Doing Automated Jobs
আপনার জিজ্ঞাসা ইসলামিক জিজ্ঞাসা ও জবাব ইসলামিক প্রশ্নোত্তর উত্তর: আপনার প্রশ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। হয়তো আপনারা মনে করতে পারেন, আমরা মোল্লা মানুষ, কাজেই ছেলেকে হাফিয করবেন এজন্য আমাদের ভালো লাগছে। আসলে জীবনটাকে উপলব্ধি করতে হবে। আমরা সন্তানদেরকে যেভাবে ভালোবাসি, শিশু-কিশোর-সন্তানকে হৃদয় দিয়ে, আমাদের জীবন দিয়ে তাদেরকে আগলে রাখি। কিন্তু এই সন্তান যখন বড় হয়, আমি আমার জীবনে এবং আপনারা অনেকে অনেকভাবে জানেন। আমরা যেহেতু আলিম বলে পরিচিত, আমাদের কাছে অনেক ব্যাথা-বেদনা নিয়ে আসেন, জীবনটা তখন অন্যরকম হয়ে যায়। এই সন্তানেরাই অনেক সময় আমাদের জন্য অনেক ব্যাথা-বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এই দুনিয়াতেই। আর এজন্যই ইসলাম সন্তানদেরকে লালনপালন করার ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি দিয়েছে। আমরা এগুলো পালন করলে দুনিয়াতে তো পাবই, আখিরাতেও পাব। আমাদের সন্তানদেরকে অবশ্যই দীন শেখাতে হবে। এবং আমাদের মূল চেতনা হবে, আমাদের সফলতার মাপকাঠি কী? আমরা অনেক সময়, কোনো ছেলে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে বা ইত্যাদি পেয়েছে, আমরা মহাখুশি হই! কিন্তু আমরা সবাই জানি, গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা কেউ মহাদুর্নীতিবাজ, কেউ মহাসন্ত্রাসী, কেউ মহাঅন্যায়-অপরাধে লিপ্ত। এবং অধিকাংশই পিতামাতাকে শান্তি দিতে জানেন না। অবশ্যই তারা গোল্ডেন এ প্লাস পাবে, ভালো রেজাল্ট করবে, ভালো চাকরি পাবে, এটা আমরা কামনা করি। পাশাপাশি সন্তানেরা যেন মানুষ হয়, তারা যেন অন্তত আল্লাহকে চেনে। আল্লাহকে চিনলে আখিরাত চিনবে, আখিরাত চিনলে নৈতিকতা ভালো হবে, পিতামাতাকে চেনবে, ভালো মানুষ হবে। আর এজন্য বিভিন্ন পথ রয়েছে। আমাদের সন্তানেরা কুরআনের হাফিয হবেন, কুরআন বুঝতে শিখবেন, এটা অত্যন্ত বড় পাওয়া। আমি জানি, হাজার হাজার কুরআনের হাফিয রয়েছেন, আলিম রয়েছেন; যারা মাদরাসা থেকে দাখিল-আলিম পাশ করে বর্তমানে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। অনেকে অধ্যাপক হয়ে গেছেন, বিভিন্ন স্পেশালিস্ট হয়ে গেছেন। আপনার ছেলের হাফিয হওয়া বা আলিম হওয়া, এটা ভবিষ্যত জীবনের উন্নতির জন্য কোনো অন্তরায় নয়। কিন্তু ওই হাফিয এবং আলিম ছেলে যখন যে কোনো কর্মেই থাক, ওই ছেলে আপনাকে চেনবে, আল্লাহকে চেনবে, সৎ থাকবে। দুনিয়ায় তার থেকে আপনি শান্তি পাবেন। আখিরাতে ইনশাআল্লাহ, ওই ছেলের সাথেই জান্নাতে যাবেন। তবে বোন, এখানে কয়েকটা বিষয় বলতে হবে, যেহেতু আপনি পরামর্শ চেয়েছেন। হিফয করার জন্য, আল্লাহর কুরআন একটা মিরাকল, আমরা জানি। অলৌকিক মু‘জিযা। অনেক সময় অনেকেই হয়তো বলেন, কুরআনের মতো বই হয়তো লিখে ফেলা যায়, অথবা হতেও পারে। আসলে এটা খুব সিম্পল ব্যাপার। কুরআনের মতো বই আপনি লিখে দেন, আপনি যে ভাষায় চান, আর সেই ভাষা বোঝে না, এমন একজন মানুষকে দেন, পঞ্চাশ বছরেও এটা কেউ মুখস্থ করবে? পারবে না। বাঙলাভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ভালোবাসেন এমন অগণিত সাহিত্যিক আছেন। তার গীতাঞ্জলি একটা যুগোত্তীর্ণ-কালোত্তীর্ণ কাব্যগ্রন্থ। এই ছোট্ট কাব্যগ্রন্থটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্থ রেখেছেন এমন কোনো সাহিত্যিক আপনি পাবেন না। কিন্তু আল্লাহর কুরআন ছয়শ পৃষ্ঠার বিশাল গ্রন্থ। এটা মুখস্থ রেখেছে এমন নয় বছরের বালক-বালিকা আপনারা অনেক পাবেন। যারা মাতৃভাষায় কথা বলতে আটকে যায়, কিন্তু যখন কুরআন পড়ে তখন মনে হয় হারাম শরীফের ইমাম সাহেব কুরআন তিলাওয়াত করছে। এটা একটা জীবন্ত মিরাকল। কুরআন তো অলৌকিক। এজন্য সন্তানদেরকে হাফিয করা খুবই সিম্পল। আপনার সন্তানকে দুই থেকে তিন বছরে কুরআন হিফয করান। এজন্য আমাদের উচিত হবে, প্রথম কথা, সন্তানকে অন্তত থ্রি পর্যন্ত পড়ানো। এবং থ্রি পর্যন্ত পড়ানোর ফাঁকে একটু আরবি পড়ানো। এটা দরকার। এরপর থ্রি পাশ করার পরে, যখন সন্তানের বয়স নয়-দশ হয়ে যাবে, অন্তত সে চব্বিশঘণ্টা একটা রুটিনে থাকার মতো অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তাকে একটা ভালো হিফযখানায় দেবেন। আমাদের সমাজের অনেক মা-বাবা আলিমদের কথায় প্রভাবিত হয়ে, মনের ভালো আবেগে, সন্তানকে হিফযখানায় দিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি মনে করেন, আমার দায়িত্ব শেষ। আসলে বোন, এখানেই শেষ হয় না। আমরা আলিমরা অনেক সময় দায়িত্বে অবহেলা করি। হিফযখানার মান কেমন, পড়া কেমন, শুধু আপনার মনের আবেগ আর হিফযখানায় দেওয়া নয়, সন্তানকে প্রতিনিয়ত আপনার সবচে’ মূল্যবান টাকা যখন গুণে রাখেন, গুছিয়ে রাখেনÑ আপনার সন্তানকে প্রতিদিন গিয়ে দেখতে হবে, কী পড়ছে, প্রতিষ্ঠানের মান কেমন? এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দুআ করতে হবে। আল্লাহ আমাকে আলিমের পিতা, আলিমের মাতা হাফিযের পিতা, হাফিযের মাতা করো। তাহলে প্রথম কথা, আপনার সন্তানকে থ্রি-ফোর পর্যন্ত, অন্তত থ্রি পর্যন্ত পড়ান। কোনো ভালো মাদরাসা হলে ভালো হয়। থ্রির পরে তাকে কোনো ভালো হিফযখানায় দেবেন, একটু পয়সা খরচ হলেও। মানসম্মত পড়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঢাকায় আছে, অন্যান্য জায়গায় আছে। প্রয়োজনে আপনারা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। তৃতীয়ত, হিফযখানায় আপনার ছেলেমেয়েদেরকে ফলোআপ করবেন যে, কেমন পড়ছে। যদি আপনার ছেলে দুই থেকে তিন বছরে হিফয করতে না পারে, তাকে জোর দেবেন না। তাহলে বুঝতে হবে, তার জন্য পূর্ণ হিফয সম্ভব না। তাকে দুই বা তিন বছরের মধ্যেই দ্রুত হিফয করিয়ে তাকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ায়ে দেন। তাতে সে তার বন্ধুদের চেয়ে বড়জোর এক থেকে দুই বছরের কম বেশি হবে, কিন্তু সে হাফিযে কুরআন হয়ে যাবে। আপনার সন্তানকে হাফিয করার পাশাপাশি কুরআন বোঝার যোগ্যতা তৈরি করতে হবে। কী জন্য? আপনার সন্তানের স্বার্থে। আমরা যদি মনে করি, এই আমাদের সরকার নিয়ম করে দেবেন যে, বাংলাদেশের আকাশ বাতাসে বার্ড ফ্লু বা সোয়াইন ফ্লু ঢুকবে না এটা অবাস্তব চিন্তা, ঢোকবেই। ঠিক আমরা যদি মনে করি, আমাদের আকাশ দিয়ে কোনো অপসংস্কৃতি ঢোকবে না, এটা অকল্পনীয়। তাহলে আমাদের বাঁচার উপায় কী? টিকা নিতে হবে, প্রতিরোধক নিতে হবে। এই বর্তমান বিশ্বে আকাশ সংস্কৃতিতে অপসংস্কৃতি-অশ্লীলতা-বেহায়াপনা-হিংস্রতা-ভায়োলেন্স, এ থেকে আপনার সন্তানকে বাঁচাতে কুরআনের টিকা দিতে হবে। আপনার সন্তান যদি একটু কুরআন বুঝতে পারে, এজন্য যাকে হাফিয করবেন, তাকে অবশ্যই চেষ্টা করবেন অন্তত কিছু ক্লাস মাদরাসায় পড়াতে। ফাইভ সমাপনী দিয়ে ক্লাস এইট পর্যন্ত সে মাদরাসায় পড়ল, যদি আপনার ঈমান-ইয়াকীনে জোর পায় তাহলে তাকে আলিম বানানোর চেষ্টা করবেন। আমার বিশ্বাস-ইয়াকীন অনুযায়ী, আলিম হওয়ার চেয়ে বড় সফলতা নেই। আপনারা জানেন, ডা. জাকির নায়েক অনেক পরিচিত ব্যক্তিত্ব, ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, তিনি যদি একজন ডাক্তার হতেন, তাহলে ডাক্তারই হতেন। তিনি তার ডাক্তারি পেশা বাদ দিয়ে দীনের লাইনে এসে যতোটুকু অর্জন করেছেন, আপনি জানেন লক্ষ ডাক্তারের চে’ তিনি বেশি সমৃদ্ধি সফলতা দুনিয়াতে পেয়েছেন। আমরা আশা করি, আল্লাহ তাঁকে কবুল করবেন। যদি আপনার সেরকম ইয়াকীন হয় যে, তাকে আলিম করব, না হলে অন্তত এইট পর্যন্ত তাকে কুরআন বোঝার মতো ন্যূনতম যোগ্যতা তৈরি করে, এরপর আপনি তাকে বিভিন্ন দিকে দিতে পারেন। এইভাবে সন্তানদের যদি আমরা কুরআন শেখাতে পারি, কুরআন মুখস্থ করাতে পারি, তাহলে আমরা আশা করি, আমার সন্তান ভালো মানুষ হবে, তার মেধা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে যাবে। তবে সবক্ষেত্রে সে ভালো মুসলিম থাকবে। আল্লাহ তাআলা কবুল করে নিন। জিজ্ঞাসা ও জবাব, ২য় থণ্ড ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ