সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

মানহাজ ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের ঈমান বনাম আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ঈমান : একটি পর্যালোচনা

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,544
Credits
2,602
ভূমিকা

ঈমান সংক্রান্ত আলোচনা দ্বীনের অন্যতম প্রধান বিষয়। নব্য ফিৎনার যুগে এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য খুবই যরূরী। কারণ সরলপ্রাণ মুসলিমরা বিভিন্ন ভ্রান্ত ফের্কার কবলে পড়ে নিজেদের ঈমান ও আক্বীদাহ বিসর্জন দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে নি¤েœ আলোচনা পেশ করা হল।

‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’-এর নিকট ঈমানের রুকনসমূহ

পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’-এর নিকট ঈমানের রুকন মোট ছয়টি। যথা : ১. আল্লাহ্র প্রতি ঈমান। ২. ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমান। ৩. আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান। ৪. আল্লাহ্র প্রেরিত নবী-রাসূলগণের প্রতি ঈমান। ৫. আখেরাতের প্রতি ঈমান। ৬. তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান।[১]

কুরআন থেকে দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡہَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ.​

‘তোমরা তোমাদের মুখম-ল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত কর, তাতে পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তার, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭৭)।

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

اِنَّا کُلَّ شَیۡءٍ خَلَقۡنٰہُ بِقَدَرٍ​

‘নিশ্চয় আমি সবকিছুকে সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে’ (সূরা আল-ক্বামার : ৪৯)।

হাদীস থেকে দলীল : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّه​

‘ঈমান হল এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং বিশ্বাস স্থাপন করবে ভাগ্যের ভাল-মন্দের উপর’।[২]

‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’-এর নিকট ঈমান

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকট ঈমানের পরিচয় হল-

تصديق بالجنان وإقرار باللسان وعمل بالأركان يزيد بالطاعة وينقص بالعصيان​

‘অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং কর্মে সম্পাদন করা। আনুগত্য ও সৎ আমলের মাধ্যমে ঈমান বাড়ে এবং পাপাচারের কারণে ঈমান কমে’।[৩]

কুরআন এবং সহীহ হাদীস থেকে ঈমানের পরিচয়

(ক) অন্তরে বিশ্বাস করা : মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الرَّسُوۡلُ لَا یَحۡزُنۡکَ الَّذِیۡنَ یُسَارِعُوۡنَ فِی الۡکُفۡرِ مِنَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا بِاَفۡوَاہِہِمۡ وَ لَمۡ تُؤۡمِنۡ قُلُوۡبُہُمۡ​

‘হে রাসূল! যারা কুফুরীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে, (তাদের এ কর্ম) আপনাকে যেন চিন্তিত না করে। যারা মুখে বলে ঈমান এনেছি; কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান আনেনি’ (মায়েদাহ ৪১)। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ يَدْخُلُ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى أَخْرِجُوْا مِنَ النَّارِ مَنْ كَانَ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيْمَانٍ .​

আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের কর।[৪] অন্য হাদীসে এসেছে যে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ كِبْرٍ وَلَا يَدْخُلُ النَّارَ مَنْ كَانَ فِىْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيْمَانٍ.​

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।[৫]

(খ) মুখে স্বীকৃতি দেয়া : মহান আল্লাহ বলেন,

قُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا بِاللّٰہِ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡنَا وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلٰۤی اِبۡرٰہٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ وَ الۡاَسۡبَاطِ وَ مَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰی وَ مَاۤ اُوۡتِیَ النَّبِیُّوۡنَ مِنۡ رَّبِّہِمۡ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡہُمۡ وَ نَحۡنُ لَہٗ مُسۡلِمُوۡنَ .​

‘তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র প্রতি ও যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়াকূব (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর বংশধরদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। মূসা ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে যা প্রদান করা হয়েছিল এবং অন্যান্য নবীগণ তাদের প্রভুর পক্ষ হতে যা প্রদত্ত হয়েছিল, তদসমুদয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করছি, তাদের মধ্যে কাউকেও আমরা পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৩৬)।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُوْلُوْا لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ​

‘আমাকে মানুষদের সাথে সংগ্রাম করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে’।[৬]

(গ) কর্ম সম্পাদন করা : মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ کَانَتۡ لَہُمۡ جَنّٰتُ الۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا​

‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ করে তাদের অভ্যর্থনার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ১০৭)। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اَلْإِيْمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُوْنَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّوْنَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيْمَانِ.​

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ঈমানের সত্তরের অধিক অথবা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ বলা এবং সর্বনি¤œ শাখা হচ্ছে, ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা’। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।[৭]

উপরিউক্ত হাদীসে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলাকে ঈমানের শাখা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে, যা কর্মের অন্তর্ভুক্ত। ঈমানের এ সমস্ত শাখাগুলোর বিস্তারিত বিবরণের জন্য সালাফে ছালেহীন অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের নিকট ঈমান

খারেজীদের নিকট ঈমান : ঈমানের সংজ্ঞায় খারেজীরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সাথে একমত পোষণ করে, তবে আমল পরিপূর্ণ না হলে ঈমান সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায় এবং কাফের হয়ে যায় বলে তাদের বিশ্বাস। যার ফলে তারা দুনিয়ায় তাদের রক্ত হালাল এবং আখিরাতে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে বলে বিশ্বাস করে।[৮]

মু‘তাযিলাদের নিকট ঈমান : মু‘তাযিলারা ঈমান বিষয়ে খারেজীদের মতই ‘আক্বীদাহ পোষণ করে, তবে আমলের ত্রুটির কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হলেও দুনিয়ায় মুসলিম বা কাফের কোনটিই গণ্য করা হবে না এবং তাদের রক্ত হালাল হবে না বলে তাদের বিশ্বাস।[৯]

মুরজি‘আদের নিকট ঈমান : মুরজিআদের একটি অংশের নিকট ঈমান হল, অন্তরে বিশ্বাস এবং মুখে স্বীকৃতি প্রদান করা।[১০]

কারামিয়াদের নিকট ঈমান : কারামিয়াদের নিকট ঈমান হল, শুধু মুখে স্বীকৃতি প্রদান করা।[১১]

অধিকাংশ আশ‘আরীদের নিকট ঈমান : আশ‘আরীদের অধিকাংশই মনে করে, শুধু অন্তরে বিশ্বাস করা হল ঈমান। আর মুখে স্বীকৃতি ঈমানের অতিরিক্ত অংশ, মূল নয়।[১২]

জাহমিয়াদের (প্রকৃত মুরজি‘আ) নিকট ঈমান : জাহমিয়াদের নিকট ঈমান হল, মা‘রেফা বা জ্ঞান।[১৩]

মাসআলা-১ : أعمال বা কর্মসমূহ কি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত?


উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, খারেজী এবং মু‘তাযিলাদের নিকট أعمال বা কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া অন্যান্য ফের্কাগুলোর নিকট আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য কাবীরা গুনাহগার ব্যক্তি সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সাথে খারেজী ও মু‘তাযিলাদের আক্বীদার পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা পেশ করা হল-

া أعمال বা কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এর দলীলসমূহ


(এক) যে সমস্ত আয়াত ও হাদীসে পাপ কাজ করলে অথবা কোন আমল পরিত্যাগ করলে কঠিন শাস্তি এবং ঈমান বিনষ্ট হওয়া বা কমে যাওয়ার বর্ণনা এসেছে, সেগুলো أعمال বা কর্মসমূহ ছাড়া শুধু অন্তরে বিশ্বাসের মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণ হলে এ সমস্ত বর্ণনা অনর্থক হত, যা কখোনই সম্ভব নয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّہَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا​

‘তাদের পর আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা, তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। কাজেই অচিরেই তারা ধ্বংসে (জাহান্নামের গভীর গর্তে) পতিত হবে’ (সূরা মারিয়াম : ৫৯)।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ​

‘কোন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা’।[১৪]
উপরিউক্ত আয়াত এবং হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। কারণ সালাত পরিত্যাগ করলে ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায়। আর সালাত হচ্ছে কর্ম।

(দুই) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

اَلْإِيْمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُوْنَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّوْنَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيْمَانِ​

‘ঈমানের সত্তরের অধিক অথবা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ বলা এবং সর্বনি¤œ শাখা হচ্ছে ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা’। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি বিশেষ শাখা’।[১৫]
উক্ত হাদীসে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলাকে ঈমানের শাখা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে, যা কর্মের অন্তর্ভুক্ত।

(তিন) ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, আব্দুল ক্বায়স গোত্রের প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে বলল, আমাদের এবং আপনাদের মাঝে মুযার গোত্রের মুশরিকরা আছে। সে কারণে আমরা সম্মানিত মাস (আশহুরে হুরুম) ব্যতীত আর কোন সময় আপনার কাছে আসতে পারি না। কাজেই আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত কিছু বিষয়ের হুকুম দিন, যার উপর আমল করলে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব এবং আমরা যাদের রেখে এসেছি তাদেরও এ পথে আহ্বান জানাতে পারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ آمُرُكُمْ بِالإِيْمَانِ بِاللهِ وَهَلْ تَدْرُوْنَ مَا الإِيْمَانُ بِاللهِ؟ شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَإِقَامُ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ وَتُعْطُوْا مِنَ المَغْنَمِ الخُمُسَ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ لَا تَشْرَبُوْا فِي الدُّبَّاءِ وَالنَّقِيْرِ وَالظُّرُوْفِ المُزَفَّتَةِ وَالحَنْتَمَةِ.​

‘আমি তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি। আর চারটি বিষয়ে নিষেধ করছি। আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনার আদেশ দিচ্ছি। তোমরা কি জান, আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনা কাকে বলে? তাহল- এ মর্মে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, সালাত আদায় করা, যাকাত দেয়া, গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দেয়া। তোমাদের চারটি বিষয় হতে নিষেধ করছি, লাউয়ের খোল দিয়ে তৈরি পাত্রে, খেজুর গাছের মূল খোদাই করে তৈরি পাত্রে, আলকাতরা ইত্যাদি দিয়ে প্রলেপ দেয়া পাত্রে এবং মাটির সবুজ পাত্রে তোমরা পান করবে না’।[১৬]

সুধী পাঠক! উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঈমানের ব্যাখ্যায় কী বললেন? সালাত আদায় করা, যাকাত দেয়া, গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দেয়া। তাহলে কি সালাত, যাকাত, গণীমতের মাল প্রদান করা কর্ম নয়? أعمال বা কর্মসমূহ যে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত, এ হাদীসটি তার জাজ্বল্য প্রমাণ।

া যাদের নিকট কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের দলীল ও জবাব


(এক) ঈমানের শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস করা। কুরআন অবতীর্ণের পূর্বে আরবরা সকলেই ঈমান বলতে এটিই বুঝত, অন্য কিছু নয়। আর কুরআন নাযিল হয়েছে আরবদের ভাষায়। সুতরাং ঈমান বলতে অন্তরে বিশ্বাসই বুঝায়।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَاۤ اَنۡتَ بِمُؤۡمِنٍ لَّنَا وَ لَوۡ کُنَّا صٰدِقِیۡنَ​

‘কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী’ (ইউসুফ ১৭)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

اُولٰٓئِکَ کَتَبَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمُ الۡاِیۡمَانَ​

‘তাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানকে সুদৃঢ় করেছেন’ (মুজাদালাহ ২২)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِلَّا مَنۡ اُکۡرِہَ وَ قَلۡبُہٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ​

‘তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়েছে, কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচল’ (নাহাল ১০৬)। উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, অন্তরে বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমান।[১৭]

(দুই) মহান আল্লাহ বলেন,

وَ بَشِّرِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ​

‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন’ (বাক্বারাহ ২৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,

الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ کَانَتۡ لَہُمۡ جَنّٰتُ الۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا.​

‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস’ (কাহফ ১০৭)।

উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ঈমান এবং আমলকে আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন, যা উভয়ের বৈপরীত্য ও ভিন্নতা প্রমাণ করে।[১৮]

(তিন) যদি একজন কাফের ব্যক্তি সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে এবং কোন প্রকার সালাত আদায় করার পূর্বেই মারা যায়, তাহলে অন্তরে বিশ্বাস থাকার ফলে সে মুমিন বলে গণ্য হবে। অতএব বুঝা গেল, মূলত ঈমান হচ্ছে, শুধু অন্তরে বিশ্বাস।[১৯]

(চার) কোন কোন আমল নির্দিষ্ট কিছু সময়ে, কিছু মানুষের উপর পালনীয় নয়। যেমন, ঋতুগ্রস্ত নারীরা ঋতু অবস্থায় সালাত আদায় করে না, সিয়াম পালন করে না, ত্বাওয়াফ করে না, মুছ্হাফ তথা কুরআন স্পর্শ করে না। যদি أعمال বা কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হত, তাহলে ঋতুগ্রস্ত নারীদের জন্য এ সমস্ত আমল ত্যাগ করা বৈধ হত না। পক্ষান্তরে অন্তরে বিশ্বাস সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য ও অপরিহার্য।[২০]

জবাব :


(এক) ঈমানের শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস, কিন্তু শারঈ পরিভাষায় এর অর্থ অনেক ব্যাপক। যেমন, সালাতের শাব্দিক অর্থ দু‘আ। কিন্তু শারঈ পরিভাষায় সালাত হল- নির্দিষ্ট কথা এবং কর্মের মাধ্যমে আল্লাহ্র ইবাদত করা। তেমনিভাবে সিয়ামের শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। কিন্তু শারঈ পরিভাষায় সিয়াম হল- ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকা। এভাবেই শারঈ পরিভাষায় এমন কিছু বাড়তি শর্ত এবং মূলনীতি থাকে, যা শাব্দিক অর্থে থাকে না। সুতরাং ঈমানের ক্ষেত্রেও শারঈ পরিভাষা উপেক্ষা করে শুধু শাব্দিক অর্থের উপর অটল থাকা অজ্ঞতার পরিচয় ছাড়া কিছু নয়।

(দুই) কুরআন নাযিলের পূর্বে আরবরা সকলেই ঈমান বলতে অন্তরে বিশ্বাসই বুঝত, অন্য কিছু নয়। এ দাবি অবান্তর। তাদের এ দাবি অবান্তর হওয়ার কয়েকটি কারণ হল-

ক. তারা কিসের ভিত্তিতে এই দাবি করছে? কোন্ কিতাবে লেখা আছে? কিসের মাধ্যমে জানতে পারল, আরবরা সকলেই এটি বুঝত?

খ. কোন্ কোন্ ভাষাবিদদের একমত হওয়াকে ঐকমত্য বলে বিবেচিত হবে? আছমাঈ, আবু ‘আমর, খলীল ফারাহিদী প্রমুখ আরবী ভাষাবিদগণ? যারা কুরআন নাযিলের পূর্বেও কোন কিছু সনদসহ বর্ণনা করেনি। বরং তৎকালীন আরবদের থেকে যা শুনেছে এবং তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে যা বর্ণনা করেছে তাই লিপিবদ্ধ করেছে। নাকি ইসলাম-পূর্ব যুগের ভাষাবিদদের বুঝানো হয়েছে? যাদেরকে আমরা দেখিনি, তাদের সাথে সাক্ষাৎও হয়নি, এমনকি তাদের থেকে কোন কিছু আমাদের নিকট পৌঁছেনি।[২১]

গ. শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে একটি সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছেন। ভাষাবিদগণ কখনো বলেন না, আরবরা এটি এটি বলেছে। বরং তারা বলেন, আরবদের এ সমস্ত কথার ভিত্তিতে এটি বুঝা যায়। আর যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে ঈমান বলতে শুধু অন্তরে বিশ্বাস বুঝায়, এটি আরবদের স্পষ্ট উক্তি নয়; বরং তাদের বিভিন্ন কথার মাধ্যমে বুঝা যায়। এখন প্রশ্ন হল- কুরআন এবং হাদীসে ঈমানের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তা বেশী শক্তিশালী, না-কি আরবদের বিভিন্ন কথার মাধ্যমে ঈমানের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তা বেশী শক্তিশালী? শুধু তাই নয়, বরং তারা আরবদের কথা থেকে ভুলও বুঝতে পারে।[২২]

ঘ. যদি মেনেও নেয়া যায় আরবরা ঈমানের এ অর্থের উপর ঐকমত্য পোষণ করেছে। তবুও এটি خبر واحد বা এককসূত্রের মাধ্যমে প্রমাণিত। আর তোমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে خبر واحد বা এককসূত্রে প্রমাণিত স্পষ্ট সহীহ হাদীস মানতে দ্বিধাবোধ কর, তাহলে এটির উপর কিভাবে নির্ভর করতে পার? যারা নির্ভুল ছিলেন না; যাদের কথাবার্তায় সঠিকের থেকে ভুলের সংখ্যা বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাদের থেকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী কি বেশী শক্তিশালী নয়?

(তিন) ঈমান বলতে শুধু অন্তরে বিশ্বাসই বুঝায়, এর প্রমাণে সূরা মুজাদালাহ এবং সূরা নাহলের যে দু’টি আয়াত তারা পেশ করেছে, তার জবাব হল-

প্রথমতঃ অন্তরে বিশ্বাস যে ঈমানের মূল ভিত্তি সে বিষয়ে আমরা তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করি না, তবে আমরা বলি, أعمال বা কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু জোর-জবরদস্তিমূলক কাউকে أعمال বা কর্মসমূহ থেকে বিরত রাখলে তার ঈমানের উপর কোন প্রভাব পড়বে না, যেমনটি আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়।

দ্বিতীয়তঃ উপরিউক্ত দু’টি আয়াতে অন্তরে বিশ্বাসকে ঈমান বলার অর্থ এই নয় যে, أعمال বা কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হবে না। বরং আয়াতদ্বয়ে অন্তরে বিশ্বাসকে ঈমানের যরূরী বিষয় বলে গণ্য করা হয়েছে।

তৃতীয়তঃ আলাদা আলাদা ভাবে কোন কিছু উল্লেখিত হলেই (একটিকে আরেকটির উপর আত্ফ করলেই) উভয়ের বৈপরীত্য ও ভিন্নতা প্রমাণ করে না। সুতরাং ঈমান এবং আমলকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা মানে এই নয় যে, দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। যেমন মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,

حٰفِظُوۡا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوۃِ الۡوُسۡطٰی​

‘তোমরা সালাতের প্রতি যতœবান হবে এবং মধ্যবর্তী সালাতের’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৮)।
এ আয়াতে প্রথমে সাধারণভাবে প্রত্যেক সালাতের প্রতি যতœবান হতে বলা হয়েছে, তারপরে মধ্যবর্তী সালাতের কথা বলা হয়েছে। এর মানে এই নয়, মধ্যবর্তী সালাত ভিন্ন কোন বিষয়; বরং সেটিও অন্যান্য সালাতের মতই। কিন্তু গুরুত্বের জন্য আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আয়াতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

غَافِرِ الذَّنۡۢبِ وَ قَابِلِ التَّوۡبِ​

‘পাপ ক্ষমাকারী, তওবাহ কবুলকারী’ (সূরা আল-গাফের : ৩)।

এ আয়াতে যিনি পাপ ক্ষমাকারী, তিনিই তওবাহ কবুলকারী। কিন্তু আলাদাভাবে উল্লেখ করার অর্থ এই নয় যে, পাপ ক্ষমাকারী একজন এবং তওবাহ কবুলকারী আরেকজন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَ اِذۡ اَخَذۡنَا مِنَ النَّبِیّٖنَ مِیۡثَاقَہُمۡ وَ مِنۡکَ وَ مِنۡ نُّوۡحٍ وَّ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسَی ابۡنِ مَرۡیَمَ وَ اَخَذۡنَا مِنۡہُمۡ مِّیۡثَاقًا غَلِیۡظًا.​

‘আর স্মরণ করুন, যখন আমরা নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং আপনার কাছ থেকেও। আর নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারিয়াম পুত্র ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছ থেকেও। আর আমরা তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার’ (সূরা আল-আহযাব : ৭)।

এ আয়াতে প্রথমে সমস্ত নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)ও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তারপর বিশেষভাবে তাদের নাম উল্লেখ করার অর্থ এই নয় যে, তারা নবীদের অন্তর্ভুক্ত নন। তেমনিভাবে যে সমস্ত আয়াতে ঈমানের পরে আমলের কথা এসেছে, সেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় না যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়।

(চার) যদি একজন কাফের ব্যক্তি সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে এবং কোন প্রকার সালাত আদায় করার পূর্বেই মারা যায়, তাহলে অন্তরে বিশ্বাস থাকার ফলে সে মুমিন বলে গণ্য হবে, এটি সত্য। কারণ এ সময়ে শুধু অন্তরে বিশ্বাসই তার উপর অপরিহার্য ছিল, সালাতের ওয়াক্ত না হওয়ার কারণে সালাত তার উপর অপরিহার্য ছিল না। কিন্তু এ থেকে প্রমাণিত হয় না যে, ঈমান শুধু অন্তরে বিশ্বাসের নাম। কারণ শরী‘আতে যে কর্মসমূহ ফরয বা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তা বিভিন্ন সময় এবং অবস্থার ভিত্তিতে ফরয হয়। যেমন সালাতের ওয়াক্ত হলে সালাত, নিছাব পরিমান মাল এক বছর নিজস্ব মালিকানায় অতিবাহিত হলে যাকাত, রামাযান মাস উপনিত হলে সিয়াম ফরয হয়। সুতরাং কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর রামাযান উপনিত হলে তার উপর সিয়াম পালন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। সে যদি সিয়াম পালন না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য বলে গণ্য হবে এবং তার ঈমান কমে যাবে।[২৩]

(পাঁচ) তাদের দাবি, যদি কর্মসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হত, তাহলে ঋতুগ্রস্ত নারীদের জন্য সালাত, সিয়াম ত্যাগ করা বৈধ হত না। পক্ষান্তরে অন্তরে বিশ্বাস সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য ও অপরিহার্য। তাদের এ দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এ অবস্থায় সালাত ত্যাগ করতে শরী‘আতেই নির্দেশ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, সালাত, সিয়াম, কুরআন তেলাওয়াত ছাড়াও আরো অনেক আমল রয়েছে, যেগুলো ঋতুগ্রস্ত মহিলাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। যেমন পিতা-মাতার সেবা করা, স্বামীর আনুগত্য করা, হজ্জে এলে ঋতু¯্রাব অবস্থায় আরাফায় অবস্থান করা ইত্যাদি। সে যদি এগুলো পালন না করে, তাহলে অবশ্যই অবাধ্য হবে এবং তার ঈমানও কমে যাবে।[২৪]

উল্লেখ্য যে, যাদের নিকট আমলসমূহ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের অনেকের নিকট আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত না হলেও আমল যরূরী বিষয়। বরং আমল পরিত্যাগের কারণে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।


[১]. মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব আন-নাজদী, জাওয়াবু আহলিস সুন্নাতিন নাবাবিয়াহ ফী নাক্বযি কালামিশ শী‘আ ওয়ায যিয়াদিয়াহ (রিয়ায : দারুল ‘আছিমাহ, ৩য় সংস্করণ ১৪১২ হিঃ), পৃ. ১৪২।
[২]. সহীহ মুসলিম হা/৮; সহীহ বুখারী হা/৫০; তিরমিযী হা/২৬১০; আবুদাঊদ হা/৪৬৯৫; ইবনু মাজাহ হা/৬৪; মুসনাদে আহমাদ হা/১৯১; মিশকাত হা/২।
[৩]. ইবনু ঈসা, তাওযীহুল কাফিয়্যাহ আশ-শাফিয়্যাহ, ২য় খ-, পৃ. ১৩৯; আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-বদর, যিয়াদাতুল ঈমান ওয়া নুক্বছানিহি ওয়া হুকমিল ইসতিছনাই ফীহ (রিয়ায : মাকতাবাতু দারিল কলম, ১ম সংস্করণ ১৪১৬ হি./১৯৯৬ খ্রি.), পৃ. ১১০।
[৪]. সহীহ বুখারী হা/২২, ৬৫৬০; সহীহ মুসলিম হা/১৮৪; মিশকাত হা/৫৫৮০।
[৫]. আবুদাঊদ হা/৪০৯১; তিরমিযী হা/১৯৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৫৯।
[৬]. সহীহ বুখারী হা/৩৯২,১৩৯৯, ২৯৪৬, ৬৯২৪; সহীহ মুসলিম হা/২০, ২১।
[৭]. সহীহ মুসলিম হা/৩৫।
[৮]. আব্দুল কাফী আল-ইবাযী, আল মুওজায ফী আরা-ইল খাওয়ারিজ আল-কালামিয়্যাহ, ২য় খ-, পৃ. ৯০।
[৯]. কাযী আব্দুল জাব্বার, শারহুল উছুল আল-খামসা, পৃ. ৭০৭।
[১০]. ইবনু আবিল ঈয আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদাহ আত-তাহাবিয়াহ, পৃ. ৩৩২।
[১১]. প্রাগুক্ত।
[১২]. আবু মানছূর, আত-তাওহীদ, পৃ. ৩৮০।
[১৩]. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৭ম খ-, পৃ. ১২০।
[১৪]. সহীহ মুসলিম, হা/৮২।
[১৫]. সহীহ মুসলিম হা/৩৫।
[১৬]. সহীহ বুখারী হা/৫৩, ৭৫৫৬।
[১৭]. শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৭ম খ-, পৃ. ১২১-১৪২।
[১৮]. আলী আব্দুল আযীয, আল-ঈমান ইনদাস সালাফে ওয়া মুখলিফীহিম, পৃ. ৪০।
[১৯]. প্রাগুক্ত।
[২০]. প্রাগুক্ত।
[২১]. শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৭ম খ-, পৃঃ ১২৩।
[২২]. প্রাগুক্ত।
[২৩]. আলী আব্দুল আযীয, আল-ঈমান ইনদাস সালাফে ওয়া মুখলিফীহিম, পৃ. ৪৮।
[২৪]. প্রাগুক্ত।



-ড. আব্দুল্লাহিল কাফী বিন লুৎফর রহমান মাদানী​

* প্রিন্সিপাল, হেরিটেজ আইডিয়াল একাডেমী, শেরপুর, বগুড়া।​
 
Last edited:
Top