১. আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহর কিছু সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন: "হে আল্লাহর রাসূল! বিত্তবান লোকেরা প্রতিফল ও সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে। আমরা নামায পড়ি তারাও সেরকম নামায পড়ে, আমরা রোযা রাখি তারাও সেরকম রোযা রাখে, তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সদকা করে।
তিনি বলেন: আল্লাহ্ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস রাখেননি যে তোমরা সদকাহ্ দিতে পার। প্রত্যেক তাসবীহ্ (সোবহান আল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক ভালো কাজের হুকুম দেয়া হচ্ছে সদকাহ্ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করা হচ্ছে সদকাহ্। আর তোমাদের প্রত্যেকে আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদকাহ্।
তারা জিজ্ঞাসা করেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাঙ্খা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করে, তাতেও কি সওয়াব হবে?
তিনি বলেন: তোমরা কি দেখ না, যখন সে হারাম পদ্ধতিতে তা করে, তখন সে গোনাহ্গার হয় কি না! সুতরাং অনুরূপভাবে যখন সে ঐ কাজ বৈধভাবে করে তখন সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে।"
তিনি বলেন: আল্লাহ্ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস রাখেননি যে তোমরা সদকাহ্ দিতে পার। প্রত্যেক তাসবীহ্ (সোবহান আল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক ভালো কাজের হুকুম দেয়া হচ্ছে সদকাহ্ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করা হচ্ছে সদকাহ্। আর তোমাদের প্রত্যেকে আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদকাহ্।
তারা জিজ্ঞাসা করেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাঙ্খা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করে, তাতেও কি সওয়াব হবে?
তিনি বলেন: তোমরা কি দেখ না, যখন সে হারাম পদ্ধতিতে তা করে, তখন সে গোনাহ্গার হয় কি না! সুতরাং অনুরূপভাবে যখন সে ঐ কাজ বৈধভাবে করে তখন সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে।"
গ্রন্থ: সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ২২০১
২. আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক আদাম সন্তানকেই ৩৬০টি গ্রন্থি বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সংখ্যা পরিমাণ আল্লা-হু আকবার বলবে, আলহামদু লিল্লাহ' বলবে, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ' বলবে, সুবহা-নাল্ল-হ' বলবে, আসতাগফিরুল্ল-হ' বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে একটি পাথর বা একটি কাটা বা একটি হাড় সরাবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, সে কিয়ামাতের দিন এমনভাবে চলাফেরা করবে যে, সে নিজেকে ৩৬০ (গ্রন্থি) সংখ্যা পরিমাণ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে অর্থাৎ বেঁচে থাকবে। আবূ তাওবাহ তার বর্ণনায় এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, সে এ অবস্থায় সন্ধ্যা করবে।
গ্রন্থ: সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) হাদিস নম্বরঃ ২২২০
৩. আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথ হতে পাথর, কাটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।
গ্রন্থ: সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] হাদিস নম্বর: ১৯৫৬ হাদিসের মান: সহিহ
৪. আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম যখন সাওয়াবের প্রত্যাশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, এ খরচ তার জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে গণ্য হয়। - বুখারী ৫৩৫১
৫. সাঈদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আপনার কাছে কোন সাদাকা অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ পানি (পান করানো)।
গ্রন্থ: সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) হাদিস নম্বরঃ ১৬৭৯, হাসান।
সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! উম্মু সা‘দ মৃত্যুবরণ করেছেন (তার পক্ষ হতে) কোন সাদাকা সর্বোত্তম হবে? তিনি বললেনঃ পানি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সা‘দ) একটি কূপ খনন করে বললেন, এটা উম্মু সা‘দের (কল্যানের) জন্য ওয়াকফ।
গ্রন্থ: সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) হাদিস নম্বরঃ ১৬৮১, হাসান।
৬. আবু উমামা বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে শঙ্কাবোধ করে রাত জাগতে পারবে না, অথবা খরচ না করে সম্পদ জমা করে রাখে, অথবা শত্রুর সাথে যুদ্ধ না করে ভীরুতা প্রদর্শন করে, সে যেন سبحان الله وبحمده(সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি) অধিক পাঠ করে, কারণ তা আল্লাহর রাস্তায় পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করার চেয়ে অধিক প্রিয়”।
(তাবরানি ফিল কাবির: (৭৭৯৫), আল-বানি ‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’: (১৫৪১) গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি হাসান লি গায়রিহি)
৭. ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উচ্চস্বরে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মতো এবং নিঃশব্দে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর মতো।
গ্রন্থ: সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বর: ১৩৩৩, সহীহ।
৮. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদাকাহ রয়েছে, প্রতি দিন যাতে সূর্য উদিত হয় দু’জন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও সদাকাহ, কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও সদাকাহ, ভাল কথাও সদাকাহ, সালাত আদায়ের উদ্দেশে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও সদাকাহ, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সদাকাহ।
গ্রন্থ: সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ২৯৮৯
৯. আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ প্রতিটি মুসলিমের সদাকাহ করা উচিত। সাহাবীগণ আরয করলেন, কেউ যদি সদাকাহ দেয়ার মত কিছু না পায়? (তিনি উত্তরে) বললেনঃ সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও লাভবান হবে, সদাকাহও করতে পারবে। তাঁরা বললেন, যদি এরও ক্ষমতা না থাকে? তিনি বললেনঃ কোন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। তাঁরা বললেন, যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেনঃ এ অবস্থায় সে যেন সৎ ‘আমল করে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকে। এটা তার জন্য সদাকাহ বলে গণ্য হবে।
গ্রন্থ: সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বর: ১৪৪৫
১০. আনাস ইবনু মালিক হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম যদি গাছ লাগায়, আর তাত্থেকে কোন মানুষ বা জানোয়ার কিছু খায়, তবে তা তার জন্য সদাকায় পরিগণিত হবে।
গ্রন্থ: সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বর: ৬০১২
তাহলে দেখা যাচ্ছে সরাসরি দান করার পাশাপাশি উপরের আমলগুলোর মাধ্যমেও আমরা অনবরত দান সদাকার নেকি পেয়ে যেতে পারি ইন শা আল্লাহ। দানের নেকি শুধু ধোনিরাই পেয়ে যাবে আর গরীবেরা বঞ্চিত হয়ে যাবে সেটা যেন না হয় সেই কারনেই আমলগুলো বাতলে দেওয়া হয়েছে। হাদিসে যেই কাজগুলো করতে বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-
১. সুবহানাল্লাহ বলা।
২. আলহামদুলিল্লাহ বলা।
৩. আল্লাহু আকবার বলা।
৪. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা।
৫. আস্তাগফিরুল্লাহ বলা।
৬. সুবহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহ বলা।
৭. কুরআন তিলাওয়াত করা।
৮. ভালো কাজের আদেশ করা।
৯. মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা।
১০. স্ত্রী মিলন করা।
১১. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো।
১২. হাসি মুখে সাক্ষাৎ করা।
১৩. পথ দেখিয়ে দেওয়া।
১৪. পানি তুলে দেওয়া।
১৫. পরিবারের ভরনপোষণ।
১৬. পানি পান করানো।
১৭. গাছ লাগানো।
১৮. সওয়ারিতে উঠতে সাহায্য করা।
১৯. সুবিচার করা।
২০. মসজিদে হেটে যাওয়া।
২১. বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা।
২২. ভালো কথা বলা।
২৩. সৎ আমল করা।
২৪. পাপ থেকে বিরত থাকা।
এমন আরও আমল হয়ত রয়েছে তবে আমরা হাদিস থেকে এতটাই খুজে খুজে বর্ণনা করতে পারলাম আলহামদুলিল্লাহ। এগুলো আমল করার মাধ্যমে আমরা প্রচুর দান সদাকা করার নেকি পেতে পারি ইন শা আল্লাহ।
Last edited by a moderator: