দাওয়াহ বিতর্ক সভার ভূমিকা (পবিত্র আল কুরআনের আলোকে)।

Joined
May 20, 2024
Threads
21
Comments
26
Reactions
253
হক প্রতিষ্ঠায় ও বাতিলের উত্থানে বিতর্ক সভার একাধিক গুরুত্ব রয়েছে, তবে বিতর্ক সভা হতে হবে দলিল ও প্রমাণের ভিত্তিতে, প্রত্যেক নবী ও রাসুলের জীবনে বিতর্ক সভার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বিতর্ক সভা করেছিলেন ফেরাউন ও তার অনুসারীদের সাথে, অবশেষে দলিল ও প্রমাণের ভিত্তিতে হযরত মূসা আঃ সালাম ফেরাউনের উপর বিজয় লাভ করেন এবং উপস্থিত সকল জাদু শাস্ত্রের পান্ডিত্য ব্যক্তিবর্গ তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদ এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য হয়।

হযরত মূসা আলাইহিস সালামের এই বিতর্ক সভার বর্ণনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র আল কুরআনের কয়েক স্থানে দিয়েছেন। যেমন সূরা আল আরাফ আয়াত নং ১০৩ থেকে ১২৬ এর মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন

ثُمَّ بَعَثنا مِن بَعدِهِم موسىٰ بِـٔايٰتِنا إِلىٰ فِرعَونَ وَمَلَإِي۟هِ فَظَلَموا بِها ۖ فَانظُر كَيفَ كانَ عٰقِبَةُ المُفسِدينَ، وَقالَ موسىٰ يٰفِرعَونُ إِنّى رَسولٌ مِن رَبِّ العٰلَمينَ، حَقيقٌ عَلىٰ أَن لا أَقولَ عَلَى اللَّهِ إِلَّا الحَقَّ ۚ قَد جِئتُكُم بِبَيِّنَةٍ مِن رَبِّكُم فَأَرسِل مَعِىَ بَنى إِسرٰءيلَ، قالَ إِن كُنتَ جِئتَ بِـٔايَةٍ فَأتِ بِها إِن كُنتَ مِنَ الصّٰدِقينَ، فَأَلقىٰ عَصاهُ فَإِذا هِىَ ثُعبانٌ مُبينٌ، وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذا هِىَ بَيضاءُ لِلنّٰظِرينَ، قالَ المَلَأُ مِن قَومِ فِرعَونَ إِنَّ هٰذا لَسٰحِرٌ عَليمٌ، يُريدُ أَن يُخرِجَكُم مِن أَرضِكُم ۖ فَماذا تَأمُرونَ، قالوا أَرجِه وَأَخاهُ وَأَرسِل فِى المَدائِنِ حٰشِرينَ، يَأتوكَ بِكُلِّ سٰحِرٍ عَليمٍ، وَجاءَ السَّحَرَةُ فِرعَونَ قالوا إِنَّ لَنا لَأَجرًا إِن كُنّا نَحنُ الغٰلِبينَ،قالَ نَعَم وَإِنَّكُم لَمِنَ المُقَرَّبينَ، قالوا يٰموسىٰ إِمّا أَن تُلقِىَ وَإِمّا أَن نَكونَ نَحنُ المُلقينَ، قالَ أَلقوا ۖ فَلَمّا أَلقَوا سَحَروا أَعيُنَ النّاسِ وَاستَرهَبوهُم وَجاءو بِسِحرٍ عَظيمٍ، وَأَوحَينا إِلىٰ موسىٰ أَن أَلقِ عَصاكَ ۖ فَإِذا هِىَ تَلقَفُ ما يَأفِكونَ، فَوَقَعَ الحَقُّ وَبَطَلَ ما كانوا يَعمَلونَ، فَغُلِبوا هُنالِكَ وَانقَلَبوا صٰغِرينَ، وَأُلقِىَ السَّحَرَةُ سٰجِدينَ، قالوا ءامَنّا بِرَبِّ العٰلَمينَ، رَبِّ موسىٰ وَهٰرونَ، قالَ فِرعَونُ ءامَنتُم بِهِ قَبلَ أَن ءاذَنَ لَكُم ۖ إِنَّ هٰذا لَمَكرٌ مَكَرتُموهُ فِى المَدينَةِ لِتُخرِجوا مِنها أَهلَها ۖ فَسَوفَ تَعلَمونَ، لَأُقَطِّعَنَّ أَيدِيَكُم وَأَرجُلَكُم مِن خِلٰفٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُم أَجمَعينَ، قالوا إِنّا إِلىٰ رَبِّنا مُنقَلِبونَ، وَما تَنقِمُ مِنّا إِلّا أَن ءامَنّا بِـٔايٰتِ رَبِّنا لَمّا جاءَتنا ۚ رَبَّنا أَفرِغ عَلَينا صَبرًا وَتَوَفَّنا مُسلِمينَ​

অতঃপর আমি তাদের পরে মূসাকে পাঠিয়েছি নিদর্শনাবলী দিয়ে ফেরাউন ও তার সভাসদদের নিকট। বস্তুতঃ ওরা তাঁর মোকাবেলায় কুফরী করেছে। সুতরাং চেয়ে দেখ, কি পরিণতি হয়েছে অনাচারীদের। আর মূসা বললেন, হে ফেরাউন! আমি বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত রসূল। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সত্য এসেছে, তার ব্যতিক্রম কিছু না বলার ব্যাপারে আমি সুদৃঢ়। আমি তোমাদের পরওয়ারদেগারের নিদর্শন নিয়ে এসেছি। সুতরাং তুমি বনী ইসরাঈলদেরকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও। সে বলল, যদি তুমি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা উপস্থিত কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক। তখন তিনি নিক্ষেপ করলেন নিজের লাঠিখানা এবং তাৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল। আর বের করলেন নিজের হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ধবধবে উজ্জ্বল দেখাতে লাগল। ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর। সে তোমাদিগকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এ ব্যাপারে তোমাদের কি মত? তারা বলল, আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দান করুন এবং শহরে বন্দরে লোক পাঠিয়ে দিন লোকদের সমবেত করার জন্য। যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে। বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি? সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে। তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি। তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলোকে বাধিয়ে দিল, ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে। সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য বিষয় এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল। এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের পরওয়ারদেগারের প্রতি। যিনি মূসা ও হারুনের পরওয়ারদেগার। ফেরাউন বলল, তোমরা কি (তাহলে) আমার অনুমতি দেয়ার আগেই ঈমান আনলে! এটা প্রতারণা, যা তোমরা এ নগরীতে প্রদর্শন করলে। যাতে করে এ শহরের অধিবাসীদিগকে শহর থেকে বের করে দিতে পার। সুতরাং তোমরা শীঘ্রই বুঝতে পারবে। অবশ্যই আমি কেটে দেব তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে। তারপর তোমাদের সবাইকে শূলীতে চড়িয়ে মারব। তারা বলল, আমাদেরকে তো মৃত্যুর পর নিজেদের পরওয়ারদেগারের নিকট ফিরে যেতেই হবে। বস্তুতঃ আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো এ কারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের পরওয়ারদেগারের নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান কর। (সূরা আরাফ আয়াত নং ১০৩-১২৬)

সূরা ত্বাহায় আয়াত নং ৫৭ থেকে ৭৬ এর মধ্যে বলা হয়েছে

قالَ أَجِئتَنا لِتُخرِجَنا مِن أَرضِنا بِسِحرِكَ يٰموسىٰ، فَلَنَأتِيَنَّكَ بِسِحرٍ مِثلِهِ فَاجعَل بَينَنا وَبَينَكَ مَوعِدًا لا نُخلِفُهُ نَحنُ وَلا أَنتَ مَكانًا سُوًى، قالَ مَوعِدُكُم يَومُ الزّينَةِ وَأَن يُحشَرَ النّاسُ ضُحًى، فَتَوَلّىٰ فِرعَونُ فَجَمَعَ كَيدَهُ ثُمَّ أَتىٰ، قالَ لَهُم موسىٰ وَيلَكُم لا تَفتَروا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَيُسحِتَكُم بِعَذابٍ ۖ وَقَد خابَ مَنِ افتَرىٰ، فَتَنٰزَعوا أَمرَهُم بَينَهُم وَأَسَرُّوا النَّجوىٰ، قالوا إِن هٰذٰنِ لَسٰحِرٰنِ يُريدانِ أَن يُخرِجاكُم مِن أَرضِكُم بِسِحرِهِما وَيَذهَبا بِطَريقَتِكُمُ المُثلىٰ، فَأَجمِعوا كَيدَكُم ثُمَّ ائتوا صَفًّا ۚ وَقَد أَفلَحَ اليَومَ مَنِ استَعلىٰ، قالوا يٰموسىٰ إِمّا أَن تُلقِىَ وَإِمّا أَن نَكونَ أَوَّلَ مَن أَلقىٰ،قالَ بَل أَلقوا ۖ فَإِذا حِبالُهُم وَعِصِيُّهُم يُخَيَّلُ إِلَيهِ مِن سِحرِهِم أَنَّها تَسعىٰ، فَأَوجَسَ فى نَفسِهِ خيفَةً موسىٰ، قُلنا لا تَخَف إِنَّكَ أَنتَ الأَعلىٰ، وَأَلقِ ما فى يَمينِكَ تَلقَف ما صَنَعوا ۖ إِنَّما صَنَعوا كَيدُ سٰحِرٍ ۖ وَلا يُفلِحُ السّاحِرُ حَيثُ أَتىٰ، فَأُلقِىَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قالوا ءامَنّا بِرَبِّ هٰرونَ وَموسىٰ، قالَ ءامَنتُم لَهُ قَبلَ أَن ءاذَنَ لَكُم ۖ إِنَّهُ لَكَبيرُكُمُ الَّذى عَلَّمَكُمُ السِّحرَ ۖ فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيدِيَكُم وَأَرجُلَكُم مِن خِلٰفٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُم فى جُذوعِ النَّخلِ وَلَتَعلَمُنَّ أَيُّنا أَشَدُّ عَذابًا وَأَبقىٰ، قالوا لَن نُؤثِرَكَ عَلىٰ ما جاءَنا مِنَ البَيِّنٰتِ وَالَّذى فَطَرَنا ۖ فَاقضِ ما أَنتَ قاضٍ ۖ إِنَّما تَقضى هٰذِهِ الحَيوٰةَ الدُّنيا، إِنّا ءامَنّا بِرَبِّنا لِيَغفِرَ لَنا خَطٰيٰنا وَما أَكرَهتَنا عَلَيهِ مِنَ السِّحرِ ۗ وَاللَّهُ خَيرٌ وَأَبقىٰ، إِنَّهُ مَن يَأتِ رَبَّهُ مُجرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لا يَموتُ فيها وَلا يَحيىٰ، وَمَن يَأتِهِ مُؤمِنًا قَد عَمِلَ الصّٰلِحٰتِ فَأُولٰئِكَ لَهُمُ الدَّرَجٰتُ العُلىٰ، جَنّٰتُ عَدنٍ تَجرى مِن تَحتِهَا الأَنهٰرُ خٰلِدينَ فيها ۚ وَذٰلِكَ جَزاءُ مَن تَزَكّىٰ​

সে বললঃ হে মূসা, তুমি কি যাদুর জোরে আমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার জন্যে আগমন করেছ? অতএব, আমরাও তোমার মোকাবেলায় তোমার নিকট অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে একটি ওয়াদার দিন ঠিক কর, যার খেলাফ আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না একটি পরিষ্কার প্রান্তরে। মূসা বললঃ তোমাদের ওয়াদার দিন উৎসবের দিন এবং পূর্বাহে লোকজন সমবেত হবে। অতঃপর ফেরাউন প্রস্থান করল এবং তার সব কলাকৌশল জমা করল অতঃপর উপস্থিত হল।মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ দুর্ভাগ্য তোমাদের; তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। তাহলে তিনি তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ধবংস করে দেবেন। যে মিথ্যা উদভাবন করে, সেই বিফল মনোরথ হয়েছে। অতঃপর তারা তাদের কাজে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করল এবং গোপনে পরামর্শ করল। তারা বললঃ এই দুইজন নিশ্চিতই যাদুকর, তারা তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায় এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা রহিত করতে চায়। অতএব, তোমরা তোমাদের কলাকৌশল সুসংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হয়ে আস। আজ যে জয়ী হবে, সেই সফলকাম হবে। তারা বললঃ হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি।

মূসা বললেন, বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হল, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো চুটাছুটি করছে। অতঃপর মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমি বিজয়ী হবে।

তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ কর। এটা যা কিছু তারা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তা তো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না। অতঃপর যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। তারা বলল, আমরা হারুন ও মূসার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। ফেরাউন বলল, আমার অনুমতি দানের পূর্বেই? তোমরা কি তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে; দেখছি সেই তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে যাদু শিক্ষা দিয়েছে। অতএব আমি অবশ্যই তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করব এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কান্ডে শূলে চড়াব এবং তোমরা নিশ্চিত রূপেই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার আযাব কঠোরতর এবং অধিক্ষণ স্থায়ী।

যাদুকররা বলল, আমাদের কাছে যে, সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উপর আমরা কিছুতেই তোমাকে প্রাধান্য দেব না। অতএব, তুমি যা ইচ্ছা করতে পার। তুমি তো শুধু এই পার্থিব জীবনেই যা করার করবে। আমরা আমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যাতে তিনি আমাদের পাপ এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ, তা মার্জনা করেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী। নিশ্চয়ই যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবে না এবং বাঁচবেও না। আর যারা তাঁর কাছে আসে এমন ঈমানদার হয়ে যায় সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে সুউচ্চ মর্তবা। বসবাসের এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা পবিত্র হয়। (সূরা ত্বাহা আয়াত নং ৫৭ -৭৬)

সূরা শুয়ারা মধ্যে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও ফেরাউনের মাঝে বিতর্ক সভার বর্ণনা আরো বিস্তারিত আকারে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

وَإِذ نادىٰ رَبُّكَ موسىٰ أَنِ ائتِ القَومَ الظّٰلِمينَ، قَومَ فِرعَونَ ۚ أَلا يَتَّقونَ، قالَ رَبِّ إِنّى أَخافُ أَن يُكَذِّبونِ، وَيَضيقُ صَدرى وَلا يَنطَلِقُ لِسانى فَأَرسِل إِلىٰ هٰرونَ، وَلَهُم عَلَىَّ ذَنبٌ فَأَخافُ أَن يَقتُلونِ، قالَ كَلّا ۖ فَاذهَبا بِـٔايٰتِنا ۖ إِنّا مَعَكُم مُستَمِعونَ، فَأتِيا فِرعَونَ فَقولا إِنّا رَسولُ رَبِّ العٰلَمينَ، أَن أَرسِل مَعَنا بَنى إِسرٰءيلَ، قالَ أَلَم نُرَبِّكَ فينا وَليدًا وَلَبِثتَ فينا مِن عُمُرِكَ سِنينَ، وَفَعَلتَ فَعلَتَكَ الَّتى فَعَلتَ وَأَنتَ مِنَ الكٰفِرينَ، قالَ فَعَلتُها إِذًا وَأَنا۠ مِنَ الضّالّينَ، فَفَرَرتُ مِنكُم لَمّا خِفتُكُم فَوَهَبَ لى رَبّى حُكمًا وَجَعَلَنى مِنَ المُرسَلينَ، وَتِلكَ نِعمَةٌ تَمُنُّها عَلَىَّ أَن عَبَّدتَ بَنى إِسرٰءيلَ،قالَ فِرعَونُ وَما رَبُّ العٰلَمينَ، قالَ رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ وَما بَينَهُما ۖ إِن كُنتُم موقِنينَ، قالَ لِمَن حَولَهُ أَلا تَستَمِعونَ، قالَ رَبُّكُم وَرَبُّ ءابائِكُمُ الأَوَّلينَ، قالَ إِنَّ رَسولَكُمُ الَّذى أُرسِلَ إِلَيكُم لَمَجنونٌ، قالَ رَبُّ المَشرِقِ وَالمَغرِبِ وَما بَينَهُما ۖ إِن كُنتُم تَعقِلونَ، قالَ لَئِنِ اتَّخَذتَ إِلٰهًا غَيرى لَأَجعَلَنَّكَ مِنَ المَسجونينَ، قالَ فَأتِ بِهِ إِن كُنتَ مِنَ الصّٰدِقينَ، فَأَلقىٰ عَصاهُ فَإِذا هِىَ ثُعبانٌ مُبينٌ، قالَ لِلمَلَإِ حَولَهُ إِنَّ هٰذا لَسٰحِرٌ عَليمٌ، يُريدُ أَن يُخرِجَكُم مِن أَرضِكُم بِسِحرِهِ فَماذا تَأمُرونَ، قالوا أَرجِه وَأَخاهُ وَابعَث فِى المَدائِنِ حٰشِرينَ، يَأتوكَ بِكُلِّ سَحّارٍ عَليمٍ، فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِميقٰتِ يَومٍ مَعلومٍ، وَقيلَ لِلنّاسِ هَل أَنتُم مُجتَمِعونَ، لَعَلَّنا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ إِن كانوا هُمُ الغٰلِبينَ، فَلَمّا جاءَ السَّحَرَةُ قالوا لِفِرعَونَ أَئِنَّ لَنا لَأَجرًا إِن كُنّا نَحنُ الغٰلِبينَ، قالَ نَعَم وَإِنَّكُم إِذًا لَمِنَ المُقَرَّبينَ، قالَ لَهُم موسىٰ أَلقوا ما أَنتُم مُلقونَ، فَأَلقَوا حِبالَهُم وَعِصِيَّهُم وَقالوا بِعِزَّةِ فِرعَونَ إِنّا لَنَحنُ الغٰلِبونَ، فَأَلقىٰ موسىٰ عَصاهُ فَإِذا هِىَ تَلقَفُ ما يَأفِكونَ، فَأُلقِىَ السَّحَرَةُ سٰجِدينَ، قالوا ءامَنّا بِرَبِّ العٰلَمينَ، رَبِّ موسىٰ وَهٰرونَ، قالَ ءامَنتُم لَهُ قَبلَ أَن ءاذَنَ لَكُم ۖ إِنَّهُ لَكَبيرُكُمُ الَّذى عَلَّمَكُمُ السِّحرَ فَلَسَوفَ تَعلَمونَ ۚ لَأُقَطِّعَنَّ أَيدِيَكُم وَأَرجُلَكُم مِن خِلٰفٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُم أَجمَعينَ، قالوا لا ضَيرَ ۖ إِنّا إِلىٰ رَبِّنا مُنقَلِبونَ، إِنّا نَطمَعُ أَن يَغفِرَ لَنا رَبُّنا خَطٰيٰنا أَن كُنّا أَوَّلَ المُؤمِنينَ​

যখন আপনার পালনকর্তা মূসাকে ডেকে বললেনঃ তুমি পাপিষ্ঠ সম্প্রদায়ের নিকট যাও; ফেরাউনের সম্প্রদায়ের নিকট; তারা কি ভয় করে না? সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমার আশংকা হচ্ছে যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে দেবে। এবং আমার মন হতবল হয়ে পড়ে এবং আমার জিহবা অচল হয়ে যায়। সুতরাং হারুনের কাছে বার্তা প্রেরণ করুন। আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ আছে। অতএব আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। আল্লাহ বলেন, কখনই নয় তোমরা উভয়ে যাও আমার নিদর্শনাবলী নিয়ে। আমি তোমাদের সাথে থেকে শোনব। অতএব তোমরা ফেরআউনের কাছে যাও এবং বল, আমরা বিশ্বজগতের পালনকর্তার রসূল।

যাতে তুমি বনী-ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও। ফেরাউন বলল, আমরা কি তোমাকে শিশু অবস্থায় আমাদের মধ্যে লালন-পালন করিনি? এবং তুমি আমাদের মধ্যে জীবনের বহু বছর কাটিয়েছ। তুমি সেই-তোমরা অপরাধ যা করবার করেছ। তুমি হলে কৃতঘ্ন। মূসা বলল, আমি সে অপরাধ তখন করেছি, যখন আমি ভ্রান্ত ছিলাম।

অতঃপর আমি ভীত হয়ে তোমাদের কাছ থেকে পলায়ন করলাম। এরপর আমার পালনকর্তা আমাকে প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং আমাকে পয়গম্বর করেছেন। আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা বলছ, তা এই যে, তুমি বনী-ইসলাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছ। ফেরাউন বলল, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আবার কি? মূসা বলল, তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। ফেরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, তোমরা কি শুনছ না? মূসা বলল, তিনি তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও পালনকর্তা। ফেরাউন বলল, তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রসূলটি নিশ্চয়ই বদ্ধ পাগল। মূসা বলল, তিনি পূর্ব, পশ্চিম ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর পালনকর্তা, যদি তোমরা বোঝ। ফেরাউন বলল, তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর তবে আমি অবশ্যই তোমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করব। মূসা বলল, আমি তোমার কাছে কোন স্পষ্ট বিষয় নিয়ে আগমন করলেও কি? ফেরাউন বলল, তুমি সত্যবাদী হলে তা উপস্থিত কর। অতঃপর তিনি লাঠি নিক্ষেপ করলে মুহূর্তের মধ্যে তা সুস্পষ্ট অজগর হয়ে গেল। আর তিনি তার হাত বের করলেন, তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের কাছে সুশুভ্র প্রতিভাত হলো। ফেরাউন তার পরিষদবর্গকে বলল, নিশ্চয় এ একজন সুদক্ষ জাদুকর। সে তার জাদু বলে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায়। অতএব তোমাদের মত কি?

তারা বলল, তাকে ও তার ভাইকে কিছু অবকাশ দিন এবং শহরে শহরে ঘোষক প্রেরণ করুন। তারা যেন আপনার কাছে প্রত্যেকটি দক্ষ জাদুকর কে উপস্থিত করে। অতঃপর এক নির্দিষ্ট দিনে জাদুকরদেরকে একত্রিত করা হল। এবং জনগণের মধ্যে ঘোষণা করা হল, তোমরাও সমবেত হও। যাতে আমরা জাদুকরদের অনুসরণ করতে পারি-যদি তারাই বিজয়ী হয়। যখন যাদুকররা আগমণ করল, তখন ফেরআউনকে বলল, যদি আমরা বিজয়ী হই, তবে আমরা পুরস্কার পাব তো? ফেরাউন বলল, হ্যা এবং তখন তোমরা আমার নৈকট্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে। মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেন, নিক্ষেপ কর তোমরা যা নিক্ষেপ করবে। অতঃপর তারা তাদের রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করল এবং বলল, ফেরাউনের ইযযতের কসম, আমরাই বিজয়ী হব। অতঃপর মূসা তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করল, হঠাৎ তা তাদের অলীক কীর্তিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল। তখন জাদুকররা সেজদায় নত হয়ে গেল। তারা বলল, আমরা রাব্বুল আলামীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। যিনি মূসা ও হারুনের রব। ফেরাউন বলল, আমার অনুমতি দানের পূর্বেই তোমরা কি তাকে মেনে নিলে? নিশ্চয় সে তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে। শীঘ্রই তোমরা পরিণাম জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কর্তন করব। এবং তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব। তারা বলল, কোন ক্ষতি নেই। আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করব। আমরা আশা করি, আমাদের পালনকর্তা আমাদের ক্রটি-বিচ্যুতি মার্জনা করবেন। কারণ, আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারীদের মধ্যে অগ্রণী।(সুরা শুয়ারা আয়াত নং ১০-৫১)

প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা মূল বিষয়ের দিকে এগিয়ে যাই। মূল বিষয় হচ্ছে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায়ের মাঝে বিতর্ক সভার বিবরণ:

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সম্প্রদায়কে দেখলেন যে, তারা মূর্তি পূজায় ব্যস্ত, তখন তিনি আলাইহিস সালাম তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, এগুলো কি? তোমরা আল্লাহর উপাসনা ছেড়ে মূর্তির সামনে মাথা নত করো কেন? সম্প্রদায়ের লোকেরা উত্তরে বলেছিল যে, আমরা আমাদের বাপ দাদাদেরকে এদের পূজা ও উপাসনা করতে দেখেছি, তাই তাদের অনুকরণ ও অনুসরণে আমরাও মূর্তি পূজায় লিপ্ত। তখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তাদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, তোমরা প্রতিপালকের দেখানো পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছ এবং তোমাদের বাপ দাদারও ছিল পথভ্রষ্ট। সম্প্রদায়ের লোকেরা বলল: হে ইব্রাহিম! সত্যিই কি আমরা পথভ্রষ্ট? না তুমি আমাদের সাথে ঠাট্টা ও মজা করছো ? ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম উত্তর বললেন, সত্যি মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়ে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছো। এবাদতের যোগ্য হচ্ছে একমাত্র ও সত্তা যিনি বিশ্ব সৃষ্টিকর্তা, আমাদের ও তোমাদের সকলের রব, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল উভয়ের প্রতিপালক। আর এই বিষয়ে আমি তোমাদের সামনে সাক্ষ্য প্রদান করছি। সম্প্রদায়ের সাথে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কথোপকথন বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনের মধ্যে বিস্তারিত আকারে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ববাসিকে সম্বোধন করে বলেন

إِذ قالَ لِأَبيهِ وَقَومِهِ ما هٰذِهِ التَّماثيلُ الَّتى أَنتُم لَها عٰكِفونَ، قالوا وَجَدنا ءاباءَنا لَها عٰبِدينَ، قالَ لَقَد كُنتُم أَنتُم وَءاباؤُكُم فى ضَلٰلٍ مُبينٍ، قالوا أَجِئتَنا بِالحَقِّ أَم أَنتَ مِنَ اللّٰعِبينَ، قالَ بَل رَبُّكُم رَبُّ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ الَّذى فَطَرَهُنَّ وَأَنا۠ عَلىٰ ذٰلِكُم مِنَ الشّٰهِدينَ​

স্মরণ কর,যখন তিনি (ইব্রাহিম আলি সালাম) তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ। তারা বললঃ আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি। তিনি বললেনঃ তোমরা প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও।

তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ আগমন করেছ, না তুমি কৌতুক করছ? তিনি বললেনঃ না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা। (সূরা আল আম্বিয়া আয়াত নং ৫২-৫৬)

অতঃপর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম সভায় উপস্থিত লোকজনকে সম্বোধন করে বলেন: আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের এই মিথ্যা উপাস্যদের ব্যাপারে একটা পন্থা অবলম্বন করব। যাতে করে তোমরা হক এবং বাতিলের মধ্যে পার্থক্য অনুভব করে, ঘটনা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারো। উৎসবের দিন সম্প্রদায়ের লোকেরা মেলায় ব্যস্ত, সুযোগ পেয়ে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করে সমস্ত মূর্তিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে, সেখানে রাখা বড় মূর্তিকে তার অবস্থায় ছেড়ে দেন। মেলা থেকে ফেরার পথে যখন সম্প্রদায়ের লোকেরা উপাসনা লায় উপস্থিত হয়, তখন তারা মিথ্যা উপাস্যদের দুর্দশা দেখে হতভম্ব, তারা রাগান্বিত হয়ে ক্ষেপে উঠে, এক অপরকে জিজ্ঞাসা পাত করতে থাকে, কে আমাদের উপাস্য সমূহের সাথে এ ধরনের আচরণ করেছে?? তাদের মধ্য থেকে কতিপয় লোক বলে উঠলো, আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কথা একজন যুবকের মুখ থেকে শুনেছি, তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন আযরের ছেলে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম। এই কথা শুনে সকলে এক বাক্যে বলে উঠলো, তাকে প্রকাশ্য সমাবেশে আনা হোক, আর তোমরা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য থাকো। ঘটনাটি বিশুদ্ধ আকারে পবিত্র আল কোরআনের ভাষায় পাঠ করুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম শপথ নিয়ে বলেন

وَتَاللَّهِ لَأَكيدَنَّ أَصنٰمَكُم بَعدَ أَن تُوَلّوا مُدبِرينَ، فَجَعَلَهُم جُذٰذًا إِلّا كَبيرًا لَهُم لَعَلَّهُم إِلَيهِ يَرجِعونَ، قالوا مَن فَعَلَ هٰذا بِـٔالِهَتِنا إِنَّهُ لَمِنَ الظّٰلِمينَ، قالوا سَمِعنا فَتًى يَذكُرُهُم يُقالُ لَهُ إِبرٰهيمُ، قالوا فَأتوا بِهِ عَلىٰ أَعيُنِ النّاسِ لَعَلَّهُم يَشهَدونَ​

আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব। অতঃপর তিনি সেগুলোকে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দিলেন ওদের প্রধানটি ব্যতীতঃ যাতে তারা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করে। তারা বললঃ আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার কে করল? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম। কতক লোকে বললঃ আমরা এক যুবককে তাদের সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি; তাকে ইব্রাহীম বলা হয়।তারা বললঃ তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখে। ( সুরা আম্বিয়া আয়াত নং ৫৭-৬১)

সকলের ঐক্যমত্যে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে প্রকাশ্য সমাবেশে তলব করা হলো, তিনি আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে এক এক করে তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিলেন। সম্প্রদায়ের লোকেরা সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা পাওয়ার করেন, হে ইব্রাহীম তুমি কি আমাদের উপাস্য সমূহের সাথে এই দু ব্যবহার করেছ? তখন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম উত্তরের বলেন: এদের প্রধান, এই যে বড় মূর্তি, সেই এই কাজ করেছে। অন্যথায় তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তারা বলে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এই উত্তর শুনে সম্প্রদায়ের সকল মানুষ লজ্জায় মাথা নত করে নম্র ও বিনয়ের সাথে বলে উঠলো, হে ইব্রাহিম তুমি তো ভালোভাবে জানো যে, এইগুলো হচ্ছে আমাদের নিজস্ব হাতের তৈরি, কথাবার্তা বলতে এরা সক্ষম নন। সুযোগকে ব্যবহার করে হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম সম্প্রদায়ের সামনে প্রশ্নর পর প্রশ্ন ছুঁড়ে, তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান জানান এবং শিরক ও মূর্তি পূজার ভয়াবহতা স্পষ্ট ভাষায় বিস্তারিত আকারে তুলে ধরেন। প্রকাশ্য ভাষায় সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বলে, ধিক শত ধিক তোমাদের জন্যে এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তোমরা এবাদত কর, তাদের জন্যেও। বলতো, তোমরা কেমনে আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর এবাদত কর? যারা তোমাদের কোন প্রকার উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না। তোমরা কি একেবারে বিবেকহীন!? কিছুই বুঝনা?

ঘটনাটি বিশুদ্ধ আকারে পবিত্র আল কুরআনের সুরা নং ২১ সুরা আল আম্বিয়ার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,

قالوا ءَأَنتَ فَعَلتَ هٰذا بِـٔالِهَتِنا يٰإِبرٰهيمُ، قالَ بَل فَعَلَهُ كَبيرُهُم هٰذا فَسـَٔلوه​



আব্দুর রাকিব নাদভী।
সহ সভাপতি জেলা জমিয়তে আহলে হাদীস,
উঃ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ।​
 
Similar threads Most view View more
Back
Top