‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন : ছূফী মতবাদের জন্ম হয় কবে? ছূফীদের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,140
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,539
Credits
24,212
উত্তর : ছূফী মতবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ। এটি রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের যুগে পরিচিত ছিল না। এমনকি হিজরী তৃতীয় শতক পর্যন্ত ছূফীবাদ বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেনি (ইবনু তায়মিয়াহহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ১১/০৫)। হিন্দু, পারসিক ও গ্রীক দর্শনের কু-প্রভাবে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে মা‘রেফাতের নামে ছূফীবাদের সূচনা হয়। সর্বপ্রথম ইরাকের বছরা নগরীতে যুহ্দ বা দুনিয়া ত্যাগের প্রেরণা থেকে এটা শুরু হয়। প্রবল আল্লাহভীতি ও দুনিয়াত্যাগের বাড়াবাড়ি, সার্বক্ষণিক যিকর, আযাবের আয়াত পাঠে বা শুনে অজ্ঞান হওয়া বা মৃত্যু বরণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু হয় ছূফীবাদের যাত্রা। ছূফীবাদের পরিভাষায় এই অবস্থাকে ‘হাল’ বলে। তাদের আক্বীদাকে তিনটি মাযহাবে ভাগ করা যায়। - প্রাচ্য দর্শনভিত্তিক মাযহাব, যা দক্ষিণ এশীয় হিন্দু ও বৌদ্ধদের নিকট থেকে এসেছে। এই মাযহাবের অনুসারী ছূফীরা মা‘রেফাত হাছিল করার জন্য দেহকে চরমভাবে কষ্ট দিয়ে স্বীয় ক্বলবকে তাদের ধারণা মতে জ্যোতির্ময় করার চেষ্টা করে থাকে। প্রায় সকল ছূফীই এরূপ প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। ২- খ্রিষ্টানদের নিকট থেকে আগত মাযহাব, যা ‘হুলূল’ ও ‘ইত্তেহাদ’ দ’ুভাগে বিভক্ত। হুলূল অর্থ ‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনুপ্রবেশ’। হিন্দু মতে ‘নররূপী নারায়ণ’। ইরানের আবু ইয়াযীদ বিস্তামী (মৃঃ ২৬১ হিঃ) ওরফে বায়েযীদ বুস্তামী ছিলেন এই মতের হোতা। এই মাযহাবের অন্যতম নেতা হুসাইন বিন মনছূর হাল্লাজ (মৃঃ ৩০৯ হিঃ) নিজেকে সরাসরি আল্লাহ (আনাল হক্ব) বলে দাবী করায় মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। ৩- ইত্তেহাদ বা ওয়াহদাতুল উজূদ বলতে অদ্বৈতবাদী দর্শন বুঝায়, যা ‘হুলূল’-এর পরবর্তী পরিণতি হিসাবে রূপ লাভ করে। এর অর্থ হ‘ল আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অস্তিত্ব জগতে যা কিছু আমরা দেখছি, সবকিছু একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ। এই আক্বীদার অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না। এদের মতে মূসা (আঃ) -এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলতঃ আল্লাহকে পূজা করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ।আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছূতে বিরাজমান। অতএব, মানষের মধ্যে মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মুর্তিপুজা করে বা পাথর, গাছ, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পুজা করে, সে মূলতঃ আল্লাহকেই পুজা করে। সবকিছুর মধ্যে মুমিন আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ রয়েছে। তাদের ধারণায় খৃষ্টানরা কাফের এজন্য যে, তারা কেবল ঈসা (আঃ)-কেই প্রভূ বলেছে। যদি তারা সকল সৃষ্টিকে আল্লাহ বলত, তাহ’লে তারা কাফের হ’ত না। বলা বাহুল্য এটাই হ‘ল হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু এই সব কুফরী আক্বীদার ছূফী সম্রাট হ’লেন সিরিয়ার মুহিউদ্দিন ইবনু আরাবী (মৃঃ ৬৩৮হিঃ)। বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রেফাতপন্থী ছূফীদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হ‘ল এই যে, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হ’তে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে’। বলা বাহুল্য ‘ফানাফিল্লাহ’-র উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা। এই আক্বীদাই বর্তমানে চালু আছে। মাসীবী বলেন, আমরা একদিন ইমাম মালেক (রহঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, জনৈক নাছীবী বলল, হে আবু আব্দিল্লাহ! আমাদের এলাকায় ছূফী নামে কিছু লোক রয়েছে, যারা অনেক খায়। এরপর ক্বাছীদাহ (দীর্ঘ কবিতা) আবৃত্তি করে এবং একপর্যায়ে দাঁড়িয়ে নেচে নেচে যিকির শুরু করে। ইমাম মালেক বললেন, তারা কি শিশু? সে বলল, না। তিনি বললেন, তারা কি পাগলের দল? সে বলল, না বরং আলেম-ওলামা। তিনি বললেন, কোন মুসলমান এমনটি করে বলে জানি না (কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ২/৫৩-৫৪; ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। মারওয়ান বিন মুহাম্মাদ দামেশকী বলেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষের নিকট দ্বীন নিরাপদ নয়- ছূফী, গল্পকার ও বিদ‘আতী’ (কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ৩/২২৬)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, কোন লোক যদি দিনের প্রথম প্রহরে ছূফী মতবাদ গ্রহণ করে তাহ’লে তুমি তাকে যোহরের সময় হ’তে না হ’তেই একেবারে আহম্মক অবস্থায় পাবে (বায়হাক্বী, মানাক্বিবুশ শাফেঈ ২/২০৭)। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন ছূফী মতবাদে ঢুকে থাকবে সে আর কখনো সুস্থ আক্বীদায় ফিরতে পারবে না’ (ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। তিনি আরো বলেন, আমি ছূফীদের সংস্পর্শে গিয়ে কেবল দু’টি বিষয়ে উপকৃত হয়েছি। তারা বলে, ‘সময় তরবারী তুল্য। তুমি যদি তাকে না কাটো তাহ’লে সে তোমাকে কাটবে। আর তুমি যদি আল্লাহকে নিয়ে ব্যস্ত না হও, তাহ’লে বাতিল তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবে’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ৩/১২৪)। আবু যুর‘আকে ছূফী হারেছ মুহাসেবী ও তার কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই এই কিতাবগুলো থেকে দূরে থাকবে। কারণ সেগুলো বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতায় ভরপুর। তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল হাদীছের অনুসরণ করা। তাতে তোমরা এমন কিছু পাবে, যা তোমাদের জন্য যথেষ্ট (যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ১/৪৩১)। আবুবকর তুরতুশী বলেন, ‘ছূফী মাযহাব বাতিল এবং মূর্খতা ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ। কেবল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীছের মধ্যে ইসলাম রয়েছে’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা ত্বোয়াহা ৯০ আয়াত, ১১/২৩৮)। ইমাম কুরতুবী বলেন, ছূফী তরীকা সত্য থেকে অনেক দূরে, মানুষের জন্য অনুপযোগী ও সুন্নাতের সাথে সাংঘর্ষিক (তাফসীরে কুরতুবী ১১/২৩৮)। এছাড়া ইবনু তায়মিয়াহহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ইবনু কুদামাহ, যাহাবী, ইবনুল জাওযী (রহঃ) সহ বহু বিদ্বান উক্ত মতবাদের সমালোচনা করে স্বতন্ত্র গ্রন্থ সমূহ রচনা করেছেন (বিস্তারিত দ্র. দ্রঃ দরসে কুরআন, মা‘রেফতে দ্বীন, আত-তাহরীক, ২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ১৯৯৯; আব্দুর রহমান আল-ওয়াকীল, হাযিহী হিয়াছ ছূফিয়াহ, ১-১৮৮ পৃ.; ড. সাঈদ আব্দুল আযীম জামীল গাযী, আছ-ছূফিয়াহ)। সুতরাং ছূফীদের মধ্যে যারা বিশেষত হুলূল ও ইত্তেহাদ তথা অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আক্বীদা পোষণ করে এবং সেমতে আমল করে, যা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত সেসব ইমামের পিছনে জেনেশুনে ছালাত আদায় করা সিদ্ধ হবে না।
সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।
 

Share this page