকি গোমরাহী! তাহলে কেন সে খারাপ পথ বেছে নিয়ে তাক্বদীরের দোহাই দেয়?! সে সৎপথ বেছে নিয়ে কি বলতে পারতো না যে, আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দান করেছেন?

আমরা তাকে বলব, তোমার হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়টি যেমন সুনির্ধারিত, তেমনি তোমার রিযিক্বও সুনির্ধারিত। তুমি হাযার চেষ্টা সত্ত্বেও তোমার জন্য নির্ধারিত রিযিক্বের সামান্যতম কমও পাবে না বা বেশীও পাবে না। তাহলে কেন তুমি রাত-দিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করো? রিযিক্বের অন্বেষণে আত্মীয়-স্বজনের মায়া ত্যাগ করে দেশের বাইরে পাড়ি জমাতেও তুমি দ্বিধাবোধ কর না কেন? তুমি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে রিযিক্ব আসার অপেক্ষায় বাড়ীতে হাত গুটিয়ে বসে থাক না কেন? দুনিয়া অন্বেষণের কাজে তুমি তোমার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় কর; কিন্তু আখেরাত অন্বেষণের কাজে তোমার এত অবহেলা কেন? অথচ দু’টিই তাক্বদীরে লিখিত আছে? তুমি অসুস্থ হলে কেন ডাক্তারের কাছে যাও? সবচেয়ে ভাল চিকিৎসালয় এবং যোগ্য ডাক্তার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা কর কেন? এসব ক্ষেত্রে কেন তুমি তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে হাত গুটিয়ে বসে থাক না?

অতএব বুঝা গেল, মানুষের নিজস্ব ইচ্ছা শক্তি রয়েছে, কেউ তাকে বাধ্য করে না। ফলে সে দুনিয়ার কাজে যেমন ব্যস্ত, তাকে আখেরাতের কাজে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী ব্যস্ত হতে হবে। প্রবৃত্তির তাড়নায় অযথা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে নিশ্চিত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।[7]

আব্দুল আলীম ইব্‌ন কাওসার
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​


[1]. আল-মুখতাছার ফী আক্বীদাতি আহলিস্‌-সুন্নাতি ফিল ক্বাদার/৬৫; মা হুয়াল ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/২৫।
[2]. মা হুয়াল ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/২২।
[3]. মুহাম্মাদ ইবনে খলীল হার্‌রাস, শারহুল আক্বীদাতিল ওয়াসেত্বিইয়াহ, (খোবার: দারুল হিজরাহ, তৃতীয় প্রকাশ: ১৪১৫ হিঃ), পৃ: ২২৮।
[4]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিশ্‌-শায়খ আল-উছায়মীন, (রিয়ায: দারুল ওয়াত্বান, প্রকাশকাল: ১৪১৩ হি:), ২/৯০-৯১, প্রশ্ন নং ১৯৫।
[5]. তাফসীরে ত্ববারী, ২০/৫১২-৫১৩।
[6]. মুসনাদে আহমাদ, ৪/৪০৯-৪১০, হা/২৬৬৯, শায়খ আলবানী বলেন, ‘হাদীছটি ছহীহ’ (মিশকাত, ৩/১৪৫৯, হা/৫৩০৩)।
[7]. মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ উছায়মীন, রিসালাহ ফিল-ক্বাযা ওয়াল-ক্বাদার, (রিয়ায: মাদারুল ওয়াত্বান, প্রকাশকাল: ১৪২৮ হিঃ), ১৪-১৮।
 

Share this page