‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর বদমেজাজি ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি এবং এমন স্বামীর সাথে আচরণের ১৫টি কৌশল

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,136
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
38,780
Credits
24,212
আপনার জিজ্ঞাসা ইসলামিক জিজ্ঞাসা ও জবাব ইসলামিক প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক বিপদে আছি। আমাদের একটা ছেলে আছে।আমাদের দুজনের সাথে সারাদিন সাধারণ কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতে থাকে। সারাদিন কিছু না কিছু নিয়ে তর্ক হতে থাকে। এক পর্যায় মারামারি। সে আমাকে মারে। স্বামী পরকীয়া করে না কিন্তু তার রাগ-জিদটা একটু বেশী। আমি কি করব বুঝতে পারি না। আমার মা নাই। আমাদের কেউ যাদু গ্রস্ত কি না কিভাবে বুঝব? প্লিজ আমাকে হেল্প করুন। আমাদের সংসার না টিকার মত অবস্থা। উত্তর: আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন এবং আপনার স্বামীকে হেদায়েত ও সুবুদ্ধি দান করুন। আমীন। নিচে বদমেজাজি ব্যক্তিদের করুণ পরিণতি এবং এ জাতীয় স্বামীর সাথে ঘর-সংসার ও আচরণের ১৫টি কৌশল তুলে ধরা হল: বদমেজাজি কাকে বলে এবং তাদের কী পরিণতি? বদমেজাজি বলতে বুঝায় যে ব্যক্তি, সামান্য বিষয়ে রাগারাগি করে, বকাঝকা ও গালাগালি করে। সে যা বলে সেটাই করে। যার মধ্যে কারো মতামত শুনা বা আপোষ-মীমাংসার মনোভাব নাই। এরা অহংকারী, উদ্ধত, রুক্ষ, নির্দয় ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে। এ ধরণের স্বামীর সাথে ঘর সংসার করার ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় এবং মানসিক কষ্ট-যাতনা ও অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দাম্পত্য জীবন থেকে ভালবাসা, হৃদ্যতা ও সুসম্পর্ক বিদায় নেয়। সর্বদা ঝগড়া-ঝাটি ও ধন্ধ-কলহ লেগে থাকে। সত্যি বলতে, এ জাতীয় লোকের কারণে সমাজে প্রচুর সমস্যা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্ধু ও কলীগরা পর্যন্ত তার ব্যাপারে বিরক্ত ও মানসিকভাবে অস্বস্তিতে থাকে। এরা আল্লাহর কাছেও ঘৃণিত মানুষের কাছেও ঘৃণিত। কুরআন-সুন্নাহয় এ জাতীয় লোকদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা দেখি: ✪ আল্লাহ তাআলা বলেন: إِنَّ اللَّـهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ “নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” সূরা লোকমান: ১৮) ✪ হাদিসে এসেছে: হারিস ইবনে ওয়াহাব রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ قَالَ وَالْجَوَّاظُ الْغَلِيْظُ الْفَظُّ. "কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।" (আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫০৮০)। ✪ তিনি আরও বলেন: أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ جَوَّاظٍ زَنِيْمٍ مُتَكَبِّرٍ “আমি তোমাদেরকে কি জাহান্নামীদের কথা বলব না? তারা হল, যারা অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদ করে, আর যারা বদমেজাজি অহংকারী।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৬)। ✪ আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ “ইমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়।” (তিরমিযী হা/১৯৬৪; মিশকাত হা/৫০৮৫)। ✪ জারীর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: مَنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الْخَيْرَ “যাকে কোমলতা ও নম্রতা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৯)। ✪ একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রা.কে বলেন: عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شَانَهُ» “কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)। বদমেজাজি ও অহংকারী স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করা ও আচরণের ১৫টি কৌশল ও পদ্ধতি: এ ধরণের স্বামীর সাথে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতে চাইলে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে বুদ্ধিমতী স্ত্রীর জন্য কতিপয় করণীয় রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে ১৫টি নির্দেশনা দেয়া হল: ) মানুষের সাথে আচরণের মূলমন্ত্র হল, মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি বুঝে আচরণ করা। সুতরাং অহংকারী ও বদমেজাজি স্বামী যে কাজে রাগ করে বা বিরক্ত হয় সে কাজ মোটেও করবেন না। ) কোন বিষয়টা তার অ পছন্দনীয় আর কোন বিষয়টা পছন্দনীয়, কোন কাজটা ভালোবাসে আর কোন কাজটা ঘৃণা করে ইত্যাদি জেনে সেভাবে তার সাথে আচরণ করুন। ) তার পছন্দমত খাবার প্রস্তুত, পছন্দমত পোশাক পরিধান ও সাজগোজ করার চেষ্টা করুন। ) তার মেজাজ বুঝে কথা বলুন। নরম ভাষায় কথা বলুন। শক্ত ও কঠিন ভাষা পরিহার করুন। কেননা শক্ত ভাষা তাকে আরও ক্রুদ্ধ করে তুলবে। ) পৃথিবীর সব মানুষ প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। তাই প্রায়ই তার প্রশংসা করুন। প্রশংসা করুন তার সামনে এবং আপনার আত্মীয় ও তার আত্মীয়দের সামনে। তবে তার যে গুণটা সত্যি প্রশংসা পাওয়ার মত সেটাই বলুন। মিথ্যা প্রশংসা থেকে দূরে থাকুন। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে। আর কখনো সরাসরি তার ভুল ধরতে যাবেন না বা মানুষের সামনে তার দোষ গেয়ে বেড়াবেন না। কোনো বিষয় সংশোধনের প্রয়োজন মনে হলে তার মেজাজ যখন ভালো ও হাসিখুশি থাকে তখন সুন্দরভাবে তাকে সে বিষয়ে বুঝিয়ে বলুন। ) যখন তার মেজাজ খারাপ থাকে, তখন তার মনোভাব বুঝে তাকে কিছুক্ষণ একাকী বিশ্রাম নিতে দিন। হয়ত কিছুক্ষণ পর তার মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে। ) তার ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশি খরবদারি করতে যাবেন না। কারণ এতে সে বিরক্ত হতে পারে। ) তার রাগের সময় তর্ক করবেন না। নীরবতা অবলম্বন করুন। তার মনের রাগ বা ক্ষোভ ঝাড়তে দিন। শান্ত হলে আন্তরিকতার সাথে কোনো কিছু বলার থাকলে বলুন। ) সে যদি কোনো সমস্যায় থাকে তাহলে তা বুঝার চেষ্টা করুন এবং তাকে এ ব্যাপারে যথাসম্ভব সহযোগিতা করুন। তার কাছে এমন কোন আবদার করবেন না যা সংগ্রহ করা তার জন্য কষ্টকর। তাকে বুঝতে দিন যে, আপনি তার সংসারের একজন সহযোগী এবং আপনি তার কষ্ট ও সমস্যাগুলো বুঝেন। ১০) কোন ভুল করে ফেললে ভুল স্বীকার করুন এবং তার নিকট ক্ষমা চান। ১১) আপনার আচরণের মধ্যে কোন যদি কোনো দোষ থাকে যা পরিবর্তন করা উচিৎ তাহলে তা সংশোধন করুন। যেমন: অতিরিক্ত কথা বলা, উচ্চস্বরে কথা বলা, বেশি বেশি অভিযোগ করা, আওয়াজ করে হাঁটা, অপরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি। ১২) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকুন এবং পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজগোজ ও স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। অপরিচ্ছন্ন ও অপরিপাটি পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি ও আসবাব-পত্র মানুষের মনের উপর প্রভাব ফলে। ১৩) সে যদি অত্যাচার করে এবং পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে যায় তাহলে আপনার পরিবার এবং সমাজের সর্বগ্রাহ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিসের ব্যবস্থা করুন বা আইনের আশ্রয় নিন। ১৪) সর্বোপরি নামাযের সেজদা অবস্থায়, ভোর রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পরে ও অন্যান্য দুআ কবুলের আশাব্যঞ্জক সময়গুলোতে তার হেদায়েত ও সংশোধনের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন। ১৫) তবে যদি এমন হয় যে, স্বামীর আচার-আচরণ ইতোপূর্বে ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই তার মধ্যে আমূল পরিবর্তন। হঠাৎ করেই সে আপনাকে দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না। সামান্যতেই উত্তেজিত হয় ও প্রচণ্ড রাগ করে তাহলে এটা যাদুর আলামত। এ ক্ষেত্রে শরিয়ত সম্মত উপায়ে যাদুর চিকিৎসা করতে হবে। পরিশেষে দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আপনাদের দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো দূরভীত করে শান্তি ও সুখের সুবাতাস বইয়ে দেন এবং বিশ্বাস, ভালবাসা, দয়া ও মমতায় আপনাদের গৃহাঙ্গণ ভরপুর করে দেন। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন। ▬▬▬◄❖►▬▬▬ উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল জুবাইল, সৌদি আরব
 

Share this page