সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

Asking বেতের নামাজের নিয়ম

Solution
বিতর নামাজ কি
বিতর অর্থ বিজোড়। আর বিতর নামাজ অর্থ বেজোড় নামাজ; যা মূলত এক রাকাত। কেননা এক রাকাত যোগ না করলে কোন সালাতই বিজোড় হয় না; রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, রাতের নফল সালাত দুই দুই; অতঃপর যখন তোমাদের কেউ ফজর হয়ে যাবার আশংকা করবে, তখন সে যেন এক রাকআত পড়ে নেয়; যা তার পূর্বের সকল নফল সালাতকে বিতরে পরিণত করবে।

বুখারী হা/৯৯০; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৫৪।

বিতর নামাজের ফজিলত
বিতর নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলাে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:

১) খারেজা ইবনে হুযাফা (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তােমাদেরকে একটি নামাজ দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়ে উত্তম। তা হচ্ছে ‘বিতর নামায। এ নামায আদায় করার...

ChatGPT

Ask me anything!

Threads
0
Comments
224
Solutions
10
Reactions
46
Credits
123
বেতের নামাজ একটি সুন্নত ইবাদত যা কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আদায় করা হয়। এই নামাজটি সাধারণত সর্বপ্রকারের দৈনিক সূর্যাস্ত নামাজের সময় আদায় করা হয়। নিচে বেতের নামাজের নিয়মের কিছু মৌলিক বিষয় দেওয়া হলো:

1. উদ্ধত হয়ে বসতে হবে: প্রথমে আপনার উদ্ধত হয়ে বসতে হবেন। বেতের উদ্ধত হতে কামানও ইয়াজবী।

2. তালবিয়া পড়া: বেতের নামাজের আদায় করার আগে একটি তালবিয়া পড়তে হবে। তালবিয়ায়ের কাছে হাত উঠিয়ে তো আক্বরির হুকম দেওয়া হচ্ছে। অ্যাল্লাহু আকবার অব কাবীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু হুয়াল মালিকুল হক্কু লাইলাহিল হামদু হু, আল্লাহু আক্বার।

3. নিয়ত করা: সকল নামায়ের মতো বেতের নামাজও একটি কোনো নিয়ত সাথে শুরু করতে হবে।

4. রকাত সংখ্যা: বেতের নামাজে একটি নিয়মিত রকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। সাধারণত ২ রকাত বেতের নামাজ আদায় করা হয়। এছাড়াও বিশেষ অক্ষরে কোন দিনে দীর্ঘতম বেত পড়তে হয় যেমন: বরসি রাত এর বেত, আশূরর বেত ইত্যাদি।

5. তাশাহুদ পড়া: বেতের নামাজে একটি তাশাহুদ পড়তে হবে। এই তাশাহুদের কাছে বাম হাত উঠিয়ে লিফট হঠাত করে দিয়ে ও এ দিয়ে, আপনার মুখে জিহবা রাখতে হয়।

6. সালাম দেওয়া: বেতের নামাজ শেষে সালাম দেওয়া হয় যা চৌথ আদায় করা হয়। সাময়িক এসে তাশাহুদ পড় মেয়াদ মিতে চলে যায়।
এগুলো হলো কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে বেতের নামাজ আদায় করার। অক্সরে এই নির্দিষ্ট নিয়মগুলো পালন করলে বেতের নামাজ বৈধ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে গৃহীত হবে।
 

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,248
Credits
6,298
বিতর নামাজ কি
বিতর অর্থ বিজোড়। আর বিতর নামাজ অর্থ বেজোড় নামাজ; যা মূলত এক রাকাত। কেননা এক রাকাত যোগ না করলে কোন সালাতই বিজোড় হয় না; রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, রাতের নফল সালাত দুই দুই; অতঃপর যখন তোমাদের কেউ ফজর হয়ে যাবার আশংকা করবে, তখন সে যেন এক রাকআত পড়ে নেয়; যা তার পূর্বের সকল নফল সালাতকে বিতরে পরিণত করবে।

বুখারী হা/৯৯০; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৫৪।

বিতর নামাজের ফজিলত
বিতর নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলাে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:

১) খারেজা ইবনে হুযাফা (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তােমাদেরকে একটি নামাজ দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়ে উত্তম। তা হচ্ছে ‘বিতর নামায। এ নামায আদায় করার জন্য তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন, এশার নামাজের পর থেকে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।

আবু দাউদ হা/১২০৮। তিরমিযী, হা/৪১৪। ইবনে মাজাহ, হা/১১৫৮।

২) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়েছেন এবং বলেছেন, হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতর নামায পড়। কেননা আল্লাহ তা’আলা একক, তিনি বিতর নামায পছন্দ করেন।

আবু দাউদ, হা/১৪১৬। নাসাঈ, হা/১৬৭৬। সহীহ তারগীব হাদিস নং ৫৯৪। ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১/১৯৩।

৩) রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। এমনকি সফরে গেলেও এ নামাজ পড়া ছাড়তেন না।

ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামাজ ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যেদিকে যায় সে দিকেই পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন।

বুখারী, হা/৯৪৫।

বিতর নামাজ কি ওয়াজিব
বিতর সালাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা ওয়াজীব নয়; তাই বিতর ছেড়ে দিলে কেউ গুনাহগার হবে না।

ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৩; নাসাঈ হা/১৬৭৬; মিরআত ২/২০৭; ঐ, ৪/২৭৩-৭৪; শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১৭।

বিতর নামাজের সঠিক সময়
বিতর নামাজের সময় হল, এশার নামাজের পর থেকে নিয়ে ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। উক্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে এ নামায আদায় করবে; যেমন ইতিপূর্বে খারেজা ইবনে হুযাফা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে শেষ রাত্রে অর্থাৎ ফজরের পূর্বে আদায় করা উত্তম। সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনাে রাতের প্রথম ভাগে কখনাে দ্বিতীয় ভাগে এবং অধিকাংশ সময় শেষ ভাগে বিতর নামায পড়েছেন।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাতের প্রত্যেক ভাগে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়েছেন; রাতের প্রথমভাগে, রাতের মধ্যভাগে অতঃপর রাতের শেষভাগে বিতর পড়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়।

বুখারী, অধ্যায় জুমা হা/৯৪১। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায হা/১২৩১।

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

যে ব্যক্তি এই আশংকা করে যে, শেষ রাতে নফল নামাজ পড়ার জন্য উঠতে পারবে না, তবে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই বিতর নামায পড়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি শেষ রাতে কিয়াম করার আগ্রহ রাখে সে যেন শেষ রাতেই বিতর নামায পড়ে। কেননা শেষ রাতের নামাযে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটাই উত্তম।

মুসলিম হা/১২৫৫, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তোমাদের রাতের নামাযের সর্বশেষ বিতর নামায আদায় করবে।

বুখারী হা/৯৪৩, মুসলিম হা/১২৪৫।

বেতের নামাজ কয় রাকাত
বিতর নামাজ মূলত তাহাজ্জুদ নামাজের অংশ। তাই রাতের পূরা কিয়ামুল্লায়লকেও বিভিন্ন হাদীছে বিতর বলা হয়েছে।

এই জন্যই পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিতর নামাযের উত্তম সময় হচ্ছে শেষ রাত- যখন তাহাজ্জুদ নামায পড়া হয়। কিন্তু সঙ্গত কারণ থাকলে তা এশার নামাজের সাথে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে- এই নামাযের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করার জন্য।

বিতর নামাযের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট একটি সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়; এ নামায ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ ও ১৩ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
আমরা পূর্বেই জেনেছি যে, বিতর নামাযের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট একটি সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়; এ নামায ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ ও ১৩ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। তাই আমরা সেগুলি একে একে বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ।

ক) এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
এক রাকাত বিতর পড়ার নিয়ম হল, নিয়ত বেঁধে ছানা, সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু করবে। রুকু থেকে উঠে দু’আ কুনূত পড়বে। তারপর দু’টি সিজদা করে তাশাহুদ, দরূদ ও দু’আ পড়ে সালাম ফিরাবে।

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে নফল নামায দু দু রাকাত করে পড়তেন এবং এক রাকাত বিতর পড়তেন।

বুখারী হাদিস নং ৯৩৬, ৯৩২, ৯৩৪; মুসলিম হাদিস নং ১২৫১।

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

বিতর হচ্ছে শেষ রাতে এক রাকাত নামায।
মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদ: রাতের নামাজ দুই রাকাত করে এবং বিতর শেষ রাতে এক রাকাত হা/ ১২৪৭।

আবু মিজলায হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বিতর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিতর হচ্ছে শেষ রাতে এক রাকাত নামাজ। তিনি বলেন, ইবনে ওমরকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। তিনিও বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিতর হচ্ছে শেষ রাতে এক রাকাত নামাজ।

মুসলিম হা/১২৪৯।

ইমাম নববী বলেন, এসকল হাদিস থেকে দলিল পাওয়া যায় যে, বিতর নামায এক রাকাত পড়া বিশুদ্ধ এবং তা শেষ রাতে আদায় করা মুস্তাহাব।

শরহে নববী সহীহ মুসলিম, ৬/২৭৭।

আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বর্ণিত হাদীছেও এক রাকাতের কথা প্রমাণিত হয়েছে। সেই হাদীসে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে এক রাকাত বিতর পড়তে চায়, সে এক রাকাত পড়তে পারে।

আবু দাউদ হা/১২১২, ইবনু মাজাহ হা/১১৮০।

সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, মুআয বিন জাবাল, উবাই বিন কা’ব, আবু মূসা আশআরী, আবু দারদা, হুযায়ফা, ইবনে মাসউদ, ইবনে ওমর, ইবনে আব্বাস, আবু হুরায়রা, মুআবিয়া, তামীম দারী, আবু আইয়ুব আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) প্রমুখ এবং তাবেয়ীদের মধ্যে ইমাম যুহরী, হাসান বাছরী, মুহাম্মাদ বিন সীরীন, সাঈদ বিন যুবাইর (রহঃ) প্রমুখ আর প্রচলিত চার মাযহাবের তিন ইমাম ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমদ (রহ) প্রমুখও এক রাকাত বিতর পড়ার পক্ষপাতী ছিলেন।

নায়লুল আওতার থেকে আইনি তোহফা ১/২২২ পৃ:।

সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মসজিদে এশার নামায আদায় করতেন, অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়তেন, এর বেশী নয়। তাকে বলা হত, আবু ইসহাক? আপনি এক রাকাতের বেশি বিতর আদায় করেন না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি বিতর না পড়ে নিদ্রা যায় না সে দৃঢ়তা সম্পন্ন লোক।
মুসনাদে আহমাদ হা/১৩৮২।

শায়খ আলবানী বলেন, হানাফী মাযহাবের কোন কোন আলেম বলেন, তিন রাকাতের নীচে কোন নামায নেই। তথা তিন রাকাত বিতর পড়ার ব্যাপারে এজমা (সকলের ঐক্যমত) হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের এই দাবী দলীল বিহীন। কেননা আমরা দেখেছি সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই এক রাকাত বিতর পড়েছেন।

সালাতুত তারাবীহ পৃঃ ৮৫। বিস্তারিত দেখুনঃ ফাতহুল বারী ২/৩৮৫, নাসবুর রায়া ২/১২২।

অতএব যারা বলেন, এক রাকাত কোন নামাযই নেই, তাদের জন্য উল্লেখিত আলোচনায় শিক্ষণীয় বিষয় আছে। কেননা স্বয়ং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাকাত বিতর নামায আদায় করতেন। ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও অনেকে এক্ষেত্রে তার অনুসরণ করেছেন।

ইমাম শাফেয়ী বলেন, মুসলমানগণ একথার উপর ঐকমত্য হয়েছে যে, কারো নিকট যদি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়, তবে কারো কথা মত উহা পরিত্যাগ করা বৈধ নয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

যারা তাঁর (রাসূলের) নির্দেশের বিপরীত চলে, তারা সতর্ক হয়ে যাক যে, তারা ফেতনায় পড়ে যাবে অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে।

সূরা নূর আয়াত নং- ৬৩।

খ) তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছে দুটি।

প্রথম পদ্ধতি
দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরানাে। অতঃপর এক রাকাত পড়া। এ পদ্ধতির দলিল হলাে- আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

জনৈক সাহাবী রাতের নামায সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, রাতের নামাজ দু দু রাকাত করে, যখন ফজর হওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাকাত বিতর পড়ে নিবে।

সহীহ বুখারী, অধ্যায় বিতর নামায, অনুচ্ছেদ বিতরের বর্ণনা। হা/৯৩২ (বাংলা বুখারী)। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায, হা/১২৩৯।

এ পদ্ধতি অনুযায়ী বিতর মূলত এক রাকাতই। দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরানো অতঃপর এক রাকাত পড়া। যেমন ইবনে ওমর (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল দু দু রাকাত মানে কি? তিনি বললেন: প্রত্যেক দুই রাকাত পর পর সালাম ফিরাবে।

মুসলিম- হা/১২৫২।

ইবনে ওমর (রাঃ), ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমেদ, ইসহাক, প্রমুখ এভাবেই বিতর পড়তেন।
আল মুগনী ২/৫৮৮।

ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে আরো বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিতর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, দু’রাকাত এবং এক রাকাতের মাঝে সালাম ফিরে পার্থক্য করে নিবে।

আসরাম স্বীয় সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন। দ্রঃ আল মুগনী ২/৫৮৯।

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

আমি বাড়ীতে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কক্ষের মধ্যে নামায পড়তেন। তিনি দুই রাকাত এবং এক রাকাতের মাঝে পৃথক করতেন, এসময় তিনি আমাদেরকে শুনিয়ে জোরে সালাম দিতেন।

আহমাদ হা/২৩৩৯৮।

হযরত আয়েশা (রাঃ) আরাে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাকাত বিতর পড়তেন। তিনি দুই রাকাত এবং এক রাকাতের মাঝে কথা বলতেন।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, শায়খ আলবানী বলেন, হাদিসটির সনদ শায়খাইন (বুখারী মুসলিমের) শর্তানুযায়ী ছহীহ। দ্র ইরওয়াউল গালীল হা/ ৪২০।

নাফে বলেন, আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বিতরের দুই রাকাত এবং এক রাকাতের মাঝে সালাম ফিরাতেন এবং কোন দরকারী বিষয় থাকলে তার নির্দেশ দিতেন।

সহীহ বুখারী, অধ্যায় বিতর নামায, অনুচ্ছেদ বিতরের বর্ণনা। হা/৯৩২ (বাংলা বুখারী)।

দ্বিতীয় পদ্ধতি
দুই রাকাত পড়ে তাশাহুদ এর জন্য না বসে সালাম না ফিরিয়ে একাধারে তিন রাকাত পড়ে সালাম ফেরানো। এ কথার দলীল, হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি রাকাত বিতর নামায পড়তেন। এর মধ্যে তাশাহুদের জন্য বসতেন না, একাধারে তিন রাকাত পড়ে শেষ রাকাতে বসতেন ও তাশাহুদ পড়তেন। এভাবেই বিতর পড়তেন আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

হাদীসটি বর্ণনা করেন ইমাম হাকেম, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

একাধারে তিন রাকাত বিতর পড়ার ইঙ্গিতে আরেকটি হাদীছ পাওয়া যায়। উবাই বিন কা’ব (রাঃ) বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামাযে প্রথম রাকাতে ‘সাব্বেহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। আর সবগুলো রাকাত শেষ করেই সালাম ফেরাতেন।

নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামাজ, অধ্যায় বিতরের ক্ষেত্রে উবাই বিন কাব এর হাদীস বর্ণনায় বর্ণনাকারীদের বাক্যের মধ্যে বিভিন্নতা। হা/১৬৮১।

মাগরিবের মত তিন রাকাত বিতর পড়া
তিন রাকাত বিতরের ক্ষেত্রে উল্লেখিত দুটি পদ্ধতি ছাড়া আরো একটি পদ্ধতি আছে তা হলাে বিতর নামাযকে মাগরিবের নামাজের মত করে পড়া। অর্থাৎ দু’রাকাত পড়ে তাশাহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া ও এক রাকাত পড়া। যেমন আমাদের সমাজে সচরাচর হয়ে থাকে। এ পদ্ধতির পক্ষে দলীল হলো

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

রাতের বিতর তিন রাকাত, উহা হল দিনের বিতর মাগরিবের মত।

দারাকুতনী ২/২৭,২৮; বায়হাকী হা/৪৮১২।

এ হাদীছটি ইমাম দারাকুতনী বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি সহীহ নয়; উহা যঈফ।

ইমাম বাইহাকী বলেন, হাদীসটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত হলেও তা মূলতঃ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর নিজস্ব কথা হিসেবে প্রমাণিত।

নাসবুর রায়া ২/১১৬।

বিতর নামায মাগরিবের মতো আদায় করার ব্যাপারে আরেকটি যুক্তি পেশ করা হয়। তা হচ্ছে সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,

মাগরিব হচ্ছে দিনের বিতর নামায। অতএব তোমরা রাতের নামাযকে বিতর কর।

হাদীসটি ইবনে ওমরের বরাতে তাবরানী বর্ণনা করেন। (দ্রঃ সহীহুল জামে- আলবানী অনুচ্ছেদ রাতের নামায, হা/১৪৫৬।

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীছ থেকে বুঝা যায়, রাতের বিতর মাগরিবের মত করেই আদায় করতে হবে।

কিন্তু এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এখানে রাকাতের সংখ্যার দিক থেকে যেমন মাগরিব নামায বিতর তথা বেজোড় করা হয়, অনুরূপ রাতেও বিতর তথা বেজোড় নামাজ আদায় করবে- উক্ত নামায আদায় করার জন্য মাগরিবের মত দুই তাশাহুদে পড়তে হবে একথা বলা হয়নি। এখানে রাকাতের সংখ্যার দিক থেকে বিতরকে মাগরিবের মত বলা হয়েছে পদ্ধতির দিক থেকে নয়। এই কারণেই অন্য হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামাযকে মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য করে পড়তে নিষেধ করেছেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
তোমরা মাগরিবের নামাজের সাথে সাদৃশ্য করে তিন রাকাত বিতর পড়না; বরং পাঁচ রাকাত দ্বারা বা সাত রাকাত দ্বারা বা নয় রাকাত দ্বারা কিংবা এগার রাকাত দ্বারা বিতর পড়।

তাহাভী, দারাকুতনী, ইবনে হিব্বান ও হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাকিম হাদীছটিকে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ আখ্যা দিয়েছেন এবং ইমাম যাহাবী সমর্থন করেছেন। ইবনে হাজার ও শাওকানী ও সহীহ বলেছেন। (দ্রঃ ফাতহুল বারী, ২/৫৫৮, নায়লুল আওত্বার ৩/৪২-৪৩। শায়খ আলবানী ও ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন (দ্রঃ সালাতুত তারাবীহ- ৮৪ ও ৯৭ পৃঃ)।

শায়খ আলবানী বলেন, তিন রাকাত বিতর দুই তাশাহুদে পড়লেই তা মাগরিবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। আর হাদিসে এটাকেই নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি একেবারে শেষ রাকাতে বসে তবে কোন সাদৃশ্য হবে না। হাফেয ইবনে হাজার ফাতহুল বারীতে একথাই উল্লেখ করেছেন এবং ছানআনী সুবুলুস সালামে এই পদ্ধতিকে উত্তম বলেছেন।

সালাতুত তারাবীহ- আলবানী, পৃঃ ৯৭।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, বিতর নামাযকে মাগরিবের মত করে আদায় করা তথা দুই তাশাহুদে অর্থাৎ- দুই রাকাতের পর তাশাহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে এক রাকাত পড়া সুন্নাতের পরিপন্থী যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

অনেকে বলতে পারেন, আমরা কুনুত, কেরাত ও বর্ধিত তাকবীরের মাধ্যমে মাগরিব থেকে পার্থক্য করে নেই। কিন্তু একথা গ্রহণযােগ্য নয়। কেননা বিতর নামাযে কুনূত পাঠ করা ঐচ্ছিক বা মুস্তাহাব বিষয়। তাছাড়া নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের নামাযেও কুনূত পড়েছেন।

সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও সিজদার স্থান, হা/১০৯৩, ১০৯৪।

আর ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে ফরজ সালাতের সমস্ত রাকাতে সূরা মিলানো যায়।

মুসলিম শরীফ নববীর ভাষ্য সহ। ৪/১৭২, ১৭৪।

বিতর নামাজে বর্ধিত তাকবীরের তাে কোন ভিত্তিই নেই। সুতরাং প্রচলিত নিয়মে বিতর পড়লে তথা দুই রাকাত পড়ে তাশাহুদে বসে সালাম না ফিরিয়েই আরেক রাকাত পড়লে তা মাগরিবের সাথে মিলে যায় এবং হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হয়। অতএব এই নিয়মে বিতর পড়া উচিত নয়।

শায়খ আলবানী বলেন, মাগরিবের মত করে দুই তাশাহুদে বিতর নামায সুস্পষ্ট ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এই কারণে আমরা বলব, তিন রাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মধ্যখানে তাশাহুদের জন্য বসবে না। আর বসলে সালাম ফিরিয়ে দিবে। তারপর এক রাকাত পড়বে। আর তিন রাকাতের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম পদ্ধতি।

গ) পাঁচ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
আবু আইয়ুব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের উপর হক হচ্ছে বিতর নামায আদায় করা। অতএব যে পাঁচ রাকাত বিতর পড়তে চায় সে পাঁচ, যে তিন রাকাত পড়তে চায় সে তিন এবং যে এক রাকাত বিতর পড়তে চায় সে এক রাকাত পড়তে পারে।

আবু দাউদ, অধ্যায় সালাত, অনুচ্ছেদ বিতর নামাজ কত রাকাত হা/১২১২, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ সালাত প্রতিষ্ঠা করা, অনুচ্ছেদঃ বিতরের বর্ণনা তিন রাকাত, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাত, হা/১১৮০।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ রাকাত বিতর পড়তেন। এর মধ্যে কোথাও বসতেন না একেবারে শেষ রাকাতে বসতেন।

মুসনাদে আহমাদ হা/২৪৫২০। সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৬৯৮।

ঘ) সাত রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
আয়েশা (রাঃ) বলেন,

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বয়স্ক হয়ে যাওয়ার কারণে শরীর ভারী হয়ে গেলে সাত রাকাত বিতর পড়েছেন।

মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায। হা/১২৩৩।

এই সাত রাকাত পড়ার ক্ষেত্রে দু’রকম নিয়ম পাওয়া যায়। (১) সাত রাকাত একাধারে পড়বে। মাঝখানে বসবে না তাশাহুদ পড়বে না। (২) ছয় রাকাত একাধারে পড়ে তাশাহুদ পড়বে। অতঃপর সালাম না ফিরিয়েই সপ্তম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে।

প্রথম নিয়মের পক্ষে দলীল হচ্ছে
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বয়স্ক হয়ে গেলে এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেলে তিনি সাত রাকাত বিতর পড়েছেন, একেবারে শেষ রাকাতে তাশাহুদে বসেছেন।

সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৬৯৯।

উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ রাকাত এবং সাত রাকাত বিতর পড়তেন। এ পাঁচ বা সাত রাকাতের মাঝে তিনি সালাম ফেরাতেন না বা কোন কথাও বলতেন না। অর্থাৎ একাধারে পাঁচ বা সাত রাকাত নামায পড়তেন।

নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৬৯৫। সহীহ নাসাঈ- আলবানী হা/১/৩৭৫। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, অনুচ্ছেদঃ বিতরের বর্ণনা তিন রাকাত, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাত, হা/১১৮২। ছহীহ ইবনু মাজাহ- আলবানী হা/১/১৯৭।

দ্বিতীয় পদ্ধতির দলিল হচ্ছে
আশেয়া (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বয়বৃদ্ধ হয়ে গেলে এবং দুর্বল হয়ে পড়লে সাত রাকাত বিতর পড়েছেন। একাধারে ছয় রাকাত পড়ে তাশাহুদে বসেছেন। তারপর সালাম না ফিরিয়েই দাঁড়িয়ে পড়েছেন এবং সপ্তম রাকাত পড়েছেন তারপর সালাম ফিরিয়েছেন।

সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, অনুচ্ছেদ কিভাবে সাত রাকাত বিতর পড়বে, হা/১৭০০।

ঙ) নয় রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
এ নামায পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে একাধারে আট রাকাত পড়ে বসে তাশাহুদ পড়বে। তারপর দাঁড়িয়ে নবম রাকাত পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে।

সাদ ইবনে হিশাম (রাঃ) বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিতর নামায সম্পর্কে আমাকে বলুন? তিনি বললেন, আমরা তাঁর জন্য মেসওয়াক এবং ওযুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। আল্লাহর ইচ্ছায় যখন তিনি জাগ্রত হতেন তখন মেসওয়াক করতেন এবং ওযু করতেন অতঃপর নয় রাকাত নামায আদায় করতেন। এ সময় মধ্যখানে না বসে অষ্টম রাকাতে বসতেন। বসে আল্লাহর জিকির করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন ও দু’আ করতেন। অতঃপর সালাম না ফিরিয়েই দাঁড়িয়ে পড়তেন এবং নবম রাকাত আদায় করতেন। এরপর তাশাহুদে বসে আল্লাহর যিকির করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন ও দু’আ করতেন। অতঃপর আমাদেরকে শুনিয়ে জোরে সালাম ফিরাতেন।

মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায হা/১২৩৩।

উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তের রাকাত বিতর পড়তেন। যখন বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে গেছেন তখন নয় রাকাত বিতর পড়েছেন।

নাসাঈ, অধ্যায় কিয়ামুল লাইল ও নফল নামায, হা/ ১৬৮৯।

চ) এগারো রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে এগারো রাকাত নামায পড়তেন, তম্মধ্যে এক রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন। অপর বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশার নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে ফজর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এগারো রাকাত নামায পড়তেন। প্রতি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাতেন এবং এক রাকাত বিতর পড়তেন।

মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদ রাতের নামায, হা/১২১৬।

ছ) তের রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
এর দুটি পদ্ধতি

(১) প্রতি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে এবং শেষে এক রাকাত বিতর পড়বে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামাযের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,

আমি নামাজে গিয়ে তার বাম পার্শ্বে দন্ডায়মান হলাম; তখন তিনি তাঁর ডান হাত আমার মাথায় দিয়ে ডান কানটি ঘুরিয়ে দিলেন অতঃপর আমাকে ধরে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন; তারপর তিনি দু’রাকাত নামায আদায় করলেন, আবার দুই রাকাত আদায় করলেন, আবার দু’রাকাত আদায় করলেন, আবার দুই রাকাত আদায় করলেন, আবার দুই রাকাত আদায় করলেন, আবার দুই রাকাত আদায় করলেন, তারপর বিতর পড়লেন; অতঃপর একটু শুয়ে পড়লেন; যখন মুয়াজ্জিন এল, তখন দাঁড়ালেন এবং হালকা করে দু’রাকাত নামায আদায় করলেন; এরপর ঘর থেকে বের হয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন।

বুখারী, অধ্যায়ঃ বিতর নামায, হা/৯৩৬। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায; অনুচ্ছেদ রাতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামায ও দু’আ, হা/১২৭৪।

(২) তের রাকাত নামাজ দু দু রাকাত করে পড়বে এবং শেষে একাধারে পাঁচ রাকাতের মাধ্যমে বিতর পড়বে। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তের রাকাত নামায পড়তেন; (সর্বশেষে) এর মধ্যে পাঁচ রাকাত দ্বারা বিতর পড়তেন; এই পাঁচ রাকাতের মাঝে বসতেন না; একেবারে শেষে বসতেন।

মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায। অনুচ্ছেদ রাতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামায ও দু’আ, হা/১২১৭।

বিতর নামাজের নিয়ত
প্রত্যেক ইবাদাতের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হচ্ছে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই; যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে; মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।

আলক্বামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,

আমি উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ১

বেতের নামাজের সূরা
উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন রাকাত বিতরের ১ম রাকাতে সূরা আ’লা, ২য় রাকাতে সূরা কাফিরুন ও ৩য় রাকাতে সূরা ইখলাস পাঠ করতেন। ঐ সাথে ফালাক ও নাস পড়ার কথাও এসেছে।

হাকেম ১/৩০৫, আবু দাউদ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৬৯, ১২৭২।

বেতের নামাজের দোয়া
কুনূত অর্থ বিনম্র আনুগত্য। কুনুত দুই প্রকার। কুনূতে রাতেবাহ ও কুনূতে নাযেলা; প্রথমটি বিতর সালাতের শেষ রাকাতে পড়তে হয়; দ্বিতীয়টি বিপদাপদ ও বিশেষ কোন জরুরী কারণে ফরয সালাতের শেষ রাকাতে পড়তে হয়; বিতরের কুনূতের জন্য হাদীছে বিশেষ দো’আ বর্ণিত হয়েছে।

তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/১২৭৩।

বিতরের কুনূত সারা বছর পড়া চলে।

প্রাগুক্ত, মিশকাত হা/১২৭৩; মিরআত ৪/২৮৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৬।

তবে মাঝে মধ্যে ছেড়ে দেওয়া ভাল। কেননা বিতরের জন্য কুনুত ওয়াজিব নয়।

আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১২৯১-৯২ ‘কুনুত’ অনুচ্ছেদ-৩৬; মিরআত ৪/৩০৮।

দো’আয়ে কুনুত রুকুর আগে ও পরে দু’ভাবেই পড়া জায়েয আছে।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৮৯; ইবনু মাজাহ হা/১১৮৩-৮৪, মিশকাত হা/১২৯৪; মিরআত ৪/২৮৬-৮৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৭; আলবানী, কিয়ামু রামাযান পৃ ২৩।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কারাে বিরুদ্ধে বা কারাে পক্ষে দো‘আ করতেন, তখন রুকুর পরে কুনুত পড়তেন।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৮৮।

ইমাম বায়হাক্বী বলেন,

রুকুর পরে কুনূতের রাবীগণ সংখ্যায় অধিক ও অধিকতর স্মৃতি সম্পন্ন এবং এর উপরেই খুলাফায়ে রাশেদীন আমল করেছেন।

বায়হাক্বী ২/২০৮; তুহফাতুল আহওয়াযী (কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) হা/৪৬৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ২/৫৬৬ পৃঃ।

হযরত ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আনাস, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী থেকে বিতরের কুনুতে বুক বরাবর হাত উঠিয়ে দুআ করা প্রমাণিত আছে।

বায়হাক্বী ২/২১১-১২; মিরআত ৪/৩০০; তুহফা ২/৫৬৭।
কুনুত পড়ার জন্য রুকুর পূর্বে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় দু’হাত উঠানাে ও পুনরায় বাধার প্রচলিত প্রথার কোন বিশুদ্ধ দলিল নেই।

ইরওয়াউল গালীল হা/৪২৭; মিরআত ৪/২৯৯, কুনুত’ অনুচ্ছেদ-৩৬।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল কে জিজ্ঞেস করা হল যে, বিতরের কুনুত রুকুর পরে হবে, না পূর্বে হবে এবং এই সময় দোয়া করার জন্য হাত উঠানো যাবে কি-না। তিনি বললেন, বিতরের কুনূত হবে রুকুর পরে এবং এই সময় হাত উঠিয়ে দো’আ করবে।

তুহফা ২/৫৬৬; মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, মাসআলা নং ৪১৭-২১।

ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) বলেন, বিতরের কুনুতের সময় দুই হাতের তালু আসমানের দিকে বুক বরাবর উঁচু থাকবে। ইমাম ত্বহাবী ও ইমাম কারখীও এটাকে পছন্দ করেছেন।

মিরআত ৪/৩০০ পৃঃ।

এই সময় মুক্তাদীগণ ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন।

মিরআত ৪/৩০৭; সিফাত ১৫৯ পৃঃ; আবু দাউদ, মিশকাত হা/১২৯০।

কুনুতে রাতেবা
হাসান বিন আলী (রাঃ) বলেন যে, বিতরের কুনুতে বলার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে নিম্নোক্ত দোয়া শিখিয়েছেন।

اَللّهُمَّ اهدنىْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِىْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِىْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلَا يُقْضى عَلَيْك وَإِنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফায়তা, ওয়াতা ওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়াবা-রিক লী ফীমা- আ-‘ত্বায়তা, ওয়াক্বিনী শাররা মা- ক্বযায়তা, ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়ালা- ইউক্বযা- ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহূ লা- ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়ালায়তা, তাবা-রাক্তা রব্বানা- ওয়াতা‘আ-লায়তা।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান করে সে সব মানুষের সঙ্গে যাদের তুমি হিদায়াত দান করেছ (নবী রসূলগণ); তুমি আমাকে দুনিয়ার বিপদাপদ থেকে হিফাযাত করো ওসব লোকের সঙ্গে যাদেরকে তুমি হিফাযাত করেছ; যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছো, তাদের মাঝে আমারও অভিভাবক হও; তুমি আমাকে যা দান করেছ (জীবন, জ্ঞান, সম্পদ, ধন, নেক আমাল) এতে বারাকাত দান করো; আর আমাকে তুমি রক্ষা করো ওসব অনিষ্ট হতে যা আমার তাকদীরে লিখা হয়ে গেছে; নিশ্চয় তুমি যা চাও তাই আদেশ করো; তোমাকে কেউ আদেশ করতে পারে না; তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে কেউ অপমানিত করতে পারে না; হে আমার রব! তুমি বারাকাতে পরিপূর্ণ। তুমি খুব উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন।

মিশকাত হা/১২৭৩

দোয়ায়ে কুনুত শেষে মুছল্লী আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাবে।
আহমাদ, নাসাঈ হা/১০৭৪; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, ১৬০ পৃঃ।

কুনূতে কেবল দুই হাত উঁচু করবে। মুখে হাত বুলানোর হাদীস যঈফ।

ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৭; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৪৮৫; বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২২৫৫ -এর টীকা; ইরওয়াউল গালীল হা/৪৩৩-৩৪, ২/১৮১ পৃঃ।

বিতর শেষে তিনবার সরবে ‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দুস’ শেষ দিকে দীর্ঘ টানে বলবে’।

নাসাঈ হা/১৬৯৯ সনদ ছহীহ।

অতঃপর ইচ্ছা করলে বসেই সংক্ষেপে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করবে এবং সেখানে প্রথম রাকাতে সূরা যিলযাল ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন পাঠ করবে।

আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১২৮৪, ৮৫, ৮৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৯৩।

উল্লেখ্য যে, আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ওয়া নাস্তাগফিরুকা…’ বলে বিতরে যে কুনূত পড়া হয়, সেটার হাদিস ‘মুরসাল’ বা যঈফ।

মারাসীলে আবু দাউদ হা/৮৯; বায়হাকী ২/২১০; মিরকাত ৩/১৭৩-৭৪; মিরআত ৪/২৮৫।

অধিকন্তু এটি কুনূতে নাযেলা হিসাবে বর্ণিত হয়েছে, কুনূতে রাতেবাহ হিসাবে নয়।

ইরওয়া হা/৪২৮-এর শেষে, ২/১৭২ পৃঃ।

অতএব বিতরের কুনুত এর জন্য উপরে বর্ণিত দোয়াটি সর্বোত্তম।

মিরআত হা/১২৮১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৪/২৮৫ পৃঃ।

ইমাম তিরমিযী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) থেকে কুনূতের জন্য এর চেয়ে কোন উত্তম দো‘আ আমরা জানতে পারিনি।

তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৪৬৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ২/৫৬৪ পৃঃ; বায়হাক্বী ২/২১০-১১।

কুনুতে নাজেলা
যুদ্ধ, শত্রুর আক্রমণ প্রভৃতি বিপদের সময় অথবা কারুর জন্য বিশেষ কল্যাণ কামনায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে বিশেষভাবে এই দোয়া পাঠ করতে হয়। কুনূতে নাযেলা ফজর সালাতে অথবা সব ওয়াক্তে ফরজ সালাতের শেষ রাকাতে রুকুর পরে দাঁড়িয়ে রব্বানা লাকাল হামদ’ বলার পরে দুই হাত উঠিয়ে সরবে পড়তে হয়।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আবু দাউদ, মিশকাত হা/১২৮৮-৯০; সিফাত ১৫৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৮-৪৯।

কুনূতে নাযেলার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে নির্দিষ্ট কোন দো‘আ বর্ণিত হয়নি; অবস্থা বিবেচনা করে ইমাম আরবিতে দোয়া পড়বেন ও মুক্তাদীগণ ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন।

আবু দাউদ, মিশকাত হা/১২৯০; মিরআত ৪/৩০৭; সিফাত ১৫৯ পৃঃ।

রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বা শক্তির বিরুদ্ধে এমনকি এক মাস যাবত একটানা বিভিন্নভাবে দোয়া করেছেন।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৮৮-৯১।

তবে হযরত ওমর (রাঃ) থেকে এ বিষয়ে একটি দুআ বর্ণিত হয়েছে; যা তিনি ফজরের সালাতে পাঠ করতেন এবং যা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দৈনিক পাঁচবার সালাতে পাঠ করা যেতে পারে। যেমন

اللهم اغفر لنا وللمؤمنين والمؤمنات والمسلمين والمسلمات، وألف بين قلوبهم وأصلح ذات بينهم ، وانصرهم على عدوك وعدوهم، اللهم العن لك ويقاتلون أولياءك، اللهم الكفرة الذين يصدون عن سبيلك ويكذبون الف بين كلمتهم وزلزل أقدامهم وأنزل بهم بأسك الذي لا ت ه عن القوم المجرمين

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লানা ওয়া লিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাতি, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম, ওয়া। আছলিহ যা-তা বায়নিহিম, ওয়ানছুরহুম আলা ‘আদুউবিকা ওয়া ‘আদুউবিহিম। আল্লা-হুম্মালআনিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা ওয়া ইয়ুকাযিবুনা রুসুলাকা ওয়া ইয়ুক্কা-তিনা আউলিয়া-আকা। আল্লা-হুম্মা খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম ওয়া ঝলঝিল আক্বদা-মাহুম ওয়া আনঝিল বিহিম বাসাকাল্লাযী লা তার উদুহু ‘আনিল কাউমিল মুজরিমিন।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এবং সকল মুমিন-মুসলিম নর নারীকে ক্ষমা করুন, আপনি তাদের অন্তর সমূহে মহব্বত পয়দা করে দিন ও তাদের মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা করে দিন; আপনি তাদেরকে আপনার ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন; হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদের উপরে লা’নত করুন; যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে ও আপনার বন্ধুদের সাথে লড়াই করে; হে আল্লাহ, আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন ও তাদের পদ সমূহ টলিয়ে দিন এবং আপনি তাদের মধ্যে আপনার প্রতিশােধকে নামিয়ে দিন, যা পাপাচারী সম্প্রদায় থেকে আপনি ফিরিয়ে নেন না।
বায়হাকী ২/২১০-১১। বায়হাকী অত্র হাদীছকে ছহীহ মওছুল’ বলেছেন।

অতঃপর প্রথম বার বিসমিল্লাহ… সহ ইন্না নাস্তাঈনুকা…. এবং দ্বিতীয় বার বিসমিল্লাহ… সহ ইন্না না’বুদুকা.. বর্ণিত আছে।

বায়হাক্বী ২/২১১ পৃঃ।

উল্লেখ্য যে, উক্ত ‘কুনূতে নাযেলা’ থেকে মধ্যম অংশটুকু অর্থাৎ ইন্না নাস্তাঈনুকা… নিয়ে সেটাকে ‘কুনুতে বিতর’ হিসেবে চালু করা হয়েছে, যা নিতান্তই ভুল। আলবানী বলেন যে, এই দোয়াটি ওমর (রাঃ) ফজরের সালাতে কুনুতে নাজেলা হিসেবে পড়তেন। এটাকে তিনি বিতরের কুনুতে পড়েছেন বলে আমি জানতে পারিনি।

ইরওয়াউল গালীল হা/৪২৮, ২/১৭২ পৃঃ।

বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে

বেতের নামাজে দোয়া কুনুত না পড়লে নামাজ হয়ে যাবে; কারন বিতর নামাজের জন্য দোয়া কুনুত ওয়াজিব নয়। নবী সঃ মাঝে মধ্যে বিতর সালাতে কুনুত পড়তেন না। তবে কুনুত পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ; সুতরাং দোয়া কুনুত না পারলে মুখস্ত করে নেওয়া জরুরি। কিন্তু এর পরিবর্তে অন্য কিছু পড়ার কোন নিয়ম নেই।
 
Solution
Top