প্রবন্ধ বিদ‘আত পরিচিতি (১০ম কিস্তি)

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer
ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jul 24, 2023
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,571
মূলনীতি-৭ : কোন ইবাদত মানুষের মাঝে পরিচিতি ও ব্যাপক বিস্তার লাভ করলেও দলীল ছাড়া তা শরী‘আত হিসাবে প্রমাণিত হবে না

অধিকাংশ মানুষ কোন ইবাদত করলে তা শরী‘আতসিদ্ধ ইবাদত হয়ে যায় না। কেননা অধিকাংশ মানুষ কোন্ আমল করছে এবং তারা কী অনুসরণ করছে তাকে ইবাদত হিসাবে গ্রহণ করা হয় না; বরং আল-কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হলেই কেবল তা ইবাদত হিসাবে গ্রহণ করা হয়। আল্লামা আবূ বকর আত-তুরতূশী (রাহিমাহুল্লাহ) (১০৫৯-১১২৬ খ্রি.) বলেন,

شيوعة الفعل لا تدل على جوازه في الكلام على فريق من العامة وأهل التقليد قالوا إن هذا الأمر شائع ذائع في أقاليم أهل الإسلام وأقطار أهل الأرض، فالجواب أن نقول شيوعة الفعل وانتشاره لا يدل على جوازه، كما أن كتمه لا يدل على منعه​

‘ব্যাপক প্রসিদ্ধ হওয়া কোন কাজকে তার বৈধতার প্রমাণ বহন করে না। এমর্মে সাধারণদের মধ্যে একটি শ্রেণী ও তাক্বলীদপন্থীরা বলে যে, এই বিষয়টি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বহুল প্রচলিত ও ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। উক্ত কথার জবাবে আমরা বলব, কোন কাজের বিস্তৃতি ও প্রসারিত হওয়া তার বৈধতাকে প্রমাণ করে না, যেমন ঐ কাজ গোপন করাটাও তাকে নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে না’।[১]

সুতরাং সুন্নাহ পরিপন্থী কোন যুগের অধিকাংশ মানুষের কোন প্রসিদ্ধ আমল কিভাবে সুন্নাহ হতে পারে? হাদীসে এসেছে,

عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ دَخَلَ عَلَيَّ أَبُو الدَّرْدَاءِ وَهُوَ مُغْضَبٌ فَقُلْتُ مَا أَغْضَبَكَ؟ قَالَ وَاللهِ مَا أَعْرِفُ مِنْ أَمْرِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا إِلَّا أَنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ جَمِيْعًا​

উম্মু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট উপস্থিত হলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ জিনিস আপনাকে এত রাগান্বিত করল? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মতের কোন বিষয় সম্পর্কে অবগত নই, তবে তাদের সকলে একত্রে সালাত আদায় করা ব্যতীত।[২]

সুধী পাঠক! ইসলামের তৃতীয় খলীফা ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খিলাফতের শেষ সময়ে উক্ত ঘটনাটি ঘটে। কেননা তখনকার মানুষ জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করত ঠিকই, কিন্তু তাদের অন্যান্য সকল আমলের ক্ষেত্রে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। তারা সালাতের বিধি-বিধান ও অন্যান্য ইবাদত এবং মু‘আমালাত সহ বিভিন্ন বিষয়ে নানাবিধ বিদ‘আতী কাজে সম্পৃক্ত ছিল। বিভিন্ন নতুন নতুন আমলের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। তাই আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাগান্বিত হয়ে উক্ত কথা বলেছিলেন।[৩] আজ থেকে প্রায় দেড়হাজার বছর পূর্বে ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতের সময়ে অসংখ্য মানুষের মাঝে অনেক বিদ‘আতী আমল চালু হলেও সেগুলো কিন্তু জায়েয হয়ে যায়নি, যা আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উক্ত কঠোর অভিব্যক্তি দ্বারা স্পষ্ট হয়। অতএব কোন আমল বহুল প্রচলিত হওয়া কিংবা প্রসিদ্ধি লাভ করা ঐ আমলকে বৈধতা প্রমাণ করে না, যতক্ষণ না সে ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ পাওয়া যাবে।

মূলনীতি-৮ : শারঈ কোন ইবাদতের মধ্যে অতিরিক্ত কোন কিছু বৃদ্ধি করে আমল করলে, আসল ইবাদত বাতিল হবে না; বরং শুধু সেই অতিরিক্ত অংশই বাতিল হয়ে যাবে, যদি অতিরিক্ত অংশ আসল ইবাদতের বিপরীত না হয়

শরী‘আত অনুমোদিত কোন ইবাদতের মধ্যে প্রচলিত অতিরিক্ত নতুন আমল, যে আমলের ব্যাপারে শরী‘আতে কোন প্রমাণ উল্লেখিত হয়নি; তা আসল ইবাদতকে বিনষ্ট করে না। তবে অতিরিক্ত প্রচলিত নতুন আমলটি প্রত্যাখ্যাত হবে। কেননা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ​

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যে ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।[৪]

উদাহরণস্বরূপ : সালাতের বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠের সময় ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুল তাশাহ্হুদ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিংবা সালাতের সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যন্ত ইশারা করা শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত। যেমন হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَعَدَ فِى التَّشَهُّدِ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَىْ عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَىْ وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَىْ عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَىْ وَعَقَدَ ثَلَاثًا وَخَمْسِيْنَ وَأَشَارَ بِالسَّبَابَةِ​

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসতেন, বাম হাতকে বাম জানুর উপর এবং ডান হাতকে ডান জানুর উপর রাখতেন। এসময় তিনি তিপ্পান্নের (৫৩) মত আঙ্গুল একত্রিত করতেন এবং তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।[৫]
উক্ত হাদীসে وَأَشَارَ بِالسَّبَابَةِ ‘তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন’ অংশটুকুর সীমা বর্ণনায় মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্য হল- বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিনানোর পূর্ব পর্যন্ত ইশারা করতে হবে।[৬]
অথচ এই শরী‘আতসিদ্ধ আমলের মধ্যে অতিরিক্ত নতুন আকারে যেটা ঢুকেছে, তাহল- সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, ‘তাশাহ্হুদ’-এর ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠানো এবং ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামানো। অথচ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।[৭]

অতএব মূলনীতির আলোকে নতুন প্রবিষ্ট হওয়া বিদ‘আতী আমলের মাধ্যমে শরী‘আতসিদ্ধ আমলের পদ্ধতি বাতিল হবে না, বরং নতুন অতিরিক্ত আমলটি প্রত্যাখ্যাত হবে। যেমনটি তাশাহ্হুদে ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠানো এবং ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামানোর পদ্ধতিটা বাতিল হবে। কেননা এর স্বপক্ষে শরী‘আতের কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু রজব (রাহিমাহুল্লাহ) (৭৩৬-৭৯৫ হি.) বলেন,

وإنْ كان قد زاد في العمل المشروع ما ليس بمشروع فزيادته مردودةٌ عليه بمعنى أنَّها لا تكونُ قربةً ولا يُثابُ عليها ولكن تارة يبطُلُ بها العمل من أصله فيكون مردوداً كمن زاد في صلاته ركعةً عمداً مثلاً وتارةً لا يُبطله ولا يردُّه من أصله كمن توضأ أربعاً أربعاً أو صام الليل مع النهار وواصل في صيامه​

‘শরী‘আতের মধ্যে যদি কোন আমল বৃদ্ধি করা হয়, আর সে ব্যাপারে শরী‘আতের কোন অনুমোদন না থাকে, তাহলে ঐ অতিরিক্ত আমলটি প্রত্যাখ্যাত হবে। অর্থাৎ সেটা মহৎ কাজ হয় না এবং তার মাধ্যমে ছাওয়াবও অর্জন হয় না। বরং কখনো কখনো এর দ্বারা প্রকৃত আমল বাতিল হয়ে যায়। সুতরাং তা প্রত্যাখ্যাত। যেমন কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তার সালাতের রাক‘আত সংখ্যা বৃদ্ধি করে। আবার কখনো কখনো আমলের মৌলিকত্বকে নষ্ট করে না এবং প্রত্যাখ্যানও করে না। যেমন কেউ চারবার চারবার করে ওযূ করে অথবা দিনের সাথে সাথে সিয়াম রাখে এবং সে সিয়াম অব্যাহত রাখে’।[৮]


[১]. আল-ইমাম আবূ বাকর মুহাম্মাদ ইবনুল ওয়ালীদ আত-তুরতূশী, কিতাবুল হাওয়াদিছ ওয়াল বিদাঈ (সঊদী আরব : দারু ইবনিল জাওযিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১১ হি./১৯৯০ খ্রি.), পৃ. ৭১, ৭৩।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৬৫০; মিশকাত, হা/১০৭৯।
[৩]. ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ (ভারত : ইদারাতুল বুহূছিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২৬।
[৪]. সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫১১।
[৫]. সহীহ মুসলিম হা/৫৮০; মিশকাত, হা/৯০৬।
[৬]. ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ (ভারত : ইদারাতুল বুহূছিল ‘ইলময়্যিাহ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২৯।
[৭]. আল-খাত্বীব আত-তিবরীজী, মিশকাতুল মাছাবীহ, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ২য় সংস্করণ, ১৩৯৯ হি./১৯৮৯ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৫, হা/৯০৬-এর টীকা-২ দ্র.।
[৮]. আবুল ফারজ আব্দুর রহমান ইবনু আহমাদ ইবনু রজব আল-হাম্বালী, জামিঊল উলূম ওয়াল হিকাম (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হি.), পৃ. ৬০।



-মুহাম্মাদ বযলুর রহমান​

 
Last edited:
Back
Top