‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

সংশয় নিরসন প্রচলিত বিভিন্ন রকমের দরূদ

Md Atiar Rahaman Halder

Salafi

Salafi User
Threads
62
Comments
84
Reactions
771
Credits
422
জাল হাদীস- : প্রচলিত বিভিন্ন রকমের দরূদ

দরুদে মাহী, দরুদে লাখী, দরুদে তাজ, দরুদে তুনাজ্জিনা, দরুদে শেফা,দরুদে হাজারী, দরুদে গাউসিয়া, দরুদে রুহী, দরুদে নারিয়া, দরুদে হাবীব এই জাতীয় যত দরূদ আছে সব বানানো দরূদ। বিভিন্ন ব্যক্তিরা এ সকল দরূদ বানিয়েছে। বানানোর পরে এ সকল দরুদের আবার ফযীলাত তৈরি করে দিয়েছে। কোনো কোনো বইতে এই দরুদের এই ফযীলাত, ওই দরুদের ওই ফযীলাত এরকম অনেক কথা লিখে দিয়েছে কেউ কেউ ।

এরকমই একটা বানানো দরূদ হলো 'দরুদে হাবীব' বা দোয়া'য়ে হাবীব।দরূদটি নিম্নরূপ-

“কুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আ'যাবান লিলমুহিব্বি কাইফা ইয়ানামু।ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু ত্বালিবুল জান্নাতি লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু খালিকুল লাইলি লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু খালিকুল খালক্কি লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কামতানামু আল আরও ওয়াল কুরসিয়্যু লা ইয়ানামু। ক্কুম ঝুম ইয়া হাবীবী কামতানামু আল লাওহু ওয়াল ক্বালামু লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কামতানামু কুণ্ডুল মালাকুতি লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আশশামসু ওয়াল কামারু লা ইয়ানামু। কুমকুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আল আরদু ওয়াস সামাউ লা ইয়ানামু। কুম কুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আন নাজমু ওয়াশ শাজারু লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আল বাররু ওয়া বাহরু লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আল জান্নাতু ওয়া নারু লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কামতানামু আল হুরু ওয়াল কুচুরু লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আত্ব তাইরু ওয়াল ওয়াহ্লা ইয়ানামু। কুম ক্কুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আন নাউমু আ'লাল মুহিব্বি হারামু। ঘুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু ত্বালিবুল মাওলা লা ইয়ানামু। জুম জুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আল আ'শিকু ওয়াল মা'শূন্ধু লা ইয়ানামু। কুম জুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আল এ’শত্রু ওয়াল মাহাব্বাতু লা ইয়ানামু। কুম জুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আল লাইলু ওয়া নাহারু লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু নি'মাল মাওলা ওয়াল কিরামু লা ইয়ানামু । কুমকুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু আদমু ছাফিয়্যুল্লাহি লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু ইবরাহীমু খালীলুল্লাহি লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কামতানামু মূসা কালীমুল্লাহি লা ইয়ানামু। ঘুম ঘুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু ঈসা রূহুল্লাহি লা ইয়ানামু। ঝুম ঝুম ইয়া হাবীবী কাম তানামু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি লা ইয়ানামু।''২২৬

এরকম আরেকটি দরূদ 'দরুদে তাজ' পাঠের বানোয়াট ফযীলাত হলো-

“যদি কোনো ব্যক্তি রাসূল (সঃ) কে স্বপ্নে দেখার আশা পোষণ করে তবে সে যেনো চান্দ্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম শুক্রবার রাতে ইশার সালাত বাদে পবিত্র শরীরে ও সুগন্ধিযুক্ত পোশাকে ১৮০ বার এই দরূদ শরীফ (দরুদেতাজ) পাঠ করে, এভাবে ১১ দিন পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ্ সে স্বপ্নে বিশ্বনবী হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এর দর্শন লাভে সক্ষম হবে।''২২৭

প্রশ্ন হলো একথা কে বলল? উনাকে কে বলে দিল যে এই দরূদ ১৮০ বার এভাবে এভাবে পড়লে নবী (সঃ) এর সাক্ষাৎ পাবে? এছাড়াও ফযরের পর ৭ বার, আছরের পর ৩ বার, ইশার পর ৩বার পড়ার ফযীলাতের কথা কোথায় পাওয়া গিয়েছে? আরেকটি দরূদ ‘দরুদে হাজারী' কবরস্থানে ৩বার পাঠ করলে তার বরকতে ৮০ বছরের আযাব কবরস্থান থেকে উঠিয়ে দেন। আর কেউ যদি ২০ বার পাঠ করে তার সাওয়াব মা-বাবাকে দান করে, তবে সে যেনো মা-বাবার সমস্ত দাবি পূরণ করল। আল্লাহ্ তা'আলা ঐ মাতাপিতার যিয়ারতের জন্য এক হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে দিবেন, যারা কিয়ামাত পর্যন্ত এই কাজে নিযুক্ত থাকবে।''২২৮

এ জাতীয় কোনো কথা কোনো সহীহ্ বা যয়ীফ হাদীসে ও আসেনি।

এছাড়াও রয়েছে দরুদে লাখী, যার মানে হলো, 'লক্ষ সাওয়াবের দরূদ'।রয়েছে দরুদে নারিয়া যা আগুনের মতো কাজ করে। নারিয়া মানে আগুন- আর ‘খতমে নারিয়া' নামে এই দরুদের একটি খতমও রয়েছে। বলা হয় যে,অসুখ-বিসুখ ও বিপদ-আপদে ‘দরুদে নারিয়া' পড়লে তা অসুখ ও বিপদ আগুনের মতো সাথে সাথে দূর করে দিবে। আরো আছে দরুদে গাউছিয়া ।‘দরুদে গাউছিয়া' হলো আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর নামে বানানো দরূদ ।

এরকম অসংখ্য দরূদ এবং এই জাতীয় দরূদগুলোর বিশাল বিশাল ফযীলাত অনেক বইতে লেখা আছে। এই জাতীয় যত দরূদ আছে তার সবই বানানো এবং এগুলোর ফযীলাতসমূহ সম্পূর্ণ বানোয়াট।

নবী (সঃ) যে সকল দরূদ শিখিয়েছেন সেগুলো তো পড়তেই হবে। এর বাইরেও কেউ যদি নবী (সঃ) এর জন্য স্বাভাবিকভাবে দু'আ করে সেটাও দরূদ। যেমন 'আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া সাল্লিম' এই পর্যন্ত পড়লেই দরূদ ও সালামের নূন্যতম পর্যায় আদায় হবে। ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম' এটাও ন্যূনতম পর্যায়ের দরূদ ও সালাম। এরকম আরো দরূদ পড়া যায়। তবে একটা সুনির্দিষ্ট রূপ দিয়ে নিজ থেকে ফযীলাত বর্ণনা করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। একটা দরূদ নিজে বানিয়ে প্রচার করা হলো যে এটার এই ফযীলাত, এটা করলে এই হবে, ওটা করলে সেই হবে বলে প্রচার করা গুনাহের কাজ এবং এগুলো করার কারো অধিকার নেই ।

২২৬ নূরানী মজমুয়ায়ে পাঞ্জেগানা অজিফা, মা : মোফাজ্জল হোসেন খান (ঢাকা:সোলেমানীয়া বুক হাউজ, ১৯৯৫ ইং) পৃ. ৮৯-৯৭।
২২৭ প্রাগুপ্ত, পৃ. ৯৭ ।
২২৮ প্রাগুপ্ত, পৃ. ১০২ ।​


সমাজে বহুল প্রচলিত
১০০ জাল হাদীস

ড. মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়,​
 
Last edited:

Share this page