সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি বিজিবি কর্মকর্তা। ছালাত আদায়কালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চলে আসলে তিনি ছালাত বাদ দিয়ে স্যালুট জানাবেন, না-কি ছালাত শেষ করে তাকে স্যাল

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,136
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,509
Credits
24,212
উত্তর : প্রথমতঃ কাউকে সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে স্যালুট করা একটি অনৈসলামী সভ্যতা ও সংষ্কৃতি। এটি মূলত পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুকরণের বিষময় ফল, যা পরিত্যাজ্য। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‏لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لَا تَشَبَّهُوْا بِالْيَهُوْدِ وَلَا بِالنَّصَارَى فَإِنَّ تَسْلِيْمَ الْيَهُوْدِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ وَتَسْلِيْمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالأَكُفِّ ‘বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের অনুকরণ কর না। কেননা ইয়াহুদীরা আঙ্গুলের ইশারায় এবং খ্রিষ্টানরা হাতের ইশারায় সালাম দেয়’ (তিরমিযী, হা/২৬৯৫; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১৯৪)। তিনি আরো বলেন, لَا تُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمَ الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى فَإِنَّ تَسْلِيْمَهُمْ بِالْأَكُفِّ وَالرُّؤْسِ وَالْإِشَارَةِ ‘তোমরা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের অনুকরণে সালাম দিয়ো না। কারণ তারা হাত, মাথা ও ইশারার মাধ্যমে সালাম প্রদান করে থাকে’ (নাসাঈ কুবরা, হা/১০১১৭২; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৭৮৩, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৮৮)। ‘আত্বা ইবনু আবী রাবাহ বলেন, كَانُوْا يَكْرَهُوْنَ التَّسْلِيْمَ بِالْيَدِ أَوْ قَالَ كَانَ يَكْرَهُ التَّسْليْمَ باليدِ ‘ছাহাবীগণ হাতের ইশারায় সালাম দেয়া অপসন্দ করতেন। অথবা তিনি বলেন, তিনি হাতের ইশারায় সালাম দেয়া অপসন্দ করতেন’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১০০৪, সনদ ছহীহ)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘বিজাতীয় পদ্ধতিতে নেতা-নেত্রী অথবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্যালুট করা কোনও মুসলিমের জন্য জায়েয নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য আনয়ন করতে নিষেধ করেছেন। উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা, বিশিষ্টজন ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে তাঁদের সামাজিক পদমর্যাদা অনুয়ায়ী সম্মান করা জায়েয। কিন্তু সম্মান প্রদর্শনের নামে সীমালঙ্ঘন করা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৩৫-২৩৬)। পুলিশ-প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে সালাম আদান-প্রদানের যে রীতি-নীতি রয়েছে, সেটা পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণেই প্রবর্তিত এবং বিজাতীয় সভ্যতা থেকে আগত। ইসলামে এর কোন অনুমোদন নেই। সুতরাং আমাদের জন্য উচিত হবে, অনৈসলামী আদর্শকে বর্জন করে, ইসলামী সংস্কৃতি ও অভিবাদনের পদ্ধতিকে গ্রহণ করা। আর তা হল- সাক্ষাৎকালে পরস্পরকে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো এবং সর্বপ্রকারের আনুষ্ঠানিকতাকে পরিহার করা। কেননা এর জন্য কোনরূপ আনুষ্ঠানিকতা হলে সেটা বিদ‘আত হবে’ (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-১১১০৩৮)। দ্বিতীয়তঃ ফরয ছালাত আরম্ভ করার পর তা ভঙ্গ করা নাজায়েয। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমল বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ لَا تُبۡطِلُوۡۤا اَعۡمَالَکُمۡ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট কর না’ (সূরা মুহাম্মাদ : ৩৩)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উক্ত আয়াতের আলোকে ফক্বীহগণ বলেন, ফরয ছালাত ভঙ্গ করা হারাম’ (তাফসীরে সা‘আদী, পৃ. ৭৮৯)। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন ও শরী‘আতসম্মত কারণে ভঙ্গ করা বৈধ। যেমন সাপ ও বিচ্ছু মারার জন্য, মূল্যবান সম্পদ বিনষ্টের ভয়ে, ডুবন্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য, আগুন নির্বাপণের জন্য, শিশুসন্তান বা অন্ধ ব্যক্তিকে আগুন অথবা কুয়া থেকে দূরে সরানোর জন্য, অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করার জন্য ইত্যাদি (মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ, কুয়েতি ফিক্বহ বিশ্বকোষ, ৫১তম খণ্ড, পৃ. ৩৪; ইসলাম ওয়া সাওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩০৯১২২; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৬৩০৩; ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১১তম খণ্ড, পৃ. ১০৮-১০৯)। তৃতীয়তঃ আমাদের সর্বাগ্রে আল্লাহ্ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করার চিন্তা-ভাবনায় নিমগ্ন থাকা অতীব যরূরী। তাই প্রয়োজনে এ ধরনের চাকুরী ছেড়ে দিতে হবে। কারণ স্রষ্টার অবাধ্যতা করে সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৩৮১; মিশকাত, হা/৩৬৯৬, সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৭৫২০)। বিশ্বাস করতে হবে রুযীর মালিক আল্লাহ। তিনি চাইলে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিযী, হা/২৪১৪; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৩১১; তাখরীজ তাহাভীয়া, পৃ. ২৭৮)।
সূত্র: মাসিক আল-ইখলাছ।
 
Top