সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: তায়াম্মুমের বিধি-বিধান ও পদ্ধতি কি কি?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,147
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,583
Credits
24,212
আপনার জিজ্ঞাসা ইসলামিক জিজ্ঞাসা ও জবাব ইসলামিক প্রশ্নোত্তর উত্তর: শরিয়তের অন্যতম বৈশিষ্ট হল, ইসলামের বিধি-বিধানগুলো সহজে পালনীয়। মানুষের কষ্ট লাঘবের বিষয়টি এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এর একটি উদাহরণ হল, তায়াম্মুমের বিধান। অর্থাৎ পানি সমস্যার কারণে পবিত্র মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা। আল্লাহ্‌ তা’আলা ঘোষণা করেন: وَإنْ كُنْتُمْ مَرْضىَ أوْ عَلىَ سَفَرٍ أوْ جَاءَ أحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتيمموْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ أيْدِيَكُمْ مِنْهُ مَا جَعَلَ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنَّ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ “যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। (অর্থাৎ মুখ মণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মাসেহ কর।) আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান- যাতে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা মায়েদা: ৬) রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: جُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَ طَهُوْرًا، فَأَيُّمَا رَجُلٍ أدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ “জমিন আমার জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ এবং সেজদা করার স্থান বানানো হয়েছে। অতএব করো নামাযের সময় হলে সে যেন তা আদায় করে নেয়। (অর্থাৎ সে যে স্থানেই থাকুক না কেন সেখানেই যথাসময়ে সালাত আদায় করে করবে এবং পানি না পেলে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপরও সালাত পরিত্যাগ করবে না)” (বুখারী ও মুসলিম) 🌀 কখন তায়াম্মুম বৈধ? নিম্নলিখিত অবস্থায় তায়াম্মুম বৈধ: ◼ ১) যদি মোটেও পানি না পাওয়া যায় অথবা যদি এত অল্প পরিমাণ পানি থাকে যে, তা দ্বারা ওযু বা গোসল করলে পান করার জন্য পানি সঙ্কট দেখা দিবে। ◼ ২) পানি বিদ্যমান থাকার পরও যদি অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে তা ব্যবহারের অনুপুক্ত হয় (আর ঠাণ্ডা পানি গরম করারও ব্যবস্থা না থাকে) ◼ ৩) পানি ব্যবহার করার কারণে যদি রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা সুস্থতায় বিলম্ব হওয়ার বা শারীরে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে- অথবা দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে যাওয়ার কারণে যদি সফর সঙ্গী, স্ত্রী-সন্তান বা অর্থ-সম্পদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে- অথবা রাস্তায় শত্রুর ভয় থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা বৈধ। ▪ তায়াম্মুম করে সালাত আদায়ের পর যদি পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয় বা পানি পাওয়া যায় তাহলে উক্ত সালাত পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নাই। ▪ তায়াম্মুমের এই বিধান ছোট-বড় যে কোন নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ ওযু বা ফরয গোসল উভয়ের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করা বৈধ হবে। 🌀 তায়াম্মুমের পদ্ধতি: প্রথমে মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করার পর বিসমিল্লাহ্‌ বলে উভয় হাতের তালু দ্বারা পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তুত (ধুলা-বালি ইত্যাদি) এর উপর মারতে হবে। অতঃপর দু হাত ঝেড়ে বা তাতে ফুঁ দিয়ে মুখমণ্ডল এবং বাম হাতের তালু দিয়ে ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত ও ডান তালু দিয়ে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম্মার ইবনে ইয়াসের রা. কে তায়াম্মুমের পদ্ধতি শিখাতে গিয়ে বলেন: إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ أَنْ تَقُولَ هَكَذَا : وَضَرَبَ بِيَدَيْهِ إِلَى الأَرْضِ فَنَفَضَ يَدَيْهِ فَمَسَحَ وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ “তোমার জন্য এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তার উভয় হাত মাটিতে মারলেন। অতঃপর তা ঝেড়ে মুখমণ্ডল এবং উভয় হাতের কব্জি মাসেহ করলেন।” [সহীহ মুসলিম - ৭০৬ ] আরেকটি বর্ণনায় হাত ঝাড়ার পরিবর্তে দু হাতে ফুঁ দেয়ার কথা এসেছে। ثُمَّ تَنْفُخَ ثُمَّ تَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَكَ وَكَفَّيْكَ [সহীহ মুসলিম: ৭০৭ ] উল্লেখ্য যে, তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে দু বার মাটিতে হাত মারা এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা সম্পর্কে সুনানে দারাকুত্বনীতে যে হাদিস রয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। তাই উহা আমলযোগ্য নয়। 🌀 তায়াম্মুমের শর্তাবলী: ▪ ১. নিয়ত করা। ▪ ২. পানি অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে অথবা ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় তা ব্যবহার করতে অক্ষম হওয়া। ▪ ৩.তায়াম্মুমের মাটি পাক হওয়া। ▪ ৪. বৈধ মাটি থেকে তায়াম্মুম করা। অর্থাৎ অবৈধভাবে দখলকৃত জমিনের মাটি দ্বারা তায়াম্মুম বিশুদ্ধ নয়। 🌀 যে সকল কারণে তায়াম্মুম নষ্ট হয়: ▪ ১) পানি ব্যবহারে সক্ষম হলে অথবা পানি ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতা দূর হলেই তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে- যদিও তায়াম্মুমকারী ব্যক্তি নামাযের মধ্যে থাকে অর্থাৎ নামাযরত অবস্থায় যদি পানি সমস্যা দূর হয়ে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ নামায ভঙ্গ করে ওযু বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করবে তারপর পুনরায় তা আদায় করবে। তবে নামায শেষ করার পর যদি পানি সমস্যা দুর হলে পুনরায় আদায় করার প্রয়োজন নাই। উল্লেখ্য যে, উক্ত নামায পূণরায় পড়া জরুরি না হলেও উক্ত তায়াম্মুম দ্বারা অন্য কোন নামায পড়া বা যে সকল কাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক সেগুলো করা যাবে না বরং পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। কারণ যে সমস্যার কারণে তায়াম্মুমের বৈধতা দেয়া হয়েছিলো তা ইতোমধ্যে তা দূর হয়েছে। ▪২) অনুরূপভাবে যে সব কারণে ওযু নষ্ট হয় (যেমন, পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গত, ঘুম ইত্যাদি) বা যে সব কারণে গোসল ফরয হয় সেগুলোর কোন একটি সংঘটিত হলে (স্ত্রী মিলন, বীর্যপাত, হায়েয-নেফাস ইত্যাদি) তায়াম্মুম বিনষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহু আলাম ✒✒✒✒✒ সংকলনে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
 
Top