সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

লেনদেন ও ব্যবসা বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাংকিং সিস্টেম কি শরী‘আত সম্মত? দেশের ব্যাংকগুলোতে চাকরি করার বিধান কি? সূদী ব্যাংকে কি সকল প্রকার চাকুরী নিষিদ্ধ?

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
378
Comments
447
Solutions
1
Reactions
8,610
Credits
21,983
ভূমিকা: বাংলাদেশে সরকারীভাবে সূদী অর্থনীতি অনুসরণ করা হয়।তাছাড়া বাংলাদেশে যতগুলো ব্যাংক রয়েছে তার সবগুলো ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে জড়িত। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সূদ নির্ভর।দেশে যে সকল ব্যাংকগুলোর শরীয়া বোর্ড আছে বলে দাবী করে থাকে তবুও সেগুলো পরিপূর্ণভাবে সূদ মুক্ত নয়। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক ও বীমাগুলি এব্যাপারে পরিপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তারা সুদের ভিত্তিতে নয়; বরং লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে ইসলামের পূর্ণ রীতি মেনে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে,সে হিসাবে একদল আলেম ইসলামি ব্যাংকে চাকরি করা বা টাকা জমা রাখা বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন।কিন্তু ইসলামি ব্যাংক পুরাপুরি শারী‘আহ ভিত্তিক হওয়া সম্ভব নয় বলে অভিজ্ঞমহলের বিশ্বাস।কারন যে দেশের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সূদ ভিত্তিক এবং পুঁজিবাদী।তাই ইসলামী ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের যেমন রয়েছে নিজস্ব সীমাবদ্ধতা,তেমনি রয়েছে নানা আইনী প্রতিবন্ধকতা।(শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান,সূদ ২য় সংস্করণ পৃঃ ৪৮-৪৯) তাই ইসলামী ব্যাংকেও চাকরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকিং লেনদেন অপরিহার্য হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে নিরুপায় অবস্থায় ব্যাংকে লেনদেন অথবা টাকা জমা রাখার প্রয়োজন হলে তখন অন্যান্য সুদী ব্যাংকে না রেখে ইসলামী ব্যাংকে কারেন্ট একাউন্ট খুলে অর্থ জমা রাখতে পারেন এতে অসুবিধা হবেনা ইনশাআল্লাহ।কারন ইসলামী শরীয়তের একটি বিরাট মূলনীতি হলো ارتكاب أخف الضررين (দু’টি ক্ষতির মধ্য থেকে তুলনামূলক কম ক্ষতিটা গ্রহণ করে বড় ক্ষতি থেকে মুক্ত হওয়া) মহান আল্লাহ বলেন,তুমি তোমার সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো (সূরা তাগাবুন,৬৬/১৬)

সূদী ব্যাংকে সকল প্রকার লেনদেন বা চাকুরী নিষিদ্ধ:

যেসকল ব্যাংকে সুদের কাজ কারবার রয়েছে সে সকল ব্যাংকে লেনদেন করা চাকুরী করা, ঋণ গ্রহণ করা বা যে কোন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হারাম। কারণ আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম করেছেন এবং সূদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।(সূরা বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)আল্লাহ বলেন,তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সাহায্য করবে না।’(সূরা আল মায়েদাহ :২) যে আয়ের মাধ্যম হারাম সে আয়ও হারাম।(বুখারী হা/২৫৯৭)হারাম উপার্জন ভক্ষণকারীর কোন ইবাদত কবুল হবে না।(মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০) সুদের ভয়াবহতার ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোরালো ভাবে নিষেধ করেছেন। ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূদগ্রহনকারী, প্রদাণকারী ও এর সাক্ষ্যদাতা ও লেখক সকলকেই লা’নত করেছেন।’(সহীহ মুসলিম,১৫৪৯ জামেউছ ছাগীর, হা/৯২২৫)আবদুল্লাহ ইবনু হানযালাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি জেনে শুনে এক দিরহাম বা একটি মুদ্রা সুদ গ্রহণ করলে ছত্রিশবার যেনা করার চেয়ে কঠিন হবে।'(মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৮২৫; বাংলা মিশকাত হা/২৭০১)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারীর উপর অভিশাপ করেছেন।(ইবনু মাজাহ, সনদ সহীহ, মিশকাত, হা/৩৭৫৩(খাওয়ালাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিছু লোক আল্লাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।(সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৪৬) হাসান বসরী (রহ.)বলেন,মুত্তাকিদের তাকওয়া ততক্ষণ বিদ্যমান থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বেশ কিছু হালাল ত্যাগ করবে হারামে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে।(জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ইবনু রজব হাম্বলী ১/২১৭) সুতরাং সূদি ব্যাংকে সব ধরনের কাজ করা নিষিদ্ধ। যদিও তা সরাসরি সূদ-ভিত্তিক লেনদেনের সাথে জড়িত নাও হয়।

এমনকি ব্যাংকের চালক, নাইট গার্ড,ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসাবেও কাজ করা জায়েয নয়।

বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ,ফাদ্বীলাতুশ শাইখ
শায়খ ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘চালক বা প্রহরী হয়েও সূদ ভিত্তিক সংস্থার পক্ষে কাজ করা বৈধ নয়। কারণ সূদ ভিত্তিক সংস্থার সাথে চাকুরি গ্রহণের অর্থ এই যে, আপনি তাদের অনুমোদন করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি কোন কিছুকে নিন্দা করে, সে তার স্বার্থে কাজ করতে পারে না। যদি সে তা করে তবে তাতে তার অনুমোদন রয়েছে বলেই ধরা হবে। অতএব যে ব্যক্তি হারামের কোন কাজ অনুমোদন করে, সে তার গুনাহের অংশীদার হয়। আর যারা সরাসরি লেনদেন লিখা-লিখি, অর্থ হস্তান্তর, অর্থ জমা করা ইত্যাদির সাথে জড়িত, তারা নিঃসন্দেহে হারামের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদীস থেকে প্রমাণিত যে,সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, সূদের লেখক এবং সাক্ষীদ্বয়কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান (গুনাহগার)।'(সহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৮; মিশকাত, হা/২৮০৭; ফাতাওয়া ইসলামিইয়াহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪০১)

ব্যাংকের নাইট গার্ড হিসাবেও কাজ করা যাবে কিনা মর্মে ‘সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি’র কাছে জিজ্ঞেস করা হলে, তারা জবাবে বলেন, ‘সূদি ব্যাংকে নাইট গার্ড বা প্রহরী হিসাবে কোন মুসলিমের কাজ করা বৈধ নয়। কারণ এটি পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতার শামিল। আর আল্লাহ বলেন, وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ‘তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সাহায্য করবে না।’(সূরা আল মায়েদাহ : ২)ফাতাওয়া ইসলামিইয়াহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪০১-৪০২)

ব্যাংকে প্রোগ্রামার বা ইলেক্ট্রনিক্স সংস্থার রক্ষণাবেক্ষণ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করা যাবে কিনা মর্মে ‘ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আল-দায়েমাহ’-কে জিজ্ঞেস করা হলে, তারা জবাবে বলেন,‘আপনার বর্ণিত সংস্থাগুলোর পক্ষে কাজ করা আপনার পক্ষে অনুমোদিত নয়, কারণ এতে পাপ ও সীমালঙ্ঘনে সহযোগিতা করা হয়।’(ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আল-দায়েমাহ, ১৫ তম খণ্ড, পৃ. ১৮)।

অতএব,সূদী ব্যাংকে চাকুরীজীবি সূদ ভক্ষণকারীর ন্যায় পাপী হবে এবং তার যাবতীয় উপার্জন হারাম হবে। কিয়ামতের দিন পাপীদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আর আমরা তাদের কৃতকর্মসমূহের দিকে অগ্রসর হব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।'(ফুরক্বান ২৫/২৩) তাই সকলের কর্তব্য হবে হারামের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানে চাকরি না করে হালাল উপায় অনুসন্ধান করা এতে আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করবেন এবং এর উত্তম প্রতিদান দিবেন ইন শা-আল্লাহ।মহান আল্লাহ বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে দেন’। ‘এবং তিনি তাকে রূযী দান করেন এমন পথে, যা সে ধারণাও করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হন।(সূরা তালাক ২-৩) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)



উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।​
 
Last edited by a moderator:
COMMENTS ARE BELOW
Top